তওবাহ এর গুরুত্ব | ইসলামিক থিংকিং বাংলাদেশ।


.
মানুষের করা উচিত না এমন হাজারো কাজ মানুষ করে। অনেকে প্রয়োজনে করে, অনেকে প্রয়োজন ছাড়া করে। যেমন আমার ভাববার জন্য অনেক জরূরী বিষয় আছে, যা নিয়ে আমি ভাবিনা, আবার যা নিয়ে ভেবে আমার কোন কাজ নেই তা ভেবে অনেক সময় দিন পার করে দেই। এভাবেই ভুলের মধ্যে জীবনের অনেকটা সময় পার করে দিয়েছি। তবে ভুল করে ফেললেই সব শেষ না। ভুল না করাতো ফেরেশতাদের ফিতরাত, মানুষ হলে সে ভুল করবে। এমন কি স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সুরা আসর এ আমাদের বলে দিয়েছেন
.
'কসম যুগের (সময়ের), নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত'। (সুরাহ আসর, ১-২)
.
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ও আমাদের জানিয়ে দিয়েছিলেন,
.
আবু আইয়ুব (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসুল (সাঃ) বলেন, 'তোমরা যদি পাপ না কর তবে আল্লাহ এমন মানবজাতি সৃষ্টি করবেন যারা পাপ করে ক্ষমা প্রার্থনা করবে এবং আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দিবেন'। (সহীহ মুসলিম ২৭৪৮)
.
অর্থাৎ আদম সন্তান ভুল করবে। তবে ভুল করে ভুলের পরে কৃত কাজটাই হবে জান্নাত এবং জাহান্নাম এর পার্থক্যকারী। অর্থাৎ ভুল করে সব শেষ মনে না করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এর কাছে নতজানু হয়ে ভুল স্বীকার করে এবং এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করাই ইসলাম এর শিক্ষা। পবিত্র কোর'আন এ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, 'মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও'। (সুরা আন নুর, ৩১)
.
তওবা শব্দের অর্থ হল প্রত্যাবর্তন করা, ফিরে আসা। অর্থাৎ ভুল কাজ করে আল্লাহর থেকে দূরে সরে যাওয়ার পর ভুল টা বুঝতে পারা মাত্রই লজ্জিত হয়ে আল্লাহর কাছে ফিরে আসা এবং কৃত কর্মের জন্য মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করাই হল তাওবা। ইসলাম এ তাওবা এর গুরুত্ব অনেক বেশী। আমরা সৃষ্টির শুরুর দিকে তাকালে দেখতে পাই, ইবলিস অহংকার এর বশবর্তী হয়ে আল্লাহর আদেশ অমান্য করে এবং কাফির হয়ে যায়।
.
'এবং যখন আমি হযরত আদম (আঃ)-কে সেজদা করার জন্য ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দিলাম, তখনই ইবলীস ব্যতীত সবাই সিজদা করলো। সে (নির্দেশ) পালন করতে অস্বীকার করল এবং অহংকার প্রদর্শন করল। ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল'। (সুরা বাকারা, ৩৪)
.
এরপর সেই ইবলীস এর প্ররোচনায় পড়ে ভুল করে ফেলেন আমাদের আদি পিতা ও মাতা আদম এবং হাওয়া (আঃ),অমান্য করেন আল্লাহর আদেশ।
.
'এবং আমি আদমকে হুকুম করলাম যে, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করতে থাক এবং ওখানে যা চাও, যেখান থেকে চাও, পরিতৃপ্তিসহ খেতে থাক, কিন্তু এ গাছের নিকটবর্তী হয়ো না। অন্যথায় তোমরা যালিমদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়বে। অনন্তর শয়তান তাদের উভয়কে ওখান থেকে পদস্খলিত করেছিল। পরে তারা যে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ছিল তা থেকে তাদেরকে বের করে দিল এবং আমি বললাম, তোমরা নেমে যাও। তোমরা পরস্পর একে অপরের শক্র হবে এবং তোমাদেরকে সেখানে কিছুকাল অবস্থান করতে হবে ও লাভ সংগ্রহ করতে হবে'। (সুরা বাকারা, ৩৫-৩৬)
.
এখানে ইবলিস আমাদের আদি পিতা আদম (আঃ) এবং আমাদের আদি মাতা হাওয়া(আঃ), সবারই ভুল ছিল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার আদেশ অমান্য করা। কিন্তু ভুলের পর সবার কৃতকাজের ব্যাপারে রেস্পন্স ছিল ভিন্ন। ইবলিস নিজের কাজের ব্যাপারে সামান্য অনুতপ্ত তো হলই না বরং নিজেকে সঠিক প্রমান এর জন্য দেখাতে শুরু করল যুক্তি,
.
'আল্লাহ বললেন, হে ইবলীস, আমি স্বহস্তে যাকে সৃষ্টি করেছি, তার সম্মুখে সেজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? তুমি অহংকার করলে, না তুমি তার চেয়ে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন? সে বললঃ আমি তার চেয়ে উত্তম আপনি আমাকে আগুনের দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা'। (সুরা সাদ, ৭৫-৭৬)
.
আর এভাবেই ইবলিস হয়ে গেল চির অভিশপ্ত। অন্যদিকে ভুল বুঝতে পারা মাত্রই আমাদের আদি পিতা মাতা আদম এবং হাওয়া (আঃ) আল্লাহর কাছে নতজানু হয়ে ক্ষমা চাইতে লাগলেন এবং একটি বারের জন্যও স্বপক্ষে কোন যুক্তি না দেখিয়ে নিজের ভুলকে স্বীকার করে নিলেন এবং আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় দোয়া করতে লাগলেন,
.
'তারা উভয়ে বললঃ হে আমাদের পালনকর্তা আমরা নিজেদের প্রতি জুলম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন, তবে আমরা অবশ্যই অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাব'। (সুরা আল আরাফ ২৩)
.
আমাদের রব, যিনি একই সাথে আর রহমান এবং আর রহিম, তিনি কবুল করে নিলেন আমাদের আদি পিতা এবং মাতা আদম এবং হাওয়া(আঃ) এ দোয়া এবং তারা অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল সকল সৃষ্টির সেরা দের কাতারে। এই ঘটনাটা স্পষ্ট করে, বিনীত হয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার গুরুত্ব। এছাড়াও পবিত্র কুর'আন এ আল্লাহ বার বার আমাদের মনে করিয়ে দেন তাওবা করে ফিরে আসার কথা।
.
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, 'মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও'। (সুরা নূর ৩১)
.
সুরা আত তাহরীম এ আল্লাহ বলেন, 'মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ তা’আলার কাছে তওবা কর-আন্তরিক তওবা। আশা করা যায়, তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মন্দ কর্মসমূহ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত'। (সুরা আত তাহরীম, ৮)
.
এছাড়াও আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) তাওবা এর ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন, বলে গেছেন বেশী বেশী তাওবা করার কথা।
.
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ 'মানুষ মাত্রই গুনাহগার (অপরাধী)। আর গুনাহগারদের মধ্যে তাওবাহকারীরাই উত্তম'। (সূনান আত তিরমিজী ২৪৯৯)
.
এই কারনেই "আমি কি ভুল করে ফেলেছি জীবনে" ভেবে সময় নষ্ট না করে তওবা করে আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তন করতে চাই। আর নিশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে তো আর কোন সুযোগ নাই তাওবা করার, কারন দুনিয়াতে থাকা অবস্থাতেই একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাওবা কবুল হয়। সে সময় প্রসঙ্গে রাসুল (সাঃ) বলেন,
.
ইবনু উমার (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 'রূহ কণ্ঠাগত না হওয়া (মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত) পর্যন্ত আল্লাহ তা'আলা বান্দার তাওবাহ কবুল করেন'। (ইবনু মাজাহ, ৪২৫৩)
.
তাই আর এক সেকেন্ড ও দেরি করব না। আমরা কেউই জানিনা কখন ফুরিয়ে যাবে আমার তাওবা কবুল হওয়ার সময়।
.
আর একটা বিষয় ক্লিয়ার করে শেষ করতে চাই, তাওবা হল একান্তই আমার এবং আমার রব আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার অভ্যন্তরীন ব্যাপার। আমি কেন এখানে ঘটা করে আপনাদের সবাই কে জানান দিয়ে যাচ্ছি বা এদ্বারা আমি কি যাহের করতে চাইছি, আমি শুধু আপনাদের কে সত্য টা জানিয়ে দিতে চাই কারন এমনটাই শিখিয়েছেন আমাদের প্রাণের থেকে প্রিয় রাসুল (সাঃ),
.
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'আমার কথা পৌঁছিয়ে দাও, তা যদি এক আয়াতও হয়। আর বনী ইসরাঈলের ঘটনাবলী বর্ণনা কর। এতে কোন দোষ নেই। কিন্তু যে কেউ ইচ্ছে করে আমার উপর মিথ্যারোপ করল, সে যেন জাহান্নামকেই তার ঠিকানা নির্দিষ্ট করে নিল'। (বুখারী ৩৪৬১, মানঃ সহীহ)
.
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে। আল্লাহ আমাদের সত্য বোঝা এবং মেনে নিয়ে সে অনুযায়ী চলার তৌফিক দান করুন।
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
.
.
(Y) শেয়ার করুন, বন্ধুদের সাথে ইন শা আল্লাহ !
_
#Islamic Thinking Bangladesh  

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ