নামায শিক্ষা


بسم الله الرحمن الرحيم

অনুবাদকের ভূমিকা
সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। দরুদ ও সালাম তাঁর বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি, যিনি সমগ্র বিশ্বমানবতার নবী, নবীকূলের শিরোমনি সৃষ্টিকুলের রহমত ও কল্যাণের প্রতীক। আমি শায়খ ডঃ আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ আলী আযযাইদের সালাত বিষয়ক গ্রন্থ "তালীমুস সালাহ" পাঠান্তে উপলব্ধি করি যে, এটির বঙ্গানুবাদ সর্বসাধারণের জন্য খুবই উপকারী হবে। কেননা বইটিতে নামায বিষয়ক বিধি-বিধান সহজ ও সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে। আমার সুহৃদ সাথি সাঈদুর রহমান মোল্লার সৎ পরামর্শে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও সমাজের উপকারের আশায় অনুবাদের কাজ আরম্ভ করি। বইটিকে পরিমার্জি করতে সাইফুল্লাহ ভাই, শফীউল আলম ভাই, মৌলানা আব্দুর রাউফ শামীম ও মৌলানা আমীর আলী প্রমুখ সম্পাদনার কাজে সহযোগিতা করেছেন। যাঁরা আমাকে এ কাজে উৎসাহ দিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন, আল্লাহর কাছে তাদের মঙ্গল কামনা করছি। অনুবাদে লেখকের মূল বক্তব্য যথার্থভাবে প্রকাশের চেষ্টা করেছি। আমি আশা করি এই অনুবাদ বাংলা ভাষা-ভাষীদের নিকট সমাদৃত হবে ইনশা আল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সকলকে এই পুস্তক থেকে উপকৃত হবার তাওফীক দিন। আমীন!

অনুবাদক

মুখবন্ধ
الحمد لله والصلاة والسلام على محمد بن عبد الله صلى الله عليه وسلم، وعلى آله وصحبه أجمعين، أما بعد:
নামায সম্পর্কে যে সকল বইপুস্তক লেখা হয়েছে, আমি তা একত্রিত করার প্রয়াস পাই। অতঃপর আমি যে বিষয়টি উপলব্ধি করি তা হল, যেসব কিতাব নামায সম্পর্কে লিখিত হয়েছে তার মধ্যে প্রায় সবগুলোই বিশেষ বিশেষ দিকের উপর গুরুত্বারোপ করে লিখিত হয়েছে। উদাহরণত এ বইগুলোর কোনটি নামাযের বিবরণ লিখিত হয়েছে, যার মধ্যে নামাযের ফযিলত ও গুরুত্বের বর্ণনা স্থান পায়নি। আবার কোনটি দ্বান্দিক মাসায়েলের আলোচনায় ভরে দেয়া হয়েছে, যা প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য আদৌ প্রযোজ্য নয়; তাই আমি এমনসব মাসআলা সংকলন করতে মনস্থ করলাম যেগুলো বাস্তবে প্রয়োগ করা মুসলিমের জন্য অপরিহার্য। কুরান-সুন্নাহর দলীলসমৃদ্ধ করে, দ্বান্দিক মাসায়েলগুলো অনুল্লেখ রেখে এবং বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেণের আশ্রয়ে না গিয়ে সহজ-সরলভাবে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যাতে সংক্ষিপ্ত অথচ তথ্যসমৃদ্ধ এ বইটি সর্বজন সমাদৃত হয় এবং বিদেশী ভাষায় অনুবাদের উপযোগী হয়। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা তিনি যেন আমার এই শ্রমকে ফলপ্রসু করেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, কবুলকারী। আর তিনিই একমাত্র তাওফীকদাতা।

ডঃ আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ আলী আযযাইদ
রিয়াদ
তারিখ ১/১/১৪১৪ হিজরী

কিছু কথা

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণিত সহীহ হাদীসে এসেছে, তিনি বলেন:
"بني الإسلام على خمسٍ شهادة أن لا إله إلا الله وأنّ محمداً رسول الله وإقامِ الصلاة وإيتاءِ الزّكاةِ وصومِ رمضانَ وحجِّ البيت لمن استطاع إليه سبيلاً.."
অর্থ: "ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি জিনিসের উপর স্থাপিত, সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল। নামায প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত প্রদান করা, রমাযান মাসে রোযা পালন করা। সক্ষম ব্যক্তির জন্য আল্লাহর ঘরে (কাবা শরীফে) হজ্জ পালন করা"। (বুখারী, মুসলিম)
উক্ত হাদীসটি ইসলামের পাঁচটি রুকন বা স্তম্ভকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

প্রথম স্তম্ভ:
"شهادة أن لا إله إلا الله وأن محمداً رسول الله"
অর্থ, "আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মা'বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর রাসূল, এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা।" আর এখানে لا إله শব্দটি প্রমাণ করছে যে, আল্লাহ ছাড়া যা কিছুর ইবাদত করা হয় তা সবই বাতিল এবং إلا الله শব্দটি প্রমাণ করছে ইবাদত কেবল এক আল্লাহর জন্যই নিবেদিত হতে হবে, যার কোন অংশীদার নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন,
)شَهِدَ اللّهُ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ وَالْمَلاَئِكَةُ وَأُوْلُواْ الْعِلْمِ قَآئِمَاً بِالْقِسْطِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ( (سورة آل عمران:১৮)
অথর্: "আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে তিনি ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই, আর ফেরেশতা ও জ্ঞানীগণও। তিনি ন্যায় দ্বারা প্রতিষ্টিত। তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।" (সূরা আল ইমরান-১৮)
আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই, এ কথার সাক্ষ্য দানের মাধ্যমে তিনটি জিনিসের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।

প্রথমত: তওহীদুল উলুহিয়্যাহ 
অর্থাৎ সকল প্রকার ইবাদত একমাত্র আল্লাহর নিমিত্তে, এ কথার স্বীকারোক্তি দেয়া এবং ইবাদতের কোনো অংশই আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্যে নিবেদন না করার অঙ্গিকার করা। আর এ উদ্দেশ্যেই আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিজগতকে অস্তিত্বে এনেছেন। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন:
)وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُونِ(
অর্থ: "আমি জ্বিন ও মানব জাতিকে কেবল এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা একমাত্র আমারই ইবাদত করবে"। (সূরা আযযারিয়াত- ৫৬)
আর এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্যই আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে রাসূলগণকে কিতাবসহ পাঠিয়েছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
)وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ(
অর্থ: "প্রত্যেক উম্মাতের নিকট আমি একজন রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত (আল্লাহ ব্যতীত যে জিনিস বা বস্তুকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করা হয়) থেকে দূরে অবস্থান কর"। (সূরা আন নাহল- ৩৬)
আর তাওহীদের সম্পূর্ণ বিপরীত হলো শিরক। অতএব তাওহীদের অর্থ যেহেতু সকল প্রকার ইবাদত একমাত্র আল্লাহ জন্য নির্দিষ্ট করা; তাই শিরক হলো ইবাদতের কোন অংশ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য নির্দিষ্ট করা। সুতরাং যে ব্যক্তি নিজ খেয়াল-খুশি মতো আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে নামাজ, রোযা, দু'আ (প্রার্থনা) নযর-মানত, জীবজন্তু উৎসর্গ ইত্যাদি করবে, অথবা মৃতব্যক্তির কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবে, সে ইবাদতের ক্ষেত্রে শিরকের আশ্রয় নিল, আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে অংশীদার হিসেবে সাব্যস্ত করে নিল। শিরক হলো সবচেয়ে বড় গুনাহ। এটি সমস্ত আমলকে বিনষ্ট করে দেয়। এমনকি শিরকে নিপতিত ব্যক্তির জান-মালের হুরমত পর্যন্ত রহিত হয়ে যায়।

দ্বিতীয়ত: তাওহীদুল রুবুবিয়্যাহ 
অর্থাৎ এ কথা স্বীকার করা যে, একমাত্র আল্লাহই সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, জীবন দানকারী, মৃত্যু প্রদানকারী, মুদাব্বির (ব্যবস্থাপক) এবং আসমান ও যমীনে একমাত্র তাঁরই বাদশাহী। এ প্রকার তাওহীদকে স্বীকৃতি দেয়া সৃষ্টিজগতের একটি স্বভাবজাত ফিতরত-প্রকৃতি, এমন কি যেসব মুশরিকের মাঝে আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রেরিত হয়েছিলেন তারাও তাওহীদে রুবুবীয়্যাহকে স্বীকার করত এবং তা অস্বীকার করত না।
আল্লাহ বলেন:
)قُلْ مَن يَرْزُقُكُم مِّنَ السَّمَاء وَالأَرْضِ أَمَّن يَمْلِكُ السَّمْعَ والأَبْصَارَ وَمَن يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيَّتَ مِنَ الْحَيِّ وَمَن يُدَبِّرُ الأَمْرَ فَسَيَقُولُونَ اللّهُ فَقُلْ أَفَلاَ تَتَّقُونَ(
অর্থ: "বল, আসমান ও যমীন থেকে কে তোমাদের রিযিক দেন? অথবা কে (তোমাদের) শ্রবণ ও দৃষ্টিসমূহের মালিক? আর কে মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন আর জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন? কে সব বিষয় পরিচালনা করেন? তখন তারা অবশ্যই বলবে, 'আল্লাহ'। সুতরাং তুমি বল, 'তার পরও কি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে না?" [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৩১]
এ প্রকার তাওহীকে খুব কম সংখ্যক মানুষই অস্বীকার করে, যারা অস্বীকার করে তারাও আবার বাহ্যিক অস্বীকার সত্ত্বেও হৃদয়ের মনিকোঠায়, নিভৃতে, স্বীকৃতি জ্ঞাপন করে থাকে। তাদের বাহ্যিক অস্বীকৃতিটা হয় কেবলই জেদ ও অহংকারের বশবর্তী হয়ে। এ বিষয়টির প্রতিই আল্লাহ তাআলা ইঙ্গিত করে বলেন,
)وَجَحَدُوا بِهَا وَاسْتَيْقَنَتْهَا أَنفُسُهُمْ ظُلْمًا وَعُلُوًّا (
অর্থ: "তারা অন্যায় ও উদ্ধতভাবে অহংকার করে নিদর্শনগুলোকে প্রত্যাখ্যান করল, যদিও তাদের অন্তর এগুলো সত্য বলে বিশ্বাস করেছিল"। (সূরা আন্‌ নামল, আয়াত: ১৪)

তৃতীয়ত: তাওহীদুল আসমা ওয়াসসিফাত
অর্থাৎ আল্লাহ যেসব গুণে নিজকে গুণান্বিত করেছেন অথবা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেসব গুণে তাঁকে গুণান্বিত করেছেন, তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং কোনরূপ আকার, সাদৃশ্য, বিকৃতি ও বিলুপ্তি ইত্যাদির আশ্রয়ে না গিয়ে, তাঁর মহত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, এমনভাবে সে গুণরাজির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। ইরশাদ হয়েছে:
)وَلِلّهِ الأَسْمَاء الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا (
অর্থ: "আর আল্লাহর রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাক।" [সূরা আল আরাফ, আয়াত: ১৮০] 
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:
) لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ(
অর্থ: "তাঁর মত কিছু নেই আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।" (সূরা আশ শুরা, আয়াত:১১)
সুতরাং কালেমায়ে "লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু" উক্ত তিন প্রকার তাওহীদের স্বীকারোক্তিকে শামিল করে।
অতএব যে ব্যক্তি এই কালেমা সম্যকরূপে অনুধাবন করে তার দাবি মুতাবিক আমল করল, অর্থাৎ শিরক বর্জন এবং একত্ববাদে বিশ্বাস করে লা ইলাহা ইল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ উচ্চারণ করল এবং সে অনুযায়ী আমল করল সেই প্রকৃত মুসলমান বলে পরিগণিত হবে। আর যে ব্যক্তি অন্তরে বিশ্বাস না রেখে কেবল বাহ্যিকভাবে মুখে উচ্চারণ করল, সাথে বাহ্যিক আমলগুলোও করে গেল, সে প্রকৃত মুসলমান নয়, সে বরং মুনাফিক। আর যে ব্যক্তি এই কালেমা মুখে উচ্চারণ করে তার দাবির বিপরীত আমল করল, সে কাফির, যদিও সে মৌখিকভাবে এই কালেমা বার বার উচ্চারণ করে চলে, তবুও।
"মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ প্রেরিত রাসূল"- এ কথার সাক্ষ্য প্রদানের তাৎপর্য হল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর নিকট হতে যে রিসালাত (বার্তা) নিয়ে এসেছেন তার উপর ঈমান ও বিশ্বাস স্থাপন করা। অর্থাৎ তাঁর আনীত বিধি-বিধানের আনুগত্য করা ও নিষেধাবলি থেকে বিরত থাকা এবং সকল কাজ তাঁর প্রদর্শিত পদ্ধতি মোতাবেক করা।
ইরশাদ হয়েছে:
)لَقَدْ جَاءكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ(
অর্থ: "নিশ্চয় তোমাদের নিজদের মধ্য থেকে তোমাদের নিকট একজন রাসূল এসেছেন, তা তার জন্য কষ্টদায়ক যা তোমাদেরকে পীড়া দেয়। তিনি তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, পরম দয়ালু।(সূরা আত তাওবা, আয়াত: ১২৮)
এ বিষয়ে আল কুরআনের আরো অনেক বাণী প্রনিধানযোগ্য, যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
)مَّنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللّهَ (
অথর্: "যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করল সে আল্লাহর আনুগত্য করল"। (সূরা আন নিসা, আয়াত: ৮০)
অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন:
)وَأَطِيعُواْ اللّهَ وَالرَّسُولَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ(
অর্থ: "আর তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ ও তার রাসূলের যাতে তোমাদেরকে দয়া করা হয়।" (সূরা আল ইমরান, আয়াত:১৩২)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:
)مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاء عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاء بَيْنَهُمْ(
অর্থ: "মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর; পরস্পরের প্রতি সদয়"। (সূরা আল ফাতহ, আয়াত: ২৯)

দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্তম্ভ: নামায প্রতিষ্ঠিত করা ও যাকাত প্রদান করা।
এ সম্পর্কে আল্লাহর ঘোষণা:
)وَمَا أُمِرُوا إِلاَّ لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاء وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ(
অর্থ: 'আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর, ইবাদাত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়; আর এটিই হল সঠিক দীন।' (সূরা আল বাইয়িনাহ, আয়াত: ৫)
আল্লাহ আরো বলেন:
)وَأَقِيمُواْ الصَّلاَةَ وَآتُواْ الزَّكَاةَ وَارْكَعُواْ مَعَ الرَّاكِعِينَ(
অর্থ "আর তোমরা নামায সুপ্রতিষ্ঠিত কর, যাকাত প্রদান কর এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।" (সূরা আল বাকারাহ, আয়াত: ৪৩)

নামায: এটা হলো আমাদের মূল আলোচ্য বিষয়।
যাকাত: হচ্ছে ঐ সম্পদ যা ধনবানের নিকট থেকে সংগৃহীত এবং ধনহীন ও যাকাতের অন্যান্য হকদারদেরকে দেওয়া হয়। যাকাত ইসলামের একটি মহান বিধান, যা দ্বারা সমাজের সদস্যদের মাঝে সংহতি, সৌহার্দ, সহযোগিতা সুনিশ্চিত হয়। যাকাতের বিধানের মাধ্যমে দরিদ্র, অসহায় ও যাকাতের হকদারের প্রতি কোনরূপ দয়া প্রদর্শন নয় বরং ধনীদের সম্পদে বিত্তহীনদের এটি একটি নির্দিষ্ট অধিকার।

চতুর্থ স্তম্ভ: রমজান মাসে রোযা পালন করা।
এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:
)يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ(
অর্থ: "হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।" (সূরা আল বাকারা, আয়াত: ১৮৩)

পঞ্চম স্তম্ভ: সক্ষম ব্যক্তির জন্য হজ পালন করা।
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহর ঘোষণাঃ
)وَلِلّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ الله غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِيْنَ(
অর্থ: "সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরয। আর যে কুফরী করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী।" (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯৭)

নামাযের ফযীলত

উপরে উল্লিখিত নাতিদীর্ঘ আলোচনায় উঠে এসেছে যে ইসলামে নামাযের গুরুত্ব অপরিসীম। নামায ইসলামের দ্বিতীয় রুকন, যা সুপ্রতিষ্ঠিত করা ব্যতীত মুসলমান হওয়া যায় না। নামাযে অবহেলা, অলসতা মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা মুতাবিক নামায পরিত্যাগ করা কুফরি, ভ্রষ্টতা এবং ইসলামের গণ্ডীবহির্ভূত হয়ে যাওয়া। সহীহ হাদীসে এসেছে,
بين الرجل وبين الكفر والشرك ترك الصلاة
অর্থ: "মুমিন ও কুফর-শিরকের মধ্যে ব্যবধান হল নামায পরিত্যাগ করা"। (মুসলিম)
এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন:
العهد الذي بيننا وبينهم الصلاة فمن تركها فقد كفر
অর্থ: "আমাদের ও তাদের মধ্যকার অঙ্গীকার হল নামায। অত:পর যে ব্যক্তি তা পরিত্যাগ করবে সে কাফির হয়ে যাবে। হাদীসটি ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেছেন এবং বর্ণনাসূত্রের নিরিখে হাদীসটিকে হাসান (সুন্দর) বলেছেন।
নামায ইসলামের স্তম্ভ ও বড় নিদর্শন এবং বান্দা ও তার প্রতিপালকের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনকারী। সহীহ হাদীসে এর প্রমাণ।রাসূলুল্লাহ সা. বলেন:
إن أحدكُم إذا صَلَّى يُناجي ربَّه
অর্থ: "নিশ্চয়ই তোমাদের কেউ যখন নামায আদায় করে তখন সে তার প্রতিপালকের সাথে (মুনাজাত করে) নির্জনে কথা বলে। 
নামায বান্দা ও তার প্রতিপালকের মহব্বত এবং তাঁর দেওয়া অনুকম্পার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রতীক। নামায আল্লাহর নিকট অতি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার প্রমাণসমূহের একটি এই যে, নামায হল প্রথম ইবাদত যা ফরয হিসেবে পালনের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং মেরাজের রাতে, আকাশে, মুসলিম জাতির উপর তা ফরয করা হয়েছে। তা ছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে, 'কোন আমল উত্তম' জিজ্ঞাসা করা হলে তার প্রত্যুত্তরে তিনি বলেছেন:
"الصلاة على وقتها"
অর্থ: "সময় মত নামায আদায় করা"। (বুখারী ও মুসলিম)।
নামাযকে আল্লাহ পাপ ও গুনাহ থেকে পবিত্রতা অর্জনের অসিলা বানিয়েছেন। হাদীসে এসেছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন
أرأيتُم لو أن نهراً بباب أحدكم يغتسل فيه كل يوم خمس مرات، هل يبقى من درنه شيء؟ قالوا: لا، قال: كذلك مثل الصلوات الخمس يَمْحُوا اللهُ بهنّ الخطايا
অর্থ: "যদি তোমাদের কারো (বাড়ীর) দরজার সামনে প্রবাহমান নদী থাকে এবং তাতে প্রত্যেক দিন পাঁচ বার গোসল করে, তাহলে কি তার (শরীরে) ময়লা বাকী থাকবে? (সাহাবীগণ) বললেন, 'না'। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, 'অনুরূপভাবে আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের দ্বারা (বান্দার) গুনাহকে মিটিয়ে দেন'। (বুখারী ও মুসলিম)
এ বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে আরো হাদীস বর্ণিত হয়েছে:
أنه كان آخر وصيته لأمته، وآخر عهده إليهم عند خروجه من الدنيا أن اتّقوا الله في الصلاة وفيما ملكت أيمانُكم. (أخرجه أحمد والنسائي وابن ماجه)
অর্থ: "নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুকালে তাঁর উম্মাতের জন্য সর্বশেষ অসিয়ত (উপদেশ) এবং অঙ্গীকার গ্রহণ ছিল, ারা যেন নামায ও তাদের দাস-দাসীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে।" (হাদীসটি ইমাম আহমাদ, নাসায়ী ও ইবনে মাজাহ বর্ণনা করেছেন)
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে নামাযের ব্যাপারে খুবই গুরুত্বারোপ করেছেন এবং নামায ও নামাযীকে সম্মানিত করেছেন। কুরআনের অনেক জায়গায় বিভিন্ন ইবাদতের সাথে বিশেষভাবে নামাযের কথা উল্লেখ করেছেন। নামাযকে তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন।
এ বিষয়ে কয়েকটি আয়াত নিম্নরূপ:
)حَافِظُواْ عَلَى الصَّلَوَاتِ والصَّلاَةِ الْوُسْطَى وَقُومُواْ لِلّهِ قَانِتِينَ(
অর্থ "তোমরা সমস্ত নামাযের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে (মাধ্যম) আসরের নামায। আর আল্লাহর সমীপে কাকুতি-মিনতির সাথে দাঁড়াও"। (সূরা আল বাকারাহ, আয়াত: ২৩৮)
)وَأَقِمِ الصَّلَاةَ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاء وَالْمُنكَرِ (
অর্থ: "আর তুমি নামায সুপ্রতিষ্ঠিত কর। নিশ্চয় নামায অশালীন এবং অন্যায় কাজ থেকে বারণ করে"। (সূরা আল-আনকাবুত, আয়াত: ৪৫)
)يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اسْتَعِينُواْ بِالصَّبْرِ وَالصَّلاَةِ إِنَّ اللّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ(
অর্থ: "হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।" (সূরা আল বাকারা, আয়াত: ১৫৩)
) إِنَّ الصَّلاَةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا(
অর্থ: "নিশ্চয় নামায মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরয।" (সূরা আন নিসা, আয়াত: ১০৩)
নামায পরিত্যাগকারীর জন্য আল্লাহর আযাব অপরিহার্য।
ইরশাদ হয়েছে:
)فَخَلَفَ مِن بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا(
অর্থ: "অতঃপর তাদের পরে আসল এমন এক অসৎ বংশধর যারা সালাত বিনষ্ট করল এবং কুপ্রত্তির অনুসরণ করল। সুতরাং তারা শীগ্রই জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে"। (সূরা মারয়াম, আয়াত: ৫৯)
আল্লাহর বিধান অনুযায়ী, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যের মাধ্যমে, তাঁর ক্রোধ ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে নামায সুপ্রতিষ্ঠিত করা ও সময়মত তা আদায় করা প্রতিটি মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য।

তাহারাত (পবিত্রতা)

তাহারাত বলতে শরীর, কাপড় এবং নামাযের স্থান সবগুলোর পবিত্রতাকেই বুঝায়। শরীরের পবিত্রতা দুইভাবে হয়:
প্রথমত: হাদসে আকবর বা বড় নাপাকী থেকে গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন, বড় নাপাকী স্বামী-স্ত্রীর মিলন অথাব অন্য কোন কারণে বীর্যস্খলন কিংবা হায়েয-নেফাসের কারণে হয়ে থাকে, তা থেকে পবিত্রতা অর্জনের নিয়তে চুলসহ শরীরের সর্বাঙ্গে পানি বয়ে দেয়ার মাধ্যমে এ গোসল সম্পন্ন হয়।
দ্বিতীয়তঃ ওযুঃ এ বিষয়ে আল্লাহ বলেনঃ
)يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلاةِ فاغْسِلُواْ وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُواْ بِرُؤُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَينِ (
অর্থ: "হে মুমিনগণ! তোমরা যখন নামাযে দণ্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত কর)"। (সূরা আল মায়েদা, আয়াত: ৬)
উক্ত আয়াতে এমন কয়েকটি কার্য অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যেগুলো ওযু করাকালীন সম্পাদন করা অত্যাবশ্যক। আর তা হল:
১। মুখমণ্ডল ধৌত করা। এর মধ্যে কুলি করা এবং নাকে পানি দিয়ে নাক পরিস্কার করাও অন্তর্ভুক্ত।
২। কনুইসহ দুই হাত ধৌত করা।
৩। সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করা। আর সম্পূর্ণ মাথা বলতে দুই কানও অন্তর্ভুক্ত।
৪। দুই পায়ের গিরাসহ ধৌত করা।
কাপড় ও নামাযের স্থানের তাহারাতের অর্থ হলো পেশাব, পায়খানা এবং এ জাতীয় অন্যান্য অপবিত্র বস্তু থেকে পবিত্র হওয়া।

ফরয নামায

ইসলাম মুসলমানদের উপর দিন ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছে। আর এগুলো হল, ফজরের নামায, যোহরের নামায, আসরের নামায, মাগরিবের নামায এবং এশার নামায।
১। ফজরের নামায: ফজরের নামায দুই রাকাত। এর সময় ফজরেসানী অর্থাৎ রাতের শেষাংশে, পূর্বাকাশে, শ্বেত আভা প্রসারিত হওয়া থেকে নিয়ে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত।
২। যোহরের নামায: যোহরের নামায চার রাকাত। এর সময় মধ্যকাশ থেকে সূর্য ঢলে যাওয়ার পর মূল ছায়া ব্যতীত প্রত্যেক জিনিসের ছায়া তার সমান হওয়া পর্যন্ত।
৩। আসরের নামায: আসরের নামায চার রাকাত। এর সময় যোহরের সময় শেষ হবার পর আরম্ভ হয় যাওয়ালের ছায়া ছাড়া প্রত্যেকটি জিনিসের ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত। (এটি সবচে উত্তম ওয়াক্ত) আর জরুরী ওয়াক্ত সূর্য নিস্তেজ হয়ে রোদের হলুদ রং হওয়া পর্যন্ত।
৪। মাগরিবের নামায: মাগরিবের নামায তিন রাকাত। এর সময় সূর্যাস্তের পর থেকে শফক্বে আহমার অর্থাৎ পশ্চিম আকাশে লোহিত রং অদৃশ্য হওয়ার আগ পর্যন্ত।
৫। এশার নামায: এশার নামায চার রাকাত। এর সময় মাগরিবের সময় শেষ হওয়ার পর থেকে রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত। অথবা রাতের প্রথম অর্ধাংশ পর্যন্ত।

নামায যেভাবে আদায় করবেন

উল্লিখিত বিবরণ অনুযায়ী নামাযের স্থান ও শরীরের পবিত্রতা অর্জনের পর নামাযের সময় হলে নফল অথবা ফরয, যে কোন নামায পড়ার ইচ্ছা করুন না কেন, অন্তরে দৃঢ়সংকল্প নিয়ে কিব্‌লা অর্থাৎ পবিত্র মক্কায় অবস্থিত কাবা শরীফের দিকে মুখ করে একাগ্রতার সাথে দাঁড়িয়ে যাবেন এবং নিম্নবর্ণিত কর্মগুলো করবেন:
১। সেজদার জায়গায় দৃষ্টি রেখে তাক্‌বীরে তাহ্‌রীমা (আল্লাহু আকবার) বলবেন।
২। তাকবীরের সময় কান বরাবর অথবা কাঁধ বরাবর উভয় হাত উঠাবেন।
৩। তাকবীরের পর নামায শুরুর একটি দু'আ পড়বেন, পড়া সুন্নাত। দু'আটি নিম্নরূপ:
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلا إلَهَ غَيْرُكَ
উচ্চারণ: সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তা'আলা জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুকা।
অর্থ: "প্রশংসা এবং পবিত্রতা বর্ণনা করছি আপনার হে আল্লাহ! বরকতময় আপনার নাম। অসীম ক্ষমতাধর ও সুমহান আপনি। আপনি ভিন্ন আর কোন উপাস্য নেই"।
ইচ্ছা করলে উক্ত দু'আর পরিবর্তে এই দোআ পড়া যাবে:
"اَللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، اَللَّهُمَّ نَقِّنِي مِنْ خَطَايَايَ كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، اَللَّهُمَّ اغْسِلْنِي مِنْ خَطَايَايَ بِالْمَاْءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ"
উচ্চারণ: "আল্লাহুম্মা বাইদ্‌ বাইনী ওয়া বাইনা খাতাইয়াইয়া কামা বা'আত্‌তা বাইনাল মাশরিকি ওয়াল মাগরিবি, আল্লাহুম্মা নাক্‌কিনী মিন খাতাইয়াইয়া কামা য়ুনাক্‌কাছ ছাওবুল আবইয়াযু মিনাদ্‌দানাসি, আল্লাহুম্মাগ্‌সিল্‌নী মিন্‌ খাতাইয়াইয়া বিল মায়ি ওয়াছ্‌ ছালজি ওয়াল বারাদি"।
অর্থ: "হে আল্লাহ! আমাকে ও আমার গুনাহের মাঝে এতটা দূরত্ব সৃষ্টি করুন যতটা দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ঠিক ঐভাবে পাপমুক্ত করুন যেভাবে সাদা কাপড় ময়লামুক্ত হয়। হে আল্লাহ! আপনি আমার গুনাহসমূহকে পানি দিয়ে ও বরফ দিয়ে এবং শিশির দ্বারা ধুয়ে দিন"। (বুখারী ও মুসলিম)
৪। তারপর বলবেন:
أَعُوْذُ باللهِِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
উচ্চারণ: "আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম, বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম"।
অর্থ: "আমি আশ্রয় চাচ্ছি আল্লাহর নিকট অভিশপ্ত শয়তান থেকে। আরম্ভ করছি দয়াবান কৃপাশীল আল্লাহর নামে।" 
এর পর সূরা ফাতিহা পড়বেন:
)الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ * الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ * مَلِكِ يَوْمِ الدِّينِ * إِيَّاكَ نَعْبُدُ وإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ * اهدِنَا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ * صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ غَيرِ المَغضُوبِ عَلَيهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ ( آمين
অর্থ: "সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি সৃষ্টিকুলের রব। পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। বিচার দিবসের মালিক। আপনারই আমরা ইবাদত করি এবং আপনারই নিকট সাহায্য চাই। আমাদেরকে সরল পথের হিদায়াত দিন। তাদের পথ, যাদেরকে আপনি নিয়ামত দিয়েছেন। যাদের উপর আপনার ক্রোধ আপতিত হয় নি এবং যারা পথভ্রষ্টও নয়।"
৫। তারপর কুরআন হতে মুখস্থ যা সহজ তা পড়বেন। যেমন:
)إِذَا جَاء نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ * وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا * فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا(
অর্থ: "যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন, তখন আপনি আপনার পালককর্তার পবিত্রতা ঘোষণা করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল।"
৬। তারপর আল্লাহু আকবার (আল্লাহ সবচেয়ে বড়) বলে দু হাত কাঁধ বরাবর অথবা কান বরাবর উত্তোলন করে দুই হাত হাঁটুর উপর রেখে পিঠ সোজা ও সমান করে রুকু করবেন এবং বলবেন 
سُبْحَانَ رَبِّيِ الْعَظِيمِ
উচ্চারণ: "সুবহানা রাব্বিয়্যাল আযীম (পবিত্র মহান রবের পবিত্রতা ঘোষণা করছি) 
এটি তিনবার অথবা তিনের অধিকবার বলা সুন্নত।
তারপর বলবেন:
"سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَه"
"সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ" (আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে শুনলেন যে তাঁর প্রশংসা করল) 
বলে রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে, ইমাম হোক অথবা একাকী হোক, সোজা দাঁড়িয়ে গিয়ে দু হাত কাঁধ বরাবর অথবা কান বরাবর উত্তোলন করে বলতে হবে:
"رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْداً كَثِيراً طَيِّباً مُبَارَكاً فِيهِ مِلْءَ السَّماَوَاتِ وَمِلْءَ الأَرْضِ وَمِلْءَ ما بَيْنَهُمَا وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ"
উচ্চারণ: রব্বানা ওয়া লাকাল হামদু হামদান কাসীরান তাইয়্যেবান মুবারাকান ফীহ, মিল্‌ আস্‌সামাওয়াতি ওয়া মিলআলআরযি, ওয়ামিলআ মা বাইনাহুমা ওয়া মিলআ মা শী'তা মিন শাইয়িন বা'দু"।
অর্থ: " হে আমার প্রতিপালক! প্রশংসা আপনারই জন্য, প্রচুর প্রশংসা, যে প্রশংসা পবিত্র-বরকতময়, আকাশ ভরে, যমীন ভরে এবং এ উভয়ের মধ্যস্থল ভরে, এমনকি আপনি যা ইচ্ছে করেন তা ভরে পরিপূর্ণরূপে আপনার প্রশংসা"।
আর যদি মুক্তাদী হয় তাহলে রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে উপরোল্লেখিত দু'আ رَبَّنَا ولَكَ الْحَمْد .... (রাব্বানা ওয়ালাকাল হামদু...) শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
৮। তারপর اللهُ أَكْبَرُ (আল্লাহু আকবর) বলে বাহুকে তার পার্শ্বদেশ থেকে এবং ঊরুকে উভয় পায়ের রান থেকে আলাদা রেখে সেজদা করবেন। সেজদা পরিপূর্ণ হয় সাতটি অঙ্গের উপর, কপাল-নাক, দুই হাতের তালু, দুই হাঁটু এবং দুই পায়ের অঙ্গুলির তলদেশ। সেজদার অবস্থায় তিনবার অথবা তিন বারেরও বেশি এই দুআ পড়বেন।
سُبْحَانَ رَبِّيَ الاَعْلَى
উচ্চারণঃ সুবহানা রাব্বিয়াল আ'লা (পবিত্রতা ঘোষণা করছি আমার মহান প্রতিপালকের) 
বলবেন এবং ইচ্ছা মত বেশী করে দু'আ করবেন।
৯। তারপর اللهُ أَكْبَرُ (আল্লাহু আকবার) বলে মাথা উঠিয়ে পা খাড়া রেখে বাম পায়ের উপর বসে দুই হাত, রান ও হাঁটুর উপর রেখে বলবেন,
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَعَافِنِي وَارَزُقْنِي وَاهْدِنِي، وَاجْبُرْنِيْ
উচ্চারণ: "আল্লাহুম্মাগর্ফি‌লী ওর্য়া‌হামনী ওয়া আফিনী ওয়ারজুকনী ওয়াহ্‌দিনী ওয়াজবুরনী"।
অর্থ: " হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, দয়া করুন, নিরাপদে রাখুন, জীবিকা দান করুন, সরল পথ দেখান, শুদ্ধ করুন"।
১০। তারপর اللهُ أَكْبَر (আল্লাহু আকবার) বলে দ্বিতীয় সেজদা করবেন এবং প্রথম সেজদায় যা করেছেন তাই করবেন।
১১। তারপর اللهُ أَكْبَر (আল্লাহু আকবার) বলে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য উঠে দাঁড়াবেন। (এই ভাবে প্রথম রাকাত পূর্ণ হবে।)
১২। তারপর দ্বিতীয় রাকাআতে সূরা ফাতিহা ও কুরআনের কিছু অংশ পড়ে রুকু করবেন এবং দুই সেজদা করবেন, অর্থাৎ পুরোপুরিভাবে প্রথম রাকাতের মতোই করবেন।
১৩। তারপর দ্বিতীয় রাকাতের দুই সেজ্‌দা থেকে মাথা উঠানোর পর দুই সাজ্‌দার মাঝের ন্যায় বসে তাশাহ্‌হুদের এই দু'আ পড়বেন:
"اَلتَّحِيَاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، اَلسَّلامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، اَلسَّلامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِاللهِ الصَالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وأَشهدُ أَنَّ مُحَمَّداً عبْدُهُ وَرَسُولُهُ"
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস্‌সলাওয়াতু ওয়াত্‌তাইয়েবাতু, আস্‌সালামু আলাইকা আইয়ুহান্‌নাবিয়্যু ওয়া রহ্‌মাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ, আস্‌সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস্‌ সলেহীন, আশ্‌হাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্‌হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহ"।
অর্থ : "সকল তাযীম ও সম্মান আল্লাহর জন্য, সকল সালাত আল্লাহর জন্য এবং সকল ভাল কথা ও কর্মও আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপানার প্রতি শান্তি, আল্লাহর রহমত ও তাঁর বরকত বর্ষিত হোক। আমাদের উপরে এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের উপরে শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল।"
তবে নামায যদি দুই রাকাত বিশিষ্ট হয়। যেমন: ফজর, জুমআ, ঈদ তাহলে আত্‌তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ..... পড়ার পর একই বৈঠকে এই দরূদ পড়বেন:
"اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، وَ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ"
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়ালা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইব্‌রাহীমা ওয়ালা আলি ইব্‌রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ, ওয়া বারিক আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়ালা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাক্‌তা আলা ইব্‌রাহীমা ওয়ালা আলি ইব্‌রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ"।
অর্থ: " হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ ও তার বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করুন, যেরূপভাবে আপনি ইব্‌রাহীম আলাইহিস সালাম ও তার বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করেছিলেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত সম্মানিত।"
আপনি মুহাম্মাদ ও তার বংশধরদের উপর বরকত বর্ষণ করুন, যেরূপভাবে আপনি ইব্‌রাহীম ও তার বংশধরদের উপর বরকত বর্ষণ করেছিলেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত, সম্মানিত"।
তারপর চারটি জিনিস থেকে এই বলে পানাহ চাইবেন:
"اَللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ"
উচ্চারণ: "আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন আযাবি জাহান্নামা ওয়া মিন আযাবিল্‌ ক্বাবরি ওয়ামিন ফিতনাতিল মাহ্‌ইয়া ওয়াল্‌মামাতি ওয়া মিন ফিত্‌নাতিল মাসীহিদ্‌দাজ্জাল"।
অর্থ: "হে আল্লাহ! আমি অবশ্যই আপনার নিকট জাহান্নাম ও কবরের শাস্তি থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। দজ্জালের ফিত্‌না এবং জীবন মৃত্যুর ফিত্‌না থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।"
উক্ত দু'আর পর ইচ্ছেমত দুনিয়া ও আখিরতের কল্যাণ কামনার্থে মাস্‌নুন দু'আ পড়বেন। ফরয নামায হোক অথবা নফল সকল ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি প্রযোজ্য। তারপর ডান দিকে ও বাম দিকে (গর্দান ঘুরিয়ে)
"اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ"
উচ্চারণ: "আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ" বলবেন।
আর নামায যদি তিন রাকাত বিশিষ্ট হয়, যেমন মাগরিব। অথবা চার রাকাত বিশিষ্ট হয়, যেমন যোহর, আসর ও এশা, তাহলে দ্বিতীয় রাকাতের পর (সালাম না ফিরিয়ে) "আত্‌তাহিয়্যাতু লিল্লাহি.... পড়ার পর 'আল্লাহু আকবার' বলে দু হাত কাঁধ বরাবর অথবা কান বরাবর উত্তোলন করে সোজা দাঁড়িয়ে গিয়ে শুধু সূরা ফাতিহা পড়ে প্রথম দু' রাকাতের মত রুকু ও সাজদা করতে হবে এবং চতুর্থ রাকাতেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। তবে (শেষ তাশাহ্‌হুদে) বাম পা, ডান পায়ের নীচে রেখে ডান পা খাড়া রেখে মাটিতে নিতম্বের (পাছার) উপর বসে মাগরিবের তৃতীয় রাকাতের শেষে এবং যোহর, আসর ও এশার চতুর্থ রাকাতের শেষে, শেষ তাশাহ্‌হুদ (আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহ......, ও দরূদ পড়বেন। ইচ্ছে হলে অন্য দু'আও পড়বেন। এরপর ডান দিকে (গর্দান) ঘুরিয়ে (আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ" বলবেন। আর এভাবেই নামায সম্পন্ন হয়ে যাবে।

জামাআতের সহিত নামায

আল্লাহ তাআলা বলেন:
)وَأَقِيمُواْ الصَّلاَةَ وَآتُواْ الزَّكَاةَ وَارْكَعُواْ مَعَ الرَّاكِعِينَ( (سورة البقرة: ৪৩)
অর্থ: "তোমরা নামায সুপ্রতিষ্ঠিত কর এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।" সূরা আল বাকারা, আয়াত: ৪৩
জামাআতের সাথে নামায পড়ার আগ্রহ ও উৎসাহ প্রদানে এবং তার ফযীলত সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে, অপর দিকে জামাআত বর্জন ও জামাতের সাথে নামায আদায়ে অবহেলাকারীর বিরুদ্ধেও তার অবহেলার ক্ষেত্রে সতর্কতকারী হাদীস এসেছে।
ইসলামের কিছু ইবাদত একত্রিত ও সম্মিলিতভাবে করার বিধান রয়েছে। এ বিষয়টি ইসলামের উত্তম বৈশিষ্ট্যসমূহের একটি বলা যায়। যেমন, হজপালনকারীরা হজের সময় সম্মিলিতভাবে হজ পালন করেন, বছরে দু'বার ঈদুল ফিত্‌র ও ঈদুল আযহায় (কুরবানী ঈদে) মিলিত হন এবং প্রতিদিন পাঁচবার জামাআতের সাথে নামায আদায় করার উদ্দেশ্যে একত্রিত হন।
নামাযের জন্য এই দৈনিক সম্মিলন মুসলিমদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ, সহযোগিতা এবং সুন্দর সম্পর্ক স্থাপনের প্রশিক্ষণ দেয়। এটি মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ, সহযোগিতা, পরিচিতি, যোগাযোগ এবং প্রীতিপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টির গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
জামাআতের সহিত নামায মুসলিমদের মধ্যে সাম্য, আনুগত্য, সততা এবং প্রকৃত ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দেয়। কেননা ধনী-গরীব, রাজা-প্রজা, ছোট-বড় একই স্থানে ও কাতারে দাঁড়ায়, যা দ্বারা আন্তরিকতা সৃষ্টি হয়। দ্বন্দ্ব, বিচ্ছিন্নতা, বর্ণ-জাতি, স্থান ও ভাষাগত গোঁড়ামি বিলুপ্ত হয়।
জামাআতের সহিত নামায কায়েমের মধ্যে রয়েছে মুসলিমদের সংস্কার, ঈমানের পরিপক্কতা ও তাদের মধ্যে যারা অলস তাদের জন্য উৎসাহ প্রদানের উপকরণ। জামাতের সাথে নামায আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর দ্বীন প্রকাশ পায় এবং কথায় ও কর্মে মহান আল্লাহর প্রতি আহ্বান করা হয়, জামাআতের সাথে নামায কায়েম ঐ সকল বৃহৎ কর্মের ন্তর্ভুক্ত যা দ্বারা বান্দাগণ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে এবং এটি মর্যাদা ও নেকি বৃদ্ধির কারণ।

জুমআর নামায

দ্বীন ইসলাম একতাকে পছন্দ করে। মানুষকে একতার প্রতি আহ্বান করে। বিচ্ছিন্নতা ও ইখতেলাফকে ঘৃণা ও অপছন্দ করে। তাই ইসলাম মুসলমানদের পারস্পরিক পরিচিতি, প্রেমপ্রীতি ও একতার এমন কোন ক্ষেত্র বাদ রাখেনি যার প্রতি আহ্বান করেনি। জুমআর দিন মুসলমানদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন। তারা সেদিন আল্লাহর স্মরণ ও গুণকীর্তনে সচেষ্ট হয় এবং দুনিয়াবী কাজ-কর্ম ও ব্যস্ততা পরিত্যাগ করে আল্লাহ প্রদত্ত অপরিহার্য বিধান ফরয নামায আদায় করার জন্য এবং সাপ্তাহিক দারস তথা জুমআর খুতবা -যার মাধ্যমে খতীব ও আলিমগণ কল্যাণমুখী জীবনযাপনের পন্থা ও পদ্ধতি বয়ান করে থাকেন, সমাজের নানা সমস্যা তুলে ধরে ইসলামের দৃষ্টিতে তার সমাধান কী তা উপস্থাপন করেন - শোনার জন্য আল্লাহর ঘর মসজিদে জমায়েত হয়।
আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:
)يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِي لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ * فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ(
অর্থ: "হে মুমিনগণ! জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে এসো এবং বেচা-কেনা বন্ধ কর, এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝ। অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে ভূপৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর যাতে তোমরা সফলকাম হও"। (সূরা জুমআ, আয়াত: ৯-১০)
জুমআ প্রতিটি মুক্বীম (বাড়ীতে অবস্থানকারী), আযাদ (স্বাধীন). বালিগ (প্রাপ্ত বয়স্ক) মুসলমানের উপর ওয়াজিব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়মিত জুমআর নামায আদায় করেছেন এবং তিনি জুমআ পরিত্যাগকারী সম্পর্কে কঠোর উক্তি পেশ করে বলেছেন:
لَيَنتَهِيَنَّ أَقْوامٌ عَنْ وَدْعِهِمْ الجمعاتِ أو لَيختُمَنَّ الله على قُلوبِهِمْ ثُمَّ لَيَكُونَنَّ من الغافِلِينَ (مسلم).
অর্থ: "যারা জুমআ পরিত্যাগ করে তাদের অবশ্যই ক্ষান্ত হওয়া উচিত, অন্যথায় আল্লাহ নিশ্চয় তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেবেন। ফলে তারা গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হবে নিশ্চিতরূপেই"। (মুসলিম)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন:
"مَنْ تَرَكَ ثلاثَ جَمَعٍ تَهَاوَناً طَبَعَ الله عَلى قَلْبِهِ"
অর্থ: "যে ব্যক্তি অবহেলা করে তিন জুম্‌আ পরিত্যাগ করবে আল্লাহ তার অন্তরে মোহর মেরে দেবেন"।
জুমআর নামায দুই রাকাত। জুমআর ইমামের পিছনে একতেদা করে জুমআর এ দু'রাকাত নামায আদায় করতে হবে।
জুমআর নামাযের জন্য জামে মসজিদ হওয়া শর্ত। অর্থাৎ যে মসজিদে জুমআর নামায আদায় করা হয়, যেখানে মুসলমানরা একত্রিত হয় এবং তাদের ইমাম তাদেরকে সম্বোধন করে কথা বলেন, নসীহত-উপদেশ দেন, সরল পথ দেখান।
জুম্‌আর খুতবা চলাকালীন কথা বলা হারাম। এমনকি যদি কেউ তার পাশের ব্যক্তিকে বলে, 'চুপ থাক' তাহলেও সে কথা না বলার বিধান ভঙ্গ করল বলে পরিগণিত হবে।

মুসাফিরের নামায

আল্লাহ তাআলা বলেন:
) يُرِيدُ اللّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلاَ يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ (
অর্থ: "আল্লাহ তোমাদের সহজ চান, কঠিন চান না।" (সূরা আল বাকারাহ, আয়াত: ১৮৫)
ইসলাম একটি সহজ ধর্ম। আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের বাইরে কোন দায়িত্ব অর্পন করেন না এবং এমন কোন আদেশ তার উপর চাপিয়ে দেন না, যা পালনে সে অক্ষম। তাই সফরে কষ্টের আশংকা থাকায় আল্লাহ সফর অবস্থায় দুটো কাজ সহজ করে দিয়েছেন।

এক: নামায কসর করে পড়া। অর্থাৎ চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামায দু'রাকাত করে পড়া। অতএব, ( হে প্রিয় পাঠক পাঠিকা) আপনি সফরকালে যোহর, আসর এবং এশার নামায চার রাকাতের পরিবর্তে দু'রাকাত পড়বেন। তবে মাগরিব ও ফজর আসল অবস্থায় বাকি থাকবে। এ দুটো কসর করে পড়লে চলবে না। নামাযে কসর আল্লাহর তরফ থেকে রুখসত তথা সহজিকরণ। আর আল্লাহ যা সহজ করে দেন তা মেনে নেয়া ও সে অনুযায়ী আমল করা আল্লাহর কাছে পছন্দের বিষয়। যেরূপভাবে তিনি পছন্দ করেন আযীমত (আবশ্যিক বিধান) যথার্থরূপে বাস্তবায়িত হওয়া।
পায়ে হেঁটে, জীব-জন্তুর পিঠে চড়ে, ট্রেনে, নৌযানে, প্লেনে এবং মোটর গাড়িতে সফর করার ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য নেই। সফরের মাধ্যম যাই হোক না-কেন, নামায কসর করে পড়ার ক্ষেত্রে এর কোন প্রভাব নেই। অর্থাৎ শরীয়তের পরিভাষায় যাকে সফর বলা হয় এমন সকল সফরেই চার রাকাতবিশিষ্ট নামায কসর করে পড়ার বিধান রয়েছে।

দুই: দুই নামায একত্র করে আদায় করা।
মুসাফিরের জন্য দুই ওয়াক্তের নামায এক ওয়াক্তে জমা করা বৈধ। অতএব, মুসাফির যোহর ও আসর একত্র করে অনুরূপভাবে মাগরিব ও এশা একত্র করে পড়তে পারবে। অর্থাৎ দুই নামাযের সময় হবে এক এবং ঐ একই সময়ে দুই ওয়াক্তের নামায আলাদা আলাদাভাবে আদায় করার অবকাশ রয়েছে। যোহরের নামায পড়ার পর বিলম্ব না করে আসরের নামায পড়বে। অথবা মাগরিবের নামায পড়ার পরেই সাথে সাথে এশার নামায পড়বে। যোহর-আসর অথবা মাগরিব-এশা ছাড়া অন্য নামায একত্রে আদায় করা বৈধ নয়। যেমন ফজর, যোহর অথবা আসর মাগরিবকে জমা করা বৈধ নয়।

মাসনূন যিকরসমূহ

নামাযের পর তিন বার 'আসতাগফিরুল্লাহ' (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি), পড়া সুন্নাত। তারপর এই দোয়া পড়বে:

"اَللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلامُ ومِنْكَ السَّلامُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الجِلالِ وَالإِكْرَامِ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، اَللَّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الجَدُّ "
উচ্চারণ: "আল্লাহুম্মা আনতাস্‌সালামু ওয়া মিনকাস্‌ সালামু তাবারাকতা ইয়া যাল্‌জালালি ওয়াল ইকরাম, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্‌দাহু লা-শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইইন ক্বাদীর। আল্লাহুম্মা লা মানিয়া' লিমা আ'তাইতা, ওয়া লা মু'তিয়া লিমা মানা'তা, লা ইয়ানফাউ যালজাদ্দি মিনকালজাদ্দু"।
অর্থ, হে আল্লাহ! আপনি শান্তিময়, আপনার কাছ থেকেই শান্তি আসে। আপনি বরকতময় হে প্রতাপশালী সম্মানের অধিকারী! আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। তিনি একক, তাঁর কোন অংশীদার নেই। তাঁরই বিশাল রাজ্য এবং তাঁরই সমস্ত প্রশংসা। আর তিনিই সমস্ত কিছুর উপর ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! আপনি যা দান করতে চান তা কেউ রোধ করতে পারে না। আপনার শাস্তি হতে কোন ধনীকে তার ধন রক্ষা করতে পারে না"।
তারপর ৩৩ বার করে আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা, প্রশংসা বর্ণনা এবং তাকবীর পড়বে। অর্থাৎ ৩৩ বার سُبْحَانَ اللهِ (সুবহানাল্লাহ), ৩৩ বার اَلحَمْدُ لِلَّهِ (আলহামদুলিল্লাহ) এবং ৩৩ বার اَللهُ أَكْبَرْ (আল্লাহু আকবার) পড়বে। সবগুলো মিলে ৯৯ বার হবে অতঃপর একশত পূর্ণ করার জন্য বলবে,
"لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ"
উচ্চারণ: "লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইইন ক্বাদীর"।
অর্থ: "আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। তিনি একক তাঁর কোন অংশীদার নেই। তাঁর বিশাল রাজ্য এবং সমস্ত প্রশংসা। আর তিনিই যাবতীয় বস্তুর উপর শক্তিমান"।
তারপর "আয়াতুল্‌ কুরসী", (قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ) "কুল হুয়াল্লাহু আহাদ", (قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ) "কুল আউযুবি রব্বিল ফালাক", (قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ) "কুল আউযুবি রব্বিন নাস" পড়বে।
কুলহু আল্লাহু আহাদ, ফালাক, নাস এই তিনটি সূরা ফজর ও মাগরিবের নামাযের পর তিন বার করে পড়া মুস্তাহাব।
উপরে উল্লেখিত যিক্‌র ছাড়া ফজর ও মাগরিবের পর এই দু'আ দশ বার পড়া মুস্তাহাব।
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِ وَ يُمِيْتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
উচ্চারণ: " লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ইউহয়ী ওয়া ইয়ুমীতু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইইন ক্বাদীর"।
অর্থাৎঃ "আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। তিনি একক, তাঁর কোন অংশীদার নেই। তাঁরই রাজত্ব এবং তাঁরই সমস্ত প্রশংসা। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। আর তিনিই সকল বস্তুর উপর শক্তিমান"।
এ সমস্ত যিকর ফরয নয়, সুন্নাত।

সুন্নত নামায

সফর ছাড়া বাড়ীতে অবস্থান কালে বারো রাকআত সুন্নাত নামায নিয়মিত আদায় করা সকল মুসলিম নর নারীর জন্য মুস্তাহাব। আর তা হল যোহরের পূর্বে চার রাকাত ও পরে দু'রাকাত। মাগরিবের পরে দু'রাকাত। এশার পর দু' রাকাত ও ফজরের আগে দু'রাকাত।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফর অবস্থায় যোহর, মাগরিব ও এশার সুন্নত ছেড়ে দিতেন। তবে ফজরের সুন্নত ও বিতরের নামায সফর অবস্থায়ও নিয়মিত আদায় করতেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। ইরশাদ হয়েছে:
)لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ (
অর্থ: "নিশ্চয় আল্লাহর রাসূলের জীবনে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদশ।" (সূরা আল আহযাব, আয়াত :২১)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
صَلُّوا كَما رَأَيْتُمُوني أُصَلِّي
অর্থ: "তোমরা আমাকে যেভাবে নামায পড়তে দেখেছ ঠিক সেভাবে নামায পড়"। (বুখারী)
আল্লাহই তাওফিক দাতা।

وصلى الله على نبينا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين.
আমীন


সংকলন: ড. আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ আলী আযযাইদ
সম্পাদক: আবু শুআইব মুহাম্মাদ সিদ্দীক
সূত্র: ইসলাম, ওয়াকফ, দাওয়াহ ও ইরশাদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সৌদী আরব

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ