সালাত ও পবিত্রতা সম্পর্কে কয়েকটি বিশেষ প্রবন্ধ

 


وجوب أداء الصلاة في الجماعة
জামা‘আতে সালাত আদায় করার অপরিহার্যতা
শায়খ আব্দুল আযীয ইবন বায
মুসলিম পাঠকবৃন্দের প্রতি আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বাযের একটি বিশেষ আহবান। আল্লাহ তাআলা  তাঁর সন্তুষ্টির কাজে তাদের তাওফীক দান করুন এবং আমাকেও তাদের সেই সমস্ত লোকের অন্তর্ভুক্ত করুন যারা তাঁকে ভয় করে তার নির্দেশ মেনে চলে। আমীন!

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানতে পারলাম যে, অনেক লোক জামা‘আতে সালাত আদায়ে অবহেলা করছেন এবং কোনো কোনো আলেমের ছাড়প্রবণ বক্তব্যকে এর পক্ষে দলীল হিসেবে পেশ করছেন। তাই, আমার কর্তব্য হলো, সবাইকে এই বিষয়ের গুরুত্ব ও এর ভয়ঙ্কর দিকগুলো স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া এবং এই কথাও বলে দেওয়া যে, কোনো মুসলিমের পক্ষে এমন বিষয়ে অবহেলার আচরণ করা উচিত নয় যে বিষয়কে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মহান কিতাবে এবং রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর হাদীসে বিশেষ মর্যাদা ও গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাব কুরআনে কারীমে বহুবার উল্লেখ করে বিষয়টির মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন; এই সালাত নিয়মিত পালন করা ও জামা‘আতের সাথে তা আদায় করার নির্দেশ প্রদান করে একথাও পরিস্কার করে বলে দিয়েছেন যে, এই সালাতের প্রতি অবজ্ঞা ও অবহেলা প্রদর্শন করা মুনাফিকদের অন্যতম লক্ষণ। আল্লাহ তাআলা তার সুস্পষ্ট গ্রন্থে নির্দেশ প্রদান করে বলেন:
﴿حَٰفِظُواْ عَلَى ٱلصَّلَوَٰتِ وَٱلصَّلَوٰةِ ٱلۡوُسۡطَىٰ وَقُومُواْ لِلَّهِ قَٰنِتِينَ ٢٣٨ ﴾ [البقرة: ٢٣٨] 
অর্থ: “তোমরা সালাতের হেফাযত কর এবং বিশেষ করে মধ্যবর্তী সালাতের, আর তোমরা আল্লাহর জন্য একাগ্রচিত্তে দাড়াও।” (সূরা বাক্বারাহঃ ২৩৮)
সে বান্দাহ কিভাবে সালাতের হেফাযত বা তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা শিখবে যে তার অপর মুমিন ভাইয়ের সাথে সালাত আদায় না করে তার মর্যাদার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে? আল্লাহ তাআলা  বলেন,
﴿ وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱرۡكَعُواْ مَعَ ٱلرَّٰكِعِينَ ٤٣ ﴾ [البقرة: ٤٣] 
অর্থ: “আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা কর, যাকাত প্রদান কর এবং সালাত আদায়কারীদের সাথে সালাত পড়।” (সূরা বাক্বারাহঃ ৪৩)
জামা‘আতে সালাত পড়া এবং অন্যান্য মুসল্লিদের সাথে সালাতে শরীক হওয়া যে ওয়াজিব এ পবিত্র আয়াত তার অকাট্য প্রমাণ। শুধু সালাত কায়েম করা যদি উদ্দেশ্য হতো তাহলে আয়াতের শেষাংশে واركعوا مع الراكعين বলার স্পষ্ট কোনো উপলক্ষ দেখা যায় না। যেহেতু আয়াতের প্রথম অংশেই আল্লাহ তাআলা  সালাত কায়েম করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা অন্য একটি আয়াতে বলেন,
﴿ وَإِذَا كُنتَ فِيهِمۡ فَأَقَمۡتَ لَهُمُ ٱلصَّلَوٰةَ فَلۡتَقُمۡ طَآئِفَةٞ مِّنۡهُم مَّعَكَ وَلۡيَأۡخُذُوٓاْ أَسۡلِحَتَهُمۡۖ فَإِذَا سَجَدُواْ فَلۡيَكُونُواْ مِن وَرَآئِكُمۡ وَلۡتَأۡتِ طَآئِفَةٌ أُخۡرَىٰ لَمۡ يُصَلُّواْ فَلۡيُصَلُّواْ مَعَكَ وَلۡيَأۡخُذُواْ حِذۡرَهُمۡ وَأَسۡلِحَتَهُمۡۗ﴾ [النساء: ١٠٢] 
অর্থ: “এবং তুমি যখন তাদের মধ্যে অবস্থান করবে ও তাদের সাথে সালাত কায়েম করবে তখন তাদের একদল তোমার সাথে যেন দাড়ায় এবং তারা যেন সশস্ত্র থাকে। তাদের সিজদা করা হলে তারা যেন তোমাদের পিছনে অবস্থান করে; আর অপর একদল যারা সালাতে শরীক হয় নাই তারা তোমার সাথে এসে যেন সালাতে শরীক হয় এবং তারা যেন সতর্ক ও সশস্ত্র থাকে।” (সূরা নিসা - ১০২)
এখানে আল্লাহ তাআলা যখন যুদ্ধাবস্থায় জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় করা ওয়াজিব করে দিয়েছেন, তখন শান্ত অবস্থায় কি তা ওয়াজিব হবে না?
কাউকে যদি জামাতে সালাত পড়া থেকে বিরত থাকার অনুমতি দেওয়া হত তাহলে শত্রুর সম্মুখে কাতারবন্দী অবস্থায় এবং হামলার মুখোমুখি মুসলিম সৈন্যগণ জামাতে সালাত পড়া থেকে রেহাই পাওয়ার অধিকতর যোগ্য হতেন। তাদেরকে যখন এর অনুমতি দেওয়া হয়নি তখন জানা গেল যে জামাতে সালাত আদায় করা অন্যতম ওয়াজিবগুলোর অন্তর্ভুক্ত এবং এথেকে বিরত থাকা কারো পক্ষে জায়েয নয়।
সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেনঃ
«لقد هممت أن آمر بالصلاة فتقام، ثم آمر رجلا أن يصلي بالناس، ثم إنطلق برجال معهم حزم من حطب إلى قوم لا يشهدون الصلاة، فأحرق عليهم بيوتهم»
অর্থ: আমি মনস্থ করছিলাম যে, আমি সালাতের জন্য নির্দেশ দেই যাতে সালাত কায়েম হয়; এরপর লোকজনকে নির্দেশ দেই যাতে সালাত কায়েম হয়; এরপর একজন লোককে নির্দেশ দেই সে যেন লোকজন নিয়ে জামাতে সালাত পড়ে, আর আমি এমন কিছু লোক নিয়ে যাদের সাথে কাঠের আঁটি থাকবে, ঐসব লোকের দিকে যাই যারা সালাতে হাজির হয় না এবং সেখানে গিয়ে তাদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেই।” (বুখারী ও মুসলিম)
সহীহ মুসলিম শরীফে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,
« «لَقَدْ رَأَيْتُنَا وَمَا يَتَخَلَّفُ عَنِ الصَّلَاةِ إِلَّا مُنَافِقٌ قَدْ عُلِمَ نِفَاقُهُ، أَوْ مَرِيضٌ، إِنْ كَانَ الْمَرِيضُ لَيَمْشِي بَيْنَ رَجُلَيْنِ حَتَّى يَأْتِيَ الصَّلَاةِ»
“অবশ্যই আমরা দেখেছি যে, মুনাফিক, যাদের নিফাক পরিজ্ঞাত এবং অসুস্থ লোক ব্যতীত জামাতে সালাত পড়া থেকে কেউ পিছনে থাকত না। এমনকি, (রোগী হলেও) দু’জন লোকের সাহায্যে চলে এসে সালাতের হাজির হতো।”
তিনি আরো বলেন,
«إِنْ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَّمَنَا سُنَنَ الْهُدَى، وَإِنَّ مِنْ سُنَنَ الْهُدَى الصَّلَاةَ فِي الْمَسْجِدِ الَّذِي يُؤَذَّنُ فِيهِ»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে হেদায়াতের সুন্নাত সমূহ (নিয়ম-পদ্ধতি) শিক্ষা দিয়েছেন। তন্মধ্যে অন্যতম সুন্নাত হলো মসজিদে গিয়ে জামাতে সালাত আদায় করা যেখানে সে জন্য আজান দেওয়া হয়।”
মুসলিম শরীফের এ অধ্যায়ে আরেকটি হাদীসে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
«مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَلْقَى اللهَ غَدًا مُسْلِمًا، فَلْيُحَافِظْ عَلَى هَؤُلَاءِ الصَّلَوَاتِ حَيْثُ يُنَادَى بِهِنَّ، فَإِنَّ اللهَ شَرَعَ لِنَبِيِّكُمْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُنَنَ الْهُدَى، وَإِنَّهُنَّ مَنْ سُنَنَ الْهُدَى، وَلَوْ أَنَّكُمْ صَلَّيْتُمْ فِي بُيُوتِكُمْ كَمَا يُصَلِّي هَذَا الْمُتَخَلِّفُ فِي بَيْتِهِ، لَتَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ، وَلَوْ تَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ لَضَلَلْتُمْ، وَمَا مِنْ رَجُلٍ يَتَطَهَّرُ فَيُحْسِنُ الطُّهُورَ، ثُمَّ يَعْمِدُ إِلَى مَسْجِدٍ مِنْ هَذِهِ الْمَسَاجِدِ، إِلَّا كَتَبَ اللهُ لَهُ بِكُلِّ خَطْوَةٍ يَخْطُوهَا حَسَنَةً، وَيَرْفَعُهُ بِهَا دَرَجَةً، وَيَحُطُّ عَنْهُ بِهَا سَيِّئَةً، وَلَقَدْ رَأَيْتُنَا وَمَا يَتَخَلَّفُ عَنْهَا إِلَّا مُنَافِقٌ مَعْلُومُ النِّفَاقِ، وَلَقَدْ كَانَ الرَّجُلُ يُؤْتَى بِهِ يُهَادَى بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ حَتَّى يُقَامَ فِي الصَّفِّ»
“যে ব্যক্তি মুসলিম হয়ে আনন্দের সাথে সাথে আগামী দিন আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করতে চায় সে যেন এই সালাতগুলি নিয়মিত সেখানে আদায় করে যেখানে এগুলোর জন্য আজানের মাধ্যমে আহ্বান জানানো হয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদের নবীর জন্য হেদায়াতের অনেক নিয়ম-নীতি প্রবর্তন করে গেছেন, আর এগুলোই হলো হেদায়াতের সত্যিকার নিয়ম-পদ্ধতি। যদি তোমরা জামাতে না এসে আপন ঘরে ঘরে সালাত পড়, যেমন ঐ পিছে পড়া (ঘরে সালাত আদায়কারী) লোক আপন ঘরে সালাত পড়ে, তা হলে তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাত ছেড়ে দিলে। আর যদি তোমাদের নবীর সুন্নাত ছেড়ে দাও তাহলে তোমরা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। যখন কোনো ব্যক্তি পবিত্রতা অর্জন করে এবং উত্তমভাবে ওজু সম্পাদন করে, অতঃপর সে কোনো মসজিদের দিকে চলে তখন তার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে একটি করে নেকী লিখা হয়, তার মর্যাদা এক স্তর উপরে উঠানো হয় এবং এর দ্বারা তার একটি পাপ মোচন করা হয়। আমাদের জানা মতে মুনাফেক, যার নেফাক পরিজ্ঞাত, ব্যতীত আর কেউ জামাতে সালাত পড়া থেকে বিরত থাকতো না। এমনও লোক ছিল যাকে দু’জনের মধ্যে করে মসজিদে আনা হতো এবং সালাতের সারিতে দাঁড় করানো হতো।”
মুসলিম শরীফের আরেকটি হাদীসে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে,
أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلٌ أَعْمَى، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنَّهُ لَيْسَ لِي قَائِدٌ يَقُودُنِي إِلَى الْمَسْجِدِ، فَسَأَلَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُرَخِّصَ لَهُ، فَيُصَلِّيَ فِي بَيْتِهِ، فَرَخَّصَ لَهُ، فَلَمَّا وَلَّى، دَعَاهُ، فَقَالَ: «هَلْ تَسْمَعُ النِّدَاءَ بِالصَّلَاةِ؟» قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: «فَأَجِبْ»
‘একদা একজন অন্ধ লোক এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললো, হে আল্লাহর রাসূল, আমার কোনো চালক নেই যে সে আমাকে মসজিদে নিয়ে যাবে, আমার জন্য কি অনুমতি আছে আমি ঘরে সালাত পড়তে পারি? তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দিলেন। তারপর লোকটি প্রর্ত্যাবর্তন করতে লাগলে রাসূল বললেন, তুমি কি আযান শুনতে পাও? সে বলল, হ্যাঁ, তখন তিনি বললেন, “তা হলে সালাতে উপস্থিত হও।”
জামাতে সালাত পড়া এবং আল্লাহর ঘরে ঘরে অর্থাৎ মসজিদে মসজিদে যেখানে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নাম সোচ্চার করে জিকির করার অনুমতি দিয়েছেন তা প্রতিষ্ঠা করা যে ওয়াজিব তার প্রমাণে বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা অনেক। সুতরাং প্রত্যেক মুসলিমের উপর ওয়াজিব এই বিষয়ের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা, এর দিকে অগ্রগামী হওয়া, এই সম্পর্কে পরস্পর ওসিয়ত করা এবং সন্তান-সন্ততি, পরিবার-পরিজন, প্রতিবেশী ও সকল মুসলিমকে এ জন্য উদ্বুদ্ধ করা। আর এগুলো হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ পালনার্থে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কর্তৃক নিষিদ্ধ বিষয় থেকে সতর্ক থাকার জন্যে এবং আহলে নিফাক থেকে সরে থাকার মানসে, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন দোষে দোষারোপ করেছেন; তন্মধ্যে তাদের নিকৃষ্টতম দোষ হলো সালাতের বেলায় অলসতা প্রদর্শন করা। আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿ إِنَّ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ يُخَٰدِعُونَ ٱللَّهَ وَهُوَ خَٰدِعُهُمۡ وَإِذَا قَامُوٓاْ إِلَى ٱلصَّلَوٰةِ قَامُواْ كُسَالَىٰ يُرَآءُونَ ٱلنَّاسَ وَلَا يَذۡكُرُونَ ٱللَّهَ إِلَّا قَلِيلٗا ١٤٢ مُّذَبۡذَبِينَ بَيۡنَ ذَٰلِكَ لَآ إِلَىٰ هَٰٓؤُلَآءِ وَلَآ إِلَىٰ هَٰٓؤُلَآءِۚ وَمَن يُضۡلِلِ ٱللَّهُ فَلَن تَجِدَ لَهُۥ سَبِيلٗا ١٤٣ ﴾ [النساء: ١٤٢،  ١٤٣] 
অর্থ: মুনাফিকগণ আল্লাহকে প্রতারিত করতে চেষ্টা করে; বস্তুত তিনিই তাদেরকে প্রতারিত করে থাকেন এবং যখন তারা সালাতে দাঁড়ায় তখন তারা শৈথিল্যের সাথে দাঁড়ায়, কেবল লোক দেখানোর জন্য এবং তারা আল্লাহকেই অল্পই স্মরণ করে; এরা দো-টানায় দোদুল্যমান, না এদের দিকে, না ওদের দিকে; এবং আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তুমি তার জন্য কোনো পথ পাবে না।” (সূরা নিসাঃ ১৪২-১৪৩)
জামাতের সাথে সালাত আদায় থেকে পিছে থাকা সম্পূর্ণভাবে সালাতত্যাগী হওয়ার এক প্রধান কারণ। এটা জানা কথা যে, সালাত ত্যাগ করা কুফরী, চরম ভ্রামিত্ম ও ধর্মত্যাগী কাজ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«بين الرجل وبين الكفر والشرك ترك الصلاة»
“মুমিন লোক এবং কুফরী ও শির্ক এর মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণকারী কাজ হলো সালাত ত্যাগ করা।” (মুসলিম শরীফে জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে এই হাদীস বর্ণিত।) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«العهد الذي بيننا وبينهم الصلاة، فمن تركها فقد كفر»
অর্থ: আমাদের মধ্যে এবং কাফেরদের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণকারী বৈশিষ্ট্য হলো সালাত, যে ব্যক্তি সালাত ত্যাগ করে সে কুফরী করে।” সালাতের মর্যাদা বর্ণনা, তা নিয়মিত আদায়, আল্লাহ তাআলা  কর্তৃক নির্দেশিত পদ্ধতিতে তার প্রতিষ্ঠা করা এবং তা ত্যাগকারীর প্রতি ভীতি প্রদর্শন সম্পর্কে কুরআনের আয়াত ও হাদীসের সংখ্যা অনেক, আশা করি তা সকলের জানা রয়েছে।
সুতরাং প্রত্যেক মুসলিমের উপরে কর্তব্য, সে যেন এই সালাতসমূহ তার সঠিক সময়ে নিয়মিতভাবে আদায় করে, আল্লাহর প্রবর্তিত পদ্ধতি অনুসারে সম্পাদন করে এবং অপর মু’মিন ভাইদের সাথে আল্লাহর ঘর মসজিদসমূহে জামাতের সাথে সম্পাদন করে; আর তা হবে আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনুগত্যের ভিত্তিতে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর শাস্তি থেকে পরিত্রাণ লাভের আশায়। যখন সত্য প্রকাশ পায় এবং তার প্রমাণাদি স্পষ্ট হয়ে উঠে তখন কারো পক্ষে কোনো লোকের কথা বা অভিমতের ভিত্তিতে তা থেকে দূরে থাকা জায়েয নয়। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلًا ٥٩ ﴾ [النساء: ٥٩] 
অর্থ: হে মু’মিনগন! কোনো বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে তা উপস্থাপিত কর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাছে; যদি তোমরা আল্লাহ তা‘আলা ও আখিরাতের দিনের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে থাক। এটাই উত্তম ও পরিণামে প্রকৃষ্টতর।” (সূরা নিসাঃ ৫৯)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٦٣ ﴾ [النور: ٦٣] 
অর্থ: “সুতরাং যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচারণ করে তারা সতর্ক হয়ে যাক যে, তাদের উপর বিপর্যয় আপতিত হবে অথবা আপতিত হবে তাদের উপর কঠিন শাস্তি।” (সূরা নূরঃ ৬৩)
জামাতে সালাত পড়ার মধ্যে যে অনেক উপকার ও বিপুল স্বার্থ নিহিত রয়েছে তা কারো কাছে অবিদিত নয়। তন্মধ্যে সবচেয়ে স্পষ্ট বিষয়টি হলো-
·      পারস্পরিক পরিচয় লাভ, নেক ও পরহেজগারীর কাজে সহযোগিতা এবং পরস্পরকে সত্য অবলম্বনের ও তার উপর ধৈর্য্য ধারণের ওছিয়ত প্রদান করা।
·      জামাতে সালাত পড়ার অন্যান্য উপকারের মধ্যে রয়েছে জামাতে অনুপস্থিত লোকদের জামাতের প্রতি উৎসাহিত করা।
·      জামাতে সালাত পড়ার অন্যান্য উপকারের মধ্যে রয়েছে অজ্ঞদের শিক্ষা প্রদান করা, আহলে নিফাকদের বিরাগভাজন করা ও তাদের থেকে দূরবর্তী হওয়া, আল্লাহর নিদর্শনগুলো তাঁর বান্দাহদের মধ্যে প্রকাশ করা এবং কথা ও কাজের মাধ্যমে আল্লাহর পানে লোকদের আহ্বান করা ইত্যাদি।
আল্লাহ তাআলা আমাকে ও সকল মুসলিমদের তাঁর সন্তোষজনক এবং দুনিয়া ও আখেরাতের ক্ষেত্রে মঙ্গলজনক কাজের তাওফীক দান করুন; আমাদের সবাইকে আমাদের নফসের অনিষ্টতা, আমাদের কাজসমূহের অমঙ্গল এবং কাফের ও মুনাফেকদের সাদৃশ্যপনা থেকে মুক্ত রাখুন। তিনিই তো মহান দাতা ও পরম করুণাময়।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
আল্লাহ তাআলা আমাদের নবী মুহাম্মদ, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণের উপর দরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন। (আমীন)


সালাতের শর্তাবলী
সালাতের শর্তাবলী মোট ৯টি। যথাঃ
  1. ইসলাম
  2. বুদ্ধিমত্তা
  3. ভাল-মন্দ পার্থক্যের জ্ঞান হওয়া
  4. নাপাকি দূর করা
  5. ওজু করা
  6. সতরে আওরাত অর্থাৎ লজ্জাস্থানসহ শরীরের নির্ধারিত অঙ্গগুলো আবৃত রাখা
  7. সালাতের সময় উপস্থিত হওয়া
  8. কিবলামুখী হওয়া এবং
  9. নিয়ত করা
ওজুর ফরজসমূহ
এগুলো মোট ৬টি। যথাঃ
  1. মুখমণ্ডল ধৌত করা; পানি দিয়ে নাক ঝাড়া ও কুলি করা এর অন্তর্ভুক্ত,
  2. কনুই পর্যন্ত উভয় হাত ধৌত করা,
  3. সম্পূর্ণ মাথা মসেহ করা; উভয় কান উহার অন্তর্ভুক্ত,
  4. গোড়ালী পর্যন্ত উভয় পা ধৌত করা,
  5. ওজুর কার্যাবলী পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন করা এবং
  6. এগুলো পরপর সম্পাদন করা
উল্লেখ থাকে যে, মুখমণ্ডল, উভয় হাত ও পা তিনবার করে ধৌত করা মুস্তাহাব। একইভাবে কুলি করা ও নাকে পানি দিয়ে তিনবার ঝাড়া মুস্তাহাব। ফরজ মাত্র একবারই। তবে, মাথা মসেহ একাধিকবার করা মুস্তাহাব নয়। এই ব্যাপারে কতিপয় সহীহ হাদীস বর্ণিত আছে।
সালাতের রুকন (ফরজ)সমূহ
সালাতের রুকন ১৪টি। যথাঃ
  1. সমর্থ হলে সালাতে দণ্ডায়মান হওয়া,
  2. ইহরামের তাকবীর বলা,
  3. সূরা ফাতিহা পড়া,
  4. রুকুতে যাওয়া,
  5. রুকু হতে উঠে সোজা দণ্ডায়মান হওয়া,
  6. সপ্তাঙ্গের উপর ভর করে সিজদা করা,
  7. সিজদা থেকে উঠা,
  8. উভয় সিজদান মধ্যে বসা,
  9. সালাতের সকল কর্ম সম্পাদনে স্থিরতা অবলম্বন করা,
  10.  সকল রুকন ধারাবাহিকভাবে তরতীবের সাথে সম্পাদন করা,
  11.  শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ পড়া,
  12.  তাশাহহুদ পড়ার জন্য শেষ বারে বসা,
  13.  নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদ পড়া এবং
  14.  ডানে-বামে দুই সালাম প্রদান করা।
সালাতের ওয়াজিবসমূহ
এগুলোর সংখ্যা হলো মোট ৮টি। যথাঃ
  1. ইহরামের তাকবীর ব্যতীত অন্যান্য তাকবীরগুলো বলা,
  2. ইমাম ও একা নামাজীর পক্ষে ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ্’ বলা,
  3. সকলের পক্ষে ‘রববানা ওয়া লাকাল হামদ’ বলা,
  4. রুকুতে ‘সুবহানা রব্বিয়াল ‘আজীম’ বলা,
  5. সিজদায় ‘সুবহানা রব্বিয়াল আ‘লা’ বলা,
  6. উভয় সিজদার মধ্যে ‘রাব্বিগফিরলী’ বলা,
  7. প্রথম তাশাহ্হুদ পড়া
  8. দ্বিতীয় রাকা‘আতে প্রথম তাশাহ্হুদ পড়ার জন্য বসা।[1]

الوضوء والغسل والصلاة
ওজু, গোসল ও সালাত সম্পাদনের পদ্ধতি
- শায়খ মুহাম্মাদ ইবন ছালেহ আল-উছাইমীন
সর্ববিধ প্রশংসা আল্লাহ রাববুল আলামীনের জন্য এবং দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক সর্বশেষ নবী, মুত্তাকীনদের ইমাম ও সৃষ্টির সেরা আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীগণের উপর।
আল্লাহ তা‘আলার প্রতি মুখাপেক্ষী বান্দাহ মুহাম্মদ ইবন ছালেহ আল-উসাইমীন বলছিঃ
আল্লাহর কিতাব ও সুন্নাতে রাসূলের আলোকে, ওজু, গোসল ও সালাত সম্পর্কে এই ক্ষুদ্র পুস্তিকাটি লিখা হলো।


كيفية الوضوء
ওজুর পদ্ধতি
ওজু
এটি একটি অপরিহার্য পবিত্রতা যা ছোট ছোট নাপাকী যেমন পেশাব, পায়খানা, বায়ু নির্গমণ, গভীর নিদ্রা ও উটের গোশত ভক্ষণ ইত্যাদি থেকে অর্জন করতে হয়।
ওজু সম্পাদনের পদ্ধতি
  1. প্রথমে মনে মনে ওজুর নিয়ত করবে। এই নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা যাবে না। কেননা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওজু, সালাত বা অন্য কোনো ইবাদতের শুরুতে নিয়ত উচ্চারণ করেননি। দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ তাআলা তো অন্তরের সবকিছু সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত, সুতরাং অন্তরস্থ কোনো বিষয় সম্পর্কে উচ্চারণ করে তাঁকে খবর দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
  2. এরপর আল্লাহ নাম নিতে গিয়ে বলবেন : “বিসমিল্লাহ”।
  3. তারপর উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করবে।
  4. অতঃপর কুলি করবে এবং পানি দিয়ে তিনবার নাক ঝাড়বে।
  5. এরপর আপন চেহারা তিনবার ধৌত করবে, প্রস্থে এক কান থেকে অপর কান পর্যন্ত এবং দৈর্ঘ্যে মাথার চুলের গোড়া থেকে দাড়ির নীচ পর্যন্ত।
  6. এরপর উভয় হাত আঙ্গুলির অগ্রভাগ থেকে কনুই পর্যন্ত তিনবার ধৌত করবে; প্রথমে ডানহাত পরে বামহাত ধৌত করবে।
  7. এরপর ভিজা হাতদ্বয় দিয়ে একবার মাথা মসেহ করবে; হাতদ্বয় প্রথমে মাথার সম্মুখভাগ থেকে পশ্চাৎভাগে নিয়ে যাবে এবং পুনরায় মাথার অগ্রভাগে নিয়ে আসবে।
  8. তারপর উভয় কান একবার করে মসেহ করবে; উভয় তর্জনী অঙ্গুলীর অগ্রভাগ উভয় কানের ভিতরে ঢুকাবে এবং উভয় বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দিয়ে বহির্ভাগ মসেহ করবে।
  9. এরপর উভয় পা আঙ্গুলসমূহের অগ্রভাগ থেকে উভয় গোড়ালী পর্যন্ত তিনবার ধৌত করবে; প্রথমে ডান পা পরে বাম পা ধৌত করবে।

كيفية الغسل
গোসল
গোসল
একটি অপরিহার্য পবিত্রতা যা জানাবাত ও হায়েয (ঋতু) জাতীয় বড় নাপাকি থেকে অর্জন করতে হয়।
গোসল করার পদ্ধতি
  1. প্রথমতঃ অন্তরে গোসলের নিয়ত করবে; মুখে তা উচ্চারণ করা যাবে না।
  2. এরপর আল্লাহ তাআলার নাম নিতে গিয়ে বলবে : ‘বিসমিল্লাহ’
  3. তারপর পূর্ণভাবে ওজু করবে।
  4. এরপর মাথার উপর পানি ঢালবে; পানি যখন ছড়িয়ে পড়বে তখন গায়ের উপর তিনবার ব্যাপকভাবে পানি ঢেলে দিবে।
  5. অতঃপর সম্পূর্ণ শরীর ধৌত করবে।


التيمم
তায়াম্মুম
তায়াম্মুম
একটি অপরিহার্য পবিত্রতা, যা পানি না পাওয়া অথবা পানি ব্যবহারে অক্ষম অবস্থায় মাটির দ্বারা ওজু বা গোসলের পরিবর্তে অর্জন করা হয়।
তায়াম্মুম করার পদ্ধতি
প্রথমে অজু বা গোসল যে বিষয়ের পরিবর্তে তায়াম্মুম করবে তার নিয়ত করবে। অতঃপর মাটিতে অথবা মাটি সংশ্লিষ্ট দেয়াল বা অন্য কিছুর উপর হাত মারবে এবং চেহারা ও উভয় পাঞ্জা মসেহ করবে।

كيفية الصلاة
সালাত
সালাত
আর তা বহুবিধ কথা ও কাজ সম্বলিত এমন একটি ইবাদত যার শুরু হয় ‘তাকবীর’ (আল্লাহু আকবার) বলে এবং শেষ হয় ‘সালাম’ (আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ) বলে।
যখন কোনো মুসলিম ব্যক্তি সালাত আদায়ের ইচ্ছা পোষণ করে তখন তার উপর ওয়াজিব হয় সে যেন এর পূর্বে ওজু করে যদি সে ছোট নাপাকি অবস্থায় থাকে; অথবা সে যেন তায়াম্মুম করে যদি সে পানি না পায় অথবা পানি ব্যবহারে সে অক্ষম হয়। এরপর সে যেন তার সমস্ত শরীর, কাপড় ও সালাতের স্থান নাজাসাত (নাপাক বস্তু) থেকে পবিত্র রাখে।
সালাত আদায়ের পদ্ধতি
1.         প্রথমে সম্পূর্ণ শরীরসহ কিবলামূখী হবে; অন্য কোনো দিকে ফিরবে না বা লক্ষ্যও করবে না।
2.        এরপর যে সালাত আদায়ের ইচ্ছা পোষণ করে অন্তরে তার নিয়ত করবে; এই নিয়ত মুখে উচ্চারণ করবে না।
3.        এরপর ইহরামের তাকবীর দিতে গিয়ে বলবে ‘আল্লাহু আকবার’ এবং তাকবীরের সময় উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাবে।
4.         তারপর ডান হাতের পাঞ্জা বাম হাতের পাঞ্জার বহির্ভাগে ধরে বুকের উপর রাখবে।
5.        এরপর ইস্তেফতাহের (প্রারম্ভিক) দু‘আ পড়বে এবং বলবে,
«اللهم باعد بيني وبين خطاياي كما باعدت بين المشرق والمغرب اللهم تقّني من خطاياي كما ينقى الثوب الأبيض من الدنس اللهم أغسلني من خطاياي بالماء والثلج والبرد»
উচ্চারণঃ “আল্লাহুম্মা বা-ইদ বাইনী বাইনা খাতায়ায়া- কামা বা‘আদতা বাইনাল মাশরিক্বী ওয়াল মাগরিবি, আল্লাহুম্মা নাক্কীনী মিন খাতায়ায়া কামা ইনাক্কাছ্ ছাওবুল আবইয়াদু মিনাদ্ দানাসী, আল্লাহুম্মাগছিলনী মিনাল খাতায়ায়া- বিল মা-ঈ ওয়াস সালজী ওয়াল বারাদি।”
অর্থ: হে আল্লাহ! পূর্ব ও পশ্চিম যেমন পরস্পর থেকে দূরে আমাকে তেমনি আমার পাপ থেকে দূরে রাখ। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে পাপ মুক্ত করে এমনভাবে পরিস্কার করে দাও, যেমন সাদা কাপড় ধৌত করলে তা ময়লা থেকে পরিস্কার হয়। হে আল্লাহ! তুমি আমার পাপসমূহ পানি, বরফ ও শিশির দ্বারা ধৌত করে দাও।” অথবা বলবেঃ
«سُبْحَانَكَ اللهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، تَبَارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ»
উচ্চারণঃ “সুব্হানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়াতাবারাকাস্ মুকা ওয়াতা‘আলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।”
অর্থ: “সমস্ত মর্যাদা ও গৌরব তোমারই হে আল্লাহ! সমস্ত প্রশংসা কেবল তোমারই জন্য, তোমার নামেই সমস্ত বরকত ও কল্যাণ এবং তোমার মর্যাদা অতি উচ্চে। আর তুমি ব্যতীত সত্যিকার কোনো মা‘বুদ নেই।
6.        এরপর বলবেঃ
أعوذ بالله من الشيطان الرجيم
        “আউজু বিল্লাহি মিনাশ্ শাইত্বনির রজীম” অর্থাৎ আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ তাআলার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
7.        অতঃপর বিসমিল্লাহ বলে সূরা ফাতিহা পড়বে এবং বলবেঃ
﴿ بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ١ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ٣ مَٰلِكِ يَوۡمِ ٱلدِّينِ ٤ إِيَّاكَ نَعۡبُدُ وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ ٥ ٱهۡدِنَا ٱلصِّرَٰطَ ٱلۡمُسۡتَقِيمَ ٦ صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمۡتَ عَلَيۡهِمۡ غَيۡرِ ٱلۡمَغۡضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ ٧ ﴾ [الفاتحة: ١،  ٧] 
অর্থ: ১. যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের রব্ব। ২. যিনি অতি মেহেরবান ও পরম দয়ালু। ৩. যিনি প্রতিফল দিবসের মালিক। ৪. হে আল্লাহ, আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি। ৫. আমাদেরকে সরল-সঠিক পথ দেখাও। ৬. ঐ সমস্ত লোকের পথ যাদেরকে তুমি নিয়ামত দান করেছ। ৭. ওদের পথ নয় যাদের প্রতি তোমার গজব নাজিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট।
তারপর বলবেঃ ‘আমী-ন’ অর্থাৎ হে আল্লাহ কবুল কর’।
8.        এরপর পবিত্র কুরআন শরীফ থেকে যে পরিমাণ সহজসাধ্য হয় পড়বে, তবে ফজরের সালাতে দীর্ঘ ক্বিরাত পড়ার চেষ্টা করবে।
9.        তারপর রুকুতে যাবে অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি তা‘যীম প্রদর্শনার্থে মাথাসহ আপন পিঠ নত করবে। রুকুতে যাওয়ার সময় তাকবীর বলবে এবং উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাবে। সুন্নাত হলোঃ নামাজী রুকুতে তার পিঠ নত করবে, মাথা তার বরাবর রাখবে এবং উভয় হাতের আঙ্গুলিগুলি খোলা অবস্থায় উভয় হাঁটুতে রাখবে।
10.      রুকুতে তিনবার سبحان ربي العظيم ‘সুবহানা রব্বিয়াল ‘আযীম’ বলবে। আর যদি এর অতিরিক্ত ‘সুব্হানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আল্লাহুম্মাগফিরলি’ বলে তা হলে উত্তম হয়।
11.      তারপর রুকু হতে এই বলে মাথা উঠাবেঃ سمع الله لمن حمده ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ্’ এবং উভয় হাত উভয় কাঁধ বরাবর উঠাবে। মুক্তাদী হলে উহার পরিবর্তে বলবেঃربنا ولك الحمد  ‘রব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’ অর্থাৎ হে আল্লাহ তুমি আমাদের রব এবং তোমারই জন্য সর্ববিধ প্রশংসা।
12.      এরপর রুকু থেকে মাথা উঠানোর পর বলবেঃ
ربنا ولك الحمد ملء السموات والأرض وملء ما شئت من شيء بعد
উচ্চারণঃ “রব্বানা ওয়া লাকাল হামদ মিলআস সামাওয়াতি ওয়া মিলআল আরদ ওয়া মিলআ মা শি’তা মিন শাইয়িন বা‘দু”
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তোমার জন্য ঐ পরিমাণ প্রশংসা যা আকাশ ভর্তি করে দেয়, যা পৃথিবী পূর্ণ করে দেয় এবং এই গুলি ছাড়া তুমি অন্য যা কিছু চাও তা পূর্ণ করে দেয়।
13.      এরপর বিনীত হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে প্রথম সিজদা করবে এবং সিজদায় গিয়ে বলবেঃ ‘আল্লাহু আকবার’ অর্থাৎ আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। সাতটি অঙ্গের উপর সিজদাহ করবে; অঙ্গগুলো হলো: নাকসহ কপাল, উভয় হাতের তালু, উভয় হাঁটু এবং উভয় পায়ের অগ্রভাগ। উভয় মাসল শরীরের উভয় কিনারা থেকে ব্যবধানে রাখবে, যমীনের উপর উভয় বাহু কনুই পর্যন্ত বিছাবে না এবং অঙ্গলীসমূহের অগ্রভাগ কিব্লার দিকে রাখবে।
14.     সিজদায় গিয়ে তিনবার বলবেঃ سبحان ربي الأعلى “সুবহানা রব্বিয়াল আ‘লা” অর্থাৎ আমার সর্বোচ্চ প্রভুর প্রশংসা করছি।
আর যদি এর অতিরিক্ত নিম্নের তাসবীহও পাঠ করে তাহলে উত্তম হয়ঃ
سبحانك اللهم ربنا وبحمدك اللهم اغفرلي
“সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রব্বানা ওয়া বিহামদিকা, আল্লাহুম্মাগফিরলী”
অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমাদের প্রভু তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, তোমার প্রশংসা সহকারে, হে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা কর।”
15.     এরপর “আল্লাহু আকবার” বলে সিজদাহ থেকে মাথা উঠাবে।
16.     তারপর উভয় সিজদাহ’র মধ্যবর্তী সময়ে বাম পায়ের উপর বসবে এবং ডান পা খাড়া করে রাখবে। ডান হাত ডান জানুর শেষ প্রান্তে অর্থাৎ হাটু সংলগ্ন অংশের উপর রাখবে এবং খিনছির ও বিনছির আঙ্গুলদ্বয় মিলিয়ে রাখবে, তর্জনী উঠিয়ে রাখবে ও দু‘আর সময় নাড়াবে এবং বৃদ্ধাঙ্গুলীর অগ্রভাগ মধ্যমাঙ্গুলীর অগ্র ভাগের সাথে গোলাকারে মিলিয়ে রাখবে। এইভাবে বাম হাতের আঙ্গুলগুলি খোলা অবস্থায় হাঁটু সংলগ্ন বাম জানুর উপর রাখবে।
17.     উভয় সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকে বলবেঃ
رب اغفرلي وارحمني واهدني وارزقني واجبرني وعافني
18.    এরপর আল্লাহর প্রতি বিণীত হয়ে কথা ও কাজে প্রথম সিজদাহ’র মত দ্বিতীয় সিজদাহ্ করবে এবং সিজদায় যাওয়ার সময় তাকবীর বলবে।
19.     এরপর দ্বিতীয় সিজদাহ থেকে আল্লাহু আকবার’ বলে মাথা উঠাবে এবং কথা ও কাজে প্রথম রাকা‘আতের মত দ্বিতীয় রাকা‘আত পড়বে, তবে প্রথম রাকা‘আতের মত প্রারম্ভিক দু‘আ পড়তে হবে না।
20.    তারপর দ্বিতীয় রাকা‘আত শেষে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে বসবে এবং উভয় সিজদাহর মধ্যবর্তী বৈঠকের মতই বসবে।
21.     এই বৈঠকে তাশাহ্হুদ (আত্তাহিয়্যাতু) পড়বে; আর তাশাহ্হুদ হলোঃ
التحيات لله والصلوات والطيبات السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته السلام علينا وعلى عباد الله الصالحين، أشهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن محمدا عبده ورسوله -
«اللهم صل على محمد وعلى آل محمد كما صليت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد، اللهم بارك على محمد وعلى آل محمد كما باركت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنّك حميد مجيد» (رواه البخاري ومسلم)
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত্ব ত্বাইয়্যিবাতু আস্‌সালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিইয়্যু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু, আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস্ সালিহীন। আশহাদু আল্-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।
আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ কামা সাল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া আলা আ-লি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
আল্লাহুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদিন, কামা বা-রাকতা আ-লা ইবরাহীমা ওয়া আলা আ-লি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ।
অর্থ: “যাবতীয় সম্মান-সম্ভাষণ, সকল সালাত, ও পবিত্রতা সমস্তই আল্লাহর জন্য, হে নবী আপনার উপর আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো মা‘বুদ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দাহ ও তাঁর রাসূল।
হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি সালাত প্রেরণ কর, যেমনভাবে সালাত প্রেরণ করেছিলে ইবরাহীম আলাইহিস্ সালাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান।
হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি বরকত প্রেরণ কর, যেমনভাবে বরকত প্রেরণ করেছিলে ইবরাহীম আলাইহিস্ সালাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান।
এরপর বলবেঃ
أعوذ بالله من عذاب جهنم ومن عذاب القبر ومن فتنة المحيا والممات ومن فتنة المسيح الدجال -
উচ্চারণঃ “আঊযুবিল্লাহি মিন আযাবি জাহান্নামা, ওয়া মিন আজাবিল ক্বাবরি, ওয়া মিন ফিত্নাতিল্ মাহ্ইয়া ওয়াল মামাতি ওয়া মিন ফিত্নাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জালি।
অর্থ: “আমি আল্লাহর আশ্রয় কামনা করি জাহান্নামের আযাব থেকে, কবরের শাস্তি থেকে, জীবন ও মৃত্যুর যন্ত্রণা থেকে এবং মাসীহ দাজ্জালের ফেতনা থেকে।”
এরপর আপন প্রভু- প্রতিপালকের কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের মঙ্গল চেয়ে পছন্দমত যে কোনো দু‘আ করতে পারে।
22.    পরিশেষে ডান দিকে মুখ ফিরিয়ে “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বলবে। এই ভাবে বাম দিকেও মুখ ফিরিয়ে সালাম বলবে।
23.    সালাত যদি তিন রাকা‘আতী অথবা চার রাক‘আতী হয় তা হলে প্রথম তাশাহ্হুদ অর্থাৎ আশহাদু আন লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু” পড়ে থেকে যাবে।
24.    এরপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সোজা দাঁড়িয়ে যাবে এবং উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাবে।
25.    এরপর অবশিষ্ট সালাত দ্বিতীয় রাকা‘আতের বর্ণনা অনুযায়ী আদায় করবে; তবে সালাতের এই অংশে দাঁড়িয়ে শুধু সূরা ফাতিহা পড়বে।
26.    এরপর তাওয়াররুক করে বসবে অর্থাৎ ডান পা খাড়া করে রাখবে এবং বাম পা ডান পায়ের নিম্ন দিয়ে বের করে রাখবে। পাছা যমীনের উপর স্থির রাখবে এবং উভয় হাত উভয় জানুর উপর সেইভাবে রাখবে যেভাবে প্রথম তাশাহ্হুদের সময় রেখেছিল।
27.    এই বৈঠকে পূর্ণ তাশাহ্হুদ (আত্তাহিয়্যাতু) পাঠ করবে।
28.   অবশেষে “আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ” বলে প্রথমে ডান দিকে এবং পরে বাম দিকে সালাম করবে।
যে সব বিষয় সালাতে মাকরূহ

1.         সালাতের মধ্যে মাথা বা চক্ষু দিয়ে এদিক-ওদিক ভ্রুক্ষেপ করা। আকাশের দিকে চক্ষু উত্তোলন করা হারাম।
2.         সালাতের মধ্যে বিনা প্রয়োজনে নড়া-চড়া করা।
3.         সালাতের মধ্যে ব্যস্ত রাখে অথবা মনোযোগ আকর্ষণ করে এমন কোনো বিষয় সঙ্গে রাখা; যেমন, ভারী কোনো বিষয় বা রঙ্গিন কোনো কিছু যা দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
4.         সালাতের মধ্যে তাখাছ্ছুর অর্থাৎ কোমরে হাত রাখা।
أشياء مبطلة للصلاة
যে সব বিষয় সালাত বাতিল করে

1.         ইচ্ছাকৃত কথাবর্তা বলা, তা কম হলেও।
2.         সম্পূর্ণ শরীর ক্বিবলার দিক হতে ফিরে যাওয়া।
3.         পিছন দিক থেকে বাতাস বের হওয়া অথবা ওজু গোসল ওয়াজিব করে এমন কোনো বিষয় ঘটে যাওয়া।
4.         বিনা প্রয়োজনে পরপর অধিক মাত্রায় নড়াচড়া করা।
5.         হাসি, তা কম হলেও সালাত বাতিল করে।
6.         ইচ্ছা করে অতিরিক্ত রুকু, সিজদা, ক্বিয়াম বা উপবেশন করা।
7.         ইচ্ছা করে ইমামের আগে-আগে যাওয়া।
8.         ওজু ভেঙ্গে যাওয়া।


أحكام سجود السهو في الصلاة
সালাতে ভুলের সিজ্দাহ আদায় সম্পর্কে কয়েকটি হুকুম

1.         যদি কেউ সালাতে ভুল করে অতিরিক্ত কোনো রুকু, সিজদাহ ক্বিয়াম বা উপবেশন করে ফেলে তাহলে সে প্রথম সালাম ফিরিয়ে ভুলের জন্য দু’টি সিজদাহ্ দিবে এবং আবার সালাম করবে।
উদাহরণঃ কোনো লোক যোহরের সালাত পড়তে গিয়ে পঞ্চম রাকা‘আতের জন্য দাঁড়িয়ে গেল, অতঃপর তার ভুল স্মরণ হ’ল অথবা কেউ তাকে স্মরণ করিয়ে দিল, তখন সে বিনা তাকবীরে ফিরে গিয়ে বসে পড়বে এবং তাশাহ্হুদ (আত্তাহিয়্যাতু) পড়ে সালাম ফিরাবে; তারপর দুই সিজদাহ্ দিয়ে উভয় দিকে সালাম ফিরাবে। এ ভাবে যদি সে এই অতিরিক্ত কাজ সম্পর্কে সালাত শেষ হওয়ার পূর্বে অবগত না হয় তাহলে শেষ পর্যায়ে সে ভুলের দুই সিজদাহ দিবে এবং সালাম ফিরাবে।
2.        কেউ যদি ভুলে সালাত শেষ করার পূর্বে সালাম করে ফেলে এবং কিছু সময়ের মধ্যে তা স্মরণ হয়ে যায় অথবা কেউ তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় তখন সে প্রথম সালাতের উপর ভিত্তি করে অবশিষ্ট সালাত পূর্ণ করবে, তারপর সালাম করবে; অতঃপর দু’টি সিজদাহ দিয়ে আবার সালাম করবে।
উদাহরণঃ কোনো লোক যোহরের সালাত পড়তে গিয়ে ভুল করে তৃতীয় রাকা‘আতে সালাম করে ফেললো, অতঃপর স্মরণ হলো অথবা কেউ তাকে স্মরণ করিয়ে দিল; তখন সে উঠে চতুর্থ রাকা‘আত পড়ে সালাম করবে, তারপর ভুলের জন্য দুই সিজদাহ দিয়ে পুনরায় সালাম করবে। আর যদি সালাতের অনেক পরে এই ভুল স্মরণ হয় তাহলে সালাত প্রথম থেকে পুনরায় পড়তে হবে।
3.        যদি কোনো লোক প্রথম তাশাহ্হুদ (আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহ) অথবা সালাতের অন্য কোনো ওয়াজিব ভুলে ছেড়ে দেয়, তাহলে সে সালামের পূর্বে শুধু ভুলের দুই সিজদাহ আদায় করলে চলবে; অন্য কিছু করতে হবে না। আর যদি স্থান ত্যাগের পূর্বে স্মরণ হয়ে যায় তাহলে তখনই তা পড়ে নিবে; অন্য কিছু করতে হবে না। তবে স্থান ত্যাগের পর এবং পরবর্তী স্থানে পৌঁছার পূর্বে যদি স্মরণ হয়ে যায় তাহলে সেই স্থানে ফিরে তা আদায় করে নিবে।
উদাহরণঃ যদি নামাজী প্রথম তাশাহ্হুদ ভুলে না পড়ে তৃতীয় রাকা‘আতের জন্য পূর্ণ ভাবে দাঁড়িয়ে যায় তাহলে সে আর প্রত্যাবর্তন না করে শেষ বৈঠকে সালামের পূর্বে ভুলের জন্য দুই সিজদাহ আদায় করবে। আর যদি তাশাহহুদের জন্য বসে তাশাহহুদ পড়া ভুলে যায়, এরপর দাঁড়ানোর পূর্বে তার স্মরণ হয়ে যায় তাহলে তখনই সে তাশাহহুদ পড়ে সালাত পূর্ণ করে নিবে। তার অন্য কিছু করতে হবে না। এ ভাবে যদি সে তাশাহ্হুদের জন্য না বসে দাঁড়িয়ে যায় এবং পূর্ণভাবে দাঁড়ানোর পূর্বে তা স্মরণ হয়ে যায় তাহলে সে ফিরে বসে তাশাহ্হুদ পড়ে সালাত পূর্ণ করে নিবে। তবে আলেমগণের মতে এমতাবস্থায় সে ভুলের দুই সিজদাহ আদায় করবে। কেননা, সে তাশাহহুদ না পড়ে উঠতে গিয়ে সালাতে অতিরিক্ত কাজ করে ফেলেছে।
4.         কারো যদি সালাতে সন্দেহ হয় যে, সে দু’রাকা‘আত পড়লো না তিন রাকা‘আত এবং কোনো একটির প্রতি তার বেশী ঝোঁক না হয়, এমতাবস্থায় সে এক্বীন অর্থাৎ কম সংখ্যার উপর ভিত্তি করবে; অতঃপর সালামের পূর্বে ভুলের জন্য দুই সিজদাহ দিবে এবং সালাম করবে।
উদাহরণঃ একজন লোক যোহরের সালাত পড়তে গিয়ে দ্বিতীয় রাকা‘আতে সন্দেহে পতিত হয়, এটা দ্বিতীয় রাকা‘আত না তৃতীয় রাকা‘আত? এবং কোনো একদিকে তার মন অগ্রাধিকার দিচ্ছে না, এমতাবস্থায় সে এক্বীন অর্থাৎ কম সংখ্যার উপর ভিত্তি করবে; অতঃপর সালামের পূর্বে ভুলের জন্য দুই সিজদাহ দিবে এবং সালাম করবে।
5.        কেউ যদি সালাতে সন্দেহ করে যে, সে দু’রাকা‘আত পড়লো না তিন রাকা‘আত এবং কোনো একদিকে তার অধিকতর ঝোঁক থাকে তখন সে ঐ দিকের উপর ভিত্তি করে, তা কম হোক অথবা বেশী হোক, সালাত পূর্ণ করবে; অতঃপর সে সালামের পর দু’টি ভুলের সিজদাহ আদায় করে আবার সালাম করবে।
উদাহরণঃ একজন লোক যোহরের সালাত পড়ছিল। দ্বিতীয় রাকা‘আতে তার সন্দেহ হলো: সালাত দু’রাকা‘আত পড়লো না তিন রাকা‘আত; তবে তার মন অগ্রাধিকার দিচ্ছে তিন রাকা‘আতের। এমতাবস্থায় সে তিন রাকা‘আত ধরেই সালাত পূর্ণ করে সালাম ফিরাবে; অতঃপর ভুলের দুই সিজদা দিয়ে পুনরায় সালাম করবে।
সালাত শেষ করার পর যদি কারো সন্দেহ হয় তা হলে এর প্রতি সে যেন ভ্রুক্ষেপ না করে। হ্যাঁ, যদি স্থির বিশ্বাস হয় তা হলে সে সেমতেই কাজ করবে।
যদি কেউ বেশী বেশী সন্দেহ পোষণকারী হয় তাহলে সে তার সন্দেহের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করবে না। কারণ, এটা শয়তানের কুমন্ত্রণা।
 আল্লাহ পাকই ভাল জানেন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের প্রিয়নবী, তার পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণের উপর দরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন।
كيف يتطهّر المريض
রোগী কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করবে

1.         রোগীর উপর ওয়াজিব হলো পানির দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা। সুতরাং সে ছোট নাপাকি থেকে অজু করবে এবং বড় নাপাকি থেকে গোসল করবে।
2.        আর যদি পানির দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করতে সে সামর্থ না হয়, তা অপারগতা, রোগবৃদ্ধির ভয় অথবা আরোগ্য লাভে দেরী হওয়ার আশঙ্কায় হোক, সে তখন তায়াম্মুম করতে পারে।
3.        তায়াম্মুমের পদ্ধতি হলোঃ সে তার উভয় হাত মাটির উপর মেরে তার দ্বারা প্রথমে সম্পূর্ণ চেহারা মসেহ করবে, তারপর উভয় পাঞ্জা একটি দিয়ে অপরটি মসেহ করবে।
4.         যদি রোগী নিজে নিজে পবিত্রতা অর্জন করতে না পারে তাহলে অপর কোনো ব্যক্তি তাকে ওজু বা তায়াম্মুম করাবে।
5.        যদি রোগীর পবিত্রতা অর্জনের (ওজুর) কোনো অঙ্গে জখম থেকে থাকে তাহলে সে তা ধৌত করে নিবে। আর যদি ধুইলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা হয় তাহলে ভাল করে মসেহ করে নিবে অর্থাৎ পানির দ্বারা হাত সিক্ত করে জখমের উপর বুলিয়ে নিবে। আর মসেহ দ্বারাও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা হলে সে তায়াম্মুম করে নিবে।
6.        পবিত্রতা অর্জনের কোনো অঙ্গে যদি ভাঙ্গন থাকে এবং নেকড়া অথবা জিব্স জাতীয় কিছুর দ্বারা পট্টি দেওয়া থাকে তা হলে সেই অঙ্গ না ধুয়ে তার উপর দিয়ে মসেহ করে নিবে। তায়াম্মুম করার কোনো প্রয়োজন নেই; কেননা, মসেহ ধোয়ার স্থলাভিষিক্ত হয়ে গেছে।
7.        দেয়াল অথবা অন্য কোনো ধুলাযুক্ত পবিত্র বস্তুর উপর হাত মেরে তায়াম্মুম করা জায়েয আছে। যদি দেয়াল মাটি জাতীয় নয় এমন কোনো বস্তু দ্বারা প্রলেপ করা হয়, যেমন রং এর আস্তরণ, তাহলে তার দ্বারা তায়াম্মুম করা যাবে না।
8.        মাটির উপর অথবা ধুলাযুক্ত দেয়াল অথবা অন্যকিছুর উপর তায়াম্মুম করা সম্ভব না হলে একটি পাত্র বা রুমালের মধ্যে মাটি রেখে তা থেকে রোগী তায়াম্মুম করে নিতে পারে।
9.        যদি কোনো এক সালাতের জন্য রোগী তায়াম্মুম করে এবং অপর সালাত পর্যন্ত তার পবিত্র বহাল থাকে তা হলে সে প্রথম তায়াম্মুম দিযে পরবর্তী সালাত পড়ে নিতে পারে, দ্বিতীয় সালাতের জন্য তাকে আবার তায়াম্মুম করতে হবে না। কেননা, সে পবিত্র অবস্থায় বহাল রয়েছে এবং তা বাতিল হয়নি।
10.     রোগীর পক্ষে ওয়াজিব হলো, তার সম্পূর্ণ শরীর নাজাসাত (অপবিত্র বিষয়) থেকে পবিত্র করা। আর যদি তা সম্ভব না হয় তা হলে সেই অবস্থায়ই সালাত পড়ে নিবে, পুনরায় তা পড়তে হবে না।
11.      রোগীর পক্ষে ওয়াজিব হলো, পবিত্র কাপড়ে সালাত পড়া। যদি কাপড় নাপাক হয়ে যায় তাহলে উহা ধুয়ে নিবে অথবা উহার পরিবর্তে অন্য পবিত্র কাপড় বদলে নিবে। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে ঐ অবস্থায়ই সালাত পড়লে তার সালাত শুদ্ধ হয়ে যাবে; পুনরায় সালাত পড়তে হবে না।
12.     রোগীর পক্ষে ওয়াজিব হলো, পবিত্র স্থান ও বস্তুর উপর সালাত পড়া। যদি স্থান অপবিত্র হয় তা হলে তা ধৌত করে নিবে অথবা পবিত্র কোনো বস্তু দিয়ে বদলে নিবে অথবা এর উপর পবিত্র কোনো কিছু বিছিয়ে নিবে। তাও যদি সম্ভব না হয় তা হলে যে অবস্থায় থাকে সে অবস্থায়ই সালাত পড়ে নিবে। সালাত শুদ্ধ হয়ে যাবে এবং পুনরায় সালাত পড়তে হবে না।
13.     পবিত্রতা অর্জনে অপারগ হওয়ার কারণে রোগীর পক্ষে নির্ধারিত সময়ের পর দেরী করে সালাত পড়া জায়েয নয়; বরং সাধ্যমত পবিত্রতা অর্জন করে সময়মত সালাত পড়ে নিবে; যদিও তার শরীরে বা কাপড়ে অথবা সালাতের স্থানে এমন নাজাসাত থেকে যায় যা দূর করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি।


كيف يصلى المريض
রোগী কিভাবে সালাত পড়বে

1.         রোগীর উপর ওয়াজিব হলো সে ফরজ সালাত দাঁড়িয়ে পড়বে; তা নত হয়ে হোক আর প্রয়োজনে লাঠির উপর অথবা দেয়ালের উপর ভর দিয়ে হোক।
2.         রোগী দাঁড়াতে সক্ষম না হলে বসে সালাত পড়বে। তবে উত্তম হলো দাঁড়ানো ও রুকুর ক্ষেত্রে চার জানু হয়ে বসা।
3.         যদি রোগীর পক্ষে বসে সালাত পড়া সম্ভব না হয় তাহলে সে ক্বিবলামূখী হয়ে পার্শ্বের উপর কাত অবস্থায় সালাত আদায় করবে। ডান পার্শ্বে কাত হওয়া ভাল। আর যদি ক্বিবলামূখী হওয়া সম্ভব না হয় তা হলে যে দিকে আছে সে দিকেই মুখ করে সালাত পড়ে নিলে তার সালাত শুদ্ধ হয়ে যাবে এবং পুনরায় সেই সালাত পড়তে হবে না।
4.         রোগী যদি পার্শ্বের উপর কাত হয়ে সালাত পড়তে অপারগ হয় তা হলে ক্বিবলার দিকে পা রেখে চিত হয়ে সালাত পড়ে নিবে। তবে উত্তম হবে মাথাটি একটু উপরে তুলে রাখা, যাতে করে সে ক্বিবলামূখী হতে পারে। যদি পা ক্বিবলার দিকে রাখতে না পারে তা হলে যেভাবেই থাকে সেভাবেই রেখে সালাত পড়ে নিবে এবং পুনরায় সেই সালাত তাকে পড়তে হবে না।
5.         রোগীর উপর ওয়াজিব হলো, সালাতে সঠিকভাবে রুকু ও সিজদাহ সম্পাদন করা। আর যদি সম্ভব না হয় তা হলে ইশারায় রুকু ও সিজদাহ আদায় করবে। তবে রুকুর চেয়ে সিজদায় মস্তক অধিকতর নত করবে। যদি রোগী রুকু আদায় করতে সমর্থ হয় এবং সিজদা করতে না পারে তা হলে সে সঠিক ভাবে রুকু আদায় করবে এবং ইশারার মাধ্যমে সিজদাহ আদায় করবে আর যদি সে সিজদাহ করতে পারে এবং রুকু করতে না পারে না তা হলে সে সঠিক অবস্থায় সিজদাহ আদায় করবে এবং ইশারার মাধ্যমে রুকু সম্পাদন করবে।
6.         রোগী যদি রুকু ও সিজদাহ মাথার ইশারায় আদায় করতে সমর্থ না হয় তা হলে তা চোখের ইশারায় আদায় করবে এবং রুকুর বেলায় সামান্য এবং সিজদাহর বেলায় একটু বেশী পরিমাণে চোখ দাবাইবে। হাতের দ্বারা ইশারা করা, যেমন - কোনো কোন রোগী করে থাকে, শরীয়ত সম্মত নয়। এর কোনো আসল না কুরআন বা সুন্নাতে আছে, না বিশ্বস্ত আলেমবর্গের কোনো বক্তব্যে রয়েছে।
7.         যদি রোগীর পক্ষে মাথার দ্বারা বা চোখের দ্বারা ইশারা করা সম্ভব না হয় তাহলে অন্তর দিয়ে সালাত পড়বে, এরপর অন্তর দিয়ে রুকু, সিজদাহ, ক্বিয়াম ও উপবেশনের নিয়ত করবে। কারণ, প্রত্যেক লোকের নিয়তানুসারে তার কাজের মূল্যায়ন করা হয়।
8.         রোগীর উপর ওয়াজিব হলো: প্রত্যেক সালাত তার নির্ধারিত সময়ে আদায় করা এবং সাধ্যমত ওয়াজিবসমূহ সঠিকভাবে সম্পাদন করা। যদি প্রত্যেক সালাত তার নির্ধারিত সময়ে পড়া তার পক্ষে কঠিন হয় তাহলে যোহর ও আসর একত্রে এবং মাগরিব ও এশা একত্র করে পড়বে। সে পরবর্তী সালাত অর্থাৎ যোহরের সাথে আসর এবং মাগরিবের সাথে এশার সালাত আগেই একত্র করে পড়তে পারে। তবে ফজরের সালাত তার পূর্ববর্তী অথবা পরবর্তী কোনো সালাতের সাথে কোনো অবস্থায় একত্র করে পড়া জায়েয নয়।
9.         যদি কোনো রোগী চিকিৎসার জন্য বিদেশে মুসাফির অবস্থায় থাকে তখন সে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত চার রাকা‘আতের সালাত অর্থাৎ যোহর, আছর ও এশার সালাত দু’রাকাআত করে পড়তে পারে। তার সফর দীর্ঘ মেয়াদী হোক অথবা স্বল্পমেয়াদী তাতে কোনো পার্থক্য হবে না।
আল্লাহই আমাদের তাওফীকদাতা
লেখকঃ আল্লাহর প্রতি মুখাপেক্ষী : মুহাম্মাদ ইবন ছালেহ আল উছাইমীন


সূচীপত্র
বিষয়
১. জামা‘আতে সালাত আদায় করার অপরিহার্য্যতা
২. সালাতের শর্তাবলী
৩. ওজুর ফরজসমূহ
৪. সালাতের রুকনসমূহ
৫. সালাতের ওয়াজিবসমূহ
৬. ওজু, গোসল ও সালাত
৭. ওজু করার পদ্ধতি
৮. গোসল করার পদ্ধতি
৯. তায়াম্মুম ও তার পদ্ধতি
১০. সালাত ও তা আদায় করার পদ্ধতি
১১. যে সব বিষয় সালাতে মাকরূহ
১২. যে সব বিষয় সালাত বাতিল করে
১৩. সালাতে ভুলের সিজদাহ আদায় সম্পর্কে কয়েকটি হুকুম
১৪. রোগী কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করবে
১৫. রোগী কিভাবে সালাত পড়বে




[1] বি.দ্র.: এখানে ওজুর শর্তাবলীসহ সালাতের শর্ত, রুকন ও ওয়াজিবগুলো মাননীয় মুফতী প্রধান শায়খ আব্দুল আযীয ইবন বায কর্তৃক লিখিত কিতাব গুরুত্বপূর্ণ দরসসমূহথেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। — অনুবাদ
_________________________________________________________________________________

সংকলন: আল্লামা শায়খ আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায - শায়খ মুহাম্মদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন
অনুবাদক: মোহাম্মদ রকীবুদ্দীন আহমাদ হুসাইন
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ