বিপদ-মুসিবত : মুমিনের করণীয়

বিপদ-মুসিবত : মুমিনের করণীয়
→→→→→→
আমরা মুমিন-মুসলমান। জীবনে অনেকরকমের বিপদ-মুসিবত আসবেই। বিপদ-মুসিবত আসলে আমরা মুমিন হিসেবে আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করবো। কারণ আল্লাহ তায়ালাই আমাদের  বিভিন্নরকমের মুসিবত দিয়ে পরীক্ষা করেন। এই পরীক্ষায় পাশ করতে হলে আল্লাহর দিকেই রুজু' করতে হবে।
যে আল্লাহ আমাকে দয়া করে বাঁচিয়ে রাখলেন,  তিনি আমার মুসিবত অবশ্যই দূর করে দিতে পারেন।
সুতরাং সবসময় তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে।
কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:
"আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা রাখে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট। (সূরা আত-তালাক্ব, আয়াত:৩)

আরেক আয়াতে আল্লাহ পাক বলেছেন:
"নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা ভরসাকারীদের ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান:১৫৯)

বিপদ-মুসিবত আসলে আমরা কয়েকটি কাজ করতে পারি:
♦: আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রাখা।
♦: আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া। নামাযের মাধ্যমে। দোয়ার মাধ্যমে।
♦: ধৈর্যধারণ করা।
কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন :
"হে ঈমানদারগণ! তোমরা সাহায্য চাও সালাত এবং ধৈর্যের মাধ্যমে।
('সালাত' শব্দের একটা অর্থ হলো দোয়া, আর প্রসিদ্ধ অর্থ হচ্ছে নামায)
নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। (সূরা আল-বাক্বারা: ১৫৯)

♦: আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে দোয়া করতে হবে।
কেননা হাদীস শরীফে আছে:  হযরত আবু হুরায়রা রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ তা’য়ালার নিকট দো’আর চেয়ে অধিক সম্মানিত আর কোন জিনিস নেই। (তিরমিযী)

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেন:
ﺳَﻠُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻣِﻦْ ﻓَﻀْﻠِﻪِ ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﻳُﺤِﺐُّ ﺃَﻥْ ﻳُﺴْﺄَﻝَ ‏( ﺍﻟﺘﺮﻣﺬي)
আল্লাহ তা’য়ালার নিকট অনুগ্রহ প্রার্থনা করো,কারণ তিনি চাওয়া ও প্রার্থনা করাকে পছন্দ করেন। (তিরমিযী)

দো’য়ার গুরুত্ব বর্ণনা করে হযরত আবূ হুরায়রা (রাযিআল্লাহু আনহু) আরো বলেছেন:
ﺃﻋﺠﺰ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻣﻦ ﻋﺠﺰ ﻋﻦ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ‏( ﺻﺤﻴﺢ ﺍﺑﻦ ﺣﺒﺎﻥ )
মানুষের মাঝে সব চেয়ে অক্ষম হলো ঐ ব্যক্তি যে আল্লাহর নিকট দো’আ করতে অপারোগ হয়। (সহীহ ইবনে হিব্বান)

বান্দা যে কোনো সময় চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে আল্লাহ তায়ালা কবুল করে নেন।
তবে বিশেষ করে শেষরাতের দোয়া কবুল হয়, কেননা সহীহ বুখারী শরীফের একটি রেওয়ায়ত আছে:
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমাদের প্রতিপালক প্রতি রাতের যখন শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে তখন প্রথম আসমানে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, হে বান্দা! আমার কাছে প্রার্থনা করো, আমি তোমার প্রার্থনা কবুল করব। আমার কাছে তোমার কি চাওয়া আছে, চাও, আমি তা দান করব। আমার কাছে তোমার জীবনের গুনাহর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমার গুনাহ মাফ করে দেব।’ (সহীহ বুখারী : ৬৯৮৬)

আমরা শেষরাতে তাহাজ্জুদের নামায পড়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে পারি।

আল্লাহ তায়ালা এরশাদ ফরমান,
“বস্তুতঃ রাতে ঘুম থেকে উঠা মনকে দমিত করার জন্যে খুব বেশি কার্যকর এবং সে সময়ের কুরআন পাঠ বা যিকির একেবারে যথার্থ”। (সূরা মুয্যাম্মিল-৬)

আরেক আয়াতে আছে:
“নিশ্চয়ই মুত্তাকী লোক বাগ-বাগিচায় এবং ঝর্ণার আনন্দ উপভোগ করতে থাকবে এবং যে যে নিয়ামত তাদের প্রভূ পরোয়ারদিগার তাদেরকে দিতে থাকবেন সেগুলো তারা গ্রহণ করবে। (কারণ) নিঃসন্দেহে তারা এর পূর্বে (দুনিয়ার জীবনে) মুহসেনীন (বড় নেক্কার) ছিল। তারা রাতের খুব অল্প অংশেই ঘুমাতো এবং শেষ রাতে ইস্তেগফার করতো।(কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে মাগফেরাত চাইতো)”। (সূরা যারিয়াত:১৫-১৮)

আল্লাহ তায়ালা আরেক আয়াতে জান্নাতীদের গুণ বর্ণনা করে বলেন:
“এসব লোক অগ্নি পরীক্ষায় অটল অবিচল-ধৈর্যশীল, সত্যের অনুরাগী-সত্যবাদী , পরম অনুগত, আল্লাহর পথে মাল উৎসর্গকারী এবং রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহর কাছে ভুলত্রুটির জন্যে ক্ষমাপ্রার্থী”। (সূরা আলে ইমরান -১৭)

হাদীসে আছে:
হযরত আব্দুল্লাহ বিন সালাম (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মদীনায় তাশরীফ আনেন তখন প্রথম যে কথাগুলো তাঁর মুখ থেকে শুনি তা হলো :
“হে লোক সকল ! ইসলামের প্রচার ও প্রসার করো, মানুষকে আহার দান করো,আত্মীয়তা অটুট রাখ, আর যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকবে তখন তোমরা রাতে নামায পড়তে থাকবে। তাহলে তোমরা নিরাপদে বেহেশতে যাবে” (হাকেম,ইবন মাজাহ,তিরমিযী)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
“ফরয নামাযের পর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট নামায হল রাতে পড়া তাহাজ্জুদ নামায” (সহীস মুসলিম, আহমদ)।

♦: সাধ্যানুযায়ী আল্লাহর রাস্তায় দান-সদকা করা, কেননা সদকার মাধ্যমে বালা-মুসিবত দূর হয়।

রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন : তোমরা সদকা দানে অগ্রগামী হও, কেননা বিপদ-মুসিবত ছদকাকে পশ্চাৎপদে ফেলতে পারে না। (তাবরানী, হাদীস নং ৫৬৩৯)

দান সদকার গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ  (সা.) বলেছেন, ‘খেজুরের একটি টুকরা দান করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা কর। ’ (বোখারি ও মুসলিম)।

♦: কিছু যিকির-তসবীহ'র আমল ও করা দরকার।
হাকীমুল উম্মত আল্লামা আশরাফ আলী থানভী রহ. ''আ`মালে ক্বোরআনী" নামক কিতাবে লিখেছেন:
যদি কোনো ব্যক্তি কোনো বিপদ-মুসিবতে পতিত হয়, তাহলে সে যেন এই দোয়াগুলো পড়তে থাকে, তাহলে তার বিপদ-মুসিবত দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

দোয়াগুলো হলো:

١: حَسْبُنَا الــلّٰــــهُ وَنِعْمَ الْوَكِيْل (آل عمران ١٧٣)
 

٢: اِنِّي مَسَّني الضُّرُّ و أنتَ أرْحَمُ الرّاحِمِين  (انبياء: ٨٣) 

٣: لا اله الا أنتَ سبحانك إنِّي كُنْتُ من الظالمين (انبياء:٨٧)

দোয়াগুলোর উচ্চারণ নিকটস্থ উলামায়ে কেরামের কাছ থেকে জেনে নিবেন।
(আ'মালে ক্বোরআনী ১৯-২৫)

বিপদ-মুসিবত আসলে যদি আমরা এই আমলগুলো করতে পারি, তাহলে ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ তায়ালা আমাদের বিপদ-মুসিবত দূর করে দিবেন এবং অফুরন্ত সওয়াব দান করবেন।
এগুলো পরীক্ষিত আমল, তজরবা থেকে লিখা হয়েছে।
আপনিও ট্রাই করতে পারেন!

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে বিপদাপদ থেকে হেফাজত করুন,আমীন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ