শুক্রবারের ফজিলত ও আমল জেনে রাখা উচিত।

শুক্রবার মুসলিম উম্মাহর সাপ্তাহিক উৎসবের দিন। এই দিনকে ‘ইয়াওমুল জুমা’ বলা হয়। আল্লাহ তায়ালা নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও গোটা জগৎকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। এই ছয় দিনের শেষ দিন ছিল জুমার দিন। এই দিনেই হজরত আদম (আ.) সৃষ্টি হন। এ দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং এ দিনেই জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নামানো হয়। কেয়ামত এ দিনেই সংঘটিত হবে।
আল্লাহ তায়ালা প্রতি সপ্তাহে মানবজাতির সমাবেশ ও ঈদের জন্য এ দিন নির্ধারণ করেছিলেন। কিন্তু পূর্ববর্তী উম্মতরা তা পালন করতে ব্যর্থ হয়। আমাদের উচিত এই দিনের পবিত্রতা রক্ষা করা ও দিনটিতে বেশি বেশি আমল করা।  কথিত আছে, শুক্রবারকে গরীবের হজের দিনও বলা হয়। 
ইসলামের জুমার গুরুত্ব অপরিসীম। স্বয়ং আল্লাহপাক কোরান পাকে ইরশাদ করেন ‘হে মুমিনগণ জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের উদ্দেশেও দ্রুত ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর’। সূরা জুমা, আয়াত নং-৯। তাই জুমার আজানের আগেই সব কর্মব্যস্ততা ত্যাগ করে জুমার নামাজের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে মসজিদে গমন করা সব মুসলমানের ইমানি দায়িত্ব।
এ দিনে এমন একটি সময় রয়েছে, তখন মানুষ যে দোয়াই করে তা-ই কবুল হয়। এই দিনের বিশেষ কিছু আমল রয়েছে, যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এর মধ্যে কয়েকটি আমল নিচে উল্লেখ করা হলো:
হজরত আউস ইবনে আউস রা. বলেন, ‘রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন যে ব্যক্তি জুমার দিনে ভালোভাবে গোসল করবে, সকাল সকাল প্রস্তুত হয়ে হেঁটে মসজিদে গমন করে ইমাম সাহেবের কাছে বসবে এবং মনোযোগী হয়ে তার খুতবা শ্রবণ করবে ও অনর্থক কর্ম থেকে বিরত থাকবে, তার প্রত্যেক কদমে এক বছরের নফল রোজা এবং এক বছরের নফল নামাজের সওয়াব আল্লাহপাক তাকে দান করবেন।’ (নাসাঈ শরিফ ১৫৫)
হজরত আবু হুরায়রা রাযি বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন ‘যে উত্তমরূপে অজু করবে, অতঃপর জুমার মসজিদে গমন করবে এবং মনোযোগ সহকারে খুতবা শ্রবণ করবে তার এ জুমা থেকে পূর্ববর্তী জুমাসহ আরো তিন দিনের গুনাহগুলো ক্ষমা করা হবে। আর যে ব্যক্তি খুতবা শ্রবণে মনোযোগী না হয়ে খুতবা চলাকালীন কঙ্কর-বালি নাড়ল, সে অনর্থক কাজ করল।’ (মুসলিম শরিফ ১/২৮৩)
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাযি থেকে বর্ণিত আছে যে, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা কাহ্ফ তেলাওয়াত করবে তার (ইমানের) নূর-এ জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত চমকাতে থাকবে।’ (মেশকাত শরিফ-১৮৯) হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাযি থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন  ‘জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, কোনো মুসলমান ওই মুহূর্ত আল্লাহর কাছে যা কিছু প্রার্থনা করবে অবশ্যই আল্লাহপাক তাকে তা দান করবেন।
সুতরাং তোমরা ওই মূল্যবান মুহূর্তকে আসরের পর থেকে দিনের শেষ পর্যন্ত তালাশ কর।’ (আবু দাউদ ১/১৫০)। উপর্যুক্ত হাদিসগুলোর দ্বারা প্রমাণিত হয়, জুমার দিনে সব মুসলমানের জন্য কর্তব্য হচ্ছে সব ব্যস্ততা ত্যাগ করে আজানের পূর্বেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে মসজিদে গমন করা, খুতবা মনোযোগ সহকালে শ্রবণ করা, খুতবা চলাকালীন কথার্বাতা বলা থেকে বিরত থাক।
শুক্রবারের বিশেষ আমল সূরা কাহাফ তেলাওয়াত
সূরা কাহাফ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। কোরআন শরিফের ১৮ নম্বর সূরা এটি। আয়াত সংখ্যা ১১০, রুকু ১২। এটি ১৫ নম্বর পারার দ্বিতীয় সূরা।  জুমার দিন এ সূরা তেলাওয়াতের অনেক ফজিলত রয়েছে। নিচে কিছু সহিহ হাদিস উল্লেখ করা হলো-
এক. হজরত বারা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাতে সূরা কাহাফ তেলাওয়াত করছিলেন। তার কাছে দুটি রশি দিয়ে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। এরই মধ্যে একটি মেঘখণ্ড এসে তাকে ঢেকে ফেলল। এরপর যখন মেঘখণ্ডটি তার কাছে চলে আসছিল, তখন তার ঘোড়া ছোটাছুটি করতে লাগল। অতঃপর সকালে ওই ব্যক্তি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে রাতের ঘটনা বললেন। তিনি বললেন, ওটা ছিল সাকিনা (রহমত), যা কোরআন তেলাওয়াতের বরকতে নাজিল হয়েছিল। -সহিহ বোখারি: ৫০১১, ৩৬১৪; সহিহ মুসলিম: ৭৯৫
দুই. হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্ত করবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে হেফাজত থাকবে। -সহিহ মুসলিম: ৮০৯, আবু দাউদ: ৪৩২৩
তিন. হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি সূরা কাহাফ পড়বে যেমনভাবে নাজিল করা হয়েছে, তাহলে সেটা তার জন্য নূর হবে তার স্থান থেকে মক্কা পর্যন্ত এবং যে সূরার শেষ দশ আয়াত পড়বে সে দাজ্জালের গণ্ডির বাইরে থাকবে এবং দাজ্জাল তার ওপর কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। -সুনানে নাসাঈ: ১০৭২২
চার. হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি সূরা কাহাফ যেমনভাবে নাজিল হয়েছে সেভাবে পড়বে, তার জন্য কেয়ামতের দিন সেটা নূর হবে। -শোয়াবুল ঈমান: ২২২১
পাঁচ. হজরত নাওয়াস ইবনে সাময়ান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সকালে দাজ্জালের কথা আলোচনা করলেন। তিনি আওয়াজকে উঁচু-নিচু করছিলেন, ফলে আমরা মনে করলাম দাজ্জাল খেজুর বাগানের মধ্যেই রয়েছে। অতঃপর যখন আমরা উনার কাছে গেলাম তখন তিনি আমাদের অবস্থা বুঝে ফেললেন। তিনি বললেন, তোমাদের কী হলো। আমরা বললাম, আল্লাহর রাসূল! আপনি সকালে দাজ্জালের কথা আলোচনা করেছিলেন, আওয়াজকে উঁচু-নিচু করেছিলেন- তাই আমরা মনে করলাম দাজ্জাল হয়তো খেজুর বাগানেই আছে। তিনি বললেন, তোমাদের ক্ষেত্রে দাজ্জাল ছাড়া অন্য কিছুতে এত বেশি ভয় আমাকে দেখানো হয়নি। যদি আমি তোমাদের মাঝে থাকা অবস্থায় সে বের হয়, তাহলে তোমাদের ছাড়া আমি সর্বপ্রথম তার প্রতিরোধ করব। আর যদি তোমাদের মাঝে না থাকা অবস্থায় সে বের হয়, তাহলে প্রত্যেকে তার প্রতিরোধ করবে। আল্লাহর শপথ! প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আমার খলিফা রয়েছে। নিশ্চয় দাজ্জাল কোঁকড়া চুলবিশিষ্ট যুবক হবে এবং তার চোখ কানা হবে। যেন আমি আবদুল ওযা ইবনে কাতালের মতো তাকে দেখতে পাচ্ছি। তোমাদের মধ্যে যে তাকে পাবে সে যেন সূরা কাহাফের শুরু অংশ পড়ে। -সহিহ মুসলিম: ২৯৩৭, সুনানে আবু দাউদ: ৪৩২১, তিরমিজি: ২২৪১
(সংগৃহীত)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ