নিজের সামনে কেউ নিজের প্রসংসা করলে, কারো সামনে, কারো প্রসংসা করা।



এরূপ নির্দেশ সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে যার প্রশংসা শুনে আত্মগর্বে লিপ্ত হবার আশংকা থাকবে। অন্যথা যে তা থেকে নিরাপদ থাকবে তার মুখের সামনে প্রশংসা করা জায়েয।
আবূ মুসা আশ'আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে অপর ব্যক্তির [সামনা-সামনি] অতিরিক্ত প্রশংসা করতে শুনে বললেন, '' তুমি লোকটার পৃষ্ঠ কর্তন করলে অথবা তাকে ধ্বংস করে দিলে । '' (বুখারী ও মুসলিম) [1]
[1] সহীহুল বুখারী ২663, 6060, মুসলিম 3001, আহমাদ 19193 হাদিসের মানঃ সহিহ (রহঃ)
হাম্মাম ইবনে হারেস হতে বর্ণিত, তিনি মিক্বদাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেছেন; এক ব্যক্তি উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর সামনেই তাঁর প্রশংসা শুরু করলে মিক্বদাদ হাঁটুর উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে তার মুখে কাঁকর ছিটাতে শুরু করলেন। তখন উসমান তাঁকে বললেন, 'কি ব্যাপার তোমার?' তিনি বললেন, 'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,' 'তোমরা [মুখোমুখি] প্রশংসাকারীদের দেখলে তাদের মুখে ধুলো ছিটিয়ে দিয়ো।' '(মুসলিম) [1]
এ সব হাদিস নিষেধাজ্ঞামূলক। পক্ষান্তরে বৈধতা সংক্রান্ত বহু বিশুদ্ধ হাদিস রয়েছে। উলামাগণ বলেন, বৈধ-অবৈধ সম্বলিত পরস্পর বিরোধী হাদিসসমূহের বিরোধ নিরসনের উপায় এই হতে পারে যে, যদি প্রশংসিত ব্যক্তি পূর্ণ ঈমান ও ইয়াকীনের অধিকারী হয়, আত্মা অনুশীলনী ও পূর্ণ জ্ঞান লাভে ধন্য হয়, যার ফলে সে কারো প্রশংসা শুনে ফিতনা ও ধোঁকার শিকার না হয় এবং তার মন তাকে প্রতারিত না করে, তাহলে এ ধরনের লোকের মুখোমুখি প্রশংসা, না হারাম, আর না মাকরূহ। অন্যথা যদি কারো ক্ষেত্রে উক্ত বিষয়াদির কিছুর আশংকা বোধ হয়, তবে তা ঘোর অ-পছন্দনীয়। এই ব্যাখ্যার নিকষে পরস্পর-বিরোধী হাদিসসমূহকে মান্য করতে হবে।
যে সব হাদীসে মুখোমুখি প্রশংসার বৈধতা এসেছে তার একটি এই যে, একদা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে বললেন; '' আমার আশা এই যে, তুমিও তাদের একজন হবে। '' অর্থাৎ সেই সৌভাগ্যবানদের একজন হবে, যাদেরকে জান্নাতের সমস্ত দ্বার থেকে আহবান জানানো হবে। (বুখারী)
এ প্রসঙ্গে দ্বিতীয় হাদিসটি হচ্ছে এই যে, একদা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে বললেন; '' তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নও। '' অর্থাৎ ঐসব লোকদের অন্তর্ভুক্ত নও যারা অহংকারবশতঃ লুঙ্গী-পায়জামা গাঁটের নীচে ঝুলিয়ে পরে।
যেমন একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে বললেন, '' শয়তান তোমাকে যে পথে চলতে দেখে সে পথ ত্যাগ করে সে অন্য পথ ধরে। '' (বুখারী)
এ ছাড়াও বৈধতা সম্পর্কিত হাদিস অনেক আছে, তার মধ্যে কিছু হাদিসের অংশ আমি আমার 'আযকার' নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছি।
[1] মুসলিম 300২, তিরমিযী ২393, আবূ দাউদ 4894, ইবনু মাজাহ 374২, আহমাদ ২3311 হাদিসের মানঃ সহিহ (রহঃ)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ