দরুদ পাঠ করার ফযিলত, দরুদ পাঠের গুরুত্ব ও ফযিলত।


দরুদ পাঠ করার গুরুত্ব ও ফযিলতঃঃ


আল্লাহ তা'আলা বলেন,
إن الله وملائكته يصلون على النبي يا أيها الذين آمنوا صلوا عليه وسلموا تسليما
(আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি রহমত প্রেরণ করেন । হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর জন্যে রহমতের তরে দোয়া কর এবং তাঁর প্রতি সালাম প্রেরণ কর
(সূরা আহযাব 56 আয়াত)

'আব্দুল্লাহ ইবনে' আমর 'আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বল ে শুনেছেন, "যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার দরুন তার উপর দশবার রহমত বর্ষন করবেন ।" (মুসলিম) [1]

ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তা'আলা তার উপর দশবার রহমত নাযিল করবেন , তার দশটি শুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে এবং তাঁর জন্য দশটি মর্যাদা উন্ ীত করা হবে। [2]

সুওযায়দ ইবনু নাসর (রহঃ) আবূ তালহা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন (আমাদের কাছে) আগমন করলেন। তখন তার চেহারায় প্রকুল্লতা দৃষ্টি গোচর হচ্ছিল। তিনি বললেন, জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার কাছে এসে বলল, "ইয়া মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনাকে কি এই সংবাদ খূশি করে না যে, আপনার উম্মতের মধ্য থেকে যদি কোন ব্যক্তি আপনার উপর একবার দরুদ পাঠ করে আমি তার দশবার মাগফিরাত চাইব , আর কেউ যদি আপনাকে একবার সালাম পাঠায় আমি তার প্রতি দশবার সালাম পাঠাব । [3]

ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি সব লোকের চাইতে আমার বেশী নিকটবর্তী হবে , যে তাদের মধ্যে সব েয়ে বেশী আমার উপর দরূদ পড়বে। "(তিরমিযী, হাসান) [4]

আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন," তোমরা আমার কবরকে উৎসব কেন্দ্রে পরিণত করো না (যেমন কবর পূজারীরা উরস ইত্যাদির মেলা লাগিয়ে করে থাকে)। তোমরা আমার প্রতি দরূদ পেশ কর। কারণ, তোমরা যেখানেই থাক, তোমাদের পেশ-কৃত দরূদ আমার কাছে পৌঁছে যায়। "(আবূ দাউদ বিশুদ্ধ সূত্রে) [5]

আওস ইবনে আওস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন," তোমাদের দিনগুলির মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে জুমুআর দিন। সুতরাং ঐ দিন তোমরা আমার উপর অধিকমাত্রায় দরূদ পড় কেননা, তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়। "লোকেরা বলল, 'ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি তো (মারা যাওয়ার পর) পচে-গলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন। সে ক্ষেত্রে আমাদের দরূদ কিভাবে আপনার কাছে পেশ করা হবে ? ' তিনি বললেন, "আল্লাহ পয়গম্বরদের দেহসমূহকে খেয়ে ফেলা মাটির উপর হারাম করে দিয়েছেন ।" (বিধায় তাঁদের শরীর আবহমান কাল ধরে অক্ষত থাকবে।) (আবু দাউদ, বিশুদ্ধ সানাদ) [6]

ফাযালা ইবনে উবাইদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি লোককে নামাযে প্রার্থনা করতে শুনলেন। সে কিন্তু তাতে আল্লাহর প্রশংসা করেনি এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর দরূদও পড়েনি। এ দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, "লোকটি তাড়াহুড়ো করল।" অতঃপর তিনি তাকে ডাকলেন ও তাকে অথবা অন্য কাউকে বললেন , "যখন কেউ দো'আ করবে, তখন সে যেন তার পবিত্র প্রতিপালকের প্রশংসা বর্ণনা যোগে ও আমার প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ করে দো'আ আরম্ভ করে, তারপর যা ইচ্ছা (যথারীতি) প্রার্থনা করে। "(আবু দাউদ, তিরমিযী) [7]
  আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্ল াহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই অভিশাপ দিলেন যে, "সেই ব্যক্তির নাক ধূলা-ধূসরিত হোক, যার কাছে আমার নাম উল্লেখ করা হল, অথচ সে (আমার নাম শুনেও) আমার প্রতি দরূদ পড়ল না।" (অর্থাৎ 'সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম' বলল না।) (তিরমিযী হাসান) [8]

আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "প্রকৃত কৃপণ সেই ব্যক্তি, যার কাছে আমি উল্লিখিত হলাম (আমার নাম উ ্চারিত হল), অথচ সে আমার প্রতি দরূদ পাঠ করল না। "(তিরমিযী, হাসান সহীহ) [9]
আবূ মুহাম্মদ কা'ব ইবনে 'উজরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদা) আমাদের নিকট এলে। আমরা বললাম, 'হে আল্লাহর রাসূল! আপনার প্রতি কিভাবে সালাম পেশ করতে হয় তা জেনেছি , কিন্তু আপনার প্রতি দরূদ কিভাবে পাঠাব? ' তিনি বললেন, "তোমরা বলোঃ-

'আল্লা-হুম্মা স্বাল্লি আলা মুহাম্মাদ, ওয়া আলা আ-লি মুহাম্মদ, কামা স্বাল্লাইতা আলা আ-লি ইবরা-হীম, ওয়া আলা আ-লি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক আলা মুহাম্মাদ, ওয়া আলা আ-লি মুহাম্মদ, কামা বা-রাকতা আলা আ-লি ইবরা-হীম, ওয়া আলা আ-লি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। '

যার অর্থ, হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ তথা মুহাম্মদের পরিবারবর্গের উপর দরুদ পাঠ করো ; যেমন দরূদ পেশ করেছিলে ইব্রাহীমের পরিবারবর্গের উপর। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও অতি সম্মানার্হ। আল্লাহ হে! তুমি মুহাম্মদ ও তাঁর পরিজনবর্গের প্রতি বরকত নাযিল কর ; যেমন বরকত নাযিল করেছ ইব্রাহীমের পরিজনবর্গের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও মহা সম্মানীয়। "(বুখারী ও মুসলিম) [10]

আবূ হুমাইদ সায়েদী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকেরা বলল, 'হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কিভাবে আপনার প্রতি দরূদ পেশ করব? ' তিনি বললেন, "তোমরা বলো,

" আল্লা-হুম্মা স্বাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁউ অআলা আযওয়া-জিহি অযুর্রিয়যাতিহি কামা স্বাল্লাইতা আলা আ-লি ইবরা-হীম, অবা-রিক আলা মুহাম্মাদিঁউ অআলা আযওয়া-জিহি অযুর্রিয়্যাতিহি কামা বারাকতা আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। "

অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ, তাঁর পত্নীগণ ও তাঁর বংশধরের উপর সালাত পেশ কর ; যেমন তুমি ইব্রাহীমের বংশধরের উপর সালাত পেশ করেছ। আর তুমি মুহাম্মদ, তাঁর পত্নীগণ ও তাঁর বংশধরের উপর বরকত বর্ষণ কর যেমন তুমি ইবরাহীমের বংশধরের উপর বরকত বর্ষণ করেছ নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত গৌরবান্বিত। (বুখারী ও মুসলিম) [11]
আব্দুল ওয়াহাব ইবনু আব্দুল হাকাম ওয়াররাক ও মাহমূদ ইবনু গায়লান (রহঃ) আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাঁআলার কতক ফেরেশতা এমনো রয়েছে, যারা পৃথিবীতে বিচরণ করে বেড়ায়, তাঁরা আমার উম্মতের সালাম আমার কাছে পৌছিয়ে থাকেন।
[12]

[1] মুসলিম 384.735, তিরমিযী 3614, নাসায়ী 678, আবূ দাউদ 5২3, আহমাদ 653২ হাদিসের মানঃ সহিহ
[2] সূনান নাসাঈ, 1২96,1২97
সহিহ, মিশকাত হাঃ 90২, রাগীব আত্তা'লিকুর
হাদিসের মানঃ সহিহ
[3 ] সূনান নাসাঈ, 1২83,1২95
হাদিসের মানঃ হাসান
[4] তিরমিযী 484 হাদিসের মানঃ হাসান
[5] আবূ দাউদ ২04২, আহমাদ 776২, 8২38, 8586, 8698, 8809 হাদিসের মানঃ সহিহ
[6] আবূ দাউদ 1047, 1531, নাসায়ী 1374, ইবনু মাজাহ 1636, আহমাদ 157২9, দারেমী 1 7২ হাদিসের মানঃ সহিহ
[7] আবূ দাউদ 1481, তিরমিযী 3476, 3477, নাসায়ী 1২84, আহমাদ ২3419 হাদিসের মানঃ সহিহ
[8] তিরমিযী 3545, আহমাদ 740২ হাদিসের মানঃ হাসান
[9] তিরমিযী 3546, আহমাদ 1738 হাদিসের মানঃ হাসান
[10] সহীহুল বুখারী 3370, 4797, 6357, মুসলিম 406, তিরমিযী 483, নাসায়ী 1২87-1২89, আবূ দাউদ 976, ইবনু মাজাহ 904, আহমাদ 17638, 17631, 17667, দারেমী 134২ হাদিসের মানঃ সহিহ
[11] সহীহুল বুখারী ২369, 6360, মুসল ম 407, নাসায়ী 1২94, আবূ দাউদ 979, ইবনু মাজাহ 905, আহমাদ ২3089, মুওয়াত্তা মালিক 397 হাদিসের মানঃ সহিহ
[12] মিশকাত হাঃ 9২4, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরুদের মর্যাদা ২1
সূনান নাসাঈ, 1২8২
হাদিসের মানঃ সহিহ
জান্নাতের গুপ্তধন এবং জান্নাতের রাস্তা ,


দরুদ পাঠের গুরুত্ব
দরুদ পাঠের গুরুত্ব ও ফযিলত,

সূরা আল হাশর: 7 - রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। সূরা মুহাম্মদ: 33 - হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রসূলের (সাঃ) আনুগত্য কর এবং নিজেদের কর্ম বিনষ্ট করো না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ