দুয়া করা ছাড়বেন না। Islamic Thinking Bangladesh

এক পেশাগত নিউরোলজিস্ট এক শহর থেকে অন্য শহরের বিমানযাত্রায় ছিলেন। তবে বিমানটি যাত্রার মাঝপথেই আকস্মিক ঝড়ের মুখোমুখি হয় এবং ঝড়টিও ছিল বেশ প্রবল।
একটা সময়ে বজ্রপাত কিংবা ঝড়ের প্রবলতার কারণে বিমানের একটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। বিমানের সকল যাত্রী বেশ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে। তৎক্ষণাৎ দায়িত্বরত পাইলটেরা সিদ্ধান্ত নেন বিমানটিকে নিকটস্থ বিমানবন্দরে ল্যান্ড করাবেন। প্রবল ঝড়ের মাঝেই বিমানটি ল্যান্ড করল।
.
সমস্যা দেখা দিল সেখানেই। সেই বিমানবন্দরে ইঞ্জিন সারানোর মত কোনো ব্যবস্থা তৈরি ছিল না। সে কারণেই বিমান সেরে ওঠতে ঠিক কত সময় নিবে, সে ব্যাপারে পাইলটেরা কোনো নিশ্চিত জবাব দিতে পারছিলেন না। সেই ডাক্তার বেশ চিন্তায় পড়লেন। কারণ তাঁকে এক জরুরী কাজে খুবই অল্প সময়ের মাঝেই তাঁর কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছানো লাগবে। তিনি পাইলটের সাথে পরামর্শ করতে গেলেন। পাইলট তাঁর সমস্ত সমস্যা শুনে তাঁকে পরামর্শ দিলেন তিনি যেন কোনো একটা গাড়ি ভাড়া করে সড়কপথেই সেখানে চলে যান, কারণ সেই গন্তব্যতে যেতে সড়কপথে প্রায় তিন ঘণ্টার মত সময় লাগবে। ডাক্তার নিরুপায় হয়ে সেই পরামর্শটি গ্রহণ করলেন।
.
একটি ট্যাক্সি ভাড়া করলেন তিনি। তখনও ঝড় থামেনি। বরং এর প্রবলতা যেন আরো বেড়েই চলছিল। রাস্তার অবস্থাও তেমন ভালো ছিল না। খানাখন্দময় পথ পানিতে ভেসে গিয়ে কর্দমাক্ত হয়ে পড়ল এবং এরই মাঝে ট্যাক্সির চাকা আটকে গেল ও ট্যাক্সিটিও স্টার্ট নেয়া বন্ধ করে দিল। ডাক্তার বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন। সে সময় তাঁর নজরে পড়ল খুব কাছের একটা বাড়ির দিকে। বৃষ্টি তখনও থামেনি। তাই তিনি ড্রাইভারকে বললেন, "আমি ওই বাড়িটার দিকে যাচ্ছি। নামাজও পড়তে হবে। তাছাড়া যে রকম ঝড় নেমেছে, বোধহয় সমস্ত রাতই এটি ভোগাবে। দেখি এই বাড়িতে রাতটা কাটানো যায় কি না। তবে এর মধ্যে গাড়ি ঠিক হয়ে গেলে আমাকে ডেকে দিবেন।"
.
বাড়ির কাছাকাছি গিয়ে দরজায় কড়া নাড়লেন তিনি। ভেতর থেকে এক বৃদ্ধা দরজা খুলে দিলেন। ডাক্তার তাঁর সমস্ত ঘটনা সেই বৃদ্ধার কাছে তুলে ধরলেন এবং একইসাথে অনুমতি চাইলেন রাতটা সেই বাড়িতে কাটানোর জন্যে। সেই বৃদ্ধা তাঁকে সাদর আমন্ত্রণ জানালেন। ঘরের ভেতরে ঢুকে ডাক্তার দেখতে পেলেন ঘরের একদিকে একটি প্রদীপ জ্বলছে, তার একপাশে জায়নামাজ বিছানো এবং অন্যপাশে একটি বাচ্চা চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে। বাচ্চাটাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছিল সে বেশ অসুস্থ।
.
বৃদ্ধাটি ডাক্তারকে আপ্যায়নের জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন এবং কিছুক্ষণ পরপর এসে অসুস্থ বাচ্চাটিকে দেখে যেতে লাগলেন। ডাক্তার চুপচাপ বসে দৃশ্যটি দেখছিলেন। নামাজ আদায়ের পর ডাক্তার কিছু খেয়ে নিলেন। খাওয়ার সময়ে তিনি দেখছিলেন জায়নামাজে বসে সেই বৃদ্ধা অনবরত দু'আ করেই যাচ্ছেন। তিনি বুঝতে পারলেন, বৃদ্ধা এই শিশুটির জন্যেই দু'আ করছেন। ঝড় তখনও থামেনি। তবে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ট্যাক্সির ড্রাইভার সেই বাড়িতে এলেন এবং ডাক্তারকে জানালেন যে গাড়ি সারিয়ে তোলা হয়েছে। ডাক্তার তখন চলে যাওয়ার জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এবং বৃদ্ধাকে ধন্যবাদ জানালেন তাঁর আন্তরিক আতিথেয়তার জন্যে। একইসাথে তিনি জানতে চাইলেন শিশুটির ব্যাপারে।
.
বৃদ্ধা জানালেন, সেই শিশুটি তাঁরই নাতি এবং একইসাথে শিশুটি অনাথ। তার দেখাশোনার জন্যে শুধু বৃদ্ধাই জীবিত আছেন। শিশুটি বেশ একটা জটিল রোগে আক্রান্ত। তিনি রাতদিন শিশুটির আরোগ্যের জন্যে দু'আ করেন। অনেক ডাক্তার দেখানোর পর সকলেই তাঁদের অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন। তবে বেশ কয়েকজন ডাক্তার সেই বৃদ্ধাকে বলেছিলেন, এ রোগের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার একজনই আছেন, তাঁর কাছে গিয়ে যেন শিশুটিকে দেখিয়ে আনা হয়। কিন্তু সেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চেম্বার অনেক দূরের এক শহরে এবং তাঁর অ্যাপয়নমেন্ট পেতেও কয়েক মাস আগ থেকে কথা বলে রাখতে হয়, এমনটিই সেই বৃদ্ধা শুনেছিলেন। তবুও তিনি যোগাযোগ করেছিলেন সেই ডাক্তারের চেম্বারে। সেখান থেকে তাঁকে জানানো হলো তিনি যেন ছ'মাস পরে যোগাযোগ করেন, কারণ কোনো অ্যাপয়নমেন্ট খালি নেই। তখন থেকেই বৃদ্ধা আল্লাহর কাছে অনবরত দু'আ করে যাচ্ছেন, যেন তিনি সমস্ত পরিস্থিতি তাঁদের জন্যে সহজ করে দেন। নাতির কষ্ট তাঁর সহ্য হচ্ছিল না। তবে তিনিও দু'আ করা থেকে সরে আসেননি।
.
সবকিছু শুনে ডাক্তার বৃদ্ধার কাছে সেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নাম জানতে চাইলেন। বৃদ্ধা যখন তাঁকে সেই নাম জানালেন, সেটি শুনে ডাক্তার বেশ অবাক হয়ে পড়লেন এবং হঠাৎ করেই তিনি কাঁদতে শুরু করলেন। তাঁর আকস্মিক কান্নায় বৃদ্ধা বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন। তিনি জানতে চাইলেন, তিনি কাঁদছেন কেন। নিজেকে সামলে নিয়ে ডাক্তার জবাবে বললেন, "আল্লাহ আপনার দু'আ কবুল করে নিয়েছেন।"
.
বৃদ্ধা ব্যাপারটি ধরতে পারলেন না। ডাক্তার তখন বুঝিয়ে বললেন, "আপনার দু'আর শক্তিতেই আকাশে ঝড় এসেছে, বিমানের ইঞ্জিন বিকল হয়ে গিয়েছে, আমি সড়কপথে শহরে ফিরতে গিয়ে গাড়িও আটকে গেছে এবং যার পরিণতিতে আমি এখানে এসে হাজির হয়েছি। আর আমিই সেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার।"

অবিশ্বাস্য ব্যাপার হলো, ডাক্তারের এই কথাটি বলার কিছুক্ষণের মাঝেই ঝড় থেমে গেল। ডাক্তারের কথা শুনে বৃদ্ধাও ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন।
.
নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া এই ঘটনাটি সেই ডাক্তার এক 'আলিমের কাছে বর্ণনা করেছিলেন। ঘটনাটি তাঁর মনে কেমন দাগ কেটে গিয়েছিল, তা তিনি অনেকটা এভাবেই সেই 'আলিমকে বললেন,
.
"আমি সেদিন বুঝলাম, মহান আল্লাহর বাহিনী পৃথিবীর সবখানেই ছড়িয়ে আছে। তিনি যা সিদ্ধান্ত নেন, সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তিনি যে কোনো ঘটনাই ঘটিয়ে দিতে সক্ষম। সেই শিশুটির পরিবারের পক্ষে আমার অ্যাপয়নমেন্ট নেয়ার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। তাছাড়া এত দূরের পথ পাড়ি দিয়ে আমার চেম্বারে এসে যে সেই শিশু চিকিৎসাটি গ্রহণ করবে, এমন সামর্থ্যও তার পরিবারের ছিল না। তবে আল্লাহ ইচ্ছে করেছিলেন, শিশুটির চিকিৎসা হবেই। তাই তিনি এমন একটি ঘটনার মাঝে আমাকে প্রবেশ করিয়ে দিলেন, যার ফলে আমিই সেই শিশুটির ঘরে যাত্রাবিরতি দিলাম, নামাজ পড়লাম, খাওয়াদাওয়া করলাম এবং সবশেষে তার চিকিৎসার ব্যবস্থাও করলাম। পুরো ঘটনাটাই ঘটল আল্লাহর কাছে সেই বৃদ্ধার এমন আন্তরিক দু'আর ফলে। যদি কেউ কোনো জায়েজ বিষয়ে আল্লাহর কাছে দু'আ চায়, তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ সেটি অবশ্যই ক্ববুল করে নিবেন। এক্ষেত্রে শুধু দরকার সেই দু'আর ব্যাপারে ব্যক্তির গভীর আন্তরিকতা ও অপরিসীম ধৈর্য্য।"
.
মহান আল্লাহ আমাদের উপর তাঁর রহমতের বারিধারা বর্ষণ করুন। তিনি আমাদের মাঝে এমন বিশ্বাস দৃঢ় করে দিন, যেন আমরা বুঝতে সক্ষম হই যে তাঁর কাছে দু'আ করলে তিনি আপাত অসম্ভব বিষয়কেও সম্ভবে পরিণত করতে সক্ষম।
.
তাবেঈ যুবাইদ আল আইয়ামি রহিমাহুল্লাহ বাচ্চাদের বলতেন, এসো তোমরা নামাজ পড়ো, নামাজ পড়লে আমি তোমাদের আখরোট খেতে দিবো।এইটা বলার পর বাচ্চারা এসে নামাজ পড়তো, নামাজের পর সবাই একসাথে ওনাকে ঘিরে ধরতো এবং বলতো এবার আখরোট দেন।লোকজন বলতেন আপনি কি করতেন? তিনি বলেন আমি আর কি করতাম ? আমি ৫ দিরহাম দিয়ে আখরোট কিনে নিতাম আর এদের নামাজের অভ্যাস হয়ে যেতো। হিলইয়াতুল আওলিয়া : ৬৪৩১ ]
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
.
.
(Y) শেয়ার করুন, বন্ধুদের সাথে ইন শা আল্লাহ !
_

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ