প্রশ্ন ৩৬: মৃতের
ক্ববরে মাটি দেওয়ার সময় শরী‘আতসম্মত কোন দো‘আটি
পড়তে হয়? ﴿مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيْهَا
نُعِيْدُكُمْ﴾ [سورة
طه:
55] পড়ার
কোন হাদীছ আছে কি?
উত্তরঃ
কতিপয় বিদ্বান বলেন, ক্ববরে তিন মুঠো মাটি দেওয়া সুন্নাত। তবে
﴿مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ
وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ
تَارَةً أُخْرَىٰ ﴾ [سورة طه:
55]
পড়ার ব্যাপারে রাসূল
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোনো
হাদীছ বর্ণিত হয় নি।
আর দাফনের পরে রাসূল
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশিত
আমল করা সুন্নাত। তিনি দাফন সম্পন্ন করে ক্ববরের কাছে দাঁড়িয়ে বলতেন, ‘তোমরা
তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা চাও। সে যেন ফেরেশতাদ্বয়ের
প্রশ্নের জবাবে অবিচল থাকতে পারে, সেটি তোমরা প্রার্থনা
কর।
কেননা তাকে এখনই জিজ্ঞেস করা হবে’।[25] অতএব, আমরা নিম্নোক্ত দো‘আটি পড়ব,
«اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ, اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ, اَللَّهُمَّ
اغْفِرْ لَهُ, اَللَّهُمَّ ثَبِّتْهُ, اَللَّهُمَّ ثَبِّتْهُ, اَللَّهُمَّ ثَبِّتْهُ»
‘হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন। হে
আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন। হে
আল্লাহ! আপনি তাকে অবিচল রাখুন। হে আল্লাহ! আপনি তাকে অবিচল রাখুন। হে
আল্লাহ! আপনি তাকে অবিচল রাখুন’।
প্রশ্ন ৩৭: সান্ত্বনাদান
বা শোক প্রকাশের পদ্ধতি কি?
উত্তরঃ রাসূল
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এক
মেয়েকে যেভাবে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন, ঠিক সেভাবে সান্ত্বনা দেওয়া উত্তম। রাসূল
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মেয়ের সন্তান
মারা গেলে তিনি তাঁকে আহ্বান জানিয়ে তাঁর নিকট একজন দূত প্রেরণ
করেন। এই
দূতকে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছিলেন, ‘তাকে
তুমি ধৈর্য্য ধরতে এবং এর
বিনিময়ে নেকীর আশা করতে বল। কেননা আল্লাহ যা নিয়ে গেছেন, তা যেমন তাঁর, তেমনি যা
তিনি রেখে গেছেন, তাও তাঁর। প্রত্যেকটি
বস্তু একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত টিকে থাকবে’।[26] তবে
‘আল্লাহ আপনার নেকী বৃদ্ধি করে দিন’, ‘আল্লাহ আপনাকে উত্তম সান্ত্বনা দান
করুন’, আল্লাহ আপনার মৃতকে ক্ষমা করুন’ ইত্যাদি যেসব দো‘আ মানুষের
কাছে প্রসিদ্ধ হয়ে আছে, তা কিছু
কিছু আলেম পছন্দ করেছেন। তবে
হাদীছ মোতাবেক আমল করাই উত্তম।
প্রশ্ন ৩৮: সান্ত্বনা
দেওয়ার সময় মুছাফাহা করা কি সুন্নাত?
উত্তরঃ
সান্ত্বনা দেওয়া বা শোক প্রকাশের সময় মুছাফাহা করা, চুম্বন করা
সুন্নাত নয়। বরং মুছাফাহা করতে হবে
সাক্ষাতের সময়। অতএব, শোকাক্রান্ত ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত
করে সালাম প্রদান করত: যখন তুমি তার সাথে মুছাফাহা করবে, তখন এই
মুছাফাহাটা হবে সাক্ষাতের কারণে, সান্ত্বনা দেওয়ার
উদ্দেশ্যে নয়। কিন্তু মানুষ এটাকে অভ্যাসে পরিণত
করেছে। কারো যদি বিশ্বাস থাকে যে,
এটি সুন্নাত,
তাহলে সে পরিষ্কার জেনে রাখুক, এটি সুন্নাত
নয়।
তবে যদি সেটি স্বাভাবিক অভ্যাস হয় এবং তারা সেটিকে
সুন্নাত বলে বিশ্বাস না করে, তাহলে সমস্যা নেই। কিন্তু
বিষয়টি আমার কাছে রীতিমত উদ্বেগজনক এবং তা
পরিত্যাগ করা নিঃসন্দেহে উত্তম।
এখানে আরেকটি
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে, সান্ত্বনা
দেওয়ার উদ্দেশ্য হল, শোকাক্রান্ত ব্যক্তিকে ধৈর্য্যধারণ
এবং আল্লাহ্র পক্ষ থেকে
নেকী প্রাপ্তির বিষয়ে আশান্বিত করে তোলা; তাকে
অভিনন্দন জানানো নয়, যেমনটি অন্যান্য অনুষ্ঠানে হয়ে থাকে। অতএব, কেউ মৃত্যুজনিত
কারণে শোকাক্রান্ত হলে তাকে সান্ত্বনা দিতে হবে অর্থাৎ যাতে তার
ধৈর্য্য ও নেকী প্রাপ্তির আশা বৃদ্ধি পায়,
তা-ই করতে হবে।
প্রশ্ন ৩৯: শোকাহত
ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দেওয়ার সময় কখন?
উত্তরঃ
মৃতের মৃত্যুর পর থেকেই তার শোকাহত পরিবার-পরিজন ও আত্মীয় স্বজনকে সান্ত্বনা
প্রদানের সময় শুরু হয়। অনুরূপভাবে মৃত্যুঘটিত
কারণ ছাড়া অন্য কোন কারণে কেউ
দুঃখগ্রস্ত হলে দুঃখগ্রস্ত হওয়ার পর থেকেই তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার সময় শুরু হয়। দুঃখ–কষ্ট লাঘব
না হওয়া পর্যন্ত সান্ত্বনা দেওয়া যায়। কারণ কাউকে
সান্ত্বনা দেওয়ার উদ্দেশ্য তাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানানো নয়; বরং
সান্ত্বনা দেওয়ার উদ্দেশ্য হল, শোকাহত ব্যক্তিকে বিপদে ধৈর্য্য ধারণের
প্রতি শক্তিশালী করে তোলা এবং ছওয়াব প্রাপ্তির আশায় তাকে আশান্বিত করা।
প্রশ্ন ৪০: দাফনের
পূর্বে শোক প্রকাশ করা বা সান্ত্বনা দেওয়া কি বৈধ?
উত্তরঃ
হ্যাঁ, দাফনের
পূর্বে এবং পরে উভয় অবস্থায় শোক প্রকাশ করা বৈধ। আগের
প্রশ্নের জবাবে আমরা বলেছি যে, মৃত্যুর পর থেকে
শোক চলে না যাওয়া পর্যন্ত সান্ত্বনা দেওয়ার সময়।
প্রশ্ন ৪১: শোক
প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে মৃত
ব্যক্তির পরিবার- পরিজনের নিকটে যাওয়ার হুকুম কি?
উত্তরঃ
শরী‘আতে এর কোনো ভিত্তি নেই। কিন্তু কেউ
যদি আপনার আত্মীয় হয় এবং আপনি না গেলে
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার ভয় থাকে, তাহলে গেলে
সমস্যা নেই। তবে মৃতের পরিবারের সদস্যদের জন্য তাদের বাড়িতে
একত্রিত হওয়া এবং শোক প্রকাশকারীদের সাক্ষাত গ্রহণের জন্য
অপেক্ষা করা শরী‘আত সম্মত নয়। এমনকি
সালাফে ছালেহীনের কেউ কেউ এমন আমলকে নিষিদ্ধ
বিলাপ ও মাতমের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করেছেন। সেজন্য নিয়ম
হল, শোকাহতরা
তাদের বাড়ীর দরজা বন্ধ করে দিবে। বাজারে বা মসজিদে তাদের সাথে এমনিতেই কারো সাক্ষাত
হয়ে গেলে শোক প্রকাশ করবে। এখানে দু’টি বিষয়
উল্লেখযোগ্যঃ
একঃ শোক
প্রকাশের জন্য মৃতের পরিবারের কাছে যাওয়া। এটি
বৈধ নয়। তবে যেমনটি আমি বলেছি, যদি তার আত্মীয় হয় এবং তাদের কাছে না
গেলে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে, তাহলে সেটি
ভিন্ন কথা।
দুইঃ
শোক প্রকাশকারীদের অভ্যর্থনার জন্য অপেক্ষা করা। এরও
কোন ভিত্তি নেই। এর সাথে যদি সান্ত্বনা প্রদানকারীদের খাবারের
আয়োজন যোগ করা হয়,
তাহলে সালাফে ছালেহীনের কেউ কেউ ইহাকে নিষিদ্ধ বিলাপ ও মাতমের অন্তর্ভুক্ত গণ্য
করেছেন।
প্রশ্ন ৪২: মৃত
ব্যক্তিকে ক্ববরস্থানে নিয়ে যাওয়ার সময় তার মাথা
খাটলির সামনের দিকে রাখা সুন্নাত কি?
উত্তরঃ স্বাভাবিক
দৃষ্টিতে মনে হয়, মৃতকে ক্ববরস্থানে নিয়ে যাওয়ার সময় তার মাথা সামনের দিকে
রাখাই ভাল। সামনের দিকে পা করে নিয়ে যাওয়া
অনুত্তম। তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে
এ সম্পর্কিত কোন হাদীছ আমার জানা নেই।
প্রশ্ন ৪৩: মৃতকে দাফন করার সময়
তিন মুষ্টি মাটি মৃতের মাথার দিক থেকে ক্ববরে দেওয়ার কি কোন শরঈ ভিত্তি আছে?
উত্তরঃ না, এর
কোন শর‘ঈ ভিত্তি নেই। ক্ববরে মাটি দেওয়ার সময় যেখান
থেকেই মাটি দেওয়া শুরু করুক, সমস্যা নেই।
প্রশ্ন ৪৪: মৃতকে
দাফনের পরে তাকে ফেরেশতাদ্বয়ের প্রশ্নের জবাব
স্মরণ করিয়ে দেওয়ার বিধান কি?
উত্তরঃ এ
বিষয়ে গ্রহণযোগ্য কথা হচ্ছে, দাফনের পরে
কোনো কিছু স্মরণ করিয়ে
দেওয়া যাবে না;
বরং তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে এবং ক্ববরে প্রশ্নের জবাবে দৃঢ় থাকার
জন্য দো‘আ করতে হবে। কেননা
দাফনের পরে মৃতকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত
হাদীছটি দুর্বল।
প্রশ্ন ৪৫: মৃতকে
দাফনের পূর্বে তার পক্ষে সাক্ষ্য গ্রহণের রেওয়াজ
কিছু কিছু মুসলিম সমাজে প্রচলিত আছে। মৃতের কোন আত্মীয় বা অভিভাবক
জনগণকে উদ্দেশ্য করে বলে, আপনারা
মৃতের ব্যাপারে কি সাক্ষ্য প্রদান করবেন? তখন তারা
তার ব্যাপারে সততার সাক্ষ্য প্রদান করে।
এসব কর্মকাণ্ডের কোন ভিত্তি কি শরী‘আতে
আছে?
উত্তরঃ
শরী‘আতে এর কোন ভিত্তি নেই এবং কারো জন্য এরূপ বলাও উচিৎ নয়। কেননা এটি
বিদ‘আতের অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া তার ব্যাপারে কেউ অসততার
সাক্ষ্য দিতেও পারে, আর সে ক্ষেত্রে
সেটি হবে তার জন্য অপমান এবং লাঞ্ছনার বিষয়। কারণ এ বিষয়ে
একটি হাদীছ পাওয়া যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম একদা
তাঁর ছাহাবীগণের সঙ্গে ছিলেন। এমতাবস্থায়
একটি মৃতকে তাঁদের পাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হল এবং তাঁরা তার প্রশাংসা করলেন। তখন রাসূল
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘অপরিহার্য
হয়ে গেছে’। এরপর আরেকটি লাশ তাঁদের পাশ দিয়ে গেল কিন্তু তাঁরা তার
বদনাম করলেন। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘অপরিহার্য
হয়ে গেছে’। ছাহাবীগণ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম)
জিজ্ঞেস করলেন,
‘অপরিহার্য হয়ে গেছে’ অর্থ কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমরা
যার প্রশংসা করলে, তার জন্য জান্নাত অপরিহার্য
হয়ে গেছে। আর তোমরা যার বদনাম করলে, তার জন্য
জাহান্নাম অপরিহার্য হয়ে গেছে।[27]
প্রশ্ন ৪৬: ‘দু’জন
ব্যক্তিকে ক্ববরে শাস্তি দেওয়া হচ্ছিল। ফলে
শাস্তি মাফের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম
তাদের ক্ববরে খেজুরের ডাল পুঁতে দিলেন’[28] এই হাদীছের
আলোকে ক্ববরের উপরে গাছের কাঁচা ডাল ইত্যাদি পোঁতা কি
সুন্নাত নাকি এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম–এর
জন্য নির্দিষ্ট ছিল? আর তার জন্য নির্দিষ্ট হওয়ার দলীলইবা
কি?
উত্তরঃ
ক্ববরের উপরে গাছের কাঁচা ডাল বা ঐ জাতীয় কিছু পোঁতা
সুন্নাত নয়;
বরং ইহা একদিকে যেমন বিদ‘আত,
অন্যদিকে তেমনি মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণের
শামিল। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সব
ক্ববরে এরূপ রাখতেন না। শুধুমাত্র ঐ ক্ববর দু’টিতে
তিনি রেখেছিলেন। কারণ তিনি জানতে পেরেছিলেন যে, তাদেরকে
শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। অতএব, ক্ববরের উপরে খেজুর ডাল পোঁতা
মৃতের প্রতি অন্যায় এবং তার সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ বৈ
কিছুই নয়। আর কেউ তার মুসলিম ভাই সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করতে
পারে না। কেননা কেউ
কারো ক্ববরের উপর খেজুরের ডাল পোঁতার অর্থই হচ্ছে, সে বিশ্বাস
করে যে, ঐ
ক্ববরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। কারণ রাসূল
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ
ব্যক্তিদ্বয়কে শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছিলেন বলেই তো তাদের ক্ববরের উপরে
খেজুরের ডাল পুঁতেছিলেন।
সংক্ষিপ্তভাবে বলা যায়, ক্ববরের
উপরে খেজুরের ডাল বা এ জাতীয় কিছু পোঁতা বিদ‘আত
এবং মৃতব্যক্তি সম্পর্কে কু–ধারণা পোষণ। কেননা যে
ডাল পুঁতে,
সে মনে করে ক্ববরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। আর সেজন্যই
তো সে তার শাস্তি লাঘব করতে চায়। এখানে আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আল্লাহ ঐ
ব্যক্তিদ্বয়ের ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম–এর
সুপারিশ ক্ববূল করেছিলেন; কিন্তু তিনি মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে
আমাদের সুপারিশ ক্ববূল করবেন কিনা তা তো আমরা জানি না।
প্রশ্ন ৪৭: ইমাম ফরয ছালাতের
সালাম ফিরানোর সঙ্গে সঙ্গে মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজন তাকে দ্রুত দাফন করার
উদ্দেশ্যে তড়িঘড়ি করে ইমামের সামনে জানাযা পড়ানোর জন্য নিয়ে আসে।
এক্ষেত্রে মৃতের আত্মীয়-স্বজনের করণীয় আসলে কি? আর ইমামকেইবা আপনি কি নছীহত করবেন?
উত্তরঃ যদি
পরিপূর্ণ জামা‘আত পায়নি এমন মুছল্লীর সংখ্যা অনেক হয়, তবে
জানাযা ছালাতের জন্য একটু অপেক্ষা করা ভাল। তাহলে বেশী সংখ্যক মানুষ তার
জানাযা পড়তে পারবে এবং তারা নেকী থেকে বঞ্চিত হবে না। তবে
এধরনের কোন কারণ না থাকলে দেরী না করে জানাযার ছালাত আদায় করে তাড়াতাড়ি দাফন করা
ভাল।
প্রশ্ন ৪৮: মৃতের
সাথে লেনদেন সংক্রান্ত কিছু ঘটে থাকলে মৃত
ব্যক্তির অভিভাবক সে বিষয়টি সমাধানের জন্য
জানাযায় অংশগ্রহণকারীদের কাছে আবেদন
করতে পারে কি?
উত্তরঃ
এমন কর্ম বিদ‘আতের অন্তর্ভুক্ত। কেননা
মৃতের সাথে যার কোনো লেনদেন নেই,
মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে তার মনে কিছুই থাকে না। আর যার
সাথে মৃত ব্যক্তির লেনদেন থাকে এবং সে যদি তা আদায় করে
মৃত্যুবরণ করে,
তাহলেও তার মনে কিছু থাকে না। কিন্তু যদি মৃত ব্যক্তি লেনদেনের
পরিসমাপ্তি না করে মারা যায়, তাহলে লেনদেনে
জড়িত ব্যক্তি তার সমাধান করতেও পারে, আবার নাও
করতে পারে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে
ব্যক্তি পরিশোধ করার নিয়্যতে কারো কাছ থেকে অর্থ-সম্পদ নিল, আল্লাহ তার
পক্ষ থেকে আদায় করে দিবেন। কিন্তু যে ব্যক্তি ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে কারো
অর্থ-সম্পদ
নিল, আল্লাহ
তার ক্ষতি সাধন করবেন’।[29]
প্রশ্ন ৪৯: ক্ববর
যিয়ারতের প্রকারগুলি কি কি?
উত্তরঃ
শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ এবং ছওয়াবের আশায় মানুষ ক্ববর
যিয়ারত করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা
ক্ববর যিয়ারত কর। কেননা তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়’।[30]
তবে যে ব্যক্তি বরকত লাভের
উদ্দেশ্যে অথবা ক্ববরবাসীর কাছে প্রার্থনার উদ্দেশ্যে ক্ববর যিয়ারত করে, তার এই
যিয়ারত বিদ‘আতী যিয়ারতও হতে পারে,
আবার শিরকী যিয়ারতও হতে পারে। আল্লাহ্র প্রশংসা
যে, আমাদের
দেশে (অর্থাৎ সৌদী আরবে) এমনটি পাওয়া যায় না। যদিও কোন
কোন ইসলামী রাষ্ট্রে এরূপ যিয়ারতের প্রচলন আছে।
যাহোক, ক্ববর
যিয়ারত দুই ধরনেরঃ
১. নির্দিষ্টভাবে
কোন এক ব্যক্তির ক্ববর যিয়ারত করা। এই ক্ষেত্রে যিয়ারতকারী ক্ববরটির পাশে দাঁড়িয়ে
তার জন্য যত ইচ্ছা দো‘আ করবে; যেমনটি
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছিলেন। (ঘটনা হল) রাসূল
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্র
কাছে তাঁর মায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার অনুমতি চাইলে আল্লাহ তা‘আলা
তাঁকে অনুমতি দেন নি। কিন্তু
তাঁর মায়ের ক্ববর যিয়ারতের অনুমতি চাইলে তিনি তাঁকে অনুমতি দেন।[31] ফলে
তিনি তাঁর কতিপয় ছাহাবীকে নিয়ে তাঁর মায়ের ক্ববর যিয়ারত করেন।
২. ক্ববরস্থানের সবার ক্ববর যিয়ারত করা। এক্ষেত্রে যিয়ারতকারী ক্ববরসমূহকে সামনে করে দাঁড়াবে এবং
ক্ববরবাসীদেরকে সালাম
প্রদান করবে; যেমনটি রাসূল
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাকী‘
নামক ক্ববরস্থান যিয়ারতের সময় করতেন। তিনি বলতেন:
«السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ, وَإِنَّا إِنْ شَاءَ
اللَّهُ بِكُمْ لاَحِقُونَ. يَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّا
وَمِنْكُمْ وَالْمُسْتَأْخِرِينَ. نَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ, اَللَّهُمَّ
لاَ تَحْرِمْنَا أَجْرَهُمْ, وَلاَ تَفْتِنَّا بَعْدَهُمْ, وَاغْفِرْ لَنَا وَلَهُمْ»
‘হে ক্ববরবাসী মুমিনগণ! আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমরাও ইনশাআল্লাহ আপনাদের সাথে মিলিত হব। আমাদের ও আপনাদের অগ্রবর্তী ও
পরবর্তীদের উপরে আল্লাহ রহম করুন। আমরা আমাদের ও আপনাদের জন্য আল্লাহ্র কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! তাদের পূণ্য থেকে আপনি আমাদেরকে
বঞ্চিত করবেন না। তাদের মৃত্যুর পরে
আমাদেরকে আপনি ফেতনায় ফেলবেন না। আপনি আমাদেরকে এবং তাদেরকে ক্ষমা করে দিন’।[32]
প্রশ্ন ৫০: মৃত
ব্যক্তিকে সালাম প্রদানের সময় ক্বিবলামুখী হওয়া কি শরী‘আত
সম্মত?
উত্তরঃ
মৃত ব্যক্তির দিকে ফিরে তাকে সালাম করবে এবং তার জন্য দো‘আ
করবে।
ক্বিবলামুখী হওয়ার প্রয়োজন নেই।
প্রশ্ন ৫১: কেবলমাত্র
ক্ববরস্থানে প্রবেশ করলে মৃতদের প্রতি সালাম দেওয়া সুন্নাত নাকি ক্ববরস্থানের পাশ
দিয়ে অতিক্রম করলেও তাদেরকে সালাম দেওয়া যায়?
উত্তরঃ
শরী‘আত গবেষকগণ বলেন, কেউ ক্ববর
যিয়ারত করতে যাক অথবা ক্ববরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করুক, তার জন্য
একটু আগে উল্লেখিত দো‘আটির মাধ্যমে ক্ববরবাসীদের জন্য দো‘আ
করা সুন্নাত।
প্রশ্ন ৫২: শোক
পালনের সময় বিধবা স্ত্রীর উপর কি কি নিষিদ্ধ? দলীলসহ
জবাবদানে বাধিত করবেন।
উত্তরঃ
শোক পালনের সময় বিধবা স্ত্রীর উপর যেসব বিষয় নিষিদ্ধঃ
এক. প্রয়োজন
ছাড়া বাড়ী থেকে বের হবে না। যেমনঃ সে অসুস্থ হলে হাসপাতালে যেতে পারবে, তবে দিনের
বেলায় যাবে। অনুরূপভাবে যরূরী কারণ
ছাড়া বাড়ী থেকে বের হবে না। যেমনঃ তার বাড়ী ধ্বসে
পড়ার উপক্রম হল এবং ভেঙ্গেচুরে তার গায়ের উপর পড়ার ভয় পেল, অথবা তার
বাড়ীতে আগুন লেগে গেল ইত্যাদি। বিদ্বানগণ বলেন, দিনের বেলায়
দরকারে বের হতে পারে। কিন্তু রাতে যরূরী কারণ
ছাড়া বের হবে না।
দুই. খোশবূ
ব্যবহার করবে না। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম শোক
পালনকারিণীকে ঋতুমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত খোশবূ
ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। ঋতুমুক্ত হওয়ার পর ঋতুর চিহ্ন
দূর হওয়ার উদ্দেশ্যে সামান্য পরিমাণ আযফার (এক প্রকার
খোশবূ) ব্যবহার
করবে।[33]
তিন. শোভাবর্ধক
সুন্দর কোনো পোশাক পরিধান
করবে না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এমন
পোশাক পরতে নিষেধ করেছেন।[34]
ফলে সে কোনো রকম সাজসজ্জা ছাড়াই ঐ জাতীয় সাধারণ পোশাক পরবে, বাড়িতে
স্বাভাবিক যেসব পোশাক পরা হয়।
চার. চোখে সুরমা
লাগাবে না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম চোখে
সুরমা লাগাতে নিষেধ করেছেন।[35]
তবে যদি সুরমা লাগাতে বাধ্য হয়, তাহলে এমনভাবে লাগাবে যাতে রাতে
সুরমার রঙ প্রকাশ না পায়। আর দিনের
বেলায় উহা মুছে ফেলবে।
পাঁচ. অলংকার পরবে
না।
কেননা সুন্দর পোশাক পরাই যদি নিষেধ হয়, তাহলে অলংকার পরার নিষেধাজ্ঞা তো আরো
স্বাভাবিক।
সে পুরুষদের সাথে কথা বলতে
পারবে, ফোন-মোবাইলে কথা
বলতে পারবে। বাড়ীতে প্রবেশে শরী‘আতে বাধা
নেই এমন ব্যক্তিকে বাড়ীতে প্রবেশের অনুমতি দিতে পারবে। রাতে ও
দিনে বাড়ীর ছাদে উঠতে পারবে। প্রত্যেক জুমু‘আয় গোসল করা
তার জন্য আবশ্যক–
কিছু সাধারণ জনতার এমন ধারণা ঠিক নয়। প্রত্যেক সপ্তাহে তাকে তার মাথার
চুলও খুলতে হবে না।
অনুরূপভাবে ইদ্দত শেষ হওয়ার
পরে কিছু জিনিষ নিয়ে বের হওয়া এবং সর্বপ্রথম যার সাথে সাক্ষাৎ হবে, তাকে তা দান করে দেওয়ার প্রথাও শরী‘আত সম্মত নয়; বরং তা বিদ‘আত।
প্রশ্ন ৫৩: স্ত্রী যে বাড়ীতে থাকা অবস্থায় তার কাছে তার স্বামীর
মৃত্যুর খবর এসেছে, সেই বাড়ীতে শোক প্রকাশের দিনগুলি কাটানো কি তার জন্য আবশ্যক
নাকি তার স্বামীর বাড়ীতে? ওখান থেকে তার বাবার বাড়ীতে বা অন্যকোন বাড়ীতে যাওয়া কি তার
জন্য বৈধ হবে?
উত্তরঃ যে বাড়ীতে
সে বসবাস করত, সেখানে
অবস্থান করা তার জন্য আবশ্যক। ধরা যাক, সে তার কোন আত্মীয়ের বাড়ীতে বেড়াতে গেছে এবং এমতাবস্থায় তার স্বামীর মৃত্যুর
খবর এসেছে। এক্ষেত্রে
পূর্বে বসবাসকৃত বাড়ীতে ফিরে যাওয়া তার জন্য আবশ্যক। যে পাঁচটি বিষয় থেকে তাকে দূরে থাকার কথা বলা হয়েছে,
তন্মধ্যে একটি হল, সে তার বাড়ী থেকে বের হবে না।
প্রশ্ন ৫৪: মহিলাদের ক্ববর যিয়ারত সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত
করবেন।
উত্তরঃ মহিলাদের
ক্ববর যিয়ারত করা হারাম; বরং
কবীরা গোনাহ। কেননা
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ববর যিয়ারতকারিণীদেরকে অভিশাপ করেছেন। তবে যিয়ারতের নিয়্যত ছাড়াই কোনো মহিলা যদি
ক্ববরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে, তাহলে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ক্ববরবাসীদের জন্য দো‘আ করলে কোন সমস্যা নেই। ছহীহ মুসলিমে বর্ণিত আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)–এর হাদীছে
এমনই ইঙ্গিত পাওয়া যায়।[36]
প্রশ্ন ৫৫: বর্তমানে পত্র-পত্রিকায় শোক প্রকাশের এবং মৃতব্যক্তির অভিভাবকদের পক্ষ থেকে শোক
প্রকাশকারীদের ধন্যবাদ জানানোর ধূম পড়ে গেছে। এমন রেওয়াজের হুকুম কি? এটি কি নিষিদ্ধ
বিলাপ ও মাতমের আওতায় পড়বে? উল্লেখ্য যে, পত্রিকায় শোক প্রকাশ এবং শোক প্রকাশকারীদেরকে ধন্যবাদ
জানাতে কখনও পত্রিকার পুরো পৃষ্টা লেগে যায়, যার ব্যয়ভার দশ হাযার সঊদী রিয়াল পড়ে। ইহা কি অপচয়ের অন্তর্ভুক্ত হবে?
উত্তরঃ হ্যাঁ..
আমার মতে, এমন রেওয়াজ নিষিদ্ধ বিলাপের আওতাভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন আমল নিষিদ্ধ
বিলাপের আওতাভুক্ত না হলেও অন্ততঃ এতে সম্পদের
অপচয় ও অপব্যয় তো হয়ই। মূলতঃ শোক প্রকাশ ধন্যবাদ জানানোর মত কোনো বিষয় নয় যে,
মানুষকে পত্রিকার
মাধ্যমে এতবেশী উদ্বুদ্ধ হতে হবে।
বরং শোক প্রকাশের অর্থ হল, শোকগ্রস্ত ব্যক্তিকে কষ্ট সহ্যের প্রতি শক্তিশালী করে তোলা। এটি ভদ্রতা রক্ষার কোনো বিষয় নয় এবং না কোনো ধন্যবাদ জানানোর বিষয়। মানুষ যদি শোক প্রকাশের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য জানত, তাহলে পত্রিকায় শোক
প্রকাশ, শোকের জন্য সমবেত হওয়া, খানা-পিনার আয়োজন করা ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের
ধারে-কাছেও যেত না।
প্রশ্ন ৫৬: শোক প্রকাশের সময় উল্লেখ করতে গিয়ে আপনি বলেছেন,
মৃত্যুঘটিত কারণ ছাড়া অন্য কারণেও
শোক প্রকাশ করা যেতে পারে। কিন্তু আসলেই কি অন্য কারণে শোক প্রকাশ করা যায়?
আর গেলে কিভাবে তা প্রকাশ করতে হবে?
উত্তরঃ শোকগ্রস্ত
ব্যক্তিকে ধৈর্য্যধারণের প্রতি শক্তিশালী করাই হল শোক প্রকাশ। সেজন্য তা মৃত্যুঘটিত কারণ ছাড়া অন্য ক্ষেত্রেও হতে পারে। যেমনঃ প্রচুর সম্পদ হারিয়ে যাওয়ার কারণে কেউ শোকাগ্রস্ত
হলো এবং সে যাতে ভেঙ্গে না পড়ে সেজন্য আপনি শোকপ্রকাশ করতঃ তাকে ধৈর্য্যধারণের প্রতি উৎসাহিত করলেন।
প্রশ্ন ৫৭: দুই ঈদের দিন এবং জুম‘আর দিনকে
ক্ববর যিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট করে নেওয়ার বিধান কি? এই দিনগুলিতে কি জীবিতদের সাথে সাক্ষাত করতে হবে নাকি ক্ববর
যিয়ারত করতে হবে?
উত্তরঃ এই
দিনগুলিকে ক্ববর যিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট করে নেওয়ার কোনো ভিত্তি নেই। সুতরাং ঈদের দিনকে ক্ববর যিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট করে
নেওয়া এবং এমন আমলকে শরী‘আতসম্মত মনে করা বিদ‘আত। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে এমর্মে কিছুই বর্ণিত হয় নি এবং কোনো বিদ্বান এ মতের পক্ষে অভিমত দিয়েছেন মর্মেও আমার জানা নেই। তবে জুম‘আর দিনের ব্যাপারে কতিপয় বিদ্বান বলেছেন,
এই দিনে ক্ববর যিয়ারত করা উচিৎ। তবে তাঁরা তাঁদের মতের পক্ষে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে কোন দলীল পেশ করেন নি।
প্রশ্ন ৫৮: মহিলা কর্তৃক রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম–এর ক্ববর
যিয়ারত এবং অন্যের ক্ববর যিয়ারতের মধ্যে কি কোন পার্থক্য আছে?
মহিলা কর্তৃক ক্ববর যিয়ারতের নিষেধাজ্ঞা
কি ‘আম বা সার্বিক বিধান নাকি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম–এর ক্ববর এই
হুকুম থেকে আলাদা?
উত্তরঃ মহিলা
কর্তৃক বিশেষভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর ক্ববর যিয়ারতের বৈধতার পক্ষে কোনো দলীল নেই। সুতরাং মহিলা কর্তৃক রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর ক্ববর যিয়ারত অন্য যে কোনো ব্যক্তির ক্ববর যিয়ারতের মতই। একারণে আল্লাহ্র শুকরিয়া যে, মহিলা ছালাতে অথবা ছালাতের বাইরে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর প্রতি সালাম প্রদান করলেই তার জন্য যথেষ্ট হবে। কেননা সে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে সালাম প্রদান করুক না কেন,
তার সালাম রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর রূহ বরাবর পৌঁছে দেওয়া হয়।
প্রশ্ন ৫৯: ক্ববরের উপর লেখা অথবা ক্ববর রঙীন করার বিধান কি?
উত্তরঃ ক্ববর রঙীন
করা ক্ববরকে চুনকাম বা প্লাস্টার করার মতই। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ক্ববরকে চুনকাম বা প্লাস্টার করতে নিষেধ করেছেন।[37] এছাড়া এটি মানুষের মধ্যে গর্ব–অহংকার সৃষ্টির একটি মাধ্যম। ফলে এর মাধ্যমে ক্ববরসমূহ অহংকারের স্থান হিসাবে পরিগণিত হবে। অতএব, তা পরিত্যাগ করা উচিৎ।
এমনিভাবে
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ববরে লিখতে নিষেধ করেছেন।[38] তবে লেখা যদি কেবলমাত্র পরিচয় দানের
উদ্দেশ্যে হয় এবং তাতে কোন প্রশাংসার উল্লেখ না থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে কতিপয় আলেম শিথিলতা প্রদর্শন করেছেন। তারা বলেছেন, লেখাতে যদি মৃত ব্যক্তির সম্মান প্রকাশ পায়,
তাহলে তা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হবে। কেননা ক্ববরে লেখা থেকে নিষেধকে ক্ববর পাকা করা থেকে
নিষেধের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
প্রশ্ন ৬০: স্বীকৃত কোনো সৎ ও জ্ঞানী মানুষ মারা গেলে তাঁর ক্ববর যিয়ারতকারীদের
সংখ্যা বেশী হয়। কিন্তু সেটি যেন শির্কের
মাধ্যমে পরিণত না
হয়, সেজন্য কিছু
কিছু ছাত্র এত বেশী পরিমাণ যিয়ারত করতে নিষেধ করে থাকে। এক্ষণে
এবিষয়ে আপনার মতামত জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তরঃ ছাত্রদের
এই মতটি আমিও ঠিক
মনে করি। কেননা নেককার ও জ্ঞানীদের ক্ববর বেশী বেশী যিয়ারত করলে
পরবর্তীতে এই যিয়ারত শির্কের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। সেজন্য ক্ববর যিয়ারত ছাড়াই তাঁদের জন্য দো‘আ করা উচিৎ। কেননা আল্লাহ বান্দার দো‘আ ক্ববূল করলে তা মৃত
ব্যক্তির জন্য ফায়দা দিবে। বান্দা মৃত ব্যক্তির ক্ববরের কাছে এসে দো‘আ করুক অথবা বাড়ীতে বা
মসজিদে দো‘আ করুক, সেটি কোনো ব্যাপার নয়। ফলে ক্ববরের কাছে বেশী বেশী যাওয়ার প্রয়োজন নেই। অতএব, ছাত্রদের এই নিষেধাজ্ঞা যুক্তিযুক্ত, বিশেষ করে
বর্তমান যামানায়।
প্রশ্ন ৬১: খারাপ প্রকৃতির মানুষ মারা গেলে লোকে অনেক সময় তার
দোষত্রুটি বর্ণনা করে। অথচ ছহীহ বুখারীতে এসেছে, ‘তোমরা
মৃতদেরকে গালি দিও না। কেননা তারা তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান প্রাপ্তির স্থলে পৌঁছে গেছে’।[39] এক্ষণে, ঐসব লোক কি এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ে?
উত্তরঃ হ্যাঁ,
যদি ঐ ব্যক্তির খারাপ দিক বর্ণনার পেছনে তাকে
গালি-গালাজ করার
উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে তা
জায়েয নয়। কিন্তু এর
উদ্দেশ্য যদি হয়, তার আমলের মত আমল থেকে মানুষকে সতর্কীকরণ,
তাহলে তাতে কোনো সমস্যা নেই। কেননা এর মাধ্যমে সে অন্যের কল্যাণ কামনা করে।
প্রশ্ন ৬২: ক্ববরে মৃত ব্যক্তির জন্য ‘ক্বাতীফা’ বা মখমল ও রেশমী
জাতীয় কাপড় দেওয়ার
হুকুম কি? ছহীহ মুসলিমে এসেছে, ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর ক্ববরে লাল ক্বাতীফা দিয়েছিলেন।[40]
উত্তরঃ কেউ কেউ
ক্ববরে ক্বাতীফা দেওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করলেও এ বিষয়ে আমার দ্বিমত রয়েছে। কেননা কোনো একজন ছাহাবী থেকেও বর্ণিত হয় নি যে,
তারা এমনটি করেছেন। তবে হতে পারে যে, তা রাসূল
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর জন্য নির্দিষ্ট ছিল। দ্বিতীয়তঃ যদি এমন পদ্ধতি চালু করা হয়, তাহলে মানুষ প্রতিযোগিতায় নেমে পড়বে এবং প্রত্যেকে চাইবে তার নিজস্ব মৃত
ব্যক্তির ক্ববরে অন্যের চেয়ে সুন্দর কাপড় দিতে। অবশেষে ক্ববরসমূহ মানুষের অহংকারের স্থানে পরিণত হবে।
প্রশ্ন ৬৩: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম–এর গোলাম
শুক্বরান যখন তাঁর ক্ববরে কাপড় দিয়েছিলেন, তখন
ছাহাবীগণ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) তার বিরোধিতা করেছিলেন মর্মে কোন দলীল আছে কি?
ছাহাবীগণ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) এই কাপড় আবার বের করে ফেলেছিলেন মর্মের বক্তব্যের
সঠিকতাইবা কতটুকু?
উত্তরঃ এ বিষয়ে
আমার কিছুই
জানা নেই।
প্রশ্ন ৬৪: ইমাম মুসলিম বর্ণিত আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু–এর হাদীছে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘কোনো মুসলিম ব্যক্তির রূহ যখন বের হয়ে যায়,
তখন দু’জন ফেরেশতা তা নিয়ে উপরে
উঠে।
হাম্মাদ (হাদীছটির
একজন বর্ণনাকারী) বলেন, অতঃপর রাসূল
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ রূহের সুগন্ধি এবং
মিস্কে আম্বরের কথা উল্লেখ করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
ঐ সময় আসমানবাসী বলেন,
যমীন থেকে পবিত্র আত্মা এসেছে।…আল্লাহ আপনার উপর রহমত বর্ষণ করুন এবং আপনার শরীরের প্রতিও
রহমত বর্ষণ করুন, যাকে আপনি সৎ আমল দ্বারা পরিচালিত করতেন। অতঃপর তাকে তার প্রভূর দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তারপর আল্লাহ বলবেন, একে শেষ সময় পর্যন্ত নিয়ে যাও। অনুরূপভাবে কাফেরকেও বলা হয়, একে শেষ সময় পর্যন্ত নিয়ে যাও।[41] এক্ষণে হাদীছে ‘শেষ সময় পর্যন্ত’ দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে?
প্রশ্ন ৬৫: ছহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীছে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘আমি আমার প্রভূর কাছে আমার মায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার
অনুমতি চাইলাম। কিন্তু তিনি
আমাকে অনুমতি দিলেন না’।[43] উক্ত হাদীছ কি প্রমাণ করে যে, তাঁর মা জাহান্নামী?
উত্তরঃ হ্যাঁ,
উক্ত হাদীছ
প্রমাণ করে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মা
মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَن يَسْتَغْفِرُوا
لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُوا أُولِي قُرْبَىٰ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ
أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ﴾
[سورة التوبة: 113]
‘মুশরিকরা জাহান্নামী একথা স্পষ্ট হওয়ার পর তাদের জন্য ক্ষমা
প্রার্থনা করা নবী ও মুমিনের জন্য উচিৎ নয়, যদিও তারা নিকটাত্মীয় হয়’ (তাওবাহ ১১৩)।
অন্যত্রে
আল্লাহ বলেন,
﴿إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ
بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ
الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ
أَنصَارٍ﴾ [سورة المائدة: 72]
‘নিশ্চয় যে
ব্যক্তি আল্লাহ্র সাথে শির্ক করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম
করে দেন। আর তার বাসস্থান
হচ্ছে জাহান্নাম। অত্যাচারীদের
কোন সাহায্যকারী নেই’ (মায়েদাহ ৭২)।
প্রশ্ন ৬৬: জুতা পায়ে ক্ববর স্থানে যাওয়ার হুকুম কি?
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘হে জুতাওয়ালা, তোমার জুতা জোড়া খুলো’।[44] এই দলীল কি সঠিক?
উত্তরঃ বিদ্বানগণ
বলেন, জুতা পায়ে
ক্ববরস্থানে যাওয়া মাকরূহ। তারা এ হাদীছকে দলীল হিসাবে পেশ করেছেন। তবে তারা বলেছেন, প্রয়োজনের তাকীদে জুতা পায়ে ক্ববরস্থানে গেলে কোনো সমস্যা নেই। যেমনঃ সূর্যতাপে ক্ববরস্থানের মাটি খুব
গরম থাকলে, সেখানে কাঁটা
থাকলে ইত্যাদি।
প্রশ্ন ৬৭: ইমাম মুসলিম মুহাম্মাদ ইবনে ক্বায়স
থেকে বর্ণনা করেন, আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)
বলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! ক্ববরবাসীদের জন্য আমি কিভাবে দো‘আ করব?
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, তুমি বলবে,
«السَّلَامُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنْ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ
وَيَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِينَ وَإِنَّا إِنْ
شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَاحِقُونَ»
‘ক্ববরবাসী মুমিন এবং মুসলমানের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমাদের অগ্রবর্তী
এবং পরবর্তীদের উপর আল্লাহ রহম করুন। আমরা নিশ্চয়ই আপনাদের সাথে মিলিত হব ইনশাআল্লাহ।[45]
এছাড়া বুখারী ও মুসলিমে উম্মে আত্বিইয়া (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘মৃতের
জানাযা ও কাফন-দাফনে শরীক হতে আমাদেরকে নিষেধ করা হত।
কিন্তু আমাদের প্রতি কঠোরতা প্রয়োগ
করা হত না’।[46] অর্থাৎ এই নিষেধ
ছিল মাকরূহ; হারাম নয়। এসব হাদীছ কি স্পষ্ট প্রমাণ করে না যে,
মহিলারা যদি যিয়ারত করতে যেয়ে হারাম কার্য এড়িয়ে চলে, তাহলে তারা ক্ববর যিয়ারত করতে পারে? যদি তা না হয়, তাহলে মুহাম্মাদ বিন ক্বায়স বর্ণিত আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বর্ণিত উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যা কি হবে?
উত্তরঃ ইতোপূর্বে এ
জাতীয় একটি প্রশ্নের জবাব আমরা প্রদান করেছি। আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)–এর হাদীছের
আলোকে আমরা বলেছি, কোন মহিলা
ক্ববর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে বের হলে তা কবীরা গোনাহ হিসাবে বিবেচিত হবে। কিন্তু যদি সে ক্ববর যিয়ারতের নিয়্যত ছাড়াই ক্ববরের পাশ
দিয়ে অতিক্রম করে এবং একটু দাঁড়িয়ে ক্ববরবাসীকে সালাম দেয়, তাহলে তাতে কোনো দোষ নেই। এটিই আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)–এর হাদীছের
ব্যাখ্যা। ফলে হাদীছদ্বয়ের মধ্যে আর বৈপরীত্য থাকল না। ‘আমাদেরকে
মৃতের জানাযা ও কাফন-দাফনে শরীক
হতে নিষেধ করা হত, কিন্তু
আমাদের প্রতি কঠোরতা দেখানো হত না’ উম্মে আত্বিইয়া
(রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)-এর এই হাদীছের ব্যাখ্যায় বেশীর ভাগ বিদ্বান বলেছেন,
‘আমাদেরকে মৃতের জানাযা ও কাফন-দাফনে শরীক হতে নিষেধ করা হত’ মর্মে উম্মে আত্বিইয়ার এই বর্ণনাটুকুই ধর্তব্য হবে। আর হাদীছের পরবর্তী অংশ ‘আমাদের উপর কঠোরতা করা হত না’ তাঁর নিজস্ব বুঝ।
তবে হতে পারে এটিই রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর উদ্দেশ্য। কিন্তু মনে রাখতে হবে, জানাযার কাজে শরীক হওয়া আর ক্ববর যিয়ারত করা এক নয়। কেননা জানাযার কাজে পুরুষ থাকায় তারা মহিলাদেরকে নিষিদ্ধ কাজ
থেকে বাধা দিতে পারে; কিন্তু ক্ববর যিয়ারতের ক্ষেত্রে তা তেমনটি সম্ভব হয় না।
প্রশ্ন ৬৮: ছহীহ মুসলিমে আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীছে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘মুমূর্ষু রোগীদেরকে তোমরা লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ
স্মরণ করাও।[47] বাহ্যত এই হাদীছটি মুমূর্ষু ব্যক্তিকে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ স্মরণ করানো ওয়াজিব সাব্যস্ত
করে। প্রশ্ন
হচ্ছে, ওয়াজিব এই হুকুম সুন্নাত ও মুস্তাহাব পর্যায়ে নিয়ে আসার কোন দলীল আছে কি?
উত্তরঃ ছাহাবীগণের
আমলই তার দলীল। কেননা তাঁরা প্রত্যেক
মুমূর্ষুকে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ স্মরণ করাতেন না।
প্রশ্ন ৬৯: ছহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীছে প্রমাণিত হয়, রূহ (روح) এবং নাফ্স (نفس) একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। হাদীছটি এরূপ, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘তোমরা কি দেখনি, মরনের সময় মানুষ অপলক দৃষ্টিতে এবং চোখ মোটা করে তাকায়?’ ছাহাবীগণ
(রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) বললেন, নিশ্চয়ই। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন,
‘মানুষের নাফ্স বের হওয়ার সময় তার চোখ সেদিকে তাকিয়ে থাকে বলে এমন
অবস্থার সৃষ্টি হয়’।[48] উম্মে সালামাহ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)
বর্ণিত অন্য হাদীছে এসেছে,
‘যখন রূহ ছিনিয়ে নেয়া হয়, তখন চোখ
সেদিকে দেখতে থাকে’।[49] তাহলে রূহ্ই কি নাফ্স? জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তরঃ হ্যাঁ,
রূহ এবং নাফস একই অর্থে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿اللَّهُ يَتَوَفَّى
الْأَنفُسَ حِينَ مَوْتِهَا وَالَّتِي لَمْ تَمُتْ فِي مَنَامِهَا﴾
[سورة زمر: 42]
‘আল্লাহ মানুষের প্রাণ হরণ করেন তার মৃত্যুর সময়; আর যে মরে না,
তার নিদ্রাকালে’
(যুমার ৪২)।
প্রশ্ন ৭০: ছহীহ মুসলিমে আবূ মালেক আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত
হাদীছে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘বিলাপকারিণী
যদি তওবা না করে, তাহলে আলকাতরার পোশাক এবং খোস-পাঁচড়ার বর্ম পরিয়ে ক্বিয়ামতের দিন তাকে উঠানো হবে’।[50] উক্ত হাদীছে ‘খোস–পাঁচড়ার বর্ম’ বলতে কি বুঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ এর অর্থ হল,
তার চামড়ায় খোস–পাঁচড়া হবে। জাহান্নামের আগুনে যাতে তার কষ্টের পরিমাণ বেশী হয়,
সেজন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা আল্লাহ্র কাছে জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
১. মৃত
ব্যক্তিকে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে নিয়ে যাওয়া এবং বারংবার জানাযার ছালাত পড়াঃ
যদি মৃতকে একস্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য হয় বারবার জানাযার ছালাত আদায় করা, তাহলে তা নিকৃষ্ট বিদ‘আত হিসাবে পরিগণিত হবে। এটি সালাফে ছালেহীনের পথনির্দেশের বিরোধী এবং মৃতকে দ্রুত কাফন-দাফনের ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশেরও বিরোধী। এছাড়া এর মাধ্যমে মৃতদের নিয়ে মানুষের মাঝে গর্ব-অহংকারের পর্দাতো উন্মুক্ত হয়ই। শুধু তাই নয়; বরং মৃতের কাফন-দাফনের বিষয়টি বিয়ের অনুষ্ঠানের মত হয়ে যায়।
যদি মৃতকে একস্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য হয় বারবার জানাযার ছালাত আদায় করা, তাহলে তা নিকৃষ্ট বিদ‘আত হিসাবে পরিগণিত হবে। এটি সালাফে ছালেহীনের পথনির্দেশের বিরোধী এবং মৃতকে দ্রুত কাফন-দাফনের ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশেরও বিরোধী। এছাড়া এর মাধ্যমে মৃতদের নিয়ে মানুষের মাঝে গর্ব-অহংকারের পর্দাতো উন্মুক্ত হয়ই। শুধু তাই নয়; বরং মৃতের কাফন-দাফনের বিষয়টি বিয়ের অনুষ্ঠানের মত হয়ে যায়।
আর বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, গায়েবানা জানাযা শরী‘আত
সম্মত নয়। তবে মৃত
ব্যক্তির জানাযা না কোথাও না পড়া হলে সেক্ষেত্রে তার গায়েবানা জানাযা পড়া যায়;
যেমনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজাশীর
গায়েবানা জানাযা পড়েছিলেন।
অনুরূপভাবে দেশপ্রধান গায়েবানা জানাযার আদেশ করলে পড়া যেতে পারে। কেননা ইজতেহাদী কোন বিষয়ে রাষ্ট্রপ্রধানের অবাধ্য হওয়া
উচিৎ নয়।
তবে কোনো
জায়গা উত্তম হওয়ার কারণে অথবা সেখানে মৃত ব্যক্তির পরিবার-পরিজন থাকার কারণে
সেখানে দাফন করার উদ্দেশ্যে যদি তাকে নিয়ে যাওয়া হয়, তবে তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু কোনো জায়গা উত্তম হওয়ার কারণে সেখানে মৃত দাফনের
ভিড় পড়ে যেতে পারে এই আশংকায়, উক্ত জায়গা সংকীর্ণ হওয়ার কারণে অথবা ঠিকমত
দাফনকার্য সম্পাদন করতে না পারার কারণে যদি রাষ্ট্রপ্রধান মৃতকে সেখানে নিয়ে যেতে
নিষেধ করেন, তাহলে নিয়ে যাওয়া যাবে না।
এমনিভাবে ওয়ারিছদের ক্ষতি হতে পারে এমন ব্যাপক পরিমাণ অর্থ ব্যয় হওয়ার আশংকা
থাকলেও মৃতকে অন্য স্থানে স্থানান্তর করা যাবে না।
আবার
কখনও মুর্দাকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত করা আবশ্যক হয়ে পড়তে পারে। যেমনঃ কেউ যদি কাফের রাষ্ট্রে মৃত্যুবরণ করে, সেখানে
মুসলিমদের ক্ববরস্থান না থাকে এবং ঐ দেশের অন্য কোথাও তাকে দাফন করা সম্ভব না হয়,
তাহলে সেক্ষেত্রে তাকে মুসলিম রাষ্ট্রে স্থানান্তর করা আবশ্যক।
একই
এলাকার একাধিক মসজিদে জানাযা পড়ানোর জন্য মৃত ব্যক্তিকে এক স্থান থেকে অন্য
স্থানে স্থানান্তর করাও জঘন্য বিদ‘আত।
অতএব, জানাযা পড়ার জন্য মৃত ব্যক্তির নিকটে যেতে হবে; তাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো যাবে
না।
২. জানাযার স্থান অত্যন্ত সংকীর্ণ হওয়ার কারণে মৃত
ব্যক্তির নিকটাত্মীয়রা যদি ইমামের সাথে একই কাতারে দাঁড়ায়, তাহলে তাতে কোনো সমস্যা
নেই। তবে ইমাম ও প্রথম কাতারের মধ্যবর্তী স্থানেও
যদি দাঁড়ানো সম্ভব হয়, তাহলে ইমামের সাথে দাঁড়াবে না। তারা ইমামের ডান-বাম উভয় পাশে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু স্থানটি যদি প্রশস্ত হয়, তাহলে একই কাতারে
ইমামের সাথে দাঁড়াবে না।
কেননা জামা‘আতে ছালাত আদায়ের ক্ষেত্রে এমনভাবে দাঁড়ানো
সুন্নাত পরিপন্থী।
উল্লেখ্য যে, মৃত ব্যক্তির কতিপয় আত্মীয় ইমামের সাথে একই কাতারে দাঁড়ানোর জন্য
সামনে যায় এবং মনে করে, এটিই সুন্নাত।
কিন্তু মূলতঃ এমন আমল মারাত্মক ভুল, ইমামগণের উচিৎ মানুষকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে
তোলা। সাথে সাথে তাদেরকে বলে দিতে হবে যে, ইহা
সুন্নাত নয়।
৩. বিনা প্রয়োজনে ক্ববরস্থানে গাড়ী প্রবেশ করানো উচিৎ নয়। কেননা তা একদিকে যেমন স্থান সংকীর্ণ করে, অন্যদিকে
তেমনি জানাযার দৃশ্যকে বিবাহ অনুষ্ঠানের দৃশ্যে পরিণত করে। ফলে তা মানুষকে আখেরাতের কথা স্মরণের বিষয়টি ভুলিয়ে দেয়।
৪. বর্তমানে শোক প্রকাশের সময় মুছাফাহা এবং কোলাকুলির যে
রীতি মানুষ চালু করেছে, সালাফে ছালেহীন থেকে তার কোনো ভিত্তি আছে বলে আমার জানা
নেই। অনুরূপভাবে শোকপ্রকাশকারীদের উদ্দেশ্যে
মৃতের পরিবার-পরিজন কর্তৃক সারিবদ্ধ অবস্থানেরও কোন ভিত্তি আমার জানা নেই। কিন্তু কেউ কেউ বলে, যদি জানাযায় অংশগ্রহণকারীদের
সংখ্যা অনেক হয় এবং মৃতের পরিবার-পরিজনের সংখ্যা বেশী হয়, তাহলে শোক প্রকাশকারীদের
আরামের উদ্দেশ্যে তারা এরূপ সারিবদ্ধ অবস্থান গ্রহণ করে। এতে মৃতের পরিবার-পরিজনকে খুঁজে পেতে শোক প্রকাশকারীদের
কষ্ট হয় না। তাদের
উদ্দেশ্য সঠিক হলেও এমন আমল আমার পছন্দ নয়।
৫. জানাযা ও কাফন-দাফনে অংশগ্রহণকারীদেরকে তাদের বর্তমান ও
ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে হবে।
মনে রাখতে হবে, আজ সে মৃত ব্যক্তির জানাযা ও কাফন-দাফনে অংশগ্রহণ করেছে; কিন্তু
কাল তার জানাযায় অন্যরা অংশগ্রহণ করবে।
অতএব, এসময় তাদেরকে দুনিয়াবী আলাপ-আলোচনা পরিত্যাগ করতে হবে। কেননা এমন খোশ গল্প করলে একদিকে যেমন তারা আখেরাতের কথা
স্মরণ করতে ব্যর্থ হয়, অন্যদিকে তেমনি তা মৃতের শোকাহত আত্মীয়-স্বজন ও
বন্ধু-বান্ধবের মনে আঘাত হানে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ববরস্থানে ক্ববর
খনন সম্পন্ন হওয়ার আগে তাঁর ছাহাবীগণের সাথে বসে সময়োপযোগী আলোচনা করতেন। ছহীহ বুখারীতে আলী ইবনে আবু তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে
বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, আমরা এক জানাযায় বাক্বী‘উল গারক্বাদ ক্ববরস্থানে ছিলাম। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এসে বসলেন এবং আমরাও তাঁর পাশে বসলাম। তাঁর হাতে ছিল একটি লাঠি, অতঃপর তিনি মাথা নোয়ায়ে
চিন্তামগ্ন অবস্থায় লাঠিটি দিয়ে মাটি খুঁটতে লাগলেন...।
মুসনাদে
আহমাদ, সুনানে আবু দাঊদসহ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে বারা ইবনে আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে
বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, আমরা আনছারদের এক ব্যক্তির জানাযায় রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বের হলাম। আমরা ক্ববরস্থানে পৌঁছে গেলাম, কিন্তু তখনও ক্ববর খনন
সম্পন্ন হয় নি। তখন
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে পড়লেন এবং আমরাও
এমনভাবে বসে পড়লাম, যেন আমাদের মাথায় পাখি বসে আছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁর হাতের লাঠি দিয়ে মাটি খুঁটতে খুঁটতে বললেন, ‘তোমরা প্রতিদিন ২/৩
বার আল্লাহ্র কাছে ক্ববরের আযাব থেকে পরিত্রাণ চাইবে’। অতঃপর তিনি তাঁদের উদ্দেশ্যে মৃত্যুর সময় এবং মৃত্যুর
পরে মুমিন ও কাফিরের অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করলেন।
উক্ত
হাদীছদ্বয় থেকে আমরা জানতে পারলাম, জানাযা ও কাফন-দাফনে অংশগ্রহণকারীদের পারস্পরিক
আলোচনা হবে মৃত্যু এবং মৃত্যুর পরের অবস্থা নিয়ে।
এই
হাদীছদ্বয়ের আলোকে কেউ কেউ বলেন, এমন অবস্থায় মানুষদের উদ্দেশ্যে কিছু ওয়ায-নছীহত
করা উচিৎ। সুতরাং
কেউ দাঁড়িয়ে তাদের সামনে আলোচনা পেশ করবেন। কিন্তু হাদীছদ্বয় থেকে এমন দলীল গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বক্তব্য পেশ করার উদ্দেশ্যে দাঁড়ান নি; বরং বসে বসে তাঁর আশেপাশের
লোকদের সাথে কিছু কথা বলেছেন মাত্র।
৬. শোক প্রকাশকারীদেরকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য মৃতের
পরিবার-পরিজন কর্তৃক বাড়ীতে অবস্থানের রীতি সালাফে ছালেহীনের যুগে ছিল না। সেজন্য কেউ কেউ স্পষ্টই বলেছেন যে, এমনটি করা বিদ‘আত। ‘আল-ইক্বনা ওয়া শারহুহু’ গ্রন্থকার বলেন, শোকপ্রকাশের
জন্য বসা অপছন্দনীয়।
অর্থাৎ মানুষ শোকাহত ব্যক্তিকে শোক জানাতে আসবে আর সে তাদের অপেক্ষায় বসে থাকবে,
এমন রীতি অপছন্দনীয়।
তাঁকে মৃতের পরিবার-পরিজনের উদ্দেশ্যে খাবার তৈরীর কথা বলা হলে তিনি বলেন, মৃতের
পরিবার-পরিজনের উদ্দেশ্যে খাবার তৈরী করবে; তাদের নিকট আগত লোকজনের জন্য নয়। কেননা মৃতের বাড়ীতে আগতদের জন্য খাবার তৈরী করা
অপছন্দনীয়। কারণ
এতে মৃতের বাড়ীতে মানুষের সমবেত হওয়ার মত একটি অপছন্দনীয় কাজের প্রতি সাহায্য করা
হয়।
মারওয়াযী
(রহেমাহুল্লাহ) ইমাম আহমাদ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, এটি জাহেলী যুগের
কর্মকাণ্ডের একটি। তিনি
কঠোরভাবে এর বিরোধিতা করেন।
অতঃপর তিনি জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর
হাদীছ উল্লেখ করেন। জারীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পর তার বাড়ীতে লোকজনের উপস্থিতি এবং তাদের জন্য খাবার তৈরীর
বিষয়টি আমরা নিষিদ্ধ শোক-মাতমের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করতাম। ইমাম নববী তাঁর ‘শারহুল মুহায্যাব’ গ্রন্থে বলেন, শোক
প্রকাশের জন্য একত্রে বসাকে ইমাম শাফেঈ, মুহায্যাব গ্রন্থকার এবং শাফেঈ মাযহাবের
সবাই অপছন্দনীয় গণ্য করেছেন।
আবু হামেদসহ অন্যান্যগণ ইমাম শাফেঈ (রহেমাহুল্লাহ)-এর এই উক্তির ব্যাখ্যায় বলেছেন,
এখানে শোক প্রকাশের জন্য বসার অর্থ হল, মৃতের পরিবার-পরিজনেরা বাড়ীতে একত্রে বসে
থাকবে আর লোকজন তাদেরকে শোক জানাবে।
সেজন্য মৃতের পরিবার-পরিজনের উচিৎ, নিজ নিজ কাজে বেরিয়ে যাওয়া। এরপর তাদের সাথে কারো কোথাও দেখা হয়ে গেলে শোক জানাবে।
এখানে
আরেকটি বিষয় হল, মৃতের পরিবারের সদস্যরা শোক প্রকাশকারীদের উদ্দেশ্যে বাড়ীর দরজা
খুলে রেখে যেন বলতে চায়, আমরা আজ শোকাহত, তোমরা আমাদের উদ্দেশ্যে শোক প্রকাশ কর। অনুরূপভাবে পত্র-পত্রিকায় শোক প্রকাশের স্থান ঘোষণা
করার অর্থও তাই। কারো
শোক প্রকাশের প্রত্যাশী হয়ে মুছীবতের ঘোষণা দেওয়া কি সুন্নাত?! আল্লাহ্র
তাক্বদীরকে দ্বিধাহীন চিত্তে মেনে নিয়ে ধৈর্য্যধারণ করা এবং বিষয়টিকে তার এবং তার
প্রভূর মাঝে সীমাবদ্ধ রাখা কি উচিৎ ছিল না?! সকল সমস্যায় আল্লাহ্র ওয়াস্তে নিজেকে
সান্ত্বনা দেওয়া কি উচিৎ নয়।
কোন কোন
এলাকায় তাঁবু খাটানো হয়, চেয়ার সাজানো হয় এবং আলোকসজ্জা করা হয়। আর উপস্থিতিদেরকে এত বেশী মাত্রায় প্রবেশ করতে এবং বের
হতে দেখা যায় যে, বিয়ের অনুষ্ঠান এবং এর মধ্যে কোন পার্থক্যই করা যায় না।
আবার
কখনও মৃতের রূহের মাগফেরাতের আশায় ক্বারী ও হাফেযদেরকে ভাড়া করে আনা হয়। অথচ এসব ক্ষেত্রে ভাড়া করা অন্যায়। মনে রাখতে হবে, এই অর্থলোভে ক্বুরআন পড়তে আসার কারণে
ক্বারী কোন নেকী পাবে না।
ফলে এভাবে ক্বারী ভাড়া করলে একদিকে যেমন সম্পদের ক্ষতি হয়, অন্যদিকে তেমন ঐসব
ক্বারীকে অন্যায়ের প্রতি প্রলুব্ধ করা হয়।
এখন কেউ
যদি বলে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে
জাফর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
এবং তাঁর সঙ্গীদ্বয়ের হত্যার খবর আসলে চিন্তামগ্ন হয়ে তিনি কি মসজিদে বসেন নি?
জবাবে
বলব, হ্যাঁ, তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
মানুষ শোক জানাবে, সে উদ্দেশ্যে তিনি বসেন নি। সেজন্য তাঁকে কেউ শোক জানাতে বসেছিলেন মর্মে আমাদের
কাছে কোন বর্ণনা আসে নি।
অতএব, বাড়ীর দরজা খুলে রেখে শোক প্রকাশকারীদের সাক্ষাৎ প্রত্যাশী হওয়ার পক্ষে কোন
দলীল এই ঘটনায় নেই।
মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন
২৪/১/১৪১৮ হিঃ
সূচীপত্র
প্রশ্ন
|
বিষয়
|
পৃষ্ঠা
|
১.
|
মুমূর্ষু রোগীর পাশে বসে কি
করতে হবে? তার কাছে বসে সূরা ইয়াসীন পড়ার বিধান কি?
|
|
২.
|
জানাযার ছালাতে অংশগ্রহণ করার
জন্য মানুষকে মৃত্যুর সংবাদ দেওয়ার হুকুম কি?
|
|
৩.
|
মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর
পদ্ধতি এবং এমর্মে ছাত্রদের করণীয়ঃ
|
|
৪.
|
জানাযার ছালাতের পদ্ধতিঃ
|
|
৫.
|
আত্মীয়-স্বজনের আগমনের
অপেক্ষায় মৃতের জানাযা বিলম্বিত করার হুকুমঃ
|
|
৬.
|
গায়েবানা জানাযা পড়ার বিধানঃ
|
|
৭.
|
জানাযার ছালাত পড়ানোর সবচেয়ে
বেশী হক্বদার কে?
|
|
৮.
|
একই জানাযায় একাধিক মৃত থাকলে
তাদেরকে জানানোর জন্য কিভাবে রাখতে হবে?
|
|
৯.
|
জানাযার সময় ইমাম কোথায়
দাঁড়াবেন?
|
|
১০.
|
জানাযার সময় মৃত ব্যক্তির নাম
ঘোষণার হুকুমঃ
|
|
১১.
|
একই জানাযায় একাধিক মৃত থাকলে
কিভাবে জানাযা পড়তে হবে
|
|
১২.
|
জানাযার ছালাতে বেশী কাতার
হওয়ার ফযীলত সংক্রান্ত হাদীছঃ
|
|
১৩.
|
জানাযার ছালাতে সূরা ফাতিহার
পরে অন্য আয়াত পড়ার হুকুমঃ
|
|
১৪.
|
অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানের জন্য
কিভাবে দো‘আ করতে হবে?
|
|
১৫.
|
জানাযার ছালাতে সূরা ফাতিহা
পড়ার হুকুমঃ
|
|
১৬.
|
জানাযার ছালাতে ইমামের সাথে
এক বা একাধিক তাকবীর ছুটে গেলে কিভাবে জানাযায় অংশগ্রহণ করতে হবে এবং কিভাবে তা
পূর্ণ করতে হবে?
|
|
১৭.
|
যেসব সময়ে জানাযার ছালাত পড়া
নিষেধঃ
|
|
১৮.
|
জানাযার জন্য মৃত ব্যক্তিকে
রাখার আগেই ছালাতের জন্য দাঁড়ানোর হুকুমঃ
|
|
১৯.
|
মৃতের পরিবার-পরিজন বা তাকে
বহনকারীদের ইমামের ডান পাশে দাঁড়ানোর বিধান
|
|
২০.
|
গর্ভচ্যুত অপূর্ণ বাচ্চার
জানাযা পড়ার বিধানঃ
|
|
২১.
|
জানাযার সময় মৃতের মাথা
ইমামের ডান দিকে রাখা কি শরী‘আত সম্মত?
|
|
২২.
|
কোন কারণ বশতঃ যদি কেউ জানাযা
না পায় কিন্তু দাফনকার্যে অংশগ্রহণ করে, তাহলে কি তার পূর্ণ নেকী হবে?
|
|
২৩.
|
কেউ জানাযা না পেলে ক্ববরের
কাছে গিয়ে সে কি জানাযার ছালাত আদায় করতে পারবে?
|
|
২৪.
|
জানাযা শুরু হচ্ছে অথচ আপনার
ফরয ছালাত বাক্বী আছে-এমতাবস্থায় কি করবেন?
|
|
২৫.
|
মৃত ব্যক্তি বেনামাযী হলে
অথবা সে ছালাত পড়ত কিনা সন্দেহ হলে অথবা সে অপরিচিত হলে তার জানাযা পড়ার হুকুমঃ
|
|
২৬.
|
জানাযায় মৃত ব্যক্তির জন্য দো‘আ করার সময় শর্ত জুড়ে দেওয়া কি জায়েয?
|
|
২৭.
|
মৃতকে ক্ববরস্থানে নিয়ে
যাওয়ার সময় কাঁধে বহন করা উত্তম নাকি গাড়ীতে?
|
|
২৮.
|
মৃতকে ক্ববরস্থানে নিয়ে
যাওয়ার ক্ষেত্রে ‘তারবী’ (تربيع) এর অর্থ কি?
|
|
২৯.
|
জানাযার সাথে ক্ববরস্থানে
গমনকারীরা কখন বসবে?
|
|
৩০.
|
কারো অপেক্ষায় মৃত ব্যক্তির
দাফনকর্ম বিলম্বিত করার বিধানঃ
|
|
৩১.
|
মৃত ব্যক্তির দেহের কোন্ দিক
আগে ক্ববরে নামাতে হবে?
|
|
৩২.
|
মৃত মহিলাকে ক্ববরে নামানোর
সময় ক্ববর ঢেকে রাখার বিধান কি?
|
|
৩৩.
|
মৃতকে দাফনের সময় জোরে কথা
বলার হুকুম কি?
|
|
৩৪.
|
দাফনের সময় নিয়মিত উপদেশমূলক
বক্তব্য দেওয়ার বিধান কি?
|
|
৩৫.
|
ক্ববরস্থানে প্রবেশের সময় ডান
পা আগে এবং বের হওয়ার সময় বাম পা আগে দেওয়ার বিধান কি?
|
|
৩৬.
|
মৃতের ক্ববরে মাটি দেওয়ার সময়
শরী‘আত সম্মত দো‘আ কোন্টি?
|
|
৩৭.
|
সান্ত্বনা দান বা শোক
প্রকাশের পদ্ধতি কি?
|
|
৩৮.
|
শোক প্রকাশের সময় মুছাফাহা
করার বিধান কি?
|
|
৩৯.
|
শোক প্রকাশের উপযুক্ত সময় কখন?
|
|
৪০.
|
দাফনের পূর্বে শোক প্রকাশের
বিধান কি?
|
|
৪১.
|
শোক প্রকাশ করতে মৃতের পরিবার-পরিজনের নিকটে যাওয়ার হুকুম কি?
|
|
৪২.
|
মৃতকে ক্ববরস্থানে নিয়ে
যাওয়ার সময় তার মাথা খাটলির সামনের দিকে রাখা সুন্নাত কিনা?
|
|
৪৩.
|
মৃতের মাথার দিক থেকে তিনি
মুষ্টি দেওয়ার বিধানঃ
|
|
৪৪.
|
দাফনের পর মৃতকে
ফেরেশতাদ্বয়ের প্রশ্নের জবাব স্মরণ করিয়ে দেওয়ার বিধান কি?
|
|
৪৫.
|
মৃতকে দাফনের পূর্বে তার
পক্ষে লোকদের সাক্ষ্য গ্রহণের রেওয়াজঃ
|
|
৪৬.
|
ক্ববরে খেজুরের ডাল বা এজাতীয়
কিছু পুঁতে দেওয়ার বিধান কি?
|
|
৪৭.
|
ইমামের সালাম ফিরানোর সাথে
সাথে জানাযার জন্য মৃত ব্যক্তিকে উপস্থিত করার বিধানঃ
|
|
৪৮.
|
মৃতের সাথে লেনদেন সংক্রান্ত
কিছু ঘটে থাকলে সে বিষয়ে মীমাংসার জন্য মৃত ব্যক্তির অভিভাবক কর্তৃক আহ্বানের
বিধানঃ
|
|
৪৯.
|
ক্ববর যিয়ারতের প্রকারভেদঃ
|
|
৫০.
|
ক্ববর যিয়ারতের সময়
ক্বিবলামুখী হওয়ার বিধান
|
|
৫১.
|
শুধুমাত্র ক্ববরস্থানে প্রবেশ
করলে মৃতদের প্রতি সালাম দেওয়া সুন্নাত নাকি ক্ববরস্থানের পাশ দিয়ে অতিক্রম
করলেও তাদেরকে সালাম দেওয়া যায়?
|
|
৫২.
|
স্বামীর জন্য বিধবা স্ত্রী
কর্তৃক শোক পালনের সময়ে নিষিদ্ধ বিষয়সমূহঃ
|
|
৫৩.
|
স্ত্রী যে বাড়ীতে থাকা
অবস্থায় তার কাছে তার স্বামীর মৃত্যুর খবর এসেছে, সে
বাড়ীতে শোক প্রকাশের দিনগুলি কাটানো কি তার জন্য আবশ্যক?
|
|
৫৪.
|
মহিলাদের ক্ববর যিয়ারতের
বিধানঃ
|
|
৫৫.
|
পত্র-পত্রিকায় শোক প্রকাশ কি
নিষিদ্ধ বিলাপ-মাতমের অন্তর্ভুক্ত?
|
|
৫৬.
|
মৃত্যু ঘটিত কারণ ছাড়া অন্য
কোন কারণে শোক প্রকাশের হুকুমঃ
|
|
৫৭.
|
দুই ঈদ ও জুম‘আর
দিনকে ক্ববর যিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট করে নেওয়ার বিধানঃ
|
|
৫৮.
|
মহিলা কর্তৃক রাসূল
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্ববর যিয়ারত এবং
অন্যের ক্ববর যিয়ারতের মধ্যে পার্থক্য আছে কিনা?
|
|
৫৯.
|
ক্ববরের উপরে লেখা অথবা ক্ববর
রঙ্গীন করার বিধানঃ
|
|
৬০.
|
প্রসিদ্ধ কোন সৎ ও জ্ঞানী
ব্যক্তির ক্ববর বেশী বেশী যিয়ারত করার বিধানঃ
|
|
৬১.
|
মৃত ব্যক্তির দোষত্রুটি
বর্ণনার বিধানঃ
|
|
৬২.
|
মৃতের ক্ববরে ক্বাতীফা বা
রেশমী জাতীয় কাপড় দেওয়ার বিধানঃ
|
|
৬৩.
|
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গোলাম শুক্বরান যখন তার ক্ববরে কাপড়
দিয়েছিলেন, তখন ছাহাবীগণ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) তার
বিরোধিতা করেছিলেন মর্মে কোন দলীল আছে কিনা?
|
|
৬৪.
|
ইমাম মুসলিম বর্ণিত ফেরেশতা
কর্তৃক মুসলিম ও কাফের ব্যক্তির রূহ নিয়ে যাওয়ার পদ্ধতি বিষয়ক হাদীছে ‘শেষ সময়’
বলতে কি বুঝানো হয়েছে?
|
|
৬৫.
|
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মা কি জাহান্নামে যাবেন?
|
|
৬৬.
|
জুতা পায়ে ক্ববরস্থানে যাওয়ার
বিধানঃ
|
|
৬৭.
|
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)
কে ক্ববর যিয়ারতের দো‘আ শিক্ষা দিয়েছেন, আবার তিনি মহিলাদেরকে
ক্ববর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছেন; তাহলে উভয় হাদীছের মধ্যে কিভাবে সামঞ্জস্য বিধান
করতে হবে?
|
|
৬৮.
|
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা মুমূর্ষু রোগীদেরকে ‘লা ইলা-হা
ইল্লাল্লা-হু’ স্মরণ করাও’। বাহ্যত হাদীছটি মুমূর্ষু রোগীকে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু’
স্মরণ করার বিষয়টি ওয়াজিব সাব্যস্ত করে। প্রশ্ন হচ্ছে, ওয়াজিব এই হুকুম সুন্নাত বা মুস্তাহাব
পর্যায়ে নিয়ে আসার কোন দলীল আছে কি?
|
|
৬৯.
|
রূহ (روح) এবং নাফ্স (نفس)-এর মধ্যে পার্থক্য আছে কিনা?
|
|
৭০.
|
হাদীছে ‘খোস-পাঁচড়ার বর্ম’
বলতে কি বুঝানো হয়েছে?
|
|
***
|
জানাযার বিধিবিধান সংক্রান্ত
আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা
|
[1]. ইমাম মুসলিম আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের মুমূর্ষু রোগীদেরকে ‘লা
ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ স্বরণ করাও’ (‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯১৬)।
[3]. হাদীছটিকে
ইমাম আলবানী ‘যঈফ’ বলেছেন (আলবানী, সুনানে আবূ দাঊদ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৩১২১)। তিনি ‘ইরওয়াউল
গালীল’-এ বলেছেন, হাদীছটিতে তিনটি ত্রুটি রয়েছে: ১. (হাদীছটির একজন
বর্ণনাকরী) আবূ উছমান ‘মাজহূল’ বা অপরিচিত, ২. তার পিতাও ‘মাজহূল এবং ৩.
হাদীছটিতে ‘ইযত্বিরাব’ রয়েছে (৩/১৫১, হা/৬৮৮)। সেজন্য শায়খ
ইবনে বায (রহেমাহুল্লাহ)কে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, হাদীছটিতে যেহেতু
একজন ‘মাজহূল’ বা অপরিচিত বর্ণনাকারী রয়েছে, সেহেতু মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট সূরা
ইয়াসীন তেলাওয়াত করা উত্তম নয়। অবশ্য তার নিকট পবিত্র ক্বুরআন পড়া ভাল। কিন্তু
সূরা ইয়াসীনকে নির্দিষ্ট করে নেওয়ার কোন যুক্তি নেই (মাজমূউ ফাতাওয়া ইবনে বায,
১৩/৯৫)।–অনুবাদক।
[12]. সুনানে আবু দাঊদ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৩১৩৬; তিরমিযী, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/১০১৬; আলবানী (রহেমাহুল্লাহ) হাদীছটিকে ‘ছহীহ’ বলেছেন।
[13]. পবিত্র
কা‘বা শরীফ ও মসজিদে নববীসহ সঊদী আরবের অনেক মসজিদে একসাথে অনেক মুর্দা উপস্থিতির
দৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। আমাদের
বাংলাদেশে সাধারণতঃ এমনটি ঘটে না বলে সম্মানিত পাঠকের বুঝতে একটু সমস্যা হতে পারে
ভেবে আমরা সঊদী আরবের অবস্থা তুলে ধরলাম। --অনুবাদক।
[15]. ইমাম বুখারী উবাদাহ ইবনে ছামিত রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু থেকে হাদীছটি বর্ণনা করেন, ‘আযান’ অধ্যায়, হা/৭৫৬; মুসলিম, ‘ছালাত’ অধ্যায়, হা/৩৯৪।
[18]. আমের ইবনে রবী‘আহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত মারফূ‘ হাদীছে এসেছে, ‘যখন তোমাদের কেউ মৃতদেহ দেখবে, তখন সে যদি তার সাথে গমনকারী না হয়, তাহলে দাঁড়াবে; যতক্ষণ না সে মুর্দাটিকে পেছনে ফেলে যায় অথবা মুর্দা তাকে পেছনে ফেলে যায় অথবা মুর্দা তাকে পেছনে ফেলে যাওয়ার আগে মুর্দাকে মাটিতে রাখা হয়’ (বুখারী, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/১৩০৮; মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৯৫৮)।
[22]. দারেমী,
‘মানাসিক’ অধ্যায়, হা/১৮১১; হাদীছটি মূলতঃ বুখারী এবং মুসলিমেও রয়েছে: বুখারী,
‘বিবাহ’ অধ্যায়, হা/৫০৮৯; মুসলিম, ‘হজ্জ’ অধ্যায়, হা/১২০৮।
[30]. ইমাম মুসলিম হাদীছটি বর্ণনা
করেছেন এভাবে, ‘তোমরা ক্ববর যিয়ারত কর। কেননা তা মরণকে স্মরণ করিয়ে দেয়’ (‘জানাযা’
অধ্যায়, হা/৯৭৬)।
[33]. উম্মে আত্বিইয়াহ (রাদিয়াল্লাহু
‘আনহা) বলেন, ‘আমাদেরকে
তিন দিনের বেশী শোক পালন করতে নিষেধ করা
হত।
কিন্তু স্বামী মারা গেলে চার মাস ১০ দিন
শোক পালন করার আদেশ করা হত। ঋতুমুক্ত হওয়ার পর পবিত্র হয়ে আমাদেরকে সামান্য
পরিমাণ আযফার ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হত’ (বুখারী, ‘তালাক্ব’ অধ্যায়,
হা/৫৩৪১; মুসলিম, ‘তালাক্ব’ অধ্যায়, হা/৯৩৮)।
[34]. উম্মে
আত্বিইয়াহ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বর্ণিত উল্লেখিত হাদীছে
এসেছে, ‘আমাদেরকে রঙীন কাপড় পরতে নিষেধ করা হত। তবে এক ধরনের ডোরা-কাটা পোষাক পরার
অনুমতি দেওয়া হত’।
[35]. উম্মে
আত্বিইয়াহ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বর্ণিত উল্লেখিত হাদীছে
এসেছে, ‘আমাদেরকে চোখে সুরমা লাগাতে নিষেধ করা হত’।
[38]. জাবের
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূল (ছাঃ) ক্ববর পাকা
করতে, ক্ববরে লিখতে, ক্ববরের উপর ভবন বানাতে এবং ক্ববর পদদলিত করতে নিষেধ করেছেন (আবূ
দাঊদ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/১০৫২; ইবনু মাজাহ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/১৫৬২-১৫৬৪; শায়খ
আলবানী (রহেমাহুল্লাহ) হাদীছটিকে ‘ছহীহ’ বলেছেন)।
[42]. অর্থাৎ তাদের উভয়কে এমন স্থানে নিয়ে যাও, যা তাদের
প্রত্যেকের ক্বিয়ামত পর্যন্ত অবস্থানের জন্য তৈরী করে রাখা হয়েছে। ক্বাযী আয়ায বলেন, মুমিনের আত্মাকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নিয়ে যাও। আর কাফিরের আত্মাকে নিয়ে যাও সিজ্জীন পর্যন্ত (মিরক্বাতুল মাফাতীহ
শারহু মিশকাতিল মাছাবীহ, হা/১৬৪৩-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)।–অনুবাদক।
[44]. আবূ দাঊদ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/৩২৩০; নাসাঈ, ‘জানাযা’
অধ্যায়, হা/২০৪৮; ইবনু মাজাহ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, হা/১৫৬৮; আহমাদ, ‘জানাযা’ অধ্যায়,
৫/৮২; বাশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে। আলবানী হাদীছটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।
_________________________________________________________________________________
সংকলন: শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন রহ.
অনুবাদক: আব্দুল আলীম বিন কাওসার
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
0 মন্তব্যসমূহ