জামাআতে নামাযের চল্লিশটি উপকারিতা।




জামাআতে নামাযের চল্লিশটি উপকারিতা



জামাআতে নামাযের চল্লিশটি উপকারিতা

সূচীপত্র
বিষয়ঃ
ভূমিকা
একটি সতর্কবাণীঃ (জামাআতে নামায পড়ার হুকুম)
আল্লাহ তাআলার আদেশের আনুগত্য
দ্বীনের উদ্দেশ্য এবং ইসলামের প্রতিক
আল্লাহর ঘরের আবাদ এবং ঈমানের সাক্ষ্য প্রদান
আল্লাহ কর্তৃক প্রশংসা এবং মহাপুরস্কার
আল্লাহ ও রাসূল সা. কর্তৃক সম্মান ও গুরত্ব প্রদানকৃত জিনিষকে সম্মান ও গুরুত্ব দেয়া এবং আজীবন উহার  উপর অবিচল থাকার চেষ্টা করা
রাসূল সা. এর আদেশ পালন, তাঁর সুন্নতের অনুসরণ, হেদায়াত অর্জন করা, গুনাহ থেকে মুক্তি লাভ এবং শাস্তি থেকে শান্তি লাভ
জামাআত বদ্ধ হয়ে নামায আদায় করা হল ইসলামের মহান দাবী
আল্লাহর নিদর্শন সমূহকে প্রকাশ ও সম্মান করা
প্রদর্শিত পথের সুন্নত
জামাআতে নামায পড়া একাকি নামায পড়ার চেয়ে মর্যাদা বেশী
একাকী নামায আদায় করার চেয়ে জামাআতের সাথে নামায আদায় করা হল আল্লাহর নিকট অধিক পছন্দনীয় কাজ
জামাআত বদ্ধ হয়ে নামায আদায় করা হল শয়তান থেকে হেফাযতে থাকা
মুনাফেকের সাথে সাদৃশ্য পোষন করা থেকে দূরে থাকা
গুনাহ মোচনের মাধ্যম
আল্লাহ তাআলার খুশির কারণ
জামাআতে নামাযের উদ্দেশ্যে পায়ে হেঁটে যাওয়া অফুরন্ত ছোয়াব লাভের মাধ্যম
একটি সাবধান বাণী
একটি সতর্ক বাণী
আসর ও ফজর নামাযে ফেরেশতাদের উপস্থিতি ও সমবেত মুছল্লিদের জন্যে তাদের দুআ প্রার্থনা
জামাআতে নামায হল অর্ধ রাত্রি বা পুরো রাত্রি ইবাদতের সমান ছোয়াব
আল্লাহর তাআলার হেফাযত
কিয়ামতের দিন আল্লাহ প্রদত্ব ছায়াতে অবস্থানের কারণ, যে দিন ঐ ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না।
মুনাফেকী ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ
আল্লাহর রহমত এবং ফেরেশতাদের দুআর কারণ
কাতার সোজা করাতে মহান প্রতিদান অর্জিত হয় আর জান্নাতে তার জন্যে একটি ঘর তৈরী করা হয়
জামাআত ছুটে গেলেও ছোয়াব অর্জিত হয়
নামাযের পরিপূর্ণতা
উত্তম আমল হল, সময়মত নামায আদায় করা এবং তার প্রতি যত্ববান হওয়া
মাসজিদের আবাদকারীদের উপর আল্লাহর সন্তুষ্ট হন, তাদের তাঁর নিকটবর্তী করেন   এবং তাদেরকে সম্মানীত করেন।
অলসতা থেকে মুক্তি লাভ
বরকতপূর্ণ দুআ ও যে দুআ ফেরত দেয়া হয় না
ভালবাসা, বন্ধুত্ব ও সততার সৃষ্টি
সুন্নাতে মুয়াক্কাদা (রাতেবা) এর প্রতি যত্নবান হওয়া ও যিকির সমূহ
নামাযের বিধি-বিধান সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা
শৃংখলপূর্ণ জীবন-যাপন ও আত্বশুদ্ধি
মুসলমানদের মর্যাদার বহি:প্রকাশ, মুনাফেক ও নাস্তিকদের ক্ষোভ প্রকাশ
বাহ্যিকরূপ ও অবস্থার সৌন্দর্য প্রকাশ
মুসলমানদের পরস্পরের মাঝে পরিচয় লেন-দেন এবং তাদের মিলিত হওয়ার কেন্দ্রস্থল
সৎ কাজের মাধ্যমে কল্যাণের প্রতি আহবান ও আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা
ব্যক্তিত্ববোধ বজায়
যুদ্ধের ময়দানে কাতারবদ্ধ হয়ে দণ্ডায়মান হওয়ার অনুভব করা
রাসূল সা, ও সাহাবীদের অবস্থানে থাকার অনুভূতি রাখা
পরিশিষ্ট

একটি শিক্ষণীয় ঘটনা
নামাযের ফযীলতে ২৫টি সুসংবাদ
বেনামাযী ও নামাযে অলসতাকারীর করুন অবস্থা
নামাযের গুরত্ব
নামায হল ইসলামের দ্বিতীয় রুকণ
নামায হল দ্বীনের খুঁটি ও
নামায জান্নাতে প্রবেশের প্রতিশ্রুতি বহন করে

অনুবাদকের আরজ

     আরবী পুস্তিকা হাইয়্যা আলাল ফালাহ্‌ (আরবাউনা ফায়েদাতান মিন ফাওয়াদে সালাতিল জামাআ) অর্থাৎ জামাআতে নামাযের চল্লিশটি উপকারীতা এই পুস্তিকাটি আমি জুবাইল দাওয়াহ এণ্ড গাইডেন্স সেন্টারে কর্মরত থাকা কালে উক্ত অফিসের এক দাঈকে তার ভাষাতে অনুবাদ করতে প্রত্যক্ষ করি। পরক্ষণেই তার কাছ থেকে বইটি হাতে নিয়ে এক নজর দেখে বাংলাভাষায় অনুবাদের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করি। অতি অল্প সময়ে বইটির অনুবাদের কাজ সম্পন্ন করি। আমি আমার সাধ্যমত হইা সহজ ও সরল  ভাষায় অনুবাদ করার চেষ্টা করেছি। অনুবাদ শেষে অত্র অফিসে কর্মরত প্রবীন ও সুযোগ্য দাঈ মুহতারাম আবদুল্লাহ শাহেদ আল মাদানী সাহেবকে বইটির সম্পাদনা করতে সবিনয়ে অনুরোধ জানালে তিনি বইটির সম্পাদনার কাজ সম্পন্ন করে দেন।

বইটির মূল লেখক শায়খ মুসনেদ বিন মুহসেন আল কাহতানী সৌদি আরবের একজন বিজ্ঞ আলেম এবং সুপরিচিত বক্তা। তিনি এপুস্তিকাতে জামাআতে নামাযের হুকুম-আহকাম ও প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন।

বর্তমানে মুসলিম সমাজে যারা এ বিষয়ে গাফেল এবং একেবারেই গুরত্বহীন ভেবে এর থেকে দূরে আছে এবং যারা এর উপলুব্ধি করা সত্তেও দূরে থেকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। আশা করি তাদের সকলের জন্যই এ পুস্তিকাটি সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

বইটি মূল আরবী থেকেই অনুবাদ করা হয়েছে। ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকা A¯^vfvweK কিছু নয়। শব্দ ও ভাষাগত ভুল-ভ্রান্তি বিজ্ঞ পাঠকগণের দৃষ্টিগোচর হলে অনুবাদকের জ্ঞানে দিলে চরম কৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ থাকব ইনশাআল্লাহ।

পরিশেষে মহান আল্লাহর নিকট আরয করছি যে, তিনি যেন এই ছোট খেদমতটুকু তাঁর সন্তুষ্টির জন্য কবুল করেন এবং মুমিন ভাইদেরকে আমল করার তাওফীক দান করেন।

যারাই এই ছোট পুস্তিকাটির কাজ সম্পন্ন করতে আমাকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছে তাদের সকলকেই আল্লাহ তাআলা পর জীবনে জান্নাতের সুশীতল ছায়াতলে বসবাসের সুযোগ করে দিন। আমীন।

                 -অনুবাদক,
                 জাহিদুল ইসলাম


দুটি কথা
    মহান আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা এবং দরূদ ও সালাম বর্ষিত আমাদের শেষ নবীর প্রতি। এই নিখিল বিশ্বে একজন মুমিন নর-নারী যত দিন জীবন ধারণ করবে তাঁকে তার প্রভুর ইবাদতের উপর অবিচল থাকতে হবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّى يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ
আর তোমার রবের ইবাদত করতে থাক সুনিশ্চিত ক্ষণের (অর্থাৎ মৃত্যুর) আগমন পর্যন্ত। (সূরা হিজরঃ ৯৯) 
এ ইবাদতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হল দিনে-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায সঠিক ভাবে আদায় করা। নামায ছাড়া কিয়ামতের দিন মুক্তির কোন ব্যবস্থা হবে না। যে নামায পড়বে তার জন্যই রয়েছে মুক্তি প্রতিশ্রুতি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
 قَالَ اللَّهُ تَعَالَى إِنِّى فَرَضْتُ عَلَى أُمَّتِكَ خَمْسَ صَلَوَاتٍ وَعَهِدْتُ عِنْدِى عَهْدًا أَنَّهُ مَنْ جَاءَ يُحَافِظُ عَلَيْهِنَّ لِوَقْتِهِنَّ أَدْخَلْتُهُ الْجَنَّةَ وَمَنْ لَمْ يُحَافِظْ عَلَيْهِنَّ فَلاَ عَهْدَ لَهُ عِنْدِى
আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি তোমার উম্মতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছি এবং এ প্রতিশ্রুতি আমার কাছে রেখেছি যে, যে কেউ এইগুলো উহার সময় অনুপাতে আদায় করবে আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। আর যে এ গুলোর প্রতি যত্ন নিবে না তার জন্য কোন প্রতিশ্রুতি নেই।[1]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ
     أَوَّلُ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الصَّلَاةُ فَإِنْ صَلَحَتْ صَلَحَ لَهُ سَائِرُ عَمَلِهِ، وَإِنْ فَسَدَتْ فَسَدَ سَائِرُ عَمَلِهِ
ক্বিয়ামতের দিন সর্ব প্রথম হিসাব হবে নামাযের, যদি তা সঠিক হয় তবে তার সকল আমলই সঠিক বলে গণ্য হবে। আর যদি বাতিল হয় তবে তার সকল আমলই বাতিল হয়ে যাবে।[2] 
নামাযই একমাত্র জান্নাত ওয়াজেব হওয়ার কারণ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَتَوَضَّأُ فَيُحْسِنُ وُضُوءَهُ ثُمَّ يَقُومُ فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ مُقْبِلٌ عَلَيْهِمَا بِقَلْبِهِ وَوَجْهِهِ إِلَّا وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ
যে কোন ব্যক্তি সুন্দর ভাবে অযু করে, একনিষ্ঠতার সাথে দুরাকাআত নামায আদায় করে তার জন্যে জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়।[3]
একজন মুসলিম ও একজন অমুসলিম (কাফেরের) মধ্যে পার্থক্য হল কেবল মাত্র নামায। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
الْعَهْدُ الَّذِي بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمُ الصَّلَاةُ فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ
আমাদের মাঝে ও তাদের (কাফেরদের) মাঝে অঙ্গিকার হল নামায। সুতরাং যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দিবে সে কাফের হয়ে যাবে।[4] 
তাই আসুন আমরা সকলেই নামাযের প্রতি যত্নবান হই। আল্লাহ সকল মুসলিম নর-নারীকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পাবন্দী হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন। -অনুবাদক।

মুখবন্ধ

    সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্যে। তাঁর কাছে সাহায্য ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি। তাঁরই কাছে তওবা করছি। আমাদের অন্তরের অনিষ্টতা থেকে তাঁর কাছে আশ্রয় চাই আরও আশ্রয় চাই আমাদের কর্মের খারাপ পরিণতি হতে। নিশ্চয় তিনি যাকে হেদায়াত দান করেন কেউ তাকে পথভ্রষ্ট করতে পারে না এবং যাকে পথভ্রষ্ট করেন কেউ তাকে হেদায়াত দিতে পারে না। আমি এ সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, তিনি ছাড়া সত্য কোন মাবুদ নেই, তাঁর কোন শরীক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর প্রেরীত রাসূল ও বান্দা। আল্লাহ তাঁর প্রতি তাঁর পরিবারবর্গ এবং সাহাবীদের প্রতি অসংখ্য শান্তি বর্ষণ করুন।
   এ সংক্ষিপ্ত পুস্তিকাটি জামাআতের সাথে নামায আদায়ের ফযীলত ও তার উপকারিতা সম্পর্কে। এতে আমি চল্লিশটি উপকারিতা একত্রিত করেছি। এগুলোর ¯^c‡¶ কুরআন ও হাদীস হতে সঠিক প্রমাণ উল্লেখ করেছি এবং এ দুটি প্রমাণই যেহেতু ওহী তাই দলীল হিসেবে এ দুটিকেই যথেষ্ট মনে করেছি। এ দুটি দলীল ব্যতীত অন্য দলীল এ জন্যে উল্লেখ করিনি যাতে পুস্তিকাটি বেশি বড় না হয় এবং যাতে উপকারিতাগুলো অনুধাবন করতে অতি সহজ হয়।
   আমি এ বিষয়ে পুস্তক লিখতে এ জন্যে অগ্রসর হলাম যে, বহু মুসলিম দেশে মুসলমানদের অবস্থা দেখলাম যে তারা জামাআতে নামাযের প্রতি অত্যন্ত অনিহা প্রকাশ করছে, যা মাসজিদ সমূহকে ধ্বংসের প্রতি ঠেলে দিচ্ছে এবং মাসজিদের আবাদ খুবই কমে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়; বরং মাসজিদের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। আমি আরব রাষ্ট্রের কোন একটি শহর পরিদর্শন করে দেখলাম তাতে প্রায় ত্রিশ হাজার লোক বাস করছে কিন্তু তাতে মাত্র চারটি মাসজিদ রয়েছে। তা সত্বেও জুমআর দিনও মাসজিদ মুছল্লি দ্বারা পূর্ণতা লাভ করে না । আল্লাহ আমাদের সহায়তা করুন।
একটি সতর্কবাণী (জামাআতে নামায পড়ার হুকুম)

    নামায হল একটি মহান ইবাদত। আর এ ক্ষেত্রে মূল কথা হল, তা জামাআতের সাথে আদায় করতে হবে। এছাড়া সকল প্রকার ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য হল আল্লাহ তাআলার আদেশসমূহ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে এবং নিষেধসমূহ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে তাঁর আনুগত্য করা।

এপুস্তিকাতে বর্ণিত জামাআতে নামাযের উপকারিতাগুলো আমি উল্লেখ করেছি জামাআতে নামায আদায়কারীর জন্যে উৎসাহ প্রদান ও তাদেরকে আরও অধিক AvMÖnvwš^Z করার জন্যে। আর যারা জামাআত থেকে দূরে অবস্থানকারী তাদেরকে সতর্কতা ও ভীতি প্রদর্শন করার জন্যে। এ পুস্তিকার উপসংহারে আমি সালাফে সালেহীন এবং তাঁদের পরবর্তী ওলামায়ে কেরামের কিছু মূল্যবান অমীয় বাণী উল্লেখ করেছি, যার মাধ্যমে জামাআতে নামায পড়ার গুরুত্ব ও হুকুম-আহকাম অতি সুস্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠবে। আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য ও সহোযোগিতা কামনা করছি, যেন তিনি আমাদের এ কাজগুলো একমাত্র তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কবুল করেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  তাঁর পরিবারবর্গ ও তাঁর সাহাবীদের প্রতি শান্তি বর্ষণ করুন।
নিম্নে জামাআতে নামায পড়ার উপকারিতাগুলো তুলে ধরা হলঃ        

১) আল্লাহ তাআলার আদেশের আনুগত্য
জামাআতের সাথে নামায আদায় করা হল মুমিন ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে আল্লাহর তাআলার আদেশ পালন করা। আল্লাহ বলেন,
﴿وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآَتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِينَ ﴾     
এবং তোমরা ছালাত কায়েম কর ও যাকাত আদায় কর আর রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।[5] 
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু কাসীর (রহ:) বলেন, ‘তোমরা মুমিনদের সাথে তাদের উত্তম কর্মসমূহ সম্পাদনের ক্ষেত্রে তাদের দলভূক্ত হও।’ আর উত্তম কর্মসমূহের মধ্যে পরিপূর্ণ ও বিশেষ গুরুত্ববহ কর্ম হল নামায। উল্লেখিত আয়াত দ্বারা অনেক আলেম বলেছেন, ‘জামাআতের সাথে নামায আদায় করা ফরজ।’[6]

একটি সতর্কতাঃ ইবনু কাইয়্যেম (রহ:) কিতাবুস সালাতের ১১৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন।

   যদি বলা হয় যে, জামাআতের সাথে নামায আদায় করা হল পুরুষের উপর ফরজ, তবে নারীদের­­ এ ব্যাপারে কি করণীয়। এ সম্পর্কে  আমরা মহান রাব্বুল আলামিনের বাণী লক্ষ্য করলে দেখতে পাই এরশাদ হচ্ছেঃ
﴿يَا مَرْيَمُ اقْنُتِي لِرَبِّكِ وَاسْجُدِي وَارْكَعِي مَعَ الرَّاكِعِينَ﴾
হে মারইয়াম! তোমার প্রভুর ইবাদত কর, সিজদাহ্‌ কর এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।[7] 
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মারইয়ামকে রুকুকারীদের সাথে রুকু করার আদেশ প্রদান করেছেন, তাহলে এতে প্রতিয়মান হয়, মহিলাদেরকেও মাসজিদে এসে জামাআত বদ্ধ হয়ে নামায আদায় করতে হবে? অথচ মহিলাদের উপর তো মাসজিদে এসে জামাআতে শরীক হয়ে নামায পড়া ফরজ নয়?

এর উত্তরে বলা হয়েছে, উল্লেখিত আয়াত সকল মহিলাকে লক্ষ্য করে বলা হয় নি রবং শুধু মারইয়ামকেই আদেশ প্রদান করা হয়েছে। কেননা মারইয়ামের মাতা মারইয়ামকে আল্লাহ ও তাঁর ইবাদত এবং মাসজিদের সাথে সর্বদা সম্পৃক্ত থাকার জন্যে মুক্ত করে দিয়েছিলেন। তাই সে কোন সময়েই তা থেকে দূরে থাকত না। তাই তাকে মাসজিদে অন্যান্য রুকুকারীদের সাথে রুকু করতে আদেশ করা হয়েছে।                    
২) দ্বীনের উদ্দেশ্য এবং ইসলামের প্রতিক
   জামাআতের সাথে নামায আদায় করাই হল দ্বীনের উদ্দেশ্য ও ইসলামের প্রতিক এবং মুসলিম জাতির বাহ্যিকরূপ। ওলামাগণ বলেছেন, যদি নগরবাসী জামাআতের সাথে নামায আদায় করা ছেড়ে দেয় তবে তাদের সাথে যুদ্ধ করা হবে। আর যদি গ্রামবাসী জামাআতে নামায আদায় করা ছেড়ে দেয় তবে তাদেরকে উহা পালন করার জন্যে বাধ্য করা হবে ও জবরদস্তি করা হবে।[8]
৩) আল্লাহর ঘরের আবাদ এবং ঈমানের সাক্ষ্য প্রদান
   আল্লাহর ঘরের আবাদ করার লক্ষ্যে জামাআতের সাথে নামায আদায় করা হল অতীব গুরুত্বপূর্ণ দিক। যদি জামাআতে নামাযের ব্যবস্থা না থাকত তবে মাসজিদগুলো ধ্বংসে পরিণত হত। যারা মাসজিদের আবাদ করে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা ঈমানের সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং তারা ঐ সমস্ত লোকদের দলভূক্ত যাদেরকে আল্লাহ তাআলা হক ও সঠিক পথের দিকে হেদায়াত করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
 ﴿إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللَّهِ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَأَقَامَ الصَّلاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ إِلَّا اللَّهَ فَعَسَى أُولَئِكَ أَنْ يَكُونُوا مِنَ الْمُهْتَدِينَ﴾                                         
নি:সন্দেহে তারাই আল্লাহর মাসজিদ আবাদ করে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি এবং কায়েম করে নামায ও আদায় করে যাকাত; আর আল্লাহর ব্যতীত কাউকে ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা হেদায়াত প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে।[9]       
৪) আল্লাহ ্‌তাআলা কর্তৃক প্রসংশা এবং মহাপুরস্কার
   নিশ্চয়ই জামাআতের সাথে নামায আদায় করা হল মাসজিদে আল্লাহর তাআলার যিকির ও গুণ-কির্তণ করার মাধ্যম। যারা মাসজিদে এসে জামাআত বদ্ধ হয়ে নামায আদায়  করে আল্লাহ তাআলা তাদের প্রশংসা করেছেন এবং তাদেরকে এমন পুরুষ নামে আখ্যা দিয়েছেন যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে, নামায কায়েম করা থেকে এবং যাকাত প্রদান করা থেকে বিরত রাখে না। আল্লাহ তাআলা এ সমস্ত লোকদেরকে ঈমানদার বলে এবং  তারা তাঁকে ভয় করে বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন। অত:পর তাদেরকে ঐ সমস্ত লোকদের দলভূক্ত বলেছেন যাদের ভাল আমলগুলো কবুল করা হবে এবং খারাপ আমলগুলো দূর করে দেয়া হবে। এছাড়া তাদের মর্যাদাও বাড়িয়ে দিবেন।[10]  আল্লাহ তাআলা বলেন:
﴿فِي بُيُوتٍ أَذِنَ اللَّهُ أَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ يُسَبِّحُ لَهُ فِيهَا بِالْغُدُوِّ وَالْآصَالِ - رِجَالٌ لا تُلْهِيهِمْ تِجَارَةٌ وَلا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ يَخَافُونَ يَوْماً تَتَقَلَّبُ فِيهِ الْقُلُوبُ وَالْأَبْصَارُ-  لِيَجْزِيَهُمُ اللَّهُ أَحْسَنَ مَا عَمِلُوا وَيَزِيدَهُمْ مِنْ فَضْلِهِ وَاللَّهُ يَرْزُقُ مَنْ يَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ﴾                                                  
আল্লাহ যে সব গৃহকে মর্যাদায় ঊন্নীত করার এবং  সেগুলোতে তাঁর নাম উচ্চারণ করার আদেশ দিয়েছেন, সেখানে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে; এমন লোকেরা, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে, নামায কায়েম করা থেকে এবং যাকাত প্রদান করা থেকে বিরত রাখে না। তারা ভয় করে সেই দিনকে, যে দিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ উল্টে যাবে। (তারা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে) যাতে আল্লাহ তাদের উৎকৃষ্টতর কাজের প্রতিদান দেন এবং নিজ অনুগ্রহ  আরও অধিক দেন, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত রুযী দান করেন।[11]            
৫) আল্লাহ তাআলা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক সম্মান ও গুরত্ব প্রদানকৃত জিনিসকে সম্মান ও গুরত্ব দেয়া এবং আজীবন উহার উপর অবিচল থাকার চেষ্টা করা 
   জামাআতে নামায আদায় করা অতি মর্যাদা সম্পন্ন ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণ পরিস্থিতিতেই শুধু নামাযের আদেশ করা হয় নি বরং যুদ্ধ ও ভয়-ভীতির সময়ও উহা  আদায় করতে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেনঃ
﴿وَإِذَا كُنْتَ فِيهِمْ فَأَقَمْتَ لَهُمُ الصَّلاةَ فَلْتَقُمْ طَائِفَةٌ مِنْهُمْ مَعَكَ وَلْيَأْخُذُوا أَسْلِحَتَهُمْ فَإِذَا سَجَدُوا فَلْيَكُونُوا مِنْ وَرَائِكُمْ وَلْتَأْتِ طَائِفَةٌ أُخْرَى لَمْ يُصَلُّوا فَلْيُصَلُّوا مَعَكَ وَلْيَأْخُذُوا حِذْرَهُمْ وَأَسْلِحَتَهُمْ ..﴾
যখন আপনি তাদের মধ্যে থাকেন, অতঃপর নামাযে দাঁড়ান, তখন যেন একদল আপনার সাথে দাঁড়ায় এবং তারা যেন ¯^xq অস্ত্র সাথে নেয়। অতঃপর যখন তারা সেজদাহ্‌ সম্পন্ন করে, তখন আপনার কাছে থেকে যেন সরে যায় এবং অন্য দল যেন আসে, যারা নামায পড়েনি, অতঃপর তারা যেন আপনার সাথে নামায পড়ে এবং আত্মরক্ষার হাতিয়ার সাথে নেয়।[12]

    এমনিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম জামাআতে নামায আদায় করার ব্যাপারে অত্যাধিক গুরুত্ব সহকারে আদেশ প্রদান করেছেন। উহার প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন। সফর অবস্থায় ও মৃত্যুরোগে আক্রান্ত অবস্থায়ও তিনি জামাআতে নামায আদায় করার প্রতি অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। বিনা কারণে জামাআত ছাড়ার অনুমতি দেননি। একজন অন্ধ সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে জামাআতের সাথে নামায আদায় না করার অনুমতি চাইলেন। তিনি বললেন, আমার বাড়ি বহুদূরে এবং আমাকে মাসজিদে নিয়ে আসার মত কেউ নেই। তাছাড়া রাস্তাতে রয়েছে পোকা-মাকড় ও আক্রমণাত্বক প্রাণী আরও অন্যান্য কারণসমূহ। রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বললেন, তুমি কি আযান শুনতে পাও। তিনি বললেন, হ্যাঁ! আমি আযান শুনতে পাই। রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বললেন, তবে তুমি তাতে সাড়া দাও। অর্থাৎ তুমি জামাআতে এসো নামায আদায় কর। অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বললেন, আমি তাঁর জন্যে কোন অনুমতি দেখতে পাই না।[13]

   আমের বিন আবদুল্লাহ বিন যোবায়ের (রাঃ) যখন নামাযের জন্যে আযান শ্রবণ করতে পেতেন তিনি তাতে ¯^qs যাওয়ার জন্যে চেষ্টা করতেন। না যেতে পারলে বলতেন, আমার হাত ধরে আমাকে মাসজিদে নিয়ে চল, তাকে বলা হল আপনি তো অসুস্থ? তিনি বললেন, আমি আল্লাহর প্রতি আহবানকারীর ডাক শুনতে পাব আর তাতে সাড়া দেব না? অতঃপর তাঁর হাত ধরে মাসজিদে নিয়ে যাওয়া হল এবং সে মাগরিবের নামাযে ইমামের

সাথে শরীক হয়ে এক রাকাআত নামায আদায় করার পর তাঁর মৃত্যু হয়ে গেল।[14]
৬) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদেশ পালন, তাঁর সুন্নতের অনুসরণ, হেদায়াত অর্জন করা, গুনাহ থেকে মুক্তি লাভ এবং শাস্তি থেকে শান্তি লাভ
    জামাআতে নামায আদায় করা হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদেশ বাস্তবায়ন করা, তাঁর আদেশকৃত ও পালনীয় সন্নতের অনুসরণ করা। তিনি জামাআতে শরীক হয়ে নামায আদায় করার আদেশ প্রদান করেছেন। তিনি বলেন,
مَنْ سَمِعَ النِّدَاءَ ثُمَّ لَمْ يَأْتِهِ، فَلا صَلاةَ لَهُ إِلا مِنْ عُذْرٍ
যে ব্যক্তি আযান শুনে বিনা কারণে মাসজিদে আসবে না তার কোন নামায হবে না[15]

টিকাঃ উক্ত হাদীসটি সম্পর্কে বিদ্যানগণের কিছু উক্তি শেষের পৃষ্ঠাগুলোতে আলোচিত হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন,
إِذَا كَانُوا ثَلَاثَةً فَلْيَؤُمَّهُمْ أَحَدُهُمْ وَأَحَقُّهُمْ بِالْإِمَامَةِ أَقْرَؤُهُمْ             
যখন কোন স্থানে তিনজন লোক থাকবে তাদের মধ্যে জামাআত প্রতিষ্ঠা করবে এবং তাদের একজন ইমামতি করবে। যে সবচেয়ে উত্তমরূপে কুরআনপাঠকারী সে ইমামতির যোগ্য।[16] 
জামাআতে নামাযসহ অন্যান্য সকল প্রকার ইবাদতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণ-অনুকরণ করা হল হেদায়াত লাভ করার মাধ্যম এবং আল্লাহ তাআলার ভালবাসা অর্জন সহ গুনাহ মাফ, জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম মাধ্যম। আল্লাহ তাআলা বলেন,
 ﴿ وَإِنْ تُطِيعُوهُ تَهْتَدُوا﴾
যদি তোমরা তাঁর অনুকরণ কর তবে হেদায়াত পাবে।[17] 
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
﴿قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ﴾
বলুন যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ মার্জনা করে দিবেন।[18]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
 كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ إِلَّا مَنْ أَبَى قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَنْ يَأْبَى قَالَ مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى
আমার উম্মতের প্রত্যেকেই জান্নাতে প্রবেশ করবে কিন্তু যে A¯^xKvi করে সে নয়, তারা বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! কে A¯^xKvi করে?  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যে আমার অনুসরণ করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে  এবং  যে আমার অবাধ্যতা করে সে A¯^xKvi করে।[19]  
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  আরও বলেন,
إِنَّ أَثْقَلَ صَلَاةٍ عَلَى الْمُنَافِقِينَ صَلَاةُ الْعِشَاءِ وَصَلَاةُ الْفَجْرِ وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِيهِمَا لَأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا وَلَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ آمُرَ بِالصَّلَاةِ فَتُقَامَ ثُمَّ آمُرَ رَجُلًا فَيُصَلِّيَ بِالنَّاسِ ثُمَّ أَنْطَلِقَ مَعِي بِرِجَالٍ مَعَهُمْ حُزَمٌ مِنْ حَطَبٍ إِلَى قَوْمٍ لَا يَشْهَدُونَ الصَّلَاةَ فَأُحَرِّقَ عَلَيْهِمْ بُيُوتَهُمْ بِالنَّار                                 
নিশ্চয়ই মুনাফেকদের উপর সবচেয়ে কঠিন হল ফজর ও ইশার নামায। মানুষ যদি জানতো এই দু নামাযের মধ্যে কি মর্যাদা রয়েছে তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও উহাতে আসতো। আমার ইচ্ছা হয় আমি নামায কায়েম করার আদেশ দেই অত:পর একজনকে নামাযের ইমামতি করার আদেশ প্রদান করি। অত:পর লাকড়ি-খড়ি বহনকারী একদল লোক নিয়ে যারা নামাযে আসে না তাদের বাড়ি-ঘর আগুনদিয়ে ভষ্মিভূত করে দেই।[20]
৭) জামাআত বদ্ধ হয়ে নামায আদায় করা হল ইসলামের মহান দাবী
   সাধারণ ভাবে জামাআত বদ্ধ হয়ে থাকাই হল ইসলামের মহান দাবী। জামাআত বদ্ধভাবে থাকার জন্যে আল কুরআনের বহু আয়াত ও অসংখ্য হাদীস উৎসাহ প্রদান করেছে এবং জামাআত ত্যাগ করে দলাদলী সৃষ্টি করা ও জামাআত হতে দূরে থাকার ব্যাপারে সতর্কতা প্রদান করেছে। আল্লাহ বলেন,
﴿وَأَقِيمُوا الصَّلاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِينَ﴾
তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা কর, যাকাত প্রদান কর এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।[21]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
يَدُ اللَّهِ مَعَ الْجَمَاعَةِ
আল্লাহ তাআলার হাত জামাআতের সাথে রয়েছে।[22]
৮) আল্লাহর নিদর্শন সমূহকে প্রকাশ ও সম্মান করা
   জামাআতের সাথে নামায আদায় করা হল ইসলামের নিদর্শন সমূহকে প্রকাশ করা ও সম্মান করা। আর এ নিদর্শন সমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় নিদর্শন হল নামায। যারা আল্লাহর এ নিদর্শনকে সম্মান প্রদর্শন করবে তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
 ﴿ذَلِكَ وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ﴾
এটাই আল্লাহর বিধান এবং কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে সম্মান করলে ওটাতো তার হৃদয়ের তাকওয়ারই বহি:প্রকাশ।[23]
৯) প্রদর্শিত পথের সুন্নত
   জামাআতের সাথে নামায আদায় করা হল রাসূলুল্লাহ এর প্রদর্শিত পথের সুন্নাত যা তিনি আমাদেরকে শিক্ষা দান করেছেন। উহাকে ছেড়ে দেয়া হল পথভ্রষ্টতা ও মুনাফেকী। আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আগামীকাল আল্লাহ তাআলার সাথে মুসলিম অবস্থায় সাক্ষাৎ করাকে ভালবাসে সে যেন এসমস্ত নামাযসমূহকে হেফাযত করে। এগুলো দ্বারা তিনি কাল কিয়ামতে আহবান করবেন। কেননা আল্লাহ তাআলা তোমাদের নবীর জন্যে হেদায়াতের পথকে সিদ্ধ করেছেন। যদি তোমরা তোমাদের বাড়ি-ঘরে নামায পড় যেমন ভাবে অলস ব্যক্তিগণ পড়ে থাকে তাহলে তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নত ছেড়ে দিলে। আর তোমরা যদি তোমাদের নবীর সুন্নতকে ছেড়ে দাও তবে তোমরা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।

   যে কোন ব্যক্তি সুন্দর ভাবে ওযু করে নামাযের উদ্দেশ্যে মাসজিদে আসে তার প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে একটি করে ছোয়াব লিখা হয়, একটি করে গুনাহ ক্ষমা করা হয় এবং একটি করে মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়া হয়। আমরা দেখেছি স্পষ্ট মুনাফেক ছাড়া কেউ জামাআতে নামায পড়া থেকে পিছে থাকতো না। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ দুই ব্যক্তির কাঁধের উপর ভর করে নামাযের কাতারে শরীক হত। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে প্রদর্শিত পথ কোনটা তা শিক্ষা দিয়েছেন। আর তার প্রদর্শিত পথের একটি পথ হল, যে মাসজিদে নামাযের আযান হয় সেখানে এসে নামায আদায় করা।[24]
১০) জামাআতে নামায পড়া একাকি নামায পড়ার চেয়ে মর্যাদা বেশী
   জামাআতে নামায পড়া একাকি নামায পড়ার চেয়ে সাতাশগুণ ছোয়াব বেশী। অন্য বর্ণনায় এসেছে, পঁচিশগুণ ছোয়াব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
صَلَاةُ الْجَمَاعَةِ تَفْضُلُ صَلَاةَ الْفَذِّ بِسَبْعٍ وَعِشْرِينَ دَرَجَةً
জামাআতে নামায পড়া একাকি নামায পড়ার চেয়ে সাতাশগুণ ছোয়াব বেশী।[25]

   বুখারী ও মুসলিমের অপর বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জামাআতে নামায পড়া একাকি নামায পড়ার চেয়ে পঁচিশগুণ ছোয়াব বেশী।[26]
উল্লেখিত দুই বর্ণনার মাঝে সামঞ্জস্য বিধানঃ
আলেমগণ নিম্নলিখতভাবে ২৫ গুণ ও ২৭ গুণের বর্ণনার মাঝে সামঞ্জস্য বিধান করেছেনঃ
১- যে ব্যক্তি জামাআতের সাথে নামায আদায় করার জন্য গমণ করেছে সে পাবে ২৭ গুণ ছোয়াব বেশী। আর যে ব্যক্তি নামায আদায়ের জন্য গিয়েছে, কিন্তু ঘটনাক্রমে জামাআত পেয়ে গেছে সে পাবে পঁচিশগুণ।
২- যে ব্যক্তি প্রথম ওয়াক্তে মাসজিদে যাবে সে পাবে ২৭ গুণ বেশী। আর যে পরে যাবে সে পাবে ২৫ গুণ বেশী।
৩- হাদীছের নির্দেশ মোতাবেক আযান শুনে ধীরস্থতার সাথে মাসজিদে গমণ করে জামাআতে শামিল হলে সাতাইশগুণ ছোয়াব বেশী পাবে। আর তাড়াহুড়া করে গমণ করলে পঁচিশগুণ বেশী পাবে।
৪- মাসজিদে প্রবেশের দুআ পাঠ করে মাসজিদে প্রবেশ করলে সাতাইশ গুণ বেশী পাবে। আর দুআ পাঠ বর্জন করলে পঁচিশ গুণ বেশী পাবে।
৫) মাসজিদে প্রবেশ করে দু’রাকাআত তাহিয়্যাতুল মাসজিদ আদায় করে জামাআতে শামিল হলে সাতাইশ গুণ বেশী পাবে। আর তা আদায় করে জামাআত ধরলে পঁচিশ গুণ বেশী পাবে।
৬) কেউ কেউ বলেছেনঃ বিষয়টি নামাযীর খুশু-খুযুর উপর নির্ভর করে। নামাযে একাগ্রতা কমবেশী হওয়ার কারণেও ছোয়াবে কমবেশী হবে। সুতরাং যে ব্যক্তি পরিপূর্ণ আন্তরিকতা নিয়ে নামায পড়বে সে সাতাইশ গুণ বেশী ছোয়াব পাবে। তার তুলনায় যার একাগ্রতা কম সে পাবে পঁচিশ গুণ বেশী।
৭- কেউ কেউ বলেছেনঃ মাসজিদে জামাআত করলে পাবে সাতাইশ গুণ। আর মাসজিদের বাইরে যে সমস্ত জামাআত হয়, তাতে অংশগ্রহণকারীগণ পাবে পঁচিশ গুণ।
৮- যারা কাতার সোজা করে এবং দুই মুসল্লীর মধ্যকার ফাঁক বন্ধ করে দাঁড়াবে তারা সাতাইশ গুণ ছোয়াব বেশী পাবে। আর যারা ফাঁক রাখবে তারা পাবে পাঁচিশ গুণ।
৯- কেউ কেউ বলেছেন। জামাআতে লোক কমবেশী হওয়ার উপর ভিত্তি করে ছোয়াবের তারতম্য হবে। বড় জামাআতে অংশ গ্রহণকারীগণ পাবে সাতাইশ গুণ বেশী। ছোট জামাআতে অংশগ্রহণকারীগণ পাবে পঁচিশ গুণ বেশী।
১০- ফজর ও ইশার জামাআতে অংশগ্রহণকারীগণ পাবে সাতাইশ গুণ বেশী। অন্যান্য নামাযে অংশগ্রহণকারীগণ পাবে পঁচিশ গুণ বেশী।
১১- যে সমস্ত নামাযে কেরাআত আওয়াজ করে পড়া হয়, তাতে অংশগ্রহণকারীগণ পাবে সাতাইশ গুণ বেশী। আর যে সমস্ত নামাযে কেরাআত নিঃরবে পড়া হয় তাতে অংশগ্রহণকারীগণ পাবে পঁচিশ গুণ বেশী।
১২- ইমাম ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ বললে তার জবাবে যারা ‘রব্বানা লাকাল হাম্‌দ বলবে তারা পাবে সাতাইশ গুণ বেশী। আর যারা তা বলবে না, তারা পাবে পঁচিশ গুণ বেশী।
১৩- সম্ভবত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথমে পঁচিশ গুণের কথা বলেছিলেন। পরে অহীর মাধ্যমে অবগত হয়ে আরেকটু বাড়িয়ে সাতাইশ গুণের কথা বলেছেন।
এ ব্যাপারে আরও অনেক মত রয়েছে। তার মধ্যে হতে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রঃ) জেহরী নামায তথা আওয়াজ করে কেরাআত পঠিতব্য নামাযগুলোতে অংশগ্রহণকারীগণ সাতাইশ গুণ ছোয়াব বেশী পাওয়ার বিষয়টি অধিক প্রাধান্যপ্রাপ্ত। কারণ এতে রয়েছে মুকতাদীর জন্য কেরাআত পাঠের সুযোগ এবং ইমাম ও আকাশের ফেরেশতাদের  আমীন বলার সাথে আমীন বলার বিরাট এক সুযোগ। (আল্লাহই ভাল জানেন) 

ওলামাগণ উল্লেখিত দু বর্ণনার মাঝে সামাঞ্জস্যতা বর্ণনা করেছেন এবং মর্যাদা বেশী-কম হওয়ার কারণ উল্লেখ করেছেন।

ইবনু হাজার আসকালানী (রহ:) বলেছেন, কেবলমাত্র জামাআতের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়কে উল্লেখ করে আর বাকী জিনিসগুলোকে ছাটাই করেছি। আর তা হল নিম্নে উল্লেখিত বিষয়গুলোঃ
১)জামাআতের সাথে ছালাত আদায় করার নিয়তে মুআয্‌িযনের আহবানে সাড়া দান করা।
২) প্রথম ওয়াক্তে মাসজিদে যাওয়া।
৩) ধীরস্থীরতার সাথে মাসজিদে গমণ করা।
৪) দুআ পাঠ করে মাসজিদে প্রবেশ করা।
৫) মাসজিদে প্রবেশ করে দুরাকাআত তাহিয়্যাতুল মাসজিদ আদায় করা।
উল্লেখিত বিষয়গুলো পালনের ক্ষেত্রে জামাআতে নামায পড়ার নিয়ত থাকতে হবে।
৬) জামাআতে নামায পড়ার জন্য অপেক্ষা করা।
৭) জামাআতে নামায আদায় করার লক্ষ্যে অপেক্ষাকারীর জন্যে ফেরেশতাদের দুআ ও রহমত কামনা।
৮) যারা জামাআতে নামায আদায় করে তাদের জন্যে ফেরেশতাদের সাক্ষ্য প্রদান।
৯) নামাযে ইক্বামতের জবাব প্রদান করা।
১০) শয়তান থেকে আশ্রয় লাভ করা, কেননা আযান হলে শয়তান পলায়ন করে।
১১) মাসজিদে প্রবেশ করে ইমামের সাথে তাকবিরাতুল ইহরামের অপেক্ষা করা বা যে অবস্থায় ইমামকে পাওয়া যায় সে অবস্থায়ই ইমামের সাথে নামাযে শরিক হওয়া।
১২) তাকবিরাতুল ইহরাম পাওয়া।
১৩) কাতার সোজা করা এবং ফাঁক বন্ধ করা।
১৪) ইমাম ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ বললে তার জবাব প্রদান করা। অর্থাৎ ‘রব্বানা লাকাল হাম্‌দ বলা।
১৫) নামাযে ভুল হওয়া থেকে সতর্ক হওয়া এবং ইমাম নামাযে ভুল করলে তাকে ‘সুবহানাল্লাহবলে সতর্ক করা। বা কেরাআতে ভুল করলে স্মরণ করিয়ে দেয়া।
১৬) সাধারণতঃ যে সব জিনিস নামাযে অন্যমনস্ক করে সে সব বিষয় থেকে মুক্তি লাভ করা।
১৭) সুন্দর ও পরিপাটি অবস্থা গ্রহণ করা।
১৮) নামাযের কাতারকে ফেরেশতাগণ কর্তৃক পরিবেষ্টন করে রাখা।
১৯) কুরআন পাঠে তাজবীদের অভ্যাস করা এবং নামাযের রুকন, ওয়াজিব ও সুন্নত সম্পর্কে  শিক্ষা গ্রহণ করা।
২০) ইসলামের নিদর্শন প্রকাশ করা।
২১) ইবাদতের ক্ষেত্রে একত্রিত হয়ে শয়তানকে প্রতিহত করা, আনুগত্যের কাজে পরস্পরকে সাহায্য করা এবং অলস ব্যক্তিকে কর্মঠ করা।
২২) মুনাফেকের চরিত্র এবং মানুষের এ কুধারণা থেকে মুক্তি লাভ যে, সে একেবারেই নামায ছেড়ে দিয়েছে।
২৩) ইমামের সালামের জবাব প্রদান করা।
২৪) সমবেত মুছল্লিগণের দুআ ও যিকির থেকে উপকারিতা লাভ।
২৫) পাড়া-প্রতিবেশীর মাঝে ভালবাসা ও বন্ধুত্ব সৃষ্টি হওয়া এবং নামাযের এই সময়গুলোতে একে অপরের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ হয়।

উল্লেখিত ২৫টি বৈশিষ্ট যার প্রতিটিই পালনের ব্যাপারে  নির্দেশ রয়েছে বা উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। এই পঁচিশটি ছাড়া আরও দুটি রয়েছে যা নামাযে DP:¯^‡i ক্বেরাআত পড়ার সাথে সম্পৃক্ত। তা হল: ১) সূরা ফাতেহা বাদ দিয়ে নামাযে ইমামের ক্বেরাআত পড়ার সময় নিরব থাকা এবং তা শ্রবন করা ২) ইমাম আমীন বলার সময় আমীন বলা, কেননা যার আমীন ফেরেশতার আমীন বলার সাথে মিলে যাবে তার পিছনের গুনাহ সমূহ  ক্ষমা করে দেয়া হবে।[27] 

মুহাম্মদ বিন আলী আশ্‌শাওকানী (রহঃ) বলেছেন, কল্যাণ থেকে বঞ্চিত ব্যক্তি হল সে, যে জামাআতের ছোয়াব থেকে বঞ্চিত।
১১) একাকী নামায আদায় করার চেয়ে জামাআতের সাথে নামায আদায় করা হল আল্লাহ তাআলার নিকট অধিকতর পছন্দনীয় কাজ
   জামাআতের সাথে যদি অল্পসংক্ষক লোকও নামায আদায় করে তবে একাকী নামায আদায় করার চেয়ে আল্লাহর নিকট অধিকতর প্রিয়, যদিও একাকী নামায আদায়কারীরা সংখ্যায় বেশি হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দু ব্যক্তি একত্রিত হয়ে তাদের একজন ইমাম হয়ে জামাআতের সাথে নামায আদায় করা চার জন ব্যক্তি একা একা নামায আদায় করার চেয়ে আল্লাহর কাছে খুবই পছন্দনীয়। এমনিভাবে চার ব্যক্তি সম্মিলিত হয়ে তাদের মধ্যে একজনকে ইমাম বানিয়ে সকলেই মিলে জামাআতের সাথে নামায আদায় করা আট ব্যক্তি পৃথক পৃথক নামায পড়ার চেয়ে অধিক উত্তম। তদ্রূপ আট ব্যক্তি জামাআত বদ্ধ হয়ে নামায পড়া একশত ব্যক্তি পৃথক পৃথক নামায আদায় করার চেয়ে আল্লাহর তাআলার কাছে অধিকতর পছন্দনীয়।[28]
১২) জামাআত বদ্ধ হয়ে নামায আদায় করা হল শয়তান থেকে হেফাযতে থাকা
   জামাআতে নামায একজন মুসলিম ব্যক্তিকে তার চরম শত্রু (শয়তান) থেকে হেফাযত কারী, যে শয়তান কোন সময়ই ক্লান্ত ও বিরত হয় না। এর মাধ্যমে সে তার উপর শয়তানের প্রভাব বিস্তার করা হতে বাঁধা প্রধানে সক্ষম হয়।  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
  مَا مِنْ ثَلَاثَةٍ فِي قَرْيَةٍ وَلَا بَدْوٍ لَا تُقَامُ فِيهِمْ الصَّلَاةُ إِلَّا قَدْ اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمْ الشَّيْطَانُ فَعَلَيْكُمْ بِالْجَمَاعَةِ فَإِنَّمَا يَأْكُلُ الذِّئْبُ الْقَاصِيَةَ
কোন গ্রাম বা মহল্লায় যদি তিনজন ব্যক্তি থাকে আর সেখানে নামায কায়েম করা না হয় তবে শয়তান তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করে ফেলে। অতএব তোমাদের জন্য আবশ্যক হল, দলবদ্ধ হয়ে থাকা। কেননা বাঘ দল থেকে দূরে অবস্থানকারী ভেড়ীর উপর আক্রমন করে তাকে খেয়ে ফেলে।[29]
১৩) মুনাফেকের সাথে সাদৃশ্য পোষণ করা থেকে দূরে থাকা
   জামাআতের সাথে নামায আদায় ও ইহার প্রতি যত্নবান হওয়া মুনাফেকের সাথে সাদৃশ হওয়া থেকে দূরে থাকার মাধ্যম। কেননা মুনাফেকের একটি প্রসিদ্ধ চরিত্র হল জামাআতে নামায পড়া থেকে দূরে অবস্থান করা। বিশেষ করে ইশা এবং ফজরের নামায থেকে মুনাফেকরা দূরে থাকে বেশি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
  لَيْسَ صَلَاةٌ أَثْقَلَ عَلَى الْمُنَافِقِينَ مِنْ الْفَجْرِ وَالْعِشَاءِ وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِيهِمَا لَأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ آمُرَ الْمُؤَذِّنَ فَيُقِيمَ ثُمَّ آمُرَ رَجُلًا يَؤُمُّ النَّاسَ ثُمَّ آخُذَ شُعَلًا مِنْ نَارٍ فَأُحَرِّقَ عَلَى مَنْ لَا يَخْرُجُ إِلَى الصَّلَاةِ بَعْدُ
‘‘ফজর ও ইশার নামাযের চেয়ে মুনাফেকের নিকট ভারী কোন নামায নেই। যদি তারা জানত এ দু নামাযের মধ্যে কি পরিমান নেকী রয়েছে তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে আসত। আমার ইচ্ছা হয় যে, আমি মুয়াজ্জিনকে আযান দিতে বলব অতএব সে আযান দিবে। অত:পর একজনকে নামায পড়ার আদেশ দিয়ে প্রজ্জলিত আগুনের খন্ড নিয়ে তাদেরকে পুড়িয়ে ফেলি যারা এখনও নামাযে আসে না। [30]

ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেছেন, আমাদের সময় প্রকাশ্য মুনাফেক ছাড়া কেউ জামাআতে নামায পড়া থেকে পিছে থাকত না।[31]
১৪) গুনাহ মোচনের মাধ্যম
   নিশ্চয়ই জামাআতের সাথে নামায আদায় করা হল গুনাহসমূহ ক্ষমা হওয়ার একটি কারণ। এর মাধ্যমে পিছনের সকল গুনাহ ক্ষমা হয়ে যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
 إِذَا قَالَ الْإِمَامُ { غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ } فَقُولُوا آمِينَ فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ قَوْلُهُ قَوْلَ الْمَلَائِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
যখন ইমাম ‘গাইরীল মাগযুবি আলাইহিম ওয়ালায্‌যোয়াল্লীন’ বলে তখন তোমরা ¯^k‡ã আমীন বল। কেননা যার আমীন বলা ফেরেশতাদের আমীন বলার সাথে মিলে যাবে তার পিছনের সমস্ত গুনাহ মোচন হয়ে যাবে। [32]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন,
إِذَا قَالَ الْإِمَامُ سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ فَقُولُوا اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ قَوْلُهُ قَوْلَ الْمَلَائِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
যখন ইমাম বলবে ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহতোমরা বলবে ‘আল্লাহুম্মা  রব্বানা লাকাল হামদ্‌’ কেননা যার এ কথাটি ফেরেশতার কথার সাথে মিলে যাবে তার পিছনের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। [33]  

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন,
مَنْ تَوَضَّأَ لِلصَّلَاةِ فَأَسْبَغَ الْوُضُوءَ ثُمَّ مَشَى إِلَى الصَّلَاةِ الْمَكْتُوبَةِ فَصَلَّاهَا مَعَ النَّاسِ أَوْ مَعَ الْجَمَاعَةِ أَوْ فِي الْمَسْجِدِ غَفَرَ اللَّهُ لَهُ ذُنُوبَه
যে ব্যক্তি নামাযের জন্যে ওযু করবে এবং সুন্দর ভাবে তা সম্পাদন করবে, অত:পর ফরজ নামাযের উদ্দেশ্যে হেঁটে এসে লোকদের সাথে মিলে বা জামাআতের সাথে বা মাসজিদে গিয়ে নামায আদায় করে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন। [34]
১৫) আল্লাহ তাআলার খর্ুশির কারণ
   আল্লাহর গুণাবলীর মধ্যে একটি গুণ হল খুশি হওয়া, আনন্দবোধ করা। তন্মধ্যে জামাআতে নামায আদায় করা দেখে তিনি আনন্দবোধ করেন, খুশি হন। আল্লাহ তাআলার এ বিষয় খুশি হওয়ার দ্বারা প্রমাণ করে যে, তিনি এ কাজে সন্তুষ্ট এবং যে তা করে তাকে তিনি ভালবাসেন, পছন্দ করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লা বলেছেন,
إِنَّ اللَّهَ لَيَعْجَبُ مِنْ الصَّلَاةِ فِي الْجَمِيعِ
নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা জামাআতে নামায পড়া দেখে আনন্দবোধ করেন। [35]

   আল্লাহ তাআলার ‘‘খুশি হওয়ার গুণ প্রমাণ হওয়ার ব্যাপারে সালাফে সালেহীনগন ঐকমত্য পোষণ করেছেন। সুতরাং তা কোন প্রকার পরিবর্তন-পরিবর্ধন, ধরণ ও সাদৃশ্য-বর্ণনা ছাড়াই মেনে নিতে হবে। আর এ গুণটি প্রকৃত পক্ষেই আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত। যে ভাবে থাকা আল্লাহর জন্যে শোভা পায় সে ভাবেই আছে। [36]  
১৬) জামাআতে নামাযের উদ্দেশ্যে পায়ে হেঁটে যাওয়া অফুরন্ত ছোয়াব লাভের মাধ্যম
    জামাআতে নামায একজন মুসলিম ব্যক্তিকে মাসজিদে যাওয়ার জন্যে বাধ্য করে। আর এ ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় মানুষ মাসজিদে পায়ে হেঁটে গিয়ে থাকে। পায়ে হেঁটে পথ চললে অনেক পদক্ষেপ ফেলতে হয়। আর ইহাতে আল্লাহ তাআলা তাকে মহা প্রতিদান ও ব্যাপক ছোয়াব দান করেন যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। পায়ে হেঁটে মাসজিদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাহির হওয়া এবং তাতে হেঁটে হেঁটে যাওয়ার ব্যাপারে বহু সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ تَوَضَّأَ لِلصَّلَاةِ فَأَسْبَغَ الْوُضُوءَ ثُمَّ مَشَى إِلَى الصَّلَاةِ الْمَكْتُوبَةِ فَصَلَّاهَا مَعَ النَّاسِ أَوْ مَعَ الْجَمَاعَةِ أَوْ فِي الْمَسْجِدِ غَفَرَ اللَّهُ لَهُ ذُنُوبَهُ
‘‘যে নামাযের জন্যে ওযু করে এবং সুন্দর ভাবে তা সম্পাদন করে অত:পর ফরজ নামায পড়ার উদ্দেশ্যে হেঁটে এসে মানুষের সাথে মিলে নামায আদায় করে বা জামাআতে শরীক হয়ে বা মাসজিদে গিয়ে নামায আদায় করে আল্লাহ তাআলা তার গুনাহ সমূহ দূর করে দেন। [37]

বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
  أَعْظَمُ النَّاسِ أَجْرًا فِي الصَّلَاةِ أَبْعَدُهُمْ فَأَبْعَدُهُمْ مَمْشًى وَالَّذِي يَنْتَظِرُ الصَّلَاةَ حَتَّى يُصَلِّيَهَا مَعَ الْإِمَامِ أَعْظَمُ أَجْرًا مِنْ الَّذِي يُصَلِّي ثُمَّ يَنَامُ
নামাযের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ছোয়াব লাভ করে সে ব্যক্তি যে মাসজিদ থেকে বেশী দূরে অবস্থান করে তারপর ঐ ব্যক্তি যে তার থেকেও দূরে অবস্থান করে। আর যে ব্যক্তি নামাযের জন্যে অপেক্ষায় থেকে ইমামের সাথে নামায আদায় করে সে ঐ ব্যক্তির চেয়ে অধিক ছোয়াব লাভকারী যে নামায (একাকী) আদায় করে ঘুমিয়ে যায়। [38]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন,
أَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللَّهُ بِهِ الْخَطَايَا وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ إِسْبَاغُ الْوُضُوءِ عَلَى الْمَكَارِهِ وَكَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ وَانْتِظَارُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الصَّلَاةِ فَذَلِكُمْ الرِّبَاطُ
আমি কি তোমাদেরকে বলে দিব না যা দ্বারা আল্লাহ তোমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিবেন এবং তোমাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন? সাহাবায়ে কেরাম (রা:) বললেন, হাঁ হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, কষ্টের সময় পরিপূর্ণরূপে ওযু সম্পাদন করা, অধিক পরিমাণে মাসজিদে হেটে যাওয়া এবং এক নামায আদায় করে অন্য নামাযের জন্যে অপেক্ষা করা। আর এটাই হল রিবাত অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় নিজেকে ব্যস্ত রাখা। [39] 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন,
مَنْ غَدَا إِلَى الْمَسْجِدِ أَوْ رَاحَ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُ فِي الْجَنَّةِ نُزُلًا كُلَّمَا غَدَا أَوْ رَاحَ
যে ব্যক্তি সকাল অথবা সন্ধ্যায় মাসজিদে যাবে আল্লাহ তাআলা তার জন্যে প্রতিবারের বিনিময়ে জান্নাতে মেহমানদারীর ব্যবস্থা করবেন।[40]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন,
مَنْ تَطَهَّرَ فِي بَيْتِهِ ثُمَّ مَشَى إِلَى بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِ اللَّهِ لِيَقْضِيَ فَرِيضَةً مِنْ فَرَائِضِ اللَّهِ كَانَتْ خَطْوَتَاهُ إِحْدَاهُمَا تَحُطُّ خَطِيئَةً وَالْأُخْرَى تَرْفَعُ دَرَجَةً
‘‘যে ব্যক্তি তার বাড়ি থেকে সুন্দরভাবে ওযু করে আল্লাহর কোন ঘরে (মাসজিদে) এসে আল্লাহর কোন ফরয আদায় করে তবে তার জন্যে প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ের একটি দ্বারা একটি গুনাহ ক্ষমা করা হয় এবং অপরটি দ্বারা একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়।[41]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন,
 بَشِّرْ الْمَشَّائِينَ فِي الظُّلَمِ إِلَى الْمَسَاجِدِ بِالنُّورِ التَّامِّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
‘‘যে ব্যক্তি অন্ধকারে পথ চলে মাসজিদে আসে কিয়ামতের দিন তাকে পরিপূর্ণ নূরের সুসংবাদ প্রদান করুন। [42]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন,
যে ব্যক্তি জামাআতের সাথে ফরয নামায আদায়ের লক্ষ্যে মাসজিদে আসে তার ছোয়াব হল একটি হজ্জের ন্যায়। আর যে ব্যক্তি নফল নামায আদায়ের লক্ষ্যে মাসজিদে আসে তার ছোয়াব হল একটি ওমরার ন্যায়।[43]
একটি সাবধান বাণী

    উপরোল্লেখিত মহাপ্রতিদান শুধু মাসজিদে হেঁটে হেঁটে যাওয়ার ক্ষেত্রে নয় বরং নামায শেষ করে মাসজিদ হতে বাড়ি ফেরার পথেও এ ছোয়াব তাকে দান করা হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ رَاحَ إِلَى مَسْجِدِ الْجَمَاعَةِ فَخَطْوَةٌ تَمْحُو سَيِّئَةً وَخَطْوَةٌ تُكْتَبُ لَهُ حَسَنَةٌ ذَاهِبًا وَرَاجِعًا
যে ব্যক্তি জামাআতে নামায পড়ার জন্যে মাসজিদে যাবে তার প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ের একটি দ্বারা একটি গুনাহ ক্ষমা করা হয় এবং অপরটি দ্বারা একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। আর এ মর্যাদা মাসজিদে আসা ও ফিরে যাওয়া উভয় সময়ই।[44]
একটি সতর্কবাণী

    জুমআর নামায পড়ার উদ্দেশ্যে মাসজিদে হেঁটে যাওয়ার ফযীলত পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাআতে পড়ার ফযীলতের মত নয়। বরং তাতে আরও অধিক ছোয়াবের আশ্বাস দেয়া হয়েছে। জুমআর নামাযে হেঁটে যাওয়ার ফযীলত সম্পর্কে ইমাম আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, ইবনু খুযায়মা, ইবনু হিব্বান ও হাকেম (রহঃ) সহ প্রত্যেকেই তাঁদের বিশুদ্ধ গ্রন্থে হাদীস বর্ণনা করেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
مَنْ غَسَّلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَاغْتَسَلَ وَبَكَّرَ وَابْتَكَرَ وَمَشَى وَلَمْ يَرْكَبْ وَدَنَا مِنْ الْإِمَامِ فَاسْتَمَعَ وَلَمْ يَلْغُ كَانَ لَهُ بِكُلِّ خَطْوَةٍ عَمَلُ سَنَةٍ أَجْرُ صِيَامِهَا وَقِيَامِهَا
যে ব্যক্তি জুমআর দিন গোসল করল এবং গোসল করালো, সকাল সকাল মাসজিদে গেল এবং অপরকে নিয়ে গেল, কোন বস্তুতে আরোহণ না করে হেঁটে হেঁটে গেল এবং ইমামের নিটকবর্তী স্থানে বসল, অতঃপর মনোযোগ সহকারে খুতবা শ্রবণ করল কিন্তু কোন প্রকার অনর্থক কাজে লিপ্ত হল না তবে সে প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে এক বছর নফল নামায এবং এক বছর নফল রোযা রাখার ছোয়াব লাভ করে।
১৭) আসর ও ফজর নামাযে ফেরেশতাদের উপস্থিতি ও সমবেত মুছল্লিদের জন্যে তাদের দুআ প্রার্থনা
   আসর ও ফজর নামাযে ফেরেশতাগণ উপস্থিত হয়। যারা এ নামাযদ্বয় জামাআতের সাথে আদায় করে তাদের জন্যে ফেরেশতাগণ দুআ-প্রার্থনা করে। বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম বলেনঃ
يَتَعَاقَبُونَ فِيكُمْ مَلَائِكَةٌ بِاللَّيْلِ وَمَلَائِكَةٌ بِالنَّهَارِ وَيَجْتَمِعُونَ فِي صَلَاةِ الْفَجْرِ وَصَلَاةِ الْعَصْرِ ثُمَّ يَعْرُجُ الَّذِينَ بَاتُوا فِيكُمْ فَيَسْأَلُهُمْ رَبُّهُمْ وَهُوَ أَعْلَمُ بِهِمْ كَيْفَ تَرَكْتُمْ عِبَادِي فَيَقُولُونَ تَرَكْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ وَأَتَيْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ
রাত-দিনে পালাক্রমে তোমাদের মাঝে ফেরেশতাদের পরিবর্তন ঘটে। তারা আসর ও ফজর নামাযে একত্রিত হয়। অতঃপর যে সকল ফেরেশতা তোমাদের মাঝে রাতে অবস্থান করেছিল তারা উপরে উঠে যায়। তখন তাদের রব তাদেরকে প্রশ্ন করেন অথচ তিনি তাদের থেকে অধিক জানেন। তোমরা আমার বান্দাদের কিভাবে ছেড়ে এসেছ? তারা বলেন, আমরা তাদেরকে নামাযরত অবস্থায় পেয়েছি এবং নামাযরত অবস্থায় তাদেরকে ছেড়ে এসেছি। [45]

 সহীহ ইবনু খুযায়মার অন্য বর্ণনায় এসেছে,
فَيَقُولُونَ تَرَكْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ وَأَتَيْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ ، فَاغْفِرْ لهَمُ ْيَوْمَ الدِّيْنِ
তারা বলেন, আমরা নামায অবস্থায় তাদেরকে ছেড়ে এসেছি এবং নামায অবস্থায় তাদের কাছে এসেছি। অতএব আপনি তাদেরকে কিয়ামতের দিন ক্ষমা করে দিন।[46]
১৮) জামাআতে নামায হল অর্ধ রাত্রি বা পূরো রাত্রি ইবাদতের সমান ছোয়াব 
   ইশার নামায জামাআতের সাথে আদায় করা হল অর্ধ রাত্রি ইবাদত করার সমান ছোয়াব। যেমনভাবে ফজরের নামায জামাআতের সাথে আদায় করা হল সম্পূর্ণ রাত্রি জেগে ইবাদত করার সমান ছোয়াব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ صَلَّى الْعِشَاءَ فِي جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا قَامَ نِصْفَ اللَّيْلِ وَمَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فِي جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا صَلَّى اللَّيْلَ كُلَّهُ
যে ব্যক্তি ইশার নামায জামাআতের সাথে আদায় করল সে যেন অর্ধ রাত্রি নফল নামায আদায় করল। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাআতের সাথে আদায় করল সে যেন পূরো রাত্রিই নফল নামায আদায় করল। [47]

   তিরমিযী ও আবু দাউদের বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ شَهِدَ الْعِشَاءَ فِي جَمَاعَةٍ كَانَ لَهُ قِيَامُ نِصْفِ لَيْلَةٍ وَمَنْ صَلَّى الْعِشَاءَ وَالْفَجْرَ فِي جَمَاعَةٍ كَانَ لَهُ كَقِيَامِ لَيْلَةٍ
যে ব্যক্তি ইশার নামাযের জামাআতে উপস্থিত হল সে যেন অর্ধ রাত্রি নফল নামায পড়ল। আর যে ব্যক্তি ইশা ও ফজর নামায জামাআতের সাথে আদায় করল সে যেন পূরো রাত্রি নফল নামায পড়ল। [48]
১৯) আল্লাহ তাআলার হেফাযত
    জামাআতে নামায পড়া হল আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাকে হেফাযত করার একটি কারণ। আল্লাহ তাআলা তাকে তাঁর যিম্মায় রাখেন অর্থাৎ তাকে তাঁর প্রতিশ্রুতি ও তাঁর আমানতে রাখেন। এর একমাত্র কারণ হল ফজর নামায জামাআতের সাথে আদায় করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ صَلَّى صَلَاةَ الصُّبْحِ فَهُوَ فِي ذِمَّةِ اللَّهِ
‘‘যে ব্যক্তি ফজরের নামায আদায় করবে সে আল্লাহর তাআলার যিম্মায় থাকবে। [49]

   ইবনু মাজাহ ও ত্ববরানীর বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাআতের সাথে আদায় করবে সে আল্লাহ তাআলার যিম্মায় থাকবে।[50]
২০) কিয়ামতের দিন আল্লাহ প্রদত্ত্ব ছায়াতে অবস্থানের কারণ, যে দিন ঐ ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না
    জামাআতে নামায একজন মুসলিম ব্যক্তিকে মাসজিদের সাথে গভীর ভালবাসা এবং নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলে। আর এ কারণেই সে মাসজিদে এসে নামায আদায় করে। যার অন্তর মাসজিদের সাথে সম্পর্কীত থাকবে সে সাত ব্যক্তির একজন যে সাত ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তার ছায়াতলে আশ্রয় দান করবেন, যে দিন সে ছায়া ছাড়া অন্য কোন ছায়া থাকবে না। আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা (রোজ কিয়ামতে) সাত ব্যক্তিকে তাঁর ছায়াতলে স্থান দান করবেন। যে দিন সে ছায়া ছাড়া অন্য কোন ছায়া থাকবে না। তন্মধ্যে একজন হল যার অন্তর সকল সময় মাসজিদের সাথে সম্পর্কীত থাকবে।[51]
২১ ) মুনাফেকী ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ
   জামাআতের সাথে নামায আদায় করার একটি মহান উপকারিতা হল, যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন তাকবীরে উলার (প্রথম তাকবীর) সাথে নামায আদায় করবে আল্লাহ তাআলা তার জন্যে দুুটি মুক্তি লিপিবদ্ধ করবেন। একটি মুনাফেকী থেকে মুক্তি, অপরটি জাহান্নাম থেকে মুক্তি।

   আনাস (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ صَلَّى لِلَّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا فِي جَمَاعَةٍ يُدْرِكُ التَّكْبِيرَةَ الْأُولَى كُتِبَتْ لَهُ بَرَاءَتَانِ بَرَاءَةٌ مِنْ النَّارِ وَبَرَاءَةٌ مِنْ النِّفَاقِ
যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে জামাআতে শরীক হয়ে চল্লিশ দিন তাকবীরে উলার সাথে নামায আদায় করবে আল্লাহ তাআলা তার জন্যে দুুটি মুক্তি লিপিবদ্ধ করবেন। একটি জাহান্নাম থেকে অপরটি মুনাফেকী থেকে।[52]

বিদ্বানগণ বলেছেন, উক্ত ছোয়াব শুধু মাসজিদে নববীতে  নামায আদায় করার সাথে নিদিষ্ট নয় বরং দুনিয়ার সকল মাসজিদের ব্যাপারে তা সমান।

টিকাঃ আমাদের দেশের কতিপয় হাজ্জী সাহেব হজ্জ করতে এসে মদীনা শরীফ যিয়ারত করতে যেয়ে চল্লিশ ওয়াক্ত নামায মাসজিদে নব্বীতে পড়া ওয়াজিব মনে করেন। অথচ তাদের এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়। এটা হজ্জের সাথে কোন সম্পর্ক রাখে না। তাছাড়া যারা মনে করেন যে, চল্লিশ ওয়াক্ত নামায তাকবীরে উলার সাথে মাসজিদে নব্বীতে আদায় করলে আল্লাহ তাকে মুনাফেকী ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লিখে দিবেন এটাও ঠিক নয়। রবং এটা সকল মাসজিদের সাথেই সম্পর্ক রাখে।   

   ইবরাহীম বিন ইয়াযীদ আত্‌তাইমী (রহ:) বলেছেন, যদি তুমি কোন মানুষকে তাকবীরে উলার সাথে নামায পড়ার ব্যাপারে অবহেলা করতে দেখ তবে তার থেকে সম্পূর্ণ দূরে অবস্থান কর।[53]

   বিশিষ্ট তাবেয়ী সাঈদ বিন মুসায়্যেব ও আ’মাশসহ কোন কোন সালাফে সালেহীনদের ব্যাপারে প্রসিদ্ধ রয়েছে যে, তাঁরা চল্লিশ বছর জামাআতে নামায তাকবীরে ঊলার সাথে আদায় করেছেন।
২২) আল্লাহ তাআলার রহমত এবং ফেরেশতাদের দুআর কারণ
   জামাআতের সাথে নামায আদায় করার একটি মহান উপকারিতা হল, নামায আদায়ের লক্ষ্যে কাতারে দন্ডায়মান মুসল্লীদের উপর আল্লাহ তাআলা রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতাগণ তাদের জন্যে দুআ করতে থাকেন। বিশেষ ভাবে যারা প্রথম কাতার গুলোতে নামায আদায় করে থাকে।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
  إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى الصُّفُوفِ الْمُتَقَدِّمَةِ
নিশ্চয়ই সামনের কাতারগুলোতে নামায আদায়কারীদের জন্যে আল্লাহ তাআলা রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতাগণ দুআ করেন।  

   অপর বর্ণনায় এসেছে, প্রথম কাতারে নামায আদায়কারীর জন্যে দুআ করেন।[54] 
বিদ্বানগণ বলেন, প্রথম কাতারগুলোতে নামায আদায়কারীর জন্যে ফেরেশতাগণ দুআ করেন। 

২৩) কাতার সোজা করাতে মহান প্রতিদান অর্জিত হয় আর জান্নাতে তার জন্যে একটি ঘর তৈরী করা হয়
   জামাআতে নামায মুসলিম ব্যক্তিকে কাতার সোজা করার ব্যাপারে অধিক আগ্রহী করে তুলে। যেমনভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাতারগুলোকে একটা অপরটার সাথে মিলাতে বা কাতারের মাঝে ফাঁকা স্থান বন্ধ করতে আদেশ দিয়েছেন। আর এতে রয়েছে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অফুরন্ত পুরস্কার ও মহান মর্যাদা।

আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
 إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى الَّذِينَ يَصِلُونَ الصُّفُوفَ وَمَنْ سَدَّ فُرْجَةً رَفَعَهُ اللَّهُ بِهَا دَرَجَةً
নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা রহমত বর্ষন করেন এবং ফেরেশতাগণ দুআ করেন ঐ সমস্ত লোকদের জন্যে যারা প্রথম কাতারে নামায আদায় করে। আর যে নামাযের কাতারে ফাঁকা স্থান বন্ধ করে আল্লাহ তাআলা তার একটি মর্যাদার স্তর উঁচু করেন। [55]

সহীহ তারগীব ও তারহীবে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ سَدَّ فُرْجَةً رَفَعَهُ اللَّهُ بِهَا دَرَجَةً, وَبُنِيَ لَهُ بَيْتاً فِيْ الْجَنَّةِ
যে নামাযে কাতারের মধ্যকার ফাঁকা স্থান বন্ধ করে দাঁড়াবে আল্লাহ তার একটি মর্যাদার স্তর উঁচু করে দিবেন এবং তার জন্যে জান্নাতে একটি ঘর তৈরী করা হবে।[56]
২৪) জামাআত ছুটে গেলেও ছোয়াব অর্জিত হয়
   জামাআতে নামায আদায় করার একটি মহান উপকারিতা হল, যে ব্যক্তি জামাআতের সাথে নামায আদায় করার নিয়তে মাসজিদে আসবে সে জামাআতের ছোয়াব পাবে। যদিও এসে দেখে লোকেরা জামাআত পড়ে নিয়েছে।

ইমাম আহমাদ, আবু দাউদ ও নাসাঈ আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণনা করেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
 مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ وُضُوءَهُ ثُمَّ رَاحَ فَوَجَدَ النَّاسَ قَدْ صَلَّوْا أَعْطَاهُ اللَّهُ جَلَّ وَعَزَّ مِثْلَ أَجْرِ مَنْ صَلَّاهَا وَحَضَرَهَا لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أَجْرِهِمْ شَيْئًا
যে ব্যক্তি ওযু করে এবং তা সুন্দর ভাবে সম্পাদন করে। অত:পর মাসজিদে এসে দেখল লোকেরা নামায আদায় করে ফেলেছে, তবে আল্লাহ তাআলা তাকে জামাআতে উপস্থিত হয়ে নামায আদায়কারীর ছোয়াব দান করবেন। অথচ তাদের ছোয়াব থেকে কোন কমানো হবে না।[57]

(লেখক বলেন) আমি বলব, উক্ত ছোয়াব যে ব্যক্তি কোন কারণ বশতঃ দেরী করে তার জন্যে। এ কারণে ইমাম আবু দাউদ (রহ:) তাঁর সুনান গ্রন্থে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নামায পড়ার জন্যে বের হল কিন্তু নামায তার আসার আগেই শেষ হয়ে গেল’ (সে এই ছোয়াবের অংশীদার হবে।)

২৫) নামাযের পরিপূর্ণতা
   জামাআতে নামায আদায় করা হল তা পূর্ণতা লাভ হওয়ার একটি মাধ্যম। এর মাধ্যমে সাধারণতঃ নামাযের ভুল-ত্রুটিগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তা দ্বারা নামাযে বিনয় ও নম্রতা অর্জিত হয় এবং এভাবে নামায কবুলের পর্যায়ে পৌঁছে যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
الْإِمَامُ ضَامِنٌ وَالْمُؤَذِّنُ مُؤْتَمَنٌ اللَّهُمَّ أَرْشِدْ الْأَئِمَّةَ وَاغْفِرْ لِلْمُؤَذِّنِينَ
ইমাম হল জামানতদার এবং মুয়াজ্জিন হল আমানতদার। অতএব হে আল্লাহ! আপনি ইমামগণকে সঠিকপথে রাখুন এবং মুয়াজ্জিনদেরকে ক্ষমা করুন।[58]

   বিদ্বানগণ বলেছেন, ‘ইমাম জামানতদার’ এ কথার অর্থ হল, ইমাম সকল উপস্থিত মুসল্লিদের নামায পূর্ণতার দায়িত্বশীল।[59]

আমি বলব, ইমাম উপস্থিত সকল মুসল্লিদের নামায পূর্ণতার দায়িত্বশীল এ কথাটি একাকি নামায আদায়কারীর থেকে সম্পূর্ণরূপে আলাদা। কেননা একাকী নামায আদায়কারীর কোন ভুল-ভ্রান্তি বা ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে তা অন্য কেউ বহন করবে না। নিজেই তা বহন করবে।

   হাসান বস্‌রী (রহ:) বলেছেন, জীবন যাত্রার কার্যক্রমের মধ্যে মাত্র তিনটি জিনিস অবশিষ্ট থাকবে তন্মধ্যে একটি হল, জামাআতের সাথে নামাায আদায় করা। যার মাধ্যমে নামাযের ভুল-ভ্রান্তি থেকে মাহফুয থাকা যায় এবং তার ছোয়াব পরিপূর্ণভাবে লাভ করা যায়।[60]
২৬) উত্তম আমল হল, সময়মত নামায আদায় করা এবং তার প্রতি যত্নবান হওয়া
    জামাআতের সাথে নামায আদায় করার একটি মহান উপকারিতা হল, তা প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা বা তা ঠিক সময় আদায় করার ব্যাপারে সাহায্যকারী একটি বিষয়। আর ইহা আল্লাহ তাআলা কাছে অত্যাধিক পছন্দনীয় কাজ।  

আবু দাউদ ও তিরমিযী (রহঃ) উম্মে ফারওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে,
 أَيُّ الْأَعْمَالِ أَفْضَلُ قَالَ الصَّلَاةُ فِي أَوَّلِ وَقْتِهَا
কোন কাজটি আল্লাহ তাআলার কাছে অধিক প্রিয়? তিনি বলেছেন, প্রথম ওয়াক্তে নামায আদায় করা।[61]

মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
   أَفْضَلُ الْأَعْمَالِ الصَّلَاةُ لِوَقْتِهَا وَبِرُّ الْوَالِدَيْنِ
সর্বাধিক উত্তম আমল হল সময়ের মধ্যে নামায আদায় করা এবং পিতা-মাতার সেবা করা।[62]

   জামাআতের সাথে নামায আদায় করা একজন মুসলিম ব্যক্তিকে নামাযে ভুল-ত্রুটি করা, অবহেলা করা, নামায পড়তে ভুলে যাওয়া এবং তার নির্ধারিত সময় থেকে বিলম্ব করা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত রাখে। অধিকাংশ লোক জামাআত থেকে বিরত থাকার কারণে নামাযই ছেড়ে দিয়েছে। এ কারণে আমাদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ যে, পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাআতের সাথে আদায় করা আমাদের জন্যে শরীয়তসম্মত করে দিয়েছেন।

যারা নামাযের নির্ধারিত সময় থেকে বিলম্ব করে নামায আদায় করে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে চরম ভীতি প্রদর্শন করেছেন।
 আল্লাহ তাআলা বলেন,
  فَوَيْلٌ لِلْمُصَلِّينَ - الَّذِينَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ- الَّذِينَ هُمْ يُرَاءُونَ - وَيَمْنَعُونَ الْمَاعُونَ
সুতরাং ধ্বংস সে নামায আদায়কারীদের জন্যে, যারা তাদের নামাযে অমনোযোগী। যারা লোক দেখানোর জন্যে তা’ করে এবং প্রয়োজনীয় গৃহসামগ্রী দানের ছোট খাট সাহায্য করা থেকেও বিরত থাকে।[63]
২৭) মাসজিদের আবাদকারীদের উপর আল্লাহ সন্তুষ্ট হন, তাদেরকে তাঁর নিকটবর্তী করেন এবং তাদেরকে সম্মানীত করেন 
   রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَا تَوَطَّنَ رَجُلٌ مُسْلِمٌ الْمَسَاجِدَ لِلصَّلَاةِ وَالذِّكْرِ إِلَّا تَبَشْبَشَ اللَّهُ لَهُ كَمَا يَتَبَشْبَشُ أَهْلُ الْغَائِبِ بِغَائِبِهِمْ إِذَا قَدِمَ عَلَيْهِمْ
কোন মুসলিম ব্যক্তি যখন নামায ও আল্লাহর যিকির করার উদ্দেশ্যে মাসজিদে অবস্থান করে তাতে আল্লাহ এত খুশি হন যেমন খুশি হয় পরিবারের কোন অনুপস্থিত লোক দেখে যখন সে তাদের কাছে আগমণ করে। [64] 
এ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বান্দা আল্লাহর নৈকট্যময় কাজ সম্পাদন করার দরুন আল্লাহ তাঁর বান্দাকে ভালবাসেন এবং নৈকট্যশীল করেন। 
২৮) অলসতা থেকে মুক্তি লাভ
    জামাআতের সাথে নামায আদায়ের একটি মহান উপকারিতা হল নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অভিশাপ থেকে মুক্তি  লাভ করা। যারা জামাআত থেকে পিছে থাকে তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেওয়ার জন্যে তিনি দুআ করেছেন। অপর দিকে জামাআতে নামায অলসতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি দান করে। সুনানে ইবনু মাজাতে আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা:) ও ইবনু ওমার (রা:) হতে বর্ণিত হয়েছে। তাঁরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে wg¤^‡ii উপর থেকে বলতে  শুনেছেন,
 لَيَنْتَهِيَنَّ أَقْوَامٌ عَنْ وَدْعِهِمْ الْجَمَاعَاتِ أَوْ لَيَخْتِمَنَّ اللَّهُ عَلَى قُلُوبِهِمْ ثُمَّ لَيَكُونُنَّ مِنْ الْغَافِلِينَ
কোন জাতি যখন জামাআত থেকে বিরত থাকবে তখন আল্লাহ তাদের অন্তরে মোহর মেরে দিবেন। অত:পর তারা গাফেলদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে।[65]
২৯) বরকতপূর্ণ দুআ ও যে দুআ ফেরত দেয়া হয় না
   আমাদের জীবনে বহু এমন এমন সময় রয়েছে যে সময়গুলোতে দুআ কবুল করা হয়। বরং এমনও সময় রয়েছে যে সময় দুআ করলে তা ফিরত দেয়া হয় না। যে সমস্ত মূল্যবান সময় ও সুযোগ আমরা আমাদের জীবন থেকে নষ্ট করে দেই তন্মধ্যে একটি মূল্যবান সময় হল, আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়।

   জীবনের এ মূল্যবান সময়গুলোকে সৎ কাজে ব্যয় করার একটি মহা সুযোগ হল জামাআতের সাথে নামায আদায় করা। যারা জামাআতের সাথে নামায পড়তে অভ্যস্থ তারা সাধারণত ইকামতের পূর্বেই মাসজিদে আসে এবং দুআ ও যিকিরে ব্যস্ত থাকে। আর যে একাকী নামায আদায় করে সে এ সমস্ত মূল্যবান সময়ের প্রতি লক্ষ্য করে না।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
    لَا يُرَدُّ الدُّعَاءُ بَيْنَ الْأَذَانِ وَالْإِقَامَةِ
আযান ও ইক্বামতের মধ্যবর্তী সময়ের দুআ ফেরত দেয়া হয় না।[66]

বরকতপূর্ণ দুআ সমূহের মধ্য হতে যেমন একজন মুসলিম ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করতে ও তা হতে বাহির হতে পাঠ করে থাকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
 إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمْ الْمَسْجِدَ فَلْيَقُلْ اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ وَإِذَا خَرَجَ فَلْيَقُلْ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ
যখন তোমাদের কেউ মাসজিদে প্রবেশ করবে তখন পাঠ করবে, আল্লাহুম্মাফ তাহ্‌লী আবওয়াবা রাহ্‌মাতিক।

হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্যে তোমার রহমতের দ্বার সমূহ খুলে দাও। আর যখন মাসজিদ থেকে বের হবে তখন পাঠ করবে আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাযলিক।

হে আল্লাহ! আমি তোমার অনুগ্রহ কামনা করছি।[67]
৩০) ভালবাসা, বন্ধুত্ব ও সমতার সৃষ্টি
   ইসলামের মহান উদ্দেশ্য হল মু’মিনদের অন্তরে ভালবাসা ও বন্ধুত্ব সৃষ্টি করা। তাদের মধ্যকার পরস্পরের ভালবাসা ও সমতা বজায় রাখা। আর এ গুলো কেবল জামাআতের সাথে নামায আদায় করার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। যখন ধনী-গরীব, ফকীর-মিসকীন, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ছোট-বড়, কালো-ধলো সকল প্রকার ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একই কাতারে সমানভাবে পাশাপাশি দন্ডায়মান হয়। তখন ইসলামী সাম্যের আদর্শ ফুটে উঠে এবং পরস্পরের সকল প্রকার ভেদাভেদ দূর হয়ে যায়। 

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাতার সোজা ও বরাবর করার উৎসাহ প্রদান করেছেন। কাতার গুলোকে আকাঁবাঁকা করতে নিষেধ করেছেন। কেননা কাতার বরাবর হওয়া    অন্তরসমূহ পরস্পরের সাথে মিলিত হওয়ার অন্যতম একটি কারণ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
وَلاَ تَخْتَلِفُوا فَتَخْتَلِفَ قُلُوبُكُمْ
তোমরা পরস্পরে মতভেদ কর না, তবে তোমাদের অন্তরসমূহ মতভেদে লিপ্ত হবে।[68]
৩১) সুন্নাতে মুয়াক্কাদা (রাতেবা) এর প্রতি যত্নবান হওয়া ও যিকির সমূহ
   জামাআ’তের সাথে নামায আদায় করার একটি অন্যতম উপকারিতা হল, একজন মুসলিম ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা (রাতেবা) পূর্ণরূপে আদায় করতে প্রয়াস পায় ও যিকির করার প্রতি পূর্ণ যত্নবান হয়। আর তা মাসজিদ সমূহে স্পষ্টরূপে লক্ষ্য করা যায়। অথচ যে একাকী নামায আদায় করে সে উল্লেখিত এ সমস্ত বিষয়ের প্রতি অবহেলা করে থাকে। যার  কারণে সে মহান প্রতিদান ও প্রচুর ছোয়াব থেকে বঞ্চিত হয়।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يُصَلِّي لِلَّهِ كُلَّ يَوْمٍ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً تَطَوُّعًا غَيْرَ فَرِيضَةٍ إِلَّا بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ أَوْ إِلَّا بُنِيَ لَهُ بَيْتٌ فِي الْجَنَّةِ
কোন মুসলিম ব্যক্তি প্রত্যেহ দিনে-রাতে ফরয ব্যতীত বারো রাকাআত নফল নামায আদায় করলে আল্লাহ তার জন্যে জান্নাতে একটি ঘর তৈরী করবেন অথবা বলেছেন তার জন্যে জান্নাতে একটি ঘর তৈরী করা হবে। এ বারো রাকাআত সালাত হলঃ যোহরের আগে চার এবং পরে দুই, মাগরিরের পরে দুই, ইশার পরে দুই এবং ফজরের আগে দুই রাকাআত।[69]
৩২) নামাযের বিধি-বিধান সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা
    জামাআ’তের সাথে নামায আদায় করার একটি মহান উপকারিতা হল, নামাযের পদ্ধতি ও নিয়ম-কানুন জানার সুবর্ণ সুযোগ লাভ করা। আর তা নামাযে মুসল্লিদের পরস্পরের সাক্ষাতের মাধ্যমে বা মাসজিদে কোন আলোচনা শুনার মাধ্যমে বা মাসজিদে রাখা এ সম্পর্কীয় কোন লিফলেট অধ্যায়নের মাধ্যমে সম্ভবপর হয়। এমনি ভাবে জামাআতে নামায বিশুদ্ধ ক্বেরাআত ও তাজবীদের নিয়ম-পদ্ধতি জানার ব্যাপারেও সুন্দর একটি সুযোগ। আর তা নামাযে ইমামের ক্বেরাআত শ্রবণ করার মাধ্যমেই হয়ে থাকে। কিন্তু যে একাকী নামায আদায় করে এ সকল প্রকার কোন জিনিষই তার অর্জিত হয় না।
৩৩) শৃংখল জীবন-যাপন ও আত্মশুদ্ধ
   জামাআ’তে নামায আদায় করার একটি অন্যতম উপকারিতা হল, শৃংখলাপূর্ণ জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হওয়ার সাথে সাথে আত্মনিয়ন্ত্রন করার শিক্ষা লাভ করা। আর তা নামাযে ইমামের সাথে তার তাকবীর ও নামাযের অন্যান্য কার্যক্রমে অনুসরণ করার মাধ্যমে হয়ে থাকে। আবার কোন সময় তার থেকে আগে না বাড়া বা পিছে না পড়া বা সমান হওয়া বা প্রতিযোগিতার দ্বারা হয়ে থাকে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইমামের অনুসরণ করার ব্যাপারে অতীব গুরুত্বতার দৃষ্টি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,
 إِنَّمَا جُعِلَ الْإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ فَلَا تَخْتَلِفُوا عَلَيْهِ فَإِذَا رَكَعَ فَارْكَعُوا وَإِذَا قَالَ سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ فَقُولُوا رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ وَإِذَا سَجَدَ فَاسْجُدُوا وَإِذَا صَلَّى جَالِسًا فَصَلُّوا جُلُوسًا أَجْمَعُونَ وَأَقِيمُوا الصَّفَّ فِي الصَّلَاةِ فَإِنَّ إِقَامَةَ الصَّفِّ مِنْ حُسْنِ الصَّلَاةِ
নামাযে ইমাম নির্ধারণ করা হয়েছে তাকে অনুসরণ করার জন্যে। অতএব তোমরা তার ব্যতিক্রম করবে না ইমাম রুকু করলে তোমারও তার সাথে রুকু করবে। সে সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ্‌ বললে তোমরা বলবে রব্বানা লাকাল হামদ্‌। সে যখন সেজদাহ্‌ করবে তোমরাও তার সাথে সেজদাহ্‌ করবে। সে বসে নামায পড়লে তোমরা সকলেই তার সাথে বসে নামায আদায় করবে। আর তোমরা নামাযে কাতার সোজা করবে। কেননা কাতার সোজা করা হল নামাযের সৌন্দর্য।[70]
৩৪) মুসলমানদের মর্যাদার বহিঃপ্রকাশ, মুনাফেক ও  নাস্তিকদের ক্ষোভ প্রকাশ
   রাত-দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জন্যে জামাআতে সমবেত হওয়ার মাধ্যমে মুসলমানদের মর্যাদার বহি:প্রকাশ ঘটে। তাদের দল বৃদ্ধি পায়। এতে মুসলমানদের শত্রু কাফের ও মুনাফেকদের ক্রোধের কারণ ঘটে।
৩৫) বাহ্যিকরূপ ও অবস্থার সৌন্দর্য প্রকাশ
    জামাআ'তে নামাযের একটি মহান উপকারিতা হল, সাধারণতঃ একজন মুসলিম ব্যক্তিকে তার বাহ্যিকরূপ ও তার অবস্থা সুন্দর করে তুলে। পোষাক-পরিচ্ছদে পরিস্কার থাকা ও সুগন্ধি ব্যবহার করার প্রতি সুনজর রাখা। কেননা রাত-দিনে সবাই জমায়েত হয় ও পরস্পরের সাথে সাক্ষাত করে থাকে, যা তাকে এ সকল বিষয়ের প্রতি সুনজর রাখতে বাধ্য করে।

কিন্তু যারা একাকী নামায আদায় করে তারা এ সকল বিষয় থেকে সম্পূর্ণ দূরে অবস্থান করে এবং আল্লাহ তাআলার নিন্মোক্ত বাণীর বিপরিত আমল করে থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا بَنِي آَدَمَ خُذُوا زِينَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَكُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ
হে আদম সন্তান! তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় সুন্দর পোষাক-পরিচ্ছদ গ্রহণ কর, খাও এবং পান কর, তবে তাতে অপব্যয় করবে না। কেননা আল্লাহ অপব্যয়কারীদের ভালবাসেন না। [71]

   ইমাম শাওকানী (রহ:) বলেছেন, ‘উল্লেখিত আয়াত সকল আদম সন্তানকে লক্ষ্য করে নাযিল করা হয়েছে। যদিও আয়াতটি বিশেষ কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাযিল হয়েছে কিন্তু তা সকলের ক্ষেত্রে ব্যাপকতার দাবী রাখে। কেননা বিশেষ কোন ঘটনাকে লক্ষ্য বস্তু করে আমল করা যাবে না বরং আয়াতের ব্যাপক অর্থের প্রতি লক্ষ্য রেখে আমল করতে হবে।’

আয়াতে উল্লেখিত যিনাত শব্দের অর্থ হল, মানুষ পোষাক-পরিচ্ছদের ব্যাপারে যে ধরণের সৌন্দর্য করে থাকে। মাসজিদে গমণ করার সময় এবং কাবা গৃহ তওয়াফ করার সময় সৌন্দর্য প্রকাশ করতে আদেশ দেয়া হয়েছে।[72]

৩৬) মুসলমানদের পরস্পরের মাঝে পরিচয় লেন-দেন এবং তাদের মিলিত হওয়ার কেন্দ্রস্থল  
     জামাআ'তে নামাযের একটি মহান উপকারিতা হল, রাত-দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে মাসজিদে আসা-যাওয়া, মাসজিদে প্রবেশ করা এবং বাহির হওয়ার সময় পরস্পরের মাঝে দেখা-সাক্ষাতে ভালবাসা ও বন্ধুত্ব তৈরী হওয়ার একটি সুবর্ণ সুযোগ।

   এমনিভাবে কোন মুছল্লি নামাযে অনুপস্থিত হলে একে অপরের খোঁজ-খবর নেওয়ারও একটি সুযোগ হয়। আবার তাদের অবস্থা, পরিস্থিতি ও সমস্যা সম্পর্কে জানতে পারা যায়। আর এ ভাবে অসুস্থ ব্যক্তির সাথে দেখা-সাক্ষাত, অভাবী ব্যক্তিদের সাহায্য-সহযোগিতা এবং দুস্থ-গরীবদের সাহায্য করা হয় এবং এ বিষয়গুলো মুসলমানদের মাঝে ভালবাসা ও গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলে।

৩৭) সৎ কাজের মাধ্যমে কল্যাণের প্রতি আহবান ও আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা
   জামাআ'তের সাথে নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে মাসজিদে গমণ করা হল এ প্রকার ইবাদতের প্রতি আহবান করা ও তা হেফাযত করার একটি মাধ্যম। এমনিভাবে জামাআতের একটি মহান উপকারিতা হল, মানুষ খাঁটিভাবে ও একনিষ্ঠতার সাথে আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের প্রতি প্রতিযোগিতা করে থাকে। যখন কোন মুসল্লি তার অন্য মুসল্লি ভাইকে লক্ষ্য করে তখন সেও অধিকরূপে কল্যাণমূলক কার্য সম্পাদন করার লক্ষ্যে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়, যা তাকে আল্লাহর নিকট অধিক নৈকট্যশীল করে তুলে। যেমন, নামাযে আগে আগে আসা, সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আদায় করা, নামাযের পর যিকির-আযকার ও দুআ করা, সকাল-সন্ধ্যায় দুআ পাঠ করা ইত্যাদি। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ভাল কাজে প্রতিযোগিতা করতে আদেশ করেছেন, যা আমাদেরকে তাঁর নৈকট্যশীল করবে এবং জান্নাতে পৌঁছাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
  وَفِي ذَلِكَ فَلْيَتَنَافَسِ الْمُتَنَافِسُون
আর এ বিষয়ে প্রতিযোগিদের প্রতিযোগিতা করা উচিত। [73]
৩৮) ব্যক্তিত্ববোধ বজায়
   জামাআ'তের সাথে নামায আদায় করা হল ব্যক্তিত্ববোধ বজায় রাখার একটি মাধ্যম। সালাফে সালেহীনদের কেউ কেউ বলেছেন, জামাআতে নামায হেফাযত করা এবং মাসজিদের সাথে সম্পর্ক অটুট রাখা হল ব্যক্তিত্ববোধের পরিচয়। [74]

আর যে ব্যক্তি জামাআত বাদ দিয়ে একাকী নামায আদায় করে সে ব্যক্তিত্ববোধের ছেদনকারী। উল্লেখযোগ্য কথা হল, যে এ বন্ধন খণ্ডন করে তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না।

ইমাম আহমাদ বিন হাব্বল (রহ:) বলেছেন, যে ব্যক্তি সম্পর্কে জানা যাবে যে, সে জামাআতে নামায আদা করা হতে পিছে থাকে, তার সম্পর্কে বলা হবে সে খারাপ।[75]
৯) যুদ্ধের ময়দানে কাতারবদ্ধ হয়ে দণ্ডায়মান হওয়ার অনুভব করা
   আল্লামা শাইখ মুহাম্মদ বিন ছালেহ আল-উসাইমীন (রহ:) বলেছেন, জামাআতে নামাযের একটি মহান উপকারিতা হল, এ অনুভব করা যে, সে জামাআতে উপস্থিত এবং যুদ্ধের ময়দানে কাতারবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান আছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِهِ صَفّاً كَأَنَّهُمْ بُنْيَانٌ مَرْصُوصٌ
‘‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর পথে যুব্ধ করে সারিবদ্ধভাবে শীশাঢালা প্রাচীরের মত, আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন।[76]

এ সমস্ত লোক যারা যুদ্ধের ময়দানে সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান, নি:সন্দেহে তারা যদি এভাবে দন্ডায়মান হওয়াকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে অভ্যাস করত তবে তা যুদ্ধের কাতারেও নেতার আদেশ পালনে পূর্ণ সহায়ক হত যা কমান্ডারের নির্দেশ অনুসরণে কোন প্রকার ত্রুটি হবে না।[77]
৪০) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবীদের অবস্থানে থাকার অনুভূতি রাখা
   আল্লামা শাইখ মুহাম্মদ বিন ছালেহ আল ওসাইমীন (রহ:) বলেছেন, জামাআতে নামাযের একটি মহান উপকারিতা হল, তাতে উপলব্ধি করা যে, শেষ যামানার উম্মত পূর্ব যামানার উম্মতের (সাহাবীদের) অবস্থানে অবস্থান করছে। অর্থাৎ ইমাম যেন ইমামতির ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্থানে অবস্থান করছে। আর মুছল্লীগণ যেন জামাআতের ক্ষেত্রে ইমামের পিছনে সাহাবীদের স্থানে অবস্থানে করছে।

   নি:সন্দেহে শেষ যামানার উম্মত সালাফে সালেহীনদের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া মুসলিম উম্মাহকে সালাফে সালেহীনদের নির্দেশীত পথের অনুসরণ-অনুকরণ করার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে। আমরা যখনই শরীয়ত সম্মত কোন কাজ সম্পাদন করি তখন এ কথা উপলদ্ধি করি যেন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবীদের অনুসরণ করি। এতে নিঃসন্দেহে মানুষ সালাফে সালেহীনের কাতারে শরীক হওয়ার জন্য মনের মধ্যে গভীর প্রেরণা অনুভব করে। ফলে সে আকীদা, আমল, চরিত্র এবং আদর্শগতভাবে খাঁটি সালাফিতে পরিণত হয়।
পরিশিষ্টঃ পরিশেষে মহান রাব্বুল আলামীনের প্রশংসা করছি যার নেআমতের মাধ্যমে সকল প্রকার ভাল আমল পূর্ণ হয়। অত:পর জামাআতে নামায আদায় করা সম্পর্কে  উল্লেখিত মর্যাদা, ফযীলত ও উপকারিতা ইত্যাদি যার ফযীলত সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহ তাআলাই অধিক অবগত আছেন, এগুলো বর্ণনা করার পর কুরআন ও হাদীসের দৃষ্টিকোন থেকে আমাদের কাছে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে, ইসলামে জামাআতে নামাযের গুরুত্ব অপরিসীম ও ইহার মর্যাদাও সুমহান।
সম্মানীত পাঠকবৃন্দ! আপনাদের খেদমতে নিম্নে সাহাবা ও মুসলিম ওলামাদের কিছু উক্তি উপস্থাপন করছি, যা আমাদেরকে জামাআতে নামায আদায়ের হুকুম সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা দিবে।
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ ও আবূ মূসা আল আশয়ারী (রা:) হতে বর্ণিত, তারা উভয়েই বলেন, যে আযান শুনে বিনা ওযরে নামাযের জন্যে মাসজিদে আসবে না তার নামায হবে না।
আলী (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আযান শুনার পর বিনা ওযরে মাসজিদে আসবে না তার নামায মাথার উপর উঠবে না।
আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি  আযান শুনে তার জবাব দিবে না অর্থাৎ নামাযের উদ্দেশ্যে মাসজিদে আসবে না সে নিজে তো কল্যাণ চাইল না, তার জন্যে কল্যাণ প্রত্যাশাও করা যায় না।
আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, শাস্তি ¯^iƒc আদম সন্তানের দু কান শিসা দ্বারা পূর্ণ করা উত্তম, যে নামাযের জন্যে আহবানকারীর আহবান শ্রবণ করা সত্বেও মাসজিদে আসে না।
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত, তাঁকে সে ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল যে দিনে রোযা রাখে এবং রাতে তাহাজ্জুদ নামায পড়ে কিন্তু জামাআত ও জুমার নামাযে উপস্থিত হয় না। তিনি বললেন, সে জাহান্নামী।
আতা (রহ:) বলেন, গ্রামে হোক বা শহরে হোক আল্লাহর সৃষ্টি জীববের মধ্যে কারো জন্য আযান শ্রবন করার পর নামায ছেড়ে দেয়ার কোন সুযোগ নাই।

আওযায়ী (রহ:) বলেন, নামাযের জন্যে আযান শ্রবণ করুক বা না করুক জামাআত ও জুমা ছেড়ে দিয়ে পিতা-মাতার খেদমত করা বৈধ নয়।[78]
ইমাম বুখারী (রহ:) তাঁর সহীহ বুখারীতে জামাআতে নামায পড়া ফরজ হওয়া সম্পর্কে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করেছেন।
হানাফী ও মালেকী মাযহাবের মতে, জামাআতে নামায পড়া হল সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। কিন্তু তাদের মতে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ছেড়ে দিলে গুনাহগার হয় এবং ইহা ছাড়া নামায বিশুদ্ধ হবে। উপরোক্ত মত এবং যারা বলেন জামাআতে নামায আদায় করা ফরজ তাদের মধ্যে মতবিরোধ হল শুধু শব্দগত। কিন্তু উভয় পক্ষের উদ্দেশ্য একই। আবার কেউ সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে, তা ফরজ। অর্থাৎ জামাআতের সাথেই আদায় করা ফরজ।[79]
হানাফী মাযহাব অনুসারী বিশিষ্ট আলেম আলাউদ্দিন আস-সামারকান্দি বলেছেন, জামাআতের সাথে নামায আদায় করা হল ফরজ। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে কেউ কেউ ইহাকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বলেছেন, কিন্তু আসল কথা একই। অর্থাৎ তা জামাআতের সাথে পড়া ফরজ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করা হয়েছে, তিনি জামাআতের সাথে নামায আদায় করা সকল সময় হেফাযত করেছেন। এমনিভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুগ থেকে আজ পর্যন্ত সকলেই উহা ফরজ হিসেবে জেনে আসছে। যারা তা ছেড়ে দিয়েছে তাদেরকে তারা খারাপ ভেবে আসছে।[80]
ইমাম শাফেয়ী (রহ:) বলেছেন, যারা মাসজিদে এসে জামাআতের সাথে নামায আদায় করতে সক্ষম, অথচ বিনা কারণে আসে না তাদের না আসার ব্যাপারে শরীয়তে কোন অনুমতি আছে বলে আমি মনে করি না।[81]
ইমাম নববী (রহ:) বলেছেন, জামাআতের সাথে নামায আদায় করা বিশুদ্ধ ও মাশহুর হাদীস ও মুসলিম উম্মাহর ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। এ ব্যাপারে আমাদের আলেমদের পক্ষ থেকে তিনটি অভিমত পাওয়া যায়। 
(১) কেউ বলেছেন, তা ফরযে কেফায়া 
(২) কেউ বলেছেন, ইহা সুন্নত। 
(৩) আবার কেউ কেউ বলেছেন, ইহা সকলের জন্যে ফরজ, কিন্তু নামায বিশুদ্ধ হওয়ার জন্যে শর্ত নয়। 
ইমাম নববী (রহ:) বলেন, তৃতীয় মতটি আমাদের মাযহাবের হাদীস ও ফিকহ্‌ বিষয়ক সুযোগ্য দুই বিজ্ঞ আলেম ব্যক্ত করেছেন, তারা হলেন, আবু বকর বিন খুযায়মা ও ইবনুল মুনযির (রহ:)। তবে রাফেয়ী উল্লেখ করেছেন, উক্ত মতটি ইমাম শাফেয়ী (রহ:) এর।
ইমাম আহমাদ বিন nv¤^j (রহ:) এর মতে, জামাআতে নামায পড়া সকলের উপর ফরজ। এর পরিত্যাগকারী গুনাহগার হবে। কিন্তু নামায বিশুদ্ধ হওয়ার জন্যে জামাআতে নামায আদায় করা শর্ত নয়। ইমাম আহমাদ বিন nv¤^j এর অন্য বর্ণনায় এসেছে, নামায বিশুদ্ধ হওয়ার জন্যে জামাআতের সাথে নামায আদায় করা শর্ত।
মারদাবী তাঁর ইনসাফ গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখ করেছেন, বিনা শর্তে পুরুষের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাআতের সাথে আদায় করা ফরজ। আর এটাই সঠিক মাযহাব, এতে কোন প্রকার সন্দেহের অবকাশ নেই। এ মতই অধিকাংশ আলেম-ওলামাদের এবং তাঁরা এ বিষয়ে দলীল-প্রমাণ উল্লেখ করেছেন।[82]
আল্লামা শাইখুল ইসলাম ইব্‌নু তাইমিয়া (রহ:) বলেছেন, জামাআতের সাথে নামায আদায় করা সমস্ত মুসলমানদের মতে দ্বীনের অতী গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহের একটি বিষয়। ইহা সকল শ্রেণীর মুসলমানের উপর ফরজ। এ মত প্রকাশ করেছেন অধিকাংশ সালাফে সালেহীন এবং হাদীসের ইমামগণ যেমন, ইমাম আহমাদ বিন nv¤^j, ইসহাক এবং শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী  কিছু সংখ্যক ব্যক্তিবর্গ প্রমূখ। শাফেয়ী gZvj¤^x কিছু লোক ও অন্যদের কাছে ইহা ফরজে কেফায়া। এ মতই শাফেয়ী gZvj¤^x‡`i কাছে প্রাধান্যপ্রাপ্ত। 
সর্বদা জামাআতে নামায পরিত্যাগকারী অত্যন্ত খারাপ লোক, তাকে খারাপই ভাবতে হবে। এ বিষয় তাকে শাস্তির ভয় দেখাতে হবে বরং শাস্তি প্রদান করতে হবে এবং তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না। যদিও বলা হয় জামাআতে নামায আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।
 আল্লামা শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রহ:) বলেছেন, যে এ বিশ্বাস করবে যে, মাসজিদে এসে মুসলমানের সাথে জামাআতের সাথে নামায আদায় করার চেয়ে বাড়ীতে নামায় আদায় করা উত্তম, সে মুসলমানদের ঐক্যমতে পথভ্রষ্ট ও বিদআতী। জামাআতের সাথে নামায আদায় করা সকলের উপর ফরজ অথবা ফরজে কেফায়া। কুরআন ও সুন্নাহর দলীলের ভিত্তিতে ইহা সকল শ্রেণীর মানুষের উপর ফরজ।
যারা জামাআতে নামায আদায় করা ফরজ না বলে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বলেছেন তারাও ইহাকে একে বারে ছেড়ে দেয়াকে দোষের কারণ মনে করেছেন। এমনকি যারা জামাআতে নামায ব্যতীত ছোট ছো্‌ট সুন্নতকেও সর্বদা ছেড়ে দেয় তাদের মতে এ প্রকার লোকদের ন্যায়পরায়ণতার বিলুপ্তি ঘটে এবং (ইসলামী আদালতে) তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা যাবে না। তাই যদি হয় ছোট ছোট সুন্নত ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে তবে যারা জামাআতের সাথে নামায আদায় করা ফরজকে ছেড়ে দেয় তাদের কী অবস্থা? মুসলমানদের ঐক্যমতে তাদেরকে নামাযের জন্যে আদেশ দিতে হবে এবং তাদেরকে নিন্দা করতে হবে। তারা কোন বিষয় ফায়সালা করতে পারবে না, তাদের পক্ষ থেকে কোন প্রকার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না এবং তারা ফাতাওয়াও দিতে পারবে না যদি নিয়মিতভাবে সুন্নাতে মুয়াক্‌কাদা পরিত্যাগ করে। সুন্নাতে মুয়াক্‌কাদা ছেড়ে দিলে যদি তার এ হুকুম হয় তবে যেটা ইসলামের অন্যতম প্রতিক তথা জামাআতের সাথে নামায পরিত্যাগ করলে তার কী বিধান হতে পারে?[83]
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম (রহ:) বলেন, যে ব্যক্তি হাদীসের দলীল সঠিক ভাবে গবেষণা করবে তার কাছে এটাই সুস্পষ্ট হবে যে, মাসজিদে এসে নামায আদায় করা সকলের উপর ফরজ। কিন্তু কারণ পাওয়া গেলে জুমআ ও জামাআত ছাড়া যেতে পারে। বিনা কারণে মাসজিদে আসা ছেড়ে দেয়া মূল জামাআত ছেড়ে দেয়ারই নামান্তর। আর এ বিষয়ই হাদীসসমূহ ও সালাফে সালেহীনদের উক্তি সমর্থন করে।
আল্লামা ইব্‌নু তাইমিয়া (রহঃ) আরও বলেন, আমরা যারা আল্লাহর দ্বীনকে মানি তারা এটাই মনে করি যে, বিনা কারণে মাসজিদের জামাআতে শরীক না হয়ে পিছে থাকা কোন ব্যক্তির জন্যে বৈধ নয়। আল্লাহ এ বিষয়ে অধিক ভাল জানেন।[84]

    সৌদী আরবের বিজ্ঞ ওলামা পরিষদ ও দারুল ইফতা বোর্ড থেকে এ ফতোয়া এসেছে যে, প্রাপ্ত বয়স্ক সকল পুরুষের জন্যে মাসজিদে এসে জামাআতের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আাদায় করা ফরজ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সকল ফরজ নামাযসমূহ যারা বিনা কারণে মাসজিদে এসে জামাআতের সাথে আদায় করবে না তারা গুনাহগার। দলীল হল, রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
      مَنْ سَمِعَ النِّدَاءَ فَلَمْ يَأْتِهِ فَلَا صَلَاةَ لَهُ إِلَّا مِنْ عُذْرٍ
‘‘যে ব্যক্তি আযান শুনে বিনা কারণে মাসজিদে আসবে না তার নামায হবে না।[85]

ইবনু আব্বাস (রা:) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে যে, হাদীসে উল্লেখিত ‘কারণ’ বলতে কী বুঝায়? তিনি বলেছেন, তা হল ভয় অথবা অসুস্থতা।[86]
উপরোল্লেখিত কুরআন, হাদীস, সাহাবা, সালাফে সালেহীন ও ওলামাদের উক্তি সমূহ আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট ভাবে এটাই প্রমাণিত হল যে, মাসজিদে এসে জামাআতবদ্ধ হয়ে নামায আদায় করা সকল মানুষের উপর ফরজ। তবে তা নামায বিশুদ্ধ হওয়ার জন্যে শর্ত নয়। যে কারণ ছাড়া তা থেকে দূরে থাকবে সে গুনাহগার এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য।
এমনিভাবে ওলামাদের আলোচনা দ্বারা আরও প্রতিয়মান হয় যে, যদিও তাদের মধ্যে জামাআতের সাথে নামায আদায়ে নামকরণের ব্যাপারে বাক্যের ভিন্নতা দেখা দিয়েছে, কেউ বলেছেন তা ফরজ, কেউ বলেছেন তা ফরজে কেফায়া, আবার কেউ বলেছেন তা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। কিন্তু সকলেই এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, যারা জামাআতে নামায পড়া ছেড়ে দিবে তারা গুনাহগার। আর ওলামাগণ বিশেষঃ মতবিরোধ করেছেন কেবল বাহ্যিক অর্থে। সুতরাং কেউ যেন তাদের এ মতানৈক্যকে সুুযোগ মনে করে দলীল হিসেবে ব্যবহার করে এ মহান ইবাদত থেকে পিছে না থাকে।
   আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাদেরকে নামায প্রতিষ্ঠাকারী, যাকাত আদায়কারী ও রুকুকারীদের অন্তর্ভূক্ত করেন। সেই সাথে আমাদের, আমাদের পিতা-মাতা, আমাদের ওস্তাদ ও সকল মুসলমানদের ক্ষমা করেন।
একটি শিক্ষনীয় ঘটনাঃ

ঘটনাটি হল পূর্ব যুগের কোন একজন মনিষীর, সে ছিল ইবাদতে অগ্রগামী। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে পূর্ণ পাবন্দী। যথারীতি পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাআতের সাথে আদায় করত। কোন একদিন তার বাড়িতে মেহমানের আগমন ঘটে। তাদের খেদমত আঞ্জাম দিতে যেয়ে জামাআত ছুটে যায়। সে ব্যক্তি তাতে অনুতপ্ত হয় এবং যথারিতী ঐ ছুটে যাওয়া নামাযকে সাতাইশবার আদায় করে। কারণ জামাআতে নামায পড়া হল একাকী নামায আদায় করার চেয়ে সাতাইশগুণ ছোয়াব বেশী। তাই সে ঐ ছুটে যাওয়া নামাযকে সাতাইশবার আদায় করে। একদা সে ব্যক্তি ঘূমিয়ে থাকলে সপ্নে দেখতে পেল যে, একদল অশ্বারোহী বাহিনী তড়িত গতিতে ছুটে চলছে, তিনিও অশ্বে আরোহণ করে তাদের পিছু নিলেন। তিনি যতই দ্রুত তাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন তারাও তার চেয়ে বেশী দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। পরিশেষে তারা তাকে লক্ষ্য করে বললেন যে, তুমি যতই আমাদের সঙ্গ লাভ করতে চেষ্টা কর, তোমার পক্ষে আমাদের সঙ্গ লাভ করা সম্ভব নয়।

সম্মানীত ভাই ও বন্ধুগণ! উপরোক্ত ঘটনা থেকে প্রমাণিত হল যে, আসল জামাআত থেকে পিছে থেকে যতই চেষ্টা করুন না কেন কোন অবস্থাতেই তার মর্যাদা লাভ করা সম্ভব নয়। অতএব আসুন আমরা জামাআতের সাথে নামায আদায় করতে সচেষ্ট হই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তার ভাগী হই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুন।         
নামাযের ফযীলতে ২৫টি সুসংবাদ

১) নামায হল সর্বোত্তম আমল
রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে প্রশ্ন করা হল,
أَىُّ الأَعْمَالِ  أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ قَالَ الصَّلاَةُ عَلَى وَقْتِهَا
কোন আমলটি সর্বোত্তম? তিনি বললেন, সময়মত সালাত আদায় করা।[87]

২) নামায বান্দা এবং প্রভুর মাঝে সম্পর্কের মাধ্যম
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إِذَا كَانَ أَحَدُكُمْ فِى الصَّلاَةِ فَإِنَّهُ يُنَاجِى رَبَّهُ
তোমাদের কেউ যখন সালাত আদায় করে, তখন সে তার পালনকর্তার সাথে গোপনে কথা বলে।[88] 

৩) নামায দ্বীনের খুঁটি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
رَأْسُ الأَمْرِ الإِسْلاَمُ وَعَمُودُهُ الصَّلاَةُ وَذِرْوَةُ سَنَامِهِ الْجِهَادُ
সবকিছুর মূল হচ্ছে ইসলাম। আর ইসলামের মূল স্তম্ভ হচ্ছে সালাত এবং ইসলামের সর্বোচ্চ চূড়া হচ্ছে জিহাদ।[89]

৪) সালাত হচ্ছে আলোকবর্তিকা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
وَالصَّلاَةُ نُورٌ
সালাত হচ্ছে (কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য) নূর বা আলোকবর্তিকা।[90]

৫) সালাত হচ্ছে মুনাফেকী থেকে মুক্তি লাভের মাধ্যম
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لَيْسَ صَلاَةٌ أَثْقَلَ عَلَى الْمُنَافِقِينَ مِنَ الْفَجْرِ وَالْعِشَاءِ ، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِيهِمَا لأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا
মুনাফেকদের উপর ফজর ও ইশা নামাযের চেয়ে অধিক ভারী কোন নামায নেই। তারা যদি জানত এ নামাযের মধ্যে কত ছোয়াব রয়েছে, তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে উপস্থিত হত। [91]
৬) সালাত জাহান্নাম হতে মুক্তির গ্যারান্টি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لَنْ يَلِجَ النَّارَ أَحَدٌ صَلَّى قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا
কখনই জাহান্নামে প্রবেশ করবে না এমন ব্যক্তি যে, সূর্যোদয়ের পূর্বে সালাত আদায় করেছে এবং সূর্যাস্তের পূর্বে  সালাত আদায় করেছে। অর্থাৎ- ফজর ও আসর সালাত।[92]

৭) নিশ্চয় সালাত মানুষকে অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখে 
আল্লাহ তাআলা বলেন,
 اتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَأَقِمِ الصَّلَاةَ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ
কুরআনের যা আপনার কাছে ওহী করা হয়েছে তা পাঠ করুন এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করুন। নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও গর্হিত বিষয় থেকে বিরত রাখে। [93]

৮) সালাত সকল কাজে সাহায্য লাভের মাধ্যম
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ
তোমরা ধৈর্য এবং সালাতের মাধ্যমে (আল্লাহর তাআলার কাছে) সাহায্য প্রার্থনা কর।[94]

৯) একাকী সালাত আদায় করার চেয়ে জামাআতে আদায় করা অনেক উত্তম
রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
صَلاَةُ الْجَمَاعَةِ تَفْضُلُ صَلاَةَ الْفَذِّ بِخَمْسٍ وَعِشْرِينَ دَرَجَةً
একাকী সালাত আদায় করার চেয়ে জামাআতের সাথে সালাত আদায় করা পঁচিশ গুণ বেশী মর্যাদা সম্পন্ন।[95]

১০) ফেরেশতাগণ মুছল্লীদের জন্য মাগফেরাত ও রহমতের দুআ করেন
রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ أَحَدَكُمْ فِى صَلاَةٍ مَا دَامَتِ الصَّلاَةُ تَحْبِسُهُ ، وَالْمَلاَئِكَةُ تَقُولُ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ . مَا لَمْ يَقُمْ مِنْ صَلاَتِهِ أَوْ يُحْدِثْ
তোমাদের কোন ব্যক্তি সালাত আদায় করার পর যতক্ষণ ¯^xq স্থানে (জায়নামাজে) বসে থাকে ততক্ষণ অযু ভঙ্গ না হওয়া পর্যন্ত ফেরেশতাগণ মুছল্লীদের জন্য দুআ করে থাকেন। বলেন, হে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন, তাকে রহম করুন।[96]
১১) সালাত গুনাহ মাফের মাধ্যম
 রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ تَوَضَّأَ لِلصَّلاَةِ فَأَسْبَغَ الْوُضُوءَ ثُمَّ مَشَى إِلَى الصَّلاَةِ الْمَكْتُوبَةِ فَصَلاَّهَا مَعَ النَّاسِ أَوْ مَعَ الْجَمَاعَةِ أَوْ فِى الْمَسْجِدِ غَفَرَ اللَّهُ لَهُ ذُنُوبَهُ
যে ব্যক্তি সালাতের জন্য অযু করবে এবং অযু পরিপূর্ণরূপে সম্পাদন করবে, তারপর ফরয নামায আদায় করার জন্য পথ চলবে;অতঃপর তা মানুষের সাথে জামাআতে বা মসজিদে আদায় করবে, তাহলে আল্লাহ তার গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দিবেন।[97]

১২) সালাতের মাধ্যমে শরীর থেকে গুনাহগুলো বের হয়ে যায়
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَنَّ نَهْرًا بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ مِنْهُ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسَ مَرَّاتٍ هَلْ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَىْءٌ  قَالُوا لاَ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَىْءٌ  قَالَ  فَذَلِكَ مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ يَمْحُو اللَّهُ بِهِنَّ الْخَطَايَا
তোমরা কি মনে কর, তোমাদের কারো ঘরের সামনে যদি একটি নদী প্রবাহিত থাকে এবং প্রতিদিন সে উহাতে পাঁচবার গোসল করে, তবে তার শরীরে কোন ময়লা থাকবে কি? তাঁরা (সাহাবাগণ) বললেন: কোন ময়লাই বাকী থাকতে পারে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: এরূপ উদাহরণ হল পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের ক্ষেত্রেও। এভাবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা নামাযীর যাবতীয় (ছোট) পাপগুলো মোচন করে দেন।[98]

১৩) সালাতের জন্য মসজিদে গমন করলে এক পদে পাপ মোচন হয় এবং অন্য পদে মর্যাদা বৃদ্ধি পায়
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ تَطَهَّرَ فِى بَيْتِهِ ثُمَّ مَشَى إِلَى بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِ اللَّهِ لِيَقْضِىَ فَرِيضَةً مِنْ فَرَائِضِ اللَّهِ كَانَتْ خَطْوَتَاهُ إِحْدَاهُمَا تَحُطُّ خَطِيئَةً وَالأُخْرَى تَرْفَعُ دَرَجَةً
যে ব্যক্তি নিজ গৃহে অযুর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করে, তারপর আল্লাহর কোন ঘরে (মসজিদে) যায় আল্লাহ তাআলার কোন একটি ফরজ সালাত আদায় করার জন্য, তবে তার প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে একটি পদে একটি পাপ মোচন করা হয় এবং অন্য পদে একটি মর্যাদা উন্নীত হয়।[99]
১৪) আগেভাগে সালাতে আসার মর্যাদা
রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِى النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الأَوَّلِ ثُمَّ لَمْ يَجِدُوا إِلاَّ أَنْ يَسْتَهِمُوا عَلَيْهِ لاَسْتَهَمُوا وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِى التَّهْجِيرِ لاَسْتَبَقُوا إِلَيْهِ وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِى الْعَتَمَةِ وَالصُّبْحِ لأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا
মানুষ যদি জানত আজান দেয়া এবং প্রথম কাতারে সালাত আদায় করার মধ্যে কি ছোয়াব নিহিত আছে, তাহলে (কে আজান দিবে বা কে প্রথম কাতারে সালাত আদায় করবে তা নির্ধারণ করার জন্য) তারা পরস্পর লটারি করতে বাধ্য হত। তারা যদি জানত আগেভাগে সালাতে আসাতে কি প্রতিদান রয়েছে তবে, তারা প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ত। আর যদি জানত ইশা ও ফজর নামাযে কি পরিমান ছোয়াব রয়েছে তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে উপস্থিত হত।[100]

১৫) সালাতের জন্য অপেক্ষাকারী যেন সালাতেই রত থাকে   
 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لاَ يَزَالُ أَحَدُكُمْ فِى صَلاَةٍ مَا دَامَتِ الصَّلاَةُ تَحْبِسُهُ لاَ يَمْنَعُهُ أَنْ يَنْقَلِبَ إِلَى أَهْلِهِ إِلاَّ الصَّلاَةُ
তোমাদের কোন ব্যক্তি সালাতেই রত থাকে যতক্ষণ সালাত তাকে বাঁধা দিয়ে রাখে। শুধু সালাতই তাকে নিজ গৃহে পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়া থেকে বিরত রাখে।[101]

১৬) সালাতে আমীন বলার দ্বারা পূর্বের গুনাহ ক্ষমা হয়ে যায়
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إِذَا قَالَ أَحَدُكُمْ آمِينَ . وَقَالَتِ الْمَلاَئِكَةُ فِى السَّمَاءِ آمِينَ . فَوَافَقَتْ إِحْدَاهُمَا الأُخْرَى ، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
তোমাদের কোন ব্যক্তি যখন (সূরা ফাতিহা পাঠ শেষে) ‘আমীন’ বলে। আর ফেরেশতারা আসমানে বলে ‘আমীন’। তাদের একজনের আমীন বলা অন্য জনের সাথে মিলে গেলে তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা হয়ে যায়।[102]

১৭) সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর তাআলার নিরাপত্তা লাভ করা যায়
 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ صَلَّى صَلاَةَ الصُّبْحِ فَهْوَ فِى ذِمَّةِ اللَّهِ فَلاَ يَطْلُبَنَّكُمُ اللَّهُ مِنْ ذِمَّتِهِ بِشَىْءٍ
যে ব্যক্তি সকালের (ফজর) সালাত আদায় করে সে আল্লাহর যিম্মাদারিতে হয়ে যায়। আর আল্লাহ যেন তার যিম্মাদারিতে তোমার কাছে কিছু চেয়ে না বসেন।[103]

১৮) সালাতের দ্বারা কিয়ামত দিবসে পরিপূর্ণ নূর লাভ করা যায়
 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
بَشِّرِ الْمَشَّائِينَ فِى الظُّلَمِ إِلَى الْمَسَاجِدِ بِالنُّورِ التَّامِّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
যারা অন্ধকারে (ফজর ও ইশা সালাত আদায় করার জন্য) মসজিদে গমন করে, তাদেরকে কিয়ামত দিবসে পরিপূর্ণ নূরের সুসংবাদ দিয়ে দাও।[104]

১৯) সালাত শয়তান থেকে নিরাপদ রাখার মাধ্যম
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَا مِنْ ثَلاَثَةٍ فِى قَرْيَةٍ وَلاَ بَدْوٍ لاَ تُقَامُ فِيهِمُ الصَّلاَةُ إِلاَّ قَدِ اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَعَلَيْكَ بِالْجَمَاعَةِ فَإِنَّمَا يَأْكُلُ الذِّئْبُ الْقَاصِيَةَ
কোন গ্রামে যদি তিনজন লোক থাকে এবং তারা জামাআতের সাথে সালাত প্রতিষ্ঠা না করে তবে শয়তান তাদের উপর প্রাধান্য বিস্তার করে। সুতরাং তোমরা জামাআত বদ্ধ থাক। কেননা দল ছুটা একক ছাগলকে নেকড়ে বাঘ খেয়ে ফেলে।[105]

২০) আছর ও ফজর সালাত আদায়কারীর জন্য জান্নাতের সুসংবাদ
 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ صَلَّى الْبَرْدَيْنِ دَخَلَ الْجَنَّةَ
যে ব্যক্তি দু’ঠান্ডার সময়ের (আছর ও ফজর) সালাত আদায় করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।[106]

২১) পুলসিরাত পার হয়ে জান্নাতে যাওয়ার সুসংবাদ 
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
الْمَسْجِدُ بَيْتُ كُلِّ تَقِيٍّ، وَقَدْ ضَمِنَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ لِمَنْ كَانَ الْمَسَاجِدُ بُيُوتَهُ الرَّوْحَ، وَالرَّحْمَةَ، وَالْجَوَازَ عَلَى الصِّرَاطِ إلَى رِضْوَانِ اللهِ إِلىَ الْجَنَّةِ
প্রত্যেক পরহেযগার ব্যক্তির গৃহ হচ্ছে মসজিদ। আর যে ব্যক্তির গৃহ মসজিদ আল্লাহর তার জন্য করুণা ও দয়ার জিম্মাদার হয়ে যান এবং আর যিম্মাদারি নেন পুলসিরাত পার হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টিসহ জান্নাতের যাওয়ার।[107]

২২) সালাত আদায়কারীর জন্য ফেরেশতারা সাক্ষ্য দান করে
  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
 الْمَلاَئِكَةُ يَتَعَاقَبُونَ، مَلاَئِكَةٌ بِاللَّيْلِ وَمَلاَئِكَةٌ بِالنَّهَارِ، وَيَجْتَمِعُونَ فِى صَلاَةِ الْفَجْرِ وَالْعَصْرِ، ثُمَّ يَعْرُجُ إِلَيْهِ الَّذِينَ بَاتُوا فِيكُمْ، فَيَسْأَلُهُمْ وَهْوَ أَعْلَمُ ، فَيَقُولُ كَيْفَ تَرَكْتُمْ عِبَادِى  فَيَقُولُونَ تَرَكْنَاهُمْ يُصَلُّونَ، وَأَتَيْنَاهُمْ يُصَلُّونَ
দিনে-রাতে ফেরেশতাদের আগমণ ঘটে। রাতে একদল ফেরেশতা এবং দিনে একদল ফেরেশতার আগমণ ঘটে। ফজর সালাতে এবং আসর সালাতে পরস্পর মিলিত হয়। তারপর যে সকল ফেরেশতা রাতে তোমাদের নিকট আগমণ করেছিল তারা চলে যায়, তখন আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন-অথচ তিনি সর্বাধিক জানেন-আমার বান্দাদেরকে কি অবস্থায় ছেড়ে এসেছ? তারা বলে, তাদেরকে রেখে এসেছি এমন অবস্থায় যে তারা সালাত আদায় করছে এবং তাদেরকে এমন অবস্থায় আমরা পেয়েছি যে তারা সালাত আদায় করছে। অন্য বর্ণনায় আছে, আমরা  যখন তাদের কাছে যাই তখন তারা সালাতরত ছিল এবং যখন তাদেরকে ছেড়ে আসি তখনও তারা সালাতরত ছিল। সুতরাং তাদেরকে হিসাবের দিন ক্ষমা করুন।[108]
২৩) পূর্ণ রাত নফল সালাত আদায় করার ছোয়াব
 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ صَلَّى الْعِشَاءَ فِى جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا قَامَ نِصْفَ اللَّيْلِ وَمَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فِى جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا صَلَّى اللَّيْلَ كُلَّهُ
যে ব্যক্তি ইশা সালাত জামাআতের সাথে আদায় করল, সে যেন অর্ধ রাত্রি পর্যন্ত নফল সালাত আদায় করল এবং যে ব্যক্তি ফজর সালাত জামাআতের সাথে আদায় করল, সে যেন পূর্ণ রাত্রি নফল সালাত আদায় করল।[109]

২৪) সালাতই কিয়ামতের দিন আরশের নীচে ছায়া লাভের মাধ্যম  
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللَّهُ فِى ظِلِّهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلُّهُ-وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ فِى الْمَسَاجِدِ
কিয়ামত দিবসে সাত ধরণের ব্যক্তিকে আরশের নীচে ছায়া দান করা হবে যে দিন আল্লাহর আরশের ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না, তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে এমন ব্যক্তি যার হৃদয় লটকানো থাকে মসজিদে। অর্থাৎ যখনই সালাতের সময় হয় সে ছুটে যায় মসজিদের পানে।[110]
২৫) সালাত মুনাফেকী ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের মাধ্যম
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ صَلَّى لِلَّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا فِى جَمَاعَةٍ يُدْرِكُ التَّكْبِيرَةَ الأُولَى كُتِبَتْ لَهُ بَرَاءَتَانِ بَرَاءَةٌ مِنَ النَّارِ وَبَرَاءَةٌ مِنَ النِّفَاقِ
যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য চল্লিশ দিন জামাআতের সাথে ইমামের তাকবীরে তাহরীমার সাথে সালাত আদায় করবে তার জন্য দুটি মুক্তি নামা লিখা হবে। 
১) জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং 
২) মুনাফেক্বী থেকে মুক্তি।[111]

বেনামাযী ও নামাযে অলসতাকারীর অবস্থাঃ
   ইচ্ছাকৃতভাবে যে ব্যক্তি একেবারেই নামায ছেড়ে দিবে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে কাফের হয়ে যাবে। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
الْعَهْدُ الَّذِي بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمُ الصَّلَاةُ فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ
আমাদের মাঝে ও তাদের (কাফেরদের) মাঝে অঙ্গিকার হল নামায। সুতরাং যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দিবে সে কাফের হয়ে যাবে।[112] 
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন,
إِنَّ بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْكَ الصَّلَاةِ
আল্লাহর বান্দা এবং কাফের-মুশরেকের মধ্যে পার্থক্য হল নামায ছেড়ে দেয়া।[113]

   তবে যে ব্যক্তি নামাযের ব্যাপারে অলসতা করবে চাই সে অলসতা যথাসময়ে আদায় না করার মাধ্যমে হোক বা ঘুমের মাধ্যমে হোক কিংবা শরীয়ত সম্মত পদ্ধতিতে নামায আদায়ে ত্রুটির মাধ্যমে হোক, সে কাফের না হলেও তার ব্যাপারে কঠিন শাস্তির হুমকি রয়েছে।

   সহীহ বুখারীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ¯^‡cœi দীর্ঘ হাদীছে এসেছে,
وَإِنَّا أَتَيْنَا عَلَى رَجُلٍ مُضْطَجِعٍ وَإِذَا آخَرُ قَائِمٌ عَلَيْهِ بِصَخْرَةٍ وَإِذَا هُوَ يَهْوِي بِالصَّخْرَةِ لِرَأْسِهِ فَيَثْلَغُ رَأْسَهُ فَيَتَهَدْهَدُ الْحَجَرُ هَا هُنَا فَيَتْبَعُ الْحَجَرَ فَيَأْخُذُهُ فَلَا يَرْجِعُ إِلَيْهِ حَتَّى يَصِحَّ رَأْسُهُ كَمَا كَانَ ثُمَّ يَعُودُ عَلَيْهِ فَيَفْعَلُ بِهِ مِثْلَ مَا فَعَلَ الْمَرَّةَ الْأُولَى                   
আমরা এক শায়িত ব্যক্তির কাছে আসলাম। তার মাথার কাছে পাথর হাতে নিয়ে অন্য একজন লোক দাড়িয়ে ছিল। দাড়ানো ব্যক্তি শায়িত ব্যক্তির মাথায় সেই পাথর নিক্ষেপ করছে। পাথরের আঘাতে তার মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে এবং পাথরটি বলের মত গড়িয়ে অনেক দূরে চলে যাচ্ছ্ে‌। লোকটি পাথর কুড়িয়ে আনতে আনতে আবার তার মাথা ভাল হয়ে যাচ্ছে। দাড়ানো ব্যক্তি প্রথমবারের মত আবার আঘাত করছে এবং তার মাথাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিচ্ছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সফরসঙ্গী ফেরেশতাদ্বয়কে জিজ্ঞেস করলেনঃ কি অপরাধের কারণে তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হচ্ছে? উত্তরে তারা বললেনঃ এব্যক্তি কুরআন শিক্ষা করেছিল। কিন্তু কুরআন অনুযায়ী আমল করেনি এবং সে ফরজ নামাযের সময় ঘুমিয়ে থাকত। কিয়ামত পর্যন্ত তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
)فَوَيْلٌ لِلْمُصَلِّينَ-الَّذِينَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ(
ধ্বংস ঐ সমস্ত নামাযীদের জন্যে যারা নামাযের ব্যাপারে উদাসীন।[114]

   হাফেজ ইবনে কাছির (রহঃ) এই আয়াতদ্বয়ের ব্যাখ্যায় বলেনঃ তারা হয়ত প্রথম ওয়াক্তে নামায আদায় না করে সব সময় বা অধিকাংশ সময় দেরী করে নামায আদায় করে থাকে। অথবা নামাযের রুকন ও শর্তসমূহ যথাযথভাবে আদায়ের ব্যাপারে গাফলতি করে থাকে অথবা তারা নামাযে মনোযোগ দেয় না এবং নামাযে কুরআন তিলাওয়াতের সময় তারা এর অর্থের মাঝে গবেষণা করে না।[115]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَتْ لَهُ نُورًا وَبُرْهَانًا وَنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ لَمْ يُحَافِظْ عَلَيْهَا لَمْ يَكُنْ لَهُ نُورٌ وَلَا بُرْهَانٌ وَلَا نَجَاةٌ وَكَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ قَارُونَ وَفِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَأُبَيِّ بْنِ خَلَفٍ
যে ব্যক্তি নামাযের হেফাযত করবে কিয়ামতের দিন নামায তাঁর জন্য আলো, তার ঈমানের দলীল এবং নাজাতের উপায় হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি নামাযের হেফাযত করবে না কিয়ামতের দিন তার জন্যে কোন আলো থাকবে না, তার ঈমানের পক্ষে কোন প্রমাণ এবং তার নাজাতের কোন উপায় থাকবে না। কিয়ামতের দিন সে ফেরাউন, কারূন, হামান এবং উবাই বিন খাল্‌ফের সাথে হাশরের মাঠে উপস্থিত হবে।[116]
কোন কোন বিদ্বান বলেছেনঃ বেনামাযীকে উক্ত চার শ্রেণীর নিকৃষ্ট মানুষের সাথে হাশরের মাঠে উঠানোর কারণ হল মানুষ সাধারণতঃ ধন-সম্পদ, রাজত্ব, মন্ত্রিত্ব ও ব্যবসা-বাণিজ্যে লিপ্ত থেকেই নামায থেকে বিরত থাকে। ধন-সম্পদ নিয়ে ব্যস্ত থেকে নামায পরিত্যাগ করলে কুখ্যাত ধনী কারূনের সাথে হাশর হবে। রাষ্ট্র পরিচালনা নিয়ে ব্যস্ত থেকে নামায পরিত্যাগ করলে ফেরাঊনের সাথে হাশর হবে। মন্ত্রিত্ব নিয়ে ব্যস্ত থেকে নামায নষ্ট করলে ফেরাঊনের মনী্ত্র হামানের সাথে হাশর হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে লিপ্ত থেকে নামায ছেড়ে দিলে মক্কার কাফের ব্যবসায়ী উবাই বিন খাল্‌ফের সাথে হাশর হবে। এধরণের অপমানকর অবস্থা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
নামাযের গুরুত্ব

নামাযের রয়েছে অপরিসীম গুরুত্ব। নামাযই হল নাজাতের একমাত্র উপায়। নামায বিন্ন নাজাতের কোন বিকল্প নেই। একজন মানুষ ঈমান আনয়ন করার পর থেকে অবশ্যই তাকে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করতে হবে। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে বহুস্থানে নামায সম্পর্কে তাকিদ এসেছে । এরশাদ হচ্ছে,
    وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآَتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِينَ
এবং তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত আদায় কর এবং রুকুকারীদের সাথে রুকুকর।[117]

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, 
حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَى وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ
তোমরা সলাতের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী সলাতের প্রতি। (সূরা বাক্বারা: ২৩৮)

 নামাযের যেহেতু অপরিসীম গুরুত্ব তাই আল্লাহ তাআলা মহাগ্রন্থ আল কুরআনে গুরুত্ব বুঝানোর জন্য নাামাযের আলোচনা বারংবার নিয়ে এসেছেন।

হাদীস শরীফেও বিভিন্ন ভাবে নামাযের প্রতি অতীব গুরুত্বরোপ করা হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে,
 أَوَّلُ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الصَّلَاةُ فَإِنْ صَلَحَتْ صَلَحَ لَهُ سَائِرُ عَمَلِهِ، وَإِنْ فَسَدَتْ فَسَدَ سَائِرُ عَمَلِهِ
ক্বিয়ামতের দিন সর্ব প্রথম হিসাব হবে নামাযের, যদি তা সঠিক হয় তবে তার সকল আমলই সঠিক বলে গণ্য হবে। আর যদি বাতিল হয় তবে তার সকল আমলই বাতিল হয়ে যাবে।[118]

নামায হল ইসলামের দ্বিতীয় রুকনঃ
ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
بُنِىَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ ، وَالْحَجِّ ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ
ইসলামের ভিত্তি হচ্ছে পাঁচটিঃ 
(১) এই সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা’বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর রাসূল। 
(২) লাত কায়েম করা। 
(৩) যাকাত আদায় করা। 
(৪) সামর্থ থাকলে আল্লাহর ঘরের হজ্জ পালন করা। 
(৫) রামাযান মাসের রোজা পালন করা।[119]
নামায হল দ্বীনের খুঁটিঃ
নামায হল দ্বীনের খুঁটি। যে তা হেফাযত করল সে দ্বীনকে হেফাযত করল, আর যে নামাযকে বাদ করল সে দ্বীনকে বাদ করল। নামাযই হল আল্লাহ তাআলাকে ভালবাসার প্রমাণ এবং তাঁর নেআমতের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের বহি:প্রকাশ। আল্লাহ মুমিনদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট উল্লেখ করে বলেন,
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُولَئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী পরস্পর পরস্পরের বন্ধু, তারা সৎকাজের নির্দেশ দেয় এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করে, নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন-যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ্‌ দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ পরাক্রমশালী, সুকৌশলী।[120] 
নামায জান্নাতে প্রবেশের প্রতিশ্রুতি বহন করে
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
قَالَ اللَّهُ تَعَالَى إِنِّى فَرَضْتُ عَلَى أُمَّتِكَ خَمْسَ صَلَوَاتٍ وَعَهِدْتُ عِنْدِى عَهْدًا أَنَّهُ مَنْ جَاءَ يُحَافِظُ عَلَيْهِنَّ لِوَقْتِهِنَّ أَدْخَلْتُهُ الْجَنَّةَ وَمَنْ لَمْ يُحَافِظْ عَلَيْهِنَّ فَلاَ عَهْدَ لَهُ عِنْدِى
আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি তোমার উম্মতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছি এবং এ প্রতিশ্রুতি আমার কাছে রেখেছি যে, যে কেউ এইগুলো উহার সময় অনুপাতে আদায় করবে আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। আর যে এগুলোর প্রতি যত্ন নিবে না তার জন্য কোন প্রতিশ্রুতি নেই।[121]

রাসূল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন,
خَمْسُ صَلَوَاتٍ كَتَبَهُنَّ اللَّهُ عَلَى الْعِبَادِ فَمَنْ جَاءَ بِهِنَّ لَمْ يُضَيِّعْ مِنْهُنَّ شَيْئًا اسْتِخْفَافًا بِحَقِّهِنَّ كَانَ لَهُ عِنْدَ اللَّهِ عَهْدٌ أَنْ يُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ وَمَنْ لَمْ يَأْتِ بِهِنَّ فَلَيْسَ لَهُ عِنْدَ اللَّهِ عَهْدٌ إِنْ شَاءَ عَذَّبَهُ وَإِنْ شَاءَ أَدْخَلَهُ الْجَنَّةَ
আল্লাহ তাআলা পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত বান্দার উপর ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি উহা আদায় করবে এবং এগুলোকে হালকা ও তুচ্ছ মনে করে তার কোন কিছু বিনষ্ট করবে না তার জন্যে আল্লাহর কাছে অঙ্গিকার রয়েছে তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। যে ব্যক্তি এগুলো আদায় করবে না তার জন্যে কোন অঙ্গিকার নেই। ইচ্ছা করলে শাস্তি দিবেন ইচ্ছা করলে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।[122]

   আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা জানাই, তিনি আমাকে ও সকল মুমিন নর-নারীকে মৃত্যু পর্যন্ত নামাযের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন। পরকালে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।।

ওয়া সাল্লাল্লাহু তাআলা আলা মুহাম্মাদ, ওয়ালা আলিহী ওয়া আসবিহী ওয়া সাল্লামা তাসলীমান কাসীরা।  

_______________________________________________________________________________________

[১] - আবু দাউদ। আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী (রহ) উক্ত হাদীসটি সহীহ বলেছেন।
[২] -ত্ববরানী। আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী (রহ:) সিলসিলা সহীহাতে উক্ত হাদীসটি সহীহ বলেছেন।
[৩] - মুসলিম।
[৪] - তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।
[৫] -সূরা বাক্বারাঃ ৪৩।
[৬] - দেখুনঃ তাফসীরে ইবনু কাসীর ১ম খন্ড ৯০ পৃ:, তাফসীরে কুরতুবী ১ম খন্ড ৩৪৮ পৃ:, তাফসীরে সা’দী ১ম খন্ড ৪৪পৃ:। কিতাবুস সালাত ইবনু কাইয়্যেম ১১৩ পৃ:।
[৭]- সূরা আলে-ইমরান: ৪৩।
[৮]-  আল মাজম’ু শরহে মুহায্যাব ৪র্থ খন্ড ১৮২ পৃ:, আল মাওসূআতুল ফেকহিয়্যাহ কুয়েতী (কুয়েতের ফিকহ বিষয়ক বিশ্বকোষ) ২৭/১৬৫পৃ:।
[৯] -সূরা তাওবা: ১৮।
[১০] - দেখুন তাফসীর ইবনু কাসীর ৩য় খন্ড ৩২৩ পৃ:, তাফসীরে কুরতুবী ১২তম খন্ড ২৬৪ পৃ:।
[১১] - সূরা নূর: ৩৬-৩৮।
[১২] -সূরা নিসা: ১০২। টিকাঃ কি কি কারণে জামাআত ছাড়া যায় বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় তা আলোচিত হয়েছে।
[১৩]-  মুখতাসার মুসলিম ৩২১ পৃ:, আবু দাউদ ৫১৬ পৃ:।
[১৪]-  সিয়ারু আলামিন্নুবালা (মহা মনিষীদের জীবন চরিত) ৫ম খন্ড: পৃ: ২১৯।
[১৫]-  আবু দাউদ, সহীহ ইবনু খুযায়মা।
[১৬]-  সহীহ মুসলিম,  শরহে  নববী: ৫ম খন্ড ১৭২ পৃ:।
[১৭] - সূরা নূর: ৫৪।
[১৮] - সূরা আল ইমরান: ৩১।
[১৯]-  সহীহ বুখারী, ফাতহুল বারী: ১৩তম খন্ড: ২৪৯পৃ:।
[২০] - মুসলিম, অধ্যায়: জামাআতে নামাযের ফযীলত।
[২১] - সূরা বাক্বারা: ৪৩।
[২২]-  তিরমিযী, অধ্যায়: জামাআত আবশ্যক হওয়ার বর্ণনা।
[২৩] -সূরা হাজ্জ: ৩২।
[২৪]-  মুসলিম, শরহে নববী: ৫ম খন্ড ১৫৬ পৃ:।
[২৫]- বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায়ঃ জামাআতে নামায পড়ার মর্যাদা।
[২৬] - বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায়ঃ জামাআতে নামায পড়ার মর্যাদা।
[২৭] - সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যা গ্রন্থ ফাতহুল বারী, দ্বিতীয় খন্ড ১৩৩পৃ:।
[২৮] - সহীহুল জামে ৩৮৩৬ নং।
[২৯] - আবু দাউদ, নাসাঈ, অধ্যায়: জামাআত ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে কাঠিন্যতা আরোপ। আহমাদ, সহীহুল জামে ৫৭০১ নং।
[৩০] - বুখারী, অধ্যায়ঃ ইশার নামায জামাআতে পড়ার ফযীলত। মুুসলিম, অধ্যায়ঃ জামাআতে নামাযের গুরুত্ব এবং উহা হতে পিছে থাকার প্রতি কাঠিন্যতা আরোপ।
[৩১] - মুসলিম, শরহে নববী ৫ম খন্ড ১৫৬ পৃ:।
[৩২] - বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায়: মুক্তাদীর জোরে আমীন বলা।
[৩৩] - বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায় ‘রব্বানা লাকাল হামদ্’ বলার ফযীলত। লু’লু’ ওয়াল মারজান ২২৯পৃ:।
[৩৪]-  মুসলিম, অধ্যায়: ওযু ও নামায আদায় করা। মুখতাসার মুসলিম, ৭৪ পৃ: হাদীস নং ২৩৪।
[৩৫] - আহমাদ ও সহীহুল জামে ১৮২০পৃঃ।
[৩৬]-  শরহে লুমআতুল ই'তেকাদ, মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উছাইমীন পৃ:৫৯।
[৩৭] - মুসলিম, অধ্যায়: ওযু করে তার সাথে নামায আদায় করার ফযীলত।
[৩৮]- বুখারী, অধ্যায়: ফজরের নামায জামাআতের সাথে পড়ার ফযীলত।  ল’ুলু’ ওয়াল মারজান:৩৮৮পৃ:।
[৩৯]- বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায়: কষ্টের সময় পরিপূর্ণরূপে ওযু করা। ল’ুলু’ ওয়াল মারজান:৩৯০পৃ:।
[৪০]- মুসলিম, অধ্যায়: নামাযের জন্যে হেঁটে যাওয়া গুনাহ দূর হওয়ার মাধ্যম।
[৪১] - মুসলিম, অধ্যায়: নামাযের জন্যে হেঁটে যাওয়া গুনাহ দূর হওয়ার মাধ্যম।
[৪২] - আবু দাউদ, মাসজিদে হেঁটে যাওয়ার ফযীলত।
[৪৩]- আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ ও সহীহুল জামে’ ৬৫৫৬ নং।
[৪৪] - মুসনাদে আহমাদ, সহীহ ইবনু হিব্বান, সহীহ তারগীব ও তারহীব হাদীস নং ২৯৯।
[৪৫] - মুসলিম, অধ্যায়: ফজর ও আসর নামাযের ফযীলত।
[৪৬] -বুখারী, অধ্যায়: রাত্রিতে ফেরেশতাদের সমবেত হওয়ার বর্ণনা। সহীহ ইবনু খুযায়মা, সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব হাদীস নং ৪৬৩।
[৪৭] -  মুসলিম, অধ্যায়: ফজর ও ইশার নামাযের ফযীলত। মুখতাসার মুসলিম, হাদীস নং ৩২৪।
[৪৮] - তিরমিযী, অধ্যায়: ফজর ও ইশার নামাযের ফযীলত।
[৪৯] - মুসলিম, অধ্যায়: ফজর ও ইশার নামাযের ফযীলত।
[৫০]- ইবনু মাজাহ অধ্যায়: মুসলমানগণ আল্লাহর যিম্মায়। ত্ববরানী, দ্বিতীয় খন্ড: ২১৫পৃঃ। সহীহ তারগীব ওয়াত্ তারহীব: ৪৬১।
[৫১] - বুখারী, অধ্যায়: যে ব্যক্তি মাসজিদে বসে  নামাযের অপেক্ষা করে।  লু’লু ওয়াল মারজান: ৬১০।
[৫২] - তিরমিযী, অধ্যায়ঃ তাকবীরে উলার ফযীলত। সহীহুল জা'মে ৬৩৬৫ নং।
[৫৩] - সিয়ারে আলামুন্নুবালা, পঞ্চম খন্ড ৬০ পৃ:।
[৫৪] - নাসাঈ, অধ্যায়ঃ কিভাবে ইমাম কাতার সোজা করবেন। সহীহুল জামে-৬৩৬৫ নং।
[৫৫] - ইবনু মাজাহ, অধ্যায়: কাতার সোজা করা। আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী (রহ:) সিলসিলা সহীহাতে হাদীসটি সহীহ বলেছেন। 
[৫৬] - সহীহ তারগীব ও তারহীব ৫০৫ পৃ:। আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী (রহ:) সহীহ তারগীব ও তারহীব গ্রন্থে হাদীসটি সহীহ বলেছেন। অধ্যায়, কাতার সোজা করা এবং ফাঁক বন্ধ করা। 
[৫৭] - আহমাদ, নাসাঈ ও আবু দাউদ, অধ্যায়: যে ব্যক্তি নামাযের জন্যে বের হল কিন্তু তা শেষ হয়ে গেছে। সহীহ তারগীব ও তারহীব।
[৫৮] - আবু দাউদ, অধ্যায়: মুয়াজ্জিনের উপর যা রক্ষা করা ওয়াজিব। তিরমিযী, সহীহুল জামে ২৭৮৭ নং।
[৫৯] - আওনুল মা’বুদ। দ্বিতীয় খন্ড ১৫২ পৃ:।
[৬০] -তারিখে বাগদাদ, ৬ষ্ট খন্ড, ৯৯পৃ:।
[৬১] - আবু দাউদ, তিরমিযী। অধ্যায়: সময়মত নামায আদায় করা।
[৬২] - মুসলিম, অধ্যায়: আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার বর্ণনা।
[৬৩] - সূরা আল-মাউন: ৪-৭।
[৬৪] - সহীহ ইবনু খুযায়মা, ইবনু হিব্বান, হাকেম, সহীহ তারগীব ও তারহীব ৩২৭ পৃ: ও ইবনু মাজাহ,  অধ্যায়: মাসজিদের সাথে সম্পর্ক রাখা এবং নামাযের জন্যে অপেক্ষা করা।
[৬৫] - ইবনু মাজাহ, অধ্যায়: জামাআত থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে কঠোরতা প্রদর্শন।
[৬৬] - আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ  প্রমূখ।      
আবু দাউদ, অধ্যায়: দুই আযানের মাঝে দুআ করার বিবরণ। সহীহুল জামে’ হাদীস নং ৩৪০৮। 
[৬৭] - মুসলিম, অধ্যায়: মাসজিদে প্রবেশের সময় যা বলবে।
[৬৮] - মুসলিম, অধ্যায়: কাতার করা, বরাবর করা ও তার ফযীলত।
[৬৯] - বুখারী ও মুসলিম অধ্যায়: মুসাফিরের নামায।  আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিযী, সহীহ তারগীব ও তারহীব ৫৭৯ পৃ:।
[৭০]-  বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায়: কাতার সোজা করা নামায পরিপূর্ণতার কারণ।
[৭১] - সূরা আরাফ, ৩১।                                                                           
[৭২] - ফাতহুল ক্বাদীর, দ্বিতীয় খন্ড ২২৮পৃষ্ঠা।
[৭৩] - সূরা মুতাফ্ফিফীন:২৬।
[৭৪] - দেখুন, আল-মুরওয়াতু ওয়া খাওয়ারিমিহা, মাশহুর হাসান সোলাইমান:৩৬।
[৭৫] - আল-আওসাত ফিস্ সুনান ও আল-ইজমা ওয়াল খেলাফ, ইবনু মুনযির ৪র্থ খন্ড:১৩৮পৃ:।
২-সূরা আস্ সাফ্ফ:৪।
৩- শাইখ ছালেহ উসাইমীনের শরহুল মুমতে’ ৪র্থ খন্ড, ১৯৪পৃ:।  
[৭৮] - “আল-আওসাত ফিস সুনান ওয়াল ইজমা ওয়াল খেলাফ’’ ইবনু মুনযির ৪র্থ খন্ড ১৩৬, ১৩৭।
[৭৯] -কিতাবুস্ সালাত: ইবনু কাইয়্যেম, ১১১পৃ:।
[৮০] - তুহফাতুল ফুকাহা ১ম খন্ড: ৩৫৮পৃ:।
[৮১] - কিতাবুল উম্ম, ইমাম শাফেয়ী (রহ:) পৃঃ ২৭৭।
[৮২] -ইনসাফ, ইকনা ও মুগনী, অধ্যায়: জামাআতে নামায।
[৮৩] - মাজমু’ ফাতাওয়াঃ ২৩তম খন্ড ২৫৩পৃঃ।
[৮৪] - কিতাবুস সালাহ, ইবনুল কাইয়্যেম:১৩৭পৃ:।
[৮৫] -দারাকুতনী ও ইবনু মাজাহ,অধ্যায়: জামাআতে নামায থেকে দূরে থাকার ব্যাপারে সতর্কতা।
[৮৬] - ফতোয়া বোর্ডঃ সৌদি আরব। ৭ম খন্ড: ২৯২পৃ:।
[৮৭] - মুসলিম
[৮৮] - মুসলিম
[৮৯] - তিরমিযী
[৯০] - মুসলিম
[৯১] - বুখারী ও মুসলিম
[৯২] - মুসলিম
[৯৩] - সূরা আনকাবুত:৪৫
[৯৪] - সূরা বাক্বারা:৪৫
[৯৫] - বুখারী ও মুসলিম 
[৯৬] -বুখারী ও মুসলিম
[৯৭] - মুসলিম
[৯৮] - বুখারী ও মুসলিম
[৯৯] - বুখারী ও মুসলিম
[১০০] - বুখারী ও মুসলিম
[১০১] - বুখারী ও মুসলিম
[১০২] - বুখারী ও মুসলিম
[১০৩] - মুসলিম
[১০৪] - আবু দাউদ, তিরমিযী
[১০৫] - আহমাদ, আবু দাউদ ও ত্ববরানী, আল্লামা আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
[১০৬] - বুখারী ও মুসলিম
[১০৭] - ত্ববরানী, আল্লামা আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
[১০৮]- বুখারী ও মুসলিম, সহীহ তারগীব ও তারহীব হা/৪৬৩)
[১০৯] - মুসলিম
[১১০] - বুখারী ও মুসলিম
[১১১] - তিরমিযী, সহীহুল জামে হা/৬৩৬৫
[১১২] - তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।
[১১৩] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।
[১১৪] - সূরা মাঊনঃ ৪-৫
[১১৫] - ইবনে কাছীর, ৪র্থ খন্ড।
[১১৬] - মুসনাদে ইমাম আহমাদ, সুনানে দারেমী ও সহীহ ইবনু খুযায়মা। হাদীসটিকে শায়খ আবদুল আযীয বিন বায (রহঃ) সহীহ বলেছেন। আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী (রহঃ) ও আহমাদ শাকের হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
[১১৭] - সূরা বাক্বারা: ৪৩
[১১৮] -ত্ববরানী। আল্লাম নাসির উদ্দিন আলবানী (রহ:) সিলসিলা সহীহাতে উক্ত হাদীসটি সহীহ বলেছেন।
[১১৯] - বুখারী ও মুসলিম।
[১২০] - সূরা আত্ তাওবাহঃ ৭১
[১২১] - আবু দাউদ। আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী (রহ:) উক্ত হাদীসটি সহীহ বলেছেন।
[১২২] - আবু দাউদ, অধ্যায়: কিতাবুস সালাত।
_________________________________________________________________________________

মূল লেখক: শায়খ মুসনেদ বিন মুহসেন আল কাহতানী
অনুবাদক: শায়খ জাহিদুল ইসলাম
প্রকাশনায়: জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ