1/1817 عَنِ النَّوَّاسِ بنِ سَمعَانَ رضي الله
عنه قاَلَ : ذَكَرَ رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم الدَّجَّالَ ذَاتَ
غَدَاةٍ، فَخَفَّضَ فِيهِ وَرَفَّعَ حَتَّى ظَنَنَّاهُ فِي طَائِفَةِ النَّخْلِ .
فَلَمَّا رُحْنَا إلَيْهِ، عَرَفَ ذلِكَ فِينَا، فَقالَ : «مَا شَأنُكُمْ ؟»
قُلْنَا : يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، ذَكَرْتَ الدَّجَّالَ الغَدَاةَ،
فَخَفَّضْتَ فِيهِ وَرَفَّعْتَ، حَتَّى ظَنَنَّاهُ فِي طَائِفَةِ النَّخْلِ،
فَقَالَ: «غَيْرُ الدَّجَّالِ أَخْوَفُنِي عَلَيْكُمْ، إِنْ يَخْرُجْ وَأَنَا
فِيكُمْ، فَأَنَا حَجِيجُهُ دُونَكُمْ ؛ وَإِنْ يَخْرُجْ وَلَسْتُ فِيكُمْ،
فَامْرُؤٌ حَجِيجُ نَفْسِهِ، وَاللهُ خَلِيفَتي عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ . إِنَّهُ
شَابٌّ قَطَطٌ عَيْنُهُ طَافِيَةٌ، كَأَنّي أُشَبِّهُهُ بعَبْدِ العُزَّى بنِ
قَطَنٍ، فَمَنْ أَدْرَكَهُ مِنْكُمْ، فَلْيَقْرَأْ عَلَيْهِ فَوَاتِحَ سُورَةِ
الكَهْفِ؛ إِنَّهُ خَارِجٌ خَلَّةً بَيْنَ الشَّامِ وَالعِرَاقِ، فَعَاثَ يَمِيناً
وَعَاثَ شِمَالاً، يَا عِبَادَ اللهِ فَاثْبُتُوا» قُلْنَا : يَا رَسُولَ اللهِ، وَمَا لُبْثُهُ فِي الأَرْضِ ؟ قَالَ: «أَرْبَعُونَ يَوْماً : يَوْمٌ كَسَنَةٍ، وَيَوْمٌ كَشَهْرٍ، وَيَوْمٌ
كَجُمْعَةٍ، وَسَائِرُ أَيَّامِهِ كَأَيَّامِكُمْ» قُلْنَا : يَا رَسُولَ اللهِ، فَذَلِكَ اليَوْمُ الَّذِي كَسَنَةٍ
أَتَكْفِينَا فِيهِ صَلاَةُ يَوْمٍ ؟ قَالَ: «لاَ، اقْدُرُوا لَهُ قَدْرَهُ» . قُلْنَا : يَا رَسُولَ اللهِ، وَمَا إِسْرَاعُهُ فِي الأَرْضِ ؟ قَالَ:
«كَالغَيْثِ اسْتَدْبَرَتْهُ الرِّيحُ، فَيَأْتِي عَلَى القَوْمِ،
فَيدْعُوهُم فَيُؤمِنُونَ بِهِ وَيَسْتَجِيبُونَ لَهُ، فَيَأمُرُ السَّمَاءَ
فَتُمْطِرُ، وَالأَرْضَ فَتُنْبِتُ، فَتَرُوحُ عَلَيْهِمْ سَارِحَتُهُمْ أَطْوَلَ
مَا كَانَتْ ذُرىً وَأَسْبَغَهُ ضُرُوعاً، وَأَمَدَّهُ خَوَاصِرَ، ثُمَّ يَأتِي
القَوْمَ فَيَدْعُوهُمْ، فَيَرُدُّونَ عَلَيْهِ قَولَهُ، فَيَنْصَرفُ عَنْهُمْ،
فَيُصْبِحُونَ مُمْحِلِينَ لَيْسَ بِأَيْدِيهِمْ شَيْءٌ مِنْ أَمْوَالِهِمْ،
وَيَمُرُّ بِالخَرِبَةِ فَيَقُولُ لَهَا : أَخْرِجِي كُنُوزَكِ، فَتَتْبَعُهُ
كُنُوزُهَا كَيَعَاسِيبِ النَّحْلِ، ثُمَّ يَدْعُو رَجُلاً مُمْتَلِئاً شَبَاباً
فَيَضْرِبُهُ بِالسَّيْفِ، فَيَقْطَعُهُ جِزْلَتَيْنِ رَمْيَةَ الغَرَضِ، ثُمَّ
يَدْعُوهُ، فَيُقْبِلُ، وَيَتَهَلَّلُ وَجْهُهُ يَضْحَكُ، فَبَيْنَمَا هُوَ
كَذلِكَ إذْ بَعَثَ اللهُ تَعَالَى المَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ عليه
السلام، فَيَنْزِلُ عِنْدَ المَنَارَةِ البَيْضَاءِ شَرْقِيَّ دِمَشقَ بَيْنَ
مَهْرُودَتَيْنِ، وَاضِعاً كَفَّيْهِ عَلَى أَجْنِحَةِ مَلَكَيْنِ، إِذَا طَأطَأَ
رَأسَهُ قَطَرَ، وَإِذَا رَفَعَهُ تَحَدَّرَ مِنهُ جُمَانٌ كَاللُّؤْلُؤ، فَلاَ
يَحِلُّ لِكَافِرٍ يَجِدُ رِيحَ نَفَسِهِ إلاَّ مَاتَ، وَنَفَسُهُ يَنْتَهِي إِلَى
حَيثُ يَنْتَهِي طَرْفُهُ، فَيَطْلُبُهُ حَتَّى يُدْرِكَهُ بِبَابِ لُدٍّ
فَيَقْتُلُهُ، ثُمَّ يَأتِي عِيسَى عليه السلام، قَوماً قَدْ عَصَمَهُمُ اللهُ مِنهُ، فَيَمْسَحُ عَنْ وُجُوهِهِمْ
وَيُحَدِّثُهُمْ بِدَرَجَاتِهِمْ فِي الجَنَّةِ، فَبَيْنَمَا هُوَ كَذَلِكَ إِذْ
أَوْحَى اللهُ تَعَالَى إِلَى عِيسَى عليه السلام : أَنِّي قَدْ أَخْرَجْتُ عِبَاداً لِي لاَ يَدَانِ لأَحَدٍ
بِقِتَالِهِمْ، فَحَرِّزْ عِبَادِي إِلَى الطُّورِ . وَيَبْعَثُ اللهُ يَأجُوجَ
وَمَأجُوجَ وَهُمْ مِنْ كُلِّ حَدَبٍ يَنْسِلُونَ، فَيَمُرُّ أَوَائِلُهُمْ عَلَى
بُحَيرَةِ طَبَرِيَّةَ فَيَشْرَبُونَ مَا فِيهَا، وَيَمُرُّ آخِرُهُمْ
فَيَقُولُونَ : لَقَدْ كَانَ بِهَذِهِ مَرَّةً مَاءٌ، وَيُحْصَرُ نَبيُّ اللهِ
عِيسَى عليه
السلام وَأَصْحَابُهُ حَتَّى يَكُونَ رَأْسُ الثَّوْرِ لأَحَدِهِمْ خَيْراً
مِنْ مِئَةِ دينَارٍ لأَحَدِكُمُ اليَوْمَ، فَيَرْغَبُ نَبِيُّ اللهِ عِيسَى عليه
السلام وَأَصْحَابُهُ إِلَى اللهِ
تَعَالَى، فَيُرْسِلُ اللهُ تَعَالَى عَلَيْهِمُ النَّغَفَ فِي رِقَابِهِمْ،
فَيُصْبِحُونَ فَرْسَى كَمَوْتِ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ، ثُمَّ يَهْبِطُ نَبِيُّ اللهِ
عِيسَى عليه
السلام، وَأَصْحَابُهُ إِلَى
الأَرْضِ، فَلاَ يَجِدُونَ فِي الأَرْضِ مَوْضِعَ شِبْرٍ إِلاَّ مَلأَهُ
زَهَمُهُمْ وَنَتَنُهُمْ، فَيَرْغَبُ نَبِيُّ اللهِ عِيسَى عليه
السلام وَأَصْحَابُهُ إِلَى اللهِ
تَعَالَى، فَيُرْسِلُ اللهُ تَعَالَى طَيْراً كَأَعْنَاقِ البُخْتِ،
فَتَحْمِلُهُمْ، فَتَطْرَحُهُمْ حَيثُ شَاءَ اللهُ، ثُمَّ يُرْسِلُ اللهُ ـ عَزَّ
وَجَلَّ ـ مَطَراً لاَ يُكِنُّ مِنهُ بَيْتُ مَدَرٍ وَلاَ وَبَرٍ، فَيَغْسِلُ
الأَرْضَ حَتَّى يَتْرُكَهَا كَالزَّلَقَةِ، ثُمَّ يُقَالُ لِلأَرْضِ : أَنْبِتي
ثَمَرتَكِ، وَرُدِّي بَرَكَتَكِ، فَيَوْمَئِذٍ تَأكُلُ العِصَابَةُ مِنَ
الرُّمَّانَةِ، وَيَسْتَظِلُّونَ بِقَحْفِهَا، وَيُبَارَكُ فِي الرِّسْلِ حَتَّى
أَنَّ اللّقْحَةَ مِنَ الإِبِلِ لَتَكْفِي الفِئَامَ مِنَ النَّاسِ ؛
وَاللِّقْحَةَ مِنَ البَقَرِ لَتَكْفِي القَبِيلَةَ مِنَ النَّاسِ، وَاللِّقْحَةَ
مِنَ الغَنَمِ لَتَكْفِي الفَخِذَ مِنَ النَّاسِ ؛ فَبَيْنَمَا هُمْ كَذَلِكَ إِذْ
بَعَثَ اللهُ تَعَالَى رِيْحاً طَيِّبَةً فَتَأخُذُهُمْ تَحْتَ آبَاطِهِمْ
فَتَقْبِضُ رُوْحَ كُلِّ مُؤْمِنٍ وَكُلِّ مُسْلِمٍ ؛ وَيَبْقَى شِرَارُ النَّاسِ
يَتَهَارَجُونَ فِيهَا تَهَارُجَ الحُمُرِ، فَعَلَيْهِمْ تَقُومُ السَّاعَةُ» . رواه مسلم
১/১৮১৭। নাওয়াস ইবনে সামআন রাদিয়াল্লাহু
আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সকালে দাজ্জাল সম্পর্কে
আলোচনা করলেন। তাতে তিনি একবার নিম্ন সবরে এবং একবার উচ্চ সবরে বাক ভঙ্গিমা অবলম্বন করলেন। শেষ পর্যন্ত আমরা [প্রভাবিত হয়ে] মনে মনে ভাবলাম যে,
সে যেন সামনের এই খেজুর বাগানের মধ্যেই রয়েছে। তারপর আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গেলাম,
তখন তিনি আমাদের উদ্বিগ্নতা দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘তোমাদের
কি হয়েছে?’’ আমরা
বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি আজ সকালে দাজ্জাল সম্পর্কে
আলোচনা করতে গিয়ে এমন নিম্ন ও উচ্চ কণ্ঠে বর্ণনা করলেন, যার
ফলে আমরা ধারণা করে বসি যে, সে যেন খেজুর বাগানের মধ্যেই
রয়েছে।’ তিনি বললেন, ‘‘দাজ্জাল ছাড়া
তোমাদের ব্যাপারে অন্যান্য জিনিসকে আমার আরও বেশী ভয় হয়। আমি তোমাদের মাঝে
থাকাকালে দাজ্জাল যদি আত্মপ্রকাশ করে, তাহলে আমি স্বয়ং
তোমাদের পক্ষ থেকে তার প্রতিরোধ করব। আর যদি তার আত্মপ্রকাশ হয় এবং আমি তোমাদের
মাঝে না থাকি, তাহলে [তোমরা] প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ নিজ
আত্মরক্ষা করবে। আর আল্লাহ স্বয়ং প্রতিটি মুসলিমের জন্য [আমার] প্রতিনিধিত্ব
করবেন।
সে দাজ্জাল নব-যুবক হবে, তার মাথার কেশরাশি হবে খুব
বেশি কোঁচকানো। তার একটি চোখ [আঙ্গুরের ন্যায়] ফোলা থাকবে। যেন সে আব্দুল উয্যা
ইবনে ক্বাত্বানের মত দেখতে হবে। সুতরাং তোমাদের যে কেউ তাকে পাবে, সে
যেন তার সামনে সূরা কাহ্ফের শুরুর [দশ পর্যন্ত] আয়াতগুলি পড়ে। সে শাম ও ইরাকের
মধ্যবর্তী স্থানে আবির্ভূত হবে। আর তার ডাইনে-বামে [এদিকে ওদিকে] ফিতনা ছড়াবে। হে আল্লাহর বান্দারা।
[ঐ সময়] তোমরা অবিচল থাকবে।’’
আমরা বললাম, ‘পৃথিবীতে তার অবস্থান কতদিন থাকবে?’ তিনি বললেন, ‘‘চল্লিশ দিন পর্যন্ত। আর তার
একটি দিন এক বছরের সমান দীর্ঘ হবে। একটি দিন হবে এক মাসের সমান লম্বা। একটা দিন এক সপ্তাহের সমান হবে এবং বাকি দিনগুলি প্রায়
তোমাদের দিনগুলির সম পরিমাণ হবে।’’
আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! যেদিনটি এক বছরের সমান
লম্বা হবে, তাতে আমাদের একদিনের [পাঁচ
ওয়াক্তের] নামাযই কি যথেষ্ট হবে?’ তিনি বললেন,
‘‘তোমরা [দিন রাতের ২৪ ঘণ্টা হিসাবে] অনুমান করে নামায আদায় করতে থাকবে।’’
আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, ভূপৃষ্ঠে তার দ্রুত গতির অবস্থা কিরূপ হবে? তিনি বললেন, তীব্র বায়ু তাড়িত
মেঘের ন্যায় [দ্রুত বেগে ভ্রমণ করে অশান্তি ও বিপর্যয় ছড়াবে।] সুতরাং সে কিছু
লোকের নিকট আসবে ও তাদেরকে তার দিকে আহ্বান জানাবে এবং তারা তার প্রতি ঈমান আনবে ও
তার আদেশ পালন করবে। সে আকাশকে বৃষ্টি বর্ষণ করতে আদেশ করবে, আকাশ
আদেশক্রমে বৃষ্টি বর্ষণ করবে। আর জমিনকে [গাছ-পালা] উদ্গত করার নির্দেশ দেবে। জমিন
তার নির্দেশক্রমে তাই উদ্গত করবে। সুতরাং [সে সব গাছ-পালা ভক্ষণ করে] সন্ধ্যায়
তাদের গবাদি পশুদের কুঁজ [ও ঝুঁটি] অধিক উঁচু হবে ও তাদের পালানে অধিক পরিমাণে দুধ
ভরে থাকবে। উদর পূর্ণ আহার জনিত তাদের পেট টান হয়ে থাকবে। অতঃপর দাজ্জাল [অন্য]
লোকের নিকট যাবে ও তার দিকে [আসার জন্য] তাদেরকে আহ্বান জানাবে। তারা কিন্তু তার
ডাকে সাড়া দেবে না। ফলে সে তাদের নিকট থেকে ফিরে যাবে। সে সময় তারা চরম দুর্ভিক্ষে
আক্রান্ত হয়ে পড়বে ও সর্বস্বান্ত হবে। তারপর সে কোন প্রাচীন ধ্বংসস্তূপের নিকট
দিয়ে অতিক্রম করার সময় সেটাকে সম্বোধন করে বলবে, ‘তুই
তোর গচ্ছিত রত্নভাণ্ডার বের করে দে।’ তখন সেখানকার গুপ্ত
রত্নভাণ্ডার মৌমাছিদের নিজ রাণী মৌমাছির অনুসরণ করার মতো [মাটি থেকে বেরিয়ে] তার
পিছন ধরবে। তারপর এক পূর্ণ যুবককে ডেকে তাকে অস্ত্রাঘাতে দ্বিখণ্ডিত করে তীর
নিক্ষেপের লক্ষ্যমাত্রার দূরত্বে নিক্ষেপ করে দেবে। তারপর তাকে ডাক দেবে। আর সে
উজ্জ্বল সহাস্য-বদনে তার দিকে [অক্ষত শরীরে] এগিয়ে আসবে।
দাজ্জাল এরূপ কর্ম-কাণ্ডে মগ্ন থাকবে। ইত্যবসরে মহান
আল্লাহ তা‘আলা মসীহ ইবন মারয়্যাম আলাইহিস
সালাম-কে
পৃথিবীতে পাঠাবেন। তিনি দামেস্কের পূর্বে অবস্থিত শেবত মিনারের নিকট অর্স ও জাফরান
মিশ্রিত রঙের দুই বস্ত্র পরিহিত অবস্থায় দু’জন ফিরিশ্তার
ডানাতে হাত রেখে অবতরণ করবেন। তিনি যখন মাথা নিচু করবেন, তখন
মাথা থেকে বিন্দু বিন্দু পানি ঝরবে এবং যখন মাথা উঁচু করবেন, তখনও
মতির আকারে তা গড়িয়ে পড়বে। যে কাফেরই তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাসের নাগালে আসবে, সে সঙ্গে সঙ্গে প্রাণ হারাবে। তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাস তাঁর দৃষ্টি
যত দূর যাবে, তত দূর পৌঁছবে। অতঃপর তিনি দাজ্জালের সন্ধান
চালাবেন। শেষ পর্যন্ত [জেরুজালেমের] ‘লুদ’ প্রবেশ
দ্বারে তাকে ধরে ফেলবেন এবং অনতিবিলম্বে তাকে
হত্যা করে দেবেন।
তারপর ঈসা আলাইহিস সালাম এমন এক জনগোষ্ঠীর নিকট আসবেন, যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা দাজ্জালের চক্রান্ত
ও ফিতনা থেকে মুক্ত রেখেছেন। তিনি তাদের চেহারায় হাত বোলাবেন [বিপদমুক্ত করবেন]
এবং জান্নাতে তাদের মর্যাদাসমূহ সম্পর্কে তাদেরকে জানাবেন। এসব কাজে তিনি ব্যস্ত
থাকবেন এমন সময় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিকট অহি পাঠাবেন যে, ‘‘আমি আমার কিছু বান্দার আবির্ভাব ঘটিয়েছি, তাদের
বিরুদ্ধে কারো লড়ার ক্ষমতা নেই। সুতরাং তুমি আমার প্রিয় বান্দাদের নিয়ে ‘ত্বূর’ পর্বতে আশ্রয় নাও।’’ আল্লাহ
তা‘আলা য়্যা’জুজ-মা’জুজ
জাতিকে পাঠাবেন। তারা প্রত্যেক উচ্চস্থান থেকে দ্রুত বেগে ছুটে যাবে। তাদের প্রথম
দলটি ত্বাবারী হ্রদ পার হবার সময় তার সম্পূর্ণ পানি এমনভাবে পান করে ফেলবে যে, তাদের সর্বশেষ দলটি সেখান দিয়ে পার হবার সময় বলবে,
এখানে এক সময় পানি ছিল। আল্লাহর নবী ঈসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর সাথীরা অবরুদ্ধ হয়ে
পড়বেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত তাঁদের কাছে একটি গরুর মাথা, বর্তমানে
তোমাদের একশ’টি স্বর্ণমুদ্রা অপেক্ষা অধিক উত্তম হবে। সুতরাং
আল্লাহর নবী ঈসা আলাইহিস
সালাম
এবং তাঁর সঙ্গীগণ আল্লাহর কাছে দো‘আ করবেন। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের [য়্যা’জূজ-মা’জূজ
জাতির] ঘাড়সমূহে এক প্রকার কীট সৃষ্টি করে দেবেন। যার শিকারে পরিণত হয়ে তারা এক
সঙ্গে সবাই মারা যাবে। তারপর আল্লাহ তা'আলার
নবী ঈসা আলাইহিস
সালাম
ও তাঁর সাথীগণ নিচে নেমে আসবেন। তারপর [এমন অবস্থা ঘটবে যে,] সেই
অঞ্চল তাদের মৃতদেহ ও দুর্গন্ধে ভরে থাকবে; এক বিঘত জায়গাও
তা থেকে খালি থাকবে না। সুতরাং ঈসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর সঙ্গীরা আল্লাহর কাছে দো‘আ
করবেন। ফলে তিনি বুখতী উটের ঘাড়ের ন্যায় বৃহদকায় এক প্রকার পাখি পাঠাবেন। তারা
উক্ত লাশগুলিকে তুলে নিয়ে গিয়ে আল্লাহ যেখানে চাইবেন সেখানে নিয়ে গিয়ে নিক্ষেপ
করবে। তারপর আল্লাহ তা‘আলা এমন প্রবল বৃষ্টি বর্ষণ করবেন যে, কোন ঘর ও শিবির বাদ পড়বে না। সুতরাং সমস্ত জমিন ধুয়ে মসৃণ পাথরের
ন্যায় অথবা স্বচ্ছ কাঁচের ন্যায় পরিষ্কার হয়ে যাবে। তারপর জমিনকে আদেশ করা হবে যে, ‘তুমি আপন ফল-মূল যথারীতি উৎপন্ন কর ও নিজ বরকত পুনরায় ফিরিয়ে
আন।’ সুতরাং [বরকতের এত ছড়াছড়ি হবে যে,] একদল
লোক একটি মাত্র ডালিম ফল ভক্ষণ করে পরিতৃপ্ত হবে এবং তার খোসার নীচে ছায়া অবলম্বন
করবে। পশুর দুধে এত প্রাচুর্য প্রদান করা হবে যে, একটি মাত্র
দুগ্ধবতী উটনী একটি সম্প্রদায়ের জন্য যথেষ্ট হবে। একটি দুগ্ধবতী গাভী একটি গোত্রের
জন্য যথেষ্ট হবে। আর একটি দুগ্ধবতী ছাগী কয়েকটি পরিবারের জন্য যথেষ্ট হবে।
তারা ঐ অবস্থায় থাকবে, এমন সময় আল্লাহ তা‘আলা এক প্রকার পবিত্র বাতাস পাঠাবেন, যা
তাদের বগলের নীচে দিয়ে প্রবাহিত হবে। ফলে প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জীবন হরণ করবে।
তারপর স্রেফ দুর্বৃত্ত ও অসৎ মানুষজন বেঁচে থাকবে, যারা এই
ধরার বুকে গাধার ন্যায় প্রকাশ্যে লোকচক্ষুর সামনে ব্যভিচারে লিপ্ত হবে। সুতরাং
এদের উপরেই সংঘটিত হবে মহাপ্রলয় [কিয়ামত]।’’ (মুসলিম)[1]
2/1818. وَعَنْ رِبعِيِّ بنِ حِرَاشٍ، قَالَ: اِنْطَلَقْتُ مَعَ أَبِيْ
مَسعُودٍ الأَنصَارِي إِلَى حُذَيفَةَ بنِ اليَمَانِ ، فَقَالَ لَهُ أَبُو
مَسْعُودٍ : حَدِّثْنِي مَا سَمِعْتَ مِنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فِي
الدَّجَّالِ، قَالَ: «إِنَّ
الدَّجَّالَ يَخْرُجُ، وَإِنَّ مَعَهُ مَاءً وَنَاراً، فَأَمَّا الَّذِي يَرَاهُ
النَّاسُ مَاءً فَنَارٌ تُحْرِقُ، وَأَمَّا الَّذِي يَرَاهُ النَّاسُ نَاراً،
فَمَاءٌ بَارِدٌ عَذْبٌ . فَمَنْ أَدْرَكَهُ مِنْكُمْ، فَلْيَقَعْ فِي الَّذي
يَراهُ نَاراً، فَإِنَّهُ مَاءٌ عَذْبٌ طَيِّبٌ» فقال أبو مسعود: وَأنَا قَدْ سَمِعْتُهُ . متفق عليه
২/১৮১৮। রিবঈ ইবনে হিরাশ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ মাসঊদ আনসারী রাদিয়াল্লাহু
আনহু-এর সঙ্গে আমি হুযাইফা ইবনে ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট গেলাম। আবূ
মাসঊদ তাঁকে বললেন, ‘দাজ্জাল সম্পর্কে যা আপনি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে শুনেছেন, তা আমাকে
বর্ণনা করুন।’ তিনি বলতে লাগলেন, ‘দাজ্জালের
আবির্ভাব ঘটবে। তার সঙ্গে থাকবে পানি ও আগুন। যাকে লোক পানি মনে করবে, বাস্তবে তা দগ্ধ-কারী আগুন এবং লোকে যাকে আগুন বলে মনে করবে, তা বাস্তবে সুমিষ্ট শীতল পানি হবে। অতএব তোমাদের মধ্যে যে কেউ
তাকে [দেখতে] পাবে, সে যেন তাতে পতিত হয় যাকে আগুন মনে করে।
কেননা, তা বাস্তবে মিষ্ট উত্তম পানি।’ আবূ
মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এ হাদিসটি আমিও [স্বয়ং]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। (বুখারী-মুসলিম)
[2]
3/1819. وَعَنْ عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا،
قاَلَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «يَخْرُجُ الدَّجَّالُ فِي أُمَّتِي فَيَمْكُثُ أَرْبَعِينَ، لاَ
أَدْرِي أَرْبَعِينَ يَوماً أَو أَرْبَعِينَ شَهْراً، أَو أَرْبَعِينَ عَاماً،
فَيَبْعَثُ اللهُ تَعالَى عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ، فَيَطْلُبُهُ فَيُهْلِكُهُ،
ثُمَّ يَمْكُثُ النَّاسُ سَبْعَ سِنِينَ لَيسَ بَينَ اثْنَينِ عَدَاوةٌ، ثُمَّ
يُرْسِلُ اللهُ ـ عَزَّ وَجَلَّ ـ، رِيحاً بَارِدَةً مِنْ قِبَلِ الشَّامِ، فَلاَ
يَبْقَى عَلَى وَجْهِ الأَرْضِ أَحَدٌ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ خَيرٍ
أَو إِيمَانٍ إِلاَّ قَبَضَتْهُ، حَتَّى لَو أَنَّ أَحَدَكُمْ دَخَلَ فِي كَبِدِ
جَبَلٍ، لَدَخَلَتْهُ عَلَيهِ حَتَّى تَقْبِضَهُ، فَيَبْقَى شِرَارُ النَّاسِ فِي
خِفَّةِ الطَّيْرِ، وَأَحْلاَمِ السِّبَاعِ، لاَ يَعْرِفُونَ مَعْرُوفاً، وَلاَ
يُنْكِرُونَ مُنْكَراً، فَيَتَمَثَّلُ لَهُمُ الشَّيْطَانُ، فيَقُولُ : أَلاَ
تَسْتَجِيبُونَ ؟ فَيَقُولُونَ : فَمَا تَأمُرُنَا ؟ فَيَأمُرُهُمْ بِعِبَادَةِ
الأَوْثَانِ، وَهُمْ فِي ذَلِكَ دَارٌّ رِزْقُهُمْ، حَسَنٌ عَيشُهُمْ، ثُمَّ
يُنْفَخُ في الصُّورِ، فَلاَ يَسْمَعُهُ أَحَدٌ إِلاَّ أصْغَى لِيتاً وَرَفَعَ لِيتاً،
وَأوَّلُ مَنْ يَسْمَعُهُ رَجُلٌ يَلُوطُ حَوْضَ إِبِلِهِ فَيُصْعَقُ وَيُصْعَقُ
النَّاسُ حَولَهُ، ثُمَّ يُرْسِلُ اللهُ - أَو قَالَ: يُنْزِلُ اللهُ - مَطَراً
كَأَنَّهُ الطَّلُّ أَوِ الظِّلُّ، فَتَنْبُتُ مِنهُ أَجْسَادُ النَّاسِ، ثُمَّ
يُنْفَخُ فِيهِ أُخْرَى فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَنْظُرُونَ، ثُمَّ يُقَالُ : يَا
أَيُّهَا النَّاسُ هَلُمَّ إلَى رَبِّكُمْ، وَقِفُوهُمْ إِنَّهُمْ مَسْئُولُونَ،
ثُمَّ يُقَالُ : أَخْرِجُوا بَعْثَ النَّارِ فَيُقَالُ : مِنْ كَمْ ؟ فَيُقَالُ :
مِنْ كُلِّ أَلْفٍ تِسْعَمِئَةٍ وَتِسْعَةً وَتِسْعِينَ؛ فَذَلِكَ يَومٌ يَجْعَلُ
الوِلْدَانَ شِيباً، وَذَلِكَ يَومَ يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ». رواه مسلم
৩/১৮১৯। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমার
উম্মতের মধ্যে দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে এবং সে চল্লিশ পর্যন্ত অবস্থান করবে। আমি
জানি না চল্লিশ দিন, চল্লিশ মাস, না
চল্লিশ বছর। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা ঈসা ইবনে মারয়্যাম -কে
পাঠাবেন। তিনি তাকে খুঁজে বের করে ধ্বংস করবেন। অতঃপর লোকেরা [দীর্ঘ] সাত বছর
ব্যাপী [এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে] কাল উদযাপন করবে, যাতে
দুজনের পারস্পরিক কোন প্রকার শত্রুতা থাকবে না। তারপর মহান আল্লাহ শাম দেশ থেকে
শীতল বায়ু চালু করবেন যা জমিনের বুকে এমন কোন ব্যক্তিকে জীবিত ছাড়বে না, যার অন্তরে অণু পরিমাণ মঙ্গল অথবা ঈমান থাকবে। এমনকি তোমাদের কেউ
যদি পর্বত-গর্ভে প্রবেশ করে, তাহলে সেখানেও প্রবেশ করে তার
জীবন নাশ করবে। [তারপর ভূপৃষ্ঠে] দুর্বৃত্ত প্রকৃতির লোক থেকে যাবে,
যারা কাম-প্রবৃত্তি চরিতার্থের ব্যাপারে ক্ষিপ্ত গতি-মান পাখির মত হবে, একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুতা ও রক্তপাত করার ক্ষেত্রে হিংস্র পশুর
ন্যায় হবে। যারা কখনো ভাল কাজের আদেশ করবে না এবং কোন মন্দ কাজে বাধা দেবে না।
শয়তান তাদের সামনে মানবরূপ ধারণ করে আত্মপ্রকাশ করবে ও বলবে, ‘তোমরা
আমার আহবানে সাড়া দেবে না?’ তারা বলবে, ‘আমাদেরকে
আপনি কি আদেশ করছেন?’ সে তখন তাদেরকে মূর্তি পূজার আদেশ
দেবে। আর এসব কর্মকাণ্ডে তাদের জীবিকা সচ্ছল হবে এবং জীবন সুখের হবে। অতঃপর
শিঙ্গায় [প্রলয় বীণায়] ফুঁৎকার দেওয়া হবে। যে ব্যক্তিই সে শব্দ শুনবে, সেই তার ঘাড়ের একদিক কাত করে দেবে ও অপর দিক উঁচু করে দেবে।
সর্বাগ্রে এমন এক ব্যক্তি তা শুনতে পাবে, যে তার উটের [জন্য
পানি রাখার] হওয লেপায় ব্যস্ত থাকবে। সে শিঙ্গার শব্দ শোনামাত্র অজ্ঞান হয়ে মাটিতে
পড়ে যাবে। তার সাথে সাথে তার আশে-পাশের লোকরাও অজ্ঞান হয়ে [ধরাশায়ী হয়ে] যাবে।
অতঃপর আল্লাহ শিশিরের ন্যায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পাঠাবেন। যার ফলে পুনরায় মানবদেহ
[উদ্ভিদের ন্যায়] গজিয়ে উঠবে। তারপর যখন দ্বিতীয়বার শিঙ্গা বাজানো হবে, তখন তারা উঠে দেখতে থাকবে। তাদেরকে বলা হবে, ‘হে
লোক সকল! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের দিকে এগিয়ে এসো।’ [অন্য
দিকে ফিরিশতাদেরকে হুকুম করা হবে যে,] ‘তোমরা ওদেরকে থামাও।
ওদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ তারপর বলা হবে, ‘ওদের মধ্য থেকে জাহান্নামে প্রেরিতব্য
দল বের করে নাও।’ জিজ্ঞাসা করা হবে, ‘কত
থেকে কত?’ বলা হবে, ‘প্রতি হাজারে নয়শ’ নিরানববই জন।’ বস্তুতঃ এ দিনটি এত ভয়ংকর
হবে যে, শিশুকে বৃদ্ধ বানিয়ে দেবে এবং এ দিনেই [মহান আল্লাহ
নিজ] পায়ের গোছা অনাবৃত করবেন।’’ (মুসলিম) [3]
4/1820 وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «لَيسَ مِنْ بَلَدٍ إِلاَّ سَيَطَؤُهُ الدَّجَّالُ إِلاَّ مَكَّةَ
وَالمَدِينَةَ ؛ وَلَيْسَ نَقْبٌ مِنْ أَنْقَابِهِمَا إِلاَّ عَلَيْهِ
المَلاَئِكَةُ صَافِّينَ تَحْرُسُهُمَا، فَيَنْزِلُ بالسَّبَخَةِ، فَتَرْجُفُ
المَدِينَةُ ثَلاَثَ رَجَفَاتٍ، يُخْرِجُ اللهُ مِنْهَا كُلَّ كَافِرٍ وَمُنَافِقٍ» . رواه مسلم
৪/১৮২০।
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘মক্কা ও মদিনা ব্যতীত অন্য সব শহরেই দাজ্জাল
প্রবেশ করবে। মক্কা ও মদিনার গিরিপথে ফিরিশতারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে উক্ত
শহরদ্বয়ের প্রহরায় রত থাকবেন। দাজ্জাল [মদিনার নিকটস্থ] বালুময় লোনা জমিতে অবতরণ
করবে। সে সময় মদিনা তিনবার কেঁপে উঠবে। মহান আল্লাহ সেখান থেকে প্রত্যেক কাফের ও
মুনাফিককে বের করে দেবেন।’’ (মুসলিম)[4]
5/1821 وَعنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم قَالَ: «يَتْبَعُ
الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ سَبْعُونَ أَلْفاً عَلَيْهِم الطَّيَالِسَةُ» . رواه مسلم
৫/১৮২১।
উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আসফাহান
[ইরানের একটি প্রসিদ্ধ শহরে]র সত্তর হাজার ইয়াহুদী দাজ্জালের অনুসরণ করবে; তাদের কাঁধে থাকবে ত্বাইলেসী রুমাল।’’ (মুসলিম) [5]
6/1822 وَعَنْ أُمِّ شَرِيكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا : أَنَّهَا سَمِعَتِ
النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ : «لَيَنْفِرَنَّ النَّاسُ مِنَ الدَّجَّالِ فِي الجِبَالِ» . رواه مسلم
৬/১৮২২।
উম্মে শারীক রাদিয়াল্লাহু আনহা রাদিয়াল্লাহু
আনহা হতে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
বলতে শুনেছেন যে, ‘‘অবশ্যই লোকেরা দাজ্জালের ভয়ে ভীত হয়ে
পালিয়ে গিয়ে পর্বতে আশ্রয় গ্রহণ করবে।’’ (মুসলিম)[6]
7/1823 وَعَنْ عِمرَانَ بنِ حُصَينٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ: سَمِعْتُ
رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ : «مَا بَيْنَ خَلْقِ آدَمَ إِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ أَمْرٌ أَكْبَرُ
مِنَ الدَّجَّالِ» .
رواه مسلم
৭/১৮২৩। ইমরান ইবনে হুস্বাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে
বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘আদমের
জন্মলগ্ন থেকে নিয়ে কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত দাজ্জালের [ফিতনা-ফ্যাসাদ] অপেক্ষা
অন্য কোন বিষয় [বড় বিপজ্জনক] হবে না।’’ (মুসলিম)[7]
8/1824 وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدرِيِّ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى
الله عليه وسلم قَالَ: «يَخْرُجُ
الدَّجَّالُ فَيَتَوجَّهُ قِبَلَهُ رَجُلٌ مِنَ المُؤمِنِينَ فَيَتَلَقَّاهُ
المَسَالِحُ : مَسَالِحُ الدَّجَّال . فَيقُولُونَ لَهُ : إِلَى أَيْنَ تَعْمِدُ ؟
فَيَقُولُ : أَعْمِدُ إِلَى هَذَا الَّذِي خَرَجَ . فَيَقُولُونَ لَهُ : أَوَمَا
تُؤْمِنُ بِرَبِّنَا ؟ فَيَقُولُ : مَا بِرَبِّنَا خَفَاءٌ ! فَيَقُولُونَ :
اقْتُلُوهُ . فَيقُولُ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ : أَلَيْسَ قَدْ نَهَاكُمْ رَبُّكُمْ
أَنْ تَقْتُلُوا أَحَداً دُونَهُ ؟ فَيَنْطَلِقُونَ بِهِ إِلَى الدَّجَّالِ،
فَإِذَا رَآهُ المُؤْمِنُ قَالَ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ هَذَا الدَّجَّالَ
الَّذِي ذَكَرَ رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم ؛ فَيَأمُرُ الدَّجَّالُ بِهِ
فَيُشَبَّحُ ؛ فَيَقُولُ : خُذُوهُ وَشُجُّوهُ . فَيُوسَعُ ظَهْرُهُ وَبَطْنُهُ
ضَرْباً، فَيَقُولُ : أَوَمَا تُؤْمِنُ بِي ؟ فَيَقُولُ : أَنْتَ المَسِيحُ
الكَذَّابُ ! فَيُؤْمَرُ بِهِ، فَيُؤْشَرُ بِالمنْشَارِ مِنْ مَفْرِقِهِ حَتَّى
يُفَرِّقَ بَيْنَ رِجْلَيْهِ . ثُمَّ يَمْشِي الدَّجَّالُ بَيْنَ القِطْعَتَيْنِ
ثُمَّ يَقُولُ لَهُ : قُمْ، فَيَسْتَوِي قَائِماً . ثُمَّ يَقُولُ لَهُ :
أَتُؤْمِنُ بِي ؟ فَيَقُولُ : مَا ازْدَدْتُ فِيكَ إِلاَّ بَصِيرَةً . ثُمَّ
يَقُولُ : يَا أَيُّهَا النَّاسُ إنَّهُ لاَ يَفْعَلُ بَعْدِي بِأَحَدٍ مِنَ
النَّاسِ ؛ فَيَأخُذُهُ الدَّجَّالُ لِيَذْبَحَهُ، فَيَجْعَلُ اللهُ مِا بَيْنَ
رَقَبَتِهِ إلَى تَرْقُوَتِهِ نُحَاساً، فَلاَ يَسْتَطِيعُ إِلَيهِ سَبِيلاً،
فَيَأخُذُهُ بِيَدَيْهِ وَرِجْلَيْهِ فَيَقْذِفُ بِهِ، فَيَحْسَبُ النَّاسُ
أَنَّهُ قَذَفَهُ إلَى النَّارِ، وَإِنَّمَا أُلْقِيَ فِي الجَنَّةِ» . فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم :«هَذَا أَعْظَمُ النَّاس شَهَادَةً عِندَ رَبِّ العَالَمِينَ» . رواه مسلم . وروى البخاري بعضه بمعناه .
৮/১৮২৪। আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘দাজ্জালের আবির্ভাব হলে
মুমীনদের মধ্য থেকে একজন মুমিন তার দিকে অগ্রসর হবে। তখন [পথিমধ্যে] দাজ্জালের
সশস্ত্র প্রহরীদের সাথে তার দেখা হবে। তারা তাকে জিজ্ঞাসা করবে, ‘কোন্
দিকে যাবার ইচ্ছা করছ?’ সে উত্তরে বলবে, ‘যে
ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটেছে, তার কাছে যেতে চাচ্ছি।’ তারা তাকে বলবে, ‘তুমি কি আমাদের প্রভুর
প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর না?’ সে উত্তর দেবে,
‘আমাদের প্রভু [আল্লাহ তো] গুপ্ত নন যে, [অন্য কাউকে
প্রভু বানিয়ে মানতে লাগব]।’ [এরূপ
শুনে] তারা বলবে, ‘একে হত্যা করে দাও।’ তখন
তারা নিজেদের মধ্যে একে অপরকে বলবে, ‘তোমাদের প্রভু কি
তোমাদেরকে নিষেধ করেননি যে, তোমরা তার বিনা অনুমতিতে কাউকে
হত্যা করবে না?’ ফলে তারা ঐ মুমীনকে ধরে দাজ্জালের কাছে নিয়ে
যাবে। যখন মুমিন দাজ্জালকে দেখতে পাবে, তখন সে
[স্বতঃস্ফূর্তভাবে] বলে উঠবে, ‘হে লোক সকল! এই সেই দাজ্জাল, যার সম্পর্কে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলোচনা
করতেন।’ তখন দাজ্জাল তার জন্য আদেশ দেবে যে, ‘ওকে
উপুড় করে শোয়ানো হোক।’ তারপর বলবে, ‘ওকে
ধরে ওর মুখে-মাথায় প্রচন্ডভাবে আঘাত কর।’ সুতরাং তাকে মেরে
মেরে তার পেট ও পিঠ চওড়া করে দেওয়া হবে। তখন সে [দাজ্জাল] প্রশ্ন করবে, ‘তুমি আমার প্রতি বিশ্বাস রাখ?’ সে উত্তর
দেবে, ‘তুই তো মহা মিথ্যাবাদী মসীহ।’ সুতরাং
তার সম্পর্কে আবার আদেশ দেওয়া হবে, ফলে তার মাথার সিঁথির উপর
করাত রেখে তাকে দ্বিখন্ড করে দেওয়া হবে; এমনকি তার পা-দুটোকে
আলাদা করে দেওয়া হবে। তারপর দাজ্জাল তার দেহ খন্ডদ্বয়ের মাঝখানে হাঁটতে থাকবে এবং
বলবে, ‘উঠ।’ সুতরাং সে [মুমীন] উঠে
সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে! দাজ্জাল আবার তাকে প্রশ্ন করবে, ‘তুমি
কি আমার প্রতি ঈমান আনছ?’ সে জবাব দেবে, ‘তোর
সম্পর্কে তো আমার ধারণা আরও দৃঢ় হয়ে গেল।’ তারপর মুমিন বলবে, ‘হে লোক সকল! আমার পরে ও অন্য কারো সাথে এরূপ [নির্মম] আচরণ করতে
পারবে না।’ সুতরাং দাজ্জাল তাকে যবেহ করার মানসে ধরবে।
কিন্তু আল্লাহ তার ঘাড় থেকে কণ্ঠাস্থি পর্যন্ত তামায় পরিণত করে দেবেন। ফলে দাজ্জাল
তাকে যবেহ করার কোন উপায় খুঁজে পাবে না। তারপর তার হাত-পা ধরে ছুঁড়ে ফেলে দেবে।
তখন লোকে ধারণা করবে যে, সে তাকে আগুনে নিক্ষেপ করল। কিন্তু
[বাস্তবে] তাকে জান্নাতে নিক্ষেপ করা হবে।’’ অতঃপর
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘বিশ্বচরাচরের পালনকর্তার
নিকট ঐ ব্যক্তিই সবার চেয়ে বড় শহীদ।’’ [মুসলিম, ইমাম বুখারী অনুরূপ অর্থে এর কিছু অংশ বর্ণনা করেছেন।][8]
9/1825 وَعَنِ الْمُغِيرَةِ بنِ شُعبَةَ رضي الله
عنه قَالَ: مَا سَأَلَ أَحَدٌ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَن
الدَّجَّالِ أَكْثَرَ مِمَّا سَأَلْتُهُ ؛ وَإِنَّهُ قَالَ لِي : «مَا يَضُرُّكَ؟»
قُلْتُ : إِنَّهُمْ يَقُولُونَ : إِنَّ مَعَهُ جَبَلَ خُبْزٍ وَنَهَرَ مَاءٍ .
قَالَ: «هُوَ أَهْوَنُ عَلَى اللهِ مِنْ ذَلكَ» . متفق عليه
৯/১৮২৫। মুগীরা ইবনে শু‘বা রাদিয়াল্লাহু
আনহু
হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে দাজ্জাল সম্পর্কে যত জিজ্ঞাসা করেছি, তার
চেয়ে বেশি আর কেউ করেনি। তিনি আমাকে বললেন, ‘‘ও তোমার কি ক্ষতি করবে?’’ আমি বললাম, ‘লোকেরা
বলে যে, তার সাথে রুটির পাহাড় ও পানির নহর থাকবে।’ তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহর কাছে তা অতি সহজ।’’ (বুখারী-মুসলিম)[9]
10/1826 وَعَنْ أَنَسٍ
رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «مَا مِنْ نَبِيٍّ إِلاَّ وَقَدْ أَنْذَرَ أُمَّتَهُ الأَعْوَرَ
الكَذَّابَ، أَلاَ إِنَّهُ أَعْوَرُ، وَإِنَّ رَبَّكُمْ ـ عَزَّ وَجَلَّ ـ لَيْسَ
بِأَعْوَرَ، مَكْتُوبٌ بَيْنَ عَيْنَيْهِ ك ف ر» . متفق عليه
১০/১৮২৬। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘এমন কোন নবী নেই, যিনি নিজ উম্মতকে
মহা-মিথ্যাবাদী কানা [দাজ্জাল] সম্পর্কে সতর্ক করেননি। কিন্তু [মনে রাখবে,] সে [এক চোখের] কানা হবে। আর নিশ্চয় তোমাদের মহামহিমান্বিত
প্রতিপালক কানা নন। তার কপালে ‘কাফ-ফা-রা’ [কাফের]
শব্দ লেখা থাকবে।’’ (বুখারী-মুসলিম)[10]
11/1827 وَعَنْ أَبِي
هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «أَلاَ أُحَدِّثُكُمْ حَدِيثاً عَنِ الدَّجَّالِ مَا حَدَّثَ بِهِ
نَبِيٌّ قَومَهُ ! إِنَّهُ أَعوَرُ، وَإِنَّهُ يَجِيءُ مَعَهُ بِمِثالِ الجنَّةِ
وَالنَّارِ، فَالَّتِي يَقُولُ إِنَّهَا الجَنَّةُ هِيَ النَّارُ» . متفقٌ عليهِ
১১/১৮২৭। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু
হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘শোন!
তোমাদেরকে দাজ্জাল সম্পর্কে আমি কি এমন কথা বলব না, যা কোন
নবীই তাঁর জাতিকে বলেননি? তা হল এই যে, সে
হবে কানা। আর সে নিজের সাথে নিয়ে আসবে জান্নাত ও জাহান্নামের মত কিছু। যাকে সে জান্নাত বলবে, বাস্তবে
সেটাই জাহান্নাম হবে।’’ (বুখারী-মুসলিম)
[11]
12/1828 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا : أَنَّ رَسُولَ
اللهِ صلى الله عليه وسلم ذَكَرَ الدَّجَّالَ بَيْنَ ظَهْرَانَي النَّاسِ،
فَقَالَ: «إنَّ اللهَ لَيْسَ بِأَعْوَرَ، أَلاَ إِنَّ
المَسِيحَ الدَّجَّالَ أَعْوَرُ العَيْنِ اليُمْنَى، كَأنَّ عَيْنَهُ عِنَبَةٌ
طَافِيَةٌ». متفق عليه
১২/১৮২৮। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু
আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
লোকদের সামনে দাজ্জাল সংক্রান্ত আলোচনা করে বললেন, ‘‘নিশ্চয়
আল্লাহ কানা নন। সাবধান! মসীহ দাজ্জালের ডান চোখ কানা এবং তার চোখটি যেন [গুচ্ছ
থেকে] ভেসে ওঠা আঙ্গুর।’’ (বুখারী-মুসলিম) [12]
*
[অর্থাৎ অন্য চোখটির তুলনায় এ চোখটি বাইরে বেরিয়ে থাকবে।]
13/1829 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم قَالَ: «لاَ تَقُومُ
السَّاعَةُ حَتَّى يُقَاتِلَ المُسْلِمُونَ اليَهُودَ، حَتَّى يَخْتَبِئَ
اليَهُودِيُّ مِنْ وَرَاء الحَجَرِ وَالشَّجَرِ . فَيَقُولُ الحَجَرُ وَالشَّجَرُ
: يَا مُسْلِمُ هَذَا يَهُودِيٌّ خَلْفِي تَعَالَ فَاقْتُلْهُ ؛ إِلاَّ الغَرْقَدَ
فَإِنَّهُ مِنْ شَجَرِ اليَهُودِ».
متفق عليه
১৩/১৮২৯।
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইরশাদ করেছেন, ‘‘কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যে
পর্যন্ত মুসলিমরা ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করবে। এমনকি ইহুদী পাথর ও গাছের
আড়ালে আত্মগোপন করলে পাথর ও গাছ বলবে ‘হে মুসলিম! আমার পিছনে
ইহুদী রয়েছে। এসো, ওকে হত্যা কর।’ কিন্তু
গারক্বাদ গাছ [এরূপ বলবে] না। কেননা এটা ইহুদীদের গাছ।’’ (বুখারী-মুসলিম) [13]
14/1830 وَعَنْه رضي الله
عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لاَ تَذْهَبُ الدُّنْيَا حَتَّى يَمُرَّ
الرَّجُلُ عَلَى القَبْرِ، فَيَتَمَرَّغَ عَلَيْهِ وَيَقُولُ : يَالَيْتَنِي
كُنْتُ مَكَانَ صَاحِبِ هَذَا القَبْرِ، وَلَيْسَ بِهِ الدِّينُ، مَا بِهِ إِلاَّ
البَلاَءُ» . متفق عليه
১৪/১৮৩০।
উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘সেই মহান সত্তার কসম, যার
হাতে আমার জীবন আছে! ততক্ষণ পর্যন্ত দুনিয়া বিনাশ হবে না, যতক্ষণ
পর্যন্ত না কোন ব্যক্তি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম-কালে উক্ত কবরের উপর গড়াগড়ি দেবে
আর বলবে, ‘হায়! হায়! যদি আমি এই কবর-বাসীর স্থানে হতাম!’ এরূপ উক্তি সে দ্বীন রক্ষার মানসে বলবে না। বরং তা বলবে পার্থিব
বালা-মুসীবতে অতিষ্ঠ হওয়ার কারণে।’’ (বুখারী-মুসলিম)[14]
15/1831 وَعَنْهُ رضي الله عنه
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَحْسِرَ الفُرَاتُ عَنْ جَبَلٍ مِنْ
ذَهَبٍ يُقْتَتَلُ عَلَيْهِ، فَيُقْتَلُ مِنْ كُلِّ مِئَةٍ تِسْعَةٌ وَتِسْعُونَ،
فَيَقُولُ كُلُّ رَجُلٍ مِنْهُمْ : لَعَلِّي أَنْ أَكُونَ أَنَا أَنْجُو». وَفي رواية : «يُوشِكُ
أَنْ يَحْسِرَ الفُرَاتُ عَنْ كَنْزٍ مِنْ ذَهَبٍ، فَمَنْ حَضَرَهُ فَلاَ يَأخُذْ
مِنْهُ شَيْئاً».
متفق عليه
১৫/১৮৩১।
উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘ততদিন
পর্যন্ত মহাপ্রলয় সংঘটিত হবে না, যতদিন পর্যন্ত ফুরাত নদী
[তার গর্ভস্থ] একটি সোনার পাহাড় বের না করে দেবে; যা নিয়ে
যুদ্ধ চলবে। তাতে নিরানববই শতাংশ মানুষ নিহত হবে! তাদের প্রত্যেকেই বলবে যে, ‘সম্ভবত: আমি বেঁচে যাব।’’
অন্য
এক বর্ণনায় আছে, ‘‘অদূর ভবিষ্যতে ফুরাত নদী তার গর্ভস্থ স্বর্ণের
খনি বের করে দেবে। সুতরাং সে সময় যে সেখানে উপস্থিত হবে, সে
যেন তা থেকে কিছুই গ্রহণ না করে।’’ (বুখারী-মুসলিম)[15]
16/1832 وَعَنْهُ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ :
«يَتْرُكُونَ المَدِينَةَ عَلَى خَيْرِ مَا كَانَتْ، لاَ يَغْشَاهَا
إِلاَّ العَوَافِي يُرِيدُ ـ عَوَافِي السِّبَاعِ وَالطَّيرِ ـ وَآخِرُ مَنْ
يُحْشَرُ رَاعِيَانِ مِنْ مُزَيْنَةَ يُرِيدَانِ المَدِينَةَ يَنْعِقَانِ
بِغَنَمِهِمَا فَيَجِدَانِهَا وُحُوشاً، حَتَّى إِذَا بَلَغَا ثَنِيَّةَ الوَدَاعِ
خَرَّا عَلَى وُجُوهِهمَا» .
متفق عليه
১৬/১৮৩২।
উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
বলতে শুনেছি, ‘‘মদিনার অবস্থা উত্তম থাকা সত্ত্বেও তার
অধিবাসীরা মদিনা ত্যাগ করে চলে যাবে। [সে সময়] সেখানে কেবল বন্য হিংস্র
পশু-পক্ষীতে ভরে যাবে। সব শেষে যাদের উপর কিয়ামত সংঘটিত হবে, তারা
মুযাইনাহ গোত্রীয় দু’জন রাখাল, যারা
নিজেদের ছাগলের পাল হাঁকাতে হাঁকাতে মদিনা অভিমুখে নিয়ে যাবে। তারা মদিনাকে হিংস্র
জীব-জন্তুতে ঠাসা অবস্থায় পাবে। তারপর যখন তারা [মদিনার উপকণ্ঠে অবস্থিত] ‘সানিয়্যাতুল্ অদা’ নামক স্থানে পৌঁছবে, তখন তারা মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে যাবে।’’ (বুখারী-মুসলিম) [16]
17/1833 وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدرِيِّ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ صلى
الله عليه وسلم قَالَ: «يَكُونُ
خَلِيفَةٌ مِنْ خُلَفَائِكُمْ فِي آخِرِ الزَّمَانِ يَحْثُو المَالَ وَلاَ
يَعُدُّهُ» . رواه مسلم
১৭/১৮৩৩। আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু
হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘শেষ যুগে তোমাদের একজন খলীফা হবে, যে
দু’ হাতে করে ধন-সম্পদ দান করবে এবং গুনবেও না।’’ (মুসলিম)
[17]
18/1834 وَعَنْ أَبِي
مُوسَى الأَشْعَرِيِّ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «لَيَأتِيَنَّ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ يَطُوفُ الرَّجُلُ فِيهِ
بِالصَّدَقَةِ مِنَ الذَّهَبِ فَلاَ يَجِدُ أَحَداً يَأخُذُهَا مِنهُ، وَيُرَى
الرَّجُلُ الوَاحِدُ يَتْبَعُهُ أَرْبَعُونَ امْرَأَةً يَلُذْنَ بِهِ مِنْ قِلَّةِ
الرِّجَالِ وَكَثْرَةِ النِّسَاءِ» . رواه مسلم
১৮/১৮৩৪। আবূ মুসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু
হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘লোকদের উপর এমন একটি সময় অবশ্যই আসবে, যখন মানুষ সোনার যাকাত নিয়ে ঘোরাঘুরি করবে; কিন্তু
সে এমন কাউকে পাবে না যে, তার নিকট হতে তা গ্রহণ করবে। আর
দেখা যাবে যে, পুরুষের সংখ্যা কম ও মহিলার সংখ্যা বেশী হওয়ার
দরুন একটি পুরুষের দায়িত্বে চল্লিশ-জন মহিলা হবে, যারা তার
আশ্রিতা হয়ে থাকবে।’’ (মুসলিম) [18]
*
[ব্যাপক যুদ্ধ ও ধ্বংসকারিতার কারণে অধিকমাত্রায় পুরুষ মারা যাবার ফলে এরূপ হবে
কিংবা এমনিতেই পুরুষ অপেক্ষা নারীর জন্মহার বৃদ্ধি পাবে।]
19/1835 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه
وسلم، قَالَ: «اِشْتَرَى
رَجُلٌ مِنْ رَجُلٍ عَقَاراً، فَوَجَدَ الَّذِيْ اشْتَرَى العَقَارَ فِي عَقَارِهِ
جَرَّةً فِيهَا ذَهَبٌ، فَقَالَ لَهُ الَّذِي اشْتَرَى العَقَارَ : خُذْ ذَهَبَكَ،
إنَّمَا اشْتَرَيْتُ مِنْكَ الأَرْضَ وَلَمْ أَشْتَرِ الذَّهَبَ، وَقَالَ الَّذِي
لَهُ الأَرْضُ : إِنَّمَا بِعْتُكَ الأَرْضَ وَمَا فِيهَا، فَتَحَاكَمَا إِلَى
رَجُلٍ، فَقَالَ الَّذِي تَحَاكَمَا إِلَيْهِ : أَلَكُمَا وَلَدٌ ؟ قَالَ
أَحَدُهُمَا : لِي غُلاَمٌ، وَقَالَ الآخَرُ : لِي جَارِيَةٌ، قَالَ: أَنْكِحَا
الغُلاَمَ الجَارِيَةَ، وَأَنْفِقَا عَلَى أَنْفُسِهمَا مِنْهُ وَتَصَدَّقَا» . متفق عليه
১৯/১৮৩৫।
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘[প্রাচীনকালে]
একটি লোক অন্য ব্যক্তির কাছ হতে কিছু জায়গা ক্রয় করল। ক্রেতা ঐ জায়গায় [প্রোথিত]
একটি কলসী পেল, যাতে সবর্ণ ছিল। জায়গার ক্রেতা বিক্রেতাকে
বলল, ‘তোমার সবর্ণ নিয়ে নাও। আমি তো তোমার জায়গা খরিদ করেছি, সবর্ণ তো খরিদ করিনি।’ জায়গার বিক্রেতা বলল, ‘আমি তোমাকে জায়গা এবং তাতে যা কিছু আছে সবই বিক্রি করেছি।’ অতঃপর তারা উভয়েই এক ব্যক্তির নিকট বিচার প্রার্থী হল। বিচারক
ব্যক্তি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমাদের সন্তান আছে কি?’ তাদের একজন বলল, ‘আমার একটি ছেলে আছে।’ অপরজন বলল, ‘আমার একটি মেয়ে আছে।’ বিচারক বললেন, ‘তোমরা ছেলেটির সাথে মেয়েটির
বিয়ে দিয়ে দাও এবং ঐ সবর্ণ থেকে তাদের জন্য খরচ কর এবং দান কর।’’ (বুখারী-মুসলিম) [19]
20/1836 وَعنه: أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «كَانَتِ امْرَأَتَانِ مَعَهُمَا ابْنَاهُمَا، جَاءَ الذِّئْبُ فَذَهَبَ
بِابْنِ إِحْدَاهُمَا . فَقَالَتْ لِصَاحِبَتِهَا : إِنَّمَا ذَهَبَ بِابْنِكِ،
وَقَالَتِ الأُخْرَى : إِنَّمَا ذَهَبَ بِابْنِكِ، فَتَحَاكَمَا إِلَى دَاوُدَ عليه
السلام فَقَضَى بِهِ لِلْكُبْرَى، فَخَرَجَتَا عَلَى سُلَيْمَانَ بْنِ
دَاوُدَ عليه السلام
فَأَخْبَرَتَاهُ . فَقَالَ: ائْتُونِي بِالسِّكِّينِ أَشُقُّهُ بَيْنَهُمَا .
فَقَالَتِ الصُّغْرَى : لاَ تَفْعَلْ ! رَحِمَكَ اللهُ، هُوَ ابْنُهَا . فَقَضَى
بِهِ لِلصُّغْرَى» .
متفق عليه
২০/১৮৩৬।
উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, ‘‘দু’জন মহিলার সাথে তাদের দু’টি ছেলে ছিল। একদা একটি নেকড়ে বাঘ এসে তাদের মধ্যে একজনের ছেলেকে
নিয়ে গেল। একজন মহিলা তার সঙ্গিনীকে বলল, ‘বাঘে তোমার
ছেলেকেই নিয়ে গেছে।’ অপরজন বলল, ‘তোমার
ছেলেকেই বাঘে নিয়ে গেছে।’ সুতরাং তারা দাঊদ-এর নিকট বিচার
প্রার্থিনী হল। তিনি [অবশিষ্ট ছেলেটি] বড় মহিলাটির ছেলে বলে ফায়সালা করে দিলেন।
অতঃপর তারা দাঊদ আলাইহিস সালাম-এর পুত্র সুলায়মান আলাইহিস সালাম-এর নিকট বের হয়ে গিয়ে উভয়েই আনুপূর্বিক ঘটনাটি বর্ণনা
করল। তখন তিনি বললেন, ‘আমাকে একটি চাকু দাও। আমি একে দু
টুকরো করে দু’জনের মধ্যে ভাগ করে দেব।’ তখন
ছোট মহিলাটি বলল, ‘আপনি এরূপ করবেন না। আল্লাহ আপনাকে রহম
করুন। ছেলেটি ওরই।’ তখন তিনি ছেলেটি ছোট মহিলার [নিশ্চিত
জেনে] ফায়সালা দিলেন।’’ (বুখারী-মুসলিম)[20]
21/1837 وَعَنْ مِردَاسٍ الأَسلَمِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ
النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: «يَذْهَبُ
الصَّالِحُونَ الأَوَّلُ فَالأَوَّلُ، وَيَبْقَى حُثَالَةٌ كَحُثَالَةِ الشَّعِيرِ
أَوِ التَّمْرِ لاَ يُبَالِيهُمُ اللهُ بَالَةً» . رواه البخاري
২১/১৮৩৭।
মিরদাস আসলামী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘সৎ লোকেরা একের পর এক [ক্রমান্বয়ে] মৃত্যুবরণ
করবে। আর অবশিষ্ট লোকেরা নিকৃষ্ট মানের যব অথবা খেজুরের মত পড়ে থাকবে। আল্লাহ তা‘আলা এদের প্রতি আদৌ ভ্রূক্ষেপ করবেন না।’’ (বুখারী)[21]
22/1838 وَعَنْ رِفَاعَةَ بنِ رَافِعٍ الزُّرَقِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ:
جَاءَ جِبرِيلُ إلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: مَا تَعُدُّوْنَ أَهْلَ
بَدْرٍ فِيكُمْ؟ قَالَ: «مِنْ
أَفْضَلِ المُسْلِمِينَ» أَوْ
كَلِمَةً نَحْوَهَا . قاَلَ : وَكَذلِكَ مَنْ شَهِدَ بَدْراً مِنَ المَلائِكَةِ .
رواه البخاري
২২/১৮৩৮।
রিফাআহ ইবনে রাফে’ যুরাক্বী রাদিয়াল্লাহু আনহু
হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জিবরীল এসে বললেন, ‘বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদেরকে আপনাদের মাঝে কিরূপ গণ্য করেন?’ তিনি বললেন, ‘‘সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলিমদের
শ্রেণীভুক্ত গণ্য করি।’’ অথবা অনুরূপ কোন বাক্যই তিনি বললেন।
[জিবরীল] বললেন, ‘বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ফিরিশতাগণও অনুরূপ
[সর্বশ্রেষ্ঠ ফিরিশতাগণের শ্রেণীভুক্ত]।’ (বুখারী) [22]
23/1839 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ
اللهِ صلى الله عليه وسلم: «إِذَا
أَنْزَلَ اللهُ تَعَالَى بِقَومٍ عَذَاباً، أَصَابَ العَذَابُ مَنْ كَانَ فِيهِمْ،
ثُمَّ بُعِثُوا عَلَى أَعْمَالِهِمْ» . متفق عليه
২৩/১৮৩৯।
ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘যখন কোন জাতির উপর মহান আল্লাহ আযাব অবতীর্ণ করেন, তখন তাদের মধ্যে বিদ্যমান সমস্ত লোককে তা গ্রাস করে ফেলে। তারপর
[বিচারের দিনে] তাদেরকে সব সব কৃতকর্মের ভিত্তিতে পুনরুত্থিত করা হবে।’’ (বুখারী-মুসলিম)[23]
24/1840 وَعَنْ جَابِرٍ رضي الله عنه قَالَ:
كَانَ جِذْعٌ يَقُومُ إِلَيْهِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ـ يَعْنِي فِي
الخُطْبَةِ ـ فَلَمَّا وُضِعَ المِنْبَرُ سَمِعْنَا لِلجِذْعِ مِثْلَ صَوْتِ
العِشَارِ، حَتَّى نَزَلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم، فَوضَعَ يَدَهُ عَلَيهِ
فَسَكَنَ .
وَفِي رِوَايَةٍ : فَلَمَّا كَانَ يَومُ الجُمُعَةِ قَعَدَ النَّبِيُّ
صلى الله عليه وسلم عَلَى المِنْبَرِ، فَصَاحَتِ النَّخْلَةُ الَّتِي كَانَ يَخْطُبُ
عِنْدَهَا حَتَّى كَادَتْ أَنْ تَنْشَقَّ .
وفي رواية : فصَاحَتْ صِيَاحَ الصَّبيِّ، فَنَزَلَ النَّبِيُّ صلى الله
عليه وسلم، حَتَّى أَخَذَهَا فَضَمَّهَا إِلَيهِ، فَجَعَلَتْ تَئِنُّ أَنِينَ
الصَّبي الَّذِي يُسَكَّتُ حَتَّى اسْتَقَرَّتْ، قَالَ: «بَكَتْ عَلَى مَا كَانَتْ تَسْمَعُ مِنَ الذَّكْرِ» . رواه البخاري
২৪/১৮৪০। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একটি
খেজুর গাছের গুঁড়ি [খুঁটি] ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা
দানকালে দাঁড়িয়ে তাতে হেলান দিতেন। তারপর যখন [কাঠের] মিম্বর [তৈরি করে] রাখা হল, তখন আমরা
দশ মাসের গাভিন উটনীর শব্দের ন্যায় গুঁড়িটির [কান্নার] শব্দ শুনতে পেলাম। পরিশেষে
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম [মিম্বর হতে]
নেমে নিজ হাত তার উপর রাখলে সে শান্ত হল।’
অন্য
এক বর্ণনায় আছে, ‘যখন জুমার দিন এলো এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরের উপর বসলেন, তখন খেজুরের যে গুঁড়ির পাশে তিনি
খুতবা দিতেন, তা এমন চিল্লিয়ে কেঁদে উঠল যে, তা
ফেটে যাবার উপক্রম হয়ে পড়ল!’
অপর
বর্ণনায় আছে, ‘শিশুর মত চিল্লিয়ে উঠল। সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম [মিম্বর থেকে] নেমে তাকে ধরে নিজ বুকে
জড়ালেন। তখন সে সেই শিশুর মত কাঁদতে লাগল, যে শিশুকে [আদর
করে] চুপ করানো হয়, [তাকে চুপ করানো হল এবং] পরিশেষে সে
প্রকৃতিস্থ হল।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘এর কান্নার কারণ হচ্ছে এই
যে, এ [কাছে থেকে] খুতবা শুনত [যা থেকে সে এখন বঞ্চিত হয়ে
পড়েছে]।’’ (বুখারী) [24]
25/1841 وَعَنْ
أَبِي ثَعْلَبَةَ الخُشَنِيِّ جُرثُومِ بنِ نَاشِرٍ رضي الله عنه عَن رَسُولِ
اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِنَّ
اللهَ تَعَالَى فَرَضَ فَرَائِضَ فَلاَ تُضَيِّعُوهَا، وَحَدَّ حُدُوداً فَلاَ
تَعْتَدُوهَا، وَحَرَّمَ أَشْيَاءَ فَلاَ تَنْتَهِكُوهَا، وَسَكَتَ عَنْ أَشْيَاءَ
رَحْمَةً لَكُمْ غَيْرَ نِسْيَانٍ فَلاَ تَبْحَثُوا عَنْهَا». حديث حسن، رواه الدارقطني وغيره
২৫/১৮৪১। আবূ সা’লাবাহ খুশানী
জুরসূম ইবনে নাশের রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বলেছেন, ‘‘মহান আল্লাহ অনেক জিনিস ফরয করেছেন তা নষ্ট করো না, অনেক সীমা নির্ধারিত করেছেন তা লঙ্ঘন করো না, অনেক
জিনিসকে হারাম করেছেন, তাতে লিপ্ত হয়ে তার [মর্যাদার পর্দা]
ছিন্ন করো না। আর তোমাদের প্রতি দয়া করে---ভুল করে নয়---বহু জিনিসের ব্যাপারে
নীরবতা অবলম্বন করেছেন, সে
ব্যাপারে তোমরা অনুসন্ধান করো না।’’ [হাসান হাদিস, দারাক্বুত্বনী
প্রমুখ][25]
26/1842 وَعَنْ عَبدِ اللهِ بنِ أَبِي أَوْفَى رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ:
غَزَوْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم سَبْعَ غَزَوَاتٍ نَأكُلُ
الجَرَادَ . وَفِي رِوَايةٍ : نَأكُلُ مَعَهُ الجَرَادَ . متفق عليه
২৬/১৮৪২।
আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, ‘আমরা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে থেকে সাতটি যুদ্ধ করেছি, তাতে
আমরা পঙ্গপাল খেয়েছি।’
*
[অর্থাৎ পঙ্গপাল খাওয়া হালাল এবং তা মাছের মত মৃতও হালাল।]
27/1843
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: أَنَّ
النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «لاَ يُلْدَغُ المُؤْمِنُ مِنْ جُحْرٍ وَاحِدٍ
مَرَّتَيْنِ». متفق عليه
২৭/১৮৪৩।
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুমীন
একই গর্ত থেকে দু’বার দংশিত হয় না।’’ (বুখারী-মুসলিম)[27]
*
[অর্থাৎ মুমিন একবার ঠকলে দ্বিতীয়বার ঠকে না। মুমিন হয় সতর্ক ও সচেতন।]
28/1844 وَعَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَومَ القِيَامَةِ، وَلاَ يَنْظُرُ
إِلَيْهِمْ، وَلاَ يُزَكِّيهِمْ، وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ : رَجُلٌ عَلَى فَضْلِ
مَاءٍ بِالفَلاَةِ يَمْنَعُهُ مِنِ ابْنِ السَّبِيلِ، وَرَجُلٌ بَايَعَ رَجُلاً سِلْعَةً
بَعْدَ العَصْرِ فَحَلَفَ بِاللهِ لأَخَذَهَا بِكَذَا وَكَذَا فَصَدَّقَهُ وَهُوَ
عَلَى غَيْرِ ذَلِكَ، وَرَجُلٌ بَايَعَ إِمَاماً لاَ يُبَايِعُهُ إِلاَّ لِدُنْيَا
فَإِنْ أَعْطَاهُ مِنْهَا وَفَى وَإِنْ لَمْ يُعْطِهِ مِنْهَا لَمْ يَفِ» . متفق عليه
২৮/১৮৪৪।
উক্ত রাবী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তিন
শ্রেণীর মানুষের সাথে কিয়ামতের দিনে আল্লাহ কথা বলবেন না, তাদের
দিকে [দয়ার দৃষ্টিতে] তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্রও করবেন না
এবং তাদের জন্য হবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। [১] যে মরু প্রান্তরে অতিরিক্ত পানির
মালিক, কিন্তু সে মুসাফিরকে তা থেকে পান করতে দেয় না। [২] যে
আসরের পর অন্য লোকের নিকট সামগ্রী বিক্রয় করতে গিয়ে কসম খেয়ে এই বলে যে, আল্লাহর কসম! এটা আমি এত দিয়ে নিয়েছি। ফলে ক্রেতা তাকে বিশ্বাস
করে অথচ সে তার বিপরীত [অর্থাৎ মিথ্যাবাদী]। আর [৩]
যে কেবলমাত্র পার্থিব স্বার্থে রাষ্ট্রনেতার হাতে বায়আত করে। সুতরাং সে যদি তাকে
পার্থিব সম্পদ প্রদান করে, তাহলে সে [তার বায়আত] পূর্ণ করে।
আর যদি প্রদান না করে, তাহলে বায়আত পূর্ণ করে না।’’ (বুখারী-মুসলিম)
[28]
29/1845. وَعَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «بَيْنَ النَّفْخَتَيْنِ أَرْبَعُونَ» قَالُوا : يَا أَبَا هُرَيرَةَ أَرْبَعُونَ يَوْماً ؟ قالَ : أبَيْتُ،
قَالُوا : أَرْبَعُونَ سَنَةً ؟ قَالَ: أبَيْتُ . قَالُوا : أَرْبَعُونَ شَهْراً ؟
قَالَ: أَبَيْتُ . «وَيَبْلَى
كُلُّ شَيْءٍ مِنَ الإِنْسَانٍ إِلاَّ عَجْبَ الذَّنَبِ، فِيهِ يُرَكَّبُ
الخَلْقُ، ثُمَّ يُنَزِّلُ اللهُ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَيَنْبُتُونَ كَمَا
يَنْبُتُ البَقْلُ» .
متفق عليه
২৯/১৮৪৫।
উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘[কিয়ামতের
পূর্বে] শিঙ্গায় দু’বার ফুঁৎকার দেওয়ার মধ্যবর্তী ব্যবধান
হবে চল্লিশ।’’ লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, ‘হে
আবূ হুরাইরা! চল্লিশ দিন?’ তিনি বললেন, ‘উঁহুঁ।’ তারা প্রশ্ন করল, ‘তবে কি চল্লিশ বছর?’ তিনি বললেন, ‘উঁহুঁ।’ তারা পুনরায় জিজ্ঞাসা করল, ‘তাহলে কি চল্লিশ মাস?’ তিনি বললেন, ‘উঁহুঁ।’ ‘‘মেরুদণ্ডের নিম্নভাগের অস্থি
ব্যতীত মানবদেহের সমস্ত হাড় পচে যাবে। তারপর উক্ত অস্থি থেকে মানুষকে পুনর্গঠিত
করা হবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, যার ফলে শাক-সবজী গজিয়ে উঠার মত মানুষ গজিয়ে উঠবে।’’
(বুখারী-মুসলিম)[29]
30/1846 وَعَنْهُ، قَالَ: بَيْنَمَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فِي
مَجْلِسٍ يُحَدِّثُ القَومَ، جَاءَ أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ: مَتَى السَّاعَةُ ؟
فَمَضَى رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم يُحَدِّثُ، فَقَالَ بَعْضُ القَومِ :
سَمِعَ مَا قَالَ فَكَرِهَ مَا قَالَ، وَقَالَ بَعْضُهُمْ : بَلْ لَمْ يَسْمَعْ،
حَتَّى إِذَا قَضَى حَدِيثَهُ قَالَ: «أَيْنَ السَّائِلُ عَنِ السَّاعَةِ ؟» قَالَ: هَا أَنَا يَا رَسُولَ اللهِ. قَالَ: «إِذَا ضُيِّعَتِ الأَمَانَةُ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ» قَالَ: كَيفَ إِضَاعَتُهَا ؟ قَالَ: «إِذَا وُسِّدَ الأَمْرُ إِلَى غَيْرِ أَهْلِهِ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ» . رواه البخاري
৩০/১৮৪৬।
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম [মসজিদে] লোকদের নিয়ে আলোচনা
করছিলেন। ইতোমধ্যে এক বেদুঈন এসে প্রশ্ন করল, ‘কিয়ামত কখন
হবে?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কর্ণপাত না করে আলোচনায় রত থাকলেন। এতে কেউ কেউ বলল যে, ‘তার
কথা তিনি শুনেছেন এবং তার কথা তিনি অপছন্দ করেছেন।’ কেউ কেউ
বলল, ‘বরং তিনি শুনতে পাননি।’ অতঃপর
তিনি যখন কথা শেষ করলেন, তখন বললেন, ‘‘কিয়ামত
সম্পর্কে প্রশ্নকারী লোকটি কোথায়?’’ সে বলল, ‘ইয়া
রাসূলুল্লাহ! এই যে, আমি।’ তিনি বললেন, ‘‘যখন আমানত নষ্ট করা হবে, তখন তুমি
কিয়ামতের প্রতীক্ষা করো।’’ সে বলল, ‘কিভাবে
আমানত বিনষ্ট হবে?’ তিনি বললেন, ‘‘অনুপযুক্ত
লোকের প্রতি যখন নেতৃত্ব সমর্পণ করা হবে, তখন তুমি কিয়ামতের
প্রতীক্ষা করো।’’ (বুখারী) [30]
31/1847 وَعَنْه : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «يُصَلُّونَ لَكُمْ، فَإِنْ أَصَابُوا فَلَكُمْ، وَإِنْ أَخْطَئُوا
فَلَكُمْ وَعَلَيْهِمْ».
رواه البخاري
৩১/১৮৪৭।
উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘ইমামগণ
তোমাদের নামায পড়ায়। সুতরাং তারা যদি নামায সঠিকভাবে পড়ায়, তাহলে
তোমাদের নেকী অর্জিত হবে। আর যদি ভুল করে, তাহলে তোমাদের
নেকী [যথারীতি] অর্জিত হবে এবং ভুলের খেসারত তাদের উপরেই বর্তাবে।’’
[বুখারী, আহমাদ]
[31]
32/1848 وَعنه: ﴿ كُنتُمۡ خَيۡرَ
أُمَّةٍ أُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ﴾ [ال عمران: ١١٠] قَالَ: خَيْرُ النَّاسِ لِلنَّاسِ يَأتُونَ بِهِمْ فِي السَّلاسِلِ فِي
أَعْنَاقِهِمْ حَتَّى يَدْخُلُوا فِي الإسْلاَمِ . رواه البخاري
৩২/১৮৪৮।
উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, [মহান আল্লাহ
বলেছেন,] ‘‘তোমরাই সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি, তোমাদেরকে
মানবজাতির কল্যাণের জন্য বের করা হয়েছে।’’ (সূরা আলে ইমরান ১১০ আয়াত) এর ব্যাখ্যায় তিনি [আবূ
হুরাইরা] বলেছেন যে, ‘মানুষের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ তারা, যারা তাদের গর্দানে শিকল পরিয়ে নিয়ে আসে এবং পরিশেষে তারা ইসলামে
প্রবেশ করে।’ (বুখারী) [32]
33/1849 وَعَنْه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «عَجِبَ اللهُ - عَزَّ وَجَلَّ - مِنْ قَومٍ يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ فِي
السَّلاسِلِ». رواه البخاري
.
৩৩/১৮৪৯।
উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ
আয্যা অজাল্ল সেই সম্প্রদায়ের ব্যাপারে বিস্মিত হন, যারা
শিকল পরিহিত অবস্থায় জান্নাতে প্রবেশ করবে।’’ (বুখারী) [33]
অর্থাৎ
তাদেরকে বন্দী করা হবে, তারপর তাদের শিকল দিয়ে বাঁধা হবে, অতঃপর তারা মুসলিম হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
34/1850 وَعَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه
وسلم قَالَ: «أَحَبُّ
البِلادِ إلَى اللهِ مَسَاجِدُهَا، وَأَبْغَضُ البِلاَدِ إلَى اللهِ أَسْوَاقُهَا». رواه مسلم
৩৪/১৮৫০।
উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহর
নিকটে সবচেয়ে পছন্দনীয় স্থান হল মসজিদ। আর সবচেয়ে ঘৃণ্য স্থান হল বাজার।’’ (মুসলিম)[34]
35/1851 وَعَنْ سَلمَانَ الفَارِسِي رضي الله عنه مِنْ قَولِهِ قَالَ: لاَ تَكُونَنَّ إِنِ اسْتَطَعْتَ أَوَّلَ مَنْ
يَدْخُلُ السُّوقَ، وَلاَ آخِرَ مَنْ يَخْرُجُ مِنْهَا، فَإِنَّهَا مَعْرَكَةُ
الشَّيْطَانِ، وَبِهَا يَنْصِبُ رَايَتَهُ . رواه مسلم هكذا، ورواه البرقاني في
صحيحهِ عَنْ سَلمَانَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «لاَ تَكُنْ أَوَّلَ مَنْ يَدْخُلُ السُّوقَ، وَلاَ آخِرَ مَنْ يَخْرُجُ
مِنْهَا . فِيهَا بَاضَ الشَّيْطَانُ وَفَرَّخَ» .
৩৫/১৮৫১।
সালমান ফারেসী রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর উক্তি [মওকূফ সূত্রে]
বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘তুমি যদি পার, তাহলে সর্বপ্রথম বাজারে প্রবেশকারী হবে না এবং সেখান থেকে
সর্বশেষ প্রস্থান-কারী হবে না। কারণ, বাজার শয়তানের আড্ডা
স্থল; সেখানে সে আপন ঝাণ্ডা গাড়ে।’ (মুসলিম)[35]
বারক্বানী
তাঁর ‘সহীহ’ গ্রন্থে সালমান
রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সর্বপ্রথম বাজারে প্রবেশকারী হয়ো না এবং সেখান থেকে সর্বশেষ
প্রস্থান-কারী হয়ো না। কারণ, সেখানে শয়তান ডিম পাড়ে এবং ছানা
জন্ম দেয়।’’
36/1852 وَعَنْ عَاصِمٍ الأَحْوَلِ، عَنْ عَبدِ اللهِ بنِ سَرْجِسَ رضي الله عنه قَالَ: قُلْتُ لِرَسُولِ اللهِ صلى الله
عليه وسلم : يَا رَسُولَ اللهِ، غَفَرَ اللهُ لَكَ، قَالَ: «وَلَكَ» .
قَالَ عَاصِمٌ : فَقُلْتُ لَهُ : أَسْتَغْفَرَ لَكَ رَسُول اللهِ صلى الله عليه
وسلم ؟ قَالَ: نَعَمْ وَلَكَ، ثُمَّ تَلاَ هَذِهِ الآيَةَ: ﴿ وَٱسۡتَغۡفِرۡ
لِذَنۢبِكَ وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِۗ ١٩ ﴾ [محمد : ١٩] .
رواه مسلم
৩৬/১৮৫২।
আস্বেম আহওয়াল হতে বর্ণিত, আব্দুল্লাহ ইবনে সার্জিস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
জন্য দো‘আ করে বললাম, ‘হে আল্লাহর
রসূল! আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন।’ তিনি বললেন,
‘‘আর তোমাকেও [আল্লাহ ক্ষমা করুন]।’’ আস্বেম বলেন, আমি আব্দুল্লাহকে প্রশ্ন করলাম, ‘আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কি আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আর তোমার জন্যও তো।’
অতঃপর তিনি এই আয়াত পাঠ করলেন, যার অর্থ: ‘‘[হে নবী!] তুমি নিজের জন্য ও মুমিন নর-নারীর জন্য ক্ষমা
প্রার্থনা কর।’’ (সূরা মুহাম্মাদ ১৯ আয়াত, মুসলিম][36]
37/1853 وَعَنْ أَبِي مَسعُودٍ الأَنصَارِي رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ
النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: «إِنَّ
مِمَّا أَدْرَكَ النَّاسُ مِنْ كَلاَمِ النُّبُوَّةِ الأُولَى : إِذَا لَمْ
تَسْتَحِ فَاصْنَعْ مَا شِئْتَ» . رواه
البخاري
৩৭/১৮৫৩।
আবূ মাসঊদ আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, নবী বলেছেন, ‘‘পূর্ববর্তী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পয়গম্বরগণের বাণীসমূহের মধ্যে যে বাণীসমূহ লোকেরা পেয়েছে তার মধ্যে একটি এই যে, যদি তুমি লজ্জা-শরম না কর, তাহলে তুমি যা
ইচ্ছা তাই কর।’’ (বুখারী) [37]
* [অর্থাৎ লজ্জা-শরম না থাকলে
মানুষ যাচ্ছে তাই করতে পারে। আর লজ্জা থাকলে কোন অশ্লীল বা পাপকাজ করতে পারে না।
যেহেতু লজ্জা মুমিনের ঈমানের একটি অঙ্গ।]
38/1854 وَعَنِ ابنِ مَسعُود رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم: «أَوَّلُ
مَا يُقْضَى بَيْنَ النَّاسِ يَوْمَ القِيَامَةِ فِي الدِّمَاء» . متفق عليه
৩৮/১৮৫৪।
ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন [মানবিক অধিকারের বিষয়] সর্বপ্রথমে
লোকদের মধ্যে যে বিচার করা হবে তা রক্ত সম্পর্কিত হবে।’’ (বুখারী-মুসলিম)[38]
39/1855 وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ : قَالَ رَسُولُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم: «خُلِقَتِ
المَلاَئِكَةُ مِنْ نُورٍ، وَخُلِقَ الجَانُّ مِنْ مَارِجٍ مِنْ نَارٍ، وَخُلِقَ
آدَمُ مِمَّا وُصِفَ لَكُمْ» .
رواه مسلم
৩৯/১৮৫৫।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘ফিরিশতাদেরকে জ্যোতি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। জিন
জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে অগ্নিশিখা হতে। আর আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে সেই বস্তু থেকে, যা তোমাদেরকে বর্ণনা করা হয়েছে। [অর্থাৎ মাটি থেকে]।’’ (মুসলিম)[39]
40/1856
وَعَنْها رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ : كَانَ
خُلُقُ نَبِيِّ اللهِ القُرْآنَ . رواهُ مسلم في جملة حديث طويل.
৪০/১৮৫৬।
উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চরিত্র ছিল কুরআন।’ [মুসলিম, এটি একটি দীর্ঘ হাদিসের অংশবিশেষ][40]
41/1857 وَعَنْها، قَالَتْ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «مَنْ أَحَبَّ لِقَاءَ اللهِ أَحَبَّ اللهُ لِقَاءَهُ، وَمَنْ كَرِهَ
لِقَاءَ اللهِ كَرِهَ اللهُ لِقَاءَهُ» فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ، أَكَراهِيَةُ المَوتِ، فَكُلُّنَا
نَكْرَهُ المَوتَ ؟ قَالَ: «لَيْسَ
كَذَلِكَ، وَلَكِنَّ المُؤْمِنَ إِذَا بُشِّرَ بِرَحْمَةِ اللهِ وَرِضْوَانِهِ
وَجَنَّتِهِ أَحَبَّ لِقَاءَ اللهِ فَأَحَبَّ اللهُ لِقَاءَهُ، وَإِنَّ الكَافِرَ
إِذَا بُشِّرَ بِعَذابِ اللهِ وَسَخَطهِ كَرِهَ لِقَاءَ اللهِ وَكَرِهَ اللهُ
لِقَاءَهُ» . رواه مسلم
৪১/১৮৫৭।
উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহা হতেই বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ পছন্দ করে, আল্লাহও তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ
লাভ অপছন্দ করে, আল্লাহও তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন।’’ এ কথা শুনে আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল!
তার মানে কি মরণকে অপছন্দ করা? আমরা তো সকলেই মরণকে অপছন্দ
করি।’ তিনি বললেন, ‘‘ব্যাপারটি এরূপ
নয়। প্রকৃত ব্যাপার এই যে, [মৃত্যুর সময়] মুমীনকে যখন
আল্লাহর করুণা, তাঁর সন্তুষ্টি তথা জান্নাতের সুসংবাদ শুনানো
হয়, তখন সে আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভকেই পছন্দ করে,
আর আল্লাহও তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন। আর কাফেরের [অন্তিমকালে] যখন তাকে
আল্লাহর আযাব ও তাঁর অসন্তুষ্টির সংবাদ দেওয়া হয়, তখন সে
আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ অপছন্দ করে। আর আল্লাহও তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন।’’ (বুখারী-মুসলিম)[41]
42/1858 وَعَنْ أُمِّ المُؤْمِنِينَ صَفِيَّةَ بِنْتِ حُيَيٍّ رَضِيَ اللهُ
عَنْهَا، قَالَتْ : كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مُعْتَكِفاً، فَأَتَيْتُهُ
أَزُورُهُ لَيْلاً، فَحَدَّثْتُهُ ثُمَّ قُمْتُ لأَنْقَلِبَ فَقَامَ مَعِي
لِيَقْلِبَنِي، فَمَرَّ رَجُلاَنِ مِنَ الأَنْصَارِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا،
فَلَمَّا رَأَيَا النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَسْرَعَا . فَقَالَ صلى الله
عليه وسلم : «عَلَى
رِسْلِكُمَا، إِنَّهَا صَفِيَّةُ بِنْتُ حُيَيٍّ» فَقَالاَ : سُبْحانَ اللهِ يَا رَسُولَ اللهِ، فَقَالَ: «إِنَّ الشَّيْطَانَ يَجْرِي مِنَ ابْنِ آدَمَ مَجْرَى الدَّمِ،
وَإِنِّي خَشِيْتُ أَنْ يَقْذِفَ فِي قُلُوبِكُمَا شَرّاً - أَوْ قَالَ: شَيْئاً -» . متفق عليه
৪২/১৮৫৮।
মুমিন জননী সাফিয়্যাহ বিন্তে হুয়াই রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
[মসজিদে] ই’তিকাফ থাকা অবস্থায় তাঁর সাথে রাত্রি বেলায় দেখা
করতে গেলাম। তাঁর সাথে কথাবার্তার পর ফিরে যাবার জন্য উঠে দাঁড়ালাম। সুতরাং তিনিও
আমাকে [বাসায়] ফিরিয়ে দেবার জন্য আমার সাথে উঠে দাঁড়ালেন। [অতঃপর যখন আমরা মসজিদের
দরজার কাছে এলাম] তখন আনসারদের দু’জন লোক [রাযিয়াল্লাহু
আনহুমা] [সেদিক দিয়ে] চলে যাচ্ছিলেন। যখন তাঁরা উভয়েই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পেলেন,
তখন দ্রুত বেগে চলতে লাগলেন। তখন আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে বললেন,
‘‘ধীরে চল। এ হল সাফিয়্যাহ বিন্তে হুয়াই।’’ তাঁরা
বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ! ইয়া রাসূলুল্লাহ! [আপনার ব্যাপারেও কি
আমরা কোন সন্দেহ করতে পারি?]’ তিনি [তাঁদেরকে] বললেন, ‘‘নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের দেহে রক্ত চলাচলের ন্যায় চলাফিরা করে।
তাই আমার আশংকা হল যে, সম্ভবত: সে তোমাদের অন্তরে
মন্দ---অথবা তিনি বললেন---কোন কিছু [সন্দেহ] প্রক্ষেপ করতে পারে।’’ (বুখারী-মুসলিম) [42]
43/1859 وَعَنْ أَبِي الفَضلِ العَبَّاسِ بنِ عَبدِ الْمُطَّلِبِ رضي الله عنه قَالَ: شَهِدْتُ مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى
الله عليه وسلم يَومَ حُنَيْن، فَلَزِمْتُ أَنَا وَأَبُو سُفْيَانَ بنُ الحَارِثِ
بنِ عَبدِ المُطَّلِبِ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَلَمْ نُفَارِقْهُ،
وَرَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم، عَلَى بَغْلَةٍ لَهُ بَيْضَاءَ، فَلَمَّا
التَقَى المُسْلِمُونَ وَالمُشْرِكُونَ، وَلَّى المُسْلِمُونَ مُدْبِريِنَ،
فَطَفِقَ رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم، يَرْكُضُ بَغْلَتَهُ قِبلَ الكُفَّارِ،
وَأَنَا آخِذٌ بِلِجَامِ بَغْلَةِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، أَكُفُّهَا
إِرَادَةَ أَنْ لاَ تُسْرِعَ، وأبُو سُفْيَانَ آخِذٌ بِرِكَابِ رَسُولِ اللهِ صلى
الله عليه وسلم، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «أَيْ عَبَّاسُ، نَادِ أَصْحَابَ السَّمُرَةِ». قالَ العَبَّاسُ - وَكَانَ رَجُلاً صَيِّتاً - فَقُلْتُ بِأَعْلَى
صَوْتِي : أَيْنَ أَصْحَابُ السَّمُرَةِ، فَوَاللهِ لَكَأنَّ عَطْفَتَهُمْ حِينَ
سَمِعُوا صَوْتِي عَطْفَةُ البَقَرِ عَلَى أَوْلاَدِهَا، فَقَالُوا : يَا
لَبَّيْكَ يَا لَبَّيْكَ، فَاقْتَتَلُوا هُمْ وَالكُفَّارُ، وَالدَّعْوَةُ فِي
الأَنْصَارِ يَقُولُونَ : يَا مَعْشَرَ الأَنْصَارِ، يَا مَعْشَرَ الأَنْصَارِ،
ثُمَّ قَصُرَتِ الدَّعْوَةُ عَلَى بَنِي الحَارِثِ بْنِ الخَزْرَجِ، فَنَظَرَ
رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم، وَهُوَ عَلَى بَغْلَتِهِ كَالمُتَطَاوِلِ
عَلَيْهَا إِلَى قِتَالِهِمْ، فَقَالَ: «هَذَا حِينَ حَمِيَ الوَطِيسُ»، ثُمَّ أَخَذَ رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم، حَصَيَاتٍ فَرَمَى
بِهِنَّ وُجُوهَ الكُفَّارِ، ثُمَّ قَالَ: «انْهَزَمُوا وَرَبِّ مُحَمَّدٍ»، فَذَهَبْتُ أَنْظُرُ فَإذَا القِتَالُ عَلَى هَيْئَتِهِ فِيمَا
أَرَى، فَواللهِ مَا هُوَ إِلاَّ أَنْ رَمَاهُمْ بِحَصَيَاتِهِ، فَمَا زِلْتُ
أَرَى حَدَّهُمْ كَلِيلاً وَأَمْرَهُمْ مُدْبِراً. رواه مسلم
৪৩/১৮৫৯।
আবূল ফায্ল আব্বাস ইবন মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু
আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে হুনাইন যুদ্ধে
উপস্থিত ছিলাম। আমি ও আবূ সুফয়ান ইবনে হারেস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সাথে থাকতে লাগলাম।
আমরা তাঁর নিকট থেকে পৃথক হলাম না। [সে সময়] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম একটি সাদা খচ্চরের উপর সওয়ার ছিলেন। তারপর যখন মুসলিম ও মুশরিকদের
মধ্যে তুমুল যুদ্ধ শুরু হল এবং [প্রথমত:] মুসলিমরা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে [রণভূমি
ছেড়ে] চলে গেল, তখন আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় খচ্চরকে কাফেরদের দিকে
নিয়ে যাবার জন্য পায়ের আঘাত হানলেন। আর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর খচ্চরের লাগাম ধরে ছিলাম। তাকে ধরে থামাচ্ছিলাম যাতে দ্রুত বেগে না
চলে। অন্য দিকে আবূ সুফিয়ান আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
[সওয়ারীর] পা-দান ধরে ছিল। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হে আব্বাস! বাবলা গাছ
তলে ‘রিযওয়ান’ বায়‘আতকারীদেরকে ডাক দাও।’’ আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু উচ্চকণ্ঠের অধিকারী ছিলেন।
তিনি বলেন, সুতরাং আমি উচ্চ সবরে হেঁকে বললাম,
‘বাবলা গাছ তলে বায়আতকারীরা কোথায়?’ আল্লাহর কসম! যখন
তারা আমার কণ্ঠধ্বনি শুনতে পেল, তখন গাভী যেমন তার বাচ্চার
শব্দ শুনে তার দিকে দ্রুত গতিতে ফিরে যায়, ঠিক তেমনি তারা
দ্রুত গতিতে ফিরে এলো। তারা
বলে উঠল,
‘আমরা হাজির আছি, আমরা হাজির আছি।’ তারপর আবার তাদের ও
কাফেরদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ চলতে থাকল। সে সময় আনসারদেরকে সাধারণভাবে ডাক দেওয়া
হল, ‘হে আনসারগণ! হে আনসারগণ!’ তারপর
আহবান কেবল হারেস ইবনে খাযরাজ গোত্রের লোকদের মাঝে সীমিত হল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খচ্চরের উপর থেকেই রণক্ষেত্রের
দিকে তাকালেন। তিনি যেন সামরিক সংঘর্ষের কলাকৌশল ও বীরত্বের দৃশ্য গর্দান বাড়িয়ে
অবলোকন করছিলেন। তিনি বললেন, ‘‘যুদ্ধ তুঙ্গে উঠার ও সাংঘাতিক
রূপ ধারণ করার এটাই সময়।’’ অতঃপর তিনি কিছু কাঁকর হাতে নিয়ে
কাফেরদের মুখের দিকে নিক্ষেপ করলেন এবং বললেন, ‘‘মুহাম্মাদের
রবের শপথ! ওরা [কাফেররা] পরাজিত হয়ে গেছে।’’ আমিও দেখলাম যে, যুদ্ধ পূর্ণতা ও উত্তেজনার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আল্লাহর কসম!
যখনি তিনি ঐ কাঁকরগুলি কাফেরদের দিকে নিক্ষেপ করলেন, তখনি
আমি নিষ্পলক নেত্রে দেখতে থাকলাম যে, তাদের শক্তি ক্রমশ: কমে
যাচ্ছে এবং তাদের ব্যাপারটা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। (মুসলিম) [43]
44/1860 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ
عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لاَ يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّباً،
وَإِنَّ اللهَ أَمَرَ المُؤمِنِينَ بِمَا أَمَرَ بِهِ المُرْسَلِينَ» . فَقَالَ تَعَالَى : ﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلرُّسُلُ
كُلُواْ مِنَ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَٱعۡمَلُواْ صَٰلِحًاۖ ﴾ [المؤمنون: ٥١] ، وَقَالَ تَعَالَى : ﴿ كُلُواْ مِن طَيِّبَٰتِ
مَا رَزَقۡنَٰكُمۡ﴾ [البقرة: ١٧٢] . ثُمَّ ذَكَرَ
الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ
: يَا رَبِّ يَا رَبِّ، وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ، وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ، ومَلبَسُهُ
حَرَامٌ، وَغُذِّيَ بِالْحَرَامِ، فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ ؟ رواه مسلم
৪৪/১৮৬০। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘হে
লোক সকল! আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ
করেন না। আর আল্লাহ মুমীনদেরকে সেই কাজের নির্দেশ দিয়েছেন, যার
নির্দেশ পয়গম্বরদেরকে
দিয়েছেন। সুতরাং মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘হে রাসূলগণ! তোমরা
পবিত্র বস্তু হতে আহার কর এবং সৎকর্ম কর।’ (সূরা মু’মিনূন ৫১ আয়াত) তিনি আরও বলেন,
‘হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রুযী দিয়েছি তা থেকে পবিত্র বস্তু আহার কর
এবং আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; যদি তোমরা শুধু তাঁরই
উপাসনা করে থাক।’’ (সূরা
বাকারাহ ১৭২ আয়াত)
অতঃপর
তিনি সেই লোকের কথা উল্লেখ করে বললেন, যে এলোমেলো চুলে, ধূলামলিন পায়ে সুদীর্ঘ সফরে থেকে আকাশ পানে দু’ হাত
তুলে ‘ইয়া রবব্! ‘ইয়া রবব্!’ বলে দো‘আ করে। অথচ তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোশাক-পরিচ্ছদ হারাম
এবং হারাম বস্তু দিয়েই তার শরীর পুষ্ট হয়েছে। তবে তার দো‘আ
কিভাবে কবুল করা হবে?’’ (মুসলিম) [44]
45/1861 وَعَنْه رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ القِيَامَةِ، وَلاَ
يُزَكِّيهِمْ، وَلاَ يَنْظُرُ إلَيْهِمْ، وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ : شَيْخٌ
زَانٍ، وَمَلِكٌ كَذَّابٌ، وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ» . رواه مسلم
৪৫/১৮৬১।
উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘তিন শ্রেণীর মানুষের সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ কথা
বলবেন না, তাদেরকে পবিত্রও করবেন না এবং তাদের দিকে [দয়ার
দৃষ্টিতে] তাকাবেনও না। অধিকন্তু তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি; [তারা হচ্ছে,] বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী রাজা এবং অহংকারী গরীব।’’ (মুসলিম) [45]
46/1862 وَعَنْهُ رضي الله عنه
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «سَيْحَانُ وَجَيْحَانُ وَالفُرَاتُ وَالنِّيلُ كُلٌّ مِنْ أَنْهَارِ
الجَنَّةِ». رواه مسلم
৪৬/১৮৬২।
উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘[শামের] সাইহান ও জাইহান, [ইরাকের]
ফুরাত এবং [মিসরের] নীল প্রত্যেক নদীই জান্নাতের নদ-নদীসমূহের অন্যতম।’’ (মুসলিম)
[46]
47/1863 وَعَنْه، قَالَ: أَخَذَ رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم بِيَدِي
فَقَالَ: «خَلَقَ اللهُ التُّرْبَةَ يَومَ السَّبْتِ، وَخَلَقَ فِيهَا الجِبَالَ
يَومَ الأَحَدِ، وَخَلَقَ الشَّجَرَ يَومَ الاِثْنَينِ، وَخَلَقَ المَكْرُوهَ
يَومَ الثُّلاَثَاءِ، وَخَلَقَ النُّورَ يَوْمَ الأَربِعَاءِ، وَبَثَّ فِيهَا
الدَّوابَّ يَومَ الخَمِيسِ، وَخَلَقَ آدَمَ عليه السلام، بَعْدَ العَصْرِ مِنْ يَومِ الجُمُعَةِ في آخِرِ الخَلْقِ فِي آخِرِ
سَاعَةٍ مِنَ النَّهَارِ فِيمَا بَيْنَ العَصْرِ إِلَى اللَّيْلِ». رواه مسلم
৪৭/১৮৬৩।
উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
[একদা] আমার হাত ধরে বললেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা
শনিবার জমিন সৃষ্টি করেছেন, রবিবার তার মধ্যে পর্বতমালা
সৃষ্টি করেছেন। সোমবার সৃষ্টি করেছেন গাছ-পালা। মঙ্গলবার মন্দ বস্তু সৃষ্টি
করেছেন। বুধবার আলো সৃষ্টি করেছেন। তাতে [জমিনে] জীবজন্তু ছড়িয়েছেন বৃহস্পতিবার।
আর সমস্ত জিনিস সৃষ্টি করার পর পরিশেষে জুমার দিন আসরের পর দিনের শেষভাগে আসর ও
রাতের মাঝামাঝি সময়ে [আদি পিতা] আদম-কে সৃষ্টি করেছেন।’’ (মুসলিম) [47]
48/1864 وَعَنْ أَبِي سُلَيمَانَ خَالِدِ بنِ الوَلِيدِ رضي الله عنه قَالَ:
لَقَدِ انْقَطَعتْ فِي يَدِي يَوْمَ مُؤْتَةَ تِسْعَةُ أَسْيَافٍ، فَمَا بَقِيَ
فِي يَدِي إِلاَّ صَفِيحَةٌ يَمَانِيَّةٌ . رواه البخاري
৪৮/১৮৬৪।
আবূ সুলায়মান খালেদ ইবনে অলীদ রাদিয়াল্লাহু
আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘‘মু’তাহ
যুদ্ধে আমার হাতে নয় খানা তরবারি ভেঙ্গেছে। কেবলমাত্র একটি ইয়ামানী ক্ষুদ্র তলোয়ার
আমার হাতে অবশিষ্ট ছিল।’’ (বুখারী) [48]
49/1865 وَعَنْ عَمرِو بنِ العَاصِ رضي الله عنه: أنَّه سَمِعَ رَسُولَ اللهِ
صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ : «إِذَا
حَكَمَ الحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ، ثُمَّ أَصَابَ، فَلَهُ أَجْرَانِ، وَإِذَا حَكَمَ
وَاجْتَهَدَ، فَأَخْطَأَ، فَلَهُ أَجْرٌ» متفق عَلَيْهِ
৪৯/১৮৬৫।
আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন,
‘‘যখন কোন বিচারক [বিচার করার সময়] চেষ্টা-প্রচেষ্টা করে বিচার করবে এবং
সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাবে, তখন তার দু’টি
নেকী হবে। আর যখন চেষ্টা সত্ত্বেও বিচারে ভুল করে ফেলবে, তখনও
তার একটি নেকী হবে।’’ (বুখারী-মুসলিম)[49]
50/1866 وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا : أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله
عليه وسلم، قَالَ: «الحُمَّى
مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ فَأَبْرِدُوهَا بِالمَاءِ». متفق عَلَيْهِ
৫০/১৮৬৬। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘জ্বর জাহান্নামের তীব্র উত্তাপের
অংশ বিশেষ। অতএব তোমরা তা পানি দ্বারা ঠাণ্ডা কর।’’ (বুখারী-মুসলিম)[50]
51/1867 وَعَنْها رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، عن النبيِّ، قَالَ: «مَنْ مَاتَ وَعَلَيْهِ صَومٌ، صَامَ عَنْهُ وَلِيُّهُ». متفق عَلَيْهِ
৫১/১৮৬৭।
উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কোন
ব্যক্তি যদি মারা যায়, আর তার [মানত] রোযা বাকি থাকে, তাহলে তার অভিভাবক তার পক্ষ থেকে [ঐ মানতের] রোযা পূরণ করবে।’’ (বুখারী-মুসলিম)[51]
সঠিক
অভিমত এই যে, এই হাদিসের ভিত্তিতে যে রোযা পালন না করে মারা
গেছে, তার পক্ষ থেকে রোযা রাখা জায়েয। আর অভিভাবক বলতে
উদ্দেশ্য, নিকটাত্মীয়; সে ওয়ারেস হোক
অথবা না হোক।
[[ইবনে
আব্বাস বলেন, ‘যদি কোন লোক রমাযানে ব্যাধিগ্রস্ত হয়, অতঃপর সে মারা যায় এবং রোযা [কাযা করার সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও]
রোযা না রেখে থাকে, তাহলে তার তরফ থেকে মিসকীন খাইয়ে দিতে
হবে; তার জন্য রোযা কাযা নেই। কিন্তু যদি সে নযরের রোযা না
রেখে মারা যায়, তাহলে তার অভিভাবক [বা নিকটাত্মীয়] তার তরফ
থেকে সেই রোযা কাযা করে দেবে।’]] [সহীহ আবূ দাঊদ ২১০১নং প্রমুখ]
52/1868 وَعَنْ عَوفِ بنِ مَالِكِ بنِ الطُّفَيْلِ رضي الله عنه : أَنَّ
عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، حُدِّثَتْ أَنَّ عَبدَ اللهِ بنَ الزُّبَيرِ
رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ فِي بَيْعٍ أَوْ عَطَاءٍ أَعْطَتْهُ عَائِشَةُ
رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنهَا: وَاللهِ لَتَنْتَهِيَنَّ عَائِشَةُ أَوْ
لأَحْجُرَنَّ عَلَيْهَا، قَالَتْ : أََهُوَ قَالَ هَذَا ! قَالُوا : نَعَمْ .
قَالَتْ : هُوَ للهِ عَلَيَّ نَذْرٌ أَنْ لاَ أُكَلِّمَ ابْنَ الزُّبَيْرِ
أَبَداً، فَاسْتَشْفَعَ ابْنُ الزُّبَيْرِ إِلَيْهَا حِيْنَ طَالَتِ الهِجْرَةُ .
فَقَالَتْ : لاَ، وَاللهِ لاَ أُشَفِّعُ فِيهِ أَبداً، وَلاَ أَتَحَنَّثُ إِلَى
نَذْرِي . فَلَمَّا طَالَ ذَلِكَ عَلَى ابْنِ الزُّبَيرِ كَلَّمَ المِسْوَرَ بْنَ
مَخْرَمَةَ، وَعبدَ الرحْمَانِ ابْنَ الأسْوَدِ بْنِ عَبْدِ يَغُوثَ وقَالَ
لَهُمَا : أَنْشُدُكُمَا اللهَ لَمَا أَدْخَلْتُمَانِي عَلَى عَائِشَةَ رَضِيَ
اللهُ عَنْهَا، فَإِنَّهَا لاَ يَحِلُّ لَهَا أَنْ تَنْذِرَ قَطِيعَتِي،
فَأَقْبَلَ بِهِ المِسْوَرُ، وَعَبدُ الرَّحْمَانِ حَتَّى اسْتَأذَنَا عَلَى
عَائِشَةَ فَقَالاَ : السَّلاَمُ عَلَيْكِ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ،
أَنَدْخُلُ ؟ قَالَتْ عَائِشَةُ : ادْخُلُوا . قَالُوا : كُلُّنَا ؟ قَالَتْ:
نَعَمْ ادْخُلُوا كُلُّكُمْ، وَلاَ تَعْلَمُ أَنَّ معَهُمَا ابْنَ الزُّبَيرِ،
فَلَمَّا دَخَلُوا دَخَلَ ابْنُ الزُّبَيرِ الحِجَابَ فَاعْتَنَقَ عَائِشَةَ
رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، وَطَفِقَ يُنَاشِدُهَا وَيَبْكِي، وَطَفِقَ المِسْوَرُ،
وَعَبدُ الرَّحْمَانِ يُنَاشِدَانِهَا إِلاَّ كَلَّمَتْهُ وَقَبِلَتْ مِنْهُ،
وَيَقُولاَنِ : إِنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَمَّا قَدْ عَلِمْتِ مِنَ
الهِجْرَةِ ؛ وَلاَ يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوقَ ثَلاَثِ
لَيَالٍ، فَلَمَّا أَكْثَرُوا عَلَى عَائِشَةَ مِنَ التَّذْكِرَةِ وَالتَّحْرِيجِ،
طَفِقَتْ تُذَكِّرُهُمَا وَتَبْكِي، وَتَقُولُ : إنِّي نَذَرْتُ وَالنَّذْرُ
شَدِيدٌ، فَلَمْ يَزَالاَ بِهَا حَتَّى كَلَّمَتِ ابْنَ الزُّبَيرِ، وَأَعْتَقَتْ
فِي نَذْرِهَا ذَلِكَ أَرْبَعِينَ رَقَبَةً، وَكَانَتْ تَذْكُرُ نَذْرَهَا بَعدَ
ذَلِكَ فَتَبْكِي حَتَّى تَبِلَّ دُمُوعُهَا خِمَارَهَا . رواه البخاري
৫২/১৮৬৮।
আওফ ইবনে মালিক ইবনে তুফাইল হতে বর্ণিত, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু
আনহা র সামনে ব্যক্ত করা হল যে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা যে
[নিজ বাড়ি] বিক্রয় বা দান করেছেন, সে সম্পর্কে আব্দুল্লাহ
ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন যে, ‘হয়
[খালাজান] আয়েশা [অবাধে দান-খয়রাত করা হতে] অবশ্যই বিরত থাকুন, নচেৎ
তাঁর উপর [আর্থিক] অবরোধ প্রয়োগ করবই।’ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু
আনহা এই বক্তব্য শুনে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘সত্যিই কি সে এ কথা
বলেছে?’ লোকেরা বলল, ‘হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘তাহলে আমি আল্লাহর নামে মানত
করলাম যে, এখন থেকে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরের সাথে কখনোও কথা
বলব না।’ তারপর যখন বাক্যালাপ ত্যাগ দীর্ঘ হয়ে গেল, তখন আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর আয়েশার নিকট [এ ব্যাপারে] সুপারিশ
করালেন। আয়েশা বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি ইবনে যুবাইরের
সম্পর্কে কোন সুপারিশ গ্রহণ করব না, আর আপন মানত ভঙ্গও করব
না।’ বস্তুতঃ যখন ব্যাপারটা ইবনে যুবাইরের উপর অতীব দীর্ঘ
হয়ে পড়ল, তখন তিনি মিসওয়ার ইবনে মাখরামাহ ও আব্দুর রাহমান
ইবনে আসওয়াদ ইবনে আব্দে ইয়াগুস সাহাবীদের সঙ্গে আলোচনা করলেন এবং তাঁদেরকে বললেন, ‘আমি তোমাদেরকে আল্লাহর কসম দিচ্ছি যে, তোমরা
[আমার স্নেহময়ী খালা] আয়েশার কাছে আমাকে নিয়ে চল। কেননা, আমার
সাথে বাক্যালাপ বন্ধ রাখার মানতে অটল থাকা তাঁর জন্য আদৌ বৈধ নয়।’ সুতরাং
মিসওয়ার ও আব্দুর রহমান উভয়ে ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু
আনহু-কে সঙ্গে নিয়ে গেলেন।
এমনকি শেষ পর্যন্ত ভিতরে প্রবেশ করার জন্য আয়েশার নিকট অনুমতিও চাইলেন এবং বললেন, ‘আসসালামু আলাইকি অরাহ্মাতুল্লাহি অবারাকা-তুহ! আমরা কি ভিতরে
আসতে পারি?’ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, ‘হ্যাঁ
এসো।’ বললেন, ‘আমরা সকলেই কি?’ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, ‘হ্যাঁ, সকলেই প্রবেশ কর।’ কিন্তু তিনি জানতেন না
যে, ওই দু’জনের সঙ্গে আব্দুল্লাহ ইবনে
যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও উপস্থিত আছেন। সুতরাং এঁরা
যখন ভিতরে ঢুকলেন, তখন আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর পর্দার ভিতরে
চলে গেলেন এবং [খালা] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে আল্লাহর
শপথ দিতে লাগলেন। এ দিকে পর্দার বাইরে থেকে মিসওয়ার ও আব্দুর রহমান উভয়েই আয়েশাকে
কসম দিয়ে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে ও তাঁর ওজর গ্রহণ করতে
অনুরোধ করলেন এবং বললেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাক্যালাপ বন্ধ রাখতে নিষেধ
করেছেন---যে সম্বন্ধে আপনি অবহিত। আর কোন
মুসলিমের জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে তার ভাইয়ের সাথে তিন দিনের
বেশী কথাবার্তা বন্ধ রাখে।’ সুতরাং যখন তাঁরা আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহার সামনে উপদেশ ও সম্পর্ক ছিন্ন করা যে গুনাহ---তা বারবার বলতে
লাগলেন, তখন তিনিও উপদেশ আরম্ভ করলেন এবং কাঁদতে লাগলেন।
তিনি বলতে লাগলেন, ‘আমি তো মানত মেনেছি। আর মানতের ব্যাপারটা
বড় শক্ত।’ কিন্তু তাঁরা তাঁকে অব্যাহত-ভাবে বুঝাতে থাকলেন।
শেষ পর্যন্ত তিনি রাদিয়াল্লাহু আনহা আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরের সাথে
কথা বললেন এবং স্বীয় মানত ভঙ্গ করার কাফফারা স্বরূপ চল্লিশটি গোলাম মুক্ত করলেন।
তারপর থেকে তিনি যখনই উক্ত মানতের কথা স্মরণ করতেন, তখনই এত
বেশী কাঁদতেন যে, চোখের পানিতে তাঁর ওড়না ভিজে যেত। (বুখারী) [52]
[প্রকাশ
থাকে যে, নযর বা মানত ভঙ্গের কাফফারা কসম ভঙ্গের কাফফারার
ন্যায় অর্থাৎ একটি দাসমুক্ত করা অথবা দশ মিসকীনকে খাদ্য বা বস্ত্র দান করা। যদি এ
সবের শক্তি না রাখে তাহলে তিনটি রোযা রাখা। আর বেশী সাদকাহ করার কথা স্বতন্ত্র।]
53/1869 وَعَنْ عُقْبَةَ بنِ عَامِرٍرَضِيَ اللهُ عنه:أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم خَرَجَ إِلَى قَتْلَى أُحُدٍ، فَصَلَّى عَلَيْهِمْ بَعْدَ ثَمَانِ
سِنينَ كَالمُوَدِّعِ لِلأَحْيَاءِ وَالأَمْوَاتِ، ثُمَّ طَلَعَ إِلَى المِنْبَرِ،
فَقَالَ: «إنِّي بَيْنَ أَيْدِيكُمْ فَرَطٌ وَأَنَا شَهِيدٌ عَلَيْكُمْ وَإِنَّ
مَوْعِدَكُمُ الحَوْضُ، وَإِنِّي لأَنْظُرُ إِلَيْهِ مِنْ مَقَامِي هَذَا، أَلاَ
وَإِنِّي لَسْتُ أَخْشَى عَلَيْكُمْ أَنْ تُشْرِكُوا، وَلَكِنْ أَخْشَى عَلَيْكُمُ
الدُّنْيَا أَنْ تَنَافَسُوهَا»
قَالَ: فَكَانَتْ آخِرَ نَظْرَةٍ نَظَرْتُهَا إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه
وسلم . متفق عَلَيْهِ
وفي رواية : «وَلَكِنِّي
أَخْشَى عَلَيْكُمُ الدُّنْيَا أَنْ تَنَافَسُوا فِيهَا، وَتَقْتَتِلُوا
فَتَهْلِكُوا كَمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ» . قَالَ عُقْبَةُ : فَكَانَ آخِرَ مَا رَأيْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم عَلَى المِنْبَرِ .
وفي روايةٍ قَالَ: «إنِّي
فَرَطٌ لَكُمْ وَأَنَا شَهِيدٌ عَلَيْكُمْ وَإِنِّي وَاللهِ لأَنْظُرُ إِلَى
حَوْضِي الآنَ، وَإِنِّي أُعْطِيتُ مَفَاتِيحَ خَزَائِنِ الأَرْضِ، أَوْ
مَفَاتِيحَ الأَرْضِ، وَإِنِّي وَاللهِ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمْ أَنْ تُشْرِكُوا
بَعْدِي، وَلَكِنْ أَخَافُ عَلَيْكُمْ أَنْ تَنَافَسُوا فِيهَا» .
৫৩/১৮৬৯।
উক্ববাহ ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম [একবার] উহুদের শহীদদের
[কবরস্থানের] দিকে বের হলেন এবং যেন জীবিত ও মৃত ব্যক্তিদেরকে বিদায় জানাবার
উদ্দেশ্যে আট বছর পর তাঁদের উপর জানাজা পড়লেন [অর্থাৎ তাঁদের জন্য দো‘আ করলেন]। তারপর মিম্বরে চড়ে বললেন, ‘‘আমি
পূর্বে গমনকারী তোমাদের জন্য সু-ব্যবস্থাপক এবং সাক্ষীও। তোমাদের প্রতিশ্রুত স্থান
হাউজে [কাউসার]। আমি অবশ্যই ওটাকে আমার এই
স্থান থেকে দেখতে পাচ্ছি। শোনো! তোমাদের ব্যাপারে আমার এ আশংকা নেই যে, তোমরা শির্ক
করবে। তবে তোমাদের জন্য আমার আশংকা এই যে, তোমরা দুনিয়ার
ব্যাপারে আপোষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।’’ [রাবী বলেন,] ‘এটাই আমার শেষ দৃষ্টি ছিল যা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি নিবদ্ধ করেছিলাম
[অর্থাৎ এরপর তিনি দেহত্যাগ করেন]।’ (বুখারী-মুসলিম) [53]
অন্য
এক বর্ণনায় আছে যে, ‘‘কিন্তু তোমাদের জন্য আমার আশংকা এই যে, তোমরা পার্থিব ধন-সম্পদে আপোষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এবং সে
জন্য পরস্পর সংঘর্ষে লিপ্ত হবে এবং [পরিণামে] তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে;
যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীরা ধ্বংস হয়েছে।’’ উকবা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘মিম্বরের উপরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
এটাই ছিল আমার শেষ দর্শন।’
অপর
এক বর্ণনায় আছে, ‘‘আমি তোমাদের অগ্রদূত এবং তোমাদের জন্য
সাক্ষী। আল্লাহর শপথ! আমি এই মুহূর্তে আমার হাউজ [হাওজে কাওসার] দেখছি। আমাকে
পৃথিবীর ভাণ্ডারসমূহের চাবি গুচ্ছ প্রদান করা হয়েছে। আর আমি তোমাদের ব্যাপারে এ
জন্য শঙ্কিত নই যে, তোমরা আমার [তিরোধানের] পর শির্ক করবে; বরং এ আশংকা বোধ করছি যে, তোমরা পার্থিব
ধন-সম্পদের ব্যাপারে আপোষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।’’
হাদীসে
উল্লিখিত ‘শহীদদের উপর জানাজা পড়লেন’ অর্থাৎ
তাঁদের জন্য দো‘আ করলেন। [তকবীর সহ] পরিচিত জানাজার নামায
নয়।
54/1870 وَعَنْ أَبي زَيدٍ عَمرِو بنِ أَخْطَبَ
الأنصاريِّ رضي الله عنه قَالَ: صلَّى
بِنَا رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم الفَجْرَ، وَصَعِدَ المِنْبَرَ،
فَخَطَبَنَا حَتَّى حَضَرَتِ الظُّهْرُ، فَنَزَلَ فَصَلَّى، ثُمَّ صَعِدَ
المِنْبَرَ فَخَطَبَنَا حَتَّى حَضَرَتِ العَصْرُ، ثُمَّ نَزَلَ فَصَلَّى، ثُمَّ
صَعِدَ المِنْبَرَ فَخَطَبَنَا حَتَّى غَرَبَتِ الشَّمْسُ، فَأَخْبَرَنَا بِمَا
كَانَ وَبِمَا هُوَ كَائِنٌ، فَأَعْلَمُنَا أَحْفَظُنَا . رواه مسلم
৫৪/১৮৭০।
আবূ যায়েদ আমর ইবনে আখত্বাব আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, ‘একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে ফজরের নামায পড়লেন, অতঃপর
মিম্বরে চড়ে ভাষণ দিলেন। শেষ পর্যন্ত যোহরের সময় হয়ে গেল।
সুতরাং তিনি নীচে নামলেন ও নামায পড়লেন। তারপর আবার মিম্বরে চাপলেন [ও ভাষণ দানে প্রবৃত্ত হলেন] শেষ পর্যন্ত আসরের সময় হয়ে গেল।
তিনি পুনরায় নীচে অবতরণ করলেন ও নামায পড়লেন। অতঃপর তিনি আবার মিম্বরে উঠলেন এবং খুতবা পরিবেশনে ব্রতী হলেন, শেষ পর্যন্ত
সূর্য অস্ত গেল। সুতরাং অতীতে যা ঘটেছে এবং ভবিষ্যতে যা ঘটবে সে সমস্ত বিষয়গুলি
তিনি আমাদেরকে জানালেন। অতএব আমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বাধিক বড় জ্ঞানী, যিনি এসব কথাগুলি সবার চাইতে বেশি মনে রেখেছেন।’ (মুসলিম)[54]
55/1871 وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ : قَالَ النَّبِيُّ
صلى الله عليه وسلم: «مَنْ
نَذَرَ أَنْ يُطِيعَ اللهَ فَلْيُطِعْهُ، وَمَنْ نَذَرَ أَنْ يَعْصِيَ اللهَ فَلاَ
يَعْصِهِ» . رواه البخاري
৫৫/১৮৭১।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এরূপ মানত করে যে, সে
আল্লাহর আনুগত্য করবে, সে যেন তাঁর আনুগত্য করে। আর যে
ব্যক্তি এরূপ মানত করে যে, সে আল্লাহর অবাধ্যতা করবে, সে যেন তাঁর অবাধ্যতা না করে।’’ (বুখারী)[55]
56/1872 وَعَنْ أُمِّ شَرِيكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم أَمَرَهَا بِقَتْلِ الأَوْزَاغِ وَقَالَ: «كَانَ يَنْفُخُ عَلَى إِبْرَاهِيمَ». متفق عَلَيْهِ
৫৬/১৮৭২।
উম্মে শারীক রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম টিকটিকি মারতে আদেশ দিয়েছেন
এবং বলেছেন যে, ‘‘এ ইব্রাহীম-এর অগ্নিকুণ্ডে ফুঁ দিয়েছিল।’’(বুখারী-মুসলিম)[56]
57/1873 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ
اللهِ صلى الله عليه وسلم: «مَنْ
قَتَلَ وَزَغَةً فِي أَوَّلِ ضَرْبَةٍ فَلَهُ كَذَا وَكَذَا حَسَنَةً، وَمَنْ
قَتَلَهَا في الضَّرْبَةِ الثَّانِيَةِ فَلَهُ كَذَا وَكَذَا حَسَنَةً دُونَ
الأُولَى، وَإِنْ قَتَلَهَا فِي الضَّرْبَةِ الثَّالِثَةِ فَلَهُ كَذَا وَكَذَا
حَسَنَةً» .
وفي رواية : «مَنْ
قَتَلَ وَزَغَاً فِي أَوَّلِ ضَرْبَةٍ كُتِبَ لَهُ مِئَةُ حَسَنَةٍ، وَفِي
الثَّانِيَةِ دُونَ ذَلِكَ، وَفِي الثَّالِثَةِ دُونَ ذَلِكَ» . رواه مسلم .
قَالَ أَهلُ اللُّغَة : «الوَزَغُ» العِظَامُ مِنْ سَامَّ أَبْرَصَ .
৫৭/১৮৭৩। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি প্রথম আঘাতেই টিকটিকি হত্যা করে ফেলে,
তার জন্য এত এত নেকী হয়, আর যে ব্যক্তি দ্বিতীয় আঘাতে
মেরে ফেলে, তার জন্য প্রথম ব্যক্তি অপেক্ষা কম এত এত নেকী
হয়। আর যদি তৃতীয় আঘাতে তাকে হত্যা করে, তাহলে তার জন্য
[অপেক্ষাকৃত কম] এত এত নেকী হয়।’’
অপর
এক বর্ণনায় আছে, ‘‘যে ব্যক্তি প্রথম আঘাতেই টিকটিকি হত্যা
করে, তার জন্য একশত নেকী, দ্বিতীয়
আঘাতে তার চাইতে কম [নেকী] এবং তৃতীয় আঘাতে তার চাইতে কম [নেকী] হয়।’’
(মুসলিম)[57]
আরবী
ভাষাবিদদের মতে, وزغ বড় টিকটিকিকে বলে। [পক্ষান্তরে
গিরগিটির আরবীঃ حرباء। আর তাকে মারার নির্দেশ হাদীসে
নেই।]
58/1874 وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم قَالَ: «قَالَ
رَجُلٌ لأَتَصَدَّقَنَّ بِصَدَقَةٍ، فَخَرَجَ بِصَدَقَتِهِ فَوَضَعَهَا فِي يَدِ
سَارِقٍ، فَأَصْبَحُوا يَتَحَدَّثُونَ : تُصُدِّقَ عَلَى سَارِقٍ ! فَقَالَ: اَللهم لَكَ الحَمْدُ لأتَصَدَّقَنَّ
بِصَدَقَةٍ، فَخَرَجَ بِصَدَقَتِهِ فَوَضَعَهَا فِي يَدِ زَانِيَةٍ ؛ فَأَصْبَحُوا
يَتَحَدَّثُونَ : تُصُدِّقَ اللَّيْلَةَ عَلَى زَانِيَةٍ ! فَقَالَ: اَللهم لَكَ الحَمْدُ عَلَى زَانِيَةٍ !
لأتَصَدَّقَنَّ بِصَدَقَةٍ، فَخَرَجَ بِصَدَقَتِهِ فوَضَعَهَا فِي يَدِ غَنِيٍّ،
فَأَصْبَحُوا يَتَحَدَّثُونَ : تُصُدِّقَ عَلَى غَنِيٍّ ؟ فَقَالَ: اَللهم لَكَ الحَمْدُ عَلَى سَارِقٍ وَعَلَى
زَانِيَةٍ وعلى غَنِيٍّ ! فَأُتِيَ فَقِيلَ لَهُ : أَمَّا صَدَقَتُكَ عَلَى
سَارِقٍ فَلَعَلَّهُ أَنْ يَسْتَعِفَّ عَنْ سَرِقَتِهِ، وَأَمَّا الزَّانِيَةُ
فَلَعَلَّهَا تَسْتَعِفُّ عَنْ زِنَاهَا، وَأَمَّا الغَنِيُّ فَلَعَلَّهُ أَنْ
يَعْتَبِرَ فَيُنْفِقَ مِمَّا أَعْطَاهُ اللهُ» . رواه البخاري بلفظه ومسلم بمعناه .
৫৮/১৮৭৪।
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘একটি লোক বলল, ‘[আজ রাতে]
আমি অবশ্যই সাদকাহ করব।’ সুতরাং সে আপন সদকার বস্তু নিয়ে বের
হল এবং [অজান্তে] এক চোরের হাতে তা দিয়ে দিল। লোকে সকালে উঠে বলাবলি করতে লাগল যে, ‘আজ রাতে এক চোরের হাতে সদকা দেওয়া হয়েছে।’ সাদকাকারী
বলল, ‘হে আল্লাহ! তোমারই যাবতীয় প্রশংসা! [আজ রাতে] অবশ্যই
আবার সদকা করব।’ সুতরাং সে নিজ সদকা নিয়ে বের হল এবং
[অজান্তে] এক বেশ্যার হাতে তা দিয়ে দিল। সকাল বেলায় লোকে বলাবলি করতে লাগল যে, ‘আজ রাতে এক বেশ্যাকে সদকা দেওয়া হয়েছে।’ সে
তা শুনে আবার বলল, ‘হে আল্লাহ! তোমারই প্রশংসা যে, বেশ্যাকে সদকা করা হল। আজ রাতে পুনরায় অবশ্যই সাদকাহ করব।’ সুতরাং তার সদকা নিয়ে বের হয়ে গেল এবং [অজান্তে] এক ধনী ব্যক্তির
হাতে সদকা দিল। সকাল বেলায় লোকেরা আবার বলাবলি করতে লাগল যে, ‘আজ
এক ধনী ব্যক্তিকে সদকা দেওয়া হয়েছে।’ লোকটি শুনে বলল, ‘হে আল্লাহ! তোমারই সমস্ত প্রশংসা যে, চোর, বেশ্যা তথা ধনী ব্যক্তিকে সদকা করা হয়েছে।’ সুতরাং
[নবী অথবা স্বপ্নযোগে] তাকে বলা হল যে, ‘[তোমার সদকা ব্যর্থ
যায়নি; বরং] তোমার যে সদকা চোরের হাতে পড়েছে তার দরুন হয়তো
চোর তার চৌর্যবৃত্তি ত্যাগ করে দেবে। বেশ্যা হয়তো তার দরুন তার বেশ্যাবৃত্তি ত্যাগ
করবে। আর ধনী; সম্ভবত: সে উপদেশ গ্রহণ করবে এবং সে তার
আল্লাহ প্রদত্ত ধন-সম্পদ আল্লাহর রাহে ব্যয় করবে।’’ (বুখারী-মুসলিম, শব্দগুলি
বুখারীর)[58]
59/1875 وَعَنْه، قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِي
دَعْوَةٍ، فَرُفِعَ إِلَيْهِ الذِّرَاعُ، وَكَانَتْ تُعْجِبُهُ، فَنَهَسَ مِنْهَا
نَهْسَةً وَقَالَ: «أَنَا
سَيِّدُ النَّاسِ يَوْمَ القِيَامَةِ، هَلْ تَدْرُونَ مِمَّ ذَاكَ ؟ يَجْمَعُ
اللهُ الأَوَّلِينَ وَالآخِرِينَ فِي صَعِيدٍ وَاحِدٍ، فَيُبْصِرُهُمُ النَّاظِرُ،
وَيُسْمِعُهُمُ الدَّاعِي، وَتَدْنُو مِنْهُمُ الشَّمْسُ، فَيَبْلُغُ النَّاسَ
مِنَ الغَمِّ وَالكَرْبِ مَا لاَ يُطِيقُونَ وَلاَ يَحْتَمِلُونَ، فَيقُولُ
النَّاسُ : أَلاَ تَرَوْنَ مَا أَنْتُمْ فِيهِ إِلَى مَا بَلَغَكُمْ، أَلاَ تَنْظُرُونَ
مَنْ يَشْفَعُ لَكُمْ إِلَى رَبِّكُمْ ؟ فَيَقُولُ بَعْضُ النَّاسِ لِبَعْضٍ :
أَبُوكُمْ آدَمُ، فَيَأتُونَهُ فَيقُولُونَ : يَا آدَمُ أَنْتَ أَبُو البَشَرِ،
خَلَقَكَ اللهُ بِيَدِهِ، وَنَفَخَ فِيكَ مِنْ رُوحِهِ، وَأَمَرَ المَلاَئِكَةَ
فَسَجَدُوا لَكَ، وَأَسْكَنَكَ الجَنَّةَ، أَلاَ تَشْفَعُ لَنَا إِلَى رَبِّكَ ؟
أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ وَمَا بَلَغَنَا ؟ فَقَالَ: إِنَّ رَبِّي
غَضِبَ اليَوْمَ غَضَباً لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ، وَلاَ يَغْضَبُ
بَعْدَهُ مِثْلَهُ، وَإِنَّهُ نَهَانِي عَنِ الشَّجَرَةِ فَعَصَيْتُ، نَفْسِي
نَفْسِي نَفْسِي، اِذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي، اِذْهَبُوا إِلَى نُوحٍ، فَيَأتُونَ
نُوحاً فَيَقُولُونَ : يَا نُوحُ، أَنْتَ أَوَّلُ الرُّسُلِ إِلَى أَهلِ الأَرْضِ،
وَقَدْ سَمَّاكَ اللهُ عَبْداً شَكُوراً، أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ،
أَلاَ تَرَى إِلَى مَا بَلَغَنَا، أَلاَ تَشْفَعُ لَنَا إِلَى رَبِّكَ ؟ فَيَقُولُ
: إِنَّ رَبِّي غَضِبَ اليَوْمَ غَضَباً لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ، وَلَنْ
يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ، وَإِنَّهُ قَدْ كَانَتْ لِي
دَعْوَةٌ دَعَوْتُ بِهَا عَلَى قَوْمِي، نَفْسِي نَفْسِي نَفْسِي، اِذْهَبُوا
إِلَى غَيْرِي، اِذْهَبُوا إِلَى إِبْرَاهِيمَ، فَيَأتُونَ إِبْرَاهِيمَ
فَيقُولُونَ : يَا إِبْرَاهِيمُ، أَنْتَ نَبِيُّ اللهِ وَخَلِيلُهُ مِنْ أَهْلِ
الأَرْضِ، اِشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ، أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ ؟
فَيقُولُ لَهُمْ : إِنَّ رَبِّي قَدْ غَضِبَ اليَوْمَ غَضَباً لَمْ يَغْضَبْ
قَبْلَهُ مِثْلَهُ، وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ، وَإِنَّي كُنْتُ كَذَبْتُ
ثَلاثَ كَذِبَاتٍ ؛ نَفْسِي نَفْسِي نَفْسِي، اِذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي،
اِذْهَبُوا إِلَى مُوسَى، فَيَأتُونَ مُوسَى فَيقُولُونَ : يَا مُوسَى أنَتَ
رَسُولُ اللهِ، فَضَّلَكَ اللهُ بِرسَالاَتِهِ وَبِكَلاَمِهِ عَلَى النَّاسِ،
اِشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ، أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ ؟ فَيَقُولُ :
إِنَّ رَبِّي قَدْ غَضِبَ اليَوْمَ غَضَباً لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ،
وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ، وَإِنَّي قَدْ قَتَلْتُ نَفْساً لَمْ أُومَرْ
بِقَتْلِهَا، نَفْسِي نَفْسِي نَفْسِي، اِذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي ؛ اِذْهَبُوا
إِلَى عِيسَى . فَيَأتُونَ عِيسَى فَيَقُولُونَ : يَا عِيسَى، أَنْتَ رَسُولُ
اللهِ وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِنْهُ، وَكَلَّمْتَ
النَّاسَ في المَهْدِ، اِشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ، أَلاَ تَرَى إِلَى مَا
نَحْنُ فِيهِ ؟ فيَقُولُ عِيسَى: إِنَّ رَبِّي قَدْ غَضِبَ اليَوْمَ غَضَباً لَمْ
يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ، وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ، وَلَمْ يَذْكُرْ
ذَنْباً، نَفْسِي نَفْسِي نَفْسِي، اِذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي، اِذْهَبُوا إِلَى
مُحَمَّد صلى الله عليه وسلم» .
وَفي روايةٍ : «فَيَأتُونِي
فَيَقُولُونَ : يَا مُحَمَّدُ أَنْتَ رَسُولُ اللهِ وَخَاتَمُ الأَنْبِيَاءِ،
وَقَدْ غَفَرَ اللهُ لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ، اِشْفَعْ
لَنَا إِلَى رَبِّكَ، أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ ؟ فَأَنْطَلِقُ فَآتِي
تَحْتَ العَرْشِ فَأَقَعُ سَاجِداً لِرَبِّي، ثُمَّ يَفْتَحُ اللهُ عَلَيَّ مِنْ
مَحَامِدِهِ، وَحُسْنِ الثَّنَاءِ عَلَيْهِ شَيْئاً لَمْ يَفْتَحْهُ عَلَى أَحَدٍ
قَبْلِي، ثُمَّ يُقَالُ : يَا مُحَمَّدُ ارْفَعْ رَأسَكَ، سَلْ تُعْطَهُ،
وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ، فَأرْفَعُ رَأْسِي، فَأَقُولُ: أُمَّتِي يَا رَبِّ، أُمَّتِي
يَا رَبِّ، أُمَّتِي يَا رَبِّ، فَيُقَالُ : يَا مُحَمَّدُ أَدْخِلْ مِنْ
أُمَّتِكَ مَنْ لاَ حِسَابَ عَلَيْهِمْ مِنَ البَابِ الأَيْمَنِ مِنْ أَبْوَابِ
الجَنَّةِ، وَهُمْ شُرَكَاءُ النَّاسِ فِيمَا سِوَى ذَلِكَ مِنَ الأَبْوَابِ» . ثُمَّ قَالَ: «وَالَّذِي
نَفْسِي بِيَدِهِ، إِنَّ مَا بَيْنَ المِصْرَاعَيْنِ مِنْ مَصَارِيعِ الجَنَّةِ
كَمَا بَيْنَ مَكَّةَ وَهَجَرَ، أَوْ كَمَا بَيْنَ مَكَّةَ وَبُصْرَى» . متفق عَلَيْهِ
৫৯/১৮৭৫।
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, একদা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর
সাথে এক দাওয়াতে ছিলাম। তাঁকে সামনের পায়ের একটি রান তুলে দেওয়া হল। তিনি এই রান
বড় পছন্দ করতেন। তা থেকে তিনি [দাঁতে কেটে] খেলেন। অতঃপর তিনি বললেন,
‘‘কিয়ামতের দিন আমি হব সকল মানুষের নেতা। তোমরা কি জান, কি
কারণে? কিয়ামতের দিন পূর্বাপর সমগ্র মানবজাতি একই ময়দানে
সমবেত হবে। [সে ময়দানটি এমন হবে যে,] সেখানে দর্শক তাদেরকে
দেখতে পাবে এবং আহ্বানকারী [নিজ আহবান] তাদেরকে শুনাতে পারবে। সূর্য একেবারে কাছে
এসে যাবে। মানুষ এতই দুঃখ-কষ্টের মধ্যে নিপতিত হবে যে, ধৈর্য
ধারণ করার ক্ষমতাই তাদের থাকবে না। তারা বলবে, ‘দেখ, তোমাদের সবার কি ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, তোমাদের
কি বিপদ এসে পৌঁছেছে! এমন কোন ব্যক্তির খোঁজ কর, যিনি
পরওয়ারদেগারের কাছে সুপারিশ করতে পারেন।’ লোকেরা বলবে, ‘চল আদমের কাছে যাই।’ সে মতে তারা আদমের
কাছে এসে বলবে, ‘আপনি মানব জাতির পিতা, আল্লাহ
তা‘আলা নিজ হাতে আপনাকে সৃষ্টি করেছেন এবং ফুঁক দিয়ে তাঁর ‘রূহ’ আপনার মধ্যে সঞ্চারিত করেছেন। তাঁর
নির্দেশে ফিরিস্তাগণ আপনাকে সিজদা করেছিলেন। আপনাকে জান্নাতে স্থান দিয়েছিলেন।
সুতরাং আপনি কি আপনার পালনকর্তার দরবারে আমাদের জন্য সুপারিশ করবেন না? আপনি কি দেখছেন না, আমরা কি কষ্টের মধ্যে
আছি? আমরা কি যন্ত্রণা ভোগ করছি?’ আদম
বলবেন, ‘আমার প্রতিপালক আজ ভীষণ ক্রুদ্ধ আছেন,
এমন ক্রুদ্ধ তিনি আর কোনদিন হননি আর কখনো হবেনও না। তাছাড়া তিনি আমাকে একটি
বৃক্ষের কাছে যেতে নিষেধ করেছিলেন, কিন্তু আমি তার নির্দেশ
অমান্য করেছিলাম। আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত আছি! আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত আছি!
আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত আছি! তোমরা বরং আমাকে বাদ দিয়ে অন্য কারো কাছে যাও।
তোমরা নূহের কাছে যাও।’
সুতরাং
তারা সকলে নূহ -এর কাছে এসে বলবে, ‘হে নূহ! আপনি পৃথিবীর
প্রতি প্রথম প্রেরিত রসূল। আল্লাহ আপনাকে শোকর-গুজার বান্দা হিসাবে অভিহিত করেছেন।
সুতরাং আপনি কি আপনার পালনকর্তার দরবারে আমাদের জন্য সুপারিশ করবেন না? আপনি কি দেখছেন না, আমরা কি কষ্টের মধ্যে
আছি? আমরা কি যন্ত্রণা ভোগ করছি?’ নূহ
বলবেন, আমার প্রতিপালক আজ ভীষণ ক্রুদ্ধ আছেন, এমন
ক্রুদ্ধ তিনি আর কোনদিন হননি আর কখনো হবেনও না। তাছাড়া আমার একটি দো‘আ
ছিল, যার দ্বারা আমার জাতির উপর বদ্দুআ করেছি। আমি নিজেকে
নিয়েই চিন্তিত আছি! আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত আছি! আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত আছি!
তোমরা বরং আমাকে বাদ দিয়ে অন্য কারো কাছে যাও। তোমরা ইব্রাহীমের কাছে যাও।’
সুতরাং
তারা সবাই ইব্রাহীম -এর কাছে এসে বলবে, ‘হে ইব্রাহীম! আপনি
আল্লাহর নবী ও পৃথিবী বাসীদের মধ্য থেকে আপনিই তাঁর বন্ধু। আপনি আপনার পালনকর্তার
কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না, আমরা কি
যন্ত্রণার মধ্যে আছি?’ তিনি তাদেরকে বলবেন, ‘আমার
পালনকর্তা আজ ভীষণ রাগান্বিত হয়েছেন, এমন রাগান্বিত তিনি আর
কোনদিন হননি আর কখনো হবেনও না। তাছাড়া [দুনিয়াতে] আমি তিনটি মিথ্যা কথা বলেছি।
সুতরাং আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত আছি! আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত আছি! আমি নিজেকে
নিয়েই চিন্তিত আছি! তোমরা বরং আমাকে বাদ দিয়ে অন্য কারো কাছে যাও। তোমরা মুসার
কাছে যাও।’
অতঃপর
তারা মুসা -এর কাছে এসে বলবে, ‘হে মুসা! আপনি আল্লাহর রসূল।
আল্লাহ আপনাকে তাঁর রিসালাত দিয়ে এবং আপনার সাথে [সরাসরি] কথা বলে সমগ্র মানব
জাতির উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রতিপালকের নিকট সুপারিশ
করুন। আপনি কি দেখছেন না, আমরা কি দুর্ভোগ পোহাচ্ছি?’ তিনি বলবেন, ‘আজ আমার প্রতিপালক এত ভীষণ
ক্রুদ্ধ হয়ে আছেন, এমন ক্রুদ্ধ তিনি আর আগে কখনো হননি এবং আগামীতেও আর কোনদিন
হবেন না। তাছাড়া আমি তো [পৃথিবীতে] একটি প্রাণ হত্যা করেছিলাম, যাকে
হত্যা করার কোন নির্দেশ আমাকে দেওয়া হয়নি। আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত আছি! আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত
আছি! আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত আছি! তোমরা বরং আমাকে বাদ দিয়ে অন্য কারো কাছে যাও।
তোমরা ঈসার কাছে যাও।’
অতঃপর তারা সবাই ঈসা -এর কাছে এসে বলবে, ‘হে
ঈসা! আপনি আল্লাহর রাসূল। আপনি আল্লাহর সেই কালেমা, যা তিনি
মারয়ামের প্রতি প্রক্ষেপ করেছিলেন। আপনি হচ্ছেন তাঁর রূহ, আপনি
[জন্ম নেওয়ার পর] শিশুকালে দোলনায় শুয়েই মানুষের সাথে কথা বলেছিলেন। অতএব আপনি
আমাদের জন্য আপনার প্রতিপালকের নিকট সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না, আমরা কি যন্ত্রণার মধ্যে আছি?’ তিনি
তাদেরকে বলবেন, ‘আমার পালনকর্তা আজ ভীষণ রাগান্বিত হয়েছেন, এমন রাগান্বিত তিনি আর কোনদিন হননি আর কখনো হবেনও না। [এখানে
তিনি তাঁর কোন অপরাধ উল্লেখ করেননি।] আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত আছি! আমি নিজেকে
নিয়েই চিন্তিত আছি! আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত আছি! তোমরা বরং আমাকে বাদ দিয়ে অন্য
কারো কাছে যাও। তোমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
কাছে যাও।’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, সুতরাং তারা সবাই আমার কাছে এসে
বলবে, ‘হে মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর রসূল। আপনি আখেরি নবী।
আল্লাহ আপনার পূর্বাপর যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। অতএব আপনি আমাদের জন্য আপনার
প্রতিপালকের কাছে সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না, আমরা কি [ভয়াবহ] দুঃখ ও যন্ত্রণা
ভোগ করছি।’ তখন আমি চলে যাব এবং আরশের নীচে আমার প্রতিপালকের
জন্য সিজদা-বনত হব। অতঃপর আল্লাহ তাঁর প্রশংসা ও গুণগানের জন্য আমার হৃদয়কে এমন
উন্মুক্ত করে দেবেন, যেমন ইতোপূর্বে আর কারো জন্য করেননি।
অতঃপর তিনি বলবেন, ‘হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও, চাও, তোমাকে দেওয়া হবে। সুপারিশ কর, তোমার
সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।’ তখন আমি মাথা উঠিয়ে বলব, আমার উম্মতকে [রক্ষা করুন] হে আমার প্রতিপালক! আমার উম্মতকে
[রক্ষা করুন] হে প্রতিপালক! আমার উম্মতকে [রক্ষা করুন] হে প্রতিপালক!’ এর প্রত্যুত্তরে [আল্লাহর পক্ষ থেকে] বলা হবে, ‘হে
মুহাম্মাদ! তোমার উম্মতের মধ্যে যাদের কোন হিসাব-নিকাশ হবে না, তাদেরকে
ডান দিকের দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করাও। এই দরজা ছাড়া তারা অন্য সব দরজাতেও সকল
মানুষের শরীক।’
অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে, তাঁর কসম! জান্নাতের একটি দরজার প্রশস্ততা হচ্ছে মক্কা ও
[বাহরাইনের] হাজারের মধ্যবর্তী দূরত্ব অথবা মক্কা ও [সিরিয়ার] বুসরার মধ্যবর্তী
দূরত্বের সমান।’’ (বুখারী-মুসলিম)[59]
60/1876 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ: جَاءَ
إِبرَاهِيمُ عليه
السلام بِأُمِّ إِسْمَاعِيلَ وَبِابْنِهَا إِسْمَاعِيل وَهِيَ تُرْضِعُهُ،
حَتَّى وَضَعهَا عِنْدَ البَيْتِ، عِنْدَ دَوْحَةٍ فَوقَ زَمْزَمَ فِي أَعْلَى
المَسْجِدِ، وَلَيْسَ بِمَكَّةَ يَوْمَئِذٍ أَحَدٌ، وَلَيْسَ بِهَا مَاءٌ،
فَوَضَعَهُمَا هُنَاكَ، وَوَضَعَ عِنْدَهُمَا جِرَاباً فِيهِ تَمْرٌ، وَسِقَاءً فِيهِ
مَاءٌ، ثُمَّ قَفَّى إِبْرَاهِيمُ مُنْطَلِقاً، فَتَبِعَتْهُ أُمُّ إِسْمَاعِيلَ
فَقَالَتْ : يَا إِبْرَاهِيمُ، أَيْنَ تَذْهَبُ وَتَتْرُكُنَا بِهَذَا الوَادِي
الَّذِي لَيْسَ فِيهِ أَنِيسٌ وَلاَ شَيْءٌ ؟ فَقَالَتْ لَهُ ذَلِكَ مِرَاراً،
وَجَعَلَ لاَ يَلْتَفِتُ إِلَيْهَا، قَالَتْ لَهُ : آللهُ أَمَرَكَ بِهَذَا ؟
قَالَ: نَعَمْ، قَالَتْ : إِذاً لاَ يُضَيِّعُنَا ؛ ثُمَّ رَجَعَتْ، فَانْطَلَقَ
إِبْرَاهِيمُ عليه
السلام، حَتَّى إِذَا كَانَ عِنْدَ الثَّنِيَّةِ حَيْثُ لاَ يَرَونَهُ،
اسْتَقْبَلَ بِوَجْهِهِ البَيْتَ، ثُمَّ دَعَا بِهَؤُلاَءِ الدَّعَوَاتِ، فَرَفَعَ
يَدَيْهِ فَقَالَ: ﴿ رَّبَّنَآ إِنِّيٓ
أَسۡكَنتُ مِن ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيۡرِ ذِي زَرۡعٍ عِندَ بَيۡتِكَ ٱلۡمُحَرَّمِ
رَبَّنَا لِيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ فَٱجۡعَلۡ أَفِۡٔدَةٗ مِّنَ ٱلنَّاسِ تَهۡوِيٓ
إِلَيۡهِمۡ وَٱرۡزُقۡهُم مِّنَ ٱلثَّمَرَٰتِ لَعَلَّهُمۡ يَشۡكُرُونَ ٣٧ ﴾ [ابراهيم: ٣٧]. وَجَعَلَتْ أُمُّ إِسْمَاعِيلَ تُرْضِعُ إِسْمَاعِيلَ وَتَشْرَبُ
مِنْ ذَلِكَ المَاءِ، حَتَّى إِذَا نَفِدَ مَا فِي السِّقَاءِ عَطِشَتْ، وَعَطِشَ
ابْنُهَا، وَجَعَلَتْ تَنْظُرُ إِلَيْهِ يَتَلَوَّى - أَوْ قَالَ يَتَلَبَّطُ -
فَانْطَلَقَتْ كَرَاهِيَةَ أَنْ تَنْظُرَ إِلَيْهِ، فَوَجَدَتِ الصَّفَا أَقْرَبَ
جَبَلٍ فِي الأرْضِ يَلِيهَا، فَقَامَتْ عَلَيْهِ، ثُمَّ اسْتَقْبَلَتِ الوَادِي
تَنْظُرُ هَلْ تَرَى أَحَداً ؟ فَلَمْ تَرَ أَحَداً . فَهَبَطَتْ مِنَ الصَّفَا
حَتَّى إِذَا بَلَغَتِ الوَادِي، رَفَعَت طَرفَ دِرْعِهَا، ثُمَّ سَعَتْ سَعْيَ
الإنْسَانِ المَجْهُودِ حَتَّى جَاوَزَتِ الوَادِي، ثُمَّ أَتَتِ المَرْوَةَ
فَقَامَتْ عَلَيْهَا، فَنَظَرَتْ هَلْ تَرَى أَحَداً ؟ فَلَمْ تَرَ أَحَداً،
فَفَعَلَتْ ذَلِكَ سَبْعَ مَرَّاتٍ . قَالَ ابنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا
: قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: «فَلِذَلِكَ سَعْيُ النَّاسِ بَيْنَهُمَا»، فَلَمَّا أَشْرَفَتْ عَلَى المَرْوَةِ سَمِعَتْ صَوْتاً، فَقَالَتْ :
صَهْ - تُريدُ نَفْسَهَا - ثُمَّ تَسَمَّعَتْ، فَسَمِعَتْ أَيضاً، فَقَالَتْ :
قَدْ أَسْمَعْتَ إنْ كَانَ عِنْدَكَ غَوَاثٌ، فَإِذَا هِيَ بِالمَلَكِ عِنْدَ
مَوْضِعِ زَمْزَمَ، فَبَحَثَ بِعَقِبِهِ - أَوْ قَالَ بِجَنَاحِهِ - حَتَّى ظَهَرَ
المَاءُ، فَجَعَلَتْ تُحَوِّضُهُ وَتَقُولُ بِيَدِهَا هَكَذَا، وَجَعَلَتْ
تَغْرِفُ مِنَ المَاءِ فِي سِقَائِهَا وَهُوَ يَفُورُ بَعْدَ مَا تَغْرِفُ . وَفِي
رِوَايَةٍ : بِقَدَرِ مَا تَغْرِفُ . قَالَ ابنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا
: قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: «رَحِمَ اللهُ أُمَّ إِسْمَاعِيلَ لَوْ تَرَكَتْ زَمْزَمَ أَوْ قَالَ لَوْ لَمْ تَغْرِفْ مِنَ المَاءِ -
لَكَانَتْ زَمْزَمُ عَيْناً مَعِيناً» قَالَ: فَشَرِبَتْ وَأَرْضَعَتْ وَلَدَهَا، فَقَالَ لَهَا المَلَكُ :
لاَ تَخَافُوا الضَّيْعَةَ فَإِنَّ هَاهُنَا بَيْتاً للهِ يَبْنِيهِ هَذَا
الغُلاَمُ وَأَبُوهُ، وَإِنَّ اللهَ لاَ يُضَيِّعُ أَهْلَهُ، وَكَانَ البَيْتُ
مُرْتَفِعاً مِنَ الأَرْضِ كَالرَّابِيَةِ، تَأتِيهِ السُّيُولُ، فَتَأخُذُ عَنْ
يَمِينِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ، فَكَانَتْ كَذَلِكَ حَتَّى مَرَّتْ بِهِمْ رُفْقَةٌ
مِنْ جُرْهُمٍ، أَوْ أَهْلُ بَيْتٍ مِنْ جُرْهُمٍ مُقْبِلينَ مِنْ طَرِيقِ
كَدَاءَ، فَنَزلُوا فِي أَسْفَلِ مَكَّةَ ؛ فَرَأَوْا طَائِراً عائِفاً، فَقَالُوا
: إِنَّ هَذَا الطَّائِرَ لَيَدُورُ عَلَى مَاءٍ، لَعَهْدُنَا بِهَذا الوَادِي
وَمَا فِيهِ مَاءٌ. فَأَرْسَلُوا جَرِيّاً أَوْ جَرِيَّيْنِ، فَإِذَا هُمْ
بِالمَاءِ . فَرَجَعُوا فَأَخْبَرُوهُمْ ؛ فَأَقْبَلُوا وَأُمُّ إِسْمَاعِيلَ
عِنْدَ المَاءِ، فَقَالُوا : أَتَأذَنِينَ لَنَا أَنْ نَنْزِلَ عِنْدَكِ ؟ قَالَتْ
: نَعَمْ، وَلَكِنْ لاَ حَقَّ لَكُمْ فِي المَاءِ، قَالُوا : نَعَمْ . قَالَ ابنُ
عَبَّاسٍ : قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: «فَأَلْفَى ذَلِكَ أُمَّ إِسْمَاعِيلَ، وَهِيَ تُحِبُّ الأُنْسَ» فَنَزَلُوا، فَأَرْسَلُوا إِلَى أَهْلِهِمْ فَنَزَلُوا مَعَهُمْ،
حَتَّى إِذَا كَانُوا بِهَا أَهْلَ أَبْيَاتٍ وَشَبَّ الغُلاَمُ وَتَعَلَّمَ
العَرَبِيَّةَ مِنْهُمْ، وَأَنْفَسَهُمْ وَأَعْجَبَهُمْ حِيْنَ شَبَّ، فَلَمَّا
أَدْرَكَ زَوَّجُوهُ امْرَأةً مِنْهُمْ : وَمَاتَتْ أُمُّ إِسْمَاعِيلَ، فَجَاءَ
إِبْرَاهِيمُ بَعْدَما تَزَوَّجَ إِسْمَاعِيلُ يُطَالِعُ تَرِكَتَهُ، فَلَمْ
يَجِدْ إِسْمَاعِيلَ ؛ فَسَأَلَ امْرَأتَهُ عَنْهُ فَقَالَتْ : خَرَجَ يَبْتَغِي
لَنَا - وفي روايةٍ : يَصِيدُ لَنَا - ثُمَّ سَأَلَهَا عَنْ عَيْشِهِمْ
وَهَيْئَتِهِمْ، فَقَالَتْ : نَحْنُ بِشَرٍّ، نَحْنُ فِي ضِيقٍ وَشِدَّةٍ ؛
وَشَكَتْ إِلَيْهِ، قَالَ: فَإِذَا جَاءَ زَوْجُكِ اقْرَئِي عَلَيْهِ السَّلاَمَ،
وَقُولِي لَهُ يُغَيِّرْ عَتَبَةَ بَابِهِ . فَلَمَّا جَاءَ إِسْمَاعِيلُ
كَأَنَّهُ آنَسَ شَيْئاً، فَقَالَ: هَلْ جَاءَكُمْ مِنْ أَحَدٍ ؟ قَالَتْ :
نَعَمْ، جَاءَنا شَيْخٌ كَذَا وَكَذَا، فَسَأَلَنَا عَنْكَ فَأَخْبَرْتُهُ،
فَسَأَلَنِي : كَيْفَ عَيْشُنَا، فَأَخْبَرْتُهُ أَنَّا في جَهْدٍ وَشِدَّةٍ .
قَالَ: فَهَلْ أَوْصَاكِ بِشَيءٍ ؟ قَالَتْ : نَعَمْ، أَمَرَنِي أَنْ أَقْرَأَ
عَلَيْكَ السَّلاَمَ، وَيَقُولُ : غَيِّرْ عَتَبَةَ بَابِكَ، قَالَ: ذَاكَ أَبِي
وَقَدْ أَمَرَنِي أَنْ أُفَارِقَكِ ! اِلْحَقِي بِأَهْلِكِ . فَطَلَّقَهَا وَتَزَوَّجَ
مِنْهُمْ أُخْرَى، فَلَبِثَ عَنْهُمْ إِبْرَاهِيمُ مَا شَاءَ اللهُ، ثُمَّ
أَتَاهُمْ بَعْدُ فَلَمْ يَجِدْهُ، فَدَخَلَ عَلَى امْرَأتِهِ فَسَألَ عَنْهُ .
قَالَتْ : خَرَجَ يَبْتَغِي لَنَا قَالَ: كَيفَ أنْتُمْ ؟ وَسَأَلَهَا عَنْ
عَيْشِهِمْ وَهَيْئَتِهِمْ، فَقَالَتْ : نَحْنُ بِخَيرٍ وَسَعَةٍ، وَأَثْنَتْ
عَلَى اللهِ . فَقَالَ: مَا طَعَامُكُمْ ؟ قَالَتْ : اللَّحْمُ، قَالَ: فمَا
شَرَابُكُمْ ؟ قَالَت : الماءُ، قَالَ:
اَللهم بَارِكْ لَهُمْ فِي اللَّحْمِ وَالمَاءِ. قَالَ النَّبيُّ صلى الله
عليه وسلم : وَلَمْ يَكُنْ لَهُمْ يَوْمَئِذٍ حَبٌّ وَلَوْ كَانَ لَهُمْ دَعَا
لَهُمْ فِيهِ، قَالَ: فَهُمَا لاَ يَخْلُو عَلَيْهِمَا أَحَدٌ بِغَيْرِ مَكَّةَ
إِلاَّ لَمْ يُوَافِقَاهُ .
وَفِي
رواية : فَجَاءَ فَقَالَ: أَيْنَ إِسْمَاعِيلُ ؟ فَقَالَتْ امْرأتُهُ : ذَهَبَ
يَصِيدُ ؛ فَقَالَتِ امْرَأتُهُ : أَلاَ تَنْزِلُ، فَتَطْعَمَ وَتَشْرَبَ ؟ قَالَ:
وَمَا طَعَامُكُمْ وَمَا شَرَابُكُمْ ؟ قَالَتْ : طَعَامُنَا اللَّحْمُ
وَشَرَابُنَا المَاءُ، قَالَ: اَللهم
بَارِكْ لَهُمْ فِي طَعَامِهِمْ وَشَرابِهِمْ . قَالَ: فَقَالَ أَبُو القَاسِمِ صلى
الله عليه وسلم : بَرَكَةُ دَعوَةِ إبْرَاهِيمَ . قَالَ: فَإِذَا جَاءَ زَوْجُكِ
فَاقْرَئِي عَلَيْهِ السَّلاَمَ وَمُرِيِهِ يُثَبِّتُ عَتَبَةَ بَابِهِ. فَلَمَّا
جَاءَ إِسْمَاعِيلُ قَالَ: هَلْ أَتَاكُمْ مِنْ أَحَدٍ ؟ قَالَتْ : نَعَمْ،
أَتَانَا شَيْخٌ حَسَنُ الهَيْئَةِ، وَأثْنَتْ عَلَيْهِ، فَسَألَنِي عَنْكَ
فَأَخْبَرتُهُ، فَسَألَنِي كَيْفَ عَيْشُنَا فَأَخْبَرْتُهُ أَنَّا بِخَيْرٍ .
قَالَ: فَأَوْصَاكِ بِشَيءٍ ؟ قَالَتْ : نَعَمْ، يَقْرَأُ عَلَيْكَ السَّلاَمَ
وَيَأمُرُكَ أَنْ تُثَبِّتَ عَتَبَةَ بَابِكَ . قَالَ: ذَاكَ أَبِي، وَأَنْتِ العَتَبَةُ،
أَمَرَنِي أَنْ أُمْسِكَكِ . ثُمَّ لَبِثَ عَنْهُمَ مَا شَاءَ اللهُ، ثُمَّ جَاءَ
بَعدَ ذَلِكَ وَإِسْمَاعِيلُ يَبْرِي نَبْلاً لَهُ تَحْتَ دَوْحَةٍ قَريباً مِنْ
زَمْزَمَ، فَلَمَّا رَآهُ قَامَ إِلَيْهِ، فَصَنَعَا كَمَا يَصْنَعُ الوَالِدُ
بِالوَلَدِ وَالوَلَدُ بِالوَالدِ . قَالَ: يَا إِسْمَاعِيلُ، إِنَّ اللهَ
أَمَرَنِي بِأَمْرٍ، قَالَ: فَاصْنَعْ مَا أمَرَكَ رَبُّكَ ؟ قالَ : وَتُعِينُنِي،
قَالَ: وَأُعِينُكَ، قَالَ: فَإِنَّ اللهَ أَمَرَنِي أَنْ أَبْنِي بَيْتاً
هَاهُنَا، وَأَشَارَ إِلَى أَكَمَةٍ مُرْتَفِعَةٍ عَلَى مَا حَوْلَهَا، فَعِنْدَ
ذَلِكَ رَفَعَ القَوَاعِدَ مِنَ البَيْتِ، فَجَعَلَ إِسْمَاعِيلُ يَأتِي
بِالحِجَارَةِ وَإِبْرَاهِيمُ يَبْنِي حَتَّى إِذَا ارْتَفَعَ البِنَاءُ، جَاءَ
بِهذَا الحَجَرِ فَوَضَعَهُ لَهُ فَقَامَ
عَلَيْهِ، وَهُوَ يَبْنِي وَإِسْمَاعِيلُ يُنَاوِلُهُ الحِجَارَةَ وَهُمَا
يَقُولاَنِ: ﴿رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّآۖ إِنَّكَ أَنتَ
ٱلسَّمِيعُ ٱلۡعَلِيمُ ١٢٧ ﴾ [البقرة: ١٢٧]
وفي
روايةٍ : إِنَّ إِبْرَاهِيمَ خَرَجَ بِإِسْمَاعِيلَ وَأُمِّ إِسْمَاعِيلَ،
مَعَهُمْ شَنَّةٌ فِيهَا مَاءٌ، فَجَعَلَتْ أُمُّ إِسْمَاعِيلَ تَشْرَبُ مِنَ
الشَّنَّةِ فَيَدِرُّ لَبَنُهَا عَلَى صَبِيِّهَا، حَتَّى قَدِمَ مَكَّةَ،
فَوَضَعَهَا تَحْتَ دَوْحَةٍ، ثُمَّ رَجَعَ إِبْرَاهِيمُ إِلَى أَهْلِهِ،
فَاتَّبَعَتْهُ أُمُّ إِسْمَاعِيلَ حَتَّى لَمَّا بَلَغُوا كَدَاءَ نَادَتْهُ مِنْ
وَرَائِهِ : يَا إِبْرَاهِيمُ إِلَى مَنْ تَتْرُكُنَا ؟ قَالَ: إِلَى اللهِ،
قَالَتْ : رَضِيْتُ بِاللهِ، فَرَجَعَتْ وَجَعَلَتْ تَشْرَبُ مِنَ الشِّنَّةِ
وَيَدُرُّ لَبَنُهَا عَلَى صَبِيِّهَا، حَتَّى لَمَّا فَنِيَ المَاءُ قَالَتْ :
لَوْ ذَهَبْتُ فَنَظَرْتُ لَعَلِّي أُحِسُّ أَحَداً . قَالَ: فَذَهَبَتْ
فَصَعِدَتِ الصَّفَا، فَنَظَرَتْ وَنَظَرَتْ هَلْ تُحِسُّ أَحَداً، فَلَمْ تُحِسَّ
أَحَداً، فَلَمَّا بَلَغَتِ الوَادِيَ سَعَتْ، وَأَتَتِ المَرْوَةَ، وَفَعَلَتْ
ذَلِكَ أَشْوَاطَاً، ثُمَّ قَالَتْ : لَوْ ذَهَبْتُ فَنَظَرْتُ مَا فَعَلَ
الصَّبِيُّ، فَذَهَبَتْ فَنَظَرَتْ فَإِذَا هُوَ عَلَى حَالِهِ، كَأنَّهُ يَنْشَغُ
لِلْمَوْتِ، فَلَمْ تُقِرَّهَا نَفْسُهَا فَقَالَتْ : لَوْ ذَهَبْتُ فَنَظَرْتُ
لَعَلِّي أُحِسُّ أَحَداً، فَذَهَبَتْ فَصَعِدَتِ الصَّفَا، فَنَظَرَتْ وَنَظَرَتْ
فَلَمْ تُحِسَّ أَحَداً، حَتَّى أَتَمَّتْ سَبْعاً، ثُمَّ قَالَتْ : لَوْ ذَهَبْتُ
فَنَظَرْتُ مَا فَعَلَ، فَإِذَا هِيَ بِصَوْتٍ، فَقَالَتْ : أَغِثْ إِنْ كَانَ
عِنْدَكَ خَيْرٌ، فَإِذَا جِبْرِيلُ عليه السلام فَقَالَ بِعقِبِهِ هَكَذَا، وَغَمَزَ بِعَقِبِهِ عَلَى الأَرْضِ، فَانْبَثَقَ
المَاءُ فَدَهِشَتْ أُمُّ إِسْمَاعِيلَ، فَجَعَلَتْ تَحْفِنُ وَذَكَرَ الحَديثَ بِطُولِهِ، رواه البخاري
بهذه الروايات كلها.
৬০/১৮৭৬। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ইব্রাহীম আলাইহিস
সালাম ইসমাঈলের মা [হাজার; যা বাংলায়
প্রসিদ্ধ হাজেরা] ও তাঁর দুধের শিশু ইসমাঈলকে সঙ্গে নিয়ে কা‘বা ঘরের নিকট এবং
যমযমের উপরে একটি বড় গাছের তলে [বর্তমান] মসজিদের সবচেয়ে উঁচু জায়গায় তাঁদেরকে
রাখলেন। তখন মক্কায় না ছিল জনমানব, না ছিল কোন পানি। সুতরাং সেখানেই তাদেরকে রেখে
গেলেন এবং একটি থলের মধ্যে কিছু খেজুর আর একটি মশকে স্বল্প পরিমাণ পানি দিয়ে
গেলেন। তারপর ইব্রাহীম ফিরে যেতে লাগলেন।
তখন ইসমাঈলের মা তাঁর পিছু পিছু ছুটে এসে বললেন, ‘হে ইব্রাহীম! আমাদেরকে এমন এক
উপত্যকায় ছেড়ে দিয়ে আপনি কোথায় যাচ্ছেন, যেখানে না আছে কোন সঙ্গী-সাথী আর না আছে
অন্য কিছু?’ তিনি বারংবার এ কথা বলতে থাকলেন। কিন্তু ইব্রাহীম সেদিকে ভ্রূক্ষেপ
করলেন না। তখন হাজেরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আল্লাহ কি আপনাকে এর হুকুম দিয়েছেন?’
তিনি উত্তরে বললেন, ‘হ্যাঁ।’ উত্তর শুনে হাজেরা বললেন, ‘তাহলে তিনি আমাদেরকে ধ্বংস
ও বরবাদ করবেন না।’ অতঃপর হাজেরা ফিরে এলেন।
ইব্রাহীম চলে গেলেন।
পরিশেষে যখন তিনি [হাজূনের কাছে] সানিয়্যাহ নামক স্থানে এসে পৌঁছলেন, যেখানে
স্ত্রী-পুত্র আর তাঁকে দেখতে পাচ্ছিলেন না, তখন তিনি কা‘বা ঘরের দিকে মুখ করে দু’হাত
তুলে এই দো‘আ করলেন, ‘‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমি আমার কিছু বংশধরকে
ফল-ফসলহীন উপত্যকায় তোমার পবিত্র গৃহের নিকট বসবাস করালাম; হে
আমাদের প্রতিপালক! যাতে তারা নামায কায়েম করে। সুতরাং তুমি কিছু লোকের অন্তরকে
ওদের প্রতি অনুরাগী করে দাও এবং ফলাদি দ্বারা তাদের জীবিকার ব্যবস্থা কর; যাতে
তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।’’ (সূরা ইব্রাহীম ৩৭ আয়াত)
[অতঃপর
ইব্রাহীম চলে গেলেন।] ইসমাঈলের মা শিশুকে দুধ পান করাতেন আর নিজে ঐ মশক থেকে পানি
পান করতেন। পরিশেষে ঐ মশকের পানি শেষ হয়ে গেলে তিনি নিজেও পিপাসিত হলেন এবং [ঐ
কারণে বুকের দুধ শুকিয়ে যাওয়ায়] তাঁর শিশুপুত্রটিও পিপাসায় কাতর হয়ে পড়ল। তিনি
শিশুর প্রতি তাকিয়ে দেখলেন, [পিপাসায়] শিশু মাটির উপর ছট্ফট্
করছে। শিশু পুত্রের [এ করুণ অবস্থার] দিকে তাকানো তার পক্ষে সহ্য হচ্ছিল না। তিনি
সরে পড়লেন এবং তাঁর অবস্থান ক্ষেত্রের নিকটতম পর্বত হিসাবে ‘স্বাফা’কে পেলেন। তিনি তার উপর উঠে দাঁড়িয়ে উপত্যকার দিকে মুখ করে এদিক
ওদিক তাকিয়ে দেখলেন, কাউকে দেখা যায় কি না। কিন্তু তিনি
কাউকে দেখতে পেলেন না। তখন স্বাফা পর্বত থেকে নেমে আসলেন। অতঃপর যখন তিনি উপত্যকায়
পৌঁছলেন, তখন আপন পিরানের [ম্যাক্সির] নিচের দিক তুলে একজন
শ্রান্তক্লান্ত মানুষের মত দৌড়ে উপত্যকা পার হলেন। অতঃপর ‘মারওয়া’ পাহাড়ে এসে তার উপরে উঠে দাঁড়ালেন। অতঃপর চারিদিকে দৃষ্টিপাত করে
কাউকে দেখার চেষ্টা করলেন। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলেন না। [এইভাবে তিনি পাহাড়দ্বয়ের
মাঝখানে] সাতবার [আসা-যাওয়া] করলেন। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘এ কারণে [হজ্জের সময়] হাজীগণের এই পাহাড়দ্বয়ের
মধ্যে সাতবার সায়ী বা দৌড়াদৌড়ি করতে হয়।’’
এভাবে
শেষবার যখন তিনি মারওয়া পাহাড়ের উপর উঠলেন, তখন একটি আওয়াজ
শুনতে পেলেন। তখন তিনি নিজেকেই বললেন, ‘চুপ!’ অতঃপর
তিনি কান খাড়া করে ঐ আওয়াজ শুনতে লাগলেন। আবারও সেই আওয়ায শুনতে পেলেন। তখন তিনি
বললেন, ‘তোমার আওয়াজ তো শুনতে পেলাম। এখন যদি তোমার কাছে
সাহায্যের কিছু থাকে, তবে আমাকে সাহায্য কর।’ হঠাৎ
তিনি যমযম যেখানে অবস্থিত সেখানে [জিব্রীল] ফিরিশ্তাকে দেখতে পেলেন। ফিরিশ্তা তাঁর
পায়ের গোড়ালি দিয়ে অথবা নিজ ডানা দিয়ে আঘাত করলেন। ফলে [আঘাতের স্থান থেকে] পানি প্রকাশ
পেল। হাজেরা এর চার পাশে নিজ হাত দ্বারা বাঁধ দিয়ে তাকে হাউজের রূপদান করলেন এবং
অঞ্জলি ভরে তার মশকটিতে পানি ভরতে লাগলেন। হাজেরার ভরা শেষ হলেও পানি উথলে উঠতে
থাকল।
ইবনে
আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ
ইসমাঈলের মায়ের উপর করুণা বর্ষণ করুন। যদি তিনি যমযমকে [বাঁধ না দিয়ে ঐভাবে] ছেড়ে
দিতেন। অথবা যদি তিনি অঞ্জলি দিয়ে মশক না ভরতেন, তবে যমযম
[কূপ না হয়ে] একটি প্রবহমান ঝর্ণা হত।’’
বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর হাজেরা
নিজে পানি পান করলেন এবং শিশু পুত্রকেও দুধ পান করালেন। তখন ফিরিশ্তা তাঁকে বললেন, ‘ধ্বংসের কোন আশংকা করবেন না। কেননা, এখানেই
মহান আল্লাহর ঘর রয়েছে। এই শিশু তার পিতার সাথে মিলে এটি পুনর্নির্মাণ করবেন। আর
আল্লাহ তাঁর খাস লোককে ধ্বংস করেন না।’ ঐ সময় বায়তুল্লাহ
[আল্লাহর ঘরের পরিত্যক্ত স্থানটি] জমিন থেকে টিলার মত উঁচু হয়ে ছিল। স্রোতের পানি
এলে তার ডান-বাম দিয়ে বয়ে যেত।
হাজেরা এইভাবে দিন যাপন করছিলেন। শেষ পর্যন্ত জুরহুম
গোত্রের কিছু লোক ‘কাদা’ নামক স্থানের
পথ বেয়ে পার হয়ে যাচ্ছিল। তারা মক্কার নিচু ভূমিতে অবতরণ করল এবং দেখতে পেল
কতকগুলো পাখী চক্রাকারে উড়ছে। তখন তারা বলল, ‘নিশ্চয় এই
পাখিগুলি পানির উপরই ঘুরছে। অথচ আমরা এ ময়দানে বহুকাল কাটিয়েছি। কিন্তু কখনো এখানে
কোন পানি দেখিনি।’ অতঃপর তারা একজন বা দু’জন
দূত সেখানে পাঠাল। তারা গিয়েই পানি দেখতে পেল। ফিরে এসে সবাইকে পানির খবর দিল। খবর
পেয়ে সবাই সেদিকে এসে দেখল, ইসমাঈলের মা পানির নিকট বসে
আছেন। তারা তাঁকে বলল, ‘আমরা আপনার নিকটবর্তী স্থানে বসবাস
করতে চাই। আপনি আমাদেরকে অনুমতি দেবেন কি?’ তিনি উত্তরে
বললেন, ‘হ্যাঁ। তবে এ পানির উপর তোমাদের কোন স্বত্বাধিকার
থাকবে না।’ তারা বলল, ‘ঠিক আছে।’
ইবনে
রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘এ ঘটনা ইসমাঈলের মায়ের
জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ এনে দিল। যেহেতু তিনি তো সঙ্গী-সাথীই চাচ্ছিলেন। সুতরাং তারা
তাদের পরিবার-পরিজনের কাছেও খবর পাঠাল। তারাও এসে তাদের সাথে বসবাস করতে লাগল। শেষ
পর্যন্ত সেখানে তাদের অনেক ঘর-বাড়ি হল। ইসমাইলও বড় হলেন। তাদের নিকট থেকে [তাদের
ভাষা] আরবী শিখলেন। বড় হলে তারা তাঁকে পছন্দ করল এবং তাঁর প্রতি মুগ্ধ হল। অতঃপর
তিনি যৌবনপ্রাপ্ত হলে তারা তাদেরই এক মেয়ের সঙ্গে তাঁর বিবাহ দিলেন। এরপর ইসমাঈলের
মা মৃত্যুবরণ করলেন।
ইসমাঈলের
বিবাহের পর ইব্রাহীম তাঁর পরিত্যক্ত পরিজনকে দেখার জন্য এখানে এলেন। কিন্তু এসে
ইসমাঈলকে পেলেন না। পরে তাঁর স্ত্রীর নিকট তাঁর সম্পর্কে জানতে চাইলেন। স্ত্রী
বললেন, ‘তিনি আমাদের রুযীর সন্ধানে বেরিয়ে গেছেন।’ এক বর্ণনা অনুযায়ী -‘আমাদের জন্য শিকার
করতে গেছেন।’ আবার তিনি পুত্রবধূর কাছে তাঁদের জীবনযাত্রা ও
অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলেন। বধূ বললেন, ‘আমরা অতিশয়
দুর্দশা, দুরবস্থা, টানাটানি এবং ভীষণ
কষ্টের মধ্যে আছি।’ তিনি ইব্রাহীম -এর নিকট নানা অভিযোগ
করলেন। তিনি তাঁর পুত্রবধূকে বললেন, ‘তোমার স্বামী বাড়ি এলে
তাঁকে আমার সালাম জানাবে এবং বলবে, সে যেন তার ঘরের দরজার
চৌকাঠ বদলে নেয়।’ এই বলে তিনি চলে গেলেন।
ইসমাইল
যখন বাড়ি ফিরে এলেন, তখন তিনি ইব্রাহীমের আগমন সম্পর্কে একটা
কিছু ইঙ্গিত পেয়ে স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমাদের নিকট কেউ
কি এসেছিলেন?’ স্ত্রী বললেন, ‘হ্যাঁ, এই এই আকৃতির একজন বয়স্ক লোক এসেছিলেন। আপনার সম্পর্কে আমাকে
জিজ্ঞেস করছিলেন। আমি তাঁকে আপনার খবর দিলাম। পুনরায় আমাকে আমাদের জীবনযাত্রা
সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে আমি তাকে জানালাম যে, আমরা খুবই
দুঃখ-কষ্ট ও অভাবে আছি।’ ইসমাইল বললেন, ‘তিনি
তোমাকে কোন কিছু অসিয়ত করে গেছেন কি?’ স্ত্রী জানালেন, ‘হ্যাঁ, তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়ে গেছেন, আপনাকে তার সালাম পৌঁছাতে এবং আরও বলেছেন, আপনি
যেন আপনার দরজার চৌকাঠ বদলে ফেলেন।’ ইসমাইল বললেন, ‘তিনি ছিলেন আমার পিতা এবং তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়ে গেছেন, যেন তোমাকে আমি তালাক দিয়ে দিই। কাজেই তুমি তোমার বাপের বাড়ি চলে
যাও।’
সুতরাং
ইসমাইল তাঁকে তালাক দিয়ে দিলেন এবং ‘জুরহুম’ গোত্রের
অন্য একটি মেয়েকে বিবাহ করলেন। অতঃপর যতদিন আল্লাহ চাইলেন ইব্রাহীম ততদিন এঁদের
থেকে দূরে থাকলেন। পরে আবার দেখতে এলেন। কিন্তু ইসমাইল সেদিনও বাড়িতে ছিলেন না।
তিনি পুত্রবধূর ঘরে প্রবেশ করলেন এবং ইসমাইল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। স্ত্রী
জানালেন তিনি আমাদের খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে গেছেন। ইব্রাহীম জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমরা কেমন আছ?’ তিনি তাঁর নিকট তাঁদের
জীবনযাত্রা ও সাংসারিক অবস্থা সম্পর্কেও জানতে চাইলেন? পুত্রবধূ
উত্তরে বললেন, ‘আমরা ভাল অবস্থায় এবং সচ্ছলতার মধ্যে আছি।’ এ বলে তিনি আল্লাহর প্রশংসাও করলেন। ইব্রাহীম তাঁকে জিজ্ঞাসা
করলেন, ‘তোমাদের প্রধান খাদ্য কি?’ পুত্রবধূ
উত্তরে বললেন, ‘গোশত।’ বললেন, ‘তোমাদের পানীয় কি?’ বধূ
বললেন, ‘পানি।’ ইব্রাহীম দো‘আ করলেন, ‘হে আল্লাহ! এদের গোশত ও পানিতে
বরকত দাও।’ নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইরশাদ করেন, ‘‘ঐ সময় তাদের এলাকায় খাদ্যশস্য উৎপন্ন হত না।
যদি হত, তাহলে ইব্রাহীম সে ব্যাপারে তাঁদের জন্য দো‘আ করে যেতেন।’’
বর্ণনাকারী
বলেন, মক্কার বাইরে কোন লোকই শুধু গোশত এবং পানি দ্বারা
জীবন-যাপন করতে পারে না। কেননা, শুধু গোশত ও পানি [সর্বদা] তার
স্বাস্থ্যের অনুকূল হতে পারে না।
আলাপ
শেষে ইব্রাহীম পুত্রবধূকে বললেন, ‘তোমার স্বামীকে আমার সালাম
বলবে এবং তাকে আমার পক্ষ থেকে হুকুম করবে, সে যেন তার দরজার চৌকাঠ বহাল
রাখে।’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ইব্রাহীম এসে
বললেন, ‘ইসমাইল কোথায়?’ পুত্রবধূ বললেন, ‘তিনি শিকার করতে গেছেন।’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘আপনি কি নামবেন না, কিছু পানাহার করবেন
না।’ তিনি বললেন, ‘তোমাদের খাদ্য ও
পানীয় কি?’ বধূ বললেন, ‘আমাদের খাদ্য
গোশত এবং পানীয় পানি।’ তিনি দো‘আ দিয়ে
বললেন, ‘‘হে আল্লাহ! এদের গোশত ও পানিতে বরকত দাও।’’ আবুল কাসেম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘‘ইব্রাহীমের দো‘আর বরকত, [মক্কায়
প্রকাশ পেয়েছে]।’’
ইব্রাহীম
বললেন, ‘তোমার স্বামী এলে তাকে সালাম বলে দিয়ো এবং আদেশ করো, সে যেন তার দরজার চৌকাঠ অপরিবর্তিত রাখে।’
অতঃপর
ইসমাইল যখন বাড়ি এসে স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমাদের নিকট কেউ এসেছিলেন কি?’ স্ত্রী বললেন, ‘হ্যাঁ, একজন
সুন্দর আকৃতির বৃদ্ধ এসেছিলেন। [অতঃপর স্ত্রী তাঁর প্রশংসা করলেন ও বললেন,] তারপর তিনি আপনার সম্পর্কে জানতে চাইলেন, আমি
তখন তাঁকে আপনার খবর বললাম। অতঃপর তিনি আমাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানতে চাইলেন।
আমি তাঁকে খবর দিলাম যে, আমরা ভালই আছি।’ স্বামী
বললেন, ‘আর তিনি তোমাকে কোন অসিয়ত করেছেন কি?’
স্ত্রী বললেন, ‘তিনি আপনাকে সালাম বলেছেন এবং আপনার
দরজার চৌকাঠ অপরিবর্তিত রাখার নির্দেশ দিয়ে গেছেন।’ ইসমাইল
তাঁর স্ত্রীকে বললেন, ‘তিনি আমার আব্বা, আর
তুমি হলে চৌকাঠ। তিনি নির্দেশ দিয়ে গেছেন, আমি যেন তোমাকে
স্ত্রী হিসাবে বহাল রাখি।’
অতঃপর ইব্রাহীম আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী কিছুদিন তাঁদের থেকে
দূরে থাকলেন। পরে আবারো তাঁদের নিকট এলেন। ইসমাইল তখন যমযমের নিকটস্থ একটি বড়
গাছের নীচে বসে নিজের তীর ছুলছিলেন। পিতাকে আসতে দেখে দাঁড়িয়ে তাঁর দিকে এগিয়ে
গেলেন। অতঃপর উভয়ে পিতা-পুত্রের সাক্ষাৎ-কালীন যথাযথ আচরণ প্রদর্শন করলেন। তারপর
ইব্রাহীম বললেন, ‘হে
ইসমাইল! আল্লাহ আমাকে একটি কাজের হুকুম দিয়েছেন।’ ইসমাইল
বললেন, ‘আপনার প্রতিপালক যা আদেশ দিয়েছেন, তা
সম্পাদন করে ফেলুন।’ ইব্রাহীম বললেন, ‘তুমি
আমার সহযোগিতা করবে কি?’ ইসমাইল বললেন, ‘[হ্যাঁ, অবশ্যই] আমি আপনার সহযোগিতা করব।’ ইব্রাহীম
পার্শ্ববর্তী জমিনের তুলনায় উঁচু একটি টিলার দিকে ইঙ্গিত করে বললেন,
‘এখানে একটি ঘর বানাতে আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন।’
অতঃপর
ইব্রাহীম কা‘বা ঘরের ভিত উঠাতে লেগে গেলেন। পুত্র ইসমাইল
তাঁকে পাথর যোগান দিতে থাকলেন। আর তিনি দেওয়াল গাঁথতে লাগলেন। অতঃপর যখন দেওয়াল
উঁচু হল, তখন ইসমাইল এই পাথর [মাক্বামে ইব্রাহীম] নিয়ে এসে
তাঁর সামনে রাখলেন। তিনি তার উপর খাড়া হয়ে পাথর গাঁথতে লাগলেন। আর ইসমাইল তাঁকে
পাথর তুলে দিতে থাকলেন। সেই সময় উভয়েই এই দো‘আ করতে থাকলেন ‘হে আমাদের মহান প্রতিপালক! আমাদের নিকট থেকে এ কাজটুকু গ্রহণ কর।
নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞাতা।’ (সূরা বাকারাহ ১২৭ আয়াত)
অন্য
এক বর্ণনায় আছে, ইব্রাহীম ইসমাইল ও তাঁর মাকে সঙ্গে নিয়ে বের
হলেন। তাঁদের সঙ্গে ছিল একটি মশক; তাতে পানি ছিল। ইসমাইলের
মা সেই পানি পান করতেন ও তাতেই তাঁর শিশুর জন্য দুধ জমে উঠত। পরিশেষে মক্কায় পৌঁছে
ইব্রাহীম তাঁদেরকে বড় গাছের নিচে রেখে নিজ [অন্যান্য] পরিজনের নিকট ফিরে যেতে
লাগলেন। ইসমাঈলের মা তাঁর পিছন ধরলেন। অতঃপর যখন তাঁরা কাদা’ নামক
স্থানে উপস্থিত হলেন, তখন তিনি তাঁর পিছন থেকে ডাক দিলেন, ‘হে ইব্রাহীম! আপনি আমাদেরকে কার ভরসায় ছেড়ে যাচ্ছেন?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর ভরসায়।’ [হাজেরা] বললেন, ‘আল্লাহকে নিয়ে আমি
সন্তুষ্ট।’ তারপর তিনি ফিরে এলেন। তিনি সেই পানি পান করতে
লাগলেন ও তাতেই তাঁর শিশুর জন্য দুধ জমে উঠতে লাগল। অবশেষে যখন পানি শেষ হয়ে গেল, তখন তিনি [মনে মনে] বললেন, ‘অন্যত্র গিয়ে
দেখি, যদি কারো সন্ধান পাই।’
বর্ণনাকারী
বলেন, ‘‘সুতরাং তিনি গিয়ে স্বাফা পর্বতে ছড়লেন। অতঃপর তিনি চারিদিকে নজর ফিরিয়ে
দেখতে লাগলেন,
কেউ কোথাও আছে কি না? কিন্তু কেউ কোথাও আছে বলে তিনি অনুভব করলেন না। অতএব [স্বাফা
থেকে নেমে অন্যত্র হাঁটতে লাগলেন এবং] যখন উপত্যকায় এসে পৌঁছলেন, তখন
ছুটতে লাগলেন। অতঃপর মারওয়াতে এসে পৌঁছলেন। এইভাবে তিনি কয়েক চক্র করলেন। তারপর
[মনে মনে] বললেন, ‘গিয়ে দেখি আবার ছেলে কি করছে?’ সুতরাং তিনি গিয়ে দেখলেন, সে পূর্বের
অবস্থায় আছে। সে যেন মৃত্যুযন্ত্রণায় ছট্ফট্ করছে। তা দেখে তিনি অস্থির হয়ে উঠলেন।
তিনি [মনে মনে] বললেন, ‘গিয়ে দেখি, যদি
কারো সন্ধান পাই।’ সুতরাং তিনি গিয়ে স্বাফা পর্বতে ছড়লেন। অতঃপর তিনি চারিদিকে নজর ফিরিয়ে
দেখতে লাগলেন,
কেউ কোথাও আছে কি না? কিন্তু কেউ কোথাও আছে বলে তিনি অনুভব করলেন না। এইভাবে তিনি
সাতবার [আসা-যাওয়া] পূর্ণ করলেন। তারপর [মনে মনে] বললেন, ‘গিয়ে
দেখি আবার ছেলে কি করছে?’ এমন সময় এক [গায়বী] আওয়াজ শুনলেন।
তিনি বললেন, ‘আপনার নিকট যদি কোন মঙ্গল থাকে, তাহলে
আমাদেরকে সাহায্য করুন।’ দেখলেন, তিনি
জিব্রীল। তিনি তাঁর পায়ের গোড়ালি দ্বারা
এইভাবে আঘাত করলেন। আর অমনি পানির ঝর্ণাধারা বের হয়ে এলো। তা দেখে ইসমাঈলের মা বিস্ময়াবিষ্ট
হলেন এবং অঞ্জলি ভরে মশকে ভরতে লাগলেন----।’’ অতঃপর বর্ণনাকারী বাকী দীর্ঘ হাদিস বর্ণনা করলেন। [এ সকল বর্ণনাগুলি
বুখারীর][60]
61/1877 وَعَنْ سَعِيدِ بنِ زَيدٍ رضي الله عنه قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ : «اَلكَمْأَةُ مِنَ المَنِّ، وَمَاؤُهَا شِفَاءٌ لِلْعَيْنِ». متفق عَلَيْهِ
৬১/১৮৭৭। সাঈদ ইবনে যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে
বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে
শুনেছি, ‘‘ছত্রাক ‘মান্ন্’-এর অন্তর্ভুক্ত আর এর রস চক্ষুরোগ নিরাময়-কারী।’’ (বুখারী-মুসলিম)
[61]
*
[[প্রকাশ থাকে যে, বানী ইসরাইলের উপর ‘মান্ন্’ নামক খাদ্য [মধুর ন্যায় মিষ্ট বরফ বা পানি] আল্লাহর তরফ থেকে
অবতীর্ণ করা হত। যেহেতু তারা তা বিনা কষ্টে ও পরিশ্রমে লাভ করত সেহেতু ছত্রাককে
তারই শ্রেণীভুক্ত বলা হয়েছে। কেননা, এটি বিনা কষ্টে ও বিনা
যত্নে পাওয়া যায়।]]
[2] সহীহুল বুখারী ৩৪৫০-৩৪৫২, ২০৭৭, ২৩৯১, ৩৪৭৯, ৬৪৮০, ৭১৩০, মুসলিম ২৫৬০, ২৯৩৪, ২৯৩৫, নাসায়ী ২০৮০, ইবনু
মাজাহ ২৪২০, আহমাদ ২২৭৪২, ২২৮৪৩, ২২৮৭৫, ২২৯৫৩, দারেমী
২৫৪৬
[3] মুসলিম ২৯৪০, আহমাদ ৬৫১৯
[4] সহীহুল বুখারী ১৮৮১, ৭১২৪, ৭১৩৪, ৭৪৭৩, মুসলিম
২৯৪৩, তি২২৪২, আহমাদ ১১৮৩৫, ১২৫৭৪, ১২৬৭৬, ১২৭৩২, ১২৯৮০, ১৩০৮৩, ১৩৫৩৫
[5] মুসলিম ২৯৪৪, আহমাদ ১২৯৩১
[10] সহীহুল বুখারী ৭১৩১, ৭৪০৮, মুসলিম ২৯৩০, তিরমিযী ২২৪০, আবূ
দাউদ ৪৩১৬, আহমাদ ১১৫৯৩, ১১৭৩৫, ১২৩৫৯, ১২৬৬৮, ১২৭৩৭, ১২৭৯৪, ১২৯৭২, ১২৯৮১, ১৩০২৬, ১৩১৮৭, ১৩২০৯, ১৩৫১৩, ১৩৬৮০
[11] সহীহুল বুখারী ৩৩৩৮, মুসলিম ২৯৩৬
[12] সহীহুল বুখারী ১৩৫৫, ২৬৩৮, ৩০৫৫-৫০৫৭, ৩৩৩৭, ৩৪৪০, ৩৪৪১, ৫৯০২, ৬১৭৩, ৬৬১৮, ৬৯৯৯, ৭০২৬, ৭১২৭, ৭১২৮, ৭৪০৭, মুসলিম ১৬৯, ১৭১, ২৯৩১, আহমাদ ৪৭২৯, ৪৭৮৯, ৪৯৫৭, ৫৫২৮, ৫৯৯৭, ৬০৬৪, ৬১৫০, ৬২৭৬, ৬৩২৪, ৬৩২৭, ৬৩৮৯
[14] সহীহুল বুখারী ৮৫, ১০৩৬, ১৪১২, ৩৬০৯, ৪৬৩৫-৪৬৩৬, ৬০৩৭, ৬৫০৬, ৬০৩৬, ৬৯৩৬, ৭০৬১, ৭১২১, মুসলিম ১৫৭, আবূ দাউদ ৪২৫৫, ইবনু
মাজাহ ৪০৪৭, ৪০৫২, আহমাদ ৭১৪৬, ৭৪৯৬, ৭৮১২, ৮৬১৫, ৯১২৯, ৯২৪৩, ৯৫৮৩, ৯৮৭১, ১০০২, ১০৩৪৬, ১০৪০৯, ১০৪৮২, ১০৫৪৩, ১০৫৭২, ১০৬০১
[15] সহীহুল বুখারী ৭১১৯, মুসলিম ২৮৯৪, তিরমিযী ২৫৬৯, আবূ দাউদ ৪৩১৩,
আহমাদ ৭৫০১, ৮০০১, ৮১৮৮, ৮৩৫৪, ৯১০৩
[18] সহীহুল বুখারী ১৪১৪, মুসলিম ১০১২
[20] সহীহুল বুখারী ৩৪২৭, ৬৪৮৩, ৬৭৫৯, মুসলিম ১৭২০, ২২৮৪, ৫৪০২, ৫৪০৩, ৫৪০৪, আহমাদ ৮০৮১, ৮২৭৫, ১০৫৮০, ২৭৭৩৮, ২৭৩৩২
[22] সহীহুল বুখারী ৩৯৯২, ৩৯৯৪
[24] সহীহুল বুখারী ৪৪৯, ৯১৮, ২০৯৫, ৩৫৮৪, ৩৫৮৫, ইবনু মাজাহ ১৪১৭, আহমাদ ১৩৭০৫, ১৩৭২৯, ১৩৭৯৪, ১৩৮৭০, ১৪০৫৯, দারেমী ৩৩, ১৫৬২
[25] আমি [আলবানী) বলছিঃ
হাদীসটির সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে। আমি আমার ‘‘গায়াতুল মারাম
ফী তাখরীজে আহাদীসিল হালাল অল হারাম-লিল উসতায শাইখ ইউসুফ কারযাবী’’
গ্রন্থে [নং ৪) এ মর্মে ব্যাখ্যা প্রদান করেছি [এটি আলমাকতাবুল ইসলামী
কর্তৃক ছাপানো)। এ ছাড়া সা‘লাবা আলখুশানীর নাম নিয়ে বহু আজব
ধরনের মতভেদ সংঘটিত হয়েছে। হাফিয ইবনু হাজার হাফেয এবং জ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও
অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মত প্রকাশ করতে সক্ষম হননি। বরং তিনি তার বিষয়টি আল্লাহর উপরেই
ছেড়ে দিয়েছেন। এ কারণে লেখকের ব্যাপারে আশ্চর্য হতে হয় তিনি কিভাবে দৃঢ়তার সাথে
তার নাম উল্লেখ করলেন তার ব্যাপারে মতভেদের বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত না করেই।
আবূ মুসহের দেমাস্কি, আবূ নু‘য়াঈম
ও ইবনু রাজাব বলেনঃ আবূ সা‘লাবা হতে মাকহূলের শ্রবণ সাব্যস্ত
হয়নি। হাফিয ইবনু হাজার ও হাফিয যাহাবীও বলেছেনঃ সনদটি বিচ্ছিন্ন। [দেখুন ‘‘ফাতাওয়াস শাইখ মুহাম্মাদ সালেহ্ আলমুনজিদ’’ [পৃ
৩)]।
[26] সহীহুল বুখারী ৫৪৯৫, মুসলিম
১৯৫২, তিরমিযী ১৮২১, ১৮২২, নাসায়ী ৪৩৫৬, ৪৩৫৭, আবূ
দাউদ ৩৮১২, আহমাদ ১৮৬৩৩, ১৮৬৬৯, ১৮৯০৮, দারেমী ২০১০
[28] সহীহুল বুখারী ২৩৫৮, ২৩৬৯, ২৬৭২, ৭২১২, ৭৪৪৬, মুসলিম ১০৮, তিরমিযী ১৫৯০, নাসায়ী
৪৪০২, আবূ দাউদ ৩৪৭৪, ইবনু মাজাহ ২২০৭, ২৮৭০, আহমাদ ৭৩৯৩, ৯৮৬৬
[29] সহীহুল বুখারী ৫৮১৪, ৪৯৩৫, মুসলিম ২৯৫৫, নাসায়ী ২০৭৭, আবূ
দাউদ ৪৭৪৩, ইবনু মাজাহ ৪২৬৬, আহমাদ
৮০৮৪, ৯২৪৪, ১০০৯৯, ২৭৩৯৭, দারেমী ৫৬৫
[34] মুসলিম ৬৭১
[36] মুসলিম ২৩৪৬, আহমাদ ২০২৫০
[37] সহীহুল বুখারী ৩৪৮৩, ৩৪৮৪, ৬১২০, আবূ দাউদ ৪৭৯৭, ইবনু
মাজাহ ৪১৮৩, আহমাদ ১৬৬৪১, ১৬৬৫৮, ২১৪০, মুওয়াত্তা মালিক ৩৭৭
[38] সহীহুল বুখারী ৬৫৩৩, ৬৮৬৪, মুসলিম ১৬৭৮, তিরমিযী ১৩৯৬, ১৩৯৭, নাসায়ী ২৯৯১, ৩৯৯২, ৩৯৯৩, ৩৯৯৪, ইবনু মাজাহ ২৬১৫, ইবনু
মাজাহ ২৬২৭, আহমাদ ৩৬৬৫, ৪১৮৮, ৪২০১
[41] সহীহুল বুখারী ৭৫০৪, মুসলিম
১৫৭, ২৬৮৪, ২৬৮৫, তিরমিযী
১০৬৭, নাসায়ী ১৮৩৪, ১৮৩৫,
১৮৩৮, ইবনু মাজাহ ৪২৬৪, আহমাদ
৮৩৫১, ৯১৫৭, ২৩৬০৫২, ২৩৭৬৩, ২৫২০০, ২৫৩০৩, ২৫৪৫৮, ২৭২৩০, মুওয়াত্তা মালিক ৫৬৭,
১৫৬৯
[42] সহীহুল বুখারী ২০৩৫, ২০৩৮, ২০৩৯, ৩১০১, ৩২৮১, ৬২১৯, ৭১৭১, মুসলিম
২১৭৫, আবূ দাউদ ২৪৭০, ৪৯৯৪, ইবনু মাজাহ ১৭৭৯, আহমাদ ২৬৩২২, দারেমী ১৭৮০
[43] মুসলিম ১৭৭৫, আহমাদ ১৭৭৮
[47] মুসলিম ২৭৮৯, আহমাদ ৮১৪১
[48] সহীহুল বুখারী ৪২৬৫, ৪২৬৬
[50] সহীহুল বুখারী ৩২৬৩, ৫৭২৫, মুসলিম ২২১০, তিরমিযী ২০৭৪, ইবনু
মাজাহ ৩৪৭১, আহমাদ ২৩৭০৮, ২৪০৭৭, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৬১
[52] সহীহুল বুখারী ৬০৭৫, ৩৫০৫
[54] মুসলিম ২৮৯২, আহমাদ ২২৩৮১
[55] সহীহুল বুখারী ৬৬৯৬, ৬৭০০ তিরমিযী
১৫২৬, নাসায়ী ৩৮০৬, ৩৮০৭,
৩৮০৮, আবূ দাউদ ৩২৮৯, আবূ দাউদ
২১২৬, আহমাদ ২৩৫৫৫, ২৩৬২১, ২৫২১০, ২৫৩৪৯, মুওয়াত্তা
মালিক ১০৩১, দারেমী ২৩৩৮
[56] সহীহুল
বুখারী ৩৩০৭, ৩৩৫৯, মুসলিম ২২৩৭, নাসায়ী ২৮৮৫, ইবনু মাজাহ ৩২২৮, আহমাদ ২৬৮১৯, ২৭০৭২, দারেমী
২০০০
_________________________________________________________________________________
সংকলন : ইমাম মুহিউদ্দীন আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবন শরফ আন-নাওয়াবী রহ.
হাদীসের শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণয় : শাইখ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহ.
অনুবাদক : বিশিষ্ট আলেমবর্গ
অনুবাদ সম্পাদনা : আব্দুল হামীদ ফাইযী
0 মন্তব্যসমূহ