মহান আল্লাহ বলেছেন,
﴿ أَلَآ إِنَّ أَوۡلِيَآءَ
ٱللَّهِ لَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ ٦٢ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَكَانُواْ
يَتَّقُونَ ٦٣ لَهُمُ ٱلۡبُشۡرَىٰ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِۚ لَا
تَبۡدِيلَ لِكَلِمَٰتِ ٱللَّهِۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ٦٤ ﴾ (يونس : ٦٢، ٦٤)
“মনে রেখো যে, আল্লাহর বন্ধুদের না কোন আশংকা
আছে আর না তারা বিষণ্ণ হবে। তারা হচ্ছে সেই লোক যারা ঈমান এনে তাক্বওয়া অবলম্বন
করে থাকে। তাদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে পার্থিব জীবনে এবং পরকালেও; আল্লাহর
বাণীসমূহের কোন পরিবর্তন নেই; এটাই হচ্ছে বিরাট সফলতা।” (সূরা ইউনুস ৬২-৬৪ আয়াত)
আরও
বলেন,﴿ وَهُزِّيٓ إِلَيۡكِ
بِجِذۡعِ ٱلنَّخۡلَةِ تُسَٰقِطۡ عَلَيۡكِ رُطَبٗا جَنِيّٗا ٢٥ فَكُلِي وَٱشۡرَبِي﴾ (مريم: ٢٥، ٢٦)
“তুমি তোমার দিকে খেজুর গাছের কাণ্ড হিলিয়ে দাও; ওটা
তোমার সামনে সদ্যপক্ব তাজা খেজুর ফেলতে থাকবে। সুতরাং আহার কর, পান
কর---।” (সূরা মারয়্যাম ২৫-২৬
আয়াত)
তিনি
আরও বলেছেন,
﴿ كُلَّمَا دَخَلَ
عَلَيۡهَا زَكَرِيَّا ٱلۡمِحۡرَابَ وَجَدَ عِندَهَا رِزۡقٗاۖ قَالَ يَٰمَرۡيَمُ أَنَّىٰ
لَكِ هَٰذَاۖ قَالَتۡ هُوَ مِنۡ عِندِ ٱللَّهِۖ إِنَّ ٱللَّهَ يَرۡزُقُ مَن يَشَآءُ
بِغَيۡرِ حِسَابٍ ٣٧ ﴾ (ال عمران: ٣٧)
“যখনই যাকারিয়া
মিহরাবে (কক্ষে) তার সঙ্গে দেখা করতে যেত, তখনই তার নিকট
খাদ্য-সামগ্রী দেখতে পেত। সে বলত, ‘হে মারয়্যাম! এসব তুমি
কোথা থেকে পেলে?’ সে বলত, ‘তা আল্লাহর
কাছ থেকে। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পর্যাপ্ত জীবিকা দান করে থাকেন।” (সূরা আলে
ইমরান ৩৭ আয়াত)
তিনি
অন্য জায়গায় বলেছেন,
﴿ وَإِذِ ٱعۡتَزَلۡتُمُوهُمۡ
وَمَا يَعۡبُدُونَ إِلَّا ٱللَّهَ فَأۡوُۥٓاْ إِلَى ٱلۡكَهۡفِ يَنشُرۡ لَكُمۡ رَبُّكُم
مِّن رَّحۡمَتِهِۦ وَيُهَيِّئۡ لَكُم مِّنۡ أَمۡرِكُم مِّرۡفَقٗا ١٦ ۞وَتَرَى ٱلشَّمۡسَ
إِذَا طَلَعَت تَّزَٰوَرُ عَن كَهۡفِهِمۡ ذَاتَ ٱلۡيَمِينِ وَإِذَا غَرَبَت تَّقۡرِضُهُمۡ
ذَاتَ ٱلشِّمَالِ ١٧ ﴾ (الكهف: ١٦، ١٧)
“তোমরা যখন তাদের ও তারা আল্লাহর
পরিবর্তে যাদের উপাসনা করে তাদের সংস্পর্শ হতে বিচ্ছিন্ন হলে তখন তোমরা গুহায়
আশ্রয় গ্রহণ কর; তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য তাঁর দয়া
বিস্তার করবেন এবং তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজকর্মকে ফলপ্রসূ করবার ব্যবস্থা
করবেন। তুমি দেখলে দেখতে, সূর্য উদয়কালে তাদের গুহার ডান
দিকে হেলে অতিক্রম করছে এবং অস্তকালে তাদেরকে অতিক্রম করছে বাম পাশ দিয়ে---।” (সূরা কাহাফ ১৬-১৭ আয়াত)
1/1511 وَعَنْ أَبي مُحَمَّدٍ عَبدِ الرَّحْمَانِ
بنِ أَبي بَكرٍ الصِّدِّيقِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا: أَنَّ أَصْحَابَ الصُّفّةِ
كَانُوا أُنَاساً فُقَرَاءَ وَأَنَّ النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَرَّةً: «مَنْ كَانَ عِنْدَهُ طَعَامُ اثْنَيْنِ، فَلْيَذْهَبْ
بثَالِثٍ، وَمنْ كَانَ عِنْدَهُ طَعَامُ أَرْبَعَةٍ، فَلْيَذْهَبْ بِخَامِسٍ
بِسَادِسٍ» أَوْ كَمَا قَالَ، وَأَنَّ أَبَا بَكرٍ رضي الله
عنه، جَاءَ بِثَلاَثَةٍ، وَانْطَلَقَ النَّبِيِّ صلى الله
عليه وسلم بعَشَرَةٍ، وَأَنَّ أَبَا بَكرٍ تَعَشَّى عِنْدَ النَّبِيّ، ثُمَّ
لَبِثَ حَتَّى صَلَّى العِشَاءَ، ثُمَّ رَجَعَ، فَجَاءَ بَعْدَ مَا مَضَى مِنَ
اللَّيْلِ مَا شَاءَ اللهُ . قَالَتِ امْرَأتُهُ: مَا حَبَسَكَ عَنْ أَضْيَافِكَ ؟
قَالَ: أَوَمَا عَشَّيْتِهمْ ؟ قَالَتْ: أَبَوْا حَتَّى تَجِيءَ وَقَدْ عَرَضُوا
عَلَيْهِمْ، قَالَ: فَذَهَبتُ أَنَا فَاخْتَبَأْتُ، فَقالَ: يَا غُنْثَرُ،
فَجَدَّعَ وَسَبَّ، وَقَالَ: كُلُوا لاَ هَنِيئاً وَاللهِ لاَ أَطْعَمُهُ أَبَداً،
قَالَ: وَايْمُ اللهِ مَا كُنَّا نَأخُذُ مِنْ لُقْمَةٍ إِلاَّ رَبَا مِنْ
أَسفَلِهَا أَكْثَرَ مِنهَا حَتَّى شَبِعُوا، وَصَارَتْ أَكْثَرَ مِمَّا كَانَتْ
قَبلَ ذَلِكَ، فَنَظَرَ إِلَيهَا أَبُو بَكْرٍ فَقَالَ لاِمرَأَتِهِ: يَا أُخْتَ
بَنِي فِرَاسٍ مَا هَذَا ؟ قَالَتْ: لاَ وَقُرَّةِ عَينِيْ لَهِيَ الآنَ أَكثَرُ
مِنهَا قَبلَ ذَلِكَ بِثَلاَثِ مَرَّاتٍ ! فَأَكَلَ مِنهَا أَبُو بَكْرٍ وَقَالَ:
إنَّمَا كَانَ ذَلِكَ مِنَ الشَّيطَانِ، يَعنِيْ: يَمِينَهُ . ثُمَّ أَكَلَ مِنهَا
لُقْمَةً، ثُمَّ حَمَلَهَا إِلَى النَّبِيِّ صلى الله
عليه وسلم فَأَصْبَحَتْ عِنْدَهُ. وَكَانَ بَيْنَنَا وَبَيْنَ قَوْمٍ عَهْدٌ،
فَمَضَى الأَجَلُ، فَتَفَرَّقْنَا اثْنَيْ عَشَرَ رَجُلاً، مَعَ كُلِّ رَجُلٍ
مِنْهُمْ أُنَاسٌ، اللهُ أَعْلَمُ كَمْ مَعَ كُلِّ رَجُلٍ فَأَكَلُوا مِنْهَا
أَجْمَعُونَ .
وَفِي رِوَايةٍ: فَحَلَفَ أَبُو بَكْرٍ لاَ
يَطْعَمُهُ، فَحَلَفَتِ المَرْأَةُ لاَ تَطْعَمُهُ، فَحَلَفَ الضَّيْفُ . - أَو
الأَضْيَافُ - أَنْ لاَ يَطْعَمُهُ أَوْ يَطْعَمُوهُ حَتَّى يَطْعَمَهُ . فَقَالَ
أَبُو بَكْرٍ: هَذِهِ مِنَ الشَّيْطَانِ ! فَدَعَا بِالطَّعَامِ فَأكَلَ
وَأَكَلُوا، فَجَعَلُوا لاَ يَرْفَعُونَ لُقْمَةً إِلاَّ رَبَتْ مِنْ أَسْفَلِهَا
أَكْثَرُ مِنْهَا، فَقَالَ: يَا أُخْتَ بَني فِرَاسٍ، مَا هَذَا ؟ فَقَالَتْ:
وَقُرَّةِ عَيْنِي إنَّهَا الآنَ لأَكْثَرُ مِنْهَا قَبْلَ أنْ نَأكُلَ،
فَأكَلُوا، وَبَعَثَ بِهَا إِلَى النَّبيِّ، فَذَكَرَ أنَّهُ أكَلَ مِنْهَا .
وَفِي رِوايَةٍ: إِنَّ أَبَا بَكْرٍ قَالَ لِعَبْدِ الرَّحْمَانِ:
دُونَكَ أَضْيَافَكَ، فَإِنِّي مُنْطَلِقٌ إِلَى النَّبيِّ، فَافْرُغْ مِنْ
قِرَاهُم قَبْلَ أَنْ أَجِيءَ، فَانْطَلَقَ عَبْدُ الرَّحْمانِ، فَأَتَاهُمْ بِمَا
عِنْدَهُ، فَقَالَ: اِطْعَمُوا ؛ فَقَالُوا: أَينَ رَبُّ مَنْزِلِنا ؟ قَالَ: اِطْعَمُوا،
قَالُوا: مَا نحنُ بِآكِلِينَ حَتَّى يَجِيءَ رَبُّ مَنْزِلِنَا، قَالَ: اقْبَلُوا
عَنَّا قِرَاكُمْ، فَإِنَّهُ إِنْ جَاءَ وَلَمْ تَطْعَمُوا، لَنَلْقَيَنَّ مِنْهُ
فَأبَوْا، فَعَرَفْتُ أَنَّهُ يَجِدُ عَلَيَّ، فَلَمَّا جَاءَ تَنَحَّيْتُ عَنْهُ،
فَقَالَ: مَا صَنَعْتُمْ ؟ فَأَخْبَرُوهُ، فَقَالَ: يَا عَبْدَ الرَّحمانِ،
فَسَكَتُّ: ثُمَّ قَالَ: يَا عَبْدَ الرَّحْمانِ، فَسَكَتُّ، فَقَالَ: يَا
غُنْثَرُ أَقْسَمْتُ عَلَيْكَ إِنْ كُنْتَ تَسْمَعُ صَوتِي لَمَا جِئْتَ !
فَخَرَجْتُ، فَقُلْتُ: سَلْ أَضْيَافَكَ، فَقَالُوا: صَدَقَ، أَتَانَا بِهِ،
فَقَالَ: إِنَّمَا انْتَظَرْتُمُونِي وَاللهِ لاَ أَطْعَمُهُ اللَّيْلَةَ .
فَقَالَ الآخَرُونَ: وَاللهِ لاَ نَطْعَمُهُ حَتَّى تَطْعَمَهُ فَقَالَ:
وَيْلَكُمْ مَا لَكُمْ لاَ تَقْبَلُونَ عَنَّا قِرَاكُمْ ؟ هَاتِ طَعَامَكَ،
فَجَاءَ بِهِ، فَوَضَعَ يَدَهُ فَقَالَ: بِسْمِ اللهِ، الأُولَى مِنَ
الشَّيْطَانِ، فَأَكَلَ وَأَكَلُوا. متفق عَلَيْهِ
১/১৫১১।
আবূ মুহাম্মদ আব্দুর রহমান ইবনে আবূ বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু
হতে বর্ণিত, ‘আসহাবে সুফ্ফাহ’ (তৎকালীন
মসজিদে নববীতে একটি ছাউনিবিশিষ্ট ঘর ছিল। সেখানে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর তত্ত্বাবধানে কিছু সাহাবী আশ্রয় গ্রহণ করতেন ও বসবাস করতেন। তাঁরা)
গরীব মানুষ ছিলেন। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, “যার কাছে দু’জনের আহার আছে সে
যেন (তাদের মধ্য থেকে) তৃতীয় জনকে সাথে নিয়ে যায়। আর যার নিকট চারজনের আহারের
অবস্থা আছে, সে যেন পঞ্চম অথবা ষষ্ঠ জনকে সাথে নিয়ে যায়।” আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তিনজনকে সঙ্গে নিয়ে এলে এবং
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম
দশজনকে সাথে নিয়ে গেলেন। আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু
আনহু রাসূলুল্লাহর ঘরেই
রাতের আহার করেন এবং এশার নামায পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। এশার নামাযের পর
তিনি পুনরায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর
ঘরে ফিরে আসেন এবং আল্লাহর ইচ্ছামত রাতের কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি বাড়ি
ফিরলে তাঁর স্ত্রী তাঁকে বললেন, ‘বাইরে কিসে আপনাকে আটকে
রেখেছিল?’ তিনি বললেন, ‘তুমি এখনো
তাঁদেরকে খাবার দাওনি?’ স্ত্রী বললেন, ‘আপনি
না আসা পর্যন্ত তাঁরা খেতে রাজি হলেন না। তাঁদের সামনে খাবার দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা তা খাননি।’ আব্দুর রহমান
রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, (পিতার তিরস্কারের ভয়ে) আমি লুকিয়ে
গেলাম। তিনি (রাগান্বিত হয়ে) বলে উঠলেন, ‘ওরে মূর্খ!’ অতঃপর নাক কাটা ইত্যাদি বলে গালাগালি করলেন এবং (মেহমানদের
উদ্দেশ্যে) বললেন, ‘আপনারা স্বচ্ছন্দে খান, আল্লাহর
কসম! আমি মোটেই খাব না।’
আব্দুর
রহমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আল্লাহর কসম! আমরা
লুকমা (খাদ্য-গ্রাস) উঠিয়ে নিতেই নীচ থেকে তা অধিক পরিমাণে বেড়ে যাচ্ছিল।’ তিনি বলেন, ‘সকলেই পেট ভরে খেলেন। অথচ পূর্বের চেয়ে বেশি খাবার রয়ে গেল।’ আবূ
বকর রাদিয়াল্লাহু
আনহু
খাবারের দিকে তাকিয়ে স্ত্রীকে বললেন, ‘হে বনু ফিরাসের বোন! এ কি?’ তিনি বললেন, ‘আমার
চোখের প্রশান্তির কসম! এ তো পূর্বের চেয়ে তিনগুণ বেশি!’ সুতরাং
আবূ বাক্ রাদিয়াল্লাহু আনহু ও তা থেকে আহার করলেন এবং বললেন, ‘আমার
(খাব না বলে) সে কসম শয়তানের পক্ষ থেকেই হয়েছিল।’ তারপর তিনি
আরও খেলেন এবং অতিরিক্ত খাবার নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
দরবারে নিয়ে গেলেন। ভোর পর্যন্ত সে খাবার তাঁর নিকটেই ছিল।
এদিকে
আমাদের এবং অন্য একটি গোত্রের মাঝে যে চুক্তি ছিল তার সময়সীমা পূর্ণ হয়ে যায়। (এবং
তারা মদিনায় আসে।) অতঃপর আমরা তাদেরকে তাদের বারো জনের নেতৃত্বে ভাগ করে দিই।
প্রত্যেকের সাথেই কিছু কিছু লোক ছিল। তবে প্রত্যেকের সাথে কতজন ছিল তা আল্লাহই
বেশি জানেন। তারা সকলেই সেই খাদ্য আহার করে।
অন্য বর্ণনায় আছে, আবূ বকর ‘খাবেন না’ বলে কসম করলেন, তা
দেখে তাঁর স্ত্রীও ‘খাবেন না’ বলে কসম
করলেন। আর তা দেখে মেহমানরাও তিনি সঙ্গে না খেলে ‘খাবেন না’ বলে কসম করলেন! আবূ বকর বললেন, ‘এ সব (কসম)
শয়তানের পক্ষ থেকে।’ সুতরাং তিনি খাবার আনতে বলে নিজে খেলেন
এবং মেহমানরাও খেলেন। তাঁরা যখনই লুকমা (খাদ্য-গ্রাস) উঠিয়ে খাচ্ছিলেন, তখনই নীচ থেকে তা অধিক পরিমাণে বেড়ে যাচ্ছিল। আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু
(স্ত্রীকে) বললেন, ‘হে বনু ফিরাসের বোন! এ কি?’
স্ত্রী বললেন, ‘আমার চোখের প্রশান্তির কসম! এখন এ তো
খেতে শুরু করার আগের চেয়ে অধিক বেশি!’ সুতরাং সকলেই খেলেন
এবং অতিরিক্ত খাবার নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে পাঠিয়ে দিলেন। আব্দুর রহমান বলেন, ‘তিনি তা হতে খেলেন।’
অন্য
এক বর্ণনায় আছে, আবূ বকর আব্দুর রহমানকে বললেন,
‘তোমার মেহমান নাও। (তুমি তাদের খাতির কর) আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর নিকট যাচ্ছি। আমার ফিরে আসার আগে আগেই তুমি (খাইয়ে) তাঁদের খাতির
সম্পন্ন করো।’ সুতরাং আব্দুর রহমান তাঁর নিকট যে খাবার ছিল, তা নিয়ে তাঁদের নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘আপনারা
খান।’ কিন্তু মেহমানরা বললেন, ‘আমাদের
বাড়ি-ওয়ালা কোথায়?’ তিনি বললেন, ‘আপনারা
খান।’ তাঁরা বললেন, ‘আমাদের বাড়ি-ওয়ালা
না আসা পর্যন্ত আমরা খাব না।’ আব্দুর রহমান বললেন, ‘আপনারা আমাদের তরফ থেকে মেহমান-নেওয়াযী গ্রহণ করুন। কারণ তিনি
এসে যদি দেখেন যে, আপনারা খাননি, তাহলে
অবশ্যই আমরা তাঁর নিকট থেকে (বড় ভৎর্সনা) পাব।’ কিন্তু তাঁরা
(খেতে) অস্বীকার করলেন।
(আব্দুর
রহমান বলেন,) তখন আমি বুঝে নিলাম যে, তিনি
আমার উপর খাপ্পা হবেন। অতঃপর তিনি এলে আমি তাঁর নিকট থেকে সরে গেলাম। তিনি বললেন, ‘ কি করেছ তোমরা?’ তাঁরা তাঁকে ব্যাপারটা
খুলে বললেন। অতঃপর তিনি ডাক দিলেন, ‘আব্দুর রহমান!’ আব্দুর রহমান নিরুত্তর থাকলেন। তিনি আবার ডাক দিলেন, ‘আব্দুর রহমান?’ কিন্তু তখনও তিনি নীরব
থাকলেন। তারপর আবার বললেন, ‘এ বেওকুফ! আমি তোমাকে কসম দিচ্ছি, যদি তুমি আমার ডাক শুনতে পাচ্ছ, তাহলে এসে
যাও।’
(আব্দুর
রহমান বলেন,) তখন আমি (বাধ্য হয়ে) বের হয়ে এলাম। বললাম, ‘আপনি আপনার মেহমানদেরকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন, (আমি
তাঁদেরকে খেতে দিয়েছিলাম কি না?)’ তাঁরা বললেন,
‘ও সত্যই বলেছে। ও আমাদের কাছে খাবার নিয়ে এসেছিল। (আমরাই আপনার অপেক্ষায়
খাইনি।)’ আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘তোমরা
আমার অপেক্ষা করে বসে আছ। কিন্তু আল্লাহর কসম! আজ রাতে আমি আহার করব না।’ তাঁরা বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আপনি না খাওয়া
পর্যন্ত আমরাও খাব না।’ তিনি বললেন, ‘ধিক্কার
তোমাদের প্রতি! তোমাদের কি হয়েছে যে, আমাদের পক্ষ থেকে
মেহমান-নেওয়াযী গ্রহণ করবে না?’ (অতঃপর
আব্দুর রহমানের উদ্দেশ্য বললেন,) ‘নিয়ে এস তোমার খাবার।’ তিনি খাবার নিয়ে এলে আবূ বকর তাতে হাত রেখে বললেন,
‘বিস্মিল্লাহ। প্রথম (রাগের অবস্থায় কসম) ছিল শয়তানের পক্ষ থেকে।’ সুতরাং তিনি খেলেন এবং মেহমানরাও আহার করলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
2/1512 وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «لَقَدْ كَانَ فِيمَا قَبْلَكُمْ مِنَ الأُمَمِ نَاسٌ
مُحَدَّثُوْنَ، فَإنْ يَكُ فِي أُمَّتِي أَحَدٌ فَإِنَّهُ عُمَرُ» . رواه البخاري
ورواه مسلم من رواية عائشة . وفي روايتهما قَالَ ابن وهب: «مُحَدَّثُونَ» أَيْ
مُلْهَمُونَ .
২/১৫১২।
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের
পূর্ববর্তী জাতির মধ্যে অনেক ‘মুহাদ্দাস’ লোক ছিল। যদি আমার উম্মতের মধ্যে
কেউ ‘মুহাদ্দাস’ থাকে, তাহলে
সে হল উমার।” (বুখারী) [2]
ইমাম
মুসলিমও আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেছেন। উক্ত দুই গ্রন্থের বর্ণনায়
আছে, ইবনে অহাব বলেন, ‘মুহাদ্দাস’ হলেন তাঁরা, যাঁদের মনে (আল্লাহর পক্ষ
থেকে) ইলহাম (ভালো-মন্দের জ্ঞান প্রক্ষেপ) করা হয়।
3/1513 وَعَنْ جَابِرِ بنِ سَمُرَةَ رَضِيَ اللهُ
عَنْهُمَا، قَالَ: شَكَا أَهْلُ الكُوفَةِ سَعْداً يَعنِي: ابنَ أَبي وَقَّاصٍ رضي
الله عنه، إِلَى عُمَرَ بنِ الخَطَّابِ رضي
الله عنه فَعَزَلَهُ، وَاسْتَعْمَلَ عَلَيْهِمْ عَمَّاراً، فَشَكَوا حَتَّى
ذَكَرُوا أَنَّهُ لاَ يُحْسِنُ يُصَلِّي، فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ، فَقَالَ: يَا أَبَا
إسْحَاقَ، إنَّ هَؤُلاَءِ يَزْعُمُونَ أَنَّكَ لاَ تُحْسِنُ تُصَلِّي، فَقَالَ:
أَمَّا أَنَا وَاللهِ فَإنِّي كُنْتُ أُصَلِّي بِهِمْ صَلاَةَ رَسُولِ اللهِ صلى
الله عليه وسلم، لاَ أَخْرِمُ عَنْها، أُصَلِّي صَلاَتَي العِشَاءِ فَأَرْكُدُ فِي
الأُولَيَيْنِ، وَأُخِفُّ فِي الأُخْرَيَيْنِ . قَالَ: ذَلِكَ الظَّنُّ بِكَ يَا
أَبَا إِسْحَاقَ، وَأَرْسَلَ مَعَهُ رَجُلاً - أَوْ رِجَالاً - إِلَى الكُوفَةِ
يَسْأَلُ عَنْهُ أَهْلَ الكُوفَةِ، فَلَمْ يَدَعْ مَسْجِداً إِلاَّ سَأَلَ عَنْهُ،
وَيُثْنُونَ مَعْرُوفاً، حَتَّى دَخَلَ مَسْجِداً لِبَنِي عَبْسٍ، فَقَامَ رَجُلٌ
مِنْهُمْ، يُقَالُ لَهُ أُسَامَةُ بْنُ قَتَادَةَ، يُكَنَّى أَبَا سَعْدَةَ،
فَقَالَ: أَمَا إِذْ نَشَدْتَنَا فَإِنَّ سَعْداً كَانَ لاَ يَسِيرُ
بِالسَّرِيَّةِ وَلاَ يَقْسِمُ بِالسَّوِيَّةِ، وَلاَ يَعْدِلُ فِي القَضِيَّةِ .
قَالَ سَعْدٌ: أَمَا وَاللهِ لأَدْعُوَنَّ بِثَلاَثٍ: اَللهم إِنْ كَانَ عَبْدُكَ هَذَا كَاذِباً،
قَامَ رِيَاءً، وَسُمْعَةً، فَأَطِلْ عُمُرَهُ، وَأَطِلْ فَقْرَهُ، وَعَرِّضْهُ
لِلْفِتَنِ . وَكَانَ بَعْدَ ذَلِكَ إِذَا سُئِلَ يَقُوْلُ: شَيْخٌ كَبيرٌ
مَفْتُونٌ، أَصَابَتْنِي دَعْوَةُ سَعدٍ رضي الله عنه . قَالَ عَبدُ المَلِكِ بنُ عُمَيْرٍ الرَّاوِي
عَن جَابِرِ بنِ سَمُرَةَ: فَأَنَا رَأَيْتُهُ بَعْدُ قَدْ سَقَطَ حَاجِبَاهُ
عَلَى عَيْنَيْهِ مِنَ الكِبَرِ، وَإِنَّهُ لَيَتَعَرَّضُ لِلْجَوارِي فِي
الطُّرُقِ فَيَغْمِزُهُنَّ . متفق عَلَيْهِ
৩/১৫১৩। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, কুফাবাসীরা উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে সায়াদ ইবনে আবী
ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর
বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলল, ‘সে ভালভাবে নামায পড়তে জানে না।’ কাজেই তিনি তাঁকে ডেকে পাঠালেন এবং (যখন তিনি উমার রাদিয়াল্লাহু
আনহু-এর কাছে হাযির হলেন, তখন) তিনি তাঁকে বললেন, ‘হে ইসহাকের পিতা! ওরা বলছে যে, তুমি
উত্তম-ভাবে নামায আদায় কর না।’ জবাবে তিনি বললেন, ‘যাই হোক, আল্লাহর কসম! আমি তো রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামাযের মত নামায পড়াই, তা
থেকে (একটুও) কম করি না। যোহর ও আসরের দুই নামাযের প্রথম দু’ রাকআতে
দীর্ঘক্ষণ কিয়াম করি এবং দ্বিতীয় দু-রাকআতকে সংক্ষিপ্ত করি।’ উমার
রাদিয়াল্লাহু আনহু (এ কথা
শুনে বললেন,) ‘ইসহাকের পিতা! তোমার সম্পর্কে ঐ ধারণাই ছিল।’ পরে তিনি তাঁর সঙ্গে একজন বা কয়েকজন লোক কূফা নগরীতে প্রেরণ
করলেন। যাতে করে কূফা নগরীর প্রতিটি মসজিদে গিয়ে সায়াদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে
পারে। সুতরাং প্রত্যেক মসজিদেই তাঁর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে লাগল এবং সকলেই তাঁর
প্রশংসা করল। শেষ পর্যন্ত যখন তারা বনু আব্সার মসজিদে উপনীত হল। তখন সেখানে আবূ সা’দাহ উসামাহ ইবনে ক্বাতাদাহ নামক এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে বলতে লাগল, ‘যখন আপনারা আমাদেরকে জিজ্ঞাসাই করলেন, তখন
(প্রকাশ করে দিচ্ছি শুনুন,) সায়াদ সেনা বাহিনীর সঙ্গে
(জিহাদে) যান না, নায্যভাবে (কোন জিনিস) বণ্টন করেন না এবং
ইনসাফের সাথে বিচার করেন না।’ সায়াদ তখন (জবাবে) বলে উঠলেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই তিনটি বদ্দুআ করব: হে আল্লাহ! যদি
তোমার বান্দা মিথ্যাবাদী হয়, রিয়া (লোক প্রদর্শন হেতু) ও
খ্যাতির জন্য এভাবে দণ্ডায়মান হয়ে থাকে, তাহলে তুমি ওর আয়ু
দীর্ঘ করে দাও এবং ওর দরিদ্রতা বাড়িয়ে দাও এবং ওকে ফিতনার কবলে ফেল।’
(বাস্তবিক তার অবস্থা ঐরূপই হয়েছিল।) সুতরাং যখন তাকে (কুশল) জিজ্ঞাসা করা
হত, তখন উত্তরে বলত, ‘অত্যন্ত বৃদ্ধ
হয়ে পড়েছি এবং ফিতনায় পতিত হয়েছি; সা’দের
বদ্দুআ আমাকে লেগে গেছে।’
জাবের ইবনে সামুরাহ থেকে বর্ণনাকারী আব্দুল মালেক ইবন
উমাইর বলেন, ‘আমি পরে তাকে দেখেছি যে, সে
অত্যন্ত বার্ধক্যের কারণে তার চোখের ভ্রূগুলি চোখের উপরে লটকে পড়েছে আর রাস্তায়
রাস্তায় দাসীদেরকে উত্যক্ত করত ও আঙ্গুল বা চোখ দ্বারা তাদেরকে ইশারা করত।’ (বুখারী ও মুসলিম)[3]
4/1514. وَعَنْ عُروَةَ بنِ الزُّبَيرِرَضِيَ
اللهُ عَنْه: أَنَّ سَعِيدَ بنَ زَيدِ بنِ عَمرِو بنِ نُفَيلٍ رَضِيَ اللهُ عَنْه،
خَاصَمَتْهُ أَرْوَى بِنْتُ أَوْسٍ إِلَى مَرْوَانَ بْنِ الحَكَمِ، وَادَّعَتْ
أَنَّهُ أَخَذَ شَيْئاً مِنْ أَرْضِهَا، فَقَالَ سَعِيدٌ: أَنَا كُنْتُ آخُذُ
شَيئاً مِنْ أَرْضِهَا بَعْدَ الَّذِي سَمِعْتُ مِنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه
وسلم !؟ قَالَ: مَاذَا سَمِعْتَ مِنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم ؟ قَالَ:
سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ: «مَنْ أَخَذَ شِبْراً مِنَ الأَرْضِ ظُلْماً، طُوِّقَهُ
إِلَى سَبْعِ أَرْضِينَ»
فَقَالَ لَهُ مَرْوَانُ: لاَ أَسْألُكَ بَيِّنَةً بَعْدَ هَذَا، فَقَالَ
سَعِيدٌ: اَللهم إنْ كَانَتْ كَاذِبَةً،
فَأَعْمِ بَصَرَها، وَاقْتُلْهَا فِي أَرْضِهَا، قَالَ: فَمَا مَاتَتْ حَتَّى
ذَهَبَ بَصَرُهَا، وَبَيْنَمَا هِيَ تَمْشِي فِي أَرْضِهَا إِذْ وَقَعَتْ فِي حُفْرَةٍ
فَماتَتْ . متفق عَلَيْهِ
وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ عَن مُحَمَّدِ بنِ
زَيدِ بنِ عَبدِ اللهِ بنِ عُمَرَ رضي الله عنه بِمَعْنَاهُ، وَأَنَّهُ رَآهَا
عَمْيَاءَ تَلْتَمِسُ الجُدُرَ تَقُوْلُ: أَصَابَتْنِي دَعْوَةُ سَعِيدٍ،
وَأنَّهَا مَرَّتْ عَلَى بِئرٍ فِي الدَّارِ الَّتي خَاصَمَتْهُ فِيهَا،
فَوَقَعَتْ فِيهَا، وكانتْ قَبْرَها .
৪/১৫১৪।
উরওয়াহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, সাঈদ
ইবনে যায়দ ইবনে আমর ইবনে নুফাইল রাদিয়াল্লাহু
আনহু-এর বিরুদ্ধে আরওয়া
বিনতে আওস নামক এক মহিলা মারওয়ান ইবনে হাকামের দরবারে মোকাদ্দামা পেশ করল; সে দাবি জানাল যে, ‘সাঈদ আমার কিছু জমি
আত্মসাৎ করেছেন।’ সাঈদ বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে (এ বিষয়ে ধমক) শোনার
পরও কি আমি তার কিছু জমি দাবিয়ে নিতে পারি?’ মারওয়ান বললেন, ‘আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
কাছে কি (ধমক) শুনেছেন?’ তিনি বললেন, ‘আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, “যে
ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো এক বিঘত জমি দাবিয়ে নেবে, (কিয়ামতের
দিনে) সাত তবক জমিন তার গলায় লটকে দেওয়া হবে।” এ কথা শুনে
মারওয়ান বললেন, ‘এরপর আমি আপনার কাছে কোন প্রমাণ তলব করব না।’ সুতরাং সাঈদ (বাদী পক্ষীয়) মহিলার প্রতি বদ্দুআ করে বললেন, ‘হে আল্লাহ! এ মহিলা যদি মিথ্যাবাদী হয়, তাহলে
ওর চক্ষু অন্ধ করে দাও এবং ওকে ওর জমিতেই মৃত্যু দাও।’
বর্ণনাকারী
বলেন, ‘মহিলাটির মৃত্যুর পূর্বে দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে গিয়েছিল
এবং একবার সে নিজ জমিতে চলছিল। হঠাৎ একটি গর্তে পড়ে মারা গেল।’ (বুখারী ও মুসলিম) [4]
মুহাম্মদ
ইবন যায়দ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন উমার কর্তৃক মুসলিমের অনুরূপ এক বর্ণনায় আছে, তিনি তাকে দেখেছেন, সে অন্ধ অবস্থায় দেওয়াল
হাতড়ে বেড়াত। বলত, ‘আমাকে সাঈদের বদ্দুআ লেগে গেছে।’ আর সে যে জায়গার ব্যাপারে সাঈদের বিরুদ্ধে মিথ্যা নালিশ করেছিল, সেই জায়গার এক কুঁয়াতে পড়ে গিয়ে সেটাই তার কবর হয়ে গেছে!
5/1515 وَعَنْ جَابِرِ بنِ عَبدِ اللهِ رَضِيَ
اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ: لَمَّا حَضَرَتْ أُحُدٌ دعَانِي أَبي مِنَ اللَّيلِ
فَقَالَ: مَا أُرَاني إِلاَّ مَقْتُولاً فِي أَوَّلِ مَنْ يُقْتَلُ مِنْ أَصْحَابِ
النَّبِيِّ، وَإِنِّي لاَ أَتْرُكُ بَعْدِي أَعَزَّ عَلَيَّ مِنْكَ غَيْرَ نَفْسِ
رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، وَإِنَّ عَلَيَّ دَيْناً فَاقْضِ، وَاسْتَوْصِ
بِأَخَوَاتِكَ خَيْراً، فَأَصْبَحْنَا، فَكَانَ أَوَّلَ قَتِيلٍ، وَدَفَنْتُ
مَعَهُ آخَرَ فِي قَبْرِهِ، ثُمَّ لَمْ تَطِبْ نَفْسِي أَنْ أَتْرُكَهُ مَعَ
آخَرَ، فَاسْتَخْرَجْتُهُ بَعْدَ سِتَّةِ أَشْهُرٍ، فَإِذَا هُوَ كَيَوْمِ
وَضَعْتُهُ غَيْرَ أُذنِهِ، فَجَعَلْتُهُ فِي قَبْرٍ عَلَى حِدَةٍ . رواه البخاري
৫/১৫১৫।
জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, উহুদের
যুদ্ধ যখন সংঘটিত হয়। রাতে আমাকে আমার পিতা ডেকে বললেন, ‘আমার
মনে হয় যে, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
সহচরবৃন্দের মধ্যে যারা সর্বপ্রথম শহীদ হবেন, আমিও তাঁদের
অন্তর্ভুক্ত। আর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
পর, তোমাকে ছাড়া ধরা-পৃষ্ঠে প্রিয়তম আর কাউকে ছেড়ে যাচ্ছি
না। আমার উপর ঋণ আছে, তা পরিশোধ করে দেবে। তোমার বোনদের
সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে।’ সুতরাং যখন আমরা ভোরে উঠলাম, তখন দেখলাম যে, সর্বপ্রথম উনিই শাহাদত বরণ
করেছেন। আমি তাঁর সাথে আর এক ব্যক্তিকে সমাধিস্থ করলাম। তারপর অন্যজনকে তাঁর সঙ্গে
একই কবরে দাফন করাতে আমার মনে শান্তি হল না। সুতরাং ছয়মাস পর আমি তাঁকে কবর হতে
বের করলাম। (দেখা গেল) তার কান ব্যতীত (তার দেহ) সেদিনকার মত অবিকল ছিল, যেদিন তাকে কবরে রাখা হয়েছিল। অতঃপর আমি তাকে একটি আলাদা কবরে
দাফন করলাম। (বুখারী) [5]
6/1516 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه:أَنَّ
رَجُلَينِ مِنْ أَصحَابِ النَّبِيِّ، خَرَجَا مِنْ عِنْدِ النَّبِيِّ، فِي
لَيْلَةٍ مُظْلِمَةٍ وَمَعَهُمَا مِثْلُ المِصْبَاحَيْنِ بَيْنَ أَيْديهِمَا.
فَلَمَّا افْتَرَقَا، صَارَ مَعَ كُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا وَاحِدٌ حَتَّى أَتَى
أَهْلَهُ. رواهُ البُخاري مِنْ طُرُقٍ؛ وفي بَعْضِهَا أنَّ الرَّجُلَيْنِ أُسَيْدُ
بنُ حُضير، وَعَبّادُ بنُ بِشْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا.
৬/১৫১৬।
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীর মধ্য থেকে দু’জন সাহাবী অন্ধকার রাতে তাঁর নিকট হতে বাইরে গমন করেন। আর তাঁদের
আগে আগে প্রদীপের ন্যায় কোন আলো বিদ্যমান ছিল। পরে যখন তাঁরা একে অপর থেকে আলাদা
হয়ে গেলেন, তখনও প্রত্যেকের সঙ্গে আলো ছিল। শেষ পর্যন্ত
তাঁরা প্রত্যেকে নিজ নিজ গৃহে পৌঁছে গেলেন। (এটিকে বুখারী কয়েকটি সূত্রে বর্ণনা করেছেন। কোন কোন
বর্ণনায়, ঐ দুই সাহাবীর নাম ছিল, উসাইদ
ইবনে হুযাইর ও আববাদ ইবনে বিশ্র। রাদিয়াল্লাহু আনহুমা।) [6]
7/1517 وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه
قَالَ: بَعَثَ رَسُولُ اللهِ صلى الله
عليه وسلم عَشْرَةَ رَهْطٍ عَيْناً سَرِيَّة، وَأَمَّرَ عَلَيْهَا عَاصِمَ بنَ
ثَابِتٍ الأَنْصَارِيَّ، فَانْطَلَقُوا حَتَّى إِذَا كَانُوا بِالهَدْأَةِ ؛
بَيْنَ عُسْفَانَ وَمَكَّةَ ؛ ذُكِرُوا لِحَيٍّ مِنْ هُذَيْل يُقالُ لَهُمْ: بَنُو
لِحيَانَ، فَنَفَرُوا لَهُمْ بِقَرِيبٍ مِنْ مِئَةِ رَجُلٍ رَامٍ، فَاقْتَصُّوا
آثَارَهُمْ، فَلَمَّا أَحَسَّ بِهِمْ عَاصِمٌ وَأَصْحَابُهُ، لَجَأُوْا إِلَى
مَوْضِعٍ، فَأَحَاطَ بِهِمُ القَوْمُ، فَقَالُوا: انْزِلُوا فَأَعْطُوا
بِأَيْدِيكُمْ وَلَكُمُ العَهْدُ وَالمِيثَاقُ أَنْ لاَ نَقْتُلَ مِنْكُمْ أَحَداً
. فَقَالَ عَاصِمُ بنُ ثَابِتٍ رضي الله عنه: أَيُّهَا القَوْمُ، أَمَّا أَنَا،
فَلاَ أَنْزِلُ عَلَى ذِمَّةِ كَافِرٍ:
اَللهم أَخْبِرْ عَنَّا نَبِيَّكَ، فَرَمَوهُمْ بِالنّبْلِ فَقَتلُوا
عَاصِماً، وَنَزَلَ إِلَيْهِمْ ثَلاَثَةُ نَفَرٍ عَلَى العَهْدِ وَالمِيثاقِ،
مِنْهُمْ خُبَيْبٌ، وَزَيدُ بنُ الدَّثِنَةِ وَرَجُلٌ آخَرُ. فَلَمَّا
اسْتَمْكَنُوا مِنْهُمْ أَطْلَقُوا أَوْتَارَ قِسِيِّهِمْ، فَرَبطُوهُمْ بِهَا .
قَالَ الرَّجُلُ الثَّالِثُ: هَذَا أَوَّلُ الغَدْرِ وَاللهِ لاَ أَصْحَبُكُمْ
إنَّ لِي بِهَؤُلاَءِ أُسْوَةً، يُرِيدُ القَتْلَى، فَجَرُّوهُ وعَالَجُوهُ،
فَأَبَى أَنْ يَصْحَبَهُمْ، فَقَتَلُوهُ، وَانْطَلَقُوا بِخُبَيبٍ، وَزَيْدِ بنِ
الدَّثِنَةِ، حَتَّى بَاعُوهُمَا بِمَكَّةَ بَعْدَ وَقْعَةِ بَدْرٍ ؛ فَابْتَاعَ
بَنُو الحارِثِ بنِ عامِرِ بنِ نَوْفَلِ بنِ عبدِ مَنَافٍ خُبيباً، وَكَانَ
خُبَيْبٌ هُوَ قَتَلَ الحَارِثَ يَوْمَ بَدْرٍ . فَلِبثَ خُبَيْبٌ عِنْدَهُمْ
أَسِيراً حَتَّى أَجْمَعُوا عَلَى قَتْلِهِ، فاسْتَعَارَ مِنْ بَعْضِ بَنَاتِ
الحَارثِ مُوسَى يَسْتَحِدُّ بِهَا فَأَعَارَتْهُ، فَدَرَجَ بُنَيٌّ لَهَا وَهِيَ
غَافِلَةٌ حَتَّى أَتَاهُ، فَوَجَدَتهُ مُجْلِسَهُ عَلَى فَخْذِهِ وَالمُوسَى
بِيَدِهِ، فَفَزِعَتْ فَزْعَةً عَرَفَهَا خُبَيْبٌ . فَقَالَ: أَتَخَشَيْنَ أَنْ
أَقْتُلَهُ مَا كُنْتُ لأَفْعَلَ ذَلِكَ ! قَالَتْ: وَاللهِ مَا رَأيْتُ أَسِيراً
خَيراً مِنْ خُبَيْبٍ، فَوَاللهِ لَقَدْ وَجَدْتُهُ يَوْماً يَأكُلُ قِطْفاً مِنْ
عِنَبٍ فِي يَدِهِ وَإِنَّهُ لَمُوثَقٌ بِالحَدِيدِ وَمَا بِمَكَّةَ مِنْ
ثَمَرَةٍ، وَكَانَتْ تَقُولُ: إِنَّهُ لَرِزْقٌ رَزَقَهُ اللهُ خُبَيْباً .
فَلَمَّا خَرَجُوا بِهِ مِنَ الحَرَمِ لِيَقْتُلُوهُ فِي الحِلِّ، قَالَ لَهُمْ
خُبَيْبٌ: دَعُونِي أُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ، فَتَرَكُوهُ، فَرَكَعَ رَكْعَتَيْنِ
فَقَالَ: وَاللهِ لَوْلاَ أَنْ تَحْسَبُوا أَنَّ مَا بِي جَزَعٌ لَزِدْتُ: اَللهم أَحْصِهِمْ عَدَداً، وَاقْتُلهُمْ بِدَدَاً،
وَلاَ تُبْقِ مِنْهُمْ أَحَداً . وَقَالَ:
فَلَسْتُ
أُبَالِي حِيْنَ أُقْتَلُ مُسْلِماً
* عَلَى أيِّ جَنْبٍ كَانَ للهِ
مَصْرَعِي
وَذَلِكَ
فِي ذَاتِ الإِلَهِ وَإِنْ يَشَأْ * يُبَارِكْ عَلَى أَوْصَالِ شِلْوٍ مُمَزَّعِ
وَكَانَ خُبَيبٌ هُوَ سَنَّ لِكُلِّ مُسْلِمٍ قُتِلَ صَبْراً الصَّلاَةَ
. وَأَخْبَرَ - يَعنِي: النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم - أَصْحَابَهُ يَوْمَ
أُصِيبُوا خَبَرَهُمْ، وَبَعَثَ نَاسٌ مِنْ قُرَيْشٍ إِلَى عَاصِمِ بنِ ثَابِتٍ
رضي الله عنه حِيْنَ حُدِّثُوا أَنَّهُ
قُتِلَ أَنْ يُؤْتَوا بِشَيءٍ مِنْهُ يُعْرَفُ، وكَانَ قَتَلَ رَجُلاً مِنْ
عُظَمَائِهِمْ، فَبَعَثَ اللهُ لِعَاصِمٍ مِثْلَ الظُّلَّةِ مِنَ الدَّبْرِ
فَحَمَتْهُ مِنْ رُسُلِهِمْ، فَلَمْ يَقْدِرُوا أَنْ يَقْطَعُوا مِنْهُ شَيْئاً .
رواه البخاري
৭/১৫১৭।
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম
(মুশরিকদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য) আসেম ইবনে সাবেত আনসারীর নেতৃত্বে
একটি গুপ্তচরের দল কোথাও পাঠালেন। যেতে যেতে তাঁরা উসফান ও মক্কার মধ্যবর্তী
হাদ্আহ নামক স্থানে পৌঁছলে হুযায়ল গোত্রের একটি শাখা বানী লিহইয়ানের নিকট তাঁদের
আগমনের কথা জানিয়ে দেওয়া হল। এ সংবাদ পাওয়ার পর তারা প্রায় একশজন তীরন্দাজ
সমভিব্যাহারে তাঁদের প্রতি ধাওয়া করল। দলটি তাদের (মুসলিম গোয়েন্দা দলের) পদচিহ্ন
অনুসরণ করতে লাগল। আসেম ও তাঁর সাথীগণ বুঝতে পেরে একটি (উঁচু) জায়গায় (পাহাড়ে)
আশ্রয় নিলেন। এবার শত্রুদল তাঁদেরকে ঘিরে ফেলল এবং বলল, ‘নেমে
এসে আত্মসমর্পণ কর, তোমাদের জন্য (নিরাপত্তার) প্রতিশ্রুতি
রইল; তোমাদের কাউকে আমরা হত্যা করব না।’ আসেম
ইবন সাবেত বললেন, ‘আমি কোন কাফেরের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত
হয়ে এখান থেকে অবতরণ করব না। হে আল্লাহ! আমাদের এ সংবাদ তোমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পৌঁছিয়ে দাও।’ অতঃপর তারা মুসলিম
গোয়েন্দা-দলের প্রতি তীর বর্ষণ করতে শুরু করল। তারা আসেমকে শহীদ করে দিল। আর
তাঁদের মধ্যে তিনজন তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নেমে এলে। তাঁরা হলেন, খুবাইব, যায়দ ইবন দাসিনাহ ও অন্য একজন (আব্দুল্লাহ ইবন ত্বারিক)। অতঃপর তারা তাঁদেরকে কাবু করে ফেলার পর নিজেদের
ধনুকের তার খুলে তার দ্বারা তাঁদেরকে বেঁধে ফেলল। এ দেখে তাঁদের সাথে তৃতীয় সাহাবী
(আব্দুল্লাহ) বললেন, ‘এটা প্রথম বিশ্বাসঘাতকতা। আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের
সাথে যাব না। ঐ শহীদগণই আমার আদর্শ।’ কিন্তু তারা তাঁকে তাদের
সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য বহু টানা-হেঁচড়া করল এবং বহু চেষ্টা করল। কিন্তু তিনি তাদের
সঙ্গে যেতে অস্বীকার করলেন। অবশেষে কাফেরগণ তাঁকে শহীদ করে দিল এবং খুবাইব ও যায়দ
ইবন দাসিনাকে বদর যুদ্ধের পরে মক্কার বাজারে গিয়ে বিক্রি করে দিল। বনী হারেস ইবন
আমের ইবন নাওফাল ইবন আব্দে মানাফ গোত্রের লোকেরা খুবাইবকে ক্রয় করে নিলো। আর খুবাইব বদর যুদ্ধের দিন
হারেসকে হত্যা করেছিলেন। তাই তিনি তাদের নিকট বেশ কিছুদিন বন্দী অবস্থায় কাটালেন।
অবশেষে তারা তাঁকে হত্যা করার ব্যাপারে একমত হল। একদা তিনি নাভির নীচের লোম
পরিষ্কার করার জন্য হারেসের কোন এক কন্যার নিকট থেকে একখানা ক্ষুর চাইলেন। সে
তাঁকে তা দিল। সে অন্যমনস্ক থাকলে তার একটি শিশু বাচ্চা (খেলতে খেলতে) তাঁর নিকট
চলে গেল। অতঃপর সে খুবাইবকে দেখল যে, তিনি বাচ্চাটাকে নিজের
উরুর উপর বসিয়ে রেখেছেন এবং ক্ষুরটি তাঁর হাতে রয়েছে। এতে সে ভীষণভাবে ঘাবড়ে গেল।
খুবাইব তা বুঝতে পেরে বললেন, ‘একে হত্যা করে ফেলব ভেবে তুমি
কি ভয় পাচ্ছ? আমি তা করব না।’
(পরবর্তী কালে মুসলিম হওয়ার পর) হারেসের উক্ত কন্যা বর্ণনা করেন যে, ‘আল্লাহর কসম! আমি খুবাইব অপেক্ষা উত্তম বন্দী আর কখনও দেখিনি।
আল্লাহর কসম! আমি তাঁকে একদিন আঙ্গুরের থোকা থেকে আঙ্গুর খেতে দেখেছি। অথচ তখন
মক্কায় কোন ফলই ছিল না। অধিকন্তু তিনি তখন লোহার শিকলে আবদ্ধ ছিলেন। এ আঙ্গুর তাঁর
জন্য আল্লাহর তরফ থেকে প্রদত্ত রিয্ক ছাড়া আর কিছুই নয়।’
অতঃপর তাঁকে হত্যা করার জন্য যখন হারামের বাইরে নিয়ে গেল, তখন তিনি তাদেরকে বললেন, ‘আমাকে দু’ রাকআত নামায আদায় করার সুযোগ দাও।’ সুতরাং
তারা তাঁকে ছেড়ে দিল এবং তিনি দু’ রাকআত নামায আদায় করলেন।
(নামায শেষে তিনি তাদেরকে) বললেন, ‘আমি মৃত্যুর ভয়ে শঙ্কিত
হয়ে পড়েছি, তোমরা যদি এ কথা মনে না করতে, তাহলে
আমি (নামাযকে) আরও দীর্ঘায়িত করতাম।’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ! তাদেরকে এক এক করে গুণে রাখ, তাদেরকে
বিক্ষিপ্তভাবে ধ্বংস কর এবং তাদের মধ্যে কাউকেও বাকী রেখো না।
তারপর তিনি আবৃত্তি করলেন,
‘যেহেতু আমি মুসলিম হিসাবে
মৃত্যুবরণ করছি তাই আমার কোন পরোয়া নেই
আল্লাহর সন্তুষ্টি
লাভের উদ্দেশ্যে কোন পার্শে আমি লুটিয়ে পড়ি।
আমি যেহেতু আল্লাহর
পথেই মৃত্যুবরণ করছি,
আর তিনি ইচ্ছা করলে
আমার ছিন্নভিন্ন প্রতিটি অঙ্গে বরকত দান করতে পারেন।’
খুবাইবই প্রথম ছিলেন, যিনি প্রত্যেক সেই মুসলিমের
জন্য (হত হওয়ার পূর্বে দুই রাকআত) নামায সুন্নত করে যান, যাকে
বন্দী অবস্থায় হত্যা করা হয়।
এদিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবিবর্গকে সেই দিনই
তাঁদের খবর জানালেন, যেদিন তাঁদেরকে হত্যা করা হয়।
অপর দিকে কুরাইশের কিছু লোক আসেম ইবন সাবেতের খুন হওয়া শুনে সে ব্যাপারে
নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাঁর মৃতদেহ থেকে পরিচিত কোন অংশ নিয়ে আসার জন্য লোক পাঠিয়ে
দিল। আর তিনি বদর যুদ্ধের দিন তাদের একজন বড় নেতাকে হত্যা করেছিলেন। তখন আল্লাহ
মেঘের মত এক ঝাঁক মৌমাছি পাঠিয়ে দিলেন; যা তাদের প্রেরিত
লোকদের হাত থেকে আসেমের লাশকে রক্ষা করল। সুতরাং তারা তাঁর দেহ থেকে কোন অংশ কেটে
নিতে সক্ষম হল না। (বুখারী)[7]
এ পরিচ্ছেদে আরও অন্যান্য বহু সহীহ হাদিস রয়েছে, যার
কিছু এই কিতাবের যথাস্থানে উল্লিখিত হয়েছে। যেমন সেই কিশোরের হাদিস,
যে একজন পাদ্রী ও জাদুকরের কাছে যাতায়াত করত, জুরাইজের
হাদিস, গুহার মুখে পাথর চাপা পড়া তিন গুহা-বন্দীর হাদিস, সেই সৎলোকের হাদিস, যিনি মেঘ থেকে আওয়াজ
শুনতে পেয়েছিলেন, ‘অমুকের বাগানে পানি বর্ষণ কর’ ইত্যাদি। এ পরিচ্ছেদের দলীল প্রচুর ও প্রসিদ্ধ। আর আল্লাহই
তওফীকদাতা।
8/1518 وعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ
عَنْهُمَا، قَالَ: مَا سَمِعْتُ عُمَرَ رضي الله عنه يَقُوْلُ لِشَيءٍ قَطُّ: إِنِّي لأَظُنُّهُ كَذَا، إِلاَّ كَانَ كَمَا
يَظُنُّ . رواه البخاري
৮/১৫১৮। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, “যখনই কোন বিষয়ে আমি উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে বলতে শুনতাম, ‘আমার মনে হয়, এটা এই হবে’ তখনই (দেখতাম) বাস্তবে তাই হত; যা তিনি ধারণা করতেন!” (বুখারী)[8]
[3] সহীহুল বুখারী ৭৫৫, ৭৫৮, ৭৭০, ৩৭২৮, ৫৪১২, ৬৪৫৩, মুসলিম ৪৫৩, ২৯৬৬, তিরমিযী ২৩৬৫, নাসায়ী ১০০২, ১০০৩, আবূ দাউদ ৮০৩, ইবনু মাজাহ ১৩১, আহমাদ ১৫১৩, ১৫৫১, ১৫৬০
[5] সহীহুল বুখারী ১৩৪৩, ১৩৪৫, ১৩৪৬, ১৩৪৮, ১৩৫১, ১৩৫২, ১৩৫৩, তিরমিযী
১০৩৬, নাসায়ী ১৯৫৫, ২০২১,
আবূ দাউদ ৩১৩৮, ইবনু মাজাহ ১৫১৪, আহমাদ
১৩৭৭৭
[8] সহীহুল বুখারী ৩৮৬৪, ৩৮৬৫, ৩৮৬৬
_________________________________________________________________________________
সংকলন : ইমাম মুহিউদ্দীন আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবন শরফ আন-নাওয়াবী রহ.
হাদীসের শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণয় : শাইখ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহ.
অনুবাদক : বিশিষ্ট আলেমবর্গ
অনুবাদ সম্পাদনা : আব্দুল হামীদ ফাইযী
সূত্র : ইসলামহাউজ
0 মন্তব্যসমূহ