আল্লাহর অবস্থান বিবরণে আল কুরআন
সকল
প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি মানব ও জিন জাতিকে তাঁর একত্বটা ঘোষণা করার
জন্য সৃষ্টি করেছেন। সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নাবী ও রাসূল
মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) উপর যিনি তাঁর উম্মতের
কাছে আল্লাহর একত্বতার বিস্তারিত জ্ঞান বর্ণনা করে গেছেন। আরও সলাত ও সালাম
বর্ষিত হোক তাঁর পরিবার ও সাথীগণের উপর যারা তাঁর কাছ থেকে তাওহীদের সঠিক
জ্ঞান অর্জন করেছিলেন।
অতঃপর
হে সম্মানিত পাঠক ও পাঠিকাগণ! পরকালে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই সঠিক ইসলামী
আক্বীদা জানতে ও তার উপর আমল করতে হবে। অন্যথায় পরকালে মুক্তি পাওয়া যাবে
না। এ সঠিক আকীদার অনেক মাসআলা রয়েছে। তন্মধ্যে ‘আল্লাহ কোথায়?’
এটিও একটি আকীদার গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা, যাতে ভ্রান্ত দল জাহমিয়াসহ আরও বহু
দল পথভ্রষ্ট হয়েছে। আমি আল্লাহর নিন্মের বাণীর উপর আমল করত উক্ত গুরুত্ব
পূর্ণ মাস’আলাটি সম্মানিত পাঠক ও পাঠিকাগণের জন্যে এখানে আল কুরআনের আলোকে
তুলে ধরলাম, যাতে তারা এর দ্বারা উপকৃত হতে পারে এবং সূফীদের সর্বেশ্বরবাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস (আল্লাহ নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজমান)
থেকে বাঁচতে পারে। সূফীদের সর্বেশ্বরবাদের অর্থ হলো: তাদের নিকট খালিক –
সৃষ্টিকারী আর মাখলূক্- সৃষ্টি জীব এর মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। সবই
মাখলূক–সৃষ্টি জীব, আর সবই ইলাহ-উপাস্য।
আল্লাহ তা’আলা বলেন:
وَإِذْ
أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَتُبَيِّنُنَّهُ
لِلنَّاسِ وَلَا تَكْتُمُونَهُ فَنَبَذُوهُ وَرَاءَ ظُهُورِهِمْ
وَاشْتَرَوْا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا فَبِئْسَ مَا يَشْتَرُونَ
“(স্মরণ
কর সেই সময়ের কথা) যখন আল্লাহ তা’আলা আহলু কিতাবদের নিকট থেকে এই মর্মে
দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, তোমরা অবশ্যই এটি তথা তাওরাত ও ইঞ্জিল
মানুষের কাছে বর্ণনা করবে এবং তোমরা তা গোপন করবে না। অতঃপর তারা সে
অঙ্গীকারকে তাদের পিছনে ছুড়ে ফেলে দিল এবং তার বিনিময়ে সামান্য অর্থ
গ্রহণ করল। কত নিকৃষ্টতম তাদের ক্রয় কৃত বস্তু।” (সুরা আলি ইমরান আয়াত:
১৮৭)
আর
সে মাস’আলাটির ব্যাপারে আহলুস্ সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের আলিম ও
অনুসারীগণের আক্বীদা বা বিশ্বাস হলোঃ তারা সুদৃঢ় বিশ্বাস করেন যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা স্বীয় সত্ত্বায় ও নিজ গুণাবলীসহ আরশের উপর সমুন্নত।
সকল সৃষ্টি জীবের উপর সমুন্নত। সকল সৃষ্টি জীব হতে আলাদা ও পৃথক। আহলুস্
সুন্নাহ ওয়াল জামা’আতের লোকেরা ভ্রান্ত জাহমিয়াদের ন্যায় আকীদাহ পোষণ
করেন না। তারা বলে যে, আল্লাহ তাঁর সৃষ্টি জীবের সাথে সর্বত্র বিরাজমান
আছেন। আহলে সুন্নাতের আলেমগণ এমন ভ্রান্ত কথা বিশ্বাস করেন না। আর যারা
জাহমিয়াদের মত বলবে যে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টি জীবের সাথে জমিনে আছেন তারা
পথভ্রষ্ট ও কাফির হয়ে যাবে। এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ তাদের এ আক্বীদা
কুরআন, সহীহ হাদীস, সাহাবা, তাবেঈন ও ইসলামের ইমামগণের বিশ্বাসের পরিপন্থী।
এখানে
একটি সংশয়ের নিরসন করা দরকার যে কারণে জাহমিয়া ও সূফীরা বিপথগামী
হয়েছে। আর তা হলোঃ আল্লাহ তা’আলা কুরআনের কিছু আয়াতে বলেছেন যে তিনি
সৃষ্টি জীবের সাথে আছেন যেমন বলেছেন:
”তিনি তোমাদের সাথে আছেন তোমরা যেখানেই থাক।” (সূরা হাদীদ আয়াত: ৪)
তারা
এ আয়াত ও এর সমার্থ বোধক অন্যান্য আয়াত হতে বুঝেছেন যে তিনি সস্তায়
সৃষ্টি জীবের সাথে আছেন। কিন্তু তাদের এ বুঝ কুরআন, সহীহ হাদীস, সাহাবী,
তাবেঈ ও ইসলামের ইমামগণের বিশ্বাসের পরিপন্থী। এ আয়াতগুলোর সঠিক তাফসীর বা
ব্যাখ্যা নিন্মরূপঃ
তিনি
আরশের উপর সমুন্নত থেকে তাঁর সৃষ্টি জীবের সাথে আছেন- এর অর্থ হলোঃ তিনি
সৃষ্টি জীবের অবস্থাসমূহ জানেন, তাদের কথাসমূহ শুনেন, তাদের কর্মসমূহ
দেখেন, তাদের বিষয় সমুহ পরিচালনা করেন, দরিদ্রকে রুজি দান করেন,
ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ করে দেন, যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করেন, যার কাছ
থেকে ইচ্ছা রাজত্ব কেড়ে নেন, যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন, যাকে ইচ্ছা
অপমান করেন, তাঁরই হাতে সকল কল্যাণ এবং তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
• আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামা’আহ এদের আকীদা হলো আল্লাহ আরশের উপর সমুন্নত। তারা তাদের এ আকীদার উপর আল কুরআনের নিন্মের আয়াত সমূহ দ্বারা প্রমাণ গ্রহণ করেন।
১। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى
“দয়াময় আল্লাহ আরশের উপর সমুন্নত হয়েছেন।” (সূরা ত্বহা আয়াত: ৫)
{اسْتَوَى} ইস্তাওয়া এর অর্থ:
প্রখ্যাত তাবিঈ আবুল আলিয়াহ বলেছেন: ইস্তাওয়া অর্থ ইরতাফা’য়া। অর্থাৎ তিনি উঁচু হল। ইস্তাওয়া ইলাস্ সামায়ে এর অর্থ: তিনি আকাশের উপর আরশ এর উপর সমুন্নত হলেন।
প্রখ্যাত তাবিঈ মুজাহিদ বলেছেন: ইস্তাওয়া অর্থ ‘আলা। এর অর্থ সে সমুন্নত হল। ‘আলা আলাল আরশে এর অর্থঃ তিনি আরশের উপর সমুন্নত হলেন। দেখুন: সহীহ বুখারী। (বাবু ওয়া কানা আরশুহু ‘আলাল মায়ে অর্থাৎ তাঁর আরশ পানির উপর আছে।)
প্রখ্যাত তাবিঈ আবুল আলিয়াহ বলেছেন: ইস্তাওয়া অর্থ ইরতাফা’য়া। অর্থাৎ তিনি উঁচু হল। ইস্তাওয়া ইলাস্ সামায়ে এর অর্থ: তিনি আকাশের উপর আরশ এর উপর সমুন্নত হলেন।
প্রখ্যাত তাবিঈ মুজাহিদ বলেছেন: ইস্তাওয়া অর্থ ‘আলা। এর অর্থ সে সমুন্নত হল। ‘আলা আলাল আরশে এর অর্থঃ তিনি আরশের উপর সমুন্নত হলেন। দেখুন: সহীহ বুখারী। (বাবু ওয়া কানা আরশুহু ‘আলাল মায়ে অর্থাৎ তাঁর আরশ পানির উপর আছে।)
হে প্রিয় পাঠক ও পাঠিকাগণ!
কুরআনে ব্যবহৃত সকল ইস্তাওয়া ক্রিয়ার অর্থ: তিনি আরশের উপর উঁচু হলেন বা
সমুন্নত হলেন। ইস্তাওয়া ক্রিয়াটি কুরআনে মোট নয়বার ব্যবহৃত হয়েছে। আর
আরশ শব্দটি মোট বিশবার ব্যবহৃত হয়েছে।
২।
وَهُوَ اللَّهُ فِي السَّمَاوَاتِ وَفِي الْأَرْضِ يَعْلَمُ سِرَّكُمْ وَجَهْرَكُمْ وَيَعْلَمُ مَا تَكْسِبُونَ
“আল্লাহ তিনিই উপাস্য আসমানে এবং জমিনে। তিনি তোমাদের গোপন ও প্রকাশ্য জানেন। তিনি আরও জানেন তোমরা (ভাল- মন্দ) যা কর। এ আয়াতে في ফী على ‘আলার এর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থ তিনিই আসমান সমূহের উপরে আছেন।” (সূরা আন’আম, ৬ আয়াত: ৩)।
৩।
بَلْ رَفَعَهُ اللَّهُ إِلَيْهِ وَكَانَ اللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمًا
”বরং
আল্লাহ তাঁকে( ঈসা আলাইহিস্ সালামকে) উঠিয়ে নিয়েছেন তাঁর নিজের কাছে।
আল্লাহ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞানয় (সূরা নিসা: ৪, আয়াত: ১৫৮)
৪।
تَعْرُجُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ
“ফিরিশতাগণ এবং রূহ ( জিবরাঈল) তাঁর (আল্লাহ) দিকে উঠেন, এমন দিনে যার পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছর।” (সূরা মা’আরিজ ৭০, আয়াত: ৪)
৫।
يَخَافُونَ رَبَّهُمْ مِنْ فَوْقِهِمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
তাঁরা (ফিরিশতারা) তাঁদের উপর তাঁদের প্রভূকে ভয় করে, আর তাঁদেরকে যা আদেশ দেয়া হয় তা পালন করে। (সূরা নাহল: ১৬, আয়াত: ৫০)
৬।
أَأَمِنْتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ أَنْ يَخْسِفَ بِكُمُ الْأَرْضَ فَإِذَا هِيَ تَمُورُ
“তোমরা কি নিশ্চিত আকাশে যিনি আছেন, তিনি তোমাদেরসহ ভূমি ধসিয়ে দিবেন না। অতঃপর তা কাঁপতে থাকবে।” (সূরা মুলক: ৬৭, আয়াত: ১৬)
৭।
أَمْ أَمِنْتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ أَنْ يُرْسِلَ عَلَيْكُمْ حَاصِبًا فَسَتَعْلَمُونَ كَيْفَ نَذِيرِ
“তোমরা
কি নিশ্চিত আকাশে যিনি আছেন, তিনি তোমাদের উপর কঙ্কর বর্ষণ করবেন না।
অচিরেই তোমরা জানতে পারবে কেমন ছিল আমার সতর্ককারী।” (সূরা মুলক ৬৭, আয়াত:
১৭)
পূর্বের দু’আয়াতেও ফী في অব্যয়টি আলা على অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
৮।
ذُو الْعَرْشِ الْمَجِيدُ
“মহান আরশের অধিকারী।” (সূরা বুরূজ, ৮৫ আয়াত: ১৫)
৯।
قُلْ مَنْ رَبُّ السَّمَاوَاتِ السَّبْعِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ ( سورة المؤمنون ৮৬ )
”বলুন: সপ্তাকাশ ও মহা আরশের মালিক কে?” (সূরা মু’মিনূন ২৩, আয়াত: ৮৬)
১০।
ذِي قُوَّةٍ عِنْدَ ذِي الْعَرْشِ مَكِينٍ
“যিনি শক্তিশালী, আরশের মালিকের নিকট মর্যাদা শালী।” (সূরা তাকবীর ৮১, আয়াত: ২০)
১১।
اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ
“আল্লাহ ব্যতীত কোন (সত্য) উপাস্য নেই, তিনি মহা আরশের প্রভু- মালিক।” (সূরা নামল ২৭, আয়াত: ২৬)
১২।
سُبْحَانَ رَبِّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ رَبِّ الْعَرْشِ عَمَّا يَصِفُونَ (سورة
“তারা যা বর্ণনা করে, তা থেকে আসমান ও জমিনের প্রভু- মালিক, আরশের প্রভু-মালিক পবিত্র। (সূরা যুখরুফ ৪৩, আয়াত: ৮২)
১৩।
فَتَعَالَى اللَّهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ
“অতএব
মহিমান্বিত আল্লাহ, তিনি সত্যিকার মালিক, তিনি ব্যতীত (সত্য) কোন মাবুদ
নেই। তিনি সম্মানিত আরশের মালিক।” (সূরা মু’মিনূন ২৩, আয়াত: ১১৬)
১৪।
قُلْ لَوْ كَانَ مَعَهُ آلِهَةٌ كَمَا يَقُولُونَ إِذًا لَابْتَغَوْا إِلَى ذِي الْعَرْشِ سَبِيلًا
“বলুন:
তাদের কথামত যদি তাঁর সাথে অন্যান্য উপাস্য থাকত, তবে তারা আরশের মালিক
পর্যন্ত পৌছার পথ অন্বেষণ করত।” (সূরা বনী ইসরাঈল ১৭ আয়াত: ৪২)
১৫।
لَوْ كَانَ فِيهِمَا آلِهَةٌ إِلَّا اللَّهُ لَفَسَدَتَا فَسُبْحَانَ اللَّهِ رَبِّ الْعَرْشِ عَمَّا يَصِفُونَ
“যদি
তাতে তথা আসমান ও জমিনে আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্য থাকত, তবে উভয়
ধ্বংস হয়ে যেত। অতএব তারা যা বলে, তা থেকে আরশের অধিপতি আল্লাহ পবিত্র।”
(সূরা আম্বিয়া ২১, আয়াত: ২২)
১৬।
فَإِنْ تَوَلَّوْا فَقُلْ حَسْبِيَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ
“এ
সত্ত্বেও যদি তারা বিমুখ হয়ে থাকে, তবে বলে দাও, আল্লাহই আমার জন্য
যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত (সত্য) কোন উপাস্য নেই। আমি তাঁরই উপর ভরসা করি এবং
তিনিই মহান আরশের অধিপতি।” (সূরা তাওবা ৯, আয়াত: ১২৯)
১৭।
الَّذِي
خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ
ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ الرَّحْمَنُ فَاسْأَلْ بِهِ خَبِيرًا
“(আল্লাহ)
যিনি আসমান, জমিন ও এতদুভয়ের অন্তর্বর্তী সবকিছু ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন,
অতঃপর আরশে সমুন্নত হয়েছেন। তিনি পরম দয়াময়। তাঁর সম্পর্কে যিনি অবগত,
তাকে জিজ্ঞেস কর।” (সূরা ফুরকান ২৫, আয়াত: ৫৯)
১৮।
رَفِيعُ الدَّرَجَاتِ ذُو الْعَرْشِ يُلْقِي الرُّوحَ مِنْ أَمْرِهِ عَلَى مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ لِيُنْذِرَ يَوْمَ التَّلَاقِ
তিনিই
সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী, আরশের মালিক, তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি
ইচ্ছা অহী নাযিল করেন, যাতে সে সাক্ষাতের দিন সম্পর্কে সকলকে সতর্ক করে।
(সূরা গফির /মু’মিন ৪০, আযাতঃ ১৫)
১৯।
وَتَرَى
الْمَلَائِكَةَ حَافِّينَ مِنْ حَوْلِ الْعَرْشِ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ
رَبِّهِمْ وَقُضِيَ بَيْنَهُمْ بِالْحَقِّ وَقِيلَ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ
الْعَالَمِينَ
“তুমি
ফিরিশতাগণকে দেখবে, তারা আরশের চার পাশ ঘিরে তাদের পালনকর্তার পবিত্রতা
ঘোষণা করছে। তাদের সবার মাঝে ন্যায় বিচার করা হবে। বলা হবে, সমস্ত প্রশংসা
বিশ্ব প্রতি পালক আল্লাহর।” (সূরা যুমার ৩৯, আয়াত: ৭৫)
২০।
اللَّهُ
الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِي سِتَّةِ
أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ مَا لَكُمْ مِنْ دُونِهِ مِنْ
وَلِيٍّ وَلَا شَفِيعٍ أَفَلَا تَتَذَكَّرُونَ
“আল্লাহ
যিনি নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয় দিনে সৃষ্টি
করেছেন, অতঃপর তিনি আরশে সমুন্নত হয়েছেন। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক
ও সুপারিশ কারী নেই। এরপরও কি তোমরা বুঝবে না?” (সূরা সাজদা ৩২, আয়াত: ৪)
২১।
هُوَ
الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ
اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يَعْلَمُ مَا يَلِجُ فِي الْأَرْضِ وَمَا
يَخْرُجُ مِنْهَا وَمَا يَنْزِلُ مِنَ السَّمَاءِ وَمَا يَعْرُجُ فِيهَا
وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنْتُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
“তিনি
নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডল সৃষ্টি করেছেন ছয়দিনে, অতঃপর আরশের উপর সমুন্নত
হয়েছেন। তিনি জানেন যা ভূমিতে প্রবেশ করে ও যা ভূমি থেকে নির্গত হয় এবং
যা আকাশ থেকে বর্ষিত হয় ও যা আকাশে উত্থিত হয়। তিনি তোমাদের সাথে আছেন
তোমরা যেখানেই থাক। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা দেখেন।” (সূরা হাদীদ ৫৭, আয়াত:
৪)
তিনি তোমাদের সাথে আছেন তোমরা যেখানেই থাক। এর তাফসীর বা ব্যাখ্যা এ আয়াতেরই শেষাংশ। আর তা হলোঃ তোমরা যা কর, আল্লাহ তা দেখেন।
২২।
إِنَّ
رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ
أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مَا مِنْ
شَفِيعٍ إِلَّا مِنْ بَعْدِ إِذْنِهِ ذَلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ
فَاعْبُدُوهُ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ
“নিশ্চয়ই
তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহ যিনি তৈরি করেছেন আসমান ও জমিনকে ছয় দিনে,
অতঃপর তিনি আরশের উপর সমুন্নত হয়েছেন। তিনি কার্য পরিচালনা করেন। কেউ
সুপারিশ করতে পাবে না তবে তাঁর অনুমতি ছাড়া ইনিই আল্লাহ তোমাদের
পালনকর্তা। অতএব, তোমরা তাঁরই এবাদত কর। তোমরা কি কিছুই চিন্তা কর না?”
(সূরা ইউনুস ১০, আয়াত: ৩)
২৩।
اللَّهُ
الَّذِي رَفَعَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا ثُمَّ اسْتَوَى
عَلَى الْعَرْشِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ
مُسَمًّى يُدَبِّرُ الْأَمْرَ يُفَصِّلُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ بِلِقَاءِ
رَبِّكُمْ تُوقِنُونَ
“আল্লাহ,
যিনি ঊর্ধ্বদেশে স্থাপন করেছেন আকাশ মণ্ডলীকে স্তম্ভ ব্যতীত। তোমরা সেগুলো
দেখ। অতঃপর তিনি আরশের উপর সমুন্নত হয়েছেন। এবং সূর্য ও চন্দ্রকে কর্মে
নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকে নির্দিষ্ট সময় মোতাবেক আবর্তন করে। তিনি সকল
বিষয় পরিচালনা করেন, নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা স্বীয়
পালনকর্তার সাথে সাক্ষাত সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাসী হও।” (সূরা রাদ ১৩,
আয়াত: ২)
২৪।
إِنَّ
رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ
أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ
يَطْلُبُهُ حَثِيثًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ
بِأَمْرِهِ أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ
الْعَالَمِينَ
“নিশ্চয়
তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলকে ছয় দিনে সৃষ্টি
করেছেন। অতঃপর আরশের উপর সমুন্নত হয়েছেন। তিনি পরিয়ে দেন রাতের উপর দিনকে
এমতাবস্থায় যে, দিন দৌড়ে রাতের পিছনে আসে। তিনি সৃষ্টি করেছেন সূর্য,
চন্দ্র ও নক্ষত্রকে এমন ভাবে যে তা সবই তাঁর আদেশের অনুগামী। শুনে রেখ,
তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা। আল্লাহ, বরকতময় যিনি বিশ্বজগতের
প্রতিপালক।” (সূরা আরাফ ৭, আয়াত: ৫৪)
হে সম্মানিত পাঠক পাঠিকাগণ!
আমি আশা করি আপনারা পূর্বের আলোচনা থেকে আল্লাহর অবস্থান সম্পর্কে আহলুস্
সুন্নাহ ওয়াল জামা’আতের আক্বীদা আল কুরআনের আলোকে জানতে পেরেছেন। আর তা
হলো আল্লাহ আরশের উপর সমুন্নত।
তবে তিনি সৃষ্টি জীবের সব কিছু জানেন, দেখেন, পরিচালনা করেন ও তার
প্রতিদান দান করেন। আল্লাহ সবাইকে এ মাস’আলাটি সহ আকীদার অন্যান্য
মাস’আলাসমূহ সঠিক ভাবে জানার তাওফীক দান করুন।
পরিশেষে
আমি সারা বিশ্বের সকল মানুষকে জানিয়ে দিতে চাই যে কেবল সহীহ আক্বীদাই বা
সঠিক বিশ্বাসই সারা বিশ্বের সকল মানুষের হৃদয়, তাদের বাণী ও তাদের কাতারকে
একত্রিত করতে সক্ষম। সঠিক বিশ্বাসই এ উম্মতের প্রথম যুগের মানুষের অন্তর,
বাণী ও কাতারকে একত্রিত করেছিল। তাঁরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর নেতৃত্বে তাওহীদের ছায়া তলে একত্রিত হয়েছিলেন। তাঁরা এক
দলভুক্ত ছিলেন। তাই তাঁদের মত একত্রিত হওয়া ও একত্রিত করার জন্যে
প্রত্যেকেই কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে সঠিক আক্বীদা শিখা ও তা প্রচার ও
প্রসার করার জন্যে সর্বশক্তি ব্যয় করা একান্ত কর্তব্য।
আল্লাহ সবাইকে সঠিক আক্বীদা শিখার, তার প্রতি আমল ও তা যথাযথ প্রচার ও প্রসার করার তাওফীক দান করুন আমীন।
লেখক: মুহাম্মাদ ইব্রাহীম, দাঈ দক্ষিণ কোরিয়া।
সম্পাদক: আব্দুল্লাহ শাহেদ আল মাদানী ও আব্দুল্লাহিল হাদী
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
0 মন্তব্যসমূহ