হাদীস শরীফ মুসলিম জাহানের এক অমূল্য সম্পদ, ইসলামী শরই’আতের অন্যতম অপরিহার্য উৎস এবং ইসলামী জীবন বিধানের অন্যতম মূল ভিত্তি। কুরআন মজীদ যেখানে ইসলামী জীবন ব্যবস্থার মৌলনীতি পেশ করে, হাদীস সেখানে এ মৌল নীতির বিস্তারিত বিশ্লেষণ ও তা বাস্তবায়নের কার্যকর পন্থা বলে দেয়।
জেনে নিন কিছু মূল্যবান হাদিস-
‘আবদুল্লাহ ইবনুু ইউসুফ (রাঃ) উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ (রাঃ)থেকে বর্ণিত, হারেস ইবনুু হিশাম “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন,’ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার প্রতি ওয়াহ্য়ী কিভাবে আসে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ’কোন কোন সময় তা ঘন্টাধ্বনির ন্যায় আমার নিকট আসে। আর এটা আমার উপর সবচাইতে কষ্ট দায়ক হয় এবং তা সমাপ্ত হতেই সে (মালাক) যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে নিই,আবার কখনো মালাক মানুষের আকৃতিতে আমার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে ফেলি। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি প্রচণ্ড শীতের দিনে ওায়াহ্য়ী নাযিলরত অবস্থায় তাঁকে দেখেছি। ওয়াহ্য়ী শেষ হলেই তাঁর কপাল থেকে ঘাম ঝরে পড়ত।
তাখরীজঃ বুখারীঃ ৩২১৫; তিরমিযীঃ ৩৯৯৪; নাসাঈঃ ৯৪২; আহমাদঃ ২৬৯৫২; মুয়াত্তাঃ ৪৭৯। হাদিসের মানঃ সহিহ
‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে যখন কোন কাজের নির্দেশ দিতেন, তাঁদের সামর্থ্য অনুযায়ী নির্দেশ করতেন। একবার তাঁরা বললেন, “হে আল্লাহ্র রাসূল! আমরা তো আপনার মত নই। আল্লাহ্ তা’আলা আপনার পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন।” একথা শুনে তিনি রাগ করলেন, এমনকি তাঁর চেহারায় রাগের চিহ্ন প্রকাশ পাচ্ছিল। এরপর তিনি বললেন: তোমাদের চেয়ে আমিই আল্লাহকে বেশী ভয় করি ও বেশী জানি।
(আঃপ্রঃ ১৯, ইফাঃ ১৯) হাদিসের মানঃ সহিহ
‘আবদুল্লাহ ইবনুু ‘আম্র (রাঃ) হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করল, “ইসলামের কোন্ কাজটি সবচেয়ে উত্তম?” তিনি বললেনঃ তুমি লোকদের খাদ্য খাওয়াবে এবং পরিচিত-অপরিচিত সকলকে সালাম করবে।
তাখরীজঃ বুখারীঃ ১২ (আঃপ্রঃ ২৭, ইফাঃ ২৭) হাদিসের মানঃ সহিহ
‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার তাঁর নিকট আসেন, তাঁর নিকট তখন এক মহিলা ছিলেন। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘ইনি কে?’ আয়িশাহ (রাঃ) উত্তর দিলেন অমুক মহিলা, এ বলে তিনি তাঁর সলাতের উল্লেখ করলেন। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘থাম তোমরা যতটকু সামর্থ্য রাখ, ততটুকুই তোমাদের করা উচিত। আল্লাহ্’র শপথ! আল্লাহ তা’আলা ততক্ষন পর্যন্ত (সওয়াব দিতে) বিরত হন না, যতক্ষণ না তোমরা নিজেরা পরিশ্রান্ত হয়ে পড়। আল্লাহর নিকট অধিক পছন্দনীয় আমল সেটা, যা আমলকারী নিয়মিত করে থাকে।
(১১৫১; মুসলিম ২/৩১ হাঃ ৭৮৫, আহমাদ ২৪৯৯) (আঃপ্রঃ ৪১, ইফাঃ ৪১) হাদিসের মানঃ সহিহ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হল, কোন কাজটি সর্বেৎকৃষ্ট আর কোন কাজটি সর্বোত্তম? তিনি উত্তরে বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলে বিশ্বাস স্থাপন। প্রশ্নকর্তা বলেন, এরপর কী হে আল্লাহর রাসূল! রাসূল বললেন জিহাদ ফি সাবীলিল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা (হচ্ছে) সর্বোত্তম কাজ। প্রশ্নকারী বললেন এরপর কী ইয়া রাসূলুল্লাহ? তিনি বললেন, আল্লাহর কাছে মাকবুল (গ্রহণ যোগ্য)হজ্জ। (বুখারী ও মুসলিম নাসাঈ ও তিরমিযী)
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন: “আল্লাহ বলেন: আমার বান্দা যখন কোন পাপ করার ইচ্ছা করে, তখন তোমরা তা লিখ না যতক্ষণ না সে তা করে। যদি সে তা করে সমান পাপ লিখ। আর যদি সে তা আমার কারণে ত্যাগ করে, তাহলে তার জন্য তা নেকি হিসেবে লিখ। আর যদি সে নেকি করার ইচ্ছা করে কিন্তু সে তা করেনি, তার জন্য তা নেকি হিসেবে লিখ। অতঃপর যদি সে তা করে তাহলে তার জন্য তা দশগুণ থেকে সাতশো গুণ পর্যন্ত লিখ”। [বুখারি ও মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমি যে সম্পর্কে তোমাদের বলিনি, সে সম্পর্কে তোমরা আমাকে জিজ্ঞেস করো না। কারণ তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতগণ তাদের নাবীগণের নিকট অধিক প্রশ্নের কারণে এবং তাদের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে ধ্বংস হয়েছে। অতএব আমি তোমাদেরকে কোন বিষয়ের নির্দেশ দিলে তোমরা তা যথাসাধ্য পালন করো এবং কোন বিষয়ে আমি তোমাদের নিষেধ করলে তা থেকে তোমরা বিরত থাকো।
হাদিসের মানঃ সহিহ
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ বলেন: আমার বান্দা যখন নেকি করার ইচ্ছা করে আমি তার জন্য একটি নেকি লিখি যতক্ষণ সে না করে, যখন সে করে আমি তার দশগুণ লিখি। আর যখন সে পাপ করার ইচ্ছা করে আমি তার জন্য তা ক্ষমা করি যতক্ষণ সে না করে, অতঃপর যখন সে তা করে তখন আমি তার সমান লিখি”। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেন: “ফেরেশতারা বলে: হে আমার রব আপনার এ বান্দা পাপ করার ইচ্ছা করে, -যদিও আল্লাহ তাকে বেশী জানেন- তিনি বলেন: তাকে পর্যবেক্ষণ কর যদি সে করে তার জন্য সমান পাপ লিখ, যদি সে ত্যাগ করে তার জন্য তা নেকি লিখ, কারণ আমার জন্যই সে তা ত্যাগ করেছে। [মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন: যে ব্যাক্তি আমার আনুগত্য করে সে আল্লাহ্রই আনুগত্য করে এবং যে ব্যাক্তি আমার অবাধ্যাচরণ করে সে আল্লাহ্রই অবাধ্যাচরণ করে।
হাদিসের মানঃ সহিহ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় কোন লোক (এমন দেখা যায় যে,) দীর্ঘ কালব্যাপী জান্নাতবাসীগণের ন্যায় আমল করতে থাকবে, কিন্তু আল্লাহ তার পরিসমাপ্তি ঘটাবেন দোযখবাসীদের আমলের মাধ্যমে এবং তাকে দোযখবাসী করে দিবেন এবং নিশ্চয় কোন লোক দীর্ঘকালব্যাপী দোযখবাসীদের আমলের ন্যায় আমল করবে, কিন্তু আল্লাহ তাঁর আমলের পরিসমাপ্তি ঘটাবেন জান্নাতবাসীগণের আমল দ্বারা। (পরিশেষে) তাকে জান্নাতীগণের অন্তর্ভুক্ত করে দেবেন। (মুসলিম ও অন্যান্য)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল বলেন, হে আবূ হুরায়রা, তুমি কি জান আল্লাহর উপর মানুষের এবং মানুষের উপর আল্লাহর অধিকার কী? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বোত্তম জ্ঞাত। তিনি বলেন, মানুষের উপর আল্লাহর অধিকার হচ্ছে যে, তারা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করবে না। যদি তারা তা (সঠিকভাবে) সম্পন্ন করে, তবে তাদেরকে শাস্তি প্রদান না করা আল্লাহর করণীয় হয়ে দাঁড়ায় (অর্থাৎ আল্লাহ দয়াপরবশ হয়ে তাদেরকে অবশ্যম্ভাবীরূপে শাস্তি থেকে মুক্তি প্রদান করেন)। [এ হাদীসটি অন্য কোন গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে আমাদের জানা নেই। তবে অনুরূপ একটি হাদীস বুখারীতে হযরত মু’আয (রাঃ) থেকে চয়ন করেছেন।]
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন: “আল্লাহ তা‘আলা বলেন: শরীকদের মধ্যে অংশীদারির অংশ (শির্ক) থেকে আমিই অধিক অমুখাপেক্ষী, যে কেউ এমন আমল করল যাতে আমার সাথে অপরকে শরিক করেছে, আমি তাকে ও তার শির্ককে প্রত্যাখ্যান করি”।[1] [মুসলিম] হাদিসটি হাসান।
কুতায়বা ইবনুূু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমার উম্মতের জন্য যদি কষ্টকর মনে না করতাম তবে তাদেরকে প্রত্যেক সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।
সহিহ, ইবনুূু মাজাহ হাঃ ২৮৭, ইরউয়াউল গালিল ৭০, বুখারি হাঃ ৮৮৭ মুসলিম (ইসলামিক সেন্টার) হাঃ ৪৯৬
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেন: আমার উম্মাতের একটি দল সর্বদা আল্লাহ্র নির্দেশের উপর স্থির থাকবে। তাদের বিরোধীরা তাদের ক্ষতি করতে সক্ষম হবে না।
তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: আহমাদ ৮০৭৫, ৮২৭৯, ৮৭১১।
আবদুল্লাহ ইবনুূু জু’ফী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ঈমানের শাখা রয়েছে ষাটের কিছু বেশি। আর লজ্জা ঈমানের একটি শাখা।
হাদিসের মানঃ সহিহ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পূর্বানুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে এতে (কয়েকটি শাব্দিক পার্থক্য এরূপ) এসেছে খালি পা খালি গা ও কর্কশ স্বভাবের লোকেরা যখন এতে ছাগ পালকের পরিবর্তে বা ‘চতুস্পদ জন্তুর রাখাল’ এসেছে এবং এতে অতিরিক্ত এসেছে পবিত্র আয়াতের পর অর্থৎ এরপর আগন্তুক চলে গেলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লোকটিকে তোমরা অনুসরণ কর, তারা সে মতে অনুসরণ করলো, কিন্তু তারা কিছুই দেখতে পেল না। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইনি হচ্ছেন, জিব্রাইল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম), তিনি এসেছিলেন মানুষকে তাদের দ্বীন শিক্ষা দেওয়ার জন্য। (বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য)
আবূ হুরাইয়রা (রা) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঈমানের ষাটেরও বেশী শাখা রয়েছে। আর লজ্জা হচ্ছে ঈমানের একটি শাখা।
(মুসলিম ১/১২, হাঃ ৩৫, আহমাদ ৯৩৭২) (আঃপ্রঃ ৮, ইফাঃ ৮)
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেন: “তোমরা কি লক্ষ্য কর না তোমাদের রব কি বলেছেন? তিনি বলেছেন: আমি আমার বান্দাদের যখনই কোন নিয়ামত দেই, তখনই এ ব্যাপারে তাদের একটি দল অকৃতজ্ঞ (কাফের) হয়েছে। তারা বলে: নক্ষত্রই এবং নক্ষত্রের কারণে (তারা তা প্রাপ্ত হয়েছে)”। [মুসলিম ও নাসায়ি] হাদিসটি সহিহ।
দশ দুনিয়ার সমান জান্নাত দিয়ে মানুষ কি করবে? জিবরাইল (আঃ) এখন কোথায়?
শিশুর সুমধুর কন্ঠে সূরা আল ফাতিহা। কোরান তিলাওয়াত।
জেনে নিন কিছু মূল্যবান হাদিস-
‘আবদুল্লাহ ইবনুু ইউসুফ (রাঃ) উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ (রাঃ)থেকে বর্ণিত, হারেস ইবনুু হিশাম “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন,’ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার প্রতি ওয়াহ্য়ী কিভাবে আসে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ’কোন কোন সময় তা ঘন্টাধ্বনির ন্যায় আমার নিকট আসে। আর এটা আমার উপর সবচাইতে কষ্ট দায়ক হয় এবং তা সমাপ্ত হতেই সে (মালাক) যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে নিই,আবার কখনো মালাক মানুষের আকৃতিতে আমার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে ফেলি। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি প্রচণ্ড শীতের দিনে ওায়াহ্য়ী নাযিলরত অবস্থায় তাঁকে দেখেছি। ওয়াহ্য়ী শেষ হলেই তাঁর কপাল থেকে ঘাম ঝরে পড়ত।
তাখরীজঃ বুখারীঃ ৩২১৫; তিরমিযীঃ ৩৯৯৪; নাসাঈঃ ৯৪২; আহমাদঃ ২৬৯৫২; মুয়াত্তাঃ ৪৭৯। হাদিসের মানঃ সহিহ
‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে যখন কোন কাজের নির্দেশ দিতেন, তাঁদের সামর্থ্য অনুযায়ী নির্দেশ করতেন। একবার তাঁরা বললেন, “হে আল্লাহ্র রাসূল! আমরা তো আপনার মত নই। আল্লাহ্ তা’আলা আপনার পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন।” একথা শুনে তিনি রাগ করলেন, এমনকি তাঁর চেহারায় রাগের চিহ্ন প্রকাশ পাচ্ছিল। এরপর তিনি বললেন: তোমাদের চেয়ে আমিই আল্লাহকে বেশী ভয় করি ও বেশী জানি।
(আঃপ্রঃ ১৯, ইফাঃ ১৯) হাদিসের মানঃ সহিহ
‘আবদুল্লাহ ইবনুু ‘আম্র (রাঃ) হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করল, “ইসলামের কোন্ কাজটি সবচেয়ে উত্তম?” তিনি বললেনঃ তুমি লোকদের খাদ্য খাওয়াবে এবং পরিচিত-অপরিচিত সকলকে সালাম করবে।
তাখরীজঃ বুখারীঃ ১২ (আঃপ্রঃ ২৭, ইফাঃ ২৭) হাদিসের মানঃ সহিহ
Surah An-Naas । Child Quran Recitation 2017
‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার তাঁর নিকট আসেন, তাঁর নিকট তখন এক মহিলা ছিলেন। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘ইনি কে?’ আয়িশাহ (রাঃ) উত্তর দিলেন অমুক মহিলা, এ বলে তিনি তাঁর সলাতের উল্লেখ করলেন। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘থাম তোমরা যতটকু সামর্থ্য রাখ, ততটুকুই তোমাদের করা উচিত। আল্লাহ্’র শপথ! আল্লাহ তা’আলা ততক্ষন পর্যন্ত (সওয়াব দিতে) বিরত হন না, যতক্ষণ না তোমরা নিজেরা পরিশ্রান্ত হয়ে পড়। আল্লাহর নিকট অধিক পছন্দনীয় আমল সেটা, যা আমলকারী নিয়মিত করে থাকে।
(১১৫১; মুসলিম ২/৩১ হাঃ ৭৮৫, আহমাদ ২৪৯৯) (আঃপ্রঃ ৪১, ইফাঃ ৪১) হাদিসের মানঃ সহিহ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হল, কোন কাজটি সর্বেৎকৃষ্ট আর কোন কাজটি সর্বোত্তম? তিনি উত্তরে বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলে বিশ্বাস স্থাপন। প্রশ্নকর্তা বলেন, এরপর কী হে আল্লাহর রাসূল! রাসূল বললেন জিহাদ ফি সাবীলিল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা (হচ্ছে) সর্বোত্তম কাজ। প্রশ্নকারী বললেন এরপর কী ইয়া রাসূলুল্লাহ? তিনি বললেন, আল্লাহর কাছে মাকবুল (গ্রহণ যোগ্য)হজ্জ। (বুখারী ও মুসলিম নাসাঈ ও তিরমিযী)
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন: “আল্লাহ বলেন: আমার বান্দা যখন কোন পাপ করার ইচ্ছা করে, তখন তোমরা তা লিখ না যতক্ষণ না সে তা করে। যদি সে তা করে সমান পাপ লিখ। আর যদি সে তা আমার কারণে ত্যাগ করে, তাহলে তার জন্য তা নেকি হিসেবে লিখ। আর যদি সে নেকি করার ইচ্ছা করে কিন্তু সে তা করেনি, তার জন্য তা নেকি হিসেবে লিখ। অতঃপর যদি সে তা করে তাহলে তার জন্য তা দশগুণ থেকে সাতশো গুণ পর্যন্ত লিখ”। [বুখারি ও মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমি যে সম্পর্কে তোমাদের বলিনি, সে সম্পর্কে তোমরা আমাকে জিজ্ঞেস করো না। কারণ তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতগণ তাদের নাবীগণের নিকট অধিক প্রশ্নের কারণে এবং তাদের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে ধ্বংস হয়েছে। অতএব আমি তোমাদেরকে কোন বিষয়ের নির্দেশ দিলে তোমরা তা যথাসাধ্য পালন করো এবং কোন বিষয়ে আমি তোমাদের নিষেধ করলে তা থেকে তোমরা বিরত থাকো।
হাদিসের মানঃ সহিহ
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ বলেন: আমার বান্দা যখন নেকি করার ইচ্ছা করে আমি তার জন্য একটি নেকি লিখি যতক্ষণ সে না করে, যখন সে করে আমি তার দশগুণ লিখি। আর যখন সে পাপ করার ইচ্ছা করে আমি তার জন্য তা ক্ষমা করি যতক্ষণ সে না করে, অতঃপর যখন সে তা করে তখন আমি তার সমান লিখি”। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেন: “ফেরেশতারা বলে: হে আমার রব আপনার এ বান্দা পাপ করার ইচ্ছা করে, -যদিও আল্লাহ তাকে বেশী জানেন- তিনি বলেন: তাকে পর্যবেক্ষণ কর যদি সে করে তার জন্য সমান পাপ লিখ, যদি সে ত্যাগ করে তার জন্য তা নেকি লিখ, কারণ আমার জন্যই সে তা ত্যাগ করেছে। [মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় কোন লোক (এমন দেখা যায় যে,) দীর্ঘ কালব্যাপী জান্নাতবাসীগণের ন্যায় আমল করতে থাকবে, কিন্তু আল্লাহ তার পরিসমাপ্তি ঘটাবেন দোযখবাসীদের আমলের মাধ্যমে এবং তাকে দোযখবাসী করে দিবেন এবং নিশ্চয় কোন লোক দীর্ঘকালব্যাপী দোযখবাসীদের আমলের ন্যায় আমল করবে, কিন্তু আল্লাহ তাঁর আমলের পরিসমাপ্তি ঘটাবেন জান্নাতবাসীগণের আমল দ্বারা। (পরিশেষে) তাকে জান্নাতীগণের অন্তর্ভুক্ত করে দেবেন। (মুসলিম ও অন্যান্য)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল বলেন, হে আবূ হুরায়রা, তুমি কি জান আল্লাহর উপর মানুষের এবং মানুষের উপর আল্লাহর অধিকার কী? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বোত্তম জ্ঞাত। তিনি বলেন, মানুষের উপর আল্লাহর অধিকার হচ্ছে যে, তারা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করবে না। যদি তারা তা (সঠিকভাবে) সম্পন্ন করে, তবে তাদেরকে শাস্তি প্রদান না করা আল্লাহর করণীয় হয়ে দাঁড়ায় (অর্থাৎ আল্লাহ দয়াপরবশ হয়ে তাদেরকে অবশ্যম্ভাবীরূপে শাস্তি থেকে মুক্তি প্রদান করেন)। [এ হাদীসটি অন্য কোন গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে আমাদের জানা নেই। তবে অনুরূপ একটি হাদীস বুখারীতে হযরত মু’আয (রাঃ) থেকে চয়ন করেছেন।]
কবরের যে ওয়াজ সবাইকে কাঁদালো
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন: “আল্লাহ তা‘আলা বলেন: শরীকদের মধ্যে অংশীদারির অংশ (শির্ক) থেকে আমিই অধিক অমুখাপেক্ষী, যে কেউ এমন আমল করল যাতে আমার সাথে অপরকে শরিক করেছে, আমি তাকে ও তার শির্ককে প্রত্যাখ্যান করি”।[1] [মুসলিম] হাদিসটি হাসান।
কুতায়বা ইবনুূু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমার উম্মতের জন্য যদি কষ্টকর মনে না করতাম তবে তাদেরকে প্রত্যেক সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।
সহিহ, ইবনুূু মাজাহ হাঃ ২৮৭, ইরউয়াউল গালিল ৭০, বুখারি হাঃ ৮৮৭ মুসলিম (ইসলামিক সেন্টার) হাঃ ৪৯৬
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেন: আমার উম্মাতের একটি দল সর্বদা আল্লাহ্র নির্দেশের উপর স্থির থাকবে। তাদের বিরোধীরা তাদের ক্ষতি করতে সক্ষম হবে না।
তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: আহমাদ ৮০৭৫, ৮২৭৯, ৮৭১১।
আবদুল্লাহ ইবনুূু জু’ফী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ঈমানের শাখা রয়েছে ষাটের কিছু বেশি। আর লজ্জা ঈমানের একটি শাখা।
হাদিসের মানঃ সহিহ
বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো গজলটি শুনে।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পূর্বানুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে এতে (কয়েকটি শাব্দিক পার্থক্য এরূপ) এসেছে খালি পা খালি গা ও কর্কশ স্বভাবের লোকেরা যখন এতে ছাগ পালকের পরিবর্তে বা ‘চতুস্পদ জন্তুর রাখাল’ এসেছে এবং এতে অতিরিক্ত এসেছে পবিত্র আয়াতের পর অর্থৎ এরপর আগন্তুক চলে গেলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লোকটিকে তোমরা অনুসরণ কর, তারা সে মতে অনুসরণ করলো, কিন্তু তারা কিছুই দেখতে পেল না। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইনি হচ্ছেন, জিব্রাইল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম), তিনি এসেছিলেন মানুষকে তাদের দ্বীন শিক্ষা দেওয়ার জন্য। (বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য)
আবূ হুরাইয়রা (রা) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঈমানের ষাটেরও বেশী শাখা রয়েছে। আর লজ্জা হচ্ছে ঈমানের একটি শাখা।
(মুসলিম ১/১২, হাঃ ৩৫, আহমাদ ৯৩৭২) (আঃপ্রঃ ৮, ইফাঃ ৮)
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেন: “তোমরা কি লক্ষ্য কর না তোমাদের রব কি বলেছেন? তিনি বলেছেন: আমি আমার বান্দাদের যখনই কোন নিয়ামত দেই, তখনই এ ব্যাপারে তাদের একটি দল অকৃতজ্ঞ (কাফের) হয়েছে। তারা বলে: নক্ষত্রই এবং নক্ষত্রের কারণে (তারা তা প্রাপ্ত হয়েছে)”। [মুসলিম ও নাসায়ি] হাদিসটি সহিহ।
দশ দুনিয়ার সমান জান্নাত দিয়ে মানুষ কি করবে? জিবরাইল (আঃ) এখন কোথায়?
0 মন্তব্যসমূহ