নিজ পরিবারবর্গকে নামাযের আদেশ দাও এবং নিজেও তাতে অবিচল থাকো।

জুমআর সালাত পড়তে এসেছি। অজুখানায় ঢুকে দেখি একটা বাচ্চা পানির কল ছেড়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভাবলাম, হয়তো পানি নিয়ে খেলা করছে। একেবারেই ছোট বাচ্চা। এই বয়সের বাচ্চারা সুন্দর কিছু দেখলে খেলায় মেতে ওঠে।

.
কিন্তু কাছে গিয়ে দেখি সে ওযু করছে! হাত ধোয়ার সময় বলছে, এক... দুই... তিন...। এভাবে তিনবার করে নিজের ছোট্ট ছোট্ট আঙুল দিয়ে হাত-পা ধৌত করছে।
.
তাকে বললাম, মাশা আল্লাহ, তুমি তো ভালোই ওযু করতে জানো দেখি!
.
আমার কথা শুনে ভাঙা ভাঙা বুলিতে সে যা বলল তা ছিল এমন—'ওযু করা এক্কেবারে সহজ। এতে আমার অসুবিধা হয় না কখনও। অসুবিধা হয় নামাজে দাঁড়াতে গেলে। ছোট বলে সবাই আমাকে পেছনের কাতারে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু আমি তো অন্যদের মতো দুষ্টুমি করি না। তখন বরং ওদের দুষ্টুমির কারণে আমিও নামাজ পড়তে পারি না ঠিকমতো।'
.
বললাম, 'তোমার আব্বুর সাথে নামাজে দাঁড়াবে। তাহলে কেউ তোমাকে পেছনে পাঠাবে না।'
.
বলল, 'আব্বু মারা গেছেন। প্রতিবেলা নামাজের সময় হলে আম্মু আমাকে মসজিদে পাঠান। আর বলে দেন, আব্বুর সাথে দেখা করতে চাইলে নামাজ পড়ে তার জন্য দুআ করো। তাহলে খুব তাড়াতাড়ি আব্বুর সাথে সুন্দর একটা জায়গায় তোমার দেখা হবে।'
.
এটি কোনো গল্প নয়, বাস্তব ঘটনা। জানি না কে সেই মহিয়সী, যিনি এমন পবিত্র ফুলের জন্ম দিয়েছেন। সালাম তাকে।
.
[আবু হাসানাত কাসিম]
.
বাচ্চাদের সাথে মসজিদে যারা দুর্ব্যবহার করে,আমি সাঈদ নিজেও তাদের ঘোরতর বিরোধী। এমন অনেক দৃশ্য সামনে এসেছিলো। গত রামাদানেই তো! তারাবিহ সলাতের সময় বাচ্চারা মসজিদে এসেছেন। জামাত শুরু হওয়ার আগে আগে, কয়েকজন বসে গল্প করতেছে,কেউ দৌড়াদৌড়ি করতেছে! এমন সময় একজন মুরুব্বি খুব রেগে গিয়ে বাচ্চাদের গালিগালাজ শুরু করে দিলেন! আমার বুঝতে একটু সময় লেগেছিলো কেন এমন আচরণ। মুরুব্বি চাচা এক বাচ্চাকে বলেই বসলো এইডা বড় হইলে চোর হইবে,মসজিসে আইসাও শয়তানি ছাড়ে না।এদের বাপ মা খা....!
.
এসব শুনে চুপ থাকা সম্ভব ছিলো না।
.
দেখুন চাচ্চু এরা প্রথমত ছোট মানুষ! এদের বর্তমান সবকিছুই মাফ। মসজিদে অনেক বাচ্চা এসেছে তাই গল্প করছে দৌড়াদৌড়ি করতেছে, যেহেতু জামা'আত শুরু হয়নি। আপনি তাদের একান্তই বলার প্রয়োজন হলে বুঝিয়ে বলুন। এভাবে ভবিষ্যৎ বানী করার কি প্রয়োজন। মুরুব্বি আবার শুরু করলেন। হুজুর আপনি জানেন না এরা কত্তবড় বদমাইস, বাচ্চার দিকে আঙ্গুল দিয়ে অইডা অইডা চোর হইবে চোর। মসজিদে আসে এমন খারাপি করতে দেখি নাই!
.
চাচ্চু দেখুন, আপনারা আমাদের মুরুব্বি! আপনি ছোট বাচ্চাদের সাথে যেই আচরণ করতেছেন, তারা কিন্তু সেটাই শিখতেছে,আজকে আপনি মসজিদে খারাপ আচরণ করবেন, আগামীকাল রাস্তায় চলার সময় আপনাকে পাথর মারতে পারে। আমরা ছোটদের মসজিদে জায়গা দিবো না, তাহলে তারা খেলার মাঠে যাবে,টিভি দেখবে আরও অন্যান্য খারাপ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়বে।
কারন, তাদেরকে আমরা মসজিদে জায়গা দেয়নি,ভালটা গ্রহন করতে পারেনি তাই খারাপটার দিকে ঝুকে গেছে, এই জেনারেশনে এমন অনেকে আছে।
.
আজকের ছোটরা আগামীর মুসল্লী। আপনি কি চান না আপনার পরের জেনারেশন মসজিদমুখী হোক?
.
আমার কথা অনেকেই শুনছিলেন, সবার উদ্দেশ্যে।
.
আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। তাকে নিয়েই একটি সোসাইটি গড়ে উঠবে। দেশ ও জাতি তার হাত ধরেই পরিচালিত হতে পারে। এজন্য শিশু সন্তানের তরবিয়তকে ইসলাম গুরুত্বারোপ করেছে। তার চেতনা বিকাশের বিষয়ে ইসলাম দিয়েছে স্পষ্ট নির্দেশনা। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবারবর্গকে রক্ষা কর সেই আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। (সুরা তাহরিম, আয়াত : ৬)
.
অন্য আয়াতের নির্দেশ হলো, …এবং নিজ পরিবারবর্গকে নামাজের আদেশ কর এবং নিজেও তাতে অবিচল থাক। (সুরা ত্বাহা, আয়াত : ১৩৩)

দুটি আয়াতের বক্তব্যের আলোকে আমরা অনুমান করতে পারি, অধীনস্থদের বিষয়ে ইসলাম কতটা স্পষ্ট নির্দেশ প্রদান করেছে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, বলেন, পিতা সন্তানকে আদব ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া থেকে উত্তম কোনো গিফট নেই। (সুনানে তিরমিযি: ১৯৪৯)
.
আরেকটি হাদিসের বক্তব্য এমন, সন্তানকে আদব ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া এক সা’ আল্লাহর রাস্তায় দান করা থেকে উত্তম। (সুনানে তিরমিযি: ২/ ১৬)
.
আর কিছু বলার প্রয়োজনবোধ করছি না। হাদিস দুটির বক্তব্য স্পষ্ট ও পরিষ্কার। সন্তানের লালন পালনে ইসলাম কতটা সংবেদনশীল, এই দুটি হাদিস থেকে স্পষ্ট ম্যাসেজ পাওয়া যায়।
.
নামাজের বিষয়ে ইসলামের নির্দেশ গুরুত্ববহ। রহমাতের নবী সাল্লাল্লাহু ওয়ালাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সাত বছর বয়স হলে শিশুকে নামাজের আদেশ দাও, দশ বছর হলে চাপ সৃষ্টি করবে, প্রয়োজনে মৃদু প্রহার করবে। (সুনানে আবু দাউদ: ১/৭০)
.
শিশুর চেতনা বিকাশে ইসলামের অবস্থান এ হাদিস থেকে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়। ইসলামি চেতনা ও রুচি-প্রকৃতি নিয়ে সন্তানের বেড়ে উঠার বিষয়ে ইসলাম সামান্যতম দুর্বলতা প্রকাশ করে নি।
.
আজকের সময়ে শিশুদের মসজিদে আসা, অথবা অভিভাবক কর্তৃক নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সন্দিহান যেন মহা অন্যায় করে ফেলেছে। হাদিসের পাতায় নজর বুলিয়ে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করছি-
.
১. কাতাদা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, মসজিদে বসে আমরা নামাজের অপেক্ষা করছিলাম। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম. তখন আপন নাতি হজরত উমামা বিনতে জয়নব [রা]কে নিয়ে আসেন। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোলে ছিলেন। তাঁকে কাঁধে নিয়ে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজের ইমামতি করেন। রুকুতে যাওয়ার সময় তাঁকে জমিনে রেখে দিতেন। সিজদা থেকে উঠে তাঁকে আবার কাঁধে নিয়ে নিতেন। (সহিহ বুখারী: ১০৪)
.
আমরা শিশুদেরকে মসজিদে নিয়ে আসতে নিষেধ করছি, বাধা প্রদান করছি। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুকে মসজিদে নিয়ে এসে, তাও আবার মেয়ে শিশুকে , একেবারে কাঁধে নিয়ে নামাজ আদায় করছেন।
.
আরেকটি হাদিস দেখুন-
.
২. আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজ পড়তেন, হাসান ও হুসাইন তখন তার পিঠে চড়ে বসতেন। মানুষ তাদেরকে সরিয়ে দিতে চাইতেন। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম. তখন বলেন, ‘তাদেরকে ছেড়ে দাও, আল্লাহর শপথ! আমাকে যে ভালোবাসার দাবী করে, সে যেন তাদেরকেও ভালোবাসে। (আহাদিসু বিশানিস সিবতাইন: ২৯৩)
.
৩. আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত, আমরা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে নামাজ আদায় করছিলাম। সিজদায় গেলে হাসান ও হুসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু তার পিঠে উঠে যেতেন। তিনি সিজদা থেকে মাথা উঠানোর সময় তাঁদেরকে হাত ধরে জমিনে নামিয়ে দিতেন। পুনরায় সিজদায় গেলে তারা উভয় পুনরায় পিঠে চড়ে বসতেন। (আশ শরিআ: ৫/ ৬১৬১)
.
আমরা শিশুদেরকে মসজিদে যেতে কোনোভাবেই যেন বাধা প্রদান না করি। তাদেরকে মসজিদে যেতে উদ্বুদ্ধ করি। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফিক দান করুন।
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
.
লেখাঃ ডা. সাঈদ (আল্লাহ্‌ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)
.
.
(Y) শেয়ার করুন, বন্ধুদের সাথে ইন শা আল্লাহ !
_
#Islamic Thinking Bangladesh (Seeking The Way To Jannah)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ