মৃত্যুর আগের সময়টার একটা নাম আছে, এটাকে বলা হয়, আল-ইহতিদার।

মৃত্যুর আগের সময়টার একটা নাম আছে, এটাকে বলা হয়, আল-ইহতিদার।

এটি মৃত্যুর একদম পূর্বপর্যায়, এ পর্যায়ে মৃত্যুর ফেরেশতা জান কবজ করতে অবতরণ করে।
.
আল্লাহ সুবহানা ওয়া আল-ইহতিদার পর্যায় সম্পর্কে পবিত্র কুর’আনে বলেন, “যখন তোমাদের কারও মৃত্যু আসে তখন আমার প্রেরিত ফেরেশতারা তার আত্মা হস্তগত করে নেয়।[সূরা আন’আমঃ৬১]।
.
.
আল-ইহতিদার পর্যায়ে যখন ফেরেশতারা অবতরণ করেন তখন মৃত্যুর দিকে অভিমুখী ব্যাক্তি তাকে দেখতে পায়।
.
আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেন, “মু’মিন ব্যাক্তি যখন দুনিয়া ত্যাগ করে এবং আখিরাতের দিকে যেতে থাকে তখন ফেরেশতারা উজ্জ্বল মুখে আসমান থেকে অবতীর্ণ হয়, তারা জান্নাত থেকে কফিন এবং সুগন্ধি নিয়ে আগমন করে তার পাশে বসে তাকে বলে, “হে পবিত্র আত্মা! আল্লাহর ক্ষমা আর সন্তুষ্টির দিকে ছুটে আস”।
এরপর মৃত্যু ফেরেশতা খুব কোমলস্বরে আত্মাকে দেহ থেকে বের হয়ে আসতে বলে এবং তার কাছে আল্লাহর ক্ষমা এবং সন্তুষ্টির প্রতিশ্রুতি দেয়।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, এইপবিত্র আত্মা খুব সহজে দেহ থেকে বের হয়ে আসবে, যেমনটা করে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।পাপীদের রূহের অবস্থা"
.
রাসূল (সঃ) বলেন, ফেরেশতারা জাহান্নাম থেকে একটি কফিন নিয়ে তার কাছে নেমে আসে। মৃত্যুর ফেরেশতা এসে তার কাছে বসে এবং বলে, "হে পাপী আত্মা! আল্লাহ্‌র ক্রোধ এবং শাস্তির দিকে বেরিয়ে এসো।"
তখন ভয়ে সেই পাপী বান্দার রূহ তার দেহের ভিতরে ছড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে এবং প্রতিটি স্নায়ু এবং মাংসপেশি আঁকড়ে ধরে টিকে থাকার চেষ্টা করবে। তা কিছুতেই বেরিয়ে আসতে চাইবেনা। মৃত্যুর ফেরেশতা এই অবাধ্য রূহকে টেনে বের করবেন।
আল্লাহর রাসূল (সঃ) বলেন, এই রূহ টেনে বের করে আনাটা এতটাই কষ্টদায়ক হবে যে, যেভাবে একটা ভেজা উলের বল থেকে একটা কাঁটাযুক্ত গাছের ডাল টেনে বের করে আনা হয়।
.
এই ভয়াবহ অবস্থা সম্পর্কে আরও একবার ভাবুন! কাঁটাযুক্ত একটা ডালকে ভেজা উলের বল থেকে বের করে আনার কথা!
মৃত্যুযন্ত্রণায় সেই ব্যক্তির এক একটি স্নায়ু এবং পেশি ছিঁড়ে আসবে। সেই রূহ বের হয়ে আসার পর ফেরেশতারা তাকে পাকড়াও করার জন্য লাফিয়ে পড়বেন। তারা তাকে আটক করে জাহান্নামের সেই কফিনে ঢুকিয়ে ফেলবেন এবং আসমানের দিকে নিয়ে যাবেন।
.
আল্লাহর রাসূল (সঃ) বলেন, সেই রূহ থেকে একটা বিশ্রী দুর্গন্ধ বের হবে এবং ফেরেশতাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তারা তাকে অভিশাপ দেয়া শুরু করবে এবং জিজ্ঞেস করবে, "এটি কার রূহ?"
তখন বাহক ফেরেশতারা তাকে নিকৃষ্টতম নামে পরিচয় দেবেন। তারপর ফেরেশতারা তাকে প্রথম আসমানে নিয়ে যাবেন এবং আরো উপরে নিয়ে যাবার জন্য অনুমতি চাইবেন। কিন্তু তাদের জন্য আসমানের দরজাগুলো খোলা হবেনা।
তখন আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলবেন, "এই রুহকে নিম্নতম যমীনে নিক্ষেপ কর" তখন আল্লাহ্‌ অপমানের সাথে সেই রুহ কে নিচে ছুঁড়ে ফেলার আদেশ দিবেন।
এরপর রুহেরা ক্ববরে ফিরে যায়।
.
এই সময়টাতে মু’মিন ব্যাক্তিরাও চিন্তিত থাকবে। তাই আল্লাহ সুবহানু ওয়া তা’আলা তাদেরকে প্রশান্তি দেবেন এবং তাদের সুসংবাদ দেবেন।
আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুর’আনে এই সুসংবাদ দিয়ে বলেনঃ
নিশ্চয় যারা বলে,আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ,অতঃপর তাতেই অবিচল থাকে,তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় এবং বলে, তোমরা ভয় করো না, চিন্তা করো না এবং তোমাদের প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ শোন। [সূরা ফুসিলাতঃ৩০]।
.
অর্থাৎ মু’মিনদের আত্মা যখন ইহতিদার পর্যায়ে থাকবে তখনই তাদেরকে মৃত্যুর ফেরেশতারা জান্নাতের সুসংবাদ দেবে। কাদেরকে ? আল্লাহ বলছেন, “যারা বলেছে আমাদের রব হচ্ছে আল্লাহ”, এবং এরপরে যারা এই কথার উপর দৃঢ় ছিল।
অর্থাৎ, এরা হল সেই সব লোক,যারা আল্লাহকে রব হিসেবে স্বীকার করেছে, দ্বীনের সরল পথ বাদ দিয়ে বামে-ডানের বক্রপথে চলার অপচেষ্টা করেনি,মসজিদে একদিন আর বাইরে ৬ দিন, নাইটক্লাবে একদিন আর ইতি’কাফে পরের দিন, রোযা রেখে একদিন আর বাকিদিন মদ খেয়ে কাটিয়েছে –এমনটি যারা করে নাই।
আর যারা ছিল পাপাচারী, আল্লাহ তাদের ব্যাপারে বলেনঃ
“আর যদি তুমি দেখ,যখন ফেরেশতারা কাফেরদের জান কবজ করে; প্রহার করে তাদের মুখে এবং তাদের পশ্চাদদেশে আর বলে,জ্বলন্ত আযাবের স্বাদ গ্রহণ কর। এই হলো সে সবের বিনিময় যা তোমরা তোমাদের পূর্বে পাঠিয়েছ নিজের হাতে। বস্তুতঃ এটি এ জন্য যে,আল্লাহ বান্দার উপর যুলুম করেন না। [সূরা আনফাল:৫১]
(collected)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ