ফতোয়া: ব্যবসা-চাকুরী

ফতোয়া নং: ৬৭১৯
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

আমার সরিষার তেলের একটা ফ্যাক্টরী আছে। আমি প্রতিযোগিতায় অন্য সরিষার...

প্রশ্ন
আমার সরিষার তেলের একটা ফ্যাক্টরী আছে। আমি প্রতিযোগিতায় অন্য সরিষার তেলের ফ্যাক্টরীর সাথে পাল্লা দিয়ে পারছি না। কারণ, তারা সরিষার তেলের সাথে পামঅয়েল, সয়াবিন ও রাইজ ব্রান্ড তেল মিক্স করে এবং কম দামে বিক্রি করে। আমার চেয়ে প্রতি টিনে (১৬ কেজি) একশত টাকা কমে বিক্রি করে। (উল্লেখ্য যে, তারা তেলের সাথে তেলই মিক্স করছে; তা অখাদ্য নয় এবং স্বাস্থ্যের জন্য কোন ক্ষতিকর নয়।) তাই আমার ফ্যাক্টরী বন্ধের দিকে চলে যাচ্ছে। তারপরও চালু রেখেছি । এখন আর চালু রাখতে পারছি না। গত আগস্ট মাসে আমার প্রায় সাতাইশ লক্ষ টাকা লোকসান হয়েছে। আমি আশঙ্কা করছি, এই মাসে আমাদের এই ফ্যাক্টরীতে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ টাকা লোকসান হবে।
অতএব, মুফতী সাহেবের কাছে জানার বিষয় হল, আমিও সরিষার তেলের সাথে পামঅয়েল, সোয়াবিন ও রাইজ ব্রান্ড তেল মিক্স করে কমদামে বিক্রি করে বাজারে অন্যদের সাথে টিকে থাকতে পারি কি? অন্যথায় ফ্যাক্টরী টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না । ইসলামী আইনে এর সঠিক সমাধান কী? তা জানতে চাই।
উত্তর
ইসলামে আমানতদারী, সততা ও সত্যবাদীতার গুরুত্ব অনেক বেশী। ব্যবসা-বানিজ্যের ক্ষেত্রেও বিশেষভাবে এগুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এসব গুণাবলীর সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করা অধিক বরকতের কারণ। আর পরকালেও রয়েছে এর বড় পুরস্কার। পক্ষান্তরে ব্যবসায় মিথ্যা, ধোঁকা, খেয়ানত ইত্যাদির আশ্রয় নেওয়া শরীয়তের দৃষ্টিতে যেমন নাজায়েয ও হারাম তেমনি দুনিয়াতেও এগুলো তাদের জন্য অনেক অকল্যাণ ও বেবরকতির কারণ।
দ্বিতীয়তঃ শরীয়তের বিধান অনুযায়ী ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে পণ্য ও মূল্য উভয়টি সুনির্ধারিত হওয়া জরুরী। এবং ক্রেতার সাথে যে নাম ও গুণগত মানের পণ্য বিক্রির কথা হবে কিংবা পণ্যের গায়ে বিক্রেতা পণ্যের যে নাম ও গুণগত মান লিখে দিবে ক্রেতাকে পুরোপুরি ঐ মানের পণ্যই দেওয়া জরুরী। এক্ষেত্রে বিক্রেতা যদি বর্ণিত বা ঘোষিত পণ্য না দেয়, অথবা তাতে মিশ্রণ করে কিংবা যা বলেছে তার থেকে নি¤œমানের পণ্য দেয় তবে তা সম্পূর্ণ নাজায়েয হবে।
সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ক্রেতাদেরকে সরিষার তেল বলে কিংবা তেলের টিন বা বোতলের গায়ে ‘সরিষার তেল’লিখে বিক্রি করতে চাইলে খাঁটি সরিষার তেলই দিতে হবে। সরিষার তেলের সাথে পামওয়েল বা সয়াবিন ইত্যাদি মিশিয়ে সরিষার তেল হিসাবে তা বিক্রি করা জায়েয হবে না। এই মিশ্রণের কারণে স্বাস্থ্যগতভাবে তা ক্ষতিকর না হলেও এবং মূল্য কিছু কম নিলেও সরিষার তেল বলে তা বিক্রি করা যবে না। কেননা এর দ্বারা অন্য তেল মিশানোর বিষয়টি ক্রেতা থেকে গোপন করা হয়। যা ধোঁকা ও মিথ্যার অন্তর্ভুক্ত। তাই সরিষার তেলের সাথে পামঅয়েল ইত্যাদি মিশালে ক্রেতাকে বিষয়টি জানিয়ে বিক্রি করতে হবে। ক্রেতাকে জানিয়ে বিক্রি করলে অন্যায় হবে না । কিন্তু অন্য তেল মিশানোর বিষয়টি না জানিয়ে সরিষার তেল বলে বিক্রি করা জায়েয হবে না। এটি ক্রেতার সাথে প্রতারণার অন্তর্ভুক্ত। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ও ধমকি এসেছে।
উকবা ইবনে আমির রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মুসলমান মুসলমানের ভাই। কোন মুসলমানের জন্য পণ্যে ত্রæটি থাকা সত্তে¡ও তা উল্লে­খ না করে আরেকজনের কাছে বিক্রি করা জায়েয নয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২২৪৬) আরেক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ক্রয়-বিক্রয় লেনদেনে উভয় পক্ষ যদি সত্যবাদী হয় এবং (দোষ-ত্রুটি) কোন কিছু গোপন না করে স্পষ্ট সবকিছু বলে দেয় তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয় বরকতপূর্ণ হবে। কিন্তু তারা যদি মিথ্যা বলে এবং (দোষ-ত্রুটি) গোপন করে তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয় থেকে বরকত উঠিয়ে নেওয়া হবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ২১১০) আরেক হাদীসে আছে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, একব্যক্তি খাদ্যপণ্য সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ পণ্যের নিকট দিয়ে অতিক্রম করেন এবং তাতে হাত ঢুকালেন। তিনি দেখতে পেলেন, ভেতরের পণ্য নিম্নমানের। তখন তিনি বললেন, এটা পৃথকভাবে বিক্রি কর আর ওটা পৃথকভাবে বিক্রি কর। কেননা যে আমাদের সাথে প্রতারণা করে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। (মুসনাদে আহমাদ,হাদীস ৫১১৩)
মোটকথা, এখানে পদ্ধতি দু’টি : যদি সরিষার তেল বলেই বিক্রি করতে চান তবে ক্রেতাকে খাঁটি সরিষার তেলই দিতে হবে। এর সাথে অন্য তেল মিশানো যাবে না। আর যদি অন্য তেল মিশিয়ে বিক্রি করতে চান তাহলে বিক্রির সময়েই ক্রেতাকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া জরুরী।
উল্লেখ্য, ব্যবসায় লোকসান থেকে বাঁচার জন্য চিন্তা-ভাবনা করে জায়েয কোনো পন্থা বের করতে হবে। যেমন,ক্রেতাদেরকে আপনারা যদি বুঝাতে পারেন যে আপনাদের পণ্য বাস্তবেই খাঁটি; এর সাথে অন্য তেল মিশানো হয় না, তাহলে ক্রেতাগণ কিছুটা বেশি মূল্য দিয়েও তা ক্রয় করতে আগ্রহী হবে। আর ব্যবসায় লোকসানের অজুহাতে শরীয়ত নিষিদ্ধ কোনো পথ অবলম্বন করার কোন সুযোগ নেই।
-আলমুহীতুল বুরহানী ১০/৫০১; আল বাহরুর রায়েক ৬/৩৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১০০; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৪৭; আল মাজমূ শরহুল মুহাযযাব ১২/১১৫
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৭১৬
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

(ক) গরীব মানুষের জমির ফসলে ওশর/খারাজ ওয়াজিব হবে কি না?(খ)...

প্রশ্ন
(ক) গরীব মানুষের জমির ফসলে ওশর/খারাজ ওয়াজিব হবে কি না?
(খ) বিভিন্ন এলাকায় প্রথা আছে যে, গরুর শরীরে পোকা লাগলে ৭জন সুদখোরের নাম লিখে তাবিজ বেঁধে দিলে পোকা বের হয়ে যায়। ঠিক ঐ রকম আরেকটা প্রথা আছে যে, হাপানি রোগ থেকে নিরাময়ের জন্য গলায় ফাঁসি দিয়ে মারা যাওয়া মানুষের গলার সাথে ফাঁসির দড়ির যে অংশটুকু লাগে সেই দড়ির অংশ দিয়ে তাবিয বানানো হয়। এ ধরনের কাজকর্ম কুফর-শিরক হবে কি না? বা এ রকম কাজ শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু সঠিক আর কতটুকু বেঠিক?
উত্তর
ক) দরিদ্র ব্যক্তির জমিও উশরি বা খারাজি হলে ঐ জমির ফসলের উপর উশর/খারাজ আসবে। উশর এবং খারাজের বিধান উৎপাদিত ফসল ও জমির সাথে সম্পর্কযুক্ত। এক্ষেত্রে জমির মালিক ধনী না গরীব তা লক্ষ্যণীয় নয়। এ কারণেই উশর, খারাজ নাবালেগ এবং ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির জমির উপরও ওয়াজিব হয়। কিতাবুল আছল ২/১৩৪;মাবসূত সারাখসী ৩/৪
খ) প্রশ্নোক্ত প্রথাটি সম্পূর্ণ কুসংস্কার ও অলীক ধারণার অন্তর্ভুক্ত। শরীয়তের বৈধ তাবিজ ও তদবীরের সাথে এসবের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই এ থেকে বিরত থাকা উচিত। প্রাণীর রোগ-বালাই হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। -মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ১৯/৬৪; শরহুন নববী আলা মুসলিম ১৪/১৮৩; আকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ৪/৩১৭
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬৯৬
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

আগাম বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রেতার জন্য বিক্রেতা থেকে চুক্তিকৃত পণ্য আদায়...

প্রশ্ন
আগাম বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রেতার জন্য বিক্রেতা থেকে চুক্তিকৃত পণ্য আদায় করা পর্যন্ত কোনো কিছু বন্ধক রাখা জায়েয হবে কি?
উত্তর
আগাম বিক্রির ক্ষেত্রে বিক্রেতা থেকে কোনো কিছু বন্ধক রাখা জায়েয আছে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা., আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা., ইবরাহীম নাখায়ী রাহ., শাবী রাহ., প্রমুখ সাহাবা-তাবেয়ী থেকে বর্ণিত আছে, তাঁরা বলেন, আগাম বিক্রিতে বিক্রেতা থেকে বন্ধক নিলে তাতে কোনো অসুবিধা নেই। Ñমুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ১৪০৮৬, ১৪০৮৭, ১৪০৯০; কিতাবুল আসার, হাদীস ৭৪২; সুনানে কুবরা বাইহাকী ৬/১৯
তবে ক্রেতার জন্য ঐ বন্ধক থেকে কোনোভাবে উপকৃত হওয়া বৈধ হবে না।Ñকিতাবুল আছল ২/৩৮৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৪৪৯; শরহুল মাজাল্লাহ ৩/২১২; রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬৮৮
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

যদি কোনো ব্যক্তি ঘুষ দিয়ে চাকরি নেয় তাহলে সে চাকরি...

প্রশ্ন
যদি কোনো ব্যক্তি ঘুষ দিয়ে চাকরি নেয় তাহলে সে চাকরি থেকে যে বেতন পাবে তা তার জন্য হালাল হবে না কি হারাম? কুরআন হাদীস দ্বারা সমাধান দিলে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর
ঘুষ দেওয়া-নেওয়া হারাম। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুষদাতা ও গ্রহিতাকে অভিসম্পাত করেছেন। Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ১৩৩৭
তাই ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়া জায়েয হবে না। এতে একদিকে ঘুষ প্রদানের কবীরা গুনাহ হয়,অন্যদিকে ঘুষদাতা অযোগ্য হলে অন্য চাকরিপ্রার্থীর হক নষ্ট করারও গুনাহ হয়। তাই এমন কাজ থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।
অবশ্য কেউ যদি প্রকৃতপক্ষে চাকরির যোগ্য হয় এবং ঘুষ প্রদান হারাম হওয়া সত্তে¡ও ঘুষ দিয়ে চাকরি নেয় আর পরবর্তীতে সে যথাযথভাবে দায়িত্ব আঞ্জাম দেয় তাহলে এভাবে চাকরি নেওয়া নাজায়েয হলেও বেতন হালাল হয়ে যাবে। কিন্তু যদি সে তার কর্মক্ষেত্রের অযোগ্য হয় এবং যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় তাহলে তার জন্য ঐ চাকরিতে থাকা বৈধ হবে না। আর ঠিকমত দায়িত্ব পালন না করে বেতন নেওয়াও বৈধ হবে না।
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬৭০
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

আমাদের প্রিন্টিং প্রেসে ক্রেতাদের সাথে এভাবে লেনদেন হয়ে থাকে যে,...

প্রশ্ন
আমাদের প্রিন্টিং প্রেসে ক্রেতাদের সাথে এভাবে লেনদেন হয়ে থাকে যে, যখন তারা কোনো বই-পুস্তক, ড য়েরী, পোস্টার ইত্যাদি ছাপাতে চায় তখন তাদেরকে ভালো কোয়ালিটির কাগজও বাইন্ডিং হিসাবে দাম বলা হয়। যদি তারা ঐ দামের সাথে সন্তুষ্ট না হয় বরং এর চেয়ে অনেক কম দামে দিতে চায় তখন আমরা কম দামে পণ্য বানিয়ে দেই। কিন্তু দাম হিসাবে পণ্যের মান কমিয়ে দেই। অনেক সময় নমুনা দেখিয়ে দরদাম ঠিক করা হয়। যদি তারা ঐ নমুনার ন্যায্য দামের সাথে সন্তুষ্ট না হয় এবং তারা যে দাম বলে ঐ দামে ঐ কোয়ালিটির পণ্য বানিয়ে দেওয়া যদি সম্ভব না হয় তখন আমরা তাদেরকে ঐ দামে ঐ কোয়ালিটির পণ্য বানিয়ে দিতে সম্মত হই। কিন্তু পরে সূ²ভাবে কাগজ ও বাইন্ডিং এর মান কমিয়ে দেই, যা ক্রেতারা বুঝতে পারে না। তবে দাম হিসেবে পণ্যের মান কম হয় না।
উল্লেখ্য যে, এভাবেই প্রিন্টিং প্রেসগুলোতে লেনদেন হয়ে থাকে তাই আমরাও এভাবে করতে বাধ্য হই। অন্যথায় ক্রেতা ধরে রাখা এবং ব্যবসার মান ঠিক রাখা সম্ভব হবে না। প্রায় সময় লস দিতে হবে। জানার বিষয় হল, আমাদের এভাবে কারবার করা সহীহ হচ্ছে কি না?
উত্তর
ক্রেতার সাথে যে মানের কাগজ, ছাপা এবং বাঁধাইয়ের চুক্তি হবে প্রেস কর্তৃপক্ষের জন্য ঐ মানেরই বই, ডায়েরী ইত্যাদি দেওয়া জরুরি। তদ্রূপ কোনো নির্দিষ্ট নমুনার উপর চুক্তি হলে তার চেয়ে নিম্ন মানের পণ্য দেওয়া জায়েয হবে না।
ক্রেতা মূল্য কম দিতে চাইলে তাকে সুস্পষ্ট জানিয়ে দিতে হবে যে, এই মূল্য দিয়ে উক্ত মানের কাগজ বা বই দেওয়া যাবে না।
মোটকথা, ক্রেতাকে চুক্তি অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী পণ্য না দেওয়া এবং ক্রেতাকে বাস্তব কথা না বলে ভালো দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিম্ন মানের দেওয়া ধোঁকা ও মিথ্যার শামিল। খরিদ্দার ধরে রাখার স্বার্থেও এমন মিথ্যা বলা জায়েয নেই। এতে ব্যবসার বরকত নষ্ট হয়ে যায়।
অতএব সততা ও স্বচ্ছতা বজায় রেখেই ব্যবসা করতে হবে এবং নিজেদের স্বচ্ছতার কথা সুন্দরভাবে উপস্থাপনার মাধ্যমে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। সততা ও স্বচ্ছতার মধ্যেই আল্লাহ তাআলা বরকত রেখেছেন। সত্য ও আমানতদার ব্যবসায়ীদের জন্য হাদীসে সুসংবাদ এসেছে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (তরজমা) ... যদি ক্রেতা এবং বিক্রেতা সত্য বলে এবং সবকিছু স্পষ্ট করে (লেনদেন করে) তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে। আর যদি গোপন রেখে (লেনদেন করে) এবং মিথ্যা বলে তাহলে এতে তাদের ব্যবসায় বরকত থাকবে না। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২১১৪
আরেক হাদীসে এসেছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সত্য ও আমানতদার মুসলিম ব্যবসায়ী কেয়ামতের দিন শহীদদের সাথে থাকবে।
-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২১৩৯; সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৫/২৬৬; আলমওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ কুয়াইতিয়্যাহ ১৯/৩২;
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬৬৯
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

আমাদের পড়শী এক বড় ভাই বিদেশ থাকেন। তিনি বলেছেন, আমি...

প্রশ্ন
আমাদের পড়শী এক বড় ভাই বিদেশ থাকেন। তিনি বলেছেন, আমি যদি কোনো ব্যবসা করতে চাই তাহলে তিনি টাকা দিতে প্রস্তুত আছেন। সে মতে আমি তাকে জানালাম, আমি বইয়ের ব্যবসা করতে চাই। তিনি টাকা দিবেন আর আমি শ্রম দিব। কথা হল যে, মুদারাবার ভিত্তিতেই আমাদের ব্যবসা হবে। তাকে লাভের ৩০% দিব।
অতপর আমি বইয়ের ব্যবসার জন্য একটি দোকান ভাড়া নেই এবং আমার সাথে দুজন কর্মচারী নিয়োগ করি। এখন আমার প্রশ্ন হল,
ক) ব্যবসার জন্য দোকান ভাড়া, দুইজন কর্মচারীর বেতন কি ব্যবসার খরচ হিসেবে ধরা যাবে? এবং মুদারাবার মাল থেকে নেওয়া যাবে কি?
খ) ব্যবসার পরিচিতির জন্য কোনো বিজ্ঞাপণ দিতে চাইলে সেটার খরচ কি মুদারাবার মাল থেকে নিতে পারব?
উত্তর
ব্যবসার জন্য দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন এবং ব্যবসার প্রচারের উদ্দেশ্যে প্রচলন অনুযায়ী বিজ্ঞাপনের ব্যয় ব্যবসার খরচের অন্তর্ভুক্ত হবে। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি মুদারাবার মাল থেকে এগুলো খরচ করতে পারবেন। তবে এ ব্যাপারে বিনিয়োগকারীর সাথে আলোচনা করে নেওয়া উচিত।
-আলইখতিয়ার ২/৪৬৮; আলবাহরুর রায়েক ৭/২৬৪; রদ্দুল মুহতার ৫/৬৪৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/৪৪৮
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৬০০
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

আমাদের এলাকায় বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক সংগঠন আছে। যারা সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক...

প্রশ্ন
আমাদের এলাকায় বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক সংগঠন আছে। যারা সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের পাশাপাশি মানুষকে ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করে। তাদের ঋণ দেওয়ার নিয়ম হল, তারা ঋণের পরিমাণ হিসাবে বিভিন্ন ধরনের ফরম বানিয়েছে। ঋণের পরিমাণ বাড়লে ফরমের মূল্যও বাড়ে। কেউ ঋণ নিতে চাইলে ঋণের পরিমাণ হিসেবে ফরম কিনে চুক্তি করতে হয়।
উল্লেখ্য যে, ফরমের মূল্য খরচের চেয়ে অধিক রাখা হয় এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে পুনরায় ফরম কিনে নতুনভাবে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য চুক্তি করতে হয়। এ পদ্ধতিতে ঋণ দেওয়া নেওয়া সহীহ কি না? জানালে উপকৃত হব।
উত্তর
ঋণ প্রদান করে ফরম বিক্রির নামে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও সুদের অন্তর্ভুক্ত। প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে ঋণের পরিমাণ হিসেবে ফরমের দাম বেশি নেওয়া এবং সময় মতো পরিশোধ করতে না পারলে পুনরায় ফরম কিনে নতুনভাবে চুক্তি করার মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া সুদ খাওয়ার একটি অপকৌশল। লোকে যাতে এটিকে সুদ না বলে এজন্যই ফরম বিক্রির উক্ত ছুতা অবলম্বন করা হয়েছে। অতএব হিলা-বাহানা করে সুদ গ্রহণের পদ্ধতি বন্ধ করতে হবে এবং আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা করতে হবে। আর বিগত দিনে এভাবে যাদের থেকে ফরমের খরচ মূল্যের অতিরিক্ত নেওয়া হয়েছে তাদরকে অতিরিক্ত সকল টাকা ফেরত দিতে হবে।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২১০০৭; আননুতাফ ফিলফাতাওয়া ২৯৬; বাদায়েউস সানায়ে ৬/৫১৮; ইলাউস সুনান ১৪/৫১৪;; শরহুল মাজাল্লাহ ১/২৬৪-২৬৫
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৯৭
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

সুদি ব্যাংক থেকে যে বৃত্তি দেওয়া হয় তা নেওয়া কি...

প্রশ্ন
সুদি ব্যাংক থেকে যে বৃত্তি দেওয়া হয় তা নেওয়া কি জায়েয?
উত্তর
সুদি ব্যাংক থেকে প্রদত্ত বৃত্তি নেওয়া জায়েয নয়। কারণ ব্যাংকগুলোর অধিকাংশ আয় সুদ। তাই তাদের বৃত্তির মাঝে সুদের আশঙ্কাই বেশি। অতএব এ টাকা যে নামেই দেওয়া হোক তা গ্রহণ করা জায়েয হবে না।
-রদ্দুল মুহতার ২/২৯২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/১৭৪
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৯৬
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

আমার ভাতিজাকে এক সিএনজির মালিক বলেছে, তোমাকে আমি একটি সিএনজি...

প্রশ্ন
আমার ভাতিজাকে এক সিএনজির মালিক বলেছে, তোমাকে আমি একটি সিএনজি দিব। দিনপ্রতি তুমি আমাকে ৮০০/- টাকা দিবে। সিএনজির কোনো সমস্যা হলে সেটা আমি দেখব। আর তুমি চাইলে চুক্তিটা এভাবেও করতে পার যে, প্রতিদিন তুমি আমাকে ৬০০/- টাকা দিবে আর ছোটখাটো কোনো সমস্যা হলে সেটা তুমি দেখবে আর বড় কোনো সমস্যা হলে আমি দেখব। তোমার ইচ্ছা দুই চুক্তির যে কোনোটি আমার সাথে করতে পার। প্রশ্ন হল, আমার ভাতিজা সিএনজিটি ভাড়া নিতে চাচ্ছে। এখন কোন চুক্তিটি করা তার জন্য বৈধ হবে?
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ভাড়া চুক্তির প্রথমটি শরীয়তসম্মত। তা অবলম্বন করতে পারেন। কেননা এক্ষেত্রে গাড়ির মেরামতের দায়িত্ব মালিকের উপর রাখা হয়েছে। তবে হাঁ, চালকের অবহেলা বা ত্রুটির কারণে গাড়ির কোনো সমস্যা হলে তা চালককেই ঠিক করতে হবে। এ খরচ মালিকের উপর চাপানো যাবে না। আর ভাড়া চুক্তির দ্বিতীয় প্রস্তাবটি শরীয়তসম্মত নয়। কেননা এক্ষেত্রে গাড়ির স্বাভাবিক ও ছোটখাটো সমস্যা ঠিক করার দায়ভার চালকের উপর চাপানো হয়েছে। অথচ চালকের ত্রুটির কারণে ক্ষতি না হলে ছোট বড় সকল মেরামত খরচ মালিকের দায়িত্বে।
-মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ : ৪৯৪; শরহুল মাজাল্লাহ ২/৫৮৩; কিতাবুল আছল ৪/৪১; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৮/২০-২১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪১৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৫০
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৯৫
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

আমি নিজ তহবিল থেকে মুনাফার জন্য বিশ্বস্ত লোকদেরকে ঋণ প্রদান...

প্রশ্ন
আমি নিজ তহবিল থেকে মুনাফার জন্য বিশ্বস্ত লোকদেরকে ঋণ প্রদান করে থাকি। ঋণগ্রহীতাকে নগদ টাকা না দিয়ে আলোচনা সাপেক্ষে কোনো পণ্য (ধান, চাল, আটা ইত্যাদি পণ্য বস্তা হিসেবে) কিনে মূল্য পুনঃনির্ধারণ করে নির্দিষ্ট মেয়াদে কিস্তিতে অথবা মেয়াদান্তে সকল টাকা পরিশোধের শর্তে পণ্য প্রদান করে থাকি। উক্ত গ্রহীতার পণ্যের প্রয়োজন না থাকলে তিনি পণ্য পুনরায় বিক্রি করে দিতে পারেন।
উদাহরণস্বরূপ, ঋণ গ্রহীতার সাথে চুক্তি হওয়ার পর আমি তাকে নিয়ে বাজারে কোনো পাইকারি দোকানে গিয়ে বর্তমান বাজারদরে ১,০০,০০০/- টাকার চাল ক্রয় করি। অতপর তা ১,২০,০০০/- টাকা মূল্য নির্ধারণ করে ঋণগ্রহীতাকে প্রদান করি। ঋণ গ্রহীতা স্বস্থানে রেখেই পণ্যগুলো বাজারদর (১,০০,০০০/-) থেকে সামান্য কমবেশি (বস্তা প্রতি ১/২ টাকা) করে দোকানির নিকট বিক্রি করে দেন। উল্লেখ্য যে, এ পদ্ধতিতে একই পণ্য তিনবার বিক্রি করা হচ্ছে এবং সর্বাবস্থায় পণ্য স্বস্থানে থাকছে। তবে পণ্য চিহ্নিত করা হয়।
জানার বিষয় হল,উপরোক্ত পদ্ধতিতে বিনিয়োগ প্রদান করা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ কি না?
উত্তর
প্রশ্নোক্ত পদ্ধতির লেনদেনের সাথে জড়িত সকলের নিকট একথা স্পষ্ট যে, এখানে তাদের কারোই পণ্য আদান-প্রদান ও ক্রয়বিক্রয় উদ্দেশ্য নয়। এক পক্ষ টাকার বিনিময়ে অতিরিক্ত গ্রহণের জন্য ক্রয়-বিক্রয়ের ছুতা অবলম্বন করেছে। আর অন্য পক্ষ নগদ টাকার জন্য বাধ্য হয়ে তা গ্রহণ করছে। এক্ষেত্রে দুই তিন হাত বদল হলেও পণ্য যার কাছে ছিল তার কাছেই থেকে যাচ্ছে। যা শরীয়ত নিষিদ্ধ বাইয়ে ঈনার অন্তর্ভুক্ত। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
সুতরাং প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে লেনদেন করা সম্পূর্ণ নাজায়েয।
উল্লেখ্য যে, আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য হালাল উপার্জনের অনেক পথ খোলা রেখেছেন। সুতরাং মুসলমানের কর্তব্য হল, হিলা-বাহানা করে শরীয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ পথে না চলে উপার্জনের হালাল পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করা।
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৪৬২; ইলাউস সুনান ১৪/১৭৮; আননিহায়া ফী গারীবিল হাদীস ৩/৩৩৪
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৯৪
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

আমাদের এলাকার সাধারণ লোকজন ব্যাপকভাবে সুপারিতে আগাম চুক্তির লেনদেন করে...

প্রশ্ন
আমাদের এলাকার সাধারণ লোকজন ব্যাপকভাবে সুপারিতে আগাম চুক্তির লেনদেন করে থাকে। অর্থাৎ মৌসুমের আগে ক্রেতা বিক্রেতাকে কিছু টাকা দিয়ে বলে যে, ১০ মাস পরে আমাকে এত পরিমাণ সুপারি দিবেন। আর সুপারি সাধারণত সব সমান হয় না। বরং তা ছোটবড় অনেক ধরনের হয়ে থাকে। ছোটবড় হওয়ার কারণে মূল্যের মাঝেও তারতম্য হয়। আর আমি জানি যে, যেসব পণ্য গণনা করে বিক্রি করা হয় তা যদি পরস্পরে ছোটবড় হওয়ার কারণে তার মূল্যেও তারতম্য হয় তাহলে তাতে আগাম বিক্রি সহীহ হয় না। তাহলে সুপারির মধ্যেও কি আগাম বিক্রি সহীহ হবে না?
উল্লেখ্য, সুপারি গণনা করেই বিক্রি করা হয়।
উত্তর
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী সুপারি ছোটবড় হওয়ার কারণে যেহেতু তার মূল্যের মধ্যেও তারতম্য হয়ে থাকে তাই এক্ষেত্রে ছোটবড় কোন ধরনের এবং কোন মানের সুপারি দিবে তা চুক্তির সময়ই নির্ধারণ করে নিতে হবে। তাহলে প্রশ্নোক্ত লেনদেনটি সহীহ হবে। কিন্তু যদি সুপারির মান ও ধরন উল্লেখ করা না হয় তাহলে এ চুক্তি সহীহ হবে না। কারণ আগাম ক্রয় চুক্তিতে পণ্যের গুণগত মান একেবারে স্পষ্ট হওয়া শর্ত। যেন পরবর্তীতে পণ্য আদান-প্রদানের সময় এ নিয়ে কোনো বিবাদের আশঙ্কা না থাকে।
-ফাতহুল কাদীর ৬/২০৮, ৬/২২১; আলবাহরুর রায়েক ৬/১৫৬, ১৬০; আদ্দুররুল মুখতার ৫/২১১; শরহুল মাজাল্লাহ ২/৩৮৯
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৭০
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

আমি এক ব্যক্তি থেকে একটি অফসেট মেশিন ১০ বছরের জন্য...

প্রশ্ন
আমি এক ব্যক্তি থেকে একটি অফসেট মেশিন ১০ বছরের জন্য এই চুক্তিতে ভাড়া নিয়েছি যে, মেশিনটি আমার রিস্কে থাকবে। মেশিন নষ্ট হলে বা মেশিনের কোনো জিনিস পরিবর্তন করতে হলে তার খরচ আমি বহন করব এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা মেশিনের ভাড়া দিব।
আমার আরো একটি অফসেট মেশিনের সাথে ঐ মেশিনটি তৃতীয় ব্যক্তিকে ১০ বছরের জন্য এই চুক্তিতে ভাড়া দিতে চাচ্ছি যে, সে প্রতি মাসে আমাকে ৬০ হাজার টাকা মেশিনের ভাড়া দিবে। কোনো সময় মেশিন নষ্ট হলে ঠিক হওয়া পর্যন্ত ভাড়া মওকুফ থাকবে এবং মেশিন ঠিক করতে হলে বা মেশিনের কোনো জিনিস পরিবর্তন করতে হলে তার খরচ আমাকেই বহন করতে হবে।
তাই জানার বিষয় হল, উপরে উল্লেখিত নিয়মে মেশিন ভাড়া নেওয়া এবং তৃতীয় পক্ষকে ভাড়া দেওয়া জায়েয হবে কি না? জানালে উপকৃত হব।
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ভাড়া গ্রহীতার উপর মেশিনের রিস্ক থাকা এবং মেশিন নষ্ট হলে বা মেশিনের কোনো জিনিস পরিবর্তন করতে হলে তা ভাড়া গ্রহীতার খরচে ঠিক করার শর্ত করা শরীয়তসম্মত হয়নি। ভাড়ার ক্ষেত্রে নিয়ম হল, ভাড়াকৃত বস্তুর হেফাযতের দায়িত্ব ভাড়া গ্রহীতার থাকবে। কিন্তু এর রিস্ক এবং এর মেরামত বা যন্ত্রাংশ ক্রয় ও সার্ভিসিং খরচ মালিককেই বহন করতে হবে। হ্যাঁ,ভাড়া গ্রহীতার অবহেলা বা ত্রুটির কারণে কোনো খরচ হলে তা ভাড়া গ্রহীতাকে বহন করতে হবে। এছাড়া কোনো মেরামত খরচ ভাড়া গ্রহীতার উপর চাপানো যাবে না।
তাই এখন আপনাদের কর্তব্য হল, পূর্বের চুক্তি বাতিল করে দিয়ে নতুনভাবে সঠিক নিয়মে চুক্তি করা। শরীয়তসম্মতভাবে চুক্তিটি নবায়ন করে নিলে ঐ মেশিনটির সাথে নিজের মেশিনটি প্রশ্নে বর্ণিত উপায়ে তৃতীয় ব্যক্তির নিকট ভাড়া দেওয়া জায়েয হবে।
-আলমওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ কুয়াইতিয়্যাহ ২৮/৬০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৩৯, ৪/৪৪২; আলবাহরুর রায়েক ৮/৩০; শরহুল মাজাল্লাহ ১/৭০৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/৫৫; কিতাবুল আছল ৩/৪৬৩; শরহুল মাজাল্লাহ ২/২৮৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১১৮; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২৬৮; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৫/৫৬
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৬৮
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

আমি একটি বাড়ির ২টি ফ্লোর ৩ বছর মেয়াদে বন্ধক নিয়ে...

প্রশ্ন
আমি একটি বাড়ির ২টি ফ্লোর ৩ বছর মেয়াদে বন্ধক নিয়ে বাড়ির মালিককে ৪০ লক্ষ টাকা প্রদান করতে চাই। বিনিময়ে ২ ফ্লোরের ভাড়া নিয়ে আমি লাভবান হব। মেয়াদ শেষে আমি সম্পূর্ণ টাকা ফেরত পাব। এখন আমি জানতে পারলাম যে, উল্লেখিত লেনদেনটি নাজায়েয। এখন আমার জানার বিষয় হল, আমাদের এই লেনদেনটি সহীহ করার কোনো পদ্ধতি আছে কি? জানালে উপকৃত হব।
উত্তর
প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে লেনদেন করা সম্পূর্ণ নাজায়েয। কেননা ঋণ দিয়ে বিনিময়ে গ্রহীতা থেকে কোনো প্রকার উপকার গ্রহণ করা সুদের অন্তর্ভুক্ত। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতা থেকে ঋণের বিপরীতে দুটি ফ্লোর বন্ধক নিয়ে তা থেকে উপকৃত হওয়া আপনার জন্য কোনোক্রমেই জায়েয হবে না।
এক্ষেত্রে বৈধভাবে লেনদেন করতে চাইলে ঋণ ও বন্ধকী চুক্তি না করে শুরু থেকেই ভাড়া চুক্তি করতে পারেন। অর্থাৎ ফ্লোর দুটি আপনি দীর্ঘ মেয়াদের জন্য ভাড়া নিবেন এবং সমুদয় ভাড়া এককালীন অগ্রিম পরিশোধ করে দিবেন। আর দীর্ঘ মেয়াদের জন্য ভাড়া নিলে পারস্পরিক সম্মতিক্রমে স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে কিছুটা কমেও চুক্তি করতে পারবেন। উল্লেখিত চুক্তিতে ফ্লোর দুটির মালিক অগ্রিম যে টাকা গ্রহণ করবে তা যেহেতু ভাড়া হিসেবে নিবে তাই ঐ টাকা সে নিজ কাজে লাগাতে পারবে। আর আপনিও অপেক্ষাকৃত কম ভাড়ায় ফ্লোর দুটিতে বসবাস করতে পারবেন কিংবা ফ্লোর দুটিতে উন্নয়নমূলক কোনো কাজ (যেমন টাইলস ফিটিংস, ডেকোরেশন ইত্যাদি) করে তা অন্যের নিকট অধিক টাকায় ভাড়া দিতে পারবেন।
অবশ্য পরবর্তীতে কখনো ভাড়া চুক্তি বাতিল হলে ভাড়াদাতার জন্য হিসাব করে অবশিষ্ট মাসসমূহের অগ্রিম ভাড়া ভাড়াগ্রহীতাকে ফিরিয়ে দেওয়া আবশ্যক হবে।
-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ১৫০৭১; বাদায়েউস সানায়ে ৫/২১২; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ৩/১৪৯; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২৩৭৬০; কিতাবুল আছল ৩/৪৬৩; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২৬৮; আলবাহরুর রায়েক ৭/২০৪; আদ্দুররুল মুখতার ৬/২৮; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআসিরা ১/১০৯
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৬৪
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

এক ব্যক্তি আমার থেকে তিন বছরের জন্য ২ লক্ষ টাকা...

প্রশ্ন
এক ব্যক্তি আমার থেকে তিন বছরের জন্য ২ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছে। তার থেকে বন্ধক হিসেবে আমি একটি জমি নিয়েছি। হুজুরের কাছে জানতে চাই, ঐ জমি আমার কাছে বন্ধক থাকা অবস্থায় ভাড়া চুক্তির ভিত্তিতে ব্যবহার করতে পারব কি না? জানালে উপকৃত হব।
উত্তর
ঋণ দিয়ে বিনিময়ে গ্রহীতা থেকে কোনো ধরনের উপকৃত হওয়া জায়েয নেই। তা সুদের অন্তর্ভুক্ত। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বন্ধকি জমি থেকে আপনার জন্য কোনো প্রকার উপকৃত হওয়া জায়েয হবে না। তবে বন্ধকী চুক্তি বাতিল করে ন্যায্য মূল্যে তা ভাড়া নিতে পারবেন। ঋণের কারণে ভাড়া কম করা যাবে না। তদ্রƒপ ঋণের সাথে ভাড়া চুক্তিকে সম্পৃক্তও করা যাবে না। বরং ভাড়া চুক্তিটি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ও ঋণের প্রভাব থেকে মুক্ত হতে হবে।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,হাদীস : ২১০৭৮ ১৩/৬৪৮; আননুতাফ ফিলফাতাওয়া ২৯৬;বাদায়েউস সানায়ে ৬/৫১৮;ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৫৯৬;ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/৭৪;রদ্দুল মুহতার ৬/৫২৩;আলফাতাওয়াল ওয়ালওয়ালিজিয়া ৫/৬৯;মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ৩৭৮৩; ফাতহুল কাদীর ৬/৮০-৮১
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৬৩
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

আমি জালালাইন জামাতের ছাত্র। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লাইব্রেরী থেকে কিতাব...

প্রশ্ন
আমি জালালাইন জামাতের ছাত্র। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লাইব্রেরী থেকে কিতাব সংগ্রহ করে থাকি। অনেক সময় লাইব্রেরিওয়ালারা নতুন কোনো কিতাব প্রকাশ করার আগে (বিশেষ করে বড় কিতাব হলে) আমাদের বলে, তোমরা যদি এখন অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখ তাহলে স্বাভাবিক ক্রয়মূল্য থেকে দশ পার্সেন্ট ছাড়ে পাবে। অর্থাৎ যে কিতাব তারা স্বাভাবিকভাবে ২,০০০/- টাকায় বিক্রি করবে অগ্রিম টাকা দিলে সেটা আমরা ১,৮০০/- টাকায় পাব। কখনো আরো অধিক ছাড়ও দেয়। জানার বিষয় হল, এভাবে আমাদের চুক্তি ও কিতাব সংগ্রহ করা কি বৈধ হবে?
উত্তর
লাইব্রেরিওয়ালাদের থেকে ঐভাবে অগ্রিম টাকা দিয়ে কিতাব নেওয়া বৈধ। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই চুক্তির সময় ক্রয়কৃত কিতাবের ছাপা, বাঁধাই, কাগজের মান ইত্যাদি বিষয় স্পষ্ট করে নিতে হবে। যাতে ক্রয়কৃত কিতাবের ব্যাপারে অস্পষ্টতা না থাকে এবং পরবর্তীতে ঝগড়া বা মনোমালিন্য হওয়ার আশঙ্কা না থাকে।
-মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ, মাদ্দাহ : ২৮৯; শরহুল মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ : ৩৮৯-৩৯০; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪৪৪; ইতরে হেদায়া ২০৬
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৪৬
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

আমার একটি কাপড়ের দোকান আছে। আমার সহযোগী হিসেবে দোকানে একজন...

প্রশ্ন
আমার একটি কাপড়ের দোকান আছে। আমার সহযোগী হিসেবে দোকানে একজন কর্মচারী রেখেছি। তার সাথে আমার এভাবে চুক্তি হয়েছে যে, দোকানের মাল কেনা এবং ক্যাশে বসা আমার দায়িত্বে থাকবে। অবশিষ্ট কাজ, মাল বিক্রি করা, সময়মতো দোকান খোলা-বন্ধ করা ইত্যাদি তোমার দায়িত্ব এবং প্রতি মাসে মুনাফার ৫% তোমাকে দেওয়া হবে। প্রশ্ন হল, ঐ কর্মচারীর সাথে এভাবে চুক্তি করা সহীহ হয়েছে কি না? জানালে উপকৃত হব।
উত্তর
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী কর্মচারীর সাথে ঐভাবে চুক্তি করা সহীহ হয়নি। কেননা সে আপনার ব্যবসার অংশিদার নয়; বরং শ্রমদাতা। আর শ্রমদাতার সাথে চুক্তির সময়ই পারিশ্রমিকের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে নেওয়া জরুরি। তাই এ লক্ষ্য মূল বেতন হিসেবে একটি ন্যূনতম পরিমাণ পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে নিবে এরপর চাইলে অতিরিক্ত হিসেবে তাকে মুনাফার নির্ধারিত অংশও দিতে পারবে। কেননা এক্ষেত্রে মূল পারিশ্রমিক আর অনির্দিষ্ট থাকে না।
-মাজাল্লাতু আহকামিল আদলিয়া ৮৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/১১৭
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৪৫
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

আমি ব্যবসা করতে চাচ্ছি। ব্যবসার জন্য ১০ লক্ষ টাকা প্রয়োজন।...

প্রশ্ন
আমি ব্যবসা করতে চাচ্ছি। ব্যবসার জন্য ১০ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। বর্তমানে আমার কাছে ৬ লক্ষ টাকা আছে। বাকি ৪ লক্ষ টাকা আমার এক বন্ধু থেকে এই চুক্তিতে নিতে চাচ্ছি যে, সে ১০ বছর ব্যবসায় অংশীদার থাকবে। প্রতি মাসে মুনাফার ৩০% তাকে দেওয়া হবে। ১০ বছর পর তার টাকা তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। হুযুরের কাছে জানতে চাই- এভাবে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাকে ব্যবসায় শরিক করে তার থেকে টাকা নেওয়া জায়েয হবে কি না? জানালে উপকৃত হব।
উত্তর
হাঁ, নির্ধারিত মেয়াদের জন্যও অংশিদার নেওয়া জায়েয। অতএব আপনাদের প্রশ্নোক্ত চুক্তি করা সহীহ হবে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৩৫৯; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৬১৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩০২; বাদায়েউস সানায়ে ৫/৭৩-৭৪; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২২৬; রদ্দুল মুহতার ৪/৩১২
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৪৪
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

আমি একজন পিকআপ চালক। গাড়ির এক মালিক থেকে আমি একটি...

প্রশ্ন
আমি একজন পিকআপ চালক। গাড়ির এক মালিক থেকে আমি একটি পিকআপ এ চুক্তিতে নিয়েছি যে, গাড়ির প্রয়োজনীয় খরচ বাদ দিয়ে বাকি আয়ের ত্রিশ শতাংশ আমি নেব। অবশিষ্ট সত্তর শতাংশ মালিক পাবে। আমাদের এ চুক্তি কি শরীয়তসম্মত হয়েছে? দয়া করে জানাবেন।
উত্তর
না, আপনাদের উক্ত চুক্তি শরীয়তসম্মত হয়নি। কারণ গাড়ির আয় চালক এবং মালিকের মাঝে শতকরা হারে বণ্টনের চুক্তি সহীহ নয়। এক্ষেত্রে সহীহভাবে চুক্তি করতে চাইলে হয়ত চালকের বেতন নির্দিষ্ট করে দিতে হবে এবং গাড়ির সকল আয় মালিকের থাকবে। অথবা চালক গাড়িটি মালিক থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে ভাড়া নিবে। গাড়ি থেকে আয় হোক বা না হোক সর্বাবস্থায় ভাড়ার টাকা মালিককে দিয়ে দিতে হবে। আর এক্ষেত্রে গাড়ির যা আয় হবে তা সবই চালকের থাকবে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ১১/৩৩৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪১১
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫৪৩
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

আমার ছেলের অপারেশনের জন্য চার লক্ষ টাকা প্রয়োজন। তাই আমি...

প্রশ্ন
আমার ছেলের অপারেশনের জন্য চার লক্ষ টাকা প্রয়োজন। তাই আমি এক ব্যক্তির নিকট চার লক্ষ টাকার পরিবর্তে আমার একটি জমি বিক্রি করেছি। সে পঞ্চাশ হাজার টাকা নগদ পরিশোধ করেছে। তার সাথে কথা হয়েছে, এক সপ্তাহের মধ্যে বাকি টাকা পরিশোধ করলে তাকে জমির রেজিস্ট্রি দিয়ে দিব। সে এক সপ্তাহের মধ্যে টাকা দেয়নি। এদিকে একদিন পর আমার ছেলের অপারেশনের তারিখ। তাকে বাকি টাকা পরিশোধ করতে বললে সে বলে, জমির প্রকৃত মূল্য তিন লক্ষ টাকা। চার লক্ষ টাকা দিয়ে আমি জমি নিব না। ইচ্ছা হলে তিন লক্ষ টাকা দিয়ে জমি বিক্রি করতে পারেন। তখন আমি আরেকজনের নিকট নগদ চার লক্ষ টাকায় জমিটি বিক্রি করে জমির রেজিস্ট্রি দিয়ে দিয়েছি। প্রথম ক্রেতাকে তার টাকা দেওয়ার জন্য গেলে সে আমার সাথে অত্যন্তরাগারাগি করে। তার কথা, আমাকে না জানিয়ে অন্যের কাছে কেন জমি বিক্রি করেছেন? আমার কাছে বিক্রি করার পর অন্য কারো কাছে বিক্রি করা ঠিক হয়নি ইত্যাদি।
তাই হুযুরের কাছে জানতে চাই, উক্ত অবস্থায় অন্য ব্যক্তির নিকট জমি বিক্রি করা কি সহীহ হয়েছে? জানালে উপকৃত হব।
উত্তর
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী জমিটির প্রথম ক্রেতা যেহেতু চার লক্ষ টাকা দিয়ে জমি নিবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে এবং তিন লক্ষ টাকা হলে নিবে বলেছে তাই এর দ্বারাই ঐ ব্যক্তির সাথে পূর্বোক্ত ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাতিল হয়ে গেছে। সুতরাং এরপর ঐ জমি অন্যত্র বিক্রি করা আপনার জন্য জায়েয হয়েছে। এ পর্যায়ে পূর্বের ক্রেতার জন্য আপনার সাথে রাগারাগি করা বা খারাপ আচরণ করা একেবারেই অন্যায়। শরীয়তের দৃষ্টিতে সে শুধু তার দেওয়া টাকাগুলিই ফেরত পাবে। এর অতিরিক্ত কোনো কিছু দাবি করা তার জন্য জায়েয হবে না। আর আপনার দায়িত্ব হল, অবিলম্বে লোকটির টাকা ফেরত দেওয়া।
-হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ৬/৪১৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/১৯৭; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়াহ ৩/২১১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৪৪৪; আলবাহরুর রায়েক ৭/৩৬; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৪৫১
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫১৫
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

বিদেশে অনেকে ব্যাংক থেকে লোন নেয়। নেওয়ার সময় ব্যাংক কিছু...

প্রশ্ন
বিদেশে অনেকে ব্যাংক থেকে লোন নেয়। নেওয়ার সময় ব্যাংক কিছু টাকা কেটে রাখে ইন্সুরেন্স বাবদ। যাতে লোন গ্রহীতা মারা গেলে বা কোনো কারণে দেশে চলে গেলে লোনের টাকা ইন্সুরেন্স পরিশোধ করবে।
জানার বিষয় হল, ইন্সুরেন্স যেহেতু লোন গ্রহীতার অনুপস্থিতিতে লোনের টাকা পরিশোধ করার শর্তে ব্যাংকের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয় এবং ব্যাংক ইন্সুরেন্স বাবদ একটা নির্দিষ্ট অংকের টাকা লোন গ্রহীতার নিকট থেকে প্রথমেই কেটে রাখে তাই লোন গ্রহীতা লোনের টাকা পরিশোধ না করে যদি দেশে চলে যায় আর চুক্তি অনুযায়ী ইন্সুরেন্স তা পরিশোধ করে তবে কি লোন গ্রহীতা এই ঋণ থেকে দায়মুক্ত হয়ে যাবে? নাকি আখিরাতে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হক নষ্টের কারণে জবাবদিহি করতে হবে?
উত্তর
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ব্যাংকের লোনের উপর ইন্সুরেন্স করা থাকলেও এবং লোন গ্রহীতা টাকা না দিলে ইন্সুরেন্স কোম্পানি তা পরিশোধ করে দিবে- এমন ব্যবস্থা থাকলেও লোন গ্রহীতার জন্য কোনো অবস্থায়ই লোনের টাকা ফেরত না দেওয়া জায়েয হবে না। সর্বাবস্থায় লোনের টাকা ফেরত দেওয়া তার জন্য জরুরি। এ টাকা ফেরত না দিলে অন্যের হক আত্মসাৎ করার গুনাহ হবে। প্রকাশ থাকে যে, সুদি লোন যেমন হারাম তেমনি ইন্সুরেন্সও হারাম। এতে সুদ ও জুয়া দুটিই রয়েছে। কুরআন মাজীদ ও হাদীস শরীফে সুদ ও জুয়ার বিষয়ে কঠোর ধমকি এসেছে। আর সুদের মধ্যে বাহ্যিক দৃষ্টিতে অর্থনৈতিক কিছু সাময়িক ফায়েদা দেখা গেলেও এতে রয়েছে চরম বেবরকতি ও খোদায়ী অভিশাপ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং সদকা বৃদ্ধি করেন। (সূরা : বাকারা : ২৭৬)
তাই অনতিবিলম্বে সকল সুদি কারবার নিষ্পত্তি করা এবং এ থেকে খালেস দিলে তাওবা করা জরুরি।
-জামে তিরমিযী, হাদীস ১২৬৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২০০৪৬
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫১৪
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

আমি যশোরে থাকি। ঢাকার এক লাইব্রেরি থেকে ৩০,০০০/- টাকার কিতাব...

প্রশ্ন
আমি যশোরে থাকি। ঢাকার এক লাইব্রেরি থেকে ৩০,০০০/- টাকার কিতাব ক্রয়ের ইচ্ছা করি। সেমতে তার সাথে এ মর্মে চুক্তি হয় যে, আমি তার ঠিকানায় টাকা পাঠাব আর তিনি কোনো ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে কিতাব পাঠাবেন। এরপর চুক্তি অনুযায়ী আমি লাইব্রেরি মালিকের ঠিকানায় ৩০,০০০/- টাকা পাঠাই। আর তিনিও তাদের নিয়ম অনুযায়ী কিতাবগুলো কার্টুনে ভরে তাদের পরিচিত ভ্যানের মাধ্যমে ট্রান্সপোর্টের জন্য পাঠায়। কিন্তু ঘটনাক্রমে ভ্যান থেকে সবগুলো কিতাব ছিনতাই হয়ে গিয়েছে। তাই জানার বিষয় হল, এ ক্ষতির দায় কার উপর বর্তাবে? লাইব্রেরি মালিক কি এই ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবেন? উল্লেখ্য, অন্য সময়ও এ রকম পরিচিত ভ্যানের মাধ্যমে মালামাল ট্রান্সপোর্টে পাঠানো হত।
উত্তর
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ক্রেতা তার কিতাবাদি যেহেতু ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে পাঠানোর জন্য বলেছে এবং বিক্রেতাও তাতে সম্মত হয়েছে তাই ট্রান্সপোর্টে জমা হওয়ার আগ পর্যন্ত তা বিক্রেতার জামানত ও দখলে থাকবে। অবশ্য ট্রান্সপোর্টে জমা দিয়ে রশিদ গ্রহণ করলে বিক্রেতা এর জামানত ও দখল থেকে মুক্ত হয়ে যাবেন।
সুতরাং প্রশ্নোক্ত অবস্থায় কিতাবগুলো যেহেতু ট্রান্সপোর্টে জমা হওয়ার আগেই ভ্যান থেকে ছিনতাই হয়ে গেছে তাই এটি লাইব্রেরি মালিকের মাল নষ্ট হয়েছে বলেই ধরা হবে। অতএব লাইব্রেরি মালিককে ক্রেতার নির্দিষ্ট মাল পুনরায় পাঠাতে হবে।
প্রকাশ থাকে যে, ক্রেতার কথামতো ট্রান্সপোর্ট বা কুরিয়ার সার্ভিস ইত্যাদি পার্সেল প্রেরণ/বহনকারী কোনো প্রতিষ্ঠানে জমা দেওয়ার পর কোনো মাল হারালে কিংবা নষ্ট হয়ে গেলে বিক্রেতা দায়ী হবে না। এক্ষেত্রে মালের দায়-দায়িত্ব ক্রেতার উপরই বর্তাবে। অবশ্য ট্রান্সপোর্ট কর্তৃপক্ষের কোনো ত্রম্নটির কারণে মাল ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর ক্ষতিপূরণ তাদের জিম্মায় থাকবে।
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৫০৮
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

আমরা বিশজন মিলে একটা সংগঠন করেছি। উদ্দেশ্য হল, সবাই সমানভাবে...

প্রশ্ন
আমরা বিশজন মিলে একটা সংগঠন করেছি। উদ্দেশ্য হল, সবাই সমানভাবে টাকা জমা করে তা নিয়ে শিরকতের পদ্ধতিতে ব্যবসা করবো এবং লাভ সবার মধ্যে সমানভাবে বণ্টন হবে। আর উক্ত টাকা দিয়ে ব্যবসা করার দায়িত্ব আমি বহন করেছি। এজন্য আমি কোনো বেতনও নিই না। গত বছর এক লোককে তিনমাস পর চাল দিবে এই চুক্তিতে পনের হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে দিই। পরে ঐ লোক থেকে চাউল বা টাকা কোনোটা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এখন সংগঠনের বাকি সদস্যরা আমার কাছে এই টাকা দাবি করছে।
জানার বিষয় হল, উক্ত টাকা সম্পর্কে শরীয়তে বিধান কী? এই টাকার দায় কি শুধু আমার উপরই আসবে?
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যদি সংগঠনের শর্ত অনুযায়ী যথাযথ যাচাইয়ের পর ঐ ব্যক্তির সাথে লেনদেন করে থাকেন তবে ঐ ব্যক্তি থেকে টাকা উসূল করা না গেলে তার জরিমানা আপনার উপর আসবে না। বরং তার ক্ষতি সকল সদস্যকেই মূলধন অনুপাতে বহন করতে হবে। কিন্তু যদি যথাযথ যাচাই-বাছাই ছাড়াই দিয়ে থাকেন এবং এ ব্যাপারে আপনার অবহেলা বা ত্রুটি প্রমাণিত হয় তবে এর ক্ষতিপূরণ আপনাকে বহন করতে হবে।
-আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩১৯; আল বাহরুর রায়েক ৫/১৮০; রদ্দুল মুহতার ৪/৩০৫; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ পৃ. ২৫৯, ২৬৩
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪৮০
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

ছেলে মেয়েরা যতদিন পিতার সাথে একই সংসারে থাকে ততদিন ছেলেদের...

প্রশ্ন
ছেলে মেয়েরা যতদিন পিতার সাথে একই সংসারে থাকে ততদিন ছেলেদের আয়ের মালিক পিতা হবে কি না? হাওয়ালাসহ জানাবেন।
উত্তর
ছেলে পিতার সংসারে থাকা অবস্থায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা কর্মস্থলে পিতার সহযোগী হিসেবে কাজকর্ম করলে এবং ছেলের প্রাপ্য সম্পর্কে পূর্ব থেকে কোনো কথা না হলে প্রতিষ্ঠানের সকল আয়-উপার্জনের মালিক পিতাই হবেন। ছেলে এ থেকে কোনো কিছুর মালিক হবে না। তবে এ ধরনের ক্ষেত্রে ছেলের জন্য কোনো লভ্যাংশ বা পারিশ্রমিক দেওয়ার চুক্তি থাকলে সে এর মালিক গণ্য হবে।
আর ছেলের কর্মস্থল বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যদি সম্পূর্ণ পৃথক হয় তাহলে তার উপার্জনের মালিক সে নিজেই হবে। এক্ষেত্রে ছেলে পিতার সংসারে একত্রে থাকার কারণে পিতা ছেলের উপার্জনের মালিক হয়ে যাবে না।
অবশ্য এ অবস্থায় ছেলে সংসার খরচের জন্য বা এমনিতেই যে পরিমাণ অর্থ পিতাকে দিয়ে দিবে পিতা তার মালিক হবে।
-রদ্দুল মুহতার ৪/৩২৫; মাজাল্লাতু আহকামিল আদলিয়াহ, মাদ্দাহ : ১৩৯৮; ফাতাওয়া খায়রিয়া ২/৯২; শরহুল মাজাল্লাহ, খালিদ আতাসী ৪/৩২০
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪৭৯
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

একটি ব্যবসার ১ম ব্যক্তি মূলধন বিনিয়োগকারী এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি তার...

প্রশ্ন
একটি ব্যবসার ১ম ব্যক্তি মূলধন বিনিয়োগকারী এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করবেন। দুজনের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে ব্যবসার মালিকানা, লাভ-লোকসান বণ্টন ৫৫% (২য় ব্যক্তি) ও ৪৫% (১ম ব্যক্তি) নির্ধারিত হয়। এই ব্যবসা থেকে ২য় ব্যক্তি কোনো বেতন অথবা অন্য কোনো বাড়তি সুবিধা (যেমন, যাতায়াত খরচ ইত্যাদি) নিতে পারবেন কি না? যথাযথ দলিলপ্রমাণসহ জানালে বিশেষ উপকৃত হব।
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ব্যবসায়িক চুক্তিটিকে ফিকহে ইসলামীর পরিভাষায় ‘মুদারাবা’ চুক্তি বলে। এতে মূলধন বিনিয়োগকারী ও ব্যবসা পরিচালনাকারীর জন্য শতকরা হারে লভ্যাংশ বণ্টনের চুক্তি করতে হয়। কারো জন্য নির্দিষ্ট বেতনভাতা বা নির্দিষ্ট কোনো কিছুর চুক্তি করা জায়েয নেই। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ব্যবসা পরিচালনাকারী কেবল নির্ধারিত পরিমাণ লভ্যাংশই গ্রহণ করতে পারবে। তার জন্য ভিন্নভাবে কোনো বেতনভাতার চুক্তি করা যাবে না। অবশ্য ব্যবসার স্বার্থে যে খরচ হবে যেমন, পণ্য ক্রয়বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে যাতায়াত ভাড়া, থাকা-খাওয়ার বাস্তব খরচাদি গ্রহণ করতে পারবে এবং এ ধরনের খরচ পরিশোধের পরই ব্যবসার লাভ-লোকসানের হিসাব হবে। উলেস্নখ্য যে, ব্যবসা পরিচালনাকারীর নিকট পূর্ব নির্ধারিত লভ্যাংশ যদি কম মনে হয় তাহলে উভয় পক্ষের সম্মতি সাপেক্ষে ভবিষ্যতের জন্য লভ্যাংশের হার পরিবর্তন করা যাবে।-
কিতাবুল আছল ৪/২৯১; মাজাল্লা মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী ১৩/৩/২৯৪; আলমাআইরুশ শরইয়াহ ২৪০, ২৪২, ২৫১; আলমুহীতুল বুরহানী ১৮/১২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/২৮৭; বাদায়েউস সানায়ে ৫/১১৯
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪৭৮
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

গত ছয় মাস আগে আমি এক ব্যক্তিকে তার চিকিৎসার জন্য...

প্রশ্ন
গত ছয় মাস আগে আমি এক ব্যক্তিকে তার চিকিৎসার জন্য দুই লক্ষ টাকা ঋণ দেই। তিন মাস পর টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সে এখন টাকা পরিশোধে গড়িমসি করছে। বারবার তাগাদা দেওয়ার পর সে আমাকে বলে, ভাইজান! আমার তো চাকরি শেষ, তাই একটা ব্যবসা করার ইচ্ছা করছি। আপনার টাকাটা আমাকে মূলধন হিসাবে দেন, অর্ধেক লাভ আপনাকে দিব।
আমি জানতে চাচ্ছি যে, তার প্রস্তাবমত ব্যবসা করা জায়েয হবে কি?
উত্তর
ঋণ উসূল না করে ঐ টাকা দ্বারা তার সাথে ব্যবসা করা জায়েয হবে না। তার সাথে ঐ টাকা দ্বারা ব্যবসা করতে চাইলে প্রথমে তা উসূল করতে হবে এরপর তা ব্যবসার জন্য দেওয়া যাবে।
-আলবাহরুর রায়েক ৭/২৬৩; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৪৭; বাদায়েউস সানায়ে ৫/১১৪; শরহুল মাজাল্লাহ, খালিদ আতাসী ৪/৩৩০; আলমাআঈরুশ শরইয়্যাহ ২৪০, ২৪৯
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৪১২
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

এক ব্যক্তি আমার থেকে দশ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছে এবং...

প্রশ্ন
এক ব্যক্তি আমার থেকে দশ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছে এবং তার মোটর সাইকেলটি আমার কাছে বন্ধক রেখেছে। ঋণ আদায়ের আগ পর্যন্ত আমি তার সাইকেলটি অন্যদের নিকট ভাড়া দিয়েছি। এতে আমার কিছু টাকা আয় হয়েছে। পরববর্তীতে সে ঋণ আদায় করে দিলে আমি তার সাইকেলটি ফেরত দিয়ে দেই। আমার প্রশ্ন হল সাইকেল দ্বারা অর্জিত টাকা আমার জন্য ভোগ করা জায়েয হবে কি? না হলে এ টাকা কী করব? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
উত্তর
ঋণদাতার জন্য বন্ধকি বস্ত্ত থেকে উপৃকত হওয়া নাজায়েয। তা সুদের অন্তর্ভুক্ত। তাই মোটর সাইকেলটি থেকে অর্জিত ভাড়া আপনার জন্য ভোগ করা জায়েয হবে না। আপনি যদি ঋণ গ্রহিতার অনুমতিক্রমে সাইকেলটি ভাড়া দিয়ে থাকেন তাহলে তা দ্বারা উপার্জিত সকল অর্থ মালিকের প্রাপ্য। এগুলো তাকে ফেরত দিতে হবে। আর যদি তার অনুমতি ছাড়া ভাড়া দিয়ে থাকেন তাহলে এ থেকে উপার্জিত সকল অর্থ আপনাকে সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে মোটর সাইকেলের মালিকও তা ভোগ করতে পারবে না।
-রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৫৯৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/৫৬২-৫৬৩; আলমুহীতুল বুরহানী ১৮/৮৯
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩৯২
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

এক লোকের ঘরে অনেক ধান আছে। সে চার মাস পর...

প্রশ্ন
এক লোকের ঘরে অনেক ধান আছে। সে চার মাস পর ধানের দাম বাড়লে তা বিক্রি করবে। ইতিমধ্যে এক ব্যক্তি এসে তাকে বলল, এই ধান আমার কাছে বিক্রি করে দাও। চার মাস পর ধানের যে বাজার মূল্য হবে সে হিসেবে তোমার ধানের মূল্য পরিশোধ করে দিব।
জানার বিষয় হল, এভাবে ক্রয়-বিক্রয় করা শরীয়তে বৈধ কি না?
উত্তর
না, এভাবে ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েয নয়। কেননা ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তির সময়ই পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে নেওয়া জরুরি। তাই কারবারটি জায়েযভাবে করতে চাইলে ধান দেওয়ার আগেই চুক্তির সময় মূল্য নির্ধারণ করে নিতে হবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩৫৫; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৬৭; শরহুল মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ : ২৩৮; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৭৪; রদ্দুল মুহতার ৪/৫২৯
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩৯০
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

আমি একটি ফ্যাক্টরিতে চাকুরি করি। আমার দায়িত্ব হল ফ্যাক্টরির যাবতীয়...

প্রশ্ন
আমি একটি ফ্যাক্টরিতে চাকুরি করি। আমার দায়িত্ব হল ফ্যাক্টরির যাবতীয় কাঁচামাল বাজার থেকে ক্রয় করে আনা। জনৈক ব্যবসায়ী আমার সাথে এই মর্মে চুক্তি করতে চাচ্ছে যে, আমি যদি তার থেকে ফ্যাক্টরির সকল কাঁচামাল ক্রয় করি তাহলে সে আমাকে শতকরা হারে কিছু কমিশন দিবে। জানতে চাই, আমার এ কমিশন গ্রহণ করা জায়েয হবে কি না? এ টাকা কি নিজের কাছে রেখে দিতে পরব? না মালিককে ফেরত দিতে হবে। জানালে উপকৃত হব।
উত্তর
আপনার জন্য উক্ত কমিশন ভোগ করা জায়েয হবে না। কেননা আপনি ফ্যাক্টরির পক্ষ থেকে ক্রয় প্রতিনিধি। বিক্রেতা এক্ষেত্রে যদি কোনো মূল্যছাড় বা কমিশন দেয় তবে তা ফ্যাক্টরি মালিকেরই প্রাপ্য। সেখান থেকে আপনার জন্য কিছুই নেওয়া জায়েয হবে না। এছাড়া বিক্রেতা যদি স্বয়ং আপনাকে দিতে চায় তবুও তা আপনার জন্য নেওয়া জায়েয হবে না। কেননা আপনি কোম্পানির পক্ষ থেকে এ কাজের জন্য মাসিক বেতন পাচ্ছেন। সুতরাং এ বাবদ দোকানদার থেকে কোনো কমিশন নেওয়া ঘুষের অন্তর্ভুক্ত হবে।
-সুনানে আবু দাউদ ৪/২১০; কিতাবুল আছল ১১/২৮৮; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৫১৬; আলবাহরুর রায়েক ৭/১৫৫; শরহুল মাজাল্লাহ ৪/৪৭৮
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩৭৭
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

কয়েক বছর আগে আমি আইপিও এর মাধ্যমে ‘সামিট পাওয়ার’-এর কিছু...

প্রশ্ন
কয়েক বছর আগে আমি আইপিও এর মাধ্যমে ‘সামিট পাওয়ার’-এর কিছু শেয়ার ক্রয় করেছিলাম। এ শেয়ার আমি এখনও বিক্রি করিনি। সামিট পাওয়ার প্রতিবছরই বোনাস শেয়ার, রাইট শেয়ার প্রভৃতি প্রদান করে থাকে। বর্তমানে আমার শেয়ার সংখ্যা আইপিও শেয়ার থেকে পাঁচগুণ বেশি। এ পদ্ধতিতে শেয়ার বৃদ্ধি করা কি জায়েয হবে।
উল্লেখ্য, আমি সেকেন্ডারি মার্কেটে ক্রয়-বিক্রয় করি না।
উত্তর
প্রশ্নোক্ত কোম্পানী মৌলিকভাবে জ্বালানী খাতের হলেও অন্যান্য অধিকাংশ কোম্পানির মতো তাদের মূলধনের বড় অংশও সুদের ভিত্তিতে ব্যাংক লোনের মাধ্যমে সংগ্রহ করা। কোম্পানিটির ব্যালেন্স শীট ও বার্ষিক প্রতিবেদন দেখলেই তা স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
তাই উক্ত কোম্পানির শেয়ার কেনার অর্থ হচ্ছে এর সুদী লেনদেনে স্বীকৃতি প্রদান করা এবং শেয়ারের আনুপাতিক হারে নিজেকে সুদের সাথে জড়িত করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুদ গ্রহিতার পাশাপাশি সুদদাতার উপরও লানত করেছেন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৫৯৭
সুতরাং সেকেন্ডারি মার্কেটে লেনদেন না করলেও আইপিওর মাধ্যমে শেয়ার ক্রয়ের দ্বারা যেহেতু সুদের সাথে জড়িত হয়ে যাচ্ছেন তাই আইপিও-এর মাধ্যমেও এ কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করা জায়েয হয়নি।
এখন এই অবৈধতা থেকে বাঁচার জন্য করণীয় হচ্ছে উক্ত শেয়ারগুলো বিক্রি করে দিয়ে বিনিয়োগকৃত মূল টাকার অতিরিক্ত সদকা করে দেওয়া।
-মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, সপ্তম সংখ্যা, ১/৭১২; সিদ্ধান্ত নং ৬৫/১/৭; ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/১৭২; আছরে হাযের কে পেচিদা মাসাইল কা শরঈ হল ২৬৬
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬৩০৯
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

আমি একটি সুদী ব্যাংকে ১৫ বছর কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছি।...

প্রশ্ন
আমি একটি সুদী ব্যাংকে ১৫ বছর কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছি। এ সময় ব্যাংক থেকে পাওয়া বেতন দিয়ে জমি, বাড়ি-গাড়ি করেছি। এখন আমি সুদী কারবারে জড়িত থাকার কারণে অনুতপ্ত হয়ে ভিন্ন চাকুরীতে যোগদান করেছি। কিন্তু আগের চাকুরীর বেতন দিয়ে আমি যে সম্পত্তির মালিক হয়েছি তা কি আমার জন্য বৈধ হবে? বৈধ না হলে আমি এখন কী করতে পারি? অনুগ্রহ করে জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।
উত্তর
সুদী ব্যাংকে চাকুরী করে যা উপার্জন করেছেন তা হারাম। এ টাকা দিয়ে খরিদকৃত জমি ও বাড়ি-গাড়ি ব্যবহার করা ও তা দ্বারা উপকৃত হওয়া নাজায়েয। এখন আপনি যদি এগুলো থেকে বৈধভাবে উপকৃত হতে চান তবে যে পরিমাণ টাকা দ্বারা জমি কিনেছেন ও বাড়ি-গাড়ি করেছেন সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সে পরিমাণ টাকা গরীব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করে দিলে আপনি এ সম্পদের মালিক হয়ে যাবেন। তখন এগুলো থেকে উপকৃত হওয়া জায়েয হবে। ক্রয়মূল্য সদকা করার আগ পর্যন্ত ঐ সম্পদ হালাল হবে না এবং এর থেকে কোনো প্রকার উপকৃত হওয়াও আপনার জন্য বৈধ হবে না।
তাই ক্রয়মূল্য সদকা করার পূর্বে বাড়িভাড়া বা জমি থেকে যা আয় হবে তাও সদকা করে দিতে হবে। আর পিছনের জীবনে হারাম উপার্জন ও তার ভোগব্যবহারের কারণে আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা-ইস্তিগফারও করতে হবে।
-তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ১/৬১৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৩২২; বাদায়েউস সানায়ে ৬/১৫০; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ৮/২৫৮
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২৮৯
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

আমার নিজের মালিকানাধীন ৬ তলা বাড়ির ২য় তলার পুরো ফ্লোর...

প্রশ্ন
আমার নিজের মালিকানাধীন ৬ তলা বাড়ির ২য় তলার পুরো ফ্লোর আমার কোম্পানির অফিস। ঐ ফ্লোরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুবিধার্থে নামাযের জন্য একটি কামরা আলাদা রাখি। এতে যোহর, আসর ও মাগরিব এ তিন ওয়াক্ত নামায পড়া হয়। ঐ কামরায় অন্য কোনো কাজ করা হয় না।
আমার জানার বিষয় হল, ক) ঐ কামরা কি নামায পড়ার দরুণ মসজিদ হয়ে যাবে?
খ) আমাদের অফিস অন্য কোথাও স্থানান্তরিত হলে ঐ ফ্লোর কি লিভিং রুম হিসেবে ব্যবহার করতে পারব? বা ভাড়া দিতে পারব? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর
শরীয়তের দৃষ্টিতে কোনো স্থান মসজিদ হওয়ার জন্য তা স্থায়ীভাবে নামাযের জন্য ওয়াকফ করে দেওয়া জরুরি। অস্থায়ীভাবে কোনো স্থানে নামায আদায়ের দ্বারা তা মসজিদ হয়ে যায় না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কামরার ফ্লোরটিকে আপনি যেহেতু অস্থায়ীভাবে নামায আদায়ের জন্য নির্ধারণ করেছেন তাই তা মসজিদ হয়নি। পরবর্তীতে চাইলে ঐ ফ্লোরে নিজেরা থাকতে পারবেন এবং ভাড়াও দিতে পারবেন।
-শরহুল মুনইয়াহ ৬১৪; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩০৪
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২৮৫
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

কুরবানীর সময় গরুর হাটে গরু পছন্দ করে দামাদামি শুরু করতেই...

প্রশ্ন
কুরবানীর সময় গরুর হাটে গরু পছন্দ করে দামাদামি শুরু করতেই কিছু লোক এসে উপস্থিত হয়। তারা ঐ গরুর মূল্য বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলতে শুরু করে। সেই গরু ক্রয় করতে চাইলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাদের চেয়ে বেশি মূল্য দিতে হয়। খোঁজখবর নিলে জানা যায় যে, ব্যবসায়ীদের সাথে তাদের যোগসাজশ থাকে। যারা মূলত ক্রেতা নয়। কিন্তু ক্রেতা সাজে শুধু দাম বাড়ানোর জন্য। শরীয়তের দৃষ্টিতে তাদের এ কাজের হুকুম কি?
উত্তর
ক্রয়ের নিয়ত ছাড়া শুধু পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে দামাদামি করা জায়েয নয়। হাদীস শরীফে এ থেকে নিষেধ করা হয়েছে। প্রকৃত ক্রেতাগণ এ কারণে প্রতারিত হয়।
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘নাজাশ’ থেকে নিষেধ করেছেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ২১৪২)
নাজাশ হল ক্রয় করার ইচ্ছা ছাড়া শুধু অন্যকে প্ররোচিত করার জন্য দামাদামি করা এবং পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে বলা।
আবদুল্লাহ ইবনে আবী আওফা রা. এমন ব্যক্তিকে সুদখোর ও খেয়ানতকারী বলে আখ্যা দিয়েছেন। (সহীহ বুখারী ১/২৮৭)
আর এ ব্যাপারে বিক্রেতার সম্মতি থাকলে সেও গুনাহগার হবে। বিক্রেতা তাকে কোনো কিছু দিলে তা ঘুষের অন্তর্ভুক্ত ও নাজায়েয হবে।
-সহীহ মুসলিম ২/৩; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ১/৩২৭; হেদায়া ৩/৬৬; আদ্দুররুল মুখতার ৫/১০১; ফাতহুল কাদীর ৬/১০৬; আলবাহরুর রায়েক ৬/৯৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/৪০৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৯/৪০৩
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২৮৪
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

আমাদের জানামতে ব্যাংকে সাধারণত সুদী লেনদেন হয়ে থাকে। এখন যারা...

প্রশ্ন
আমাদের জানামতে ব্যাংকে সাধারণত সুদী লেনদেন হয়ে থাকে। এখন যারা ব্যাংকে চাকুরি করে তাদের বেতনের টাকা হালাল কি না? আর তারা কিছু হাদিয়া দিলে তা ব্যবহার করা যাবে কি না?
উত্তর
সুদী ব্যাংক বা শরীয়তের বিধিনিষেধ মেনে লেনদেন করে না-এমন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করা নাজায়েয। এ থেকে প্রাপ্ত বেতন-ভাতা হালাল নয়। এবং এর পেছনে শ্রম ব্যয় করাও জায়েয নয়। হাদীস শরীফে সুদখোর, সুদদাতা, সুদের হিসাব-কিতাবকারী ও সাক্ষ্যদাতা সকলের উপর অভিশম্পাত এসেছে। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে চাকুরিরত ব্যক্তির কর্তব্য হল, বৈধ কোনো উপার্জনের ব্যবস্থা করা এবং দ্রুত ঐ চাকুরি ছেড়ে দেওয়া। আর তাদের চাকুরির টাকা যেহেতু হালাল নয় তাই এ থেকে কাউকে কোনো কিছু হাদিয়া দিলে জেনেশুনে তা গ্রহণ করা জায়েয হবে না। অবশ্য তাদের কোনো বৈধ উপার্জন থেকে হাদিয়া দিলে তা গ্রহণ করা জায়েয হবে।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৫৯৮; তাকমিলা ফাতহিল মুলহিম ১/৬১৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৭৩
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২৮৩
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

আমি আমার ভাগিনার জন্য আমার পরিচিত এক দোকানে একটি র‌্যাকেট...

প্রশ্ন
আমি আমার ভাগিনার জন্য আমার পরিচিত এক দোকানে একটি র‌্যাকেট কিনতে গেলাম। দাম জানতে চাইলে দোকানদার বলল, দাম কি এখন দিয়ে দেবেন? আমি বললাম, দু মাস পরে দেব। তখন সে বলল, এখন দাম পরিশোধ করলে ২৫০ টাকা আর দুই মাস পরে দিলে ২৬০ টাকা। এভাবে সময়ের কারণে বেশি মূল্যে বিক্রি করা জায়েয হবে কি?
উত্তর
নগদ বিক্রির তুলনায় বাকি বিক্রিতে মূল্য কিছু বেশি নেওয়া জায়েয আছে। তবে এ ক্ষেত্রে বৈধভাবে লেনদেন করতে চাইলে বিক্রি চুক্তির সময় পণ্যের মূল্য নগদ বা বাকি তা নির্ধারণ করতে হবে। বাকি হলে তা পরিশোধের তারিখ নির্ধারণ করে নিবে। ঐ সময়ের ভেতর মূল্য পরিশোধ না করলে পূর্ব মূল্যের চেয়ে বেশি নেওয়া যাবে না এবং শর্তও করা যাবে না। অন্যথায় তা সুদী কারবার হয়ে যাবে।
-জামে তিরমিযী, হাদীস : ১২৩৯; ইলাউস সুনান ১৪/১৮০; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যা মুআছিরা ১/১২-১৫; আলমাবসূত, সারাখসী ১৩/৭-৮
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২৭৪
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

কয়েকদিন আগে আমি এক এলাকায় বাসা ভাড়া নেই। মহল্লার মসজিদের...

প্রশ্ন
কয়েকদিন আগে আমি এক এলাকায় বাসা ভাড়া নেই। মহল্লার মসজিদের ইমাম সাহেব না থাকলে মাঝেমধ্যে এক ব্যক্তি নামায পড়ান, যার দাঁড়ি একেবারে ছোট করে ছাঁটা। বিষয়টি আমাকে কষ্ট দেয়। স্থানীয় দু’ একজনকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তারা ততটা গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু তার পিছনে নামায পড়তে আমার ভক্তি হয় না। এ অবস্থায় আমি কি একাকী নামায পড়ব? অনুগ্রহ করে জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।
উত্তর
দাঁড়ি অন্তত এক মুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা রাখা ওয়াজিব। এক মুষ্ঠির চেয়ে ছোট করে রাখা গুনাহ। এ ব্যাপারে চারও মাযহাব একমত। একাধিক হাদীসে দাড়ি লম্বা রাখার নির্দেশ এসেছে। তাই যে ব্যক্তি এক মুষ্ঠির চেয়ে ছোট করে দাড়ি রাখে সে ইমাম হওয়ার যোগ্য নয়। এমন ব্যক্তির পিছনে ইকতিদা করা মাকরূহ। এ ধরনের ক্ষেত্রে কাছাকাছি কোনো মসজিদে পরহেযগার ইমাম থাকলে সেখানে গিয়ে নামায পড়তে পারেন। কাছাকাছি কোনো মসজিদ না থাকলে এই মসজিদে হলেও জামাতের সাথে নামায পড়া কর্তব্য। কেননা একাকী নামায পড়ার চেয়ে এমন ব্যক্তির পিছনে হলেও জামাতে নামায পড়া উচিত।
প্রকাশ থাকে যে, পরহেযগার মুত্তাকী আলেমের পিছনে নামায পড়তে হাদীসে উৎসাহিত করা হয়েছে।
তাই ইমামের অবর্তমানেও মুত্তাকী, পরহেযগার ব্যক্তির ইমামতি করা উচিত।
-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৫০; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৪৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৫৯, ১৬০
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২৬২
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

আমাদের এলাকার এক কৃষক থেকে ৪০০/- টাকা দরে ১০ মণ...

প্রশ্ন
আমাদের এলাকার এক কৃষক থেকে ৪০০/- টাকা দরে ১০ মণ ইরি ধান ক্রয় করেছি। চুক্তিটি এভাবে হয়েছে যে, আমি তাকে নগদ ৪,০০০/- টাকা দিয়েছি। তিনি ছয় মাস পর পর পাঁচ মণ করে ধান দিবেন। এক বছরে সম্পূর্ণ ধান পরিশোধ করবেন। চুক্তি অনুযায়ী প্রথম কিস্তিতে তিনি পাঁচ মণ ধান দিয়েছেন। দ্বিতীয় কিস্তি দেওয়ার সময় তিন মণ ধান দিতে চাচ্ছেন এবং বলছেন যে, ক্ষেতের ধান কম হয়েছে। তাই তিন মণ দিবেন। আর দুই মণ ধানের বর্তমান বাজার মূল্য হিসেবে মূল্য দিয়ে দিবেন। এখন আমার জন্য ঐ দুই মণ ধানের মূল্য নেওয়া জায়েয হবে কি?
উত্তর
না, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার জন্য ঐ দুই মণ ধানের পরিবর্তে তার মূল্য নেওয়া জায়েয হবে না। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে। আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি অগ্রিম পণ্য ক্রয় করবে সে যেন ঐ পণ্য ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ না করে।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৩৪৬২
অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ কৃষক থেকে ধানের পরিবর্তে মূল্য নেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে ঐ কৃষক বাজার থেকে ধান কিনেও দিতে পারবেন। আর যদি আপনি টাকাই নিতে চান তবে দুই মণ ধান বাবদ প্রদত্ত মূল ৮০০/- টাকাই নিতে পারবেন। এর অতিরিক্ত নেওয়া জায়েয হবে না।
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৩৪৬২; ইলাউস সুনান ৪/৪৩৪; ফাতহুল কাদীর ৬/২৩০; আলবাহরুর রায়েক ৬/১৬৬; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ১/৩৫৭
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২৬১
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

কিছুদিন আগে আমার পিতা মারা যান। মিরাস সূত্রে একটি ট্রাক...

প্রশ্ন
কিছুদিন আগে আমার পিতা মারা যান। মিরাস সূত্রে একটি ট্রাক আমার মালিকানায় আসে। আমি এক ব্যক্তির সাথে এই মর্মে চুক্তি করেছি যে, এই ট্রাক তুমি চালাবে। যা আয় হবে তার অর্ধেক তুমি পাবে, আর অর্ধেক আমি। প্রশ্ন হল, আমাদের এই চুক্তি সহীহ হয়েছে কি? যদি সহীহ না হয় তাহলে এর সহীহ পন্থা কী হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ট্রাকের আয় উভয়ে ভাগ করে নেওয়ার চুক্তি সহীহ হয়নি। এক্ষেত্রে ২টি নিয়মে সহীহভাবে চুক্তি করা যায়। আপনারা এর যে কোনোটি গ্রহণ করতে পারেন। যথা-১. নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে আপনি চালকের নিকট ট্রাকটি ভাড়া দিয়ে দিবেন। এক্ষেত্রে নির্ধারিত ভাড়াই আপনার প্রাপ্য হবে। আর গাড়ির যাবতীয় আয় পাবে ভাড়া গ্রহিতা চালক। ২. আপনি চালককে নির্ধারিত পরিমাণ পারিশ্রমিক দিবেন। আর ট্রাক থেকে উপার্জিত সকল আয়ের মালিক আপনি হবেন। চালক শুধু তার নির্দিষ্ট পারিশ্রমিক পাবে।
-কিতাবুল আছল ৪/১৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/১১৬; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/৩৩৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৮১; আলমাবসূত, সারাখসী ২২/২৩৫
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২৫৯
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

আমাদের এলাকার অধিকাংশ লোক কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।...

প্রশ্ন
আমাদের এলাকার অধিকাংশ লোক কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। প্রতি মৌসুমে তারা তরমুজ চাষ করে। তা ছোট অবস্থায় পুরো ক্ষেত ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করে দেয়। পরে তরমুজ বড় হলে ব্যবসায়ীরা তা উঠিয়ে বাজারে বিক্রি করে। আমার প্রশ্ন হল, এভাবে ফল বিক্রি করা বৈধ হবে কি? বিক্রয়ের পর এ তরমুজ বিক্রেতার জমিতে রাখা জায়েয হবে কি না? বিস্তারিত দলিল-প্রমাণসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর
তরমুজ ছোট থাকা অবস্থায় ক্ষেত বিক্রি করে দেওয়া জায়েয আছে। তবে বিক্রয়ের সময় তরমুজ বড় হওয়া পর্যন্ত জমিতে থাকবে এমন শর্ত করা যাবে না। শর্ত ছাড়া ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পর বিক্রেতার সম্মতিতে মৌসুমের শেষ পর্যন্ত রাখা যাবে।
-আদ্দুররুল মুখতার ৪/৫৫৪-৫৫৬; আলবাহরুর রায়েক ৫/৩০০; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৮৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩৮৩
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২৫৪
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

ক) আমাদের এলাকায় এক ব্যক্তি মসজিদের পাশে এক খন্ড জমি...

প্রশ্ন
ক) আমাদের এলাকায় এক ব্যক্তি মসজিদের পাশে এক খন্ড জমি ক্রয় করে মাদরাসার নামে ওয়াকফ করে দেয়। কিন্তু মাদরাসা এখনো প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। ভবিষ্যতে মাদরাসা করার পরিকল্পনা রয়েছে। এলাকার কিছু লোক ঐ জমিতে কলা, পেপে ইত্যাদি চাষাবাদ করে থাকে এবং তা বিক্রি করে মসজিদের উন্নয়নের কাজে ব্যয় করে।
এখন জানার বিষয় হল-
ক. এভাবে মাদরাসার সম্পদ মসজিদের জন্য ব্যয় করা জায়েয হবে কি না? যদি না হয় তবে পূর্বে ব্যয়কৃত অর্থের হুকুম কী?
খ) মসজিদের মাল মসজিদের ভিতরে বিক্রি করার ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কি? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর
ক) মাদরাসার জন্য ওয়াকফকৃত জমির আয়ের মালিক মাদরাসা। মাদরাসা প্রতিষ্ঠা না হলেও মাদরাসার জন্যই এ জমির আয় রেখে দেওয়া জরুরি। তাই অন্য কেউ মাদরাসার জমিতে চাষাবাদের ক্ষেত্রে দুটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে-এক. মাদরাসা কর্তৃপক্ষ/মুতাওয়াল্লির অনুমতি নেওয়া।
দুই. ঐ জমি ব্যবহারের জন্য মাদরাসা ফান্ডে নিয়মিত ভাড়া আদায় করা। এ টাকা কোনো আমানতদার ব্যক্তির নিকট জমা রাখতে হবে, যা ভবিষ্যতে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর সেখানে ব্যয় হবে। আর মসজিদ কর্তৃপক্ষের উপর কর্তব্য হল, এতদিন ধরে ঐ জমি চাষাবাদ করার কারণে এর ন্যায্য ভাড়া মাদরাসা কর্তৃপক্ষের নিকট বুঝিয়ে দেওয়া।-রদ্দুল মুহতার ৪/৩৬০; কিতাবুল ওয়াকফ, পৃষ্ঠা : ২০৩
খ) মসজিদের মালামালও মসজিদের ভেতরে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা জায়েয নেই। মসজিদ আল্লাহ তাআলার ঘর। ইবাদত-বন্দেগীর স্থান। ক্রয়বিক্রয়ের জায়গা মসজিদ নয়। তাই মসজিদের মালামালও বেচাকেনার প্রয়োজন হলে মসজিদের বাইরে তা সম্পন্ন করতে হবে।
হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মসজিদ আল্লাহর যিকর, নামায ও কুরআন তিলাওয়াতের জন্য নির্ধারিত স্থান। (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৮৫)
অপর একটি বর্ণনায় রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে ক্রয়বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১০৭৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৩০৩; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৯
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
ফতোয়া নং: ৬২৪১
তারিখ: ২৭/১০/২০১৭
বিষয়: ব্যবসা-চাকুরী

আমরা তিন ভাই একটি ঘরের সমহারে মালিক। বড় ভাই তার...

প্রশ্ন
আমরা তিন ভাই একটি ঘরের সমহারে মালিক। বড় ভাই তার অংশ বিক্রয়ের প্রস্তাব করলে ছোট ভাই খরিদ করতে রাজি হয়। উভয়ে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, উক্ত ঘরের মূল্য নির্ণয় করার জন্য তাদের দুজনের পছন্দমতো দ্বীনদার লোকের সমন্বয়ে পাঁচ জনের একটি কমিটি গঠিত হবে। তারা যে মূল্য নির্ধারণ করবে উভয় পক্ষ তা মেনে নিবে বলে ওয়াদাবদ্ধ হয়। কমিটি যখন মূল্য নির্ধারণ করে তখন ক্রেতা ছোট ভাই ওয়াদা মোতাবেক তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়। কিন্তু বড় ভাই ঘরের মূল্য কম হচ্ছে মনে করে কমিটির নিকট পুনরায় আরো সাত লক্ষ টাকা বেশি দাবি করেন। কমিটি মাসলাহাত মনে করে তা আমলে নিয়ে আরো পাঁচ লক্ষ টাকা বাড়িয়ে দেন। তখন বড় ভাই (বিক্রেতা) বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। তখন কমিটি সকলের উপস্থিতিতে লেনদেন ও রেজিস্ট্রির সময় নির্ধারণ করেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, রেজিস্ট্রির সময় তিনি বলেন আমি উক্ত মূল্যে বিক্রি করব না। আমার বিক্রি শুদ্ধ হয়নি। আমার শরীয়া মোতাবেক ফিরে যাওয়ার এখতিয়ার আছে। আমার প্রশ্ন হল, আমাদের এই ক্রয়-বিক্রয় শুদ্ধ হয়েছে কি না এবং বিক্রেতার ফিরে যাওয়ার এখতিয়ার আছে কি না। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর
প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সালিশের পক্ষ থেকে মূল্য নির্ধারণের পর বড় ভাই কেবল আলহামদুলিল্লাহ বলে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এরপর লেনদেন ও রেজিস্ট্রির জন্য সামনে একটি তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বক্তব্য দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, সালিশের মধ্যে বড় ভাইয়ের অংশের কেবল মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি এবং লেনদেন কিছুই হয়নি। বরং সামনের ঐ তারিখে ক্রয়-বিক্রয় ও লেনদেন সম্পন্ন করার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। আর বড় ভাই সালিশের ঐ সিদ্ধান্ত যেহেতু মেনে নিয়েছেন এবং আলহামদুলিল্লাহ বলে সন্তুষ্টিও প্রকাশ করেছেন সেহেতু পরবর্তীতে তার জন্য উক্ত মূল্যে বিক্রি করতে অসম্মতি জ্ঞাপন করা ঠিক হয়নি। এতে ওয়াদা ভঙ্গ করা এবং সালিশের সিদ্ধান্ত অমান্য করার গুনাহ হয়েছে। তাই বড় ভাইয়ের উচিত হবে, সালিশের সিদ্ধান্ত মোতাবেক উক্ত মূল্যেই ছোট ভাইয়ের নিকট তা বিক্রি করে দেওয়া।
-বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩১৮
উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ