পিতামাতার জন্য দোআ, পিতামাতার জন্য যে দুআ করতে হয়।



(ক) পিতামাতার জন্য দো‘আ :
(1) رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِيْ صَغِيْراً، (الإسراء 24)-
‘রববীরহাম্হুমা কামা রববাইয়া-নী ছগীরা’ (হে আমার প্রতিপালক! তুমি তাদের উপরে দয়া কর, যেমন তারা আমাকে ছোটকালে দয়ার সাথে প্রতিপালন করেছিলেন)’ (ইসরা ১৭/২৪)। কুরআনের আয়াত হওয়ার কারণে দো‘আটি সিজদায় পড়া যাবে না। তবে শেষ বৈঠকে দো‘আয়ে মাছূরাহর পরে পড়া যাবে।
(২) رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ-
রববানাগফিরলী ওয়ালিওয়া-লিদাইয়া ওয়া লিলমু’মিনীনা ইয়াউমা ইয়াক্বূমুল হিসা-ব’ (হে আমাদের প্রতিপালক! আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা কর, যেদিন হিসাব কায়েম হবে’ (ইবরাহীম ১৪/৪১)।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ জান্নাতে তার নেককার বান্দাদের মর্যাদার স্তর উন্নীত করবেন। তখন বান্দা বলবে, হে আল্লাহ! কেন এটা আমার জন্য করা হচ্ছে? জবাবে আল্লাহ বলবেন, তোমার জন্য তোমার সন্তানের ক্ষমা প্রার্থনার কারণে (بِاسْتِغْفَارِ وَلَدِكَ لَكَ)’। [136]
(খ) ঋণদাতা (বা যে কোন দাতার) জন্য দো‘আ :
بَارَكَ اللهُ تَعَالَى فِيْ أَهْلِكَ وَمَالِكَ ‘বা-রাকাল্লা-হু তা‘আলা ফী আহলিকা ওয়া মা-লিকা’ (মহান আল্লাহ আপনার পরিবারে ও সম্পদে বরকত দান করুন)। [137]
উল্লেখ্য যে, বহুল প্রচলিত দো‘আ بَارَكَ اللهُ فِيْكَ (أَوْ فِيْكُمْ) ‘বা-রাকাল্লা-হু ফীকা বা ফীকুম’ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছটি ‘যঈফ’। [138] তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বরকতের দো‘আ করেছেন বলে ছহীহ হাদীছ সমূহে প্রমাণ রয়েছে। সে হিসাবে এটি বলা জায়েয।
(গ) উপকারী ব্যক্তির জন্য দো‘আ :
جَزَاكَ اللهُ خَيْرًا জাযা-কাল্লা-হু খায়রান (আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন)।[139] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ لَمْ يَشْكُرِ النَّاسَ لَمْ يَشْكُرِ اللهَ ‘যে ব্যক্তি মানুষের শুকরিয়া আদায় করে না, সে ব্যক্তি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে না’।[140] আল্লাহ বলেন, لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তাহ’লে অবশ্যই আমি তোমাদের বেশী বেশী দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তাহ’লে জেনো নিশ্চয়ই আমার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর’ (ইবরাহীম ১৪/৭)।
(ঘ) নিজের জন্য দো‘আ [সোলায়মান (আঃ)-এর দো‘আর ন্যায়] :
رَبِّ أَوْزِعْنِيْ أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِيْ أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَى وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَدْخِلْنِيْ بِرَحْمَتِكَ فِيْ عِبَادِكَ الصَّالِحِيْنَ- (النمل 19)-
উচ্চারণ : ‘রবেব আওঝি‘নী আন আশকুরা নি‘মাতাকাল্লাতী আন‘আমতা ‘আলাইয়া, ওয়া ‘আলা ওয়ালেদাইয়া, ওয়া আন আ‘মালা ছ-লেহান তারযা-হু, ওয়া আদখিলনী বি রহমাতিকা ফী ‘ইবা-দিকাছ ছ-লেহীন।
অনুবাদ : ‘হে আমার পালনকর্তা! আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে যে নে‘মত তুমি দান করেছ, তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার শক্তি আমাকে দান কর এবং আমি যেন এমন সৎকর্ম করতে পারি, যা তুমি পসন্দ কর এবং আমাকে তোমার অনুগ্রহে তোমার সৎকর্মশীল বান্দাগণের অন্তর্ভুক্ত কর’ (নমল ২৭/১৯)।
(ঙ) ৪০ বছর বয়সে উপনীত হওয়ার পর নিজের ও সন্তানদের কল্যাণের জন্য দো‘আ :
رَبِّ أَوْزِعْنِيْ أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِيْ أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَى وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَصْلِحْ لِيْ فِيْ ذُرِّيَّتِيْ إِنِّيْ تُبْتُ إِلَيْكَ وَإِنِّيْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ- (الأحقاف 15)-
উচ্চারণ : ‘রবেব আওঝি‘নী আন আশকুরা নি‘মাতাকাল্লাতি আন‘আমতা ‘আলাইয়া, ওয়া ‘আলা ওয়া-লেদাইয়া, ওয়া আন আ‘মালা ছ-লেহান তারযা-হু, ওয়া আছলিহ লী ফী যুররিইয়াতী, ইন্নী তুবতু ইলাইকা, ওয়া ইন্নী মিনাল মুসলিমীন’।
অনুবাদ : ‘হে আমার পালনকর্তা! আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে যে নে‘মত তুমি দান করেছ, তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার শক্তি আমাকে দান কর এবং আমি যেন এমন সৎকর্ম করতে পারি, যা তুমি পসন্দ কর এবং আমার জন্য আমার সন্তানদের মধ্যে তুমি কল্যাণ দান কর। আমি তোমার দিকে ফিরে গেলাম এবং আমি তোমার একান্ত আজ্ঞাবহদের অন্তর্ভুক্ত’ (আহক্বাফ ৪৬/১৫)।
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, এই দো‘আ আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ) করেছিলেন, যখন তিনি ৪০ বছর বয়সে উপনীত হন। ফলে তিনিই ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি, যার সকল সন্তান ও পিতা-মাতা (পরবর্তীতে) ইসলাম কবুল করেছিলেন’ (কুরতুবী)। উল্লেখ্য যে, হযরত আবুবকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর চাইতে বয়সে দু’বছরের ছোট ছিলেন।
[136] . আহমাদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৩৫৪ ‘ দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা’ অনুচ্ছেদ-৪; ছহীহাহ হা/১৫৯৮। [137] . নাসাঈ, মিশকাত হা/২৯২৬, ‘ব্যবসা-বাণিজ্য’ অধ্যায়-১১, অনুচ্ছেদ-৯। [138] . বায়হাক্বী-দালায়েলুন নবুওয়াত, মিশকাত হা/১৮৮০; সনদ যঈফ, ‘যাকাত’ অধ্যায়-১১, অনুচ্ছেদ-৫। [139] . তিরমিযী, মিশকাত হা/৩০২৪ ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়-১১, অনুচ্ছেদ-১৭; বুখারী হা/৩৩৬ ‘তায়াম্মুম’ অধ্যায়-৭, অনুচ্ছেদ-২। [140] . আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৩০২৫।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ