মুসাফা করার গুরুত্ব ও ফযিলত, নারীর সাথে মুসাফা জায়েজ নয়।

বারা’ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘দু’জন মুসলিম সাক্ষাৎকালে মুসাফাহা করলেই একে অপর থেকে পৃথক হবার পূর্বেই তাদের (গুনাহ) মাফ করে দেওয়া হয়।’’ (আবূ দাউদ) [1]।

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একটা লোক বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্য থেকে কোন লোক তার ভাইয়ের সাথে কিংবা তার বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করলে তার সামনে কি মাথা নত করবে?’ তিনি বললেন, ‘‘না।’’ সে বলল, ‘তাহলে কি তাকে জড়িয়ে ধরে চুমা দেবে?’ তিনি বললেন, ‘‘না।’’ সে বলল, ‘তাহলে কি তার হাত ধরে তার সঙ্গে মুসাফাহা করবে?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ।’’ (তিরমিযী-হাসান) [2]

আবূল খাত্ত্বাব ক্বাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে জিজ্ঞাসা করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের মধ্যে কি মুসাফাহা (করমর্দন) করার প্রথা ছিল?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ (বুখারী) [3]

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন ইয়ামানবাসীরা আগমন করল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে উঠলেন, ‘‘ইয়ামানবাসীরা তোমাদের নিকট আগমন করেছে।’’ (আনাস বলেন,) এরাই সর্বপ্রথম মুসাফাহা আনয়ন করেছিল। (আবূ দাউদ-বিশুদ্ধ সূত্রে) [4]

আবূ যার্র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘কোন পুণ্য কাজকে তুমি অবশ্যই তুচ্ছ মনে করো না, যদিও তা তোমার ভাইয়ের সাথে সহাস্য বদনে সাক্ষাৎ করার পুণ্যই হোক না কেন।’’ (মুসলিম) [1]

মহান আল্লাহ বলেছেন,

﴿ فَأَمَّا مَنۡ أُوتِيَ كِتَٰبَهُۥ بِيَمِينِهِۦ فَيَقُولُ هَآؤُمُ ٱقۡرَءُواْ كِتَٰبِيَهۡ ١٩ ﴾ [الحاقة: ١٩]

অর্থাৎ “সুতরাং যাকে তার আমলনামা তার ডান হাতে দেওয়া হবে সে বলবে, এই নাও, আমার আমলনামা পড়ে দেখ।” (সূরা হা-ক্কাহ ১৯ আয়াত)

তিনি বলেছেন,

﴿ فَأَصۡحَٰبُ ٱلۡمَيۡمَنَةِ مَآ أَصۡحَٰبُ ٱلۡمَيۡمَنَةِ ٨ وَأَصۡحَٰبُ ٱلۡمَشۡ‍َٔمَةِ مَآ أَصۡحَٰبُ ٱلۡمَشۡ‍َٔمَةِ ٩ ﴾ [الواقعة: ٨،  ٩]

অর্থাৎ “ডানওয়ালারা; কত ভাগ্যবান ডানওয়ালারা! আর বামওয়ালারা; কত হতভাগ্য বামওয়ালারা!” (সূরা ওয়াকিয়াহ ৮-৯ আয়াত)

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমস্ত কাজে (যেমন) ওযূ করা, মাথা আঁচড়ানো ও জুতা পরা (প্রভৃতি সমস্ত ভাল) কাজে ডান দিক থেকে শুরু করা পছন্দ করতেন।’ (বুখারী ও মুসলিম) [6]

উমায়মা বিনতে রুকায়কা (রাঃ) বলেন, বায়আত হওয়ার উদ্দেশ্যে আমি কতক মহিলা সমভিব্যাহারে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি আমাদের বলেন, যতদূর তোমাদের সামর্থ্যে ও শক্তিতে কুলায়। আমি মহিলাদের সাথে মুসাফাহা (করমর্দন) করি না।[7]

ইবনু মাস‘ঊদ  হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  আমার হাত তাঁর উভয় হস্তের মধ্যে রেখে আমাকে এমনভাবে তাশাহ্হুদ শিখিয়েছেন, যেভাবে তিনি আমাকে কুরআনের সূরা শিখাতেনঃ التَّحِيَّاتُ للهِ÷ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلٰى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه” وَرَسُوْلُه” এ সময় তিনি আমাদের মাঝেই অবস্থান করছিলেন। তারপর যখন তাঁর ওফাত হয়ে গেল, তখন থেকে আমরা السَّلاَمُ عَلَيْكَ এ স্থলে السَّلاَمُ عَلَى النَّبِيِّ পড়তে লাগলাম। [8] এই হাদিস থেকে বুঝা যায় যে কাসূল ছাঃ দুই হাত দারা মুসাফা করেন নি, তিনি দুই হাত ধরে তাশাহুদ শিখিয়েছিলেন ৷
[1] আবূ দাউদ ৫২১২, ৫২১১, তিরমিযী ২৭২৭, ইবনু মাজাহ ৩৭০৩ হাদিসের মানঃ সহিহ
[2] তিরমিযী ২৭২৮, ইবনু মাজাহ ৩৭০২ হাদিসের মানঃ হাসান
[3] সহীহুল বুখারী ৬২৬৩, তিরমিযী ২৭২৯ হাদিসের মানঃ সহিহ
[4] আবূ দাউদ ৫২১৩, আহমাদ ১২৮০০, ১৩২১২ হাদিসের মানঃ সহিহ
[5] মুসলিম ২৬২৬, তিরমিযী ১৮৩৩, ইবনু মাজাহ ৩৩৬২, দারেমী ২০৭৯ হাদিসের মানঃ সহিহ
[6] সহীহুল বুখারী ১৬৮, ৪২৬, ৫৩৮০, ৫৮৫৪, ৫৯২৬, মুসলিম ২৬৮, তিরমিযী ৬০৮, ৪২১, নাসায়ী ৫২৪০, আবূ দাউদ ৪১৪০, ইবনু মাজাহ ৪০১ , আহমাদ ২৪১০৬, ২৪৪৬৯, ২৪৬২০, ২৪৭৯৩ ২৪৮৪৫ , ২৫০১৮, ২৫১৩৬, ২৫৭৫১ হাদিসের মানঃ সহিহ
[7]তিরমিযী ১৫৯৭, নাসায়ী ৪১৮১, আহমাদ ২৬৪৬৬, মুয়াত্তা মালেক ১৮৪২, ইবনু হিব্বান ৫৬৫৩, আল-হুমায়দী ৩৪১, আল-হাকিম ফিল মুসতাদরাক ৪/৭১, সহীহাহ ৫২৯। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। হাদিসের মানঃ সহিহ
[8]সহীহ বুখারী (তাওহীদ),৬২৬৫,৮৩১ আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭১৮,
হাদিসের মানঃ সহিহ
মুসাফা করার গুরুত্ব,islam k janun

সূরা আল হাশর:7 - রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। সূরা মুহাম্মদ:33 - হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রসূলের (সাঃ) আনুগত্য কর এবং নিজেদের কর্ম বিনষ্ট করো না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ