ইমাম মাহদীর আগমন
সহীহ
হাদীছের বিবরণ থেকে অবগত হওয়া যায় যে, আখেরী যামানায় ইমাম মাহদীর
আত্মপ্রকাশ কিয়ামতের সর্বপ্রথম বড় আলামত। তিনি আগমণ করে এই উম্মাতের
নের্তৃত্বের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। ইসলাম ধর্মকে সংস্কার করবেন এবং
ইসলামী শরীয়তের মাধ্যমে বিচার-ফয়সালা করবেন। পৃথিবী হতে জুলুম-নির্যাতন দূর
করে ন্যায়-ইনসাফ দ্বারা তা ভরে দিবেন। উম্মতে মুহাম্মাদী তাঁর আমলে বিরাট
কল্যাণের ভিতর থাকবে।
ইমাম ইবনে কাছীর (রঃ) বলেনঃ তখন ফল-ফলাদীতে প্রচুর বরকত হবে, মানুষের সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, ইসলাম বিজয়ী হবে, ইসলামের শত্রুরা পরাজিত হবে এবং সকল প্রকার কল্যাণ বিরাজ করবে।[1]
ইমাম ইবনে কাছীর (রঃ) বলেনঃ তখন ফল-ফলাদীতে প্রচুর বরকত হবে, মানুষের সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, ইসলাম বিজয়ী হবে, ইসলামের শত্রুরা পরাজিত হবে এবং সকল প্রকার কল্যাণ বিরাজ করবে।[1]
ইমাম মাহদীর পরিচয়ঃ
তাঁর
নাম হবে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামের মতই এবং
তাঁর পিতার নাম হবে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর পিতার
নামের মতই। তিনি হবেন হাসান বিন আলী (রাঃ) এর বংশ থেকে।
ইবনে কাছীর (রঃ) বলেনঃ ‘‘তিনি হলেন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল-ফাতেমী আল-হাসানী’’।[2]
ইবনে কাছীর (রঃ) বলেনঃ ‘‘তিনি হলেন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল-ফাতেমী আল-হাসানী’’।[2]
তাঁর আগমণের স্থানঃ
তিনি
পূর্বের কোন একটি অঞ্চল থেকে প্রকাশিত হবেন। তবে পূর্ব দিক বলতে মদীনা
মুনাওয়ারা হতে পূর্বের দিক বুঝানো হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেনঃ ‘‘তোমাদের গুপ্তধনের নিকট তিনজন লোক ঝগড়া করবে। প্রত্যেকেই
হবে খলীফার পুত্র। কেউ তা দখল করতে পারবেনা। অতঃপর পূর্বের দিক থেকে কালো
পতাকাধারী একদল সৈনিক আসবে। তারা ব্যাপক হত্যাকান্ড চালাবে। হাদীছের
বর্ণনাকারী বলেনঃ ‘‘এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন কিছু
বিষয়ের কথা বর্ণনা করলেন যা আমি স্মরণ রাখতে পারিনি। তোমরা যখন তাদেরকে
দেখতে পাবে তখন তাদের নেতার হাতে বায়আত করবে। যদিও বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে
উপস্থিত হতে হয়। কেননা তিনি হলেন আল্লাহর খলীফা মাহদী’’।[3]
ইমাম ইবনে কাছীর (রঃ) বলেনঃ
‘‘উল্লেখিত হাদীছে যে ধন-ভান্ডারের কথা বলা হয়েছে তা হল কা’বা ঘরের
ধন-ভান্ডার। তিনজন খলীফার পুত্র তা দখল করার জন্য ঝগড়া করবে। কেউ তা দখল
করতে পারবেনা। সর্বশেষে আখেরী যামানায় পূর্বের কোন একটি দেশ হতে মাহদী আগমণ
করবেন। মূর্খ শিয়ারা সামেরার গর্ত হতে ইমাম মাহদী বের হওয়ার যে দাবী করে
তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তারা আরো দাবী করে যে তিনি গর্তের মাঝে লুকায়িত আছেন।
শিয়াদের একটি দল প্রতিদিন সে গর্তের কাছে দাঁড়িয়ে আপেক্ষা করে। এ ধরণের আরো
অনেক হাস্যকর কাল্পনিক ঘটনা বর্ণিত আছে। এসমস্ত কথার পক্ষে কোন দলীল নেই;
বরং কুরআন, হাদীছ এবং বিবেক বহির্ভূত কথা। তিনি আরো বলেনঃ পূর্বাঞ্চলের
লোকেরা তাঁকে সাহায্য করবে এবং তাঁর শাসনকে সমর্থন করবে। তাঁরা কালো
পতাকাধারী হবেন। মোটকথা আখেরী যামানায় পূর্বদেশ হতে তাঁর বের হওয়া সত্য।
কা’বা ঘরের পাশে তাঁর জন্যে বায়আত করা হবে’’।[4]
• মাহদী আগমণের দলীলসমূহঃ
ইমাম
মাহদীর আগমণের ব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীছ রয়েছে। কোন কোন হাদীছে
প্রকাশ্যভাবে তাঁর নাম উল্লেখ আছে। আবার কোন কোন হাদীছে তাঁর গুণাগুণ
উল্লেখিত হয়েছে। তাঁর আগমণ সত্য হওয়ার জন্য এ সমস্ত হাদীছই যথেষ্ট।
১)
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা
করেন, ‘‘আখেরী যামানায় আমার উম্মাতের ভিতরে মাহদীর আগমণ ঘটবে। তাঁর
শাসনকালে আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে, যমিন প্রচুর ফসল উৎপন্ন করবে,
তিনি মানুষের মাঝে সমানভাবে প্রচুর সম্পদ বিতরণ করবেন, গৃহপালিত পশুর
সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং উম্মাতে মুহাম্মাদীর সম্মান বৃদ্ধি পাবে। তিনি সাত
বছর কিংবা আট বছর জীবিত থাকবেন’’।[5]
২)
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে আরও বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেনঃ ‘‘আমি তোমাদেরকে মাহদীর আগমণ সম্পর্কে সুসংবাদ দিচ্ছি।
মানুষেরা যখন মতবিরোধে লিপ্ত হবে তখন তিনি প্রেরিত হবেন। পৃথিবী হতে
জুলুম-নির্যাতন দূর করে ন্যায়-ইনসাফ দ্বারা তা ভরে দিবেন। আসমান-যমীনের সকল
অধিবাসী তার উপর সন্তুষ্ট হবেন। তিনি মানুষের মাঝে সমানভাবে প্রচুর সম্পদ
বিতরণ করবেন’’।[6]
৩) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
الْمَهْدِيُّ
مِنِّي أَجْلَى الْجَبْهَةِ أَقْنَى الْأَنْفِ يَمْلَأُ الْأَرْضَ قِسْطًا
وَعَدْلًا كَمَا مُلِئَتْ جَوْرًا وَظُلْمًا يَمْلِكُ سَبْعَ سِنِينَ
‘‘মাহদী
আসবেন আমার বংশধর হতে। তাঁর কপাল হবে উজ্জল এবং নাক হবে উঁচু। পৃথিবী হতে
যুলুম-নির্যাতন দূর করে দিয়ে ন্যায়-ইনসাফ দ্বারা তা ভরে দিবেন। সাত বছর
পর্যন্ত তিনি রাজত্ব করবেন’’।[7]
৪)
উম্মে সালামা (রাঃ) বলেনঃ ‘‘আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে
বলতে শুনেছিঃ মাহদীর আগমণ হবে আমার পরিবারের ফাতেমার বংশধর হতে’’।[8]
৫)
জাবের (রাঃ) বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ঈসা
(আঃ) যখন অবতরণ করবেন তখন মুসলমানদের আমীর তাঁকে বলবেনঃ আসুন! আমাদের
নামাযের ইমামতি করুন। ঈসা (আঃ) বলবেনঃ বরং তোমাদের আমীর তোমাদের মধ্যে
হতেই। এই উম্মতের সম্মানের কারণেই তিনি এ মন্তব্য করবেন’’।[9]
ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম আল-মানারুল মুনীফ গ্রন্থে উক্ত হাদীছটি বর্ণনা
করেছেন। যেই আমীরের ইমামতিতে মুসলমানগণ নামায পড়বেন, তিন তাঁর নামও উল্লেখ
করেছেন। আর তিনি হলেন মাহদী। এই হাদীছ সম্পর্কে ইবনুল কায়্যেম বলেনঃ
হাদীছের সনদ খুব ভাল।[10]
৬)
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা
করেনঃ ‘‘ঈসা ইবনে মারইয়াম যেই ইমামের পিছনে নামায পড়বেন তিনি হবেন আমাদের
মধ্যে হতে’’।[11]
৭)
নবী সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘ততদিন দুনিয়া ধ্বংস হবেনা
যতদিন না আমার পরিবারের একজন লোক আরবদের বাদশা হবেন। তাঁর নাম হবে আমার
নামে এবং তাঁর পিতার নাম হবে আমার পিতার নামের অনুরূপ’’।[12] অর্থাৎ তাঁর
নাম হবে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ।
৮)
উম্মে সালামা (রাঃ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
‘‘কা’বা ঘরের পাশে একজন লোক আশ্রয় নিবে। তাঁর বিরুদ্ধে একদল সৈনিক প্রেরণ
করা হবে। সৈন্যরা যখন ‘বায়দা’ নামক স্থানে পৌঁছবে তখন যমিন তাদেরকে গ্রাস
করে ফেলবে। উম্মে সালামা বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম অপছন্দ সত্ত্বেও যারা তাদের সাথে যাবে তাদের
অবস্থা কি হবে? উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তাকে সহ
যমিন ধসে যাবে। তবে কিয়ামতের দিন সে আপন নিয়তের উপরে পুনরুত্থিত
হবে’’।[13]
৯)
হাফসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
‘‘অচিরেই এই ঘরের অর্থাৎ কা’বা ঘরের পাশে একদল লোক আশ্রয় গ্রহণ করবে।
শত্রুর সাথে মোকাবেলা করার মত তাদের কোন উল্লেখযোগ্য সৈনিক কিংবা
অস্ত্র-শস্ত্র বা প্রস্ত্ততি থাকবেনা। তাদেরকে হত্যা করার জন্য একদল সৈনিক
প্রেরণ করা হবে। সৈন্যরা যখন ‘বায়দা’ নামক স্থানে পৌঁছবে তখন যমিন তাদেরকে
গ্রাস করে ফেলবে’’।[14]
১০)
আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ ‘‘একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুমের
ঘোরে এলোমেলো কিছু কাজ করলেন। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ জাগ্রত হলে আমরা তাঁকে
বললামঃ ঘুমের মধ্যে আপনি আজ এমন কিছু কাজ করেছেন যা অতীতে কখনও করেন নি।
তিনি বললেনঃ আমার উম্মাতের একদল লোক কা’বার পাশে আশ্রয় গ্রহণকারী কুরাইশ
বংশের একজন লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে। তারা যখন
‘বায়দা’ নামক স্থানে পৌঁছবে তখন তাদেরকে নিয়ে যমিন ধসে যাবে। আমরা বললামঃ
হে আল্লাহর রাসূল! তখন তো রাস্তায় বিভিন্ন ধরণের লোক থাকবে। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তাদের ভিতর এমন লোক থাকবে যারা
নিজেদেরকে গোমরাহ জেনেও বের হবে, কাউকে বল প্রয়োগ করে আনা হবে এবং তাদের
মধ্যে মুসাফিরও থাকবে। তারা সকলেই ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে সকলকেই আল্লাহ
তা’আলা নিয়তের উপর পুনরুত্থিত করবেন।[15]
তাদেরকে নিয়তের উপর পুনরুত্থিত করার অর্থ তাদের কেউ জান্নাতে যাবে আবার
কেউ জাহান্নামে প্রবেশ করবে। যারা নিজেদের ভ্রান্ত জেনেও উক্ত ইমামের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বের হবে তারা জাহান্নামী হবে। আর যাদেরকে বাধ্য করে
আনা হবে তাদের কোন অপরাধ হবেনা। এমনিভাবে পথিক ও পার্শ্ববর্তী স্থানের
লোকেরাও উক্ত ভূমিধস থেকে রেহাই পাবেনা। কিন্তু সকল শ্রেণীর লোক নিজ নিজ
আমল নিয়ে পুনরুত্থিত হবে।
উপরের তিনটি হাদীছ থেকে জানা গেল যেই লোকটি কা’বার প্রান্তে আশ্রয় গ্রহণ
করবেন তিনি হবেন কুরাইশ বংশের অন্তর্ভূক্ত। তিনি আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্ত
হবেন এবং তাঁর শত্রুদেরকে ভূমিধসের মাধ্যমে ধ্বংস করবেন।
• বুখারী ও মুসলিম শরীফে ইমাম মাহদী সম্পর্কিত কিছু হাদীছঃ
১) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
كَيْفَ أَنْتُمْ إِذَا نَزَلَ ابْنُ مَرْيَمَ فِيكُمْ وَإِمَامُكُمْ مِنْكُمْ
‘‘সেদিন
কেমন হবে তোমাদের অবস্থা যেদিন তোমাদের মধ্যে ঈসা ইবনে মারইয়াম নেমে আসবেন
এবং তোমাদের মধ্যে হতেই একজন ইমাম হবেন’’।[16] অর্থাৎ তোমাদের সাথে
জামা'তে শরীক হয়ে ঈসা (আঃ) তোমাদের ইমামের পিছনে নামায আদায় করবেন।
২)
জাবের (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে
শুনেছি, ‘‘আমার উম্মাতের একটি দল হকের উপর বিজয়ী থেকে কিয়ামত পর্যন্ত লড়াই
করতে থাকবে। অতঃপর ঈসা ইবনে মারইয়াম অবতরণ করবেন। তাকে দেখে মুসলমানদের
আমীর বলবেনঃ আসুন! আমাদেরকে নিয়ে নামাযের ইমামতি করুন। ঈসা (আঃ) বলবেনঃ না;
বরং তোমাদের আমীর তোমাদের মধ্যে হতেই। এই উম্মাতের সম্মানের কারণেই তিনি এ
মন্তব্য করবেন’’।[17]
৩)
নবী সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘আখেরী যামানায় আমার উম্মাতের
মধ্যে একজন খলীফা হবেন যিনি মানুষের মধ্যে মুক্ত হস্তে অগণিতভাবে ধন-সম্পদ
বিতরণ করবেন’’।[18]
• মাহদী আগমণের ব্যাপারে কতিপয় বিজ্ঞ আলেমের বক্তব্যঃ
ক)
হাফেয আবুল হাসান আল-আবেরী (রঃ) বলেনঃ ‘‘মাহদী সম্পর্কিত হাদীছগুলো নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে মুতাওয়াতির হিসেবে বর্ণিত হয়েছে।
তিনি আহলে বায়ত তথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বংশধরের
অন্তর্ভূক্ত হবেন। সাত বছর রাজত্ব করবেন। তাঁর রাজত্বকালে পৃথিবী
ন্যায়-ইনসাফে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। তাঁর রাজত্বকালে ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ)
আগমণ করে দাজ্জালকে হত্যা করবেন। ঈসা (আঃ) তাঁর পিছনে নামায পড়বেন’’।[19]
খ)
ইমাম শাওকানী (রঃ) বলেনঃ ‘‘যতদূর জানা যায় মাহদীর ব্যাপারে ৫০টি
মুতাওয়াতির হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে সহীহ, হাসান ও সামান্য
ত্রুটি বিশিষ্ট হাদীছ, যা অন্য সূত্রে বর্ণিত হওয়ার কারণে ত্রুটিমুক্ত হয়ে
গেছে। সুতরাং বিনা সন্দেহে হাদীছগুলো মুতাওয়াতির’’।[20]
গ)
শায়খ আব্দুল আযীয বিন বায (রঃ) বলেনঃ মাহদীর বিষয়টি অতি সুস্পষ্ট। এ
ব্যাপারে হাদীছগুলো মুতাওয়াতির[21] সূত্রে বর্ণিত। তাঁর আগমণ সত্য। তিনি
হলেন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল-হাসানী আল-ফাতেমী। আখেরী যামানায় তিনি
আগমণ করে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবেন। অন্যায়-অবিচার প্রতিহত করবেন। তাঁর
মাধ্যমে আল্লাহ সত্য ও কল্যাণের ঝান্ডা বলুন্দ করবেন। যে ব্যক্তি আখেরী
যামানায় ইমাম মাহদীর আগমণকে অস্বীকার করবে তার কথায় কর্ণপাত করা
যাবেনা।[22]
ঘ)
শায়খ আব্দুল মুহসিন আল-আববাদ বলেনঃ ‘‘২৬জন সাহাবী থেকে মাহদীর আগমণ
সম্পর্কিত হাদীছগুলো বর্ণিত হয়েছে। ৩৬টি হাদীছ গ্রন্থে এ সমস্ত হাদীছ
বর্ণিত হয়েছে’’।[23]
উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম, ইমাম মাহদীর আগমণে বিশ্বাস স্থাপন
করা ওয়াজিব। কারণ তাঁর আগমণের ব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। ঈসা
ইবনে মারইয়াম (আঃ) যখন আকাশ থেকে অবতরণ করবেন তখন ইমাম মাহদীর নের্তৃত্বে
মুসলমানগণ স্বসম্মান ও সুখণ্ডশান্তিতে বসবাস করতে থাকবেন। ইমাম মাহদী
মুসলমানদেরকে নিয়ে নামাযের ইমামতি করার জন্য প্রস্ত্ততি নিতে থাকবেন। এমন
সময় ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) আকাশ থেকে আগমণ করবেন। ইমাম মাহদী ঈসা (আঃ)কে
দেখে বলবেনঃ সামনে অগ্রসর হোন এবং আমাদের ইমামতি করুন। হাদীছের ভাষ্য
অনুযায়ী আরো জানা যায় যে, ইমাম মাহদীর সময় মুসলমানদের ঈমান ও শক্তি ধ্বংস
করার জন্য দাজ্জালের আগমণ ঘটবে। দাজ্জালের মোকাবেলা করার জন্য আল্লাহ তাআলা
ঈসা (আঃ) কে পাঠাবেন। ইমাম মাহদীও তাঁর সাথে মিলিত হয়ে দাজ্জালের বিরুদ্ধে
যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে তাকে এবং তার বাহিনীকে খতম করে মুসলমানদেরকে দাজ্জালের
ফিতনা হতে মুক্ত করবেন।
ঙ) সিদ্দিক হাসান খান ভূপালী (রঃ) বলেনঃ ‘‘মাহদীর ব্যাপারে অনেক হাদীছ বিভিন্ন গ্রন্থে মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত হয়েছে’’।[24]
চ)
সুনানে আবু দাউদ শরীফের ভাষ্যকার আল্লামা শামছুল হক আযীমাবাদী (রঃ) বলেনঃ
‘‘সর্ব যুগের সকল মুসলমানদের মাঝে একথা অতি প্রসিদ্ধ যে, আখেরী যামানায় নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বংশধর হতে একজন সৎলোকের আগমণ ঘটবে।
তিনি এই দ্বীনকে শক্তিশালী করবেন। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন। মুসলমানগণ
তাঁর অনুসরণ করবে। সমস্ত ইসলামী রাজ্যের উপর তাঁর আধিপত্য বিস্তার হবে।
তাঁর নাম হবে মাহদী। তাঁর আগমণের পরেই সহীহ হাদীছে বর্ণিত কিয়ামতের
অন্যান্য বড় আলামতগুলো প্রকাশিত হবে। তাঁর যামানাতেই ঈসা (আঃ) আগমণ করবেন
এবং দাজ্জালকে হত্যা করবেন। এ ব্যাপারে মাহদীও তাঁকে সহযোগিতা করবেন।
উপরের
বিস্তারিত আলোচনা থেকে ইমাম মাহদী সম্পর্কে আমরা যা অবগত হলাম তার
সংক্ষিপ্ত কথা হল আখেরী যামানায় এই উম্মতের মধ্যে একজন সৎ লোক আগমণ করবেন।
মাকামে ইবরাহীম এবং রুকনে ইয়ামানীর মধ্যবর্তী স্থানে মুসলমানগণ তাঁর হাতে
বায়আত করবে। তাঁকে হত্যা করার জন্য সিরিয়া থেকে একদল সৈন্য প্রেরণ করা হবে।
সৈন্যদলটি যখন মক্কার পথে ‘বায়দা’ নামক স্থানে পৌঁছবে তখন ভূমিধসে সকল
সৈন্য হালাক হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা ইমাম মাহদীকে এভাবে তাঁর শত্রুদের হাত
থেকে হেফাযত করবেন। তিনি মুসলমানদের খলীফা হয়ে ইসলামের মাধ্যমে
বিচার-ফয়সালা করবেন। তাঁর যামানায় মুসলমানদের মাঝে চরম সুখণ্ডশান্তি ও
নেয়া'মত বিরাজ করবে। অতঃপর তিনি দামেস্কের মসজিদে ফজরের নামাযের সময় ঈসা
(আঃ)এর সাথে সাক্ষাৎ করবেন। প্রথমে তিনি ঈসা (আঃ) কে নামাযের ইমামতি করার
অনুরোধ জানাবেন। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করলে স্বয়ং ইমাম মাহদী ইমামতি
করবেন। ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) ইমাম মাহদীর পিছনে মুক্তাদী হয়ে নামায আদায়
করবেন। অতঃপর তিনি ঈসা (আঃ) এর সাথে যোগ দিয়ে দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
করার জন্য বের হবেন এবং দাজ্জাল হত্যার কাজে ঈসা (আঃ) কে সহায়তা করবেন।
তারপর তিনি সাত বছর মতান্তরে নয় বছর পৃথিবীতে বসবাস করে মৃত্যু বরণ করবেন।
মুসলমানগণ তাঁর জানাযা নামায পড়বে।
_______________________________________________________________________________________
[1] النهاية/ الفتن و الملاحم ( ১/ ৩১) -
[2] - নিহায়া, অধ্যায়ঃ আল-ফিতান ওয়াল মালাহিম।
[3] - ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান। ইমাম আলবানী বলেনঃ ‘আল্লাহর খলীফা’ কথাটি ব্যতীত হাদীছের বাকী অংশ সহীহ।
[4] - (النهاية/ الفتن و الملاحم ( ১/২৯-৩০
[5] - মুস্তাদরাকুল হাকিম। ইমাম আলবানী (রঃ) হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন। সিলসিলায়ে সাহীহা, হাদীছ নং- ৭১১।
[6] - মুসনাদে আহমাদ। ইমাম হায়ছামী বলেনঃ হাদীছের বর্ণনাকারীগন নির্ভরযোগ্য। মাজমাউ য্ যাওয়ায়েদ (৭/৩১৩-৩১৪)।
[7] - আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাহদী, সহীহুল জামে আস্ সাগীর, হাদীছ নং- ৬৬১২।
[8] - আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ। ইমাম আলবানী (রঃ) সহীহ বলেছেন। সহীহুল জামেউ, হাদীছ নং- ৬৬১২।
[9] - আল-মানারুল মুনীফ, (পৃষ্ঠা নং-১৪৭-১৪৮) ইমাম ইবনুল কায়্যিম বলেনঃ হাদীছের সনদ ভাল।
[10] - আল-মানারুল মুনীফ, পৃষ্ঠা নং- ১৪৮।
[11]- আবু নুয়াইম আখবারুল মাহদী নামক গ্রন্থে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। সহীহুল জামে আস্-সাগীর, হাদীছ নং- ৫৭৯৬।
[12] - মুসনাদে আহমাদ, সহীহুল জামেউস্ সাগীর, হাদীছ নং- ৫১৮০।
[13] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।
[14] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।
[15] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।
[16] - বুখারী, অধ্যায়ঃ আহাদীছুল আম্বীয়া, মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।
[17] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।
[18] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।
[19] - تهذيب الكمال فى أسماء الرجال (৩ /১১৯৪)
[20] - نظم المتناثر من الحديث المتواتر (ص ১৪৫-১৪৬)
[21]
- উসূলে হাদীছের পরিভাষায় মুতাওয়াতির ঐ হাদীছকে বলা হয় যার বর্ণনাকারীর
সংখ্যা অধিক হওয়ার কারণে মিথ্যার উপর তাদের একমত হওয়ার কল্পনাও করা যায়না।
[22] - আশরাতুস্ সাআ, ডঃ আব্দুল্লাহ সুলায়মান আল-গুফায়লী, পৃষ্ঠা নং- ৮৭
[23] - الرد على من كذب بالأحاديث الصحيحة الواردة فى المهدى
[24] - الإذاعة لما كان و ما يكون بين يدى الساعة ص ১১২
_______________________________________________________________________________________
(বইঃ কিয়ামতের আলামত থেকে সংগৃহীত)
লেখক: শাইখ আব্দুল্লাহ বিন শাহেদ আল-মাদানী।
লিসান্স: মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, এম,এম, ফাস্ট ক্লাশ।
প্রকাশনায়: জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদী আরব।
লেখক: শাইখ আব্দুল্লাহ বিন শাহেদ আল-মাদানী।
লিসান্স: মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, এম,এম, ফাস্ট ক্লাশ।
প্রকাশনায়: জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদী আরব।
0 মন্তব্যসমূহ