আল্লাহ তাআলা বলেন,
"হে মানব জাতি! তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকার ও বেশভূষার জন্য আমি তোমাদেরকে লেবাস দিয়েছি। পরন্তু 'তাকওয়া'র লেবাসই সর্বোৎকৃষ্ট (কুরআন মাজীদ 7/২6)
"হে আদম সন্তানগণ! প্রত্যেক নামাযের সময় তোমরা সুন্দর পরিচ্ছদ পরিধান কর। পানাহার কর, কিন্তু অপচয় করো না। তিনি অপব্যয়ীদের পছন্দ করেন না। "(কুরআন মাজীদ 7/31)
শরীয়তের সভ্য-দৃষ্টিতে সাধারণভাবে লেবাসের কতকগুলি শর্ত ও আদব রয়েছে; যা পালন করতে মুসলিম বাধ্য।
মহিলাদের লেবাসের শর্তাবলী নিম্নরুপ: -
1। লেবাস যেন দেহের সর্বাঙ্গকে ঢেকে রাখে। দেহের কোন অঙ্গ বা সৌন্দর্য যেন কোন বেগানা (যার সাথে কোনও সময়ে বিবাহ্ বৈধ এমন) পুরুষের সামনে প্রকাশ না পায়। কেন না মহানবী (সাঃ) বলেন, "মেয়ে মানুষের সবটাই লজ্জাস্থান (গোপনীয়)। আর সে যখন বের হয়, তখন শয়তান তাকে পুরুষের দৃষ্টিতে পরিশোভিতা করে তোলে। "(তিরমিযী, সুনান, মিশকাত 3109 নং)
মহান আল্লাহ বলেন, "হে নবী! তুমি তোমার পত্নীগণকে, কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলে দাও, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের (চেহারার) উপর টেনে নেয়-, এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে .এবং উত্যাক্ত করা হবেনা। "(কুরআন মাজীদ 33/59)
হযরত উম্মে সালামাহ্ (রাঃ) বলেন, 'উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হলে (মদ্বীনার) আনসারদের মহিলারা যখন বের হল, তখন তাদের মাথায় (কালো) চাদর (বা মোটা উড়না) দেখে মনে হচ্ছিল যেন ওদের মাথায় কালো কাকের ঝাঁক বসে আছে!' (আবূদাঊদ, সুনান 4101 নং)
আল্লাহ তাআলার আদেশ, মুমিন মেয়েরা যেন তাদের ঘাড় ও বুককে মাথার কাপড় দ্বারা ঢেকে নেয় ---। (কুরআন মাজীদ ২4/31)
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, 'পূর্বের মুহাজির মহিলাদের প্রতি আল্লাহ রহ্ম করেন। উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হলে তারা তাদের পরিধেয় কাপড়সমূহের মধ্যে সবচেয়ে মোটা কাপড়টিকে ফেড়ে মাথার উড়না বানিয়ে মাথা (ঘাড়-গলা-বুক) ঢেকেছিল। ' (আবূদাঊদ, সুনান 410২)
সাহাবাদের মহিলাগণ যখন পথে চলতেন, তখন তাঁদের নিম্নাঙ্গের কাপড়ের শেষ প্রান্ত মাটির উপর ছেঁচড়ে যেত। নাপাক জায়গাতে চলার সময়েও তাদের কেউই পায়ের পাতা বের করতেন না। (মিশকাত 504, 51২, 4335 নং)
সুতরাং মাথা ও পায়ের মধ্যবর্তী কোন অঙ্গ যে প্রকাশ করাই যাবে না, তা অনুমেয়।
২। যে লেবাস মহিলা পরিধান করবে সেটাই যেন (বেগানা পুরুষের সামনে) সৌন্দর্যময় ও দৃষ্টি-আকর্ষী না হয়। যেহেতু মহান আল্লাহ বলেন, "সাধারণত। যা প্রকাশ হয়ে থাকে তা ছাড়া তারা যেন তাদের অন্যান্য সৌন্দর্য প্রকাশ না করে" (কুরআন মাজীদ ২4/31)
3। লেবাস যেন এমন পাতলা না হয়, যাতে কাপড়ের উপর থেকেও ভিতরের চামড়া নজরে আসে। নচেৎ ঢাকা থাকলেও খোলার পর্যায়ভুক্ত। এ ব্যাপারে এক হাদীসে আল্লাহর রসূল (সাঃ) হযরত আসমা (রাঃ) কে সতর্ক করেছিলেন। (আবূদাঊদ, সুনান, মিশকাত 437২ নং)
একদা হাফসা বিন্তে আব্দুর রহ্মান পাতলা ওড়না পরে হযরত আয়েশা (রাঃ) এর নিকট গেলে তিনি তার উড়নাকে ছিঁড়ে ফেলে দিলেন এবং তাকে একটি মোটা ওড়না পরতে দিলেন। (মালেক, মুঅত্তা, মিশকাত 4375 নং)
মহানবী (সাঃ) বলেন, "দুই শ্রেণীর মানুষ দোযখবাসী; যাদেরকে আমি (এখনো) দেখিনি। --- (এদের মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ সেই) মহিলাদল, যারা কাপড় পরেও উলঙ্গ থাকবে, অপর পুরুষকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করবে এবং নিজেও তার দিকে আকৃষ্ট হবে, যাদের মাথা (চুলের খোঁপা) হিলে থাকা উটের কুঁজের মত হবে। তারা বেহেশ্তে প্রবেশ করবে না। তার সুগন্ধও পাবে না আর; অথচ তার সুগন্ধ এত এত দূরবর্তী স্থান থেকেও পাওয়া যাবে। "(আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিম, সহীহ জামে 3799 নং)
4। পোশাক যেন এমন আঁট- সাঁ ট (টাইট ফিট) না হয়, যাতে দেহের উঁচু-নিচু ব্যক্ত হয়। কারণ এমন ঢাকাও খোলার পর্যায়ভুক্ত এবং দৃষ্টি-আকর্ষী।
5। যেন সুগন্ধিত না হয়। মহানবী (সাঃ) বলেন, "সেন্ট বিলাবার উদ্দেশ্যে কোন মহিলা যদি তা ব্যবহার করে পুরুষদের সামনে যায়, তবে সে বেশ্যা মেয়ে।" (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, মিশকাত 1065 নং)
সেন্ট ব্যবহার করে মহিলা মসজিদেও যেতে পারে না। একদা চাশতের সময় আবূ হুরাইরা (রাঃ) মসজিদ থেকে বের হলেন। দেখলেন, একটি মহিলা মসজিদ প্রবেশে উদ্যত। তার দেহ্ বা লেবাস থেকে উৎকৃষ্ট সুগন্ধির সুবাস ছড়াচ্ছিল। আবূ হুরাইরা মহিলাটির উদ্দেশে বললেন, 'আলাইকিস সালাম।' মহিলাটি সালামের উত্তর দিল। তিনি তাকে প্রশ্ন করলেন, 'কোথায় যাবে তুমি?' সে বলল, 'মসজিদে।' বললেন, 'কি জন্য এমন সুন্দর সুগন্ধি মেখেছ তুমি?' বলল, 'মসজিদের জন্য।' বললেন, 'আল্লাহর কসম?' বলল, 'আল্লাহর কসম।' পুনরায় বললেন, 'আল্লাহর কসম?' বলল, 'আল্লাহর কসম।' তখন তিনি বললেন, 'তবে শোন, আমাকে আমার প্রিয়তম আবুল কাসেম (সাঃ) বলেছেন যে, "সেই মহিলার কোন নামায কবুল হয় না, যে তার স্বামী ছাড়া অন্য কারোর জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করে; যতক্ষণ না সে নাপাকীর গোসল করার মত গোসল করে নেয়। "অতএব তুমি ফিরে যাও, গোসল করে সুগন্ধি ধুয়ে ফেল। তারপর ফিরে এসে নামায পড়ো। ' (আবূদাঊদ, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, বায়হাকী, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী 1031 নং)
6। লেবাস যেন কোন কাফের মহিলার অনুকৃত না হয়। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, "যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন (লেবাসে- পোশাকে, চাল-চলনে অনুকরণ) করবে সে তাদেরই দলভুক্ত।" (আবূদাঊদ, সুনান, মিশকাত 4347 নং)
7। তা যেন পুরুষদের লেবাসের অনুরুপ না হয়। মহানবী (সাঃ) সেই নারীদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন, যারা পুরুষদের বেশ ধারণ করে এবং সেই পুরুষদেরকেও অভিশাপ দিয়েছেন, যারা নারীদের বেশ ধারণ করে। "(আবূদাঊদ, সুনান 4097, ইবনে মাজাহ্, সুনান 1904 নং)
তিনি সেই পুরুষকে অভিশাপ দিয়েছেন, যে মহিলার মত লেবাস পরে এবং সেই মহিলাকেও অভিশাপ দিয়েছেন, যে পুরুষের মত লেবাস পরে। (আবূদাঊদ, সুনান 4098, ইবনে মাজাহ্, সুনান 1903 নং)
8। লেবাস যেন জাঁকজমকপূর্ণ প্রসিদ্ধিজনক না হয়। কারণ, বিরল ধরনের লেবাস পরলে সাধারণত: পরিধানকারীর মনে গর্ব সৃষ্টি হয় এবং দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাই মহানবী (সাঃ) বলেন, "যে ব্যক্তি দুনিয়াতে প্রসিদ্ধিজনক লেবাস পরবে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতে লাঞ্ছনার লেবাস পরাবেন।" (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, মিশকাত 4346 নং)
"যে ব্যক্তি জাঁকজমকপূর্ণ লেবাস পরবে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতে অনুরুপ লেবাস পরিয়ে তা অগ্নিদগ্ধ করবেন।" (আবূদাঊদ, সুনান, বায়হাকী, সহীহ জামে 65২6 নং)
আর পুরুষদের লেবাসের শর্তাবলী নিম্নরুপ: -
1। লেবাস যেন নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশ অবশ্যই আবৃত রাখে। যেহেতু ঐটুকু অঙ্গ পুরুষের লজ্জাস্থান। (সহীহ জামে 5583 নং)
২। এমন পাতলা না হয়, যাতে ভিতরের চামড়া নজরে আসে।
3। এমন আঁট-সাট না হয়, যাতে দেহের উঁচু-নিচু ব্যক্ত হয়।
4। কাফেরদের লেবাসের অনুকৃত না হয়।
5। মহিলাদের লেবাসের অনুরুপ না হয়।
6। জাঁকজমকপূর্ণ প্রসিদ্ধিজনক না হয়।
7। গাঢ় হ্লুদ বা জাফরানী রঙের যেন না হয়। আম্র বিন আস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল (সাঃ) একদা আমার গায়ে দু'টি জাফরানী রঙের কাপড় দেখে বললেন, "এগুলো কাফেরদের কাপড়। সুতরাং তুমি তা পরো না। "(মুসলিম, মিশকাত 43২7 নং)
8। লেবাস যেন রেশমী কাপড়ের না হয়। মহানবী (সাঃ) বলেন, "সোনা ও রেশম আমার উম্মতের মহিলাদের জন্য হালাল এবং পুরুষদের জন্য হারাম করা হয়েছে।" (তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, মিশকাত 4341 নং) "দুনিয়ায় রেশম-বস্তু তারাই পরবে, যাদের পরকালে কোন অংশ নেই। "(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত 43২0 নং)
হযরত উমার (রাঃ) বলেন, রসূল (সাঃ) রেশমের কাপড় পরতে নিষেধ করেছেন। তবে দুই, তিন অথবা চার আঙ্গুল পরিমাণ (অন্য কাপড়ের সঙ্গে জুড়ে) ব্যবহার করতে অনুমতি দিয়েছেন। (মুসলিম, মিশকাত 43২4 নং) তদনুরুপ কোন চর্মরোগ প্রভৃতিতে উপকারী হলে তা ব্যবহারে অনুমতি আছে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত 43২6 নং)
9। পরিহিত লেবাস (পায়জামা, প্যান্ট, লুঙ্গি, কামীস প্রভৃতি) যেন পায়ের গাঁটের নিচে না যায়। মহানবী (সাঃ) বলেন, "গাঁটের নিচের অংশ লুঙ্গি জাহান্নামে।" (বুখারী, মিশকাত 4314 নং) "মু'মিনের লুঙ্গি পায়ের অর্ধেক রলা পর্যন্ত। এই (অর্ধেক রলা) থেকে গাঁট পর্যন্ত অংশের যে কোনও জায়গায় হলে ক্ষতি নেই। কিন্তু এর নিচের অংশ দোযখে যাবে। "এরুপ 3 বার বলে তিনি পুনরায় বললেন," আর কিয়ামতের দিন আল্লাহ সেই ব্যক্তির প্রতি তাকিয়েও দেখবেন না, যে অহংকারের সাথে নিজের লুঙ্গি (গাঁটের নিচে) ছেঁচড়ে নিয়ে বেড়ায়। "(আবূদাঊদ, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, মিশকাত 4331)
আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর সবচেয়ে বেশী পছন্দনীয় লেবাস ছিল কামীস (ফুল-হাতা প্রায় গাঁটের উপর পর্যন্ত লম্বা জামা বিশেষ)। (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, মিশকাত 43২8 নং) যেমন তিনি চেক-কাটা চাদর পরতে ভালোবাসতেন। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত 4304 নং)
তিনি মাথায় ব্যবহার করতেন পাগড়ী। (তিরমিযী, সুনান, সহীহ জামে 4676 নং) তিনি কালো রঙের পাগড়ীও বাঁধতেন। (আবূদাঊদ, সুনান, 4077, ইবনে মাজাহ্, সুনান 3584 নং)
আল্লাহর রসূল (সাঃ) ও সাহাবা তথা সলফদের যুগে টুপীও প্রচলিত ছিল। (বুখারী, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার 1/587, 3/86, মুসলিম, সহীহ 9২5, আবূদাঊদ, সুনান 691 নং)
যেমন সে যুগে শেলোয়ার বা পায়জামাও পরিচিত ছিল। মহানবী (সাঃ) ও পায়জামা খরিদ করেছিলেন। (ইবনে মাজাহ্, সুনান ২২২0, ২২২1 নং) তিনি ইহ্রাম বাঁধা অবস্থায় হাজীদেরকে পায়জামা পরতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ২678 নং) অবশ্য লুঙ্গি না পাওয়া গেলে পায়জামা পরতে অনুমতি দিয়েছেন। (২679 ঐ নং)
ইবনে আব্বাস (রাঃ) যখন লুঙ্গি পরতেন, তখন লুঙ্গির সামনের দিকের নিচের অংশ পায়ের পাতার উপর ঝুলিয়ে দিতেন এবং পেছন দিকটা (গাঁটের) উপরে তুলে নিতেন। এরুপ পরার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, 'আমি আল্লাহর রসূল (সাঃ) কে এরুপ পরতে দেখেছি।' (আবূদাঊদ, সুনান, মিশকাত 4370 নং)
তাঁর নিকট পোশাকের সবচেয়ে পছন্দনীয় রঙ ছিল সাদা। তিনি বলেন, "তোমরা সাদা কাপড় পরিধান কর। কারণ সাদা রঙের কাপড় বেশী পবিত্র থাকে। আর ঐ রঙের কাপড়েই তোমাদের মাইয়্যেতকে কাফনাও। "(আহমাদ, মুসনাদ, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, মিশকাত 4337 নং)
এ ছাড়া সবুজ রঙের কাপড়ও তিনি ব্যবহার করতেন। (আবূদাঊদ, সুনান 4065 নং) এবং লাল রঙেরও লেবাস পরিধান করতেন। (আবূদাঊদ, সুনান 407২, ইবনে মাজাহ্, সুনান 3599, 3600 নং)
মুহাদ্দেস আলবানী হাফেযাহুল্লাহ্ বলেন, 'লাল রঙের কাপড় ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে কোন হাদীস সহীহ নয়।' (মিশকাতের টীকা ২/1২47)
লেবাসে-পোশাকে সাদা-সিধে থাকা ঈমানের পরিচায়ক। (আবূদাঊদ, সুনান, মিশকাত 4345 নং) মহানবী (সাঃ) বলেন, "সামথ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি বিনয় সহকারে সৌন্দর্যময় কাপড় পরা ত্যাগ করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে কিয়ামতে সৃষ্টির সামনে ডেকে এখতিয়ার দেবেন; ঈমানের লেবাসের মধ্যে তার যেটা ইচ্ছা সেটাই পরতে পারবে। (তিরমিযী, সুনান, হাকেম, মুস্তাদরাক, সহীহ জামে 6145 নং)
তবে সুন্দর লেবাস পরা যে নিষিদ্ধ তা নয়। কারণ, "আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। বান্দাকে তিনি যে নেয়ামত দান করেছেন তার চিহ্ন (তার দেহে) দেখতে পছন্দ করেন। আর তিনি দারিদ্র ও (লোকচক্ষে) দরিদ্র সাজাকে ঘৃণা করেন। "(বায়হাকী, সহীহ জামে 174২ নং)
প্রিয় রসূল (সাঃ) বলেন, "যার অন্তরে অণূ পরিমাণও অহংকার থাকবে, সে জান্নাত প্রবেশ করবে না।" বলা হল, 'লোকে তো চায় যে, তার পোশাকটা সুন্দর হোক, তার জুতোটা সুন্দর হোক। (তাহলে সেটাও কি ঐ পর্যায়ে পড়বে?) 'তিনি বললেন, "আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। অহংকার তো 'হ্ক' (ন্যায় ও সত্য) প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে ঘৃণা করার নাম। "(মুসলিম, সহীহ জামে 7674 নং)
তিনি আরো বলেন, "উত্তম আদর্শ, উত্তম বেশভূষা এবং মিতাচারিতা নবুওতের ২5 অংশের অন্যতম অংশ।" (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান, সহীহ জামে 1993 নং)
আল্লাহর রসূল (সাঃ) এক ব্যক্তির মাথায় আলুথালু চুল দেখে বললেন, "এর কি এমন কিছুও নেই, যার দ্বারা মাথার এলোমেলো চুলগুলোকে সোজা করে (আঁচড়ে) নেয় ?!" আর এক ব্যক্তির পরনে ময়লা কাপড় দেখে বললেন, "এর কি এমন কিছুও নেই, যার দ্বারা ময়লা কাপড়কে পরিষ্কার করে নেয় ?! "(আবূদাঊদ, সুনান, নাসাঈ, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ, মিশকাত 4351 নং)
আবুল আহওয়াস বলেন, একদা আমি আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর নিকট এলাম। আমার পরনে ছিল নেহাতই নিম্নমানের কাপড়। তিনি তা দেখে আমাকে বললেন, "তোমার কি মাল-ধন আছে?" আমি বললাম, 'জী হ্যাঁ।' বললেন, "কোন্ শ্রেণীর মাল আছে?" আমি বললাম, 'সকল শ্রেণীরই মাল আমার নিকট মজুদ। আল্লাহ আমাকে উট, গরু, ছাগল, ভেঁড়া, ঘোড়া ও ক্রীতদাস দান করেছেন। ' তিনি বললেন, "আল্লাহ যখন তোমাকে এত মাল দান করেছেন, তখন আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত ও অনুগ্রহ তোমার বেশ-ভূষায় প্রকাশ পাওয়া উচিৎ।" (আহমাদ, মুসনাদ, নাসাঈ, সুনান, মিশকাত 435২ নং)
মহানবী (সাঃ) বলেছেন, "তোমরা খাও, পান কর, দান কর, পরিধান কর, তবে তাতে যেন অপচয় ও অহংকার না থাকে।" (বুখারী, আহমাদ 6695, নাসাঈ ২559 নং)
ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, "যা ইচ্ছা তাই খাও এবং যেমন ইচ্ছা তেমনিই পর, তবে তাতে যেন দু'টি জিনিস না থাকে; অপচয় ও অহংকার। "(বুখারী, মিশকাত 4380 নং)
0 মন্তব্যসমূহ