যাকাত কি ফরয, যাকাত আদায় করতে হবে কি , যাকাত আদায়ের গুরুত্ব ও ফযিলত।

                                                            যাকাত পর্বঃ ১
নামাজ এবং যাকাত ২ টিই আদায় করতেই হবে ৷ শুধু নামাজ পড়লেই , জান্নাত পাওয়া যাবে না ৷ অবশ্যই , অবশ্যই যাকাত আদায় করতেই হবে ৷
সূরা আন-নূর:56 - নামায কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং রসূলের আনুগত্য কর যাতে তোমরা অনুগ্রহ প্রাপ্ত হও।
সূরা নমল:2 - মুমিনদের জন্যে পথ নির্দেশ ও সুসংবাদ।
সূরা নমল:3 - যারা নামায কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং পরকালে নিশ্চিত বিশ্বাস করে।
সূরা আল বাক্বারাহ:110 - তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা কর এবং যাকাত দাও। তোমরা নিজের জন্যে পূর্বে যে সৎকর্ম প্রেরণ করবে, তা আল্লাহর কাছে পাবে। তোমরা যা কিছু কর, নিশ্চয় আল্লাহ তা প্রত্যক্ষ করেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,  ﴿ وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَ ٤٣ ﴾ (البقرة: ٤٣) 
অর্থাৎ তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা ও যাকাত আদায় কর। (বাকারাহ ৪৩ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেছেন,
﴿ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ وَيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ وَذَٰلِكَ دِينُ ٱلۡقَيِّمَةِ ٥ ﴾ (البينة: ٥) 
অর্থাৎ তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বি-শুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠ-ভাবে তাঁর ইবাদত করতে এবং নামায কায়েম করতে ও যাকাত প্রদান করতে। আর এটাই সঠিক ধর্ম। (বাইয়েনাহ ৫ আয়াত)
তিনি অন্যত্র আরও বলেছেন,
﴿ خُذۡ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡ صَدَقَةٗ تُطَهِّرُهُمۡ وَتُزَكِّيهِم بِهَا ﴾ [التوبة: ١٠٣] 
অর্থাৎ তুমি তাদের ধন-সম্পদ হতে সদকা গ্রহণ কর, যার দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র ও পরিশোধিত করে দেবে। (সূরা তাওবাহ ১০৩ আয়াত)
ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “পাঁচটি ভিত্তির উপর দ্বীনে ইসলাম স্থাপিত। (১) এই সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। (২) নামায প্রতিষ্ঠা করা। (৩) যাকাত আদায় করা। (৪) বায়তুল্লাহর (কা‘বা গৃহে)র হজ্জ করা।  এবং (৫) রমযানের রোযা পালন করা।” (বুখারী-মুসলিম)[1]
[1] সহীহুল বুখারী ৮, মুসলিম ১৬, তিরমিযী ২৬০৯, ৫০০১, আবূ দাউদ ৪৭৮৩, ৫৬৩৯, ৫৯৭৯, ৬২৬৫ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে নামায কায়েম করার, যাকাত আদায় করার ও প্রতিটি মুসলমানের মঙ্গল কামনা করার বায়‘আত করেছি।’ (বুখারী ও মুসলিম)[1]
[1] সহীহুল বুখারী ৫৭, ৫৮, ৫২৪, ১৪০১, ২১৫৭, ২৭১৪, ২৭১৫, ৭২০৪, ৫৬, তিরমিযী ১৯২৫, নাসায়ী ৪১৫৬, ৪১৫৭, ৪১৭৪, ৪১৭৫, ৪১৭৭, ৪১৮৯, আহমাদ ১৮৬৭১, ১৮৭০০, ১৮৭৩৪ম ১৮৭৪৩, ১৮৭৬০, দারেমী ২৫৪০ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আবূ আইয়ুব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একটি লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলল, ‘আমাকে এমন একটি আমল বলুন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।’ তিনি বললেন, “আল্লাহর বন্দেগী করবে, আর তাঁর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার স্থির করবে না। নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখবে।” (বুখারী, মুসলিম)[1]
[1] সহীহুল বুখারী ১৩৯৬, ৫৯৮৩, মুসলিম ১৩, নাসায়ী ৪৬৮, আহমাদ ২৩০২৭, ২৩০৩৮ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
ত্বালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন নাজ্দ (রিয়ায এলাকার) অধিবাসীদের একজন আলুলায়িত কেশী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হল। আমরা তার ভনভন শব্দ শুনছিলাম, আর তার কথাও বুঝতে পারছিলাম না। শেষ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসল এবং (তখন বুঝলাম,) সে ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন করছে। (উত্তরে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “(ইসলাম হল,) দিবা-রাত্রিতে পাঁচ অক্তের নামায (প্রতিষ্ঠা করা)।” সে বলল, ‘তা ছাড়া আমার উপর অন্য নামায আছে কি?’ তিনি বললেন, “না, কিন্তু যা কিছু তুমি নফল হিসাবে পড়বে।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার বললেন, “এবং রমযান মাসের রোযা।” লোকটি বলল, ‘তা ছাড়া আমার উপর অন্য রোযা আছে কি?’ তিনি বললেন, “না, তবে তুমি যা নফল হিসাবে করবে।” বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে যাকাতের কথা বললেন। সে বলল, ‘তাছাড়া আমার উপর অন্য দান আছে কি?’ তিনি বললেন, “না, তবে তুমি যা নফল হিসাবে করবে।” তারপর লোকটি পিঠ ফিরিয়ে এ কথা বলতে বলতে যেতে লাগল, ‘আল্লাহর কসম! আমি এর চাইতে বেশী কিছু করব না এবং এর চেয়ে কমও করব না।’ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “লোকটি সত্য বলে থাকলে পরিত্রাণ পেয়ে গেল।” (বুখারী ও মুসলিম)[1]
[1] সহীহুল বুখারী ৪৬, ১৮৯১, ২৬৭৮, ৬৯৫৬, মুসলিম ১১, নাসায়ী ৪৫৮, ২০৯০, ৫০২৮, আবূ দাউদ ৩৯১, ৩২৫২, আহমাদ ১৩৯৩, মুওয়াত্তা মালিক ৪২০, দারেমী ১৫৭৮ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আয রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে ইয়ামন পাঠাবার সময়ে (তাঁর উদ্দেশ্যে) বললেন, “তাদের (ইয়ামানবাসীদেরকে সর্বপ্রথম) এই সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, আর আমি আল্লাহর রাসূল। যদি তারা এ কথা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানিয়ে দেবে যে, আল্লাহ তাদের উপর রাতদিনে পাঁচ অক্তের নামায ফরয করেছেন। অতঃপর যদি তারা এ কথা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহ তাদের উপর যাকাত ফরয করেছেন; যা তাদের মধ্যে যারা (নিসাব পরিমাণ) মালের অধিকারী তাদের নিকট থেকে গ্রহণ করা হবে এবং তাদের দরিদ্র ও অভাবী মানুষদের মাঝে তা বণ্টন করে দেওয়া হবে।” (বুখারী ও মুসলিম)[1]
[1] সহীহুল বুখারী ১৩৯৫, ১৪৫৮, ১৪৯৬, ২৪৪৮, ৪৩৪৭, ৭৩৭১, ৭৩৭২, মুসলিম ১৯, তিরমিযী ৬২৫, ২০১৪, নাসায়ী ২৪৩৫, আবূ দাউদ ১৫৮৪, ইবনু মাজাহ ১৭৮৩, আহমাদ ২০৭২, দারেমী ১৬১৪ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা গেলেন এবং আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু খলীফা নিযুক্ত হলেন। আর আরববাসীদের মধ্যে যার কাফের (মুরতাদ) হবার ছিল সে কাফের (মুরতাদ) হয়ে গেল, (এবং যারা সম্পূর্ণ ধর্মত্যাগ করেনি; বরং যাকাত দিতে অস্বীকার করছে মাত্র, তাদের বিরুদ্ধে আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু সশস্ত্র সংগ্রামের সংকল্প প্রকাশ করলেন) তখন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘ঐ (যাকাত দিতে নারাজ) লোকদের বিরুদ্ধে কেমন করে যুদ্ধ করবেন অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, “লোকেরা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই) না বলা পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি। অতএব যে ব্যক্তি তা বলবে, সে ইসলামী অধিকার (অর্থদণ্ড ইত্যাদি) ছাড়া তার জান-মাল আমার নিকট থেকে নিরাপদ করে নেবে। আর তার (অন্তরের গভীরে কুফরি বা পাপ লুকানো থাকলে) হিসাব আল্লাহর জিম্মায়”? আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘আল্লাহর শপথ! যে ব্যক্তি নামায ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে, তার বিরুদ্ধে আমি লড়াই করব। কারণ, যাকাত মালের উপর আরোপিত হক। আল্লাহর শপথ! আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যে রশি আদায় করত, তা যদি আমাকে না দেয়, তাহলে তা না দেওয়ার জন্য তাদের বিরুদ্ধে আমি জিহাদ করবই।’ উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘আল্লাহর শপথ! অচিরেই আমি দেখলাম যে, নিঃসন্দেহে আল্লাহ আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর হৃদয়কে যুদ্ধের জন্য প্রশস্ত করেছেন। সুতরাং আমি বুঝতে পারলাম যে, তাঁর সিদ্ধান্তই যথার্থ।’ (বুখারী)[1]
[1] সহীহুল বুখারী ১৪০০, ১৪৫৭, ৬৯২৪, ৭২৮৫, মুসলিম ২০, তিরমিযী ২৬০৭, নাসায়ী ২৪৪৩, ৩০৯১-৩০৯৪, ৩৯৬৯-৩৯৭১, ৩৯৭৩, ৩৮৭৫, আবূ দাউদ ১৫৫৬, আহমাদ ৬৮, ১১৮, ২৪১, ৩৩৭, ৯১৯০, ১০৪৫৯ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আবূ আইয়ুব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একটি লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলল, ‘আমাকে এমন একটি আমল বলুন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।’ তিনি বললেন, “আল্লাহর বন্দেগী করবে, আর তাঁর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার স্থির করবে না। নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখবে।” (বুখারী, মুসলিম)[1]
[1] সহীহুল বুখারী ১৩৯৬, ৫৯৮৩, মুসলিম ১৩, নাসায়ী ৪৬৮, আহমাদ ২৩০২৭, ২৩০৩৮ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ