পর্দা কেন?




সমস্ত প্রশংসা মহান রাব্বুল আলামীনের জন্য, যিনি অতিশয় দয়ালু ও পরম করুণাময় এবং যিনি বিচার দিনের মালিক। আর উত্তম পরিণতি কেবলই মুত্তাকীদের জন্য। একমাত্র যালিম ছাড়া আর কারো জন্য কোন প্রকার দুশমনি নাই। হে আল্লাহ! তুমি সালাত ও সালাম নাযিল কর এবং বরকত দান কর তোমার বান্দা ও তোমার রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর এবং তার পরিবার-পরিজন ও তার সমস্ত সাহাবীদের উপর। আমীন।

ইসলামী শরীয়তের মাধ্যমে নারীরা অনেক বড় নেয়ামত, দয়া, সহানুভূতি ও উপকার লাভ করেছে। যেমন- ইসলাম নারীদের ইজ্জত সম্মান ও পুত-পবিত্রতা রক্ষা করেছে এবং তাদের সম্ভ্রম রক্ষার গ্যারান্টি দিয়েছে। ইসলাম নারীদের উচ্চ মর্যাদার আসন দিয়েছে, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু নারীদের জন্য ইসলাম লেবাস-পোশাক, সৌন্দর্য প্রদর্শন ও চলা ফেরা ইত্যাদির ক্ষেত্রে যে সব বিধি-নিষেধ ও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে, তা শুধু সামাজিক অনিষ্টতা ও ফেতনা ফ্যাসাদ থেকে বাঁ‍চার যাবতীয় উপায় উপকরণের পথকে বন্ধ করার নিমিত্তেই করেছে। নারীদের প্রতি অবিচার কিংবা কোন প্রকার বৈষম্য সৃষ্টির জন্য করেনি। ইসলাম তাদের জন্য বিধি-নিষেধ আরোপ করে তাদের স্বাধীনতা হরণ করা কিংবা তাদের গৃহবন্দী করার জন্য করেনি। বরং, তারা যাতে তাদের জীবনে চলার পথে চরম অবনতি ও অপমানের খপ্পরে না পড়ে এবং তারা যাতে মানুষের দৃষ্টির লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত না হয়, তা থেকে বাঁচানোর জন্য ইসলাম বিধি-নিষেধ ও পর্দা করার বিধান নাযিল করেন।

আমরা আমাদেরে এ সংক্ষিপ্ত নিবন্ধে পর্দার ফযিলত সম্পর্কে আলোচনা করব, যাতে পর্দার প্রতি নারীদের আগ্রহ তৈরি হয়। এ ছাড়াও পর্দার সৌন্দর্য, উত্তম পরিণতি ও ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করব, যাতে পর্দার প্রতি আগ্রহ থাকে। তারপর আলোচনা করব সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দা না করার ভয়াবহ পরিণতি, দুনিয়া ও আখিরাতে সৌন্দর্য প্রদর্শন বা পর্দাহীনতার কুফল। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের ইচ্ছার নিত্য সঙ্গী, তিনিই আমাদের সবকিছু এবং উত্তম অভিভাবক।  

পর্দার ফযিলত

পর্দা করা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আনুগত্য ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ:
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার আনুগত্য করা ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুকরণ করাকে মুমিনদের জন্য ওয়াজিব করেছেন[1]আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে করীমে এরশাদ করে বলেন,
﴿وَمَا كَانَ لِمُؤۡمِنٖ وَلَا مُؤۡمِنَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَمۡرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ ٱلۡخِيَرَةُ مِنۡ أَمۡرِهِمۡۗ وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَٰلٗا مُّبِينٗا ٣٦ ]سورة الأحزاب[36  .
আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন নির্দেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজদের ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার থাকে না; আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে
 আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,
﴿فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥] سورة النساء: [65
অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নারীদেরকে পর্দা করার নির্দেশ দেন এবং বলেন,
﴿وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ ]سورة النــور 31: .[
আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জা-স্থানের হিফাজত করবে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,
﴿وَقَرۡنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ  ]سورة الأحزاب: [33
“আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক- জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না।”
আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,
﴿ وَإِذَا سَأَلۡتُمُوهُنَّ مَتَٰعٗا فَسۡ‍َٔلُوهُنَّ مِن وَرَآءِ حِجَابٖۚ ذَٰلِكُمۡ أَطۡهَرُ لِقُلُوبِكُمۡ وَقُلُوبِهِنَّۚ ] سورة الأحزاب: [ 53.
আর যখন নবী-পত্নীদের কাছে তোমরা কোন সামগ্রী চাইবে তখন পর্দার আড়াল  থেকে চাইবে; এটি তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র আল্লাহ তা’আলা বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّ  ]سورة الأحزاب:  [59.
হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বল, ‘তারা যেন তাদের জিল-বাবের কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« المرأة عورة »
 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, নারীরা হল, সতর। অর্থাৎ নারীদের জন্য পর্দা করা ওয়াজিব। [হাদিসটি সহীহ]

পর্দা নারীদের জন্য পবিত্রতা:
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পর্দা করাকে পবিত্রতার শিরোনাম হিসেবে আখ্যায়িত করেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّۚ ذَٰلِكَ أَدۡنَىٰٓ أَن يُعۡرَفۡنَ فَلَا يُؤۡذَيۡنَۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ٥٩  ]سورة الأحزاب: [ 59.
হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বল, ‘তারা যেন তাদের জিল-বাবের কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু
যাতে তারা তা ডেকে রাখতে পারে। কারণ, তারা হল, সতী ও পবিত্রা নারীআল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বাণী فَلَا يُؤۡذَيۡنَ ‘ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না’ এ কথা দ্বারা বুঝা যায়, নারীদের সৌন্দর্য সম্পর্কে জানা দ্বারা তাদের কষ্ট দেয়া এবং যারা দেখে তাদের ফিতনা ও অপরাধে জড়িত হওয়া। 
আর বৃদ্ধ নারী যাদের যৌবনের হ্রাস পেয়েছে এবং তারা বিবাহের আশা করে না, তাদের জিল-বাব ব্যবহার না করা, চেহারা ও কবজি-দ্বয় খোলা রাখা দ্বারা ফিতনার আশংকা থাকে না তাদের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পর্দা করার ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শনের অনুমতি দিয়েছেন। তাদের বিষয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَٱلۡقَوَٰعِدُ مِنَ ٱلنِّسَآءِ ٱلَّٰتِي لَا يَرۡجُونَ نِكَاحٗا فَلَيۡسَ عَلَيۡهِنَّ جُنَاحٌ أَن يَضَعۡنَ ثِيَابَهُنَّ غَيۡرَ مُتَبَرِّجَٰتِۢ بِزِينَةٖۖ ]سورة النور: 60 [
আর বৃদ্ধা নারীরা, যারা বিয়ের প্রত্যাশা করে না, তাদের জন্য কোন দোষ নেই, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তাদের কিছু পোষাক খুলে রাখে [সূরা নূর, আয়াত: ৬০]
আয়াতের ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা’আলার বাণী-  أَن يَضَعۡنَ ثِيَابَهُنَّ غَيۡرَ مُتَبَرِّجَٰتِۢ بِزِينَةٖۖ–যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তাদের কিছু পোশাক খুলে রাখে- এখানে তাদের জন্য কোন দোষ নাই এ কথার অর্থ হল, কোন গুনাহ নাই। অর্থাৎ বয়স্ক বা বৃদ্ধা নারীরা যদি তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে পোশাক খুলে রাখে, তাতে তাদের কোন গুনাহ হবে না। এ কথা বলার পরপর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, وَأَن يَسۡتَعۡفِفۡنَ خَيۡرٞ لَّهُنَّۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٞ (60)  ‘আর যদি এ থেকে বিরত থাকে তবে তাদের জন্য অতি উত্তম’। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হিজাবকে বৃদ্ধা ও বয়স্ক নারীদের জন্য উত্তম বলে ঘোষণা করেন। সুতরাং যুবতী নারীদের জন্য পর্দা করা কত যে গুরুত্বপূর্ণ তা একটু চিন্তা করলেই আমরা বুঝতে পারব। 

পর্দা নারীদের পবিত্রতা :
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَإِذَا سَأَلۡتُمُوهُنَّ مَتَٰعٗا فَسۡ‍َٔلُوهُنَّ مِن وَرَآءِ حِجَابٖۚ ذَٰلِكُمۡ أَطۡهَرُ لِقُلُوبِكُمۡ وَقُلُوبِهِنَّۚ ] سورة الأحزاب : [53
আর যখন নবী-পত্নীদের কাছে তোমরা কোন সামগ্রী চাইবে তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে; এটি তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র।
আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পর্দাকে মুমিন নারী ও মুমিন পুরুষের পবিত্রতা বলে আখ্যায়িত করেন। কারণ, যখন চোখ কোন কিছু না দেখে, তখন তার প্রতি আকৃষ্ট হয় না। আর যখন চোখ দেখে, তখন অন্তর তার প্রতি আকৃষ্ট হয়। তবে কোন কোন সময় নাও হতে পারে। এ কারণে যখন তারা নারীদের দেখবে না, তখন তাদের অন্তর পবিত্র থাকবে। তাদের মধ্যে কোন ফিতনার আশঙ্কা দেখা যাবে না। কারণ, যখন নারীরা পর্দা করবে এবং পুরুষদের সামনে প্রকাশ্য হবে না তখন যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে, তাদের আশা নিরাশায় পরিণত হবে।  আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿فَلَا تَخۡضَعۡنَ بِٱلۡقَوۡلِ فَيَطۡمَعَ ٱلَّذِي فِي قَلۡبِهِۦ مَرَضٞ﴾   ]سورة الأحزاب : 53. [
তবে (পরপুরুষের সাথে) কোমল কণ্ঠে কথা বল না, তাহলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয়

পর্দা নারীর আবরণ
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم   « إن الله تعالى حيِيٌّ سِتِّيرٌ , يحب الحياء والستر »
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মহান আল্লাহ লাজুক, গোপনকারী। তিনি লজ্জা ও গোপনীয়তা তথা পর্দা-শীলতাকে পছন্দ করেন। [হাদিসটি বিশুদ্ধ]
 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
« أيما امرأةٍ نزعت ثيابها في غير بيتها , خَرَقَ الله عز وجل عنها سِتْرَهُ »
“যদি কোন নারী তার ঘরের বাহিরে স্বীয় কাপড় খুলে উলঙ্গ হয় এবং সতর খুলে ফেলে, মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার থেকে তার কাপড় খুলে ফেলবে”। [হাদিসটি বিশুদ্ধ]
আমলের বিনিময় আমলের মতই হয়ে থাকে[2]

পর্দা করা ‘তাকওয়া
পর্দার অপর নাম তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়[3]।  আল্লাহ তা’আলা বলেন,
﴿يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ قَدۡ أَنزَلۡنَا عَلَيۡكُمۡ لِبَاسٗا يُوَٰرِي سَوۡءَٰتِكُمۡ وَرِيشٗاۖ وَلِبَاسُ ٱلتَّقۡوَىٰ ذَٰلِكَ خَيۡرٞۚ  ] سورة الأعراف [26 :
হে বনী আদম, আমি তো তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জা-স্থান ঢাকবে এবং যা সৌন্দর্যস্বরূপ। আর তাকওয়ার পোশাক, তা উত্তম
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুমিন নারীদেরকে সম্বোধন করে পর্দা করার নির্দেশ দেন এবং বলেন, 
]وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ [  ]سورة النــور31 : [
“হে রাসূল আপনি মুমিন নারীদের বলে দিন।” অনুরূপভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অপর এক আয়াতে আরও বলেন, وَنِسَاء الْمُؤْمِنِينَ  (59) سورة الأحزاب   “হে মুমিনদের স্ত্রীগণ!”।
হাদিসে একটি ঘটনা বর্ণিত। বনী তামিম গোত্রের নারীরা একবার পাতলা কাপড়-যে কাপড়ে শরীর দেখা যায়- পরিধান করে উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. এর ঘরে প্রবেশ করল, তাদের দেখে তিনি বললেন, 
« إن كنتن مؤمنات فليس هذا بلباس المؤمنات , وإن كنتن غير مؤمناتٍ , فتمتعن به »
“যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক, তবে তোমরা যে পোশাক পরিধান করেছ, তা কোন মুমিন নারীদের পোশাক হতে পারে না। আর যদি তোমরা মুমিন না হয়ে থাক তবে তা উপভোগ করতে থাক”।

পর্দা লজ্জা
   [পর্দা করা লজ্জার লক্ষণ, যাদের মধ্যে লজ্জা নাই, তাদের নিকট পর্দার কোন গুরুত্ব নাই।] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إن لكل دين خُلُقًا , وخُلُقُ الإسلام الحياء. »
“প্রতিটি দ্বীনের একটি চরিত্র আছে, আর ইসলামের চরিত্র হল, লজ্জা”। [হাদিসটি বিশুদ্ধ]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
« الحياءُ من الإيمان , والإيمان في الجنة »
“লজ্জা ঈমানের অঙ্গ আর ঈমানের গন্তব্য হল জান্নাত”। [হাদিসটি বিশুদ্ধ]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
« الحياء والإيمان قُرِنا جميعاً , فإذا رُفِعَ أحدُهما, رُفِعَ الآخرُ » 
“লজ্জা ও ঈমান উভয়টি একটি অপরটির সম্পূরকযদি একটি শূন্য হয়, তখন অপরটিও শূন্য হয়ে যায়”। [হাদিসটি বিশুদ্ধ]
উম্মুল মুমীনিন আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كنت أدخل البيت الذي دُفِنَ فيه رسول الله صلى الله عليه وسلم وأبي رضي الله عنه واضعةً ثوبي , وأقول: ( إنما هو زوجي وأبي ) , فلما دُفن عمر رضي الله عنه , والله ما دخلته إلا مشدودة عليَّ ثيابي , حياءً من عمر رضي الله عنه. »
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আমার পিতা আবুবকর রা. কে যে ঘরে দাফন করা হয়েছে, সে ঘরে আমি আমার কাপড় (ওড়না) খুলে প্রবেশ করতাম, আমি মনে মনে বলতাম, এরা আমার স্বামী ও পিতা। এখানে পর্দা করার কোন প্রয়োজন নাই। কিন্তু যখন ওমর রা. কে একই ঘরে দাফন করা হল, তখন ওমর রা. এর লজ্জায় আমি সে ঘরে কাপড়কে শক্ত করে পেঁচিয়ে ও কঠিন পর্দা করে প্রবেশ করতাম। [হাদিসটিকে হাকিম সহীহ আখ্যায়িত করেন এবং হাদিসটি বুখারি ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক]
এতে একটি কথা প্রমাণিত হয়, নারীদের জন্য পর্দা শুধু শরিয়তের বিধানের উপর নির্ভর নয়। বরং পর্দা হল, নারীদের স্বভাবের সাথে সম্পৃক্তআল্লাহ রাব্বুল আলামীন নারীদের সৃষ্টিই করেছেন, লজ্জাবতী ও কোমলমতী করে। ফলে তাদেরকে তাদের স্বভাবই লজ্জা করতে অনেক সময় বাধ্য করে।

পর্দা নারীদের জন্য আত্মমর্যাদা ও সম্মান:
আত্ম-মর্যাদা ও আত্ম-সম্মানের সাথে পর্দার সম্পর্ক নিবীড় ও গভীর। মানব জাতিকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আত্ম-সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। যার কারণে দেখা যায়, একজন মানুষ তার মেয়ে, বোন ও স্ত্রীদের প্রতি কোন লম্পট বা চরিত্রহীন লোকের কু-দৃষ্টিকে বরদাশত করতে পারে না। তাদের সম্মানহানি হয়, এমন কোন কাজ বা কর্মকে তারা কোন ক্রমেই মেনে নিতে পারে না। ইসলাম পূর্ব যুগে এবং ইসলামের যুগে অনেক যুদ্ধ বিদ্রোহ ও হানাহানি নারীদের ইজ্জত সম্মান রক্ষার কারণেই সংঘটিত হয়েছিল।  আলি ইবনে আবি তালেব রা. বলেন, 
« بلغني أن نسائكم يزاحمن العُلُوجَ أي الرجال الكفار من العَجَم في الأسواق , ألا تَغارون ؟ إنه لا خير فيمن لا يَغار »
আমার নিকট সংবাদ পৌঁছেছে, তোমাদের নারীরা বাজারে পুরুষদের সাথে অবাধ মেলা-মেশা ও চলা-ফেরা করে। এতে কি তোমরা একটুও অপমান বোধ করো না, মনে রাখবে, যে ব্যক্তি এতে অপমানবোধ করে না, তার মধ্যে কোন কল্যাণ নাই


সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতার ক্ষতি
সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নাফরমানি ও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অবাধ্যতা:
যারা আল্লাহর নাফরমানি করে এবং আল্লাহর রাসূলের অবাধ্য হয়, তারা তাদের নিজেদের ক্ষতি করল। তারা আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«كل أمتي يدخلون الجنة إلا من أبى " , فقالوا : يا رسول الله من يأبى ؟ قال : " من أطاعني دخل الجنة , ومن عصاني فقد أبى». ]البخاري[.
“আমার সব উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে, তবে যারা অস্বীকার করে তারা ছাড়া। সাহাবী এ কথা শুনে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! যারা অস্বীকার করে তারা কারা? রাসূল বললেন, যে আমার অনুকরণ করল সে জান্নাতে প্রবেশ করল, আর যে আমার নাফরমানি করল, সে অস্বীকার করল”। [বুখারি]

সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা মহাবিধ্বংসী কবিরা গুনাহ:
হাদিসে বর্ণিত, উমাইমা বিনতে রাকিকাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে আসল, ইসলামের উপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করতেতখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করে বলল,
«أُبايعك على أن لا تُشركي بالله , ولا تسرقي , ولا تزني , ولا تقتلي وَلَدَكِ , ولا تأتي ببهتان تفترينه بين يديك ورجليك , ولا تَنُوحي ولا تتبرجي تبرج الجاهلية الأولى » [صحيح]
“আমি তোমাকে এ কথার উপর বাইয়াত করাবো, তুমি আল্লাহর সাথে শরিক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তুমি তোমার সন্তানকে হত্যা করবে না, তুমি কাউকে সরাসরি অপবাদ দেবে না, ‘নিয়া-হা’ তথা মৃত ব্যক্তির জন্য কান্না-কাটি করবে না এবং জাহিলিয়্যাতের যুগের নারীদের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করবে না।” এ হাদিসে সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতাকে কবিরা গুনাহের সাথে একত্র করা হয়েছে।

সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা অভিশাপ ডেকে আনে এবং আল্লাহর রহমত থেকে মানুষকে দূরে সরায়। 
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« سيكون في آخر أمتي نساءٌ كاسيات عاريات , على رؤوسهن كأسْنِمَةِ البُخْت , العنوهن , فإنهن ملعونات» [صحيح]
“আমার উম্মতের শেষ যুগে এমন কতক মহিলার আবির্ভাব হবে, তারা কাপড় পরিধান করবে অথচ নগ্ন, তাদের মাথার উপরিভাগ উটের সিনার মত হবে। তোমরা তাদের অভিশাপ কর, কারণ, তারা অভিশপ্ত”। [হাদিসটি বিশুদ্ধ]

সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা  জাহান্নামীদের চরিত্র:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«صنفان من أهل النارلم أَرَهُمَا : قوم معهم سِياطٌ كأذناب البقر يضربون بها الناس , ونساء كاسيات عاريات , مُمِيلاتٌ مائلات , رؤوسهن كأسنمة البُخْتِ المائلة , لا يدخلن الجنة , ولا يجدن ريحها , وإن ريحها ليوجد من مسيرة كذا وكذا»   .[ مسلم ]
“দুই শ্রেণীর লোক জাহান্নামী হবে, যাদের আমি আমার যুগে দেখতে পাব না। এক শ্রেণীর লোক, তারা এমন এক সম্প্রদায়, তাদের সাথে থাকবে গরুর লেজের মত এক ধরনের লাঠি যদ্বারা তারা মানুষকে পিটাবেঅপর শ্রেণী হল, কাপড় পরিহিতা নারী, অথচ নগ্ন, তারা পুরুষদেরকে আকৃষ্টকারী ও নিজেরা তাদের প্রতি আকৃষ্টতাদের মাথা হবে উটের চোটের মত বাঁকা তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এমনকি জান্নাতের সু-ঘ্রাণও তারা পাবে না। অথচ জান্নাতের সু-ঘ্রাণ অনেক অনেক দূর থেকে পাওয়া যাবে”।  [মুসলিম]

সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা  কিয়ামতের দিন ঘাঢ় অন্ধকার:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
« مَثَلُ الرافلةِ في الزينة في غير ِ أهلِها , كمثل ظُلْمَةٍ يومَ القيامة , لا نورَ لها »   [ضعيف]
“অপর পুরুষকে সৌন্দর্য প্রদর্শন করা নারীর উদাহরণ হল কিয়ামতের দিন গভীর অন্ধকারের মত। যার কোন নুর থাকবে না।” [হাদিসটি দুর্বল]
অর্থাৎ, যে মহিলা হাঁটার সময় সৌন্দর্য প্রকাশ করে হেলে দুলে হাঁটে সে কিয়ামতের দিন, ঘোর কালো অন্ধ হয়ে উপস্থিত হবে। তার দেহ হবে আগুনের কালো কয়লার মত। হাদিসটি যদিও দুর্বল, কিন্তু হাদিসের অর্থ শুদ্ধ। কারণ, আল্লাহর নাফরমানিতে মজা উপভোগ করা আযাব, আরাম পাওয়া কষ্ট। আর আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী করা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। আল্লাহর ইবাদতে কষ্ট পাওয়া, মজা ও শান্তি...ইত্যাদি। কারণ, হাদিসে বর্ণিত আছে, একজন রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর দরবারে মিশকের চেয়ে বেশি সুঘ্রাণ হবে। অনুরূপভাবে শহীদের রক্ত সম্পর্কে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর নিকট মিশকের চেয়ে অধিক সু-গন্ধ।

সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা মুনাফেকি:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«خير نسائكم الودود , الولود , المواتية , المواسية , إذا اتقين الله , وشر نسائكم المتبرجات المتخيِّلات , وهن المنافقات , لا يدخلن الجنةَ منهن إلا مثلُ الغراب الأعصم »  [صحيح]
তোমাদের মধ্যে উত্তম নারী হল, যারা অধিক মহব্বতকারী, অধিক সন্তান প্রসবকারী, ..যখন তারা আল্লাহকে ভয় করে। আর তোমাদের মধ্যে খারাপ মহিলা হল, যারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী অহংকারীমনে রাখবে এ ধরনের মহিলারা মুনাফেক তারা কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করবে না। একমাত্র লাল বর্ণের ঠোট বিশিষ্ট কাকের মত। [হাদিসটি বিশুদ্ধ]
বধির কাক হল, যার পা ও ঠোঁট লাল। এ ধরনের কাক একেবারেই দূর্লভ বা পাওয়া যায় না বললেই চলে। এখানে এ কথা বলার উদ্দেশ্য হল, নারীদের বেহেস্তে প্রবেশের সংখ্যা খুবই কম হবে তার প্রতি ইঙ্গিত করা। 

সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা আল্লাহর মাঝে ও বান্দার মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করে ও নারীদের জন্য অপমান:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَيُّما امرأةٍ وضعت ثيابها في غير بيت زوجها , فقد هتكت سِتْرَ ما بينها وبين الله عز وجل »  
কোন নারী যদি তার স্বামীর ঘরের বাহিরে স্বীয় কাপড় খুলে ফেলে, তাহলে সে তারা মাঝে আল্লাহর মাঝে যে বন্ধন ছিল তা ছিঁড়ে ফেলল। [হাদিসটি বিশুদ্ধ]

সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা অশ্লীলতা:
অবশ্যই নারীরা হল, সতর। আর সতর খোলা অশ্লীলতা ও নোংরামি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
 ﴿ وَإِذَا فَعَلُواْ فَٰحِشَةٗ قَالُواْ وَجَدۡنَا عَلَيۡهَآ ءَابَآءَنَا وَٱللَّهُ أَمَرَنَا بِهَاۗ قُلۡ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَأۡمُرُ بِٱلۡفَحۡشَآءِۖ أَتَقُولُونَ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ ٢٨] سورة الأعراف[28 :  
“আর যখন তারা কোন অশ্লীল কাজ করে তখন বলে, ‘আমরা এতে আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে পেয়েছি এবং আল্লাহ আমাদেরকে এর নির্দেশ দিয়েছেন বল,নিশ্চয় আল্লাহ অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেন না। তোমরা কি আল্লাহর ব্যাপারে এমন কিছু বলছ, যা তোমরা জান না”?
শয়তান মানুষকে এ ধরনের অশ্লীল বিষয়ে নির্দেশ দেয় এবং তাদের অন্যায়ের প্রতি ধাবিত করেপর্দাহীন নারীরা মূলত: আল্লাহ আদেশ নয়, শয়তানের আদেশেরই আনুগত্য করে। শয়তান মানুষকে অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেয় এবং মিথ্যা আশ্বাস দেয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿ ٱلشَّيۡطَٰنُ يَعِدُكُمُ ٱلۡفَقۡرَ وَيَأۡمُرُكُم بِٱلۡفَحۡشَآءِۖ ] سورة البقرة .[
শয়তান তোমাদেরকে দরিদ্রর প্রতিশ্রতি দেয় এবং অশ্লীল কাজের আদেশ করে। আর আল্লাহ তোমাদেরকে তার পক্ষ থেকে ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রতি দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ
যে নারীরা সৌন্দর্য প্রদর্শন করে ঘুরে বেড়ায়, তারা অত্যন্ত খারাপ ও ক্ষতিকর নারী। তারা ইসলামী সমাজে অশ্লীল ও অন্যায় ছড়ায় এবং বেহায়াপনার দ্বার উন্মুক্ত করে। আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন,
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ ٱلۡفَٰحِشَةُ فِي ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِۚ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ وَأَنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ ١٩ ]سورة النــور [19 :
নিশ্চয় যারা এটা পছন্দ করে যে, মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ু, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। আর আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না

সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা শয়তানের আদর্শ:
অভিশপ্ত ইবলিসের সাথে সংঘটিত আদম আ. ও হাওয়া আ. এর ঘটনা দ্বারা আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারি আল্লাহর দুশমন ইবলিস বনী আদমের ইজ্জত ও সম্ভ্রম হনন করা, তাদের সম্মান হানি করা, তাদের হেয়পতিপন্ন ও দুর্নাম ছড়ানোর প্রতি কতটুকু লালায়িত। এমনকি ইবলিসের লক্ষ্যই হল, বনী আদমকে অপমান, অপদস্থ ও অসম্মান করা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, 
﴿يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ لَا يَفۡتِنَنَّكُمُ ٱلشَّيۡطَٰنُ كَمَآ أَخۡرَجَ أَبَوَيۡكُم مِّنَ ٱلۡجَنَّةِ يَنزِعُ عَنۡهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوۡءَٰتِهِمَآۚ ]سورة الأعراف [27 :
হে বনী আদম, শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে, যেভাবে সে তোমাদের পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল; সে তাদের পোশাক টেনে নিচ্ছিল, যাতে সে তাদেরকে তাদের লজ্জা-স্থান দেখাতে পারে।
মোট কথা, ইবলিস বেহায়াপনা ও উলঙ্গপনার দাওয়াতের গুরু। শয়তানই নারী স্বাধীনতার শ্লোগান তুলে নারীদেরকে ঘর থেকে বের করার দায়িত্বশীলযে সব লোক আল্লাহর নাফরমানি করে, শয়তান এ ধরনের লোকদের ইমাম। বিশেষ করে ঐ সব মহিলা যারা তাদের নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে মুসলিমদের কষ্ট দেয় এবং যুবকদের বিপদে ফেলে, শয়তান তাদের বড় ইমাম। শয়তান বনী আদমের চির শত্রু। পৃথিবীর শুরু থেকেই শয়তান মানুষকে বিপদে ফেলে আসছে। আর নারীরা হল, শয়তানের জাল। শয়তান নারীদের মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজকে কলুষিত করে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ما تركتُ بعدي فتنةً هي أَضَرُّ على الرجال من النساء  »    . [ متفق عليه ] .
আমি আমার পর পুরুষদের জন্য নারীদের ফিতনার চেয়ে বড় ক্ষতিকর কোন ফেতনা রেখে যাইনি। [বুখারি ও মুসলিম]

সৌন্দর্য প্রদর্শন করা ইয়াহুদীদের সুন্নত:
নারীর ফিতনা দ্বারা কোন জাতিকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে ইয়াহুদীদের ষড়যন্ত্র ও কৌশল সফলতার দাবিদার। অতীতে উলঙ্গ নারীরাই হল, তাদের বিভিন্ন সংস্থা ও কার্যক্রমের বড় হাতিয়ার। ইয়াহুদীরা এ বিষয়ে প্রাচীন ও অভিজ্ঞ। এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« فاتقوا الدنيا , واتقوا النساء , فإن أول فتنةِ بني إسرائيل كانت في النساء »     [مسلم]
“তোমরা দুনিয়াকে ভয় কর এবং নারীকে ভয় কর, কারণ, বনী ইসরাইলের প্রথম ফিতনা ছিল নারীর ফিতনা”। [মুসলিম]
তাদের কিতাবসমূহে বর্ণিত আছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ছিহয়ুন গোত্রের মেয়েদের সৌন্দর্য প্রদর্শনের কারণে শাস্তি দেয়। সিফরে আশিয়া কিতাবের তৃতীয় সংস্করণে উল্লেখ করা হয়েছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ছিহয়ুন গোত্রের মেয়েদের সৌন্দর্য প্রদর্শনের কারণে শাস্তি দেন। অর্থাৎ তাদের থেকে তাদের বিভিন্ন সৌন্দর্যকে ছিনিয়ে নেয়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করতে এবং তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে নিষেধ করেন। বিশেষ করে নারীর ক্ষেত্রে তিনি উম্মতে মুসলিমাহকে অধিক সতর্ক করেন। কিন্তু তারপর দু:খের সাথে বলতে হয়, বর্তমানে অধিকাংশ মুসলিম নারী ও পুরুষ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সতর্ক করনের বিরোধিতা করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে যে ভবিষ্যৎ বাণী দিয়ে গেছেন, তার প্রতিফলনই আমরা লক্ষ্য করছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 
«لتتبعن سَنَنَ مَن كان قبلكم شبرًا بشبر , وذراعًا بذراع , حتى لو دخلوا جُحْرَ ضَبٍّ لتبعتموهم»   قيل: اليهود والنصارى؟ قال: « فمن؟»  . [متفق عليه]
“তোমরা তোমাদের পূর্বে যারা অতিবাহিত হয়েছে, তাদের হুবহু অনুকরণ করবে; কড়া ইঞ্চি পর্যন্ত অনুকরণ করবে। এমনকি যদি তারা গুই সাপের গর্তে প্রবেশ করে, তোমরাও তাদের অনুকরণ করে গুই সাপের গর্তে প্রবেশ করবে। সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করল, তারা কি ইয়াহুদী ও খৃস্টান? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, তারা ছাড়া আর কারা”? [বুখারি ও মুসলিম]
যারা ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের অনুকরণ করে এবং আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের নাফরমানি করে, তাদের সাথে ঐ সব অভিশপ্ত ইয়াহুদীদের সাথে কোন পার্থক্য নাই; যারা এ বলে আল্লাহর আদেশের বিরোধিতা করে, [سمعنا وعصينا] ‘আমরা শুনলাম ও নাফরমানি করলাম’। এরা ঐ সব নারীদের থেকে কত দূরে যারা আল্লাহর নির্দেশ শোনার পর বলে, [سمعنا وعصينا] ‘আমরা শুনলাম এবং অনুকরণ করলাম’।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে কারীমে এরশাদ করে বলেন,
﴿وَمَن يُشَاقِقِ ٱلرَّسُولَ مِنۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ ٱلۡهُدَىٰ وَيَتَّبِعۡ غَيۡرَ سَبِيلِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ نُوَلِّهِۦ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصۡلِهِۦ جَهَنَّمَۖ وَسَآءَتۡ مَصِيرًا ١١٥   ]سورة النساء[115 :
আর যে রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে তার জন্য হিদায়াত প্রকাশ পাওয়ার পর এবং মুমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে ফেরাব যেদিকে সে ফিরে এবং তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে। আর আবাস হিসেবে তা খুবই মন্দ
হেদায়েতের পথ স্পষ্ট হওয়ার পরও যদি কোন লোক গোমরাহির পথ অবলম্বন করে, এবং মুমিনদের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধাচরণ করে, তাদের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কঠিন আযাব রেখেছেন। আখিরাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের কঠিন শাস্তি দেবেন। আর আখিরাতের শাস্তি কত কঠিন হবে তা বর্ণনা দিয়ে বোঝানো যাবে না।

পর্দাহীনতা ও সৌন্দর্য প্রদর্শন নিকৃষ্ট জাহিলিয়্যাত[4]:
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে করিমে এরশাদ করে বলেন,
﴿وَقَرۡنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ [سورة الأحزاب:33 ]
“তোমরা তোমাদের ঘরে অবস্থান কর। এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না”
 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহিলিয়াতের দাবিকে অপবিত্র ও দুর্গন্ধ বলে অবহিত করেন এবং আমাদেরকে তা প্রত্যাখ্যান করার নির্দেশ দেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে তাওরাতে বলা হয়, তিনি তাদের জন্য পবিত্র বস্তুকে হালাল করেন এবং অপবিত্র বস্তুকে হারাম করেন।  
﴿ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ  [سورة الأعراف:157 ]
"এবং তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে আর অপবিত্র বস্তু হারাম করে"
জাহিলিয়্যাতের কু-সংস্কার ও নারীদের সৌন্দর্য প্রদর্শন উভয়টি একটি অপরটির পরিপূরকএ দুটিই অপবিত্র ও দুর্গন্ধময়আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জন্য এ সবকে হারাম করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«كل شيء من أمر الجاهلية موضوع تحت قَدَمَيَّ »  [ متفق عليه ]
“জাহিলিয়্যাতের যুগের প্রতিটি বস্তু আমার পায়ের নিচে নিক্ষেপ করা হল”।
এ বিষয়ে একটি কথা মনে রাখতে হবে। জাহিলিয়্যাতের যুগের সুদ, জাহিলিয়্যাতের যুগের দাবি, জাহিলিয়্যাতের যুগের বিধান ও জাহিলিয়্যাতের যুগের উলঙ্গ হওয়া ইত্যাদি সব কিছুর বিধান এক ও অভিন্ন এবং এ গুলো সবই সমান

সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা অধঃপতন ও পশ্চাদপরণ:
উলঙ্গপনা ও বেহায়াপনা চতুষ্পদ জন্তুর স্বভাব। যখন মানুষের মধ্যে এ ধরনের স্বভাব পাওয়া যাবে, তখন মানুষের পতন অবশ্যম্ভাবী ও অবধারিত। মানুষকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে সম্মান ও মান-মর্যাদা দিয়েছে, সে তা থেকে নিচে নেমে আসবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে সে সব নেয়ামতরাজি দান করেছে, তা থেকে সে নীচে নেমে আসবে। যারা উলঙ্গপনা, ঘরের বাহিরে যাওয়া ও নারী পুরুষের অবাধ মেলা-মেশাকে সৌন্দর্য বা নারীর অধিকার বলে দাবি করে, বাস্তবে তারা মানবতার দুশমন। তারা মানুষকে মনুষ্যত্ব থেকে বের করে পশুত্বের প্রতি ধাবিত করছে। তারা যদিও নিজেদের সভ্য বলে দাবি করছে, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তারা অসভ্য ও অমানুষ। মানবতার উন্নতির সম্পর্কই হল, আত্ম-সম্ভ্রম হেফাজত করা ও তার দৈহিক সৌন্দর্যকে রক্ষা করার সাথেমানুষ যখন তার আবরণ ফেলে দিয়ে নিজেকে উলঙ্গ করে ফেলে তখন তার অধঃপতন নিশ্চিত হয়। মানবতার উন্নতি ও অগ্রগতি ব্যাহত হয়। নারীরা যখন পর্দার আড়ালে থাকে তখন তাদের মধ্যে আত্ম-সম্মান ও আত্ম-মর্যাদা বোধ অবশিষ্ট থাকে। ফলে তার মধ্যে একটি রূহানী বা আধ্যাত্মিক শক্তি থাকে যা তাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আর নারীরা যখন দড়ি ছেড়া হয়ে যায়, আবরণ মুক্ত হয়, তখন তার মধ্যে তার প্রবৃত্তি শক্তিশালী হয়, যা তাকে সৌন্দর্য প্রদর্শন ও অবাধ মেলা-মেশার প্রতি আকৃষ্ট করে। সুতরাং, একজন মানুষের সামনে দুটি পথ খোলা থাকে। যখন সে দ্বিতীয়টির উপর সন্তুষ্ট থাকে তখন তাকে অবশ্যই প্রথমটিকে কুরবান দিতে হবে। আর তখন তার অন্তরে আত্ম-মর্যাদাবোধ বলতে কোন কিছু থাকবে না। তখন সে অপরিচিত নারীদের সাথে মেলা-মেশা সহ যাবতীয় সব ধরনের অপকর্মই করতে থাকবে। আর এ ধরনের মেলা-মেশার ফলে মানব প্রকৃতি ধ্বংসের মুখোমুখি হবে। লজ্জাহীনতা বৃদ্ধি পাবে, আত্ম-মর্যাদা ও সম্মানবোধ আর বাকী থাকবে না। মানুষের মধ্যে অনুভূতি থাকবে না এবং তার জ্ঞান-বুদ্ধির অপমৃত্যু ঘটবে।

সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতার ক্ষতি ব্যাপক:
যখন কোন ব্যক্তি কুরআন ও হাদিসের প্রমাণাদি ও ইসলামের ইতিহাসের প্রতি লক্ষ্য করবে, তখন সে দ্বীন ও দুনিয়ার উপর পর্দাহীনতা ও সৌন্দর্য প্রদর্শনের ক্ষতি ও প্রভাব কি তা দেখতে পাবে। বিশেষ করে বর্তমানে নারী-পুরুষের অবাধ মেলা-মেশার কু-প্রভাব যখন তার সাথে যোগ করা হয়, তখন তার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে আমরা আরও বেশি উপলব্ধি করতে পারব। সমাজে পর্দাহীনতার কারণে অনেক কিছুই আমরা দেখতে পাই।

সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতার ভয়াবহ পরিণতিসমূহ:
নারীরা তাদের প্রতি পুরুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার লক্ষ্যে নিষিদ্ধ সাজ-সজ্জা গ্রহণের ক্ষেত্রে পরস্পর প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে। তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শনের জন্য নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করে। এর ফলে তারা যেমনি-ভাবে তাদের চরিত্রকে কলঙ্কিত করে, অনুরূপভাবে তারা তাদের অনেক ধন-সম্পদ এ পথে ব্যয় করে। যার পরিণতিতে নারীরা বর্তমান সমাজে নিকৃষ্ট ও পঁচা-গন্ধ পণ্যে পরিণত হয়েছে।
দুই. সৌন্দর্য প্রদর্শনের ফলে পুরুষদের চরিত্র ধ্বংস হয়। বিশেষ করে যুব সমাজ ও প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেরা সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী নারীদের কারণে ধ্বংসের ধার প্রান্তে উপনীত হয় এবং তাদের বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল কাজ ও অপরাধের দিকে ঠেলে দেয়া হয়।
দুই. পারিবারিক বন্ধন ধ্বংস হয় এবং পরিবারের সদস্যদের মাঝে অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং বিবাহ বিচ্ছেদ অহরহ ঘটতে থাকে। 
তিন. যারা নারীদের দিয়ে চাকুরী করায় তাদের অবস্থা এমন তারা যেন তাদের নারীদের দিয়ে ব্যবসা করছে।
চার. সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী নারীরা তাদের নিজেদের দুর্নাম ও তাদের নিজেদের প্রতি মানুষের খারাপ ধারণা কামাই করে। কারণ, তারা যখন সেজে-গুজে ঘর থেকে বের হয়, এতে বুঝা যায় তাদের নিয়ত খারাপ এবং তাদের উদ্দেশ্য অসৎ। অন্যথায় সেজে-গুজে বের হওয়ার কারণ কি? তাদের আচরণের কারণে সমাজের দুর্বৃত্ত ও দাম্ভিকরা সুযোগ পেয়ে তার সদ্ব্যবহার করে।  
পাঁচ. সামাজিক ব্যাধির সাথে সাথে সমাজে বিভিন্ন ধরনের মহামারি ও রোগ ব্যাধি দেখা দেয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,   
  «لم تظهر الفاحشة في قومٍ قَطُّ حتى يُعْلِنوا بها إلا فشا فيهم الطاعونُ والأوجاعُ التي لم تكن في أسلافهم الذين مَضَوْا »     [صحيح]
“কোন কাওমের মধ্যে কোন অশ্লীল কর্ম ও ব্যভিচার দেখা দেয়ার পর তারা যখন তা প্রচার করত, তখন তাদের মধ্যে এমন মহামারি ও দুর্ভিক্ষ দেখা দিত, যা তাদের পূর্বে যারা অতিবাহিত হয়েছে, তাদের মধ্যে দেখা যায়নি”।
ছয়. চোখের ব্যভিচার ব্যাপক হারে সংঘটিত হতে থাকবে এবং চোখের হেফাজত করা যার জন্য আদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা
 কঠিন হয়ে যাবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,  «العينان زناهما النظر »  
“চোখ দুটির ব্যভিচার হল, দৃষ্টি”। [মুসলিম]
সাত. আসমানি মুসিবতসমূহ নাযিল হওয়ার উপযুক্ত হবে। এমন এমন বিপদের সম্মুখীন হতে হবে, যেগুলো ভূমিকম্প ও আণবিক বিস্ফোরণ হতেও মারাত্মক। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআন করীমে এরশাদ করে বলেন,
﴿ وَإِذَآ أَرَدۡنَآ أَن نُّهۡلِكَ قَرۡيَةً أَمَرۡنَا مُتۡرَفِيهَا فَفَسَقُواْ فِيهَا فَحَقَّ عَلَيۡهَا ٱلۡقَوۡلُ فَدَمَّرۡنَٰهَا تَدۡمِيرٗا ١٦ ] سورة الإسراء[ ১৬ :
আর যখন আমি কোন জনপদ ধ্বংস করার ইচ্ছা করি, তখন তার সম্পদশালীদেরকে (সৎকাজের) আদেশ করি। অতঃপর তারা তাতে সীমালঙ্ঘন করে। তখন তাদের উপর নির্দেশটি সাব্যস্ত হয়ে যায় এবং আমি তা সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করি।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
« إن الناس إذا رأوا المنكر , فلم يُغَيِّروه أوشك أن يَعُمَّهم الله بعذاب ».  [صحيح]
“মানুষ যখন অন্যায়কে দেখে এবং তা পরিবর্তন করে না, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের অচিরেই আযাব দ্বারা ঢেকে ফেলবে”।
হে মুসলিম মা ও বোনেরা!
তোমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণীর প্রতি একটু চিন্তা করে দেখ, যাতে তিনি বলেন,
« نَحِّ الأذى عن طريق المسلمين »؟ .   [صحيح]
অর্থ, মুসলিমদের চলাচলের রাস্তা হতে তোমরা কষ্টদায়ক বস্তু সরাও।
রাস্তা হতে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো যার প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, তা যদি ঈমানের অন্যতম শাখা হয়ে থাকে, তাহলে তোমাদের বুঝতে হবে, রাস্তায় কষ্টদায়ক বস্তু কাটা, পাথর, গোবর ইত্যাদি যা মানুষকে দৈহিক কষ্ট দেয় তা মারাত্মক নাকি যা মানুষের আত্মাকে ধ্বংস করে দেয়, জ্ঞান-বুদ্ধি নষ্ট করে এবং ঈমানদারদের নৈতিক পতন নিশ্চিত করে তা বেশি মারাত্মক?
মনে রাখবে একজন যুবকও যদি তোমার কারণে এমন ফিতনায় পড়ল, যা তাকে আল্লাহর জিকির হতে বিরত রাখল বা সঠিক পথ হতে তাকে ফিরিয়ে রাখল, অথচ ইচ্ছা করলে তুমি তাকে নিরাপত্তা দিতে পারতে, কিন্তু তা তুমি করলে না, তাহলে তোমাকে অবশ্যই আল্লাহর পক্ষ হতে ভয়াবহ আযাব গ্রাস করবে এবং তুমি কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে
হে মুসলিম নারীরা! তোমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদত বন্দেগী ও আনুগত্যর প্রতি অগ্রসর হও। মানুষের গোলামী করা ও তাদের আনুগত্য হতে বেঁচে থাক। কারণ, কিয়ামতের দিন আল্লাহর হিসাব অনেক কঠিন ও ভয়াবহ। মানুষ কে কি বলল, তা তোমার বিবেচ্য নয়, মানুষকে খুশি করা ও তাদের পদলেহন হতে বিরত থাক। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি লাভের জন্য কাজ করা, তোমার জন্য কল্যাণ ও নিরাপদ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,  
 « من التمس رضا الله بِسَخَطِ الناسِ , كفاه الله مؤنة الناس , ومن التمس رضا الناسِ بِسَخَطِ الله , وَكَلَه الله إلى الناس ». [صحيح]
“যে ব্যক্তি মানুষকে নারাজ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষের থেকে তাকে ফিরিয়ে নেবে এবং আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট হবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে নারাজ করে মানুষের সন্তুষ্টি কামনা করে আল্লাহ তা’আলা তাকে মানুষের নিকট সোপর্দ করবে”[হাদিসটি বিশুদ্ধ]
একজন বান্দার উপর ওয়াজিব হল, একমাত্র আল্লাহকে ভয় করা এবং আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿ فَلَا تَخۡشَوُاْ ٱلنَّاسَ وَٱخۡشَوۡنِ]سورة المائدة [৪৪:
“তোমরা মানুষকে ভয় করো না আমাকে ভয় কর”[সূরা আল-মায়েদা: ৪৪] আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,
﴿ وَإِيَّٰيَ فَٱرۡهَبُونِ ]سورة البقرة [৪০:
“তোমরা আমাকেই ভয় কর”[ সূরা আল-বাকারাহ:৪০] আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,
﴿ هُوَ أَهۡلُ ٱلتَّقۡوَىٰ وَأَهۡلُ ٱلۡمَغۡفِرَةِ ٥٦]  سورة المدثر[৫৬ :
“তিনিই ভয়ের যোগ্য এবং ক্ষমার অধিকারী”[সূরা আল-মুদ্দাচ্ছির: ৫৬]
মাখলুকের সন্তুষ্টি অর্জন করার কোন প্রয়োজন নাই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষের সন্তুষ্টি লাভের জন্য নির্দেশ দেননি এবং এটি কোন জরুরি বিষয় নয়। ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন, “মানুষের সন্তুষ্টি লাভ এমন একটি পরিণতি যা লাভ করা কখনোই সম্ভব নয়, সুতরাং এর জন্য তোমার কষ্ট করার কোন প্রয়োজন নাই। তুমি এমন কর্ম অবলম্বন কর, যা তোমাকে সংশোধন করবে। আর অন্য সব কিছুকে তুমি ছাড়”
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুত্তাকীদের উপায় বের করে দেবেন। যা মানুষের জন্য সংকীর্ণ ও সংকোচিত। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুত্তাকীদেরকে তাদের ধারণার বাহিরে রিজিক দান করবেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ وَمَن يَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِ فَهُوَ حَسۡبُهُۥ ]سورة الطلاق: [৩
যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াককুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট


শরয়ী পর্দা অবলম্বন বিষয়ে যে সব শর্তাবলী একত্র হওয়া জরুরি

এক: গ্রহণযোগ্য ও অগ্রগণ্য মতানুযায়ী নারীদের জন্য তাদের সম্পূর্ণ শরীর ডেকে রাখা:
কোন কোন আলেমের মতে যদি ফিতনার আশঙ্কা না থাকে, তখন চেহারা ও কব্জি-দ্বয় সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়। অর্থাৎ, যদি নারী সুন্দরী না হয়ে থাকে, চেহারা ও হাতে কোন সজ্জা গ্রহণ না করে, তখন কব্জি-দ্বয় ও মুখ খুলে রাখাতে কোন অসুবিধা নাই।  আর মহিলাটি যে সমাজে বসবাস করে সে সমাজে এমন কোন খারাপ লোক বা দুর্বৃত্ত নাই যারা মহিলাদের দিকে কু-দৃষ্টি দেয়। তখন নারীদের জন্য তাদের চেহারা ও হাতের কব্জি-দ্বয় খোলা রাখাতে কোন অসুবিধা নাই। কিন্তু যদি উল্লেখিত শর্তগুলো না পাওয়া যায়, তখন নারীদের জন্য তার চেহারা ও হাত খুলে রাখার বিষয়ে ওলামাদের ঐক্য মত হল, তাদের চেহারা ও কব্জি-দয় খুলে রাখা কোন ক্রমেই বৈধ নয়।

দ্বিতীয়: পর্দা করা যেন সৌন্দর্য না হয়:
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا   ]سورة النــور: 31[
আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না
 ﴿وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى ] سورة الأحزاب :[33
“আর তোমরা প্রাক জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না”।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পর্দা করার নির্দেশ দিয়েছেন যাতে নারীরা তাদের সৌন্দর্যকে গোপন করে এবং তাদের সৌন্দর্য প-দর্শন না করে। কিন্তু পর্দা যদি এমন সুন্দর হয়, যা দেখে পুরুষরা নারীদের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং ফিতনার মুখোমুখি হয়, তাহলে এ ধরনের পর্দার কোন অর্থ হতে পারে না।

তিন. পর্দার জন্য মোটা ও ঢিলে-ঢালা কাপড় পরিধান করতে হবে যাতে কাপড়ের ফাঁক দিয়ে তাদের শরীর দেখা না যায়:
 কারণ, এ ধরনের কাপড় ছাড়া পর্দা বাস্তবায়ন হবে না। কারণ, চিকন –পাতলা- কাপড় পরিধান করলে, বাস্তবে মহিলারা উলঙ্গই থেকে যায়। তারা তাদের পর্দার ভিতর আর থাকল না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« سيكون في آخر أمتي نساء كاسيات عاريات , على رُؤوسهن كأسنمة البُخت , العنوهن فإنهن ملعونات  » [صحيح]
আমার আখেরি জামানার উম্মতদের মধ্যে এমন কতক নারীর আবির্ভাব হবে, যারা পোশাক পরিধান করলেও মূলত তারা উলঙ্গ। তাদের মাথা উটের চোটের মত উঁচা হবে। তোমরা তাদের অভিশাপ কর, কারণ, তারা অভিশপ্ত। তিনি আরও বলেন,
« لا يدخلن الجنة , ولا يجدن ريحها , وإن ريحها ليوجد من مسيرةِ كذا وكذا » [ مسلم ]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিষয়ে আরও বলেন, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ অনেক দূর থেকে পাওয়া যাবে। [মুসলিম] এতে এ কথা স্পষ্ট হয়, নারীদের জন্য পাতলা ও মসৃণ কাপড় পরিধান করা মারাত্মক কবিরা গুনাহ

চার. ঢিলা-ডালা কাপড় পরিধান করতে হবে, সংকীর্ণ কাপড় পরিধান করবে না। 
কারণ, পর্দার উদ্দেশ্য হল, জাতিকে ফিতনা থেকে রক্ষা করা। কিন্তু যখন কোন মহিলা সংকীর্ণ কাপড় পরিধান করবে, তখন তার শরীরের গঠন একজন দর্শকের স্পষ্ট হবে। পুরুষের চোখে তা একেবারেই স্পষ্ট হবে। ফলে পুরুষরা তাদের এহেন অবস্থা দেখে ফিতনা-ফ্যাসাদের সম্মুখীন হবে। যা পর্দা না করার কারণে হয়ে থাকে। উসামা ইব্ন যায়িদ রা. বলেন,
 ] كساني رسول الله صلى الله عليه وسلم  قُبْطِيَّةً كثيفة مما أهداها له دِحْيَةُ الكلبي , فكسوتُها امرأتي , فقال: « ما لك لم تلبس القُبْطِيَّةً ؟,» قلت: ] كسوتُها امرأتي [ , فقال: « مُرها , فلتجعل تحتها غُلالة » وهي شعار يُلْبَسُ تحت الثوب « فإني أخاف أن تَصِفَ حجمَ عِظامِها » [ حسن ]

পাঁচ. মহিলার সু-গন্ধি ও আতর মাখিয়ে রাস্তায় বের হবে না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« أَيُّما امرأةٍ استعطرت , فَمَرَّتْ على قومٍ ليجدوا ريحها , فهي زانية »  [حسن]
“যদি কোন নারী খোশবু ব্যবহার করে কোন পরুষ সম্প্রদায়ের নিকট দিয়ে অতিক্রম করে যাতে তারা তার সুগন্ধ উপলব্ধি করতে পারে। তাহলে সে নারী ব্যভিচারী”

ছয়. নারীরা পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
  « ليس منا من تشبه بالرجال من النساء , ولا من تشبه بالنساء من الرجال » [ صحيح ]
“যে নারী পরুষের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং যে সব পুরুষ নারীর সাদৃশ্য অবলম্বন করে, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়”আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
« لعن رسولُ الله صلى الله عليه وسلم  الرجلَ يَلْبَس لِبْسَةَ المرأة , والمرأة تلبَسُ لِبسَةَ الرجل. »  [ صحيح ]
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে পরুষ নারীদের বেশ-ভুষা অবলম্বন করে তাদের অভিশাপ করেছেন আবার যে সব পুরুষরা নারীদের বেশ-ভুষা অবলম্বন করে তাদের অভিশাপ করেছেন”রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
« ثلاث لا يدخلون الجنة , ولا ينظر الله إليهم يومَ القيامة: العاقُ والديه , والمرأةُ المترجلة المتشبهة بالرجال , والدَّيُّوث » الحديث.
[ صحيح ]
“তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না। কিয়ামতের দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের প্রতি কোন করুণা করবে না। এক- যে মাতা-পিতার নাফরমানি করে, দুই- যে নারী পুরুষের আকৃতি অবলম্বন করে, তিন- দাইয়ূস (এমন ব্যক্তি যার পরিবারের মেয়েরা অশ্লীল কাজে লিপ্ত ও অশ্লীল পোষাক পরে অথচ সে তা সমর্থন করে”

সাত. অমুসলিমদের মত পোশাক পরিধান করবে না।
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم  : « من تشبه بقوم فهو منهم ».  [صحيح]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি কোন কাওমের সাথে সাদৃশ্য রাখে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে”। [হাদিসটি বিশুদ্ধ]
وعن عبد الله بن عمرو رضي الله عنهما قال : " رأى رسول الله صلى الله عليه وسلم  عَلَيَّ ثوبين معصفرين , فقال : « إن هذه من ثياب الكفار فلا تَلْبَسها »   [ مسلم ]
আব্দুল্লাহ ইব্ন আমরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আমাকে দুটি রঙিন কাপড় পরিহিত অবস্থায় দেখেন, তারপর তিনি বললেন, এ ধরনের কাপড় পরিধান করা কাফেরদের অভ্যাস তুমি এ ধরনের কাপড় পরিধান করো না”। [মুসলিম]

আট. মানুষের মধ্যে প্রসিদ্ধি লাভ করার মানসিকতা থাকতে পারবে না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ومن لَبِسَ ثَوْبَ شُهْرَةٍ في الدنيا , ألبسه الله ثوبَ مَذَلَّةٍ يوم القيامة , ثم ألهب في ناراً » [ حسن ]
“যে ব্যক্তি দুনিয়াতে প্রসিদ্ধ পোশাক পরিধান করল, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কিয়ামতের দিন তোমাকে অপমান অপদস্থের পোশাক পরিধান করাবে। তারপর তোমাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে”।
প্রসিদ্ধ পোশাক হল, যে কাপড় পরিধান দ্বারা মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধি লাভ করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। এটি দুই ধরনের হতে পারে। এক- অনেক দামি ও মূল্যবান কাপড়, যা অহংকার করে পরিধান থাকে। দুই- নিম্নমানের কাপড় যা এ কারণে পরিধান করা হয়ে থাকে যাতে মানুষ তাকে ইবাদত-কারী, বুজুর্গ ও আল্লাহর অলি বলে আখ্যায়িত করবে। যেমন-সে এমন এক অসাধারণ কাপড় পরিধান করল, যার রঙ, জোড়া, তালি ও অভিনব সেলাই দেখে মানুষ তার দিকে তাকিয়ে থাকে এবং সে মানুষের উপর বড়াই ও অহংকার করে। 
হে মুসলিম মা বোনেরা! তোমরা সৌন্দর্য প্রদর্শন থেকে সতর্ক থাক!
যখন তুমি উপর উল্লেখিত শর্তগুলি বিষয়ে চিন্তা করবে, তখন তোমার নিকট একটি বিষয় স্পষ্ট হবে, বর্তমানে অসংখ্য নারী এমন আছে, যারা পর্দার নামে বিভিন্ন ধরনের পোশাক পরিধান করে থাকে, বাস্তবে তা পর্দা নয়। তারা অন্যায় করে অথচ অন্যায়কে ন্যায় বলে চালিয়ে দেয়। ফলে তারা সৌন্দর্য প্রদর্শনকে পর্দা বলে নাম রাখে আর অন্যায়কে ইবাদত বলে চালিয়ে দেয়।
ইসলামী জাগরণকে যারা সহ্য করতে পারে না এবং ইসলামী আদর্শকে যারা বরদাশত করতে পারে না, তারা ইসলামকে নির্মূল করার জন্য তাদের সর্বোচ্চ শক্তি ব্যয় করে।
কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের সব চেষ্টাকে ধ্বংস করে দেন এবং তাদের সব ষড়যন্ত্রকে বানচাল করে দেয়। আর মুমিন নারী-পুরুষরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আনুগত্য ও তার হুকুমের অটল ও অবিচল থাকে এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুমিনদের আল্লাহর অনুকরণের উপর অবিচল থাকার তাওফিক দেন। দুনিয়ার কোন মোহ তাদেরকে তাদের আদর্শ থেকে চুল পরিমাণও সরাতে পারে না।
ফলে তারা ইসলাম ও মুসলিমদের সাথে এমন সব অসভ্য আচরণ করতে আরম্ভ করল, যা তাদেরকে তাদের মূল লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে দিল। তারা এ বলে পর্দাকে বিকৃত করে মানুষের সামনে তুলে ধরল, পর্দা করা কোন গোঁড়ামি নয়, পর্দা হল এমন একটি মধ্যম পন্থা যা দ্বারা পর্দাশীল মহিলা তার প্রভুর সন্তুষ্টি লাভে সক্ষম হয়। কিন্তু তারা মুখে যাই বলুক বা দাবি করুক না কেন, বাস্তবে তারা দুটি বিপরীত বিষয়কে একত্রে ঠিক রাখতে চায় একটি সমসাময়িক পরিবেশ আর অপরটি আল্লাহর বিধান ও ইসলামী ঐতিহ্য।
বর্তমান বাজারে পর্দার নামে এমন সব কাপড়-চোপড় পাওয়া যায়, যা প্রাথমিক অবস্থায় বিরোধিতা করা হয়েছিল। অথচ এ গুলো নারীদের সৌন্দর্য প্রদর্শন ও আকর্ষণ তৈরি করা ছাড়া আর কিছুই নয়। ব্যবসায়ীরা তাদের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য এ ধরনের পোশাক বাজারে ছাড়ে।  যেমন কোন এক কবি বলেন, ‘মনে রাখবে, তুমি যে ধরনের পর্দা ব্যবহার করছ, তাকে শরয়ী পর্দা বলা হতে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করবে, যে পর্দা করলে আল্লাহ ও তার রাসূলের সন্তুষ্টি লাভ হয়। যে ব্যক্তি তোমার এ ধরনের আমলকে ধন্যবাদ দেয়, তোমাকে সত্যিকার উপদেশ না দেয়,  তাদের কথা দ্বারা ধোঁকা পড়া হতে তোমাকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবেসাবধান! তুমি ধোঁকায় পড়ে এ ধরনের কথা বলা থেকে বেঁচে থাক, ‘আমি সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী নারীদের থেকে উন্নত’। কারণ, তুমি যে অবস্থার মধ্যে আছ, তা কোন আদর্শ হতে পারে না। তাও অন্যায় যেমনটি সৌন্দর্য প্রদর্শন করা অন্যায়। আর জাহান্নামের বিভিন্ন স্তর আছে যেমনি-ভাবে জান্নাতের বিভিন্ন ক্লাস আছে। তোমার করনীয় হল, তুমি সে মহিলাদের অনুকরণ করবে যারা প্রকৃত পর্দা অবলম্বন করে এবং পর্দার যাবতীয় শর্তাবলী সহ যথাযথ পর্দা পালন করে।’ 
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
رُوي عن رسول الله - صلى الله عليه وسلم  - أنه قال: « انظروا إلى مَنْ هو أسفل منكم في الدنيا , وفوقَكم في الدين , فذلك أجدرُ أن لا تَزْدَرُوا » أي تحتقروا « نعمةَ الله عليكم »  [ضعيف] , وتلا عمر بن الخطاب رضي الله عنه قولَه عز وجل: ]إِنَّ ٱلَّذِينَ قَالُواْ رَبُّنَا ٱللَّهُ ثُمَّ ٱسۡتَقَٰمُواْ تَتَنَزَّلُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ أَلَّا تَخَافُواْ وَلَا تَحۡزَنُواْ وَأَبۡشِرُواْ بِٱلۡجَنَّةِ ٱلَّتِي كُنتُمۡ تُوعَدُونَ ٣٠ [سورة فصلت : 31]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমরা দুনিয়া বিষয়ে তোমাদের থেকে যারা নিম্নে তাদের দিকে দেখবে, আর দ্বীনের ব্যাপারে যে তোমাদের চেয়ে বড় তার দিকে দেখবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নেয়ামতকে ছোট মনে না করার জন্য এটি তোমাদের উত্তম ও উপযুক্ত পদক্ষেপ। অর্থাৎ, তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহর নেয়ামতসমূহকে ছোট মনে করবে না। [দুর্বল হাদীস] তারপর ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. এ আয়াত-[إِنَّ ٱلَّذِينَ قَالُواْ رَبُّنَا ٱللَّهُ ثُمَّ ٱسۡتَقَٰمُواْ تَتَنَزَّلُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ أَلَّا تَخَافُواْ وَلَا تَحۡزَنُواْ وَأَبۡشِرُواْ بِٱلۡجَنَّةِ ٱلَّتِي كُنتُمۡ تُوعَدُونَ ٣٠ ]  তিলাওয়াত করেন, “নিশ্চয় যারা বলে, ‘আল্লাহই আমাদের রব’ অত:পর অবিচল থাকে, ফেরেশতারা তাদের উপর নাযিল হয়, [এবং বলে,] ‘তোমরা ভয় পেয়ো না, দুশ্চিন্তা করো না এবং জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর, তোমাদেরকে যার ওয়াদা দেয়া হয়েছিল”
 فقال: « استقاموا والله لله بطاعَتِهِ , ولم يَرُ وغُوا رَوَغَانَ الثعالب ».
অত:পর তিনি বললেন, তোমরা অটল অবিচল থাক, আল্লাহর শপথ করে বলছি আল্লাহর আনুগত্যের অবিচল থাক। শিয়ালের মত বক্রতা অবলম্বন কর।  
 وعن الحسن رحمه الله قال: " إذا نظر إليك الشيطان فرآك مُداوِمًا في طاعة الله , فبغاك , وبغاك- أي طلبك مرة بعد أخرى- فرآك مُداوِمًا , مَلَّكَ , ورفضك , وإذا كنت مرةً هكذا , ومرة هكذا , طَمِعَ فيك ".
হাসান রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “শয়তান যখন তোমাকে আল্লাহর বিধানের আনুগত্যের উপর অটল ও অবিচল দেখবে। তখন সে তোমাকে আল্লাহর আনুগত্য হতে বার বার সরানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু তারপরও যখন তোমাকে অবিচল দেখতে পাবে, তখন সে তোমাকে ছেড়ে চলে যাবে। আর যখন শয়তান তোমাকে দুর্বল দেখতে পাবে এবং তোমার মধ্যে টালমাটাল দেখতে পাবে, তখন সে তোমার প্রতি ঝুঁকবেতোমাকে গোমরাহ করার জন্য লালায়িত হবে
সুতরাং তোমরা আল্লাহর ইবাদত ও তাওহীদের উপর অটল অবিচল থাক, এদিক সেদিক করো না। আর হিদায়েতের উপর অবিচল থাক যার মধ্যে কোন গোমরাহি নাই। আর তোমরা আল্লাহর দরবারে তওবা খালেস তওবা কর, তারপর আর কোন অপরাধ করবে না।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করে বলেন,
﴿وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣١ [سورة النور:31 ]
হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার
আমরা শুনলাম ও আনুগত্য করলাম
সত্যিকার মুসলিম ব্যক্তি যখনই আল্লাহর কোন নির্দেশ বা হুকুমের সম্মুখীন হয়, তখন সে সাথে সাথে তা বাস্তবায়ন করা বা আমল করার চেষ্টা করে। আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়ন করা বা তদনুযায়ী আমল করতে সে খুব পছন্দ করে। সে আল্লাহর আদেশের খেলাপ করা বা বিরোধিতাকে পছন্দ করে না। সে ইসলামের সম্মান, আল্লাহর দেয়া শরিয়তের মর্যাদা এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নতের আনুগত্য করাকে পছন্দ করে। এর বিনিময়ে তার উপর কি বর্তাবে বা তাকে কোন অনাকাংখিত  পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় কিনা তার প্রতি সে কোন প্রকার ভ্রুক্ষেপ বা কর্ণপাত করে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যারা তার আনুগত্য করা ও তার রাসূলের অনুকরণ করা হতে বিরত থাকে তাদের ঈমানকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَيَقُولُونَ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَبِٱلرَّسُولِ وَأَطَعۡنَا ثُمَّ يَتَوَلَّىٰ فَرِيقٞ مِّنۡهُم مِّنۢ بَعۡدِ ذَٰلِكَۚ وَمَآ أُوْلَٰٓئِكَ بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٤٧  وَإِذَا دُعُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ لِيَحۡكُمَ بَيۡنَهُمۡ إِذَا فَرِيقٞ مِّنۡهُم مُّعۡرِضُونَ ٤٨ [سورة النور: 47-48]
তারা বলে, ‘আমরা আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছি এবং আমরা আনুগত্য করেছি’, তারপর তাদের একটি দল এর পরে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর তারা সত্যিকার মুমিন নয়। আর যখন তাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি এ মর্মে আহ্বান করা হয় যে, তিনি তাদের মধ্যে বিচার-মীমাংসা করবেন, তখন তাদের একটি দল মুখ ফিরিয়ে নেয়।
 একটু পরে গিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,
﴿إِنَّمَا كَانَ قَوۡلَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذَا دُعُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ لِيَحۡكُمَ بَيۡنَهُمۡ أَن يَقُولُواْ سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَاۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ٥١   وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَيَخۡشَ ٱللَّهَ وَيَتَّقۡهِ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَآئِزُونَ ٥٢ ]سورة النور .[৫২ ,৫১
মুমিনদেরকে যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি এ মর্মে আহ্বান করা হয় যে, তিনি তাদের মধ্যে বিচার, মীমাংসা করবেন, তাদের কথা তো এই হয় যে, তখন তারা বলে: আমরা শুনলাম ও আনুগত্য করলাম।আর তারাই সফলকাম। আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং  তাকওয়া অবলম্বন করে, তারাই সফলকাম
সুফিয়া বিনতে সাইবাহ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«بينما نحن عند عائشة رضي الله عنها قالت فَذَكَرْنَ نساءَ قريشٍ وفضلَهن , فقالت عائشة رضي الله عنها- : ( إن لنساء قريش لفضلاً , وإني والله ما رأيتُ أفضلَ من نساءِ الأنصار: أشَدَّ تصديقًا لكتاب الله , ولا إيمانًا بالتنزيل , لقد أُنزِلَتْ النور: {وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ} (31) سورة النــور  فانقلب رجالهن إليهن يتلون عليهن ما أنزل الله إليهم فيها , ويتلو الرجل على امرأته , وابنته , وأخته , وعلى كُلِّ ذِي قَرابته , فما منهن امرأةٌ إلا قامت إلى مِرْطِها المُرَحَّلِ, فاعْتَجَرَتْ, به تصديقًا وإيمانًا بما أنزل الله من كتابه , فأصبحن وراءَ رسولِ الله-صلى الله عليه وسلم - مُعْتَجِراتٍ كأن على رؤوسهن الغربان».
“একদিন আমরা আয়েশা রা. এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন আমরা কুরাইশী নারীদের আলোচনা ও তাদের গুণাগুণ বর্ণনা করতে ছিলাম। তখন আয়েশা রা. আমাদের বলল, অবশ্যই কুরাইশ বংশের নারীদের মর্যাদা আছে, যা আমরা অস্বীকার করতে পারি না। তবে আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, আনসারী নারীদের মত এত বেশি আল্লাহর কিতাবের উপর বিশ্বাসী ও আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়নকারী আর কোন নারীকে আমি কখনো দেখিনি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যখন সূরা নূর নাযিল করল, তখন তাদের পুরুষরা তাদের নিকট ফিরে গিয়ে তাদের প্রতি যে কোরআন নাযিল করা হল, তা তিলাওয়াত করল- পুরুষ তার স্ত্রীকে, তার মেয়েকে, বোনকে এবং প্রতিটি নিকটাত্মীয়কে শোনাল। তিলাওয়াত শোনা মাত্রই সাথে সাথে আনসারী নারীরা তাদের নকশী করা কাপড় নিয়ে তাদের দেহকে ডেকে ফেলল। তারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনর কথার উপর বিশ্বাস করতে এবং তার প্রতি ঈমান আনতে কোন প্রকার বিলম্ব করল না। তাদের অবস্থা এমন হল, তারা সবাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে তাদের মাথা ও চেহারা ডেকে রাখল, যেন তাদের মাথার উপর কাক”।
মোট কথা, আল্লাহর আদেশের সামনে কোন প্রকার ঘড়ি-মসি করা ও মতামত ব্যক্ত করার কোন অধিকার নাই। আল্লাহর নির্দেশ আসার সাথে সাথে বলতে হবে ‘আমরা শুনলাম এবং মানলাম’। এটি হল, প্রকৃত ও সত্যিকার ঈমান। হে মুসলিম রমণীরা! যদি তোমরা সত্যিকার অর্থে আল্লাহকে রব হিসেবে স্বীকার কর, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাসূল হিসেবে মেনে নাও, আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী, মেয়ে এবং ঈমানদার নারীদের আদর্শ হিসেবে মান, তাহলে তোমরা আল্লাহর দরবারে তওবা করে নিজের অপকর্ম ও পাপাচারের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। হে আল্লাহর বান্দা-বান্দিরা তোমরা এ ধরনের কথা বলা হতে বিরত থাক- আমরা তওবা করব, অচিরেই সালাত আদায় করব, অচিরেই পর্দা করব ইত্যাদি। কারণ, তওবাকে বিলম্ব করা অপরাধ, তা হতে তোমাদের অবশ্যই তওবা করতে হবে। তোমরা মুসা আ. যে ধরনের কথা বলছে, তোমরা সে ধরনের কথা বল।
﴿ وَعَجِلۡتُ إِلَيۡكَ رَبِّ لِتَرۡضَىٰ ٨٤  [سورة طه:]
“হে আমার রব, আমি তাড়াতাড়ি করে আপনার নিকট এসেছি, যাতে আপনি আমার উপর সন্তুষ্ট হন।”
এবং তোমরা এমন কথা বল, যে কথা তোমাদের পূর্বে মুমিন নর-নারীরা বলছিল,
﴿وَقَالُواْ سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَاۖ غُفۡرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيۡكَ ٱلۡمَصِيرُ  ]سورة البقرة.[২৮৫
আর তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং বললাম। হে আমাদের রব! আমরা আপনারই ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল।
আল্লাহ আমাদের পর্দা করা ও আল্লাহর আনুগত্য করার তাওফীক দান করুন।



[1] পর্দা বিষয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুমিনদের নির্দেশ দিয়েছেন এবং মুমিন নারীদেরকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সৌন্দর্য প্রদর্শন করতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং মুমিনদের অবশ্যই পর্দা করতে হবে এবং আল্লাহর আদেশ মানতে হবে। যখন একজন মুমিন আল্লাহর আদেশ পালন করবে, তা হবে আল্লাহর আদেশের আনুগত্য করা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুকরণ করা।
[2] আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে তার কর্মের ধরন অনুযায়ী শাস্তি দেবেন। কর্ম যেমন হবে, তার শাস্তিও তেমন হবে। যেমন, এখানে হাদিসে বর্ণিত, দুনিয়াতে যে নারী উলঙ্গ-বে-পর্দা- হবে, আখেরাতে সে নারীকে নগ্ন ও উলঙ্গ করে শাস্তি দেয়া হবে।
[3] যখন কোন মানুষ পর্দা করে তখন অবশ্যই তার অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকে। এছাড়াও যে মহিলা পর্দা করে, তার পর্দা তাকে অনেক অন্যায় ও পাপাচার থেকে রক্ষা করে। এ কারণেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পর্দাকে তাকওয়ার পোশাক বলে আখ্যায়িত করেন।
[4] পর্দা না করা এবং সৌন্দর্য প্রদর্শন করা জাহিলিয়্যাতের নারীদের স্বভাব। জাহিলিয়্যাতের যুগে নারীরা সৌন্দর্য প্রদর্শন করত এবং তারা উলঙ্গ হয়ে ঘুরে বেড়াত।
_________________________________________________________________________________
শাইখ মুহাম্মদ ইবন আহমদ ইবন ইসমাঈল আল-মুকদাম
অনুবাদ : জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের
সম্পাদনা : ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ